সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)। পৃথিবীর আদি থেকে অন্ত পর্যন্ত আগত তিনিই একমাত্র ব্যক্তিত্ব, যাঁর প্রতিটি দিক ও বিভাগে রয়েছে অবিস্মরণীয় অবদান। তিনি ব্যতীত পৃথিবীতে এমন কোন মানবের আবির্ভাব ঘটেনি যার প্রতিটি দিক ও বিভাগে অবদান রয়েছে। ধর্ম, রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজনীতি, সমরনীতি, সাহিত্য, ব্যবসা-বাণিজ্য, চিকিৎসা সকল ক্ষেত্রেই রয়েছে তাঁর অতুলনীয় অবদান। আলোচ্য প্রবন্ধে করোনা চিকিৎসায় রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর অবদান তুলে ধরার প্রয়াস পাব ইনশাআল্লাহ।
সুস্থতা মহান আল্লাহ প্রদত্ত বান্দার প্রতি অপার নে‘মত। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, اغْتَنِمْ خَمْسًا قَبْلَ خَمْسٍ : شَبَابَكَ قَبْلَ هَرَمِكَ، وَصِحَّتَكَ قَبْلَ سَقَمِكَ، وَغِنَاكَ قَبْلَ فَقْرِكَ، وَفَرَاغَكَ قَبْلَ شُغْلِكَ، وَحَيَاتَكَ قَبْلَ مَوْتِكَ ‘তুমি পাঁচটি বস্ত্তর পূর্বে পাঁচটি বস্ত্তকে গণীমত (সম্পদ) মনে কর : (১) বার্ধক্য আসার পূর্বে যৌবনকে (২) অসুস্থ হওয়ার পূর্বে সুস্থতাকে (৩) দরিদ্রতার পূর্বে সচ্ছলতাকে (৪) ব্যস্ততার পূর্বে অবসর সময়কে এবং (৫) মৃত্যুর পূর্বে তোমার জীবনকে’।[1]
সুস্থ থাকার আবশ্যিক পূর্বশর্ত হ’ল হালাল ও পরিমিত খাদ্য গ্রহণ এবং অসুস্থ হয়ে পড়লে সঠিক ঔষধ সেবন। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এসব বিষয়ে সঠিক দিক-নির্দেশনা দিয়েছেন। শুধু তাই নয়, বর্তমানে বিশ্বব্যাপী চলমান জীবন বিধ্বংসী মহামারী ‘করোনা ভাইরাস’ থেকে কিভাবে আত্মরক্ষা করতে হবে সে বিষয়েও সুষ্পষ্ট নির্দেশনা দিয়ে গেছেন। লকডাউন, হোম কোয়ারেন্টাইন, আইসোলেশন প্রভৃতি শব্দের সাথে বিশ্ববাসী দুই বছর পূর্বেও তেমন পরিচিত ছিল না বললেই চলে। কিন্তু রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) সাড়ে চেŠদ্দশত বছর পূর্বেই এসব বিষয়ে দিক-নির্দেশনা দিয়ে গেছেন।
মহামারী করোনা ভাইরাস তথা সংক্রামক ব্যাধি :
মহামারী করোনা ভাইরাস তথা সংক্রামক ব্যাধিকে কেন্দ্র করে মুসলিম উম্মাহ বিশ্বাসগতভাবে তিন ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। যথা:
(১) কতিপয় আলেম মনে করেন সংক্রামক ব্যাধি বলতে কিছু নেই। ব্যাধি সংক্রামক হ’তে পারে না। তাদের দলীল হ’ল রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,لاَ عَدْوَى ‘রোগের কোন সংক্রমণ নেই’।[2] একথা বলার পর জনৈক বেদুঈন বলল, উটের পালে একটি চর্মরোগওয়ালা উট মিশে সবগুলোকে চর্মরোগগ্রস্ত করে দেয় কিভাবে? উত্তরে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন,فَمَنْ أَعْدَى الأَوَّلَ، ‘তাহ’লে প্রথম উটটিকে কে রোগাক্রান্ত করেছিল’?[3]
(২) দ্বিতীয় দলের মতে, সংক্রামক ব্যাধি অবশ্যই আছে এবং তা যে কাউকে সংক্রমিত করতে পারে। তাদের দলীল রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,وَفِرَّ مِنَ الْمَجْذُوْمِ كَمَا تَفِرُّ مِنَ الأَسَدِ، ‘কুষ্ঠ রোগী থেকে দূরে থাক, যেভাবে তুমি সিংহ থেকে দূরে থাক’।[4]
(৩) তৃতীয় দল তথা সঠিক অভিমত পোষণকারী হ’ল- সংক্রামক ব্যাধি রয়েছে, তবে তা তাক্বদীরে না থাকলে কাউকে সংক্রমিত করতে পারবে না। কেননা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর হাদীছ পরস্পর বিপরীত হ’তে পারে না। শুধু তাই নয়, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) যে হাদীছে বলেছেন,لاَ عَدْوَى ‘সংক্রামক রোগ বলতে কিছুই নেই’। ঐ একই হাদীছের দ্বিতীয়াংশে বলেছেন, وَفِرَّ مِنَ الْمَجْذُوْمِ كَمَا تَفِرُّ مِنَ الأَسَدِ، ‘কুষ্ঠ রোগী থেকে পলায়ন কর, যেভাবে তুমি সিংহ থেকে পলায়ন করে থাক’।[5]
