জুম‘আর দিন মুসলমানদের সাপ্তাহিক ঈদ। এটি সপ্তাহের শ্রেষ্ঠ দিন। এ দিনে অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজের সমাধান করা হয়েছে। এ দিনে আদম (আঃ)-কে সৃষ্টি করা হয়েছে। এ দিনে তাঁকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হয়েছে এবং এ দিনেই তাঁকে জান্নাত থেকে বের করে (দুনিয়ায় পাঠিয়ে) দেয়া হয়েছে। আর ক্বিয়ামতও সংঘটিত হবে জুম‘আর দিনেই।[1] রাসূল (ছাঃ) বলেন, তোমাদের দিনগুলির মধ্যে সর্বোত্তম দিন হচ্ছে জুম‘আর দিন। সুতরাং ঐ দিন তোমরা আমার উপর অধিকমাত্রায় দরূদ পড়। কেননা তোমাদের দরূদ আমার কাছে পেশ করা হয়। লোকেরা বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি তো (মৃত্যুর পর) পচে-গলে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবেন। তখন আমাদের দরূদ কিভাবে আপনার কাছে পেশ করা হবে? তিনি বললেন, আল্লাহ নবী-রাসূলগণের দেহসমূহকে খেয়ে ফেলা মাটির উপর হারাম করে দিয়েছেন।[2]

এই দিনে একটি সময় আছে যখন লোকদের দো‘আ কবুল হয়। এজন্য এই দিনের যাবতীয় ইবাদত সুন্নাহ ভিত্তিক হওয়া আবশ্যক। বিশেষতঃ জুম‘আর দিনের নফল ছালাত। এই নফল ছালাতের নাম নিয়ে যেমন রয়েছে বিভ্রান্তি তেমনি রাক‘আত সংখ্যার ব্যাপারেও রয়েছে মতপার্থক্য। একশ্রেণীর আলেম রাসূল (ছাঃ) ও ছাহাবায়ে কেরামের আমলকে তোয়াক্কা না করে যঈফ ও জাল বর্ণনাকে পুঁজি করে সমাজে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন। অপরদিকে যারা ছহীহ হাদীছ ও সালাফদের আমলের অনুসরণ করছেন তাদের দ্বীনী ইলম নিয়ে অনর্থক সমালোচনা করা হচ্ছে। বিষয়টি স্পষ্ট করে তোলার জন্যই আমাদের এই প্রয়াস।-

জুম‘আর ফরয ছালাতের পূর্বে করণীয় :

জুম‘আর দিন আগেভাগে মসজিদে যাওয়ার বিশেষ ফযীলত রয়েছে। যেমন উট, গরু, দুম্বা কুরবানীর ছওয়াব বা মুরগী ও ডিম দান করার ছওয়াব। সেজন্য মুছল্লীগণ মসজিদে তাড়াতাড়ি গমন করে ইমামের খুৎবার জন্য মিম্বরে আরোহণের পূর্ব পর্যন্ত নফল ছালাত আদায় করবেন। সেটি দুই, চার, ছয়, আট বা আরো অধিক রাক‘আত হ’তে পারে।[3] কারণ হাদীছে নির্দিষ্ট রাক‘আত সংখ্যা উল্লেখ করা হয়নি। তাছাড়া রাসূল (ছাঃ), ছাহাবায়ে কেরাম বা তাবেঈনে ইযামের আমল ও বাণী দ্বারা জুম‘আর পূর্বে চার বা দুই রাক‘আত সুন্নাতে রাতেবা প্রমাণিত নয়।

