পান-সুপারীর অপকারিতা

প্রথমেই পান-সুপারী ও জর্দার ক্ষতিকর দিকগুলো জানা দরকার। পানে রয়েছে কিছু টারফেনলস। পান খাওয়ার কারণে ঠোঁট ও জিহবায় দাগ পড়ে যায়। দাঁতে প্রায় স্থায়ী দাগ পড়ে যায়। অনেকেই ভেবে থাকেন জর্দা বা তামাক পাতা ছাড়া শুধু সুপারী দিয়ে পান খেলে তেমন কোন ক্ষতি হবে না। সবার জানা প্রয়োজন, তাইওয়ানের অধিকাংশ মানুষ টোব্যাকো সামগ্রী ছাড়া সুপারী দিয়ে পান খেয়ে থাকেন। তাইওয়ানে এক গবেষণায় দেখা গেছে, সুপারী ক্যান্সার সৃষ্টি করে থাকে। অর্থাৎ সুপারী ক্যান্সার সৃষ্টিকারী উপাদান। পানের সঙ্গে যে চুন খাওয়া হয়, সেটি হ’ল ক্যালসিয়াম অক্সাইড বা ক্যালসিয়াম হাইড্রোক্সাইড। চুনে রয়েছে প্যারা অ্যালোন ফেনল, যা মুখে আলসার সৃষ্টি করতে পারে। এ আলসার ধীরে ধীরে ক্যান্সারে রূপান্তরিত হ’তে পারে। সুপারী চুনের সঙ্গে বিক্রিয়া ঘটিয়ে এরিকোলিন নামক একটি নারকোটিক এলকালয়েড উৎপন্ন করে। আবার অনেকের মতে, সুপারীতে এমনিতেই এরিকোলিন এনকালয়েড বিদ্যমান থাকে। চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় এরিকোলিন প্যারাসিমপ্যাথেটিক স্নায়ুতন্ত্রের উত্তেজনা সৃষ্টি করে থাকে। এ কারণেই চোখের মণি সঙ্কুচিত হয় এবং লালার নিঃসরণের পরিমাণ বেড়ে যায়। শুধু তা-ই নয়, চোখে পানি পর্যন্ত আসতে পারে। তবে এক খিলি পান-সুপারীতে এসব পরিবর্তন দেখা নাও যেতে পারে। কাঁচা সুপারী উত্তেজক হিসাবে কাজ করে। সুপারীতে রয়েছে উচ্চমাত্রার সাইকোএকটিভ এলকালয়েড। এ কারণেই উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। কাঁচা সুপারী চিবালে শরীরে গরম অনুভূত হয়, এমনকি শরীর ঘেমে যেতে পারে। সুপারীতে রয়েছে এরিকেন ও এরকোলিন এলকালয়েড, যা উত্তেজনার দিক থেকে নিকোটিনের সঙ্গে তুলনা করা যায়। অন্য এলকালয়েডগুলোর মধ্যে রয়েছে এরিকাইডিন, এরিকোলিডিন, গুরাসিন বা গুয়াসিন, গুভাকোলিন ইত্যাদি।

সুপারী খেলে তাৎক্ষণিক যেসব সমস্যা দেখা যায় সেগুলো হ’ল- (১) অ্যাজমা বেড়ে যেতে পারে (২) হাইপারটেনশন বা রক্তচাপ বেড়ে যেতে পারে (৩) টেকিকার্ডিয়া বা নাড়ির স্পন্দনের পরিমাণ বেড়ে গিয়ে অস্থিরতা অনুভূত হ’তে পারে।

দীর্ঘমেয়াদে সুপারী খেলে ওরাল সাবমিউকাস ফাইব্রোসিস হ’তে পারে এবং ক্যান্সারের পূর্বাবস্থা বা স্কোয়ামাস সেল কারসিনোমাও হ’তে পারে। এছাড়া মুখে, জিহবায়, গ্রাসনালীতে এবং পাকস্থলীতে ক্যান্সার হ’তে পারে। এই উপমহাদেশে মুখের ক্যান্সারের অন্যতম কারণ পান-সুপারী।