অতএব হাদীছের উভয় অংশের মাঝে সামঞ্জস্য বিধান এটাই যে, সংক্রামক ব্যাধি আছে, কিন্তু আল্লাহর ইচ্ছা ব্যতীত এর দ্বারা কেউ সংক্রমিত হবে না। অন্যত্র রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,وَأَنَّ اللهَ جَعَلَهُ رَحْمَةً لِلْمُؤْمِنِيْنَ، لَيْسَ مِنْ أَحَدٍ يَقَعُ الطَّاعُونُ فَيَمْكُثُ فِى بَلَدِهِ صَابِرًا مُحْتَسِبًا، يَعْلَمُ أَنَّهُ لاَ يُصِيبُهُ إِلاَّ مَا كَتَبَ اللهُ لَهُ، إِلاَّ كَانَ لَهُ مِثْلُ أَجْرِ شَهِيْدٍ. ‘মুসলিমের জন্য একে রহমত করে দিয়েছেন। প্লেগে আক্রান্ত শহরে কোন বান্দা যদি ধৈর্য ধরে বিশ্বাসের সাথে অবস্থান করে, সেখান থেকে বের না হয়, আর সে জানে যে আল্লাহ তার জন্য যা লিখেছেন তাছাড়া কিছুই তাকে স্পর্শ করবে না, সে অবস্থায় সে শহীদের ছওয়াব পাবে’।[6]
লক ডাউন, হোম কোয়ারেন্টাইন, আইসোলেশন সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর দিক নির্দেশনা :
লক ডাউন : রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,إِذَا سَمِعْتُمْ بِالطَّاعُونِ بِأَرْضٍ فَلاَ تَدْخُلُوهَا ، وَإِذَا وَقَعَ بِأَرْضٍ وَأَنْتُمْ بِهَا فَلاَ تَخْرُجُوا مِنْهَا ‘যখন তোমরা কোন অঞ্চলে প্লেগ/সংক্রামক ব্যাধির সংবাদ শোন, তখন সেই এলাকায় প্রবেশ করো না। বরং তোমরা যেখানে অবস্থান কর, সেখানে প্লেগের বিস্তার ঘটলে সেখান থেকে বের হইও না’।[7]
এটা হচ্ছে আল্লাহর এক আযাব। আল্লাহ তা‘আলা যাকে ইচ্ছা তার ওপরই প্রেরণ করেন। আল্লাহ তাআলা এটা মুসলিমের জন্য রহমতে পরিণত করেছেন। প্লেগাক্রান্ত শহরে কোন বান্দা যদি ধৈর্যধারণ করে এ বিশ্বাস নিয়ে সেখানেই অবস্থান করে, তা থেকে বের না হয়। আল্লাহ তাআলা তার জন্য যা ভাগ্যে লিখেছেন তা ব্যতীত কিছুই তাকে স্পর্শ করবে না, তাহলে সে শহীদের সাওয়াব লাভ করবে।
কোন এলাকা বা শহর যদি প্লেগ রোগে আক্রান্ত হয়, আর এ খবর যদি কেউ পায় তাহ’লে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাকে উক্ত শহরে প্রবেশ করতে নিষেধ করেছেন। কারণ সেও সেই রোগে আক্রান্ত হ’তে পারে। কিন্তু প্লেগ রোগে আক্রান্ত যে শহরটিতে শত শত মানুষ মারা যাচ্ছে এমতাবস্থায় সেই শহরের সুস্থ ব্যক্তিরা কেন সেই শহর থেকে বের হবে না? কেন রাসূল (ছাঃ) বের হ’তে নিষেধ করলেন? ইসলাম মানুষকে কখনও ক্ষতি ও ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয় না, বরং ইসলাম মানুষের সার্বিক কল্যাণ চায়। ইসলামে রয়েছে সর্বস্তরে, সর্বাবস্থায় চিরন্তন সফলতা।
ডাক্তার আদ-দানমার্কীকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, আপনি যদি এমন শহরের শাসক হয়ে থাকেন যে শহরে প্লেগ রোগ ছড়িয়ে পড়েছে, তখন আপনি কি করবেন? তিনি উত্তরে বললেন, আমি ঐ শহরের দরজা জানালা সব বন্ধ করে দিব এবং সেই শহরের সীমান্তে পুলিশ নিয়োগের মাধ্যমে যারা ঐ শহরে প্রবেশ করতে চায় তাদেরকে নিষেধ করব। আর যারা উক্ত শহর থেকে বের হ’তে চায় তাদেরকেও নিষেধ করব। প্রশ্ন করা হ’ল- কেন এমন করবেন? তিনি জবাব দিলেন, বর্তমান চিকিৎসা বিজ্ঞানে প্রকাশ, প্লেগ রোগের জীবাণুর নাম ইয়ারসিনা পেষ্টি। যে এলাকায় এই প্লেগ রোগ দেখা দেয় সেই এলাকায় এতো ব্যাপকভাবে