যেমন সালমান ফারেসী (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন,لاَ يَغْتَسِلُ رَجُلٌ يَوْمَ الْجُمُعَةِ، وَيَتَطَهَّرُ مَا اسْتَطَاعَ مِنْ طُهْرٍ، وَيَدَّهِنُ مِنْ دُهْنِهِ، أَوْ يَمَسُّ مِنْ طِيبِ بَيْتِهِ ثُمَّ يَخْرُجُ، فَلاَ يُفَرِّقُ بَيْنَ اثْنَيْنِ، ثُمَّ يُصَلِّى مَا كُتِبَ لَهُ، ثُمَّ يُنْصِتُ إِذَا تَكَلَّمَ الإِمَامُ، إِلاَّ غُفِرَ لَهُ مَا بَيْنَهُ وَبَيْنَ الْجُمُعَةِ الأُخْرَى، ‘যে ব্যক্তি জুম‘আর দিন গোসল করবে এবং সাধ্যমত পবিত্রতা অর্জন করবে, তারপর নিজের তেল হ’তে তার শরীরে কিছু মাখাবে অথবা ঘরে সুগন্ধি থাকলে কিছু সুগন্ধি লাগাবে। তারপর মসজিদের দিকে রওনা হবে। দু’ব্যক্তির মধ্যে ফাঁক করবে না। অতঃপর যতটুকু সম্ভব ছালাত (নফল) আদায় করবে এবং চুপচাপ বসে ইমামের খুৎবা শুনবে। তার এই জুম‘আ ও আগের জুম‘আর মধ্যবর্তী সকল গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে’।[4] অন্য বর্ণনায় এসেছে, مَنِ اغْتَسَلَ ثُمَّ أَتَى الْجُمُعَةَ، فَصَلَّى مَا قُدِّرَ لَهُ، ثُمَّ أَنْصَتَ حَتَّى يَفْرُغَ مِنْ خُطْبَتِهِ، ثُمَّ يُصَلِّي مَعَهُ، غُفِرَ لَهُ مَا بَيْنَهُ وَبَيْنَ الْجُمُعَةِ الْأُخْرَى، وَفَضْلُ ثَلَاثَةِ أَيَّامٍ، ‘যে ব্যক্তি গোসল করে জুম‘আর ছালাত আদায় করতে আসল ও যতটুকু সম্ভব ছালাত আদায় করল, ইমামের খুৎবা শেষ হওয়া পর্যন্ত চুপচাপ থাকল। এরপর ইমামের সাথে ছালাত (ফরয) আদায় করল। তাহ’লে তার এই জুম‘আ থেকে বিগত জুম‘আর মাঝখানের, বরং এর চেয়েও তিন দিন আগের গুনাহসমূহ মাফ করে দেয়া হবে’।[5]

সম্মানিত পাঠক, রাসূল (ছাঃ)-এর বাণী- فَصَلَّى مَا قُدِّرَ لَهُ ‘যতটুকু সম্ভব ছালাত আদায় করল’ বাক্য দ্বারা এ কথা সুস্পষ্ট যে, রাসূল (ছাঃ) এ সময়ে অধিক রাক‘আত নফল ছালাত আদায়ের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের ব্যাপারে উৎসাহিত করেছেন। অন্য রেওয়ায়াতে এসেছে, ثُمَّ يَرْكَعُ مَا قُضِيَ لَهُ، আবার কোন রেওয়ায়াতে এসেছে, فَيَرْكَعُ إِنْ بَدَا لَهُ، যেগুলোর সারমর্ম হচ্ছে- সময় ও সাধ্যানুযায়ী খুৎবা শুরুর পূর্ব পর্যন্ত নফল ছালাত আদায় করতে থাকবে।[6] উক্ত হাদীছের ব্যাখ্যায় ইমাম নববী (রহঃ) বলেন, أَنَّ التَّنَفُّلَ قَبْلَ خُرُوْجِ الْإِمَامِ يَوْمَ الْجُمُعَةِ مُسْتَحَبٌّ، ‘জুম‘আর দিনে ইমামের খুৎবার জন্য বের হওয়ার পূর্বে নফল ছালাত আদায় করা মুস্তাহাব। তিনি আরো বলেন, وَفِيهِ أَنَّ النَّوَافِلَ الْمُطْلَقَةَ لَا حَدَّ لَهَا، ‘জুম‘আর দিনে সাধারণ নফল ছালাত রয়েছে, যার রাক‘আত সংখ্যা নির্দিষ্ট নয়’।[7] ইবনুল মুলাক্কিন (রহঃ) বলেন,فيه أن التنفل قبل خروج الإمام يوم الجمعة مستحب وأن النوافل المطلقة لا حد لها، ‘জুম‘আর দিনে ইমামের খুৎবার জন্য বের হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত নফল ছালাত আদায় করা মুস্তাহাব হওয়ার প্রমাণ রয়েছে। আর সাধারণ নফল ছালাতের রাক‘আত সংখ্যা নির্দিষ্ট নয়’।[8]

