ঘুমের ওষুধ মৃত্যু ও ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়

ঘুমের ওষুধ খেয়ে রাতে ভাল ঘুম হ’লেও নিয়মিত ঘুমের ওষুধ সেবন মৃত্যুর আশঙ্কা ও কয়েকটি নির্দিষ্ট ধরনের ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়। যুক্তরাষ্ট্রের নতুন এক গবেষণায় বলা হয়েছে, যারা ঘুমের ওষুধ খায় না তাদের চেয়ে যারা খায় তাদের মৃত্যু ঝুঁকি চারগুণ বেশী। এছাড়া ঘুমের ওষুধ সেবনকারীদের নির্দিষ্ট ধরনের ক্যান্সারের ঝুঁকিও বেড়ে যায়। ঘুমের ওষুধ খাদ্যনালী, ফুসফুস, মলাশয় ও অগ্রগ্রন্থির ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। উপরন্তু যে ঘুমের ওষুধগুলো মানুষ বেশী খায় সেগুলোতেই মৃত্যু আর ক্যান্সারের ঝুঁকি বেশী বলে জানিয়েছেন গবেষকরা। বছরে ১৩২ ডোজের বেশী ঘুমের ওষুধ সেবীদের ক্ষেত্রে এ ঝুঁকি ৫ গুণ বেশী এবং একই সঙ্গে বেশী বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকিও। তাই ঘুমের ওষুধের বদলে বরং দিবা নিদ্রা বাদ দেওয়া, নিয়মিত ব্যায়াম করা, ক্যাফেইন না খাওয়া এবং ঘুম সহায়ক অন্যান্য উপায় বেছে নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন গবেষকরা।

উপকারী পানীয় চা দুধ মিশালে ক্ষতির কারণ হয়

পানির পর মানুষ পৃথিবীতে বেশী পান করে যে পানীয়, সেটা হচ্ছে চা। চা-স্পৃহা চঞ্চল হ’লে চাতকের মতো চা পানের জন্য উদগ্রীব হন অনেকে। চা পান না করা পর্যন্ত যেন শরীর ও মন দু’টোরই তৃষ্ণা মেটে না। চা যে হিতকারী পানীয়, তা এখন অনেকেই জেনেছেন। চায়ের মধ্যে রয়েছে প্রচুর অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, ভিটামিন ও অন্যান্য যৌগ। গবেষণায় দেখা গেছে, চা পান করলে দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা আরো জোরদার হয়, এমনকি কোষের ক্ষতি, জরা অনেকই হ্রাস পায়। কোন কোন গবেষক বলেন, দাঁতে ক্ষয়,  গহবর তৈরি হওয়া অনেকই হ্রাস পায় চা পানে। রক্তের সুগার নিয়ন্ত্রণে সাহায্য হয়। এর হৃদয় হিতকারী গুণও রয়েছে। চায়ের মধ্যে রয়েছে যে পলিফেনোল (ফ্লাভোনলস ও ক্যাটেচিনস) এদের মধ্যে রয়েছে হৃদয় সুরক্ষা গুণাগুণ। গবেষকরা দেখিয়েছেন, শুধু চা পানে ধমনীর কার্যকলাপ বেশ উন্নত হয়। আর দুধ চা পান করলে চায়ের হিতকারী প্রভাব পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যায়। ইঁদুর জাতীয় প্রাণীতে এমন পরীক্ষা চালিয়েও একই ফলাফল পাওয়া গেছে। বিজ্ঞানীদের ধারণা দুধের প্রোটিন চায়ের অ্যান্টি-অক্সিডেন্টের সঙ্গে মিশ্রিত হওয়ায় চায়ের গুণ নষ্ট হয়ে যায়। গবেষকরা বলেছেন, দুধ রক্তনালীর কার্যকলাপের উপর চায়ের স্বাস্থ্য হিতকারীগুণের বিরুদ্ধাচরণ করে। বিষয়টি শুধু দুধ ও দুধজাত দ্রব্যের মধ্যে সীমবদ্ধ, এমন নয়। সোয়া দুধের প্রোটিনও একইভাবে চায়ের অ্যান্টি-অক্সিডেন্টের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলে।

সুস্বাস্থের জন্য লবণ

শরীরবৃত্তীয় প্রয়োজনে পরিমিত মাত্রার খাবার লবণের যেমন দরকার তেমনি অতিরিক্ততা গুরুতর ক্ষতিরও কারণ। অধিক পরিমাণে খাবার লবণ গ্রহণ থেকে বিরত থাকলেই সুস্বাস্থ্য অর্জন করা যায়। প্রাচ্য এবং পাশ্চাত্যে লবণ, খাবার রান্নার মশলা হিসাবেই সমাদৃত। খাবার তৈরিতে লবণ খাবারকে সুস্বাদু করে, উপযুক্ত সিদ্ধ বা নরম করে, পচন রোধ করে। খাবার সংরক্ষণ করতেও (মাছ/গোশত শুঁটকি হিসাবে) লবণ কাজে লাগে। রান্নার লবণ ও খাবার পাত্রে আলগা লবণ আমাদের জন্য লবণের মূল উৎস।