অল্প সময়ে এই জীবাণু বিস্তার লাভ করে যে, কোন কোন সময় এই রোগ শতকরা ৯৫% ভাগ মানুষের শরীরে পৌঁছে যায়। কিন্তু কিছু মানুষ রয়েছে যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল। তাই তাদের শরীরে এই রোগ প্রাধান্য লাভ করে তাদেরকে ধ্বংস করে দেয়, তারা মৃত্যুর কোলে পতিত হয়। আর কিছু লোক রয়েছে, যাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার সাথে এই জীবাণুগুলো যুদ্ধ করতে থাকে। তাদের শরীরে কিছুটা জ্বর অনুভূত হয়। এর অর্থ হচ্ছে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাটি উক্ত জীবাণুর উপর প্রাধান্য লাভ করেছে। আরও কিছু ব্যক্তি রয়েছে যাদের শরীরে উক্ত রোগের কোন চিহ্ন বা আলামত প্রকাশ পায় না। এর অর্থ হচ্ছে, উক্ত মানুষের শরীরে রোগ প্রতিরোধ যন্ত্রটি শরীরের মধ্যে এমন জিনিস উৎপন্ন করতে থাকে যা উক্ত জীবাণুগুলোকে ধ্বংস করতে থাকে। অতএব এই ধরনের ব্যক্তির প্লেগ আক্রান্ত এলাকায় অবস্থান করায় ভয়ের কোন কারণ নেই। জীবাণু শরীরে প্রবেশের পরও যে সুস্থ রয়েছে আসলেই তার ভয়ের কিছুই নেই। কেননা তার শরীর জীবাণুনাশক শক্তি উৎপন্ন করতে সক্ষম। ইনশাআল্লাহ সেখানেও সে সুস্থ থাকবে।
কিন্তু এই সমস্ত সুস্থ ব্যক্তিদের মাঝে কাউকে যদি বের হওয়ার অনুমতি দেয়া হয়। হ্যাঁ, আমাদের খালি চোখে সে রোগী না, বরং সুস্থ। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে সে এই জীবাণু বহন করছে। যদি উক্ত ব্যক্তিকে বের হওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়, তাহ’লে সে নতুন শহরে গমন করবে। অতঃপর এই জীবাণু দুর্বল শরীরে স্থানান্তরিত হবে। তারপর বৃদ্ধি পাবে এবং দুর্বল শরীরকে নিঃশেষ করবে। তারপর ব্যাপকভাবে রোগ বিস্তার লাভ করবে। মাত্র একটি মানুষের কারণে লক্ষ লক্ষ মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হয়ে ধ্বংস হবে।[8]
হোম কোয়ারেন্টাইন :
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,لَيْسَ مِنْ أَحَدٍ يَقَعُ الطَّاعُوْنُ فَيَمْكُثُ فِىْ بَلَدِهِ صَابِرًا مُحْتَسِبًا، يَعْلَمُ أَنَّهُ لاَ يُصِيْبُهُ إِلاَّ مَا كَتَبَ اللهُ لَهُ، إِلاَّ كَانَ لَهُ مِثْلُ أَجْرِ شَهِيْدٍ. ‘গ্লেগে আক্রান্ত শহরে কোন ব্যক্তি যদি ধৈর্য ধরে বিশ্বাসের সাথে অবস্থান করে (সেখান থেকে বের না হয়), আর সে জানে যে, আল্লাহ তার জন্য যা লিখেছেন তাছাড়া কিছুই তাকে স্পর্শ করবে না, সে ব্যক্তি শহীদের ছওয়াব পাবে’।[9] আলোচ্য হাদীছ থেকে মহামারীর সময় গৃহে অবস্থান করা তথা হোম কোয়ারেন্টাইনের সুস্পষ্ট নির্দেশনা পাওয়া যায়। এতে এটিও প্রমাণিত হয় যে, ইসলামের বিধানগুলো বিজ্ঞানভিত্তিক।
আইসোলেশন :
আইসোলেশন হ’ল- আক্রান্ত হয়ে গেলে সুস্থদের থেকে আলাদা থাকা। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) চর্মরোগে আক্রান্ত উটকে সুস্থ উটের দল থেকে আলাদা রাখার নির্দেশ দিয়েছেন, যাতে সেটি থেকে অন্যান্য উট আক্রান্ত না হয়। আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,لاَ تُوْرِدُوْا الْمُمْرِضَ عَلَى الْمُصِحِّ، ‘রোগাক্রান্ত উট সুস্থ উটের সাথে মিশ্রিত করবে না’।[10]
করোনা ভাইরাসের চিকিৎসা :
শুরু থেকেই শুনা যাচ্ছে করোনা ভাইরাসের কোন ঔষধ নেই। কিন্তু এটি আদৌ সঠিক নয়। কেননা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, مَا أَنْزَلَ اللهُ دَاءً إِلاَّ أَنْزَلَ لَهُ شِفَاءً ‘আল্লাহ এমন কোন রোগ পাঠাননি যার আরোগ্যের ব্যবস্থা দেননি’।[11]
