(২) পিতার নিকট থেকে প্রাপ্ত অধিকারসমূহ :

সন্তানের প্রতি পিতার দায়িত্ব অত্যন্ত কঠিন এবং দীর্ঘমেয়াদী। মাতৃগর্ভে সন্তানের সঞ্চারণ শুরু হবার সময় হ’তে বড় হয়ে সমাজে প্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত তাঁর দায়িত্ব অব্যাহত থাকে। এজন্য ইসলাম দাম্পত্য জীবনের ব্যয়ভার বহন ও দৈহিকভাবে সক্ষম ব্যক্তিকেই বিবাহ করার অনুমতি প্রদান করেছে।[1] পিতার নিকট হ’তে প্রাপ্ত সন্তানের অধিকারগুলোকে আমরা দু’পর্যায়ে বিভক্ত করতে পারি।

(ক) সন্তানের পৃথিবীতে আগমনের পূর্ববর্তী অধিকার।

(খ) সন্তানের পৃথিবীতে আগমনের পরবর্তী অধিকার।

(ক) সন্তানের পৃথিবীতে আগমনের পূর্ববর্তী অধিকার সমূহ

১. সন্তানের জন্য পুণ্যবতী মায়ের ব্যবস্থাকরণ :

ইসলাম শুধু যে জন্মের পর থেকেই শিশুদের প্রতি গুরুত্ব দেয় তা নয়; বরং সন্তান তার পিতার ঔরসে বা মায়ের গর্ভে তার আকৃতি সৃষ্টি হবার পূর্ব থেকেই তার প্রতি গুরুত্বারোপ প্রদান করেছে। পুরুষদের প্রতি বিবাহ সম্পর্কে ইসলাম নির্দেশ প্রদান করেছে যে, প্রস্তাবিত মহিলা যেন আল্লাহভীরু হয়। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বিবাহের ক্ষেত্রে বংশ, সম্পদ, সৌন্দর্য ও আল্লাহভীরুতার প্রতি গুরুত্বারোপ করেছেন। যেমন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, تُنْكَحُ الْمَرْأَةُ لِأَرْبَعٍ لِمَالِهَا وَلِحَسَبِهَا وَلِجَمَالِهَا وَلِدِيْنِهَا فَاظْفَرْ بِذَاتِ الدِّيْنِ تَرِبَتْ يَدَاكَ. ‘মহিলাদেরকে চারটি গুণের অধিকারিণী দেখে বিবাহ করা হয়। (ক) তার ধন-সম্পদ (খ) বংশমর্যাদা (গ) তার সৌন্দর্য ও (ঘ) তার ধর্মপরায়ণতা। তোমরা দ্বীনদার মহিলাকে বিয়ে করে ধন্য হও, অন্যথা তোমার উভয় হাত ধুলায় ধূসরিত হবে’। (অর্থাৎ তুমি লাঞ্ছিত ও অপমানিত হবে)।[2]

বিবাহ করার সময় মহিলার রূপ বা সম্পদই যেন সবকিছু বলে বিবেচিত না হয়; বরং এর যে কোন একটির সাথে ধর্মপরায়ণতার গুণটি অবশ্যই যুক্ত হ’তে হবে। মহিলা যেন ভদ্র পরিবারের সদস্যা হন। কারণ তার সন্তানেরা তার চরিত্র, বৈশিষ্ট্য ও আচরণ দ্বারা প্রভাবিত হয়ে থাকে।

ওমর (রাঃ) জনৈক পুত্র কর্তৃক সন্তানের প্রতি পিতার দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হ’লে উত্তরে বলেছিলেন, ‘পিতার দায়িত্ব হচ্ছে, তিনি যেন সন্তানের মাতা নির্বাচনে ভুল না করেন’।[3] ভাল সন্তানের জন্যে সতী-সাধ্বী মা হওয়া শর্ত। আর এ শর্তটি পিতা পূরণ করে সন্তানের হক আদায়ে সচেষ্ট হবেন।