ছাহেবে মির‘আত বলেন, ‘এতে জুম‘আর পূর্বে নফল ছালাত শরী‘আতসিদ্ধ হওয়ার দলীল রয়েছে। আর এর সংখ্যা নির্দিষ্ট নয়’।[9] ইমাম শাওকানী (রহঃ) বলেন, ‘এই হাদীছে জুম‘আর পূর্বে (বহু রাক‘আত) ছালাত শরী‘আত সম্মত হওয়ার ব্যাপারে দলীল রয়েছে’।[10]

আব্দুল মুহসিন আল-আববাদ (রহঃ) বলেন,وليس للجمعة سنة معينة محددة قبلها، ولكن الإنسان إذا دخل المسجد يوم الجمعة فله أن يصلى ما قدر له، ‘জুম‘আর ছালাতের পূর্বে নির্ধারিত ও নির্দিষ্ট সংখ্যক সুন্নাত ছালাত নেই। লোকেরা জুম‘আর দিনে যখন মসজিদে প্রবেশ করবে তখন তার সাধ্যানুযায়ী নফল ছালাত আদায় করবে’।[11]

জুম‘আর ছালাতের পূর্বে ছাহাবায়ে কেরাম যা করতেন :

জুম‘আর দিনে ছাহাবী ও তাবেঈনে ইযাম যত তাড়াতাড়ি সম্ভব মসজিদে গমন করতেন। অতঃপর সময় সাপেক্ষে ছালাত আদায় করতেন। যখন ইমাম খুৎবা দেওয়ার জন্য মসজিদে চলে আসতেন তখন তারা ইমামের খুৎবা শুনতেন। ইমাম গাযালী (রহঃ) বলেন, وَكَانَ يرى فِي الْقرن الأول بعد طُلُوع الْفجْر الطرقات مَمْلُوءَة من النَّاس يَمْشُونَ فِي السرج ويزدحمون فِيهَا الى الْجَامِع كأيام العيد حتى اندرس ذلك فقيل أول بدعة حدثت في الإسلام ترك البكور إلى الجامع ‘ইসলামের প্রথম যুগে দেখা যেত যে, ফজর উদয় হওয়ার পরেই লোকদের ভিড়ে রাস্তাগুলো ভরে যেত। তারা ঈদের দিনের ন্যায় দিনের আলোতে হেঁটে জুম‘আ মসজিদে ভিড় জমাত। বর্তমানে তা উঠে গেছে। বলা হয়ে থাকে যে, ইসলামে প্রথম যে বিদ‘আত চালু হয়েছে তা হচ্ছে- জুম‘আ মসজিদে সকাল সকাল গমনাগমন ছেড়ে দেওয়া’।

ইবনু মাসঊদ (রাঃ) সম্পর্কে বর্ণিত হয়েছে,

ودخل ابن مسعود رضي الله عنه بكرة الجامع فَرَأى ثَلَاثَة نفر قد سَبَقُوهُ بالبكور فَاغْتَمَّ لذَلِك وَجعل يَقُول لنَفسِهِ معاتبا إِيَّاهَا رَابِع أَرْبَعَة وَمَا رَابِع أَرْبَعَة بِسعِيد- 