অন্যত্র তিনি বলেছেন,مَا أَنْزَلَ اللهُ دَاءً إِلاَّ أَنْزَلَ لَهُ دَوَاءً، ‘আল্লাহ এমন কোন রোগ পাঠাননি, যার ঔষধ পাঠাননি’।[12] আজ থেকে সাড়ে চৌদ্দশত বছর পূর্বে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এসব মহামারীর ঔষধের দিক-নির্দেশনা দিয়ে গেছেন। যেকোন রোগের বিভিন্ন লক্ষণ বা উপসর্গ থাকে। ডাক্তার প্রত্যেকটি লক্ষণ বা উপসর্গের জন্য আলাদা আলাদা ঔষধ দিয়ে থাকেন। অনুরূপ করোনা ভাইরাসের ৪টি লক্ষণ বা উপসর্গ রয়েছে। যথা (১) জ্বর (২) সর্দি-হাঁচি (৩) শ্বাসকষ্ট ও তীব্র গলা ব্যথা (৪) সর্বশেষ পাতলা পায়খানা।
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) উল্লিখিত প্রত্যেকটি উপসর্গের আলাদা আলাদা চিকিৎসাপত্র দিয়েছেন। (১) করোনা ভাইরাসের প্রথম উপসর্গ হ’ল শরীরে তীব্র জ্বর অনুভূত হওয়া। জ্বরের চিকিৎসা সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, الْحُمَّى مِنْ فَيْحِ جَهَنَّمَ فَأَبْرِدُوْهَا بِالْمَاءِ، ‘জ্বরের উৎপত্তি জাহান্নামের উত্তাপ থেকে। কাজেই তোমরা পানি দিয়ে তা ঠান্ডা কর’।[13] অন্য বর্ণনায় এসেছে, فَأَطْفِؤُهَا بِالْمَاءِ ‘তাকে পানি দ্বারা নির্বাপিত কর’।[14]
হাফেয ইবুল ক্বাইয়িম (রহঃ) ‘আত-তিববুন নববী’ গ্রন্থে লিখেছেন, জালিনুসের মতো জগদ্বিখ্যাত চিকিৎসকও এটা স্বীকার করেছেন যে, জ্বরের ক্ষেত্রে ঠান্ডাপানি উপকারী। তিনি তাঁর ‘হিলাতুল বার’ গ্রন্থের দশম অনুচ্ছেদে লিখেছেন, ‘কোন যুবকের জ্বর হওয়া সত্ত্বেও যদি সে স্বাভাবিক স্বাস্থ্যের অধিকারী থাকে এবং ভাইরাসজনিত কোন ফোসকা থেকে মুক্ত হয়, তাহ’লে ঠান্ডা পানিতে গোসল বা সাঁতার কাটলে সে উপকার পাবে’। একটু পরে তিনি উল্লেখ করেন, ‘এই পন্থার ব্যাপক ব্যবহার আমি বৈধ ও সঙ্গত মনে করি’।[15]
জালালুদ্দীন সুয়ূত্বী (রহঃ)-এর মতে, জ্বরের উত্তাপ কমানো কয়েকভাবে হ’তে পারে, পানি পান, গোসল ও প্রচলিত পন্থায় মাথায় পানি দেয়া।[16]
(২) সর্দি-হাঁচি : যুদ্ধক্ষেত্রে ঠান্ডা রোগে আক্রান্ত গালিব ইবনু আবজার (রাঃ)-এর চিকিৎসাকল্পে ইবনু আবু আতীক (রাঃ) বলেন,
عَلَيْكُمْ بِهَذِهِ الْحُبَيْبَةِ السَّوْدَاءِ، فَخُذُوا مِنْهَا خَمْسًا أَوْ سَبْعًا فَاسْحَقُوهَا، ثُمَّ اقْطُرُوهَا فِى أَنْفِهِ بِقَطَرَاتِ زَيْتٍ فِى هَذَا الْجَانِبِ وَفِى هَذَا الْجَانِبِ، فَإِنَّ عَائِشَةَ حَدَّثَتْنِى أَنَّهَا سَمِعَتِ النَّبِىَّ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ إِنَّ هَذِهِ الْحَبَّةَ السَّوْدَاءَ شِفَاءٌ مِنْ كُلِّ دَاءٍ إِلاَّ مِنَ السَّامِ قُلْتُ وَمَا السَّامُ قَالَ الْمَوْتُ-
‘তোমরা এ কালো জিরা সাথে রেখ। এত্থেকে পাঁচটি কিংবা সাতটি দানা নিয়ে পিষে ফেলবে, তারপর তন্মধ্যে যয়তুনের কয়েক ফোঁটা তেল ঢেলে দিয়ে তার নাকের এ দিক-ওদিকের ছিদ্র দিয়ে ফোঁটা ফোঁটা করে প্রবেশ করাবে। কেননা আয়েশা (রাঃ) আমাদের নিকট বর্ণনা করেছেন যে, তিনি নবী করীম (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছেন, এই কালো জিরা ‘সাম’ ছাড়া সব রোগের ঔষধ। আমি বললাম, ‘সাম’ কী? তিনি বললেন, মৃত্যু’।[17]
হাফেয ইবনু হাজার আসক্বালানী (রহঃ) বলেন, ‘আলোচ্য হাদীছে কালোজিরার ব্যাপক ব্যবহার সম্পর্কে নবী করীম (ছাঃ) নির্দেশনা দিয়েছেন। কখনও তা এককভাবে এবং কখনও অন্য কোন খাবার বা পথ্যের সাথে মিশিয়ে তা ব্যবহার করা হয়। কালোজিরার বহুমুখী ব্যবহার আমাদের সমাজে ব্যাপকভাবে প্রচলিত। ঠান্ডাজনিত সমস্যায় উষ্ণভাবে ব্যবহার ও উষ্ণতায় বিপরীতভাবে ব্যবহারের মাধ্যমে তা বেশ উপকারী হিসাবে পরীক্ষিত। ইমাম কিরমানীর মতে, সাধারণভাবে তা সকল রোগের মহৌষধ।[18] উক্ত পদ্ধতিতে সর্দি-হাঁচির চিকিৎসা বাস্তবসম্মত ও প্রমাণিত।