২. গর্ভবতী মায়ের পুষ্টি, সুস্থতা ও সেবাযত্নের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ :

শিশু সুস্থ ও শক্তি-সামর্থ্যবান হওয়া প্রতিটি পরিবারের কাম্য। এজন্য গর্ভবতী মায়ের প্রয়োজনীয় খাদ্যের যোগান এবং অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে পিতাকে। গর্ভবতী মায়ের প্রতি পিতার যথাযথ দায়িত্ব ও কর্তব্যই গর্ভস্থ সন্তানের অধিকার। এই দায়িত্ব পিতা নিষ্ঠার সাথে পালন করলে সম্পূর্ণ সুস্থভাবে শিশু জন্মলাভ করার যথার্থ অবস্থা ও পরিবেশ সৃষ্টি হবে।

সাধারণ অবস্থার চেয়ে গর্ভকালীন সময়ে মায়ের পুষ্টিকর খাদ্যের বেশী প্রয়োজন হয়। মা সুস্থ সবল না থাকলে, সুস্থ সবল সন্তান জন্ম দিতে পারে না। কাজেই যে সমস্ত খাদ্যে বেশী পরিমাণ ভিটামিন রয়েছে, সেরূপ খাদ্য সরবরাহ করতে পিতা সদা সচেষ্ট থাকবেন।

মায়ের দৈহিক পরিশ্রম লাঘবের জন্যে পিতাকে গৃহস্থালী কাজে সহায়তা করতে হবে। সন্তানের মঙ্গলার্থেই গর্ভধারিণী মাতার স্বাস্থ্য রক্ষা, সুস্থ দেহ, মন-মানসিকতা গঠন ও পবিত্র রাখা এবং হালাল খাদ্যের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা পিতার দায়িত্ব। সর্বোপরি সর্বাঙ্গীন সুন্দর সন্তান প্রাপ্তির আশায় মাকে পুষ্টিকর উপাদেয় খাবার যোগান দেওয়া, সুন্দর ও পরিচ্ছন্ন পরিবেশে থাকার ব্যবস্থা করা এবং ইসলামী ভাবধারা সম্বলিত পুস্তকাদি সরবরাহ করা পিতার কর্তব্য। একজন অনাগত সন্তান সুস্থ ও সুন্দরভাবে পৃথিবীতে আসার জন্য এ সমস্ত বিষয় একজন আদর্শ পিতার দায়িত্ব ও কর্তব্য।

(খ) পৃথিবীতে আগমনের পরবর্তী অধিকার সমূহ :

শিশুরা হচ্ছে জীবনের কিশলয়, আশার ফসল, মানুষের চোখ জুড়ানো ধন, উম্মাহর প্রস্ফূটিত ফুল, মানবতার ভবিষ্যত, সত্যিকার প্রভাতের উদয়, ঝলমলে আগামী দিন, গৌরবময় অতীতের প্রত্যাবর্তন এবং উম্মাহর কীর্তিমান মর্যাদার শাসন সংরক্ষিত রাখার একটি মাধ্যম। সন্তান মানুষের ইপ্সিত আশার প্রতীক। তাই সন্তান জন্মগ্রহণ করার পরেই কতগুলি মৌলিক দায়িত্ব পিতাকে পালন করতে হয়। এই গুরু দায়িত্ব হ’তে অমনোযোগী হ’লে তাকে পরকালে জবাবদিহি করতে হবে।

সন্তানকে যথাযথভাবে প্রতিপালন করা ও তাদের নৈতিকতার উন্নয়নে পিতা যত্নবান না হ’লে অথবা অর্পিত দায়িত্ব পালন না করলে সন্তানের ভবিষ্যৎ হয়ে উঠে দুর্বিসহ। কাজেই একজন পিতা সন্তানের সঙ্গে বৈরী মনোভাব পরিহার করে বন্ধুসুলভ আচরণ করবেন। সর্বদা সন্তানের সঙ্গে কোমল ব্যবহার করবেন, আদর ও স্নেহ করবেন এবং প্রয়োজনে নছীহত করবেন।