আমাদের দেশে পানের সঙ্গে সাদাপাতা বা জর্দা ব্যাপকভাবে গৃহীত হচ্ছে। জর্দা পসন্দ মতো না হ’লে অনেকেই আবার মান-অভিমানও করে থাকেন। ক্যান্সার গবেষণায় আন্তর্জাতিক সংস্থা আইএআরসির মতে, যারা পানের সঙ্গে তামাক জাতীয় দ্রব্য গ্রহণ করেন, তাদের সাধারণের চেয়ে পাঁচগুণ বেশি সম্ভাবনা থাকে ওরাল ক্যান্সার হওয়ার। পানের সঙ্গে যে ধরনের তামাক সামগ্রী গ্রহণ করা হয়, তা খুবই বিপজ্জনক। তুলনামূলকভাবে এরিকোলিন এলকালয়েডের চেয়ে তামাক সামগ্রীর এলকালয়েড ও নিকোটিনের অধিক মাত্রায় নেশা ও বিষাক্ত ধর্ম থাকে। তাই জর্দা যত সুগন্ধি মিশ্রিত হোক না কেন, তা জীবনের সৌরভ ধীরে ধীরে বিলীন করে দেয়। পানের সঙ্গে যে খয়ের খাওয়া হয় তাতে খুব কম সময়ের মধ্যে মুখ লাল হয়ে যায়। খয়ের তৈরি করা হয় অ্যাকাসিয়া ক্যাটেচু নামক বৃক্ষের কাঠ থেকে। খয়ের এসট্রিনজেন্ট হিসাবে কাজ করে মুখের অভ্যন্তরের মিউকাস মেমব্রেনকে সঙ্কুচিত করে। অনেকেই বিচিত্র পদ্ধতিতে পান সেবন করে থাকেন। কেউ কেউ পানের ছোবড়া ও রস পর্যন্ত খেয়ে ফেলেন। পান খাওয়ার এক পর্যায়ে চূর্ণ-বিচূর্ণ পানের কিছু অংশ গালের এক পাশে রেখে আবার কিছুক্ষণ পর খেতে দেখা যায় অনেকটা জাবরকাটার মতো। অনেকেই এভাবে পান গালের এক পাশে রেখে ঘুমিয়ে পড়েন। এদের ক্ষেত্রে গালের এক পাশে আলসারসহ ক্যান্সার পর্যন্ত দেখা দিতে পারে। পানের নেশা থেকে মুক্তি লাভের আশায় অনেকেই প্যাকেটজাত পানমশলা কিনে চিবাতে থাকেন। কিন্তু ধারণাটি আসলে সম্পূর্ণ ভুল। পান-মশলায়ও ক্ষতিকর উপাদান বিদ্যমান, যা মুখে আলসার সৃষ্টি করে থাকে। পান-মশলার সঙ্গে মেনথল মিশিয়ে মুখের অভ্যন্তরে ঠান্ডা অনুভূতির সৃষ্টি করে সাধারণ মানুষকে বোকা বানানো হচ্ছে। সবশেষে শুধু এটুকু বলা যায়, সব ধরনের নেশা থেকে মুক্তি পেতে সুন্দর জীবনবোধের অধিকারী হ’তে হবে। সুন্দর জীবনবোধের মাধ্যমে সকলে পারেন সমাজকে সুন্দরভাবে গড়ে তুলতে।

মাছের তেল স্ট্রোক ও হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়

বিজ্ঞানীরা মাছের তেলের উপর গবেষণা করে দেখেছেন যে, হৃদরোগ এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি হ্রাসে মাছের তেল অত্যন্ত উপকারী। মাছের তেলে থাকা ওমেগা-থ্রি নামক অসম্পৃক্ত ফ্যাটি এসিড যা রক্তের ক্ষতিকারক কোলেস্টেরল কমায় এবং

উপকারী কোলেস্টেরল বাড়িয়ে দেয়, যার ফলে হার্টের রক্তনালিতে চর্বি জমতে পারে না এবং রক্তনালি পরিষ্কার, সঙ্কীর্ণমুক্ত থাকায় রক্ত চলাচল ভালো থাকে। উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি কমায় এবং উচ্চ রক্তচাপ থাকলে তা হ্রাস করে। গবেষণায় আরো দেখা গেছে, ওমেগা-থ্রি রক্তের অনুচক্রিকাকে জমাট বাঁধতে দেয় না, ফলে রক্তনালিতে রক্ত জমাট বাঁধার কারণে সৃষ্ট স্ট্রোক হ’তে পারে না। সুতরাং হার্ট এটাক এবং স্ট্রোক প্রতিরোধে আমাদের খাদ্য তালিকায় তৈলাক্ত মাছ থাকা উচিত।

তবে সব মাছের তেলই যে উপকারী তা নয়। গবেষকগণ বলছেন, মাছের তেলে ভালো ও মন্দ দুই ধরনের চর্বিই রয়েছে। যেমন পাঙ্গাস ও ইলিশে বেশির ভাগই খারাপ চর্বি। অন্যদিকে যাদের হার্টের সমস্যা আছে, রক্তে রয়েছে উচ্চ কোলেস্টেরল তাদের কোনভাবেই অধিক চর্বিযুক্ত মাছ খাওয়া উচিত নয়।

\ সংকলিত \ 






আরও
আরও
.