টাইফয়েডে করণীয়
পানিবাহিত রোগের মধ্যে টাইফয়েড জ্বর অন্যতম। ‘সালমোনিলা টাইফি’ নামক ব্যাকটেরিয়া দ্বারা টাইফয়েড জ্বর এবং ‘সালমোনিলা প্যারাটাইফি’ নামক ব্যাকটেরিয়া দ্বারা প্যারা টাইফয়েড জ্বর হয়। উভয়ের সম্মিলিত নামই হচ্ছে এন্টিরিক জ্বর। খাদ্য, পানি এবং দুধের মাধ্যমে এই ব্যাকটেরিয়া শরীরের খাদ্যনালীতে (ক্ষুদ্রান্ত্রে) প্রবেশ করে। টাইফয়েড জ্বরের উপ্তিকাল হচ্ছে ১০-১৪ দিন।
টাইফয়েড জ্বরের লক্ষণ
১ম সপ্তাহ : হঠাৎ জ্বর আসে এবং ধীরে ধীরে তাপমাত্রা বাড়তে থাকে। শরীরে ব্যথা, খাদ্যে অনীহা এবং মাথাব্যথা থাকে। কোষ্ঠকাঠিন্য থাকতে পারে এবং বাচ্চাদের ডায়রিয়া এবং বমি হ’তে পারে। তাপমাত্রার তুলনায় নাড়ীর গতি কম থাকে। ১ম সপ্তাহের শেষের দিকে বুকে বা পিঠে গোলাপী বা লালচে মত দাগ দেখা যায়, যা স্পর্শ করলে মিলিয়ে যায়। ২য় সপ্তাহ : জ্বর একইভাবে থাকে। ৭ম দিন থেকে ১০ম দিনে প্লিহা বাড়তে পারে। এ সময় কোষ্ঠকাঠিন্য ডায়রিয়ার রূপ নেয় এবং পেটে ব্যথা হয়। রোগীর অস্থিরভাব দেখা দেয়। পালস টেকিকার্ডিয়া হয়। ২য় সপ্তাহের শেষে রোগ শনাক্ত করে এন্টিবায়োটিক দ্বারা চিকিৎসা শুরু না করা হ’লে রোগী বেশি অসুস্থ হয়ে পড়তে পারে। ৩য় সপ্তাহ : জ্বর আস্তে আস্তে কমতে থাকে। রোগী বেশি অস্থিরবোধ করে। কাশি থাকে। ওযন কমে যায়। রোগী প্রলাপ বকে। এ সময় রোগীর কোমা বা মৃত্যুও হ’তে পারে।
রোগ নির্ণয় : (১) ১ম সপ্তাহে টাইফয়েড জ্বর নির্ণয় করা কঠিন। সেক্ষেত্রে রোগীর ইতিহাস কিছুটা সাহায্য করতে পারে। যেমন- (ক) ধীরে ধীরে তাপমাত্রা বাড়তে থাকা, (খ) তাপমাত্রার তুলনায় নাড়ীর গতি কম (গ) এ সময় ল্যাবরেটরী পরীক্ষার মধ্যে রক্তের কালচার পরীক্ষা গুরুত্বপূর্ণ। (২) ২য় সপ্তাহে ভিডাল টেস্ট করা হয়। এছাড়া ২য় ও ৩য় সপ্তাহে প্রস্রাব ও পায়খানার কালচার পরীক্ষা করে রোগ নির্ণয় করা যায়।
চিকিৎসা : (১) পূর্ণ বেড রেস্টে থাকতে হবে। (২) রোগীকে পুষ্টিকর খাবার দিতে হবে। প্রচুর পানি খেতে দিতে হবে। শরীরে পানিশূন্যতা দেখা দিলে বার বার বমির ভাব এবং নানাবিধ সমস্যার সৃষ্টি হয়। সেজন্য খাবার স্যালাইন বা পুষ্টিকর পানীয় প্রচুর পরিমাণে খাবার জন্য রোগীকে উৎসাহিত করতে হবে। পানিশূন্যতা কমে গেলে আপনা থেকেই বমি বন্ধ হয়ে যাবে। (৩) প্রতিবার মলমূত্র ত্যাগের পর খুব সতর্কতার সাথে হাত পরিষ্কার (সাবান