(৩) শ্বাসকষ্ট ও তীব্র গলা ব্যথা :
শ্বাসকষ্ট ও তীব্র গলা ব্যথার চিকিৎসা সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,عَلَيْكُمْ بِهَذَا الْعُوْدِ الْهِنْدِىِّ، فَإِنَّ فِيْهِ سَبْعَةَ أَشْفِيَةٍ، يُسْتَعَطُ بِهِ مِنَ الْعُذْرَةِ، وَيُلَدُّ بِهِ مِنْ ذَاتِ الْجَنْبِ، ‘তোমরা হিন্দুস্তানের তথা ভারতীয় এই চন্দন কাঠ ব্যবহার করবে। কেননা তাতে সাতটি আরোগ্য রয়েছে। শ্বাসনালীর ব্যথার জন্য এর (ধোঁয়া) নাক দিয়ে টেনে নেয়া যায়, পাঁজরের ব্যথা বা পক্ষাঘাত রোগ দূর করার জন্যও তা ব্যবহার করা যায়’।[19]
অন্যত্র রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,إِنَّ أَمْثَلَ مَا تَدَاوَيْتُمْ بِهِ الْحِجَامَةُ وَالْقُسْطُ الْبَحْرِىُّ وَقَالَ لاَ تُعَذِّبُوا صِبْيَانَكُمْ بِالْغَمْزِ مِنَ الْعُذْرَةِ، وَعَلَيْكُمْ بِالْقُسْطِ، ‘তোমরা যেসব জিনিস দিয়ে চিকিৎসা কর সেগুলোর মধ্যে সবচেয়ে উত্তম হ’ল শিঙ্গা লাগানো এবং সামুদ্রিক চন্দন কাঠ। তিনি আরো বলেছেন, তোমরা তোমাদের বাচ্চাদের জিহবা, তালু টিপে কষ্ট দিও না। বরং তোমরা চন্দন কাঠ দিয়ে চিকিৎসা কর’।[20]
পাতলা পায়খানা :
করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সর্বশেষ অবস্থা হ’ল পাতলা পায়খানা। পাতলা পায়খানা তথা ডায়রিয়ার চিকিৎসা সম্পর্কে হাদীছে এসেছে, আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন,أَنَّ رَجُلاً أَتَى النَّبِىَّ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ أَخِى يَشْتَكِى بَطْنَهُ فَقَالَ اسْقِهِ عَسَلاً ثُمَّ أَتَى الثَّانِيَةَ فَقَالَ اسْقِهِ عَسَلاً ثُمَّ أَتَاهُ فَقَالَ فَعَلْتُ فَقَالَ صَدَقَ اللهُ، وَكَذَبَ بَطْنُ أَخِيْكَ، اسْقِهِ عَسَلاً فَسَقَاهُ فَبَرَأَ- ‘এক ব্যক্তি নবী করীম (ছাঃ)-এর নিকট এসে বলল, আমার ভাইয়ের পেটে অসুখ হয়েছে। তখন নবী করীম (ছাঃ) বললেন, তাকে মধু পান করাও। এরপর লোকটি দ্বিতীয় বার আসলে তিনি বললেন, তাকে মধু পান করাও। অতঃপর তৃতীয়বার আসলে নবী করীম (ছাঃ) বললেন, তাকে মধু পান করাও। লোকটি বলল, আমি অনুরূপই করেছি। তখন নবী করীম (ছাঃ) বললেন, আল্লাহ সত্য বলেছেন, কিন্তু তোমার ভাইয়ের পেট মিথ্যা বলছে। তাকে আবার মধু পান করাও। অতঃপর সে তাকে পান করাল। এবার সে রোগমুক্ত হ’ল’।[21]
মধু মহান আল্লাহর অসংখ্য নে‘মতরাজির মধ্যে অন্যতম একটি নে‘মত। আল্লাহ বলেন,يَخْرُجُ مِنْ بُطُوْنِهَا شَرَابٌ مُخْتَلِفٌ أَلْوَانُهُ فِيهِ شِفَاءٌ لِلنَّاسِ إِنَّ فِي ذَلِكَ لَآيَةً لِقَوْمٍ يَتَفَكَّرُوْنَ، ‘মেŠমাছির পেট থেকে নির্গত হয় নানা রংয়ের পানীয়। যার মধ্যে মানুষের জন্য আরোগ্য নিহিত রয়েছে। নিশ্চয়ই এর মধ্যে নিদর্শন রয়েছে চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্য’ (নাহ’ল ১৬/৬৯)।