‘একদা ইবনু মাসঊদ (রাঃ) জুম‘আর সকালে মসজিদে প্রবেশ করে দেখলেন তিনজন সদস্যের একটি দল তার পূর্বেই অতি সকালে মসজিদে প্রবেশ করেছে। এতে তিনি বিষণ্ণ মনে নিজেকে ভৎর্সনা করে বলা শুরু করলেন, আমি চারজনের চতুর্থজন! চারজনের চতুর্থ ব্যক্তি খুব সৌভাগ্যশালী নয়’।[12]

আবু তালিব মাক্কী বলেন, ছাহাবীগণের কেউ কেউ জুম‘আর দিনের ফযীলত লাভের জন্য আগের দিন রাতে মসজিদে ঘুমাতেন। আবার কেউ অতিরিক্ত মর্যাদা লাভের জন্য শনিবার রাতেও মসজিদে অবস্থান করতেন। আর সালাফদের অনেকে ফজরের ছালাত জুম‘আ মসজিদে গিয়ে আদায় করতেন এবং জুম‘আর জন্য অপেক্ষা করতেন, যাতে প্রথম মুহূর্তের (উট কুরবানীর) ফযীলত লাভ করতে ও কুরআন খতম করতে পারেন। আর সাধারণ মুমিনগণ নিজেদের ওয়াক্তিয়া মসজিদে ফজরের ছালাত আদায় করে জুম‘আ মসজিদে চলে যেতেন’।[13]

শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনু তায়মিয়াহ (রহঃ) বলেন, وَهَذَا هُوَ الْمَأْثُورُ عَنِ الصَّحَابَةِ كَانُوا إذَا أَتَوْا الْمَسْجِدَ يَوْمَ الْجُمُعَةِ يُصَلُّونَ مِنْ حِينِ يَدْخُلُونَ مَا تَيَسَّرَ فَمِنْهُمْ مَنْ يُصَلِّي عَشْرَ رَكَعَاتٍ وَمِنْهُمْ مَنْ يُصَلِّي اثْنَتَيْ عَشْرَةَ رَكْعَةً وَمِنْهُمْ مَنْ يُصَلِّي ثَمَانِ رَكَعَاتٍ وَمِنْهُمْ مَنْ يُصَلِّي أَقَلَّ مِنْ ذَلِكَ. ‘ছাহাবীগণ থেকে এটাই বর্ণিত হয়েছে যে, জুম‘আর দিনে তারা যখন মসজিদে আসতেন তখন প্রবেশ করার পর থেকে সাধ্যমত ছালাত আদায় করতে থাকতেন। তাদের কেউ দশ রাক‘আত আদায় করতেন, কেউ বারো রাক‘আত পড়তেন, কেউ আট রাক‘আত পড়তেন, কেউ আবার তার থেকেও কম পড়তেন।[14]

যেমন আইউব (রহঃ) বলেন, আমি নাফে‘ (রহঃ)-কে বললাম,أَكَانَ ابْنُ عُمَرَ يُصَلِّي قَبْلَ الْجُمُعَةِ؟ فَقَالَ: قَدْ كَانَ يُطِيلُ الصَّلَاةَ قَبْلَهَا، وَيُصَلِّي بَعْدَهَا رَكْعَتَيْنِ فِي بَيْتِهِ، وَيُحَدِّثُ أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يَفْعَلُ ذَلِكَ- ‘ইবনু ওমর (রাঃ) কি জুম‘আর ছালাতের পূর্বে কোন ছালাত আদায় করতেন? তিনি বললেন, ইবনে ওমর (রাঃ) জুম‘আর ফরযের পূর্ববর্তী ছালাত দীর্ঘায়িত করতেন এবং জুম‘আর ছালাত আদায়ের পর ঘরে ফিরে দুই রাক‘আত ছালাত আদায় করতেন। তিনি আরো বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এইরূপে জুম‘আর দিনে ছালাত আদায় করতেন। অর্থাৎ জুম‘আর পরে বাড়িতে দুই রাক‘আত সুন্নাত ছালাত আদায় করতেন’।[15] আরেকটি হাদীছে এসেছে, 