১. একত্ববাদের আহবান শুনানো :

শিশু মায়ের গর্ভ হ’তে পৃথিবীতে আগমনের পরক্ষণেই তাকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে কানে আযান দিতে হয়। আবু রাফে‘ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে দেখেছি যে, ফাতিমা (রাঃ)-এর গর্ভ থেকে হাসান (রাঃ)-এর জন্ম হ’লে রাসূল (ছাঃ) তাঁর কানে ছালাতের আযানের মত আযান দিয়েছিলেন।[4]

একজন শিশু যখন জন্মগ্রহণ করে তখন তার মন থাকে সম্পূর্ণরূপে পূতপবিত্র ও নিষ্পাপ। সে সময় তাকে সর্বপ্রথম যে বাক্য শুনানো হবে, সেটাই হবে তার সারাজীবনের চলার পাথেয়। ইসলাম স্বভাবজাত আদর্শ। এ আদর্শের বাণী তার কর্ণকুহুরে প্রবেশ করলে, সে নিজেকে এ পথের অনুসারী বানাবার প্রয়াস চালাবে সারাটি জীবন। কুরআন মাজীদে এরশাদ হয়েছে, فِطْرَةَ اللَّهِ الَّتِيْ فَطَرَ النَّاسَ عَلَيْهَا لَا تَبْدِيْلَ لِخَلْقِ اللَّهِ ذَلِكَ الدِّيْنُ الْقَيِّمُ وَلَكِنَّ أَكْثَرَ النَّاسِ لاَ يَعْلَمُوْنَ- ‘এ হচ্ছে আল্লাহর ঐ ফিৎরাত (প্রকৃতিজাত আদর্শ) যার উপর সমস্ত মানবগোষ্ঠীকে তিনি সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহর সৃষ্টির কোন পরিবর্তন নেই। এটাই সঠিক-সুন্দর দ্বীন। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ তা জানে না’ (রূম ৩০)

মা এ সময় অবচেতন অবস্থায় থাকেন, তাই এ ব্যাপারে বাবাকে ভূমিকা পালন করতে হবে। আর আল্লাহর বান্দা হিসাবে পৃথিবীর আলোয় পা রেখে প্রথম আল্লাহর একত্ববাদের কথা পিতার নিকট থেকে শুনবে এটি তার শাশ্বত অধিকার।

২. তাহনীক করা :

খেজুর চিবিয়ে সেই চর্বিত খেজুর নবজাতকের মুখে দেয়াকে তাহনীক বলে। আবু মূসা আশ‘আরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, وُلِدَ لِىْ غُلاَمٌ فَأَتَيْتُ بِهِ النَّبِىَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَسَمَّاهُ إِبْرَاهِيْمَ فَحَنَّكَهُ بِتَمْرَةٍ وَدَعَا لَهُ بِالْبَرَكَةِ وَرَفَعَهُ إِلَىَّ. ‘আমার একটি শিশু সন্তান জন্মগ্রহণ করলে আমি তাকে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর খেদমতে পেশ করলাম। তিনি তার নাম রাখলেন ইবরাহীম আর খেজুর দ্বারা তার তাহনীক করলেন এবং তার জন্য বরকতের দো‘আ করে তাকে আমার নিকট ফিরিয়ে দিলেন’।[5]

৩. সুন্দর নাম রাখা :