হাফেয ইবনুল ক্বাইয়িম (রহঃ) স্বীয় গ্রন্থে মধুর ২৫টি উপকারিতার কথা উল্লেখ করেছেন। এগুলো হ’ল- (১) মধু ধমনী ও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ প্রভৃতি থেকে ময়লা দূর করে (২) খেলে ও মালিশ করলে ঠান্ডা লাগা থেকে নিষ্কৃতি পাওয়া যায় (৩) বয়োবৃদ্ধ ও কফের রোগীদের উপকার করে (৪) সর্দি-কাশিজনিত সমস্যা দূর করে (৫) কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে (৬) শারীরিকভাবে দুর্বলদের শক্তি বৃদ্ধির জন্য ব্যবহৃত হয় (৭) মধুর সাথে যখন ওষুধ মিশ্রণ করা হয়, তখন এটি ওষুধের অশুভ লক্ষণগুলোকে দূর করে দেয় (৮) কলিজা ও বুক পরিষ্কার করে (৯) পেশাব ও কফের কারণে সৃষ্ট কাশি দূর করে (১০) এটি গোলাপ তেলের সাথে মিশিয়ে গরম গরম পান করলে পশুর কামড়ে আক্রান্তদের এবং আফিমখোরদের উপকার করে (১১) আর সাদা পানির সাথে মিশিয়ে পান করলে কুকুরে কামড়ানো (জলাতঙ্ক রুগী) এবং বিষ খাওয়া রোগীদের উপকার করে (১২) যদি এর সাথে তাজা গোশত রেখে দেওয়া হয়, তাহ’লে তিনমাস পর্যন্ত তা টাটকা থাকবে। অনুরূপ মধুর মধ্যে তরমুজ, কাকুড়, লাউ, কুমড়া, বেগুন রেখে দিলে ছয় মাস পর্যন্ত সাধারণ ফল-ফলাদি নষ্ট হওয়া থেকে রক্ষা করে। মৃতদেহকে সংরক্ষণ করে (১৩) একে হাফেয আমীন বা ‘নিরাপদ সংরক্ষক’ নামেও আখ্যায়িত করা হয় (১৪) মধু শরীর এবং চুলে লাগালে উকুন মরে যায় এবং চুল লম্বা করে (১৫) আর চোখে দিলে অন্ধকার কেটে যায় (১৬) দাঁতের গোড়া মযবূত করে ও সুস্থতা রক্ষা করে (১৭) রগ প্রশস্ত করে (১৮) মধু চেটে খেলে কফের উপকার করে (১৯) পেটের খারাপ অবস্থা দূর করে। পেট গরম হওয়া স্বাভাবিক অবস্থায় নিয়ে আসে (২০) অন্ত্রমধ্যস্থ গ্রন্থিসমূহ খুলে দেয় (২১) কলিজা, গুর্দা এবং মূত্রথলির ওপরও একইভাবে প্রভাব ফেলে (২২) কলিজার গ্রন্থি খুলতে এবং প্রত্যেক মিষ্টি জিনিসের ব্যাপারে প্লীহাকে রক্ষা করে (২৩) এছাড়া মধু ক্ষতিকর সংক্রমণ হ’তেও নিরাপদ রাখে। কোন ক্ষেত্রে সাময়িক অসুবিধা দেখা দিলেও এর দ্বারা দীর্ঘ সুফল লাভ করা যায় (২৪) মধু খাদ্যের সময় খাদ্য, ওষুধের সময় ওষুধ এবং শরবতের সময় শরবতের কাজ করে (২৫) উন্নতমানের মিষ্টিদ্রব্যে অন্যান্য উপাদানের পাশাপাশি অনুপম প্রশান্তিদায়ক পানীয় হিসাবেও এর জুড়ি মেলা ভার।[22]
করোনায় উদ্ভূদ বিভিন্ন নিয়ম-নীতির নববী নির্দেশনা :
করোনা ভাইরাসে উদ্ভূদ বিভিন্ন নিয়ম-নীতির ব্যাপারেও রয়েছে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর সার্বজনীন দিক-নির্দেশনা। যেমন সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, মাস্ক ব্যবহার করা, মুছাফাহা না করা ইত্যাদি।
সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা :
‘সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখুন’ বাক্যটি ইসলামী শরী‘আতের দৃষ্টিতে সঠিক নয়। বরং বাক্যটি হওয়া উচিত ছিল ‘শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখুন’। বাস্তবতাও তাই। কেননা সংক্রামক ব্যাধির সময় সামাজিক দূরত্ব নয় বরং শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে চলতে হয়। এ বিষয়ে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,كلم المجذوم وبينك وبينه قيد رمح أو رمحين ‘তুমি যখন কুষ্ঠরোগীর সাথে কথা বল, তখন তোমার ও তার মাঝে এক বর্শা বা দু’বর্শা পরিমাণ দূরত্ব বজায় রাখ’।[23] অন্যত্র তিনি বলেন, কেউ যেন কখনও রোগাক্রান্ত উটকে সুস্থ উটের কাছাকাছি না রাখে’।[24]
তিনি আরো বলেছেন, لاَ تُدِيْمُوا النَّظَرَ إِلَى الْمَجْذُوْمِيْنَ- ‘কুষ্ঠরোগীর দিকে অপলক নেত্রে তাকিয়ে থেকো না’।[25] কুষ্ঠ রোগ সংক্রামক ব্যাধি, তাই অন্যান্য সংক্রামক ব্যাধির ক্ষেত্রেও উক্ত নিয়ম প্রযোজ্য।
মাস্ক ব্যবহার করা :