একজন সুস্থ মানুষের শরীরে প্রতিদিন মাত্র ১ গ্রাম সোডিয়াম ক্লোরাইড প্রয়োজন। অথচ আমরা বাংলাদেশীরা প্রতিদিন গড়ে ১৬-১৭ গ্রাম সোডিয়াম ক্লোরাইড গ্রহণ করি। ইংল্যান্ড ও আমেরিকানরা প্রতিদিন গড়ে ৯-১০ গ্রাম, চীন এবং জাপানীরা গড়ে ১২-১৪ গ্রাম সোডিয়াম ক্লোরাইড গ্রহণ করে। প্রতিদিন লবণের পরিমাণ বিষয়ে WHO দৈনিক সর্বোচ্চ ৫ গ্রাম এবং WASH দৈনিক সর্বোচ্চ ৬ গ্রাম এর বেশী কখনোই গ্রহণ করা উচিত নয় বলে মতামত দিয়েছে। সারা বিশ্বজুড়ে গবেষণাকৃত শতাধিক বৈজ্ঞানিক গবেষণাপত্রের দ্বারা এই বিষয়টি প্রমাণিত যে, প্রয়োজনের অতিরিক্ত লবণ গ্রহণ শরীরের রক্তচাপ বাড়িয়ে তোলে। উচ্চ রক্তচাপকে বলা হয় নীরব ঘাতক। কারণ এর সুনির্দিষ্ট শারীরিক লক্ষণ নেই। শুধুমাত্র অতিরিক্ত লবণ সেবনই মানুষকে ঠেলে দেয় উচ্চ রক্তচাপ জনিত অধিকতর গুরুত্বর স্বাস্থ্য সমস্যা-হৃদরোগ, মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ ও স্থায়ী কিডনী রোগের দিকে। এছাড়াও পাকস্থলীর ক্যান্সার, কিডনীতে পাথর, অস্থি ক্ষয়রোগ, অতিরিক্ত ওযন, স্মৃতিশক্তি হ্রাস প্রভৃতি রোগের ঝুঁকি অতিরিক্ত লবণ সেবনের দ্বারা বৃদ্ধি পায়। শুধুমাত্র পরিমিত লবণ সেবন করলেই এইসব রোগের ঝুঁকি থেকে বেঁচে থাকা যায়। উল্লেখ্য যে, হিমালয়ের পাদদেশের কিছু গ্রামের মানুষ লবণ সেবন করেন না বলে তাদের উচ্চ রক্তচাপও হয় না। তাই খাবারে অতিরিক্ত লবণ গ্রহণ না করার জন্য সবাইকে সচেতন হ’তে হবে। ধীরে ধীরে চেষ্টা করলে এটা অভ্যাসে পরিণত করা সম্ভব। এজন্য নীচের কাজগুলো করা যায়- (ক) রান্নাতে অল্প লবণ ব্যবহার করা (খ) ঘরের বাইরে তৈরি খাবার (হোটেলের তৈরি নাস্তা/ফাস্ট ফুড প্রভৃতি) যতদূর সম্ভব পরিহার করা। (গ) কৌটায়/প্যাকেটে সংরক্ষিত খাবার গ্রহণের ক্ষেত্রে সতর্ক হওয়া। (ঘ) সব ধরনের সস, পনির ও কোমল পানীয় কম পরিমাণে গ্রহণ করা। (ঙ) প্রতিদিনের খাবারে শাক-সবজি ও কাঁচা ফল রাখা।

সচেতনতা বৃদ্ধিতে গণমাধ্যমের পাশাপশি সমাজের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গকে এ বিষয়ে মতামত প্রদান করতে হবে। সরকারী ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকেও সহযোগিতা ও পদক্ষেপ নিতে হবে। সবচেয়ে বেশী গুরুত্ব দিতে হবে কিশোর এবং যুবকদের প্রতি, যাতে কম বয়স থেকেই তারা অতিরিক্ত লবণ গ্রহণ না করে গুরুতর অসুস্থতা থেকে নিজেদের বাঁচিয়ে রাখে এবং সুস্থ সবল জাতি হিসাবে ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল করে।

আশার কথা এই যে, যেহেতু লবণের সোডিয়াম উপাদানটিই বেশী ক্ষতি করে, তাই লবণ থেকে সোডিয়ামকে সরিয়ে এসকরবিক এসিড বসানোর জন্য বিজ্ঞানীরা গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন। এতে লবণের স্বাদ ঠিক থাকবে কিন্তু ক্ষতি হবে না।

পরিশেষে পুনরায় বলতে চাই- অতিরিক্ত লবণ গ্রহণে উচ্চ রক্তচাপ বৃদ্ধি পায়। উচ্চ রক্তচাপ হৃদরোগ, মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ ও কিডনি রোগের একটি প্রধান কারণ। সুতরাং কম লবণ গ্রহণ করে ঝুঁকিমুক্ত থাকতে এবং সুস্বাস্থ্য লাভে সচেষ্ট হওয়া যরূরী।

\ সংকলিত \






আরও
আরও
.