নামের মধ্যেও মানুষের ব্যক্তিত্বের প্রকাশ ঘটে। আর মনস্তাত্ত্বিক দিক দিয়েও ব্যাপক প্রভাব পড়ে। ভাল নামের বদৌলতে সন্তানের অনাগত দিনগুলো হ’তে পারে সুন্দর ও মঙ্গলময়। তাই পিতার কর্তব্য হ’ল সন্তানের সুন্দর ও অর্থবহ নাম রাখা। ইসলামের দেয়া পবিত্র দায়িত্ব হিসাবে পিতা পুত্রের উত্তম নাম রাখবেন। অর্থহীন ও সুন্দর নয় এমন নাম রাখলে এর প্রভাব শুধু তার উপরেই নয়; বরং পরবর্তী বংশধরদের উপরেও পড়ে। ইবনুল মুসাইয়িব (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, তাঁর পিতা নবী (ছাঃ)-এর নিকট আসলেন। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) জিজ্ঞেস করলেন, তোমার নাম কি? তিনি বললেন, ‘হায্ন (কর্কশ)। নবী করীম (ছাঃ) বললেন, বরং তোমার নাম ‘সাহ্ল’ (নম্র)। তিনি বললেন, مَا أَنَا بِمُغَيِّرٍ إسْمًا سَمَّانِيْهِ أَبِىْ. ‘আমার পিতা আমার যে নাম রেখেছেন, তা অন্য কোন নাম দিয়ে বদলাব না’। ইবনুল মুসাইয়িব (রহঃ) বলেন, فَمَا زَالَتْ فِيْنَا الْحُزُوْنَةُ بَعْدُ. ‘এরপর থেকে আমাদের বংশে চিরকাল রুক্ষতা বিদ্যমান ছিল’।[6]

অর্থহীন ও মন্দ নাম রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) পরিবর্তন করে মাধুর্য ও শ্রুতিপূর্ণ নাম রাখতেন। হাদীছে বর্ণিত আছে, إِنَّ النَّبِىَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يُغَيِّرُ الْإِسْمَ الْقَبِيْحَ. ‘নবী করীম (ছাঃ) খারাপ নাম পরিবর্তন করে দিতেন’।[7] রাসূল (ছাঃ) জনৈক ছাহাবীর নাম পরিবর্তন করে মুনযির রেখেছিলেন।[8] তাছাড়া তিনি (ছাঃ) ‘আছিয়া’ নাম্নী এক মহিলার নাম পরিবর্তন করে ‘জামীলা’ এবং ‘বার্রাহ’-এর নাম পরিবর্তন করে ‘যায়নাব’ রেখেছিলেন।[9]

আল্লাহ তা‘আলার বহু গুণবাচক নাম আছে, ঐ সমস্ত নামের সাথে ‘আবদ’ শব্দ যোগ করে নাম রাখা উত্তম। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, إِنَّ أَحَبَّ أَسْمَائِكُمْ إِلَى اللهِ: عَبْدُ اللهِ وَعَبْدُ الرَّحْمَانِ ‘আল্লাহর নিকট তোমাদের সবচেয়ে প্রিয় নাম আব্দুল্লাহ ও আব্দুর রহমান’।[10]

শিশু জন্মগ্রহণ করার পর পরই শিশুর নাম রাখা যায়।[11] তবে সবচেয়ে উত্তম হ’ল শিশুর জন্মের সপ্তম দিনে নাম রাখা।[12]

৪. আক্বীক্বা :

নবজাত শিশুর মাথার চুল অথবা সপ্তম দিনে নবজাতকের চুল ফেলার সময় যবেহকৃত বকরীকে আক্বীক্বা বলা হয়।[13] শিশুর জন্মের সপ্তম দিনে আক্বীক্বা করা উত্তম। এ মর্মে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘প্রতিটি শিশু তার আক্বীক্বার সাথে বন্ধক থাকে। অতএব তার জন্মের সপ্তম দিনে তার পক্ষ থেকে পশু যবেহ করবে, মাথার চুল মুন্ডন করবে এবং নাম রাখবে’।[14]

নবজাতক পুত্র সন্তান হ’লে দু’টি ছাগল এবং কন্যা হ’লে একটি ছাগল আক্বীক্বা হিসাবে প্রদান করতে হবে। উম্মে কুরয্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘সন্তান ছেলে হ’লে দু’টি ছাগল আর মেয়ে হ’লে একটি ছাগল আক্বীক্বা করবে’।[15] তবে পুত্র সন্তানের জন্য একটি ছাগলও আক্বীক্বা করা যায়। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) হাসান ও হুসাইন (রাঃ)-এর জন্য একটি করে ছাগল আক্বীক্বা করেছিলেন।[16]