করোনাকালীন তথা সংক্রামক ব্যাধি চলাকালনী সময়ে জনবহুল স্থানে মাস্ক ব্যবহার করা বাধ্যতামূলক। কারণ করোনা আক্রান্ত রোগী হাঁচি দিলে হাঁচির সাথে বেরিয়ে আসে অসংখ্য জীবাণু। যেগুলো অন্যের শরীরে লাগলে সেও আক্রান্ত হ’তে পারে। আর এটা শুধু করোনা রোগীর ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য নয়। বরং সুস্থ মানুষ হাঁচি দিলেও হাঁচির শ্লেষ্মার সাথে অসংখ্য রোগ জীবাণু বেরিয়ে আসে। তাই রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) হাঁচি দেয়ার সময় স্বীয় মুখ হাত দ্বারা অথবা কাপড় দ্বারা ঢেকে নিতেন এবং এমনটি করার জন্য উম্মতকে শিক্ষা দিয়েছেন। আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন,أَنَّ النَّبِىَّ صلى الله عليه وسلم كَانَ إِذَا عَطَسَ غَطَّى وَجْهَهُ بِيَدِهِ أَوْ بِثَوْبِهِ، ‘নবী করীম (ছাঃ) যখন হাঁচি দিতেন, তখন তিনি নিজের হাত বা কাপড় দ্বারা মুখ ঢেকে ফেলতেন’।[26] মূলতঃ উল্লিখিত পদ্ধতির আধুনিকায়ন হ’ল মাস্ক পরিধান করা। যেটা মানুষ এখন ব্যবহার করতে বাধ্য হচ্ছে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) সেটা সাড়ে চৌদ্দশত বছর পূর্বে স্বাভাবিক অবস্থায়ই শিখিয়ে গেছেন।
মুছাফাহা না করা :
দু’জন মুসলিমের পারস্পরিক দেখা-সাক্ষাতের সময় সালাম বিনিময় ও মুছাফাহা করা সুন্নাত। এতে উভয়ের গোনাহ সমূহ ঝরে পড়ে।[27] কিন্তু সংক্রামক ব্যাধিতে আক্রান্ত ব্যক্তির সাথে মুছাফাহা না করাই বরং সুন্নাত। শারীদ বিন সুওয়াইদ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন,كَانَ فِى وَفْدِ ثَقِيفٍ رَجُلٌ مَجْذُومٌ فَأَرْسَلَ إِلَيْهِ النَّبِىُّ صلى الله عليه وسلم إِنَّا قَدْ بَايَعْنَاكَ فَارْجِعْ، ‘ছাক্বীফ গোত্রের প্রতিনিধি দলে একজন কুষ্ঠরোগী ছিল। নবী করীম (ছাঃ) তার নিকট লোক পাঠিয়ে বলেন, তুমি ফিরে যাও, আমি তোমার বায়‘আত গ্রহণ করেছি’।[28]
কুষ্ঠরোগ প্রকাশ্য সংক্রামক ব্যাধি। আর করোনা ভাইরাস অদৃশ্য সংক্রামক ব্যাধি। এতে কে আক্রান্ত আর কে সুস্থ তা সহজে বুঝা যায় না। অতএব এমন পরিস্থিতিতে উল্লিখিত হাদীছ অনুযায়ী মুছাফাহা থেকে বিরত থাকা শরী‘আত সম্মত।
বার বার হাত ধৌত করা :
করোনা পরিস্থিতিতে বার বার হাত ধৌত করতে হয়। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) দৈনিক কমপক্ষে পাঁচ বার হাত ধৌত করার বিধান দিয়েছেন এবং এতে পাপ মুক্তির প্রকাশ্য ঘোষণা এবং ভাইরাস মুক্তির অপ্রকাশ্য ঘোষণা দিয়েছেন। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,مَنْ تَوَضَّأَ فَأَحْسَنَ الْوُضُوءَ خَرَجَتْ خَطَايَاهُ مِنْ جَسَدِهِ حَتَّى تَخْرُجَ مِنْ تَحْتِ أَظْفَارِهِ، ‘যে ব্যক্তি ওযূ করে এবং উত্তমভাবে ওযূ করে, তার শরীর হ’তে তার সকল গুনাহ বের হয়ে যায়, এমনকি তার নখের নীচ হ’তেও তা বের হয়ে যায়’।[29] এর ব্যাখ্যায় কেউ কেউ বলেছেন, এর অর্থ এও হ’তে পারে যে, ওযূর মাধ্যমে নখের নীচ হ’তে ভাইরাস তথা রোগজীবাণু বের হয়ে যায়। কেননা নখের নীচ দিয়ে সাধারণত কোন গোনাহ করা হয় না।
পরিশেষে বলব, বর্তমানে করোনা প্রতিরোধে যেসব পদ্ধতি অবলম্বনের কথা বলা হচ্ছে, সে বিষয়ে বহু পূর্বেই রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) দিকনির্দেশনা দিয়ে গেছেন। সুতরাং রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর জীবনীতে মানবজীবনের সকল সমস্যার সুষ্ঠু সমাধান রয়েছে। তাই আমাদের উচিত তাঁর যথাযথ অনুসরণ করা। আল্লাহ আমাদের সকলকে তাওফীক দান করুন- আমীন!