عَنْ نَافِعٍ، أَنَّ ابْنَ عُمَرَ كَانَ يَغْدُو إِلَى الْمَسْجِدِ يَوْمَ الْجُمُعَةِ، فَيُصَلِّي رَكَعَاتٍ يُطِيلُ فِيهِنَّ الْقِيَامَ، فَإِذَا انْصَرَفَ الْإِمَامُ رَجَعَ إِلَى بَيْتِهِ فَصَلَّى رَكْعَتَيْنِ، وَقَالَ: هَكَذَا كَانَ يَفْعَلُ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ-

‘নাফে‘ হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, জুম‘আর দিনে ইবনু ওমর সকাল সকাল মসজিদে যেতেন এবং অনেক রাক‘আত ছালাত আদায় করতেন। তাতে তিনি ক্বিয়াম দীর্ঘ করতেন। যখন ইমাম সালাম ফিরাতেন বাড়ি ফিরে গিয়ে দুই রাক‘আত ছালাত আদায় করতেন। আর বলতেন, এভাবেই রাসূল (ছাঃ) আমল করতেন’।[16] অর্থাৎ জুম‘আর পরে বাড়িতে গিয়ে দুই রাক‘আত সুন্নাত আদায় করতেন। উক্ত আছারে রাক‘আত সংখ্যা উল্লেখ নেই। যা প্রমাণ করে যে, ইবনু ওমর (রাঃ) মসজিদে আগেভাগে গিয়ে অনেক নফল ছালাত আদায় করতেন। অবশ্য কোন কোন বর্ণনায় রয়েছে ইবনু ওমর (রাঃ) জুম‘আর পূর্বে ১২ রাক‘আত নফল ছালাত আদায় করতেন। আর ইবনু আববাস (রাঃ) ৮ রাক‘আত আদায় করতেন।[17]

ইসলামের পঞ্চম খলীফাখ্যাত ওমর ইবনু আব্দিল আযীয (রহঃ) বলতেন, صَلِّ قَبْلَ الْجُمُعَةِ عَشْرَ رَكَعَاتٍ‘জুম‘আর পূর্বে দশ রাক‘আত নফল ছালাত আদায় কর’।[18] অন্যদিকে আলী ও আব্দুল্লাহ ইবনু মাস‘ঊদ (রাঃ) জুম‘আর পূর্বে এবং পরে চার রাক‘আত করে ছালাত আদায় করতেন মর্মে আছার বর্ণিত হয়েছে।[19] প্রখ্যাত তাবেঈ আত্বা বিন রাবাহ জুম‘আর পূর্বে বারো রাক‘আত নফল ছালাত আদায় করতেন। তাকে জিজ্ঞেস করা হ’লে তিনি উম্মে হাবীবা থেকে এর স্বপক্ষে হাদীছ বর্ণনা করেন।[20]

তাহ্ইয়াতুল মসজিদ আদায়ের বিধান

যেকোন সময় মসজিদে প্রবেশ করলে তা্ইয়াতুল মসজিদ দু’রাক‘আত ছালাত আদায় করা সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ।[21] এমনকি খুৎবা চলাকালীন কথা বলা বা অন্যান্য কাজ নিষেধ হ’লেও তা্ইয়াতুল মসজিদ আদায় করার বিধান রয়েছে। জাবের বিন আব্দুল্লাহ (রাঃ) বলেন, جَاءَ سُلَيْكٌ الْغَطَفَانِيُّ يَوْمَ الْجُمُعَةِ، وَرَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَخْطُبُ، فَجَلَسَ، فَقَالَ لَهُ: يَا سُلَيْكُ قُمْ فَارْكَعْ رَكْعَتَيْنِ، وَتَجَوَّزْ فِيهِمَا، ثُمَّ قَالَ: إِذَا جَاءَ أَحَدُكُمْ يَوْمَ الْجُمُعَةِ، وَالْإِمَامُ يَخْطُبُ، فَلْيَرْكَعْ رَكْعَتَيْنِ، وَلْيَتَجَوَّزْ فِيهِمَا، ‘রাসূল (ছাঃ)-এর খুৎবা চলাকালীন সুলাইক গাতফানী মসজিদে প্রবেশ করে বসে পড়লে রাসূল (ছাঃ) তাকে বললেন, তুমি দাঁড়াও এবং সংক্ষেপে দু’রাক‘আত ছালাত আদায় কর। অতঃপর তিনি বললেন, তোমাদের কেউ যখন ইমামের খুৎবা চলাকালীন সময়ে উপস্থিত হয়, সে যেন দু’রাকআত ছালাত পড়ে নেয়’।[22]

