আঙ্গুর স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী ফল। যা খেলে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমে ব্যাপকভাবে। এতে আছে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, স্বাস্থ্য ঠিক রাখার জন্য দরকারি খনিজ ও ভিটামিন। সুস্বাদু এ ফলের আছে নানা খাদ্য ও ভেষজ গুণ। আঙ্গুরে রয়েছে ভিটামিন কে, সি, বি১, বি৬ এবং খনিজ উপাদান ম্যাংগানিজ ও পটাশিয়াম। আঙ্গুর কোষ্ঠকাঠিন্য, ডায়াবেটিস, অ্যাজমা ও হৃদরোগের মতো রোগ প্রতিরোধে বিশেষ ভূমিকা রাখে। আঙ্গুরের বীজ ও খোসায় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে, যা হৃৎপিন্ড এবং রক্তনালিগুলোকে বুড়িয়ে যাওয়ার হাত থেকে রক্ষা করে। আঙ্গুরের সেলুলাস ও চিনি কোষ্ঠকাঠিন্য রোধে সহায়ক। রক্ত সঞ্চালনের ভারসাম্যহীনতা দূর করতে আঙ্গুরের জুস খুবই উপকারী। আঙ্গুরের ফাইটোনিউট্রিয়েন্টস নিয়মিত রক্ত সঞ্চালনের সহায়ক ও ইনসুলিন বৃদ্ধি করে। আঙ্গুরের জুসে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও অ্যান্টিইনফ্লামিটরির মতো গুরুত্বপূর্ণ উপাদান রয়েছে, যা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের প্রদাহ দূর করে। এই প্রদাহ ক্যানসার রোগ সৃষ্টির প্রধান কারণ হ’তে পারে। এছাড়া উচ্চ রক্তচাপ, ডায়রিয়া, ত্বক ও মাইগ্রেনের সমস্যা দূর করতেও আঙ্গুর সহায়তা করে। কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায় : আঙ্গুরে টরোস্টেলবেন নামে এক ধরনের যৌগ থাকে, যা কোলস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। হাড় শক্ত করে : আঙ্গুরে প্রচুর পরিমাণে তামা, লোহা ও ম্যাংগানিজের মতো খনিজ পদার্থ থাকে, যা হাড়ের গঠন ও হাড় শক্ত করতে কাজ করে। অ্যাজমা প্রতিরোধ করে : আঙ্গুরের ঔষধি গুণের কারণে এটি অ্যাজমার ঝুঁকি থেকে রক্ষা করে এবং ফুসফুসে আর্দ্রতার পরিমাণ বাড়ায়। বদহজম দূর করে : নিয়মিত আঙ্গুর খেলে বদহজম দূর হয়। অগ্নিমন্দ্যা দূর করতেও আঙ্গুর কার্যকর। মাথাব্যথা : হঠাৎ করে মাথাব্যথা শুরু হয়ে গেলে আঙ্গুর খেলে আরাম বোধ হয়। চোখের স্বাস্থ্য : চোখ ভালো রাখতে আঙ্গুর কার্যকর। বয়সজনিত কারণে যারা চোখের সমস্যায় ভুগছেন, তাদের জন্য ভালো দাওয়াই এই ফল। ক্যানসার : ক্যানসারের ঝুঁকিতে আছেন এমন রোগীরা খেতে পারেন আঙ্গুর। গবেষণায় দেখা গেছে, আঙ্গুরের উপাদানগুলো ক্যানসার সৃষ্টিকারী কোষের বিরুদ্ধে কাজ করতে সক্ষম। কিডনির জন্য : আঙ্গুরের উপাদানগুলো ক্ষতিকারক ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা সহনশীল অবস্থায় রাখে। সেই সঙ্গে কিডনির রোগ-ব্যাধির বিরুদ্ধেও কাজ করে। ত্বকের সুরক্ষায় : আঙ্গুরে থাকা ফাইটো কেমিক্যাল ও ফাইটো নিউট্রিয়েন্ট ত্বকের সুরক্ষায় কাজ করে। এতে আছে প্রচুর ভিটামিন সি। এটি ত্বকের উজ্জ্বলতা ধরে রাখে। বয়সের ছাপে বাধা : শরীরের