ক্বামারুয্যামান বিন আব্দুল বারী
মুহাদ্দিছ, বেলটিয়া কামিল মাদ্রাসা, জামালপুর।
[1]. হাকেম হা/৭৮৪৬; ছহীহুল জামে‘ হা/১০৭৭; ছহীহাহ হা/১১৫৭; মিশকাত হা/৫১৭৪।
[2]. বুখারী হা/৫৭০৭, ৫৭১৭, ৫৭৫৭, ৫৭৭২, ৫৭৭৩।
[3]. বুখারী হা/৫৭৭০, ৫৭৭৫।
[4]. বুখারী হা/৫৭০৭।
[5]. ঐ।
[6]. বুখারী হা/৬৬১৯, ৩৪৭৪, ৫৭৩৪; আহমাদ হা/২৬১৩৯।
[7]. বুখারী হা/৫৭২৮, ৫৭২৯, ৩৪৭৩।
[8]. মোঃ ওসমান গনি, ইসলামী বিধান ও আধুনিক বিজ্ঞান, ২য় সংস্করণ সেপ্টেম্বর ২০০১, ১/১২৮-১২৯ পৃঃ।
[9]. বুখারী হা/৬৬১৯, ৩৪৭৪, ৫৭৩৪; আহমাদ হা/২৬১৩৯।
[10]. বুখারী হা/৫৭৭৪, ৫৭৭১; মুসলিম হা/২২২১; আহমাদ হা/৯২৭৪।
[11]. বুখারী হা/৫৬৭৮; তিরমিযী হা/২০৩৮; ইবনু মাজাহ হা/৩৪৩৯।
[12]. ইবনু মাজাহ হা/৩৪৩৮; তিরমিযী হা/২০৩৮, সনদ ছহীহ।
[13]. বুখারী হা/৩২৬১, ৩২৬৩, ৬২৬৪, ৫৭২৫, ৫৭২৬; মুসলিম হা/২২০৯; তিরমিযী হা/২০৭৩, ২০৭৪; ইবনু মাজাহ হা/৩৪৭১।
[14]. মুসলিম হা/২২০৯।
[15]. হাফিয ইবনুল ক্বাইয়িম আল-জাওযিয়াহ, আত-তিববুন নববী অনুবাদ: মুফতী আবুল ওয়াফা শামসুদ্দীন আযহারী প্রমুখ (ঢাকা : দারুল আরকান, ডিসেম্বর ২০২০), ৬৩ পৃঃ।
[16]. তাহক্বীক্ব মিশকাত (বাংলা) ৫/২৯২ পৃঃ।
[17]. বুখারী হা/৫৬৮৭।
[18]. ফাৎহুল বারী হা/৫৬৮৮ এর আলোচনা দ্রষ্টব্য।
[19]. বুখারী হা/৫৬৯২।
[20]. বুখারী হা/৫৬৯৬।
[21]. বুখারী হা/৫৬৮৪, ৫৭১৬; মুসলিম হা/২২৬৭; আহমাদ হা/১১১৪৬।
[22]. আত-তিববুন নববী, পৃঃ ৭১-৭২।
[23]. আহমাদ হা/৫১৮; মুসনাদে আবু ইয়ালা হা/২৭৭৪; হাদীছটি মারফূ হিসাবে যঈফ, মাওকূফ হিসাবে হাসান। আত-তিববুন নববী পৃঃ ২৪৫।
[24]. বুখারী হা/৫৭৭১, ৫৭৭৪; মুসলিম হা/২২২১; আহমাদ হা/৯২৭৪।
[25]. ইবনু মাজাহ হা/৩৫৪৩; ছহীহাহ হা/১০৬৪।
[26]. তিরমিযী হা/২৭৪৫; আবূদাঊদ হা/৫০২৯; ছহীহুল জামে‘ হা/৪৭৫৫।
[27]. আবুদাঊদ হা/৫২১২; তিরমিযী হা/২৭২৭; ইবনু মাজাহ হা/৩৭০৩; ছহীহ আত-তারগীব হা/২৭১৮, সনদ ছহীহ।
[28]. ইবনু মাজাহ হা/৩৫৪৪, সনদ ছহীহ।
[29]. মুসলিম হা/২৪৫; মিশকাত হা/২৮৪।