আব্দুল্লাহ বিন আবী সারহ বলেন, একদা ছাহাবী আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) মসজিদে প্রবেশ করলেন। তখন মারওয়ান বিন হাকাম খুৎবা দিচ্ছিলেন। তিনি ছালাত পড়তে শুরু করলে প্রহরীরা তাঁকে বসতে আদেশ করল। কিন্তু তিনি তাদের কথা না শুনেই ছালাত শেষ করলেন। ছালাত শেষে লোকেরা তাকে বলল, আল্লাহ আপনাকে রহম করুন। এক্ষণি ওরা যে আপনাকে অপমান করত। উত্তরে তিনি বললেন, আমি সে ছালাত কেন ছাড়ব, যে ছালাত পড়তে নবী করীম (ছাঃ)-কে আদেশ করতে দেখেছি।[23]

আ‘লা ইবনু খালিদ আল-কুরাশী (রহঃ) বলেন, আমি হাসান বছরী (রহঃ)-কে দেখেছি যে, তিনি জুম‘আর দিন মসজিদে আসলেন তখন ইমাম খুৎবা দিচ্ছিলেন। এতদসত্বেও তিনি দু’রাকআত ছালাত আদায় করে বসলেন।[24] ইমাম তিরমিযী (রহঃ) বলেন, হাসান বছরী (রহঃ) এই কাজ হাদীছের অনুসরণেই করেছেন।[25]

ইবনু আবী ওমর (রহঃ) বলেন, ইবনু উয়ায়না (রহঃ) যখনই আসতেন ইমামের খুৎবারত অবস্থায়ও এই দু’রাক‘আত ছালাত আদায় করতেন এবং পড়ার জন্য আদেশ করতেন।[26] তাছাড়া যেকোন সময় মসজিদে প্রবেশকালে বসার পূর্বে দু’রাক‘আত ছালাত আদায়ের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘যখন তোমাদের কেউ মসজিদে প্রবেশ করবে, তখন সে যেন বসার পূর্বে দু’রাক‘আত ছালাত পড়ে নেয়’।[27] ইমামের খুৎবাকালীন সময়ে দু’রাক‘আত ‘তাহ্ইয়াতুল মসজিদ’ সুন্নাতসম্মত হওয়ার ব্যাপারে ইজমা‘ দাবী করেছেন ইমাম ইবনু হাযম ও হাফেয ইবনু হাজার আসক্বালানী (রহঃ)।[28] এতগুলো বর্ণনা থাকার পরেও কেউ কেউ খুৎবাকালীন দু’রাক‘আত তাহ্ইয়াতুল মসজিদ আদায় করতে নিষেধ করেন। আবার কেউ মাকরূহ বলেন। এগুলো রাসূল (ছাঃ)-এর সুন্নাতের প্রতি চরম ধৃষ্টতা বৈ কিছুই না।

(ক্রমশঃ)


[1]. মুসলিম হা/৮৫৪; মিশকাত হা/১৩৫৬

[2]. আবূদাউদ হা/১০৪৭; নাসাঈ হা/১৩৭৪; ছহীহুত তারগীব হা/১৬৭৪

[3]. ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ২৪/১৮৯

[4]. বুখারী হা/৮৮৩; মিশকাত হা/১৩৮১

[5]. মুসলিম হা/৮৫৭; মিশকাত হা/১৩৮২

[6]. ইবনু হাজার, ফাৎহুল বারী ২/৩৭২

[7]. শরহ মুসলিম ৬/১৪৬

[8]. আত-তাওযীহ ৭/৪০৫

[9]. মির‘আত ৪/৪৫৮

[10]. নায়লুল আওতার ৩/৩০৩

[11]. শারহু সুনানি আবীদাউদ ৩/৪০

[12]. গাযালী, ইহ্ইয়াউ উলূমিদ্দীন ১/১৮২; আবু শামাহ, আল-বা‘য়েছ ৯৭ পৃ.