৫. খাৎনা :

সন্তানের পিতার নিকট আরো কটি গুরুত্বপূর্ণ অধিকার হ’ল, তিনি যথাসময়ে তার খাৎনা করাবেন। পুত্র সন্তানের পুরুষাঙ্গের অগ্রভাগের বাড়তি চামড়া কেটে ফেলাকে খাৎনা বলে। খাৎনা করা একটি উত্তম পন্থা ও ইসলামের বিশেষ বৈশিষ্ট্যমন্ডিত কাজ। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘স্বভাব সম্মত কাজ পাঁচটি। তার মধ্যে খাৎনা করা একটি’।[17] আধুনিক বিজ্ঞানেও খাৎনার উপকারিতা স্বীকৃত।

৬. জীবনের নিরাপত্তা ও বিকাশ সাধনে লালন পালন করা :

পিতা হৃদয় নিংড়ানো ঐকান্তিক দরদ, ভালবাসা ও স্নেহ-মমতার কোমল পরশে সন্তানকে লালন-পালন করবেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘তাদের (সন্তান ও জননীর) ভরণ-পোষণের ভার পিতার উপরই ন্যস্ত’ (বাক্বারাহ ২/২৩৩)। পিতার নিকট হ’তে খাদ্য, বস্ত্র ও বাসস্থান সহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় মৌলিক উপকরণ সন্তানের প্রাপ্য অধিকার। সন্তানের এ সমস্ত প্রয়োজন পূরণে পিতা অমনোযোগী হ’লে অবশ্যই তাকে জবাবদিহি করতে হবে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘তোমরা প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল এবং প্রত্যেকেই আপন আপন দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে’।[18] সন্তানের জীবনের নিরাপত্তা, চিকিৎসা, রোগমুক্ত রাখা, স্বাস্থ্যবান রূপে গড়ে তোলা এবং জীবনের উন্নতি ও বিকাশকল্পে পিতাকে যথোপযুক্ত দায়িত্ব পালন করতে হবে।

শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশ সাধনে খাদ্যের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। জন্ম হবার পর সাধারণতঃ প্রথম ৪ থেকে ৬ মাস পর্যন্ত শিশুরা মায়ের বুকের দুধের উপর নির্ভরশীল থাকে। এ সময় পিতাকে মায়ের খাদ্যের প্রতি সুদৃষ্টি দিতে হবে। ছয় মাস পার হ’লে মায়ের দুধের পাশাপাশি শিশুর উপযোগী অন্যান্য পুষ্টিকর খাদ্যের ব্যবস্থা করবেন। এভাবে বয়স বাড়ার সাথে সাথে পর্যায়ক্রমে খিচুড়ি, ভাত, রুটি ও অন্যান্য খাদ্যের অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় যেন টাটকা শাক-সবজি থাকে সেদিকেও পিতাকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখতে হবে। এছাড়াও আয়োডিনযুক্ত লবণ ও বিশুদ্ধ পানির যোগান দিতে হবে। এতে খাদ্যের মৌলিক ছয়টি গুণ সংগৃহীত হবে। আর এর দ্বারা শরীরের গঠন ও ক্ষয়পূরণ নিশ্চিত হবার সাথে সাথে রোগ-ব্যাধির প্রতিরোধ ক্ষমতাও বৃদ্ধি পাবে।

হাদীছে নিজ পরিবারের জন্য ছওয়াবের আশায় ব্যয় করার ফলস্বরূপ একটি ‘ছাদাক্বা’ রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে’।[19] অন্য হাদীছে রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, أَفْضَلُ دِيْنَارٍ يُنْفِقُهُ الرَّجُلُ دِيْنَارٌ يُنْفِقُهُ عَلَى عِيَالِهِ. ‘সর্বোত্তম ব্যয় হচ্ছে ঐ অর্থ (দিনার) যা কোন ব্যক্তি ব্যয় করে নিজের পরিবার-পরিজনের জন্য’।[20]

[চলবে]

