আধুনিক
জীবনযাত্রা, অনিয়ন্ত্রিত জীবন যাপন, এসবের কারণে যে অসুখগুলি সবচেয়ে বেশি
সমস্যায় ফেলে, রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে যাওয়া তাদের অন্যতম।
কোলেস্টেরলের কথা শুনলেই আমরা আতঙ্কিত হয়ে পড়ি। কিন্তু শরীরে কোলেস্টেরল
থাকলেই যে বিপদ, এমন কিন্তু নয়। ভালো আর খারাপ দুই ধরনের কোলেস্টেরলের
মধ্যে ভালো কোলেস্টেরলই আমাদের শরীরের জন্য প্রয়োজনীয়। তবে শরীরে খারাপ
কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে গেলে তা অবশ্যই চিন্তার বিষয়।
শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে গেলে একটু জোরে হাঁটাহাঁটি করলে বা সিঁড়ি ভাঙলেই হাঁপিয়ে উঠি আমরা। যাকে সাধারণত আমরা কোন সমস্যা মনে করি না। কিংবা মনে করি এমনটা তো হ’তেই পারে। কিন্তু যদি অল্পতেই এমন হয় তাহ’লে বুঝতে হবে শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে গেছে।
শরীরে খারাপ কোলেস্টেরল বেড়ে গেলে তা একটি দরজার মতো কাজ করে। যে দরজা দিয়ে অনায়াসেই ঢুকে পড়ে আরও অনেক রোগ। তাই প্রথম দিকেই শরীরে খারাপ কোলেস্টেরলের পরিমাণ বেড়ে যাওয়া নিয়ন্ত্রণে না আনতে পারলে শরীরে নানা রোগব্যাধি বাসা বাঁধতে পারে। উচ্চ রক্তচাপ, ওবেসিটি তো বটেই, কোলেস্টেরলের হাত ধরে হৃদ্যন্ত্রও ক্ষতি হ’তে পারে। তাই খারাপ কোলেস্টেরলকে অবহেলা করলে তার ফলও সুখকর হবে না।
অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপনে রাশ টেনে সুশৃঙ্খলিত জীবনযাপনের অভ্যাস গড়ে তোলার পাশাপাশি একটি সঠিক ডায়েট লিস্ট অনুসরণ করে সহজেই শরীরে খারাপ কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। তবে তার আগে জানতে হবে শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার লক্ষণগুলো সম্পর্কে। যদিও শরীরে কোলেস্টেরলে মাত্রা বাড়লে কোন উপসর্গ দেখে তা বোঝার উপায় থাকে না। তবে শরীরে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়লে শরীরে কিছু পরিবর্তন লক্ষ করা যায়।
যেসব লক্ষণে বুঝা যায় শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়েছে :
১. কোলেস্টেরল খুব বেড়ে গেলে পায়ের টেন্ডন লিগামেন্টগুলোতে প্রভাব পড়ে। এক্ষেত্রে পায়ের ধমনিগুলো সরু হয়ে গেলে পায়ের নিচের অংশ অনেকটা অক্সিজেনসহ রক্ত পৌঁছাতে পারে না। তাতে পা ভারী হয়ে ক্লান্ত হয়ে পড়ে সহজেই। পায়ের যন্ত্রণা শুরু হয়। উরু বা হাঁটুর নিচে পেছনের দিকে ব্যথা হ’তে পারে। হাঁটার সময়েই এই ধরনের ব্যথা বাড়ে।
২. একই কারণে ঘাড় ও হাতের সংযোগস্থলেও ব্যথা হয়। খুব ঘন ঘন একই স্থানে ব্যথা হলে একটু সতর্ক থাকুন।
৩. নিতম্বেও ব্যথা হওয়া উচ্চ কোলেস্টেরলের লক্ষণ হ’তে পারে। যদি মাঝে মাঝেই নিতম্বে ব্যথা হয় তাহ’লে কিন্তু সেই লক্ষণ ভাল নয়।
৪. চোখ বলে দিতে পারে কোলেস্টেরল বেড়েছে কিনা? কোলেস্টেরল বাড়লে চোখে কিছু উপসর্গ দেখা দেয়। যেমন- (ক) উচ্চ কোলেস্টেরলের কারণে চোখের পাতার উপরের পৃষ্ঠে সাদা বা হলুদ রঙের হালকা দাগ দেখা যাবে। (খ) চোখের মণির চারপাশে সাদা গোল গোল দাগ দেখলে বুঝতে হবে কোলেস্টেরল বেড়েছে। (গ) উচ্চ কোলেস্টেরলের কারণে চোখের দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে আসে। সাধারণত টিভি বা মোবাইলের দিকে দীর্ঘক্ষণ তাকিয়ে থাকলে এমন ঝাপসা অনুভূত হয়। কিন্তু যদি কোন কারণ ছাড়াই মাঝে মাঝেই এমন হয় তাহ’লে বুঝতে হবে, হয়তো কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়েছে। এসব লক্ষণের মাধ্যমেই চোখ বলে দেবে রক্তে কোলেস্টেরল বেড়েছে কিনা।
৫. কোলেস্টেরল জমলে মস্তিষ্কেও রক্ত সঞ্চালন কমে। এই কারণে ঘাড়ে ও মস্তিষ্কের পিছনের দিকে মাঝে মাঝে একটানা ব্যথা হয়।
৬. কিছুদিন ধরে মাঝে মাঝে বুকে ব্যথা হচ্ছে, অথচ ইসিজি রিপোর্টে তেমন কিছু সমস্যা খুঁজে পাননি? এমন হ’লে একবার রক্ত পরীক্ষা করিয়ে দেখে নিন রক্তে কোলেস্টেরল প্রবেশ করেছে কি-না। আসলে উচ্চ কোলেস্টেরল থাকলে রক্তনালীতে অক্সিজেন সরবরাহ কমে যায়। পর্যাপ্ত অক্সিজেনের অভাবে হৃদযন্ত্রে চাপ পড়ে বুকে ব্যথা হ’তে পারে। \ সংকলিত \