[13]. ক্বুতুল কুলূব ১/১২৭

[14]. মাজমূ‘উল ফাতাওয়া ২৪/১৮৯

[15]. আবূদাউদ হা/১১২৮; ছহীহ ইবনু খুযায়মাহ হা/১৮৩৬; আলবানী, তামামুল মিন্নাহ ৩২৬ পৃ.

[16]. আহমাদ হা/৫৮০৭

[17]. আবু শামাহ, আল-বা‘য়েছ ৯৭ পৃ.

[18]. মুছান্নাফে ইবনু আবী শায়বাহ হা/৫৩৬২

[19]. তিরমিযী হা/৫২৩; ইবনু আবী শায়বাহ হা/৫৩৬০; মুছান্নাফে আব্দুর রাযযাক হা/৫৫২৪; শারহু মা‘আনিল আছার হা/১৯৭০

[20]. মুছান্নাফে আব্দুর রাযযাক হা/৫২২১

[21]. নববী, আল-মাজমূ‘ ৪/৫৫১; ইবনু কুদামাহ, মুগনী ২/২৩৬; ফাতাওয়া লাজনা দায়েমাহ ৭/১৩৭

[22]. মুসলিম হা/৮৭৫; মিশকাত হা/১৪১১

[23]. তিরমিযী হা/৫১১; ছহীহ ইবনু খুযায়মাহ হা/১৭৯৯, ১৮৩০; বুখারী, আল কেরাতু খালফাল ইমাম হা/১০৩

[24]. মুছান্নাফে ইবনু আবী শায়বাহ হা/৫১৬৪-৬৫; আব্দুর রাযযাক হা/৫৫১৫

[25]. তিরমিযী হা/৫১১-এর আলোচনা দ্রষ্টব্য; আলবানী, আছ-ছামারুল মুস্তাত্বাব ৬২১ পৃ.

[26]. তিরমিযী হা/৫১১-এর আলোচনা

[27]. মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/৭০৪

[28]. ইবনু হাযম, আল-মুহাল্লা ৩/২৭৭; ইবনু হাজার, ফাৎহুল বারী ২/৪১১






বিষয়সমূহ: জুম‘আ ও ঈদ
কুরবানী : ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি - কামারুযযামান বিন আব্দুল বারী
বিশ্ব ভালবাসা দিবস - আত-তাহরীক ডেস্ক
শিক্ষাঙ্গনে অপরাজনীতি ও অনৈতিক প্রভাব বন্ধ করতে হবে - জামালুদ্দীন বারী
কবিগুরুর অর্থকষ্টে জর্জরিত দিনগুলো - ড. গুলশান আরা
আল্লাহ যার কল্যাণ চান - আসাদুল্লাহ আল-গালিব
কুরবানীর মাসায়েল
আক্বীদা ও আহকামে হাদীছের প্রামাণ্যতা (৭ম কিস্তি) - মীযানুর রহমান মাদানী
জামা‘আতবদ্ধ জীবন যাপনের আবশ্যকতা - মুহাম্মাদ আব্দুর রহীম
মানবাধিকার ও ইসলাম (৮ম কিস্তি) - শামসুল আলম
মানুষের দো‘আয় শামিল হওয়ার উপায় - আব্দুল্লাহ আল-মা‘রূফ
‘আহলেহাদীছ আন্দোলন বাংলাদেশ’ কি চায়, কেন চায় ও কিভাবে চায়? - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
আশূরায়ে মুহাররম - আত-তাহরীক ডেস্ক
আরও
আরও
.