ড. মুহাম্মাদ শফীকুল আলম

প্রভাষক, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, রাজশাহী কোর্ট কলেজ।


[1]. বুখারী ও মুসলিম; মিশকাত হা/৩০৮০।

[2]. বুখারী হা/৫০৯০; মুসলিম হা/৬২৪; আবূ দাঊদ হা/২০৪৭।

[3]. ইসলামে শিশু পরিচর্যা, পৃঃ ২২।

[4]. তিরমিযী হা/১৫১৪; আবূদাঊদ হা/৫১০৫

[5]. বুখারী হা/৫৪৬৭ ‘আক্বীক্বা’ অধ্যায়

[6]. বুখারী হা/৬১৯০, ৬১৯৩; মিশকাত হা/৪৭৮১

[7]. তিরমিযী হা/২৮৩৯; মিশকাত হা/৪৭৭৪, হাদীছ ছহীহ

[8]. আবূদাঊদ হা/৪৯৫২,হাদীছ ছহীহ; মিশকাত হা/৪৭৫৯

[9]. মুসলিম, মিশকাত হা/৪৭৫৮; ইবনু মাজাহ হা/৩৭৩২, হাদীছ ছহীহ

[10]. মুসলিম, মিশকাত হা/৪৭৫২

[11]. বুখারী হা/৫৪৬৭ ‘আক্বীক্বা’ অধ্যায়

[12]. তিরমিযী হা/২৮৩২, হাদীছ হাসান

[13]. আল-মু‘জামুল ওয়াসীত, পৃঃ ৬১৬

[14]. আবূদাঊদ হা/২৮৩৮, হাদীছ ছহীহ

[15]. ইবনু মাজাহ হা/৩১৬২; আবূদাঊদ হা/২৮৪২, হাদীছ হাসান

[16]. আবূদাঊদ হা/২৮৪১; মিশকাত হা/৪১৫৫

[17]. তিরমিযী হা/২৭৫৬, হাদীছ ছহীহ

[18]. বুখারী হা/৫২০০; মিশকাত হা/৩৬৮৫

[19]. বুখারী, মুসলিম মিশকাত হা/১৯৩০

[20]. মুসলিম হা/৯৯৪; মিশকাত হা/১৯৩২






বিষয়সমূহ: বিবিধ
কুরবানীর মাসায়েল - আত-তাহরীক ডেস্ক
সফরের আদব - মুহাম্মাদ আব্দুল ওয়াদূদ
ইসলামে শিষ্টাচারের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা - ড. মুহাম্মাদ কাবীরুল ইসলাম
হাদীছের অনুবাদ ও ভাষ্য প্রণয়নে ভারতীয় উপমহাদেশের আহলেহাদীছ আলেমগণের অগ্রণী ভূমিকা - ড. নূরুল ইসলাম
মহামনীষীদের পিছনে মায়েদের ভূমিকা (শেষ কিস্তি) - মুহাম্মাদ আব্দুল মালেক
কুরআনের বঙ্গানুবাদ, মুদ্রণ প্রযুক্তি ও ঊনিশ শতকের মুসলিম সমাজে এর প্রভাব - আসাদুল্লাহ আল-গালিব (শিক্ষার্থী, ইংরেজী বিভাগ, ২য় বর্ষ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়)।
যাকাত ও ছাদাক্বা - আত-তাহরীক ডেস্ক
দো‘আর আদব বা শিষ্টাচার সমূহ - ড. মুহাম্মাদ কাবীরুল ইসলাম
মাদ্রাসার পাঠ্যবই সমূহের অন্তরালে (৯ম কিস্তি) - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে ভালবাসা (পূর্ব প্রকাশিতের পর) - ইহসান ইলাহী যহীর
শিক্ষাঙ্গনে অপরাজনীতি ও অনৈতিক প্রভাব বন্ধ করতে হবে - জামালুদ্দীন বারী
ইখলাছ (শেষ কিস্তি) - মুহাম্মাদ আব্দুল মালেক
আরও
আরও
.