বা ছাই দ্বারা) করতে হবে। (৪) জ্বর কমানোর জন্য প্যারাসিটামল বড়ি, সিরাপ বা সাপোজিটরী ব্যবহার করা যায়। (৫) টাইফয়েড জ্বরের জন্য মূল চিকিৎসা হ’ল এন্টিবায়োটিক দ্বারা চিকিৎসা করা| উল্লেখযোগ্য এনিটবায়োটিকের মধ্যে রয়েছে সিপ্রোফ্লক্সাসিন, ক্লোরামফেনিকল, এজিথ্রোমাইসিন, সেফিক্সিম, সেফট্রিএক্সন অতি সাধারণ ধরনের সংক্রমণে কিংবা কার্যকর বিকল্প চিকিৎসা থাকলে ক্লোরামফেনিকল ব্যবহার করতে নেই। কারণ এতে রক্তের উপাদানসমূহে মারাত্মক তারতম্য ঘটার আশঙ্কা থাকে, যা প্রাণঘাতী হ’তে পারে। এন্টিবায়োটিক দ্বারা চিকিৎসা ১৪ দিন পর্যন্ত করা উচিত। যথাযথ এন্টিবায়োটিক দ্বারা চিকিৎসা শুরু করা হ’লেও জ্বর ৫ দিন পর্যন্ত থাকতে পারে। (৬) যারা দীর্ঘস্থায়ী টাইফয়েড জ্বরের বাহক তাদের সিপ্রোফ্লক্সাসিন দ্বারা ৪ সপ্তাহ বা ২৮ দিন চিকিৎসা করা উচিত। (৭) প্রচুর পুষ্টিমান নিয়ন্ত্রণ করলে বা খাদ্যের প্রতি জোর দিলে রোগীর পরবর্তীতে বিশেষ কোন সমস্যা থাকে না। সর্বোপরি এ ধরনের লক্ষণ প্রকাশ পেলে কালক্ষেপন না করে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া একান্ত যরূরী।
বার্ধক্যে নিরামিষ
বার্ধক্যকে বিলম্বিত করতে নিরামিষ খাবারের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। শরীরের তরতাজাভাব রক্ষা করা বা চুল ও ত্বকের সৌন্দর্য রক্ষা যাই বলি না কেন, তার কৃতিত্ব কিন্তু বিভিন্ন ভিটামিন ও মিনারেলেস-এর। এইসব ভিটামিন ও মিনারেলস-এর উৎস হ’ল বিভিন্ন ফল ও শাক-সবজি। যে মৌসুমে যেসব শাক-সবজি পাওয়া যাবে তা রান্না করতে হবে পুষ্টিগুণ রক্ষা করে। এসব খাবার থেকে প্রয়োজনীয় প্রোটিন, ভিটামিন, কার্বোহাইড্রেড, ফ্যাট তো পাওয়া যাবেই, বাড়তি পাওয়া যাবে অ্যান্টি অক্সিডেন্টস, যা জীবনের নানা ঘাত-প্রতিঘাতের হাত থেকে শরীরকে রক্ষা করবে। ভিটামিন ‘এ’ ভিটামিন ‘ই’ এবং ভিটামিন ‘সি’ এই তিনটি ভিটামিনকে অ্যান্টি অক্সিডেন্টস বলা হয়। ভিটামিন সি দেহকোষের বিভিন্ন বিপাকীয় কার্যে ভূমিকা রাখে। ভিটামিন সি-এর অভাব হ’লে কোষীয় বিপাকীয় কার্যে ব্যাঘাত ঘটে। ফলে টক্সিন রিলিজ হয়ে চুল এবং ত্বকের ক্ষতি করে। ‘ভিটামিন সি’-এর সাথে ‘ভিটামিন-ই’ মিলে সিবাসিয়াস গ্রন্থির নিঃসরণের উপর প্রভাব ফেলে। এই দু’টো ভিটামিনের অভাব হ’লে সিবাস নিঃসরণ অল্প হয় এবং ত্বকে রক্ত সঞ্চালন কমে যায়। ফলে চামড়া শুষ্ক হয়ে পড়ে