ফ্রি রেডিকেলস ত্বকে বলিরেখা ফেলে দেয়। আঙ্গুরে থাকা ভিটামিন সি ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এই ফ্রি রেডিকেলের বিরুদ্ধে লড়ে, শরীরে বয়সের ছাপ পড়া প্রতিরোধ করে। ডায়াবেটিস রোগীর জন্য করণীয় সাধারণ করণীয় : * তিন বেলার খাবার ভাগ করে ৫-৬ বারে খাবেন। * মাটির নিচে হয় এমন সবজি কম খাবেন (কচু, আলু, মুলা, গাজর, শালগম, ওলকপি)। মিষ্টি কুমড়া কম খাবেন। * মাটির উপরের সব সবজি খাওয়া যাবে। * কামড়ে খাওয়া যায় এমন ফল খাওয়া যাবে (আপেল-নাসপাতি অর্ধেক, বরই ৫-৬টা, ছোট কলা ১টা, বড় অর্ধেক, আমড়া, পেয়ারা, কামরাঙ্গা, জলপাই, জামরুল, কাচা শসা ইচ্ছে মতো)। * রসালো ফল (কমলা, আঙ্গুর, আনার, আনারস, লিচু, আম, কাঁঠাল, তরমুজ, পাকা বেল, পেঁপে, জাম্বুরা ইত্যাদি) কম খাবেন। * চিনি/গুড় দিয়ে তৈরী মিষ্টি জাতীয় খাবার খাবেন না। * চর্বি জাতীয় খাবার (গরু/খাসির গোশত, চিংড়ি মাছ, মগজ, কলিজা, নারকেল, ডিমের কুসুম) কম খাবেন। হাঁটার নিয়মাবলী : * প্রতিদিন কমপক্ষে ৩০ মিনিট হাঁটবেন। প্রথম ৫-১০ মিনিট স্বাভাবিক গতিতে, মধ্যের ৫-১০ মিনিট দ্রুতগতিতে এবং শেষের ৫-১০ মিনিট পুনরায় স্বাভাবিক গতিতে হাঁটবেন। * সপ্তাহে কমপক্ষে ৫ দিন হাঁটবেন। পরপর ২ দিন হাঁটা বন্ধ করা যাবে না। পরীক্ষা-নিরীক্ষা : * শরীর দুর্বল লাগলে, বমি হ’লে, হার্ট এ্যাটাক হ’লে, হঠাৎ শ্বাস কষ্ট হ’লে, গর্ভাবস্থায়, যে কোন সার্জারী করতে হ’লে, সে সময় রক্তের সুগার পরিমাপ করতে হবে। * প্রতিমাসে অন্ততঃ ১ বার রক্তের সুগার পরীক্ষা করাবেন। * ৬ মাস পর পর Serum Creatinine & Uric Acid পরীক্ষা করাবেন। * ১ বৎসর পর পর HbAlc & Fasting Lipid Profile পরীক্ষা করবেন। * নিয়মিত রক্তচাপ পরীক্ষা করবেন। * প্রতি বৎসর একবার চোখ পরীক্ষা করবেন। * ৪৫ বছরের ঊর্ধ্বের রোগী প্রতি বৎসর ECG করাবেন। * সম্ভব হ’লে বাড়ীতে গ্লুকোমিটার দিয়ে সপ্তাহে ১দিন ৪ বার (খালি পেটে, নাশতা, দুপুরের খাবার ও রাতের খাবারের ২ ঘণ্টা পরে) রক্তের সুগার পরীক্ষা করে লিখে রাখবেন এবং পরবর্তী ভিজিটে রিপোর্ট নিয়ে চিকিৎসকের সাথে দেখা করবেন। খাদ্য তালিকা ও সময় : ১. সকালের নাশতা (৮-৯ টা) : * হাতে বানানো রুটি ২/৩/৪ টা, * সবজি ইচ্ছে মতো, * ডিমের সাদা অংশ ১টা, * চিনি ছাড়া চা। ২. পূর্বাহ্ন (১০-১১ টা) : * ১টা রুটি+সবজি অথবা ১কাপ মুড়ি অথবা ১ কাপ চিড়া ভিজানো, * মিষ্টি ছাড়া বিস্কুট ৩/৪ টা, * সাথে যে কোন ১টি ফল। ৩. দুপুরের খাবার (২-৩ টা) : * ভাত ২/৩/৪ কাপ শরীরের ওযন অনুযায়ী, * সবজি ইচ্ছে মতো, * ডাল ১ কাপ, * মাছ/গোশত ২ টুকরা। ৪. বিকালের নাশতা (৫-৬ টা) : * মুড়ি ১ কাপ+দুধ ১ কাপ (স্বর ছাড়া) অথবা বিস্কুট চিনি ছাড়া ৩/৪ টা। * ফল ১টা। ৫. রাতের খাবার (৮.৩০-৯টা) : * হাতে বানানো রুটি ২/৩/৪ টা, * সবজি ইচ্ছে মতো, * ডাল ১ কাপ, * মাছ/গোশত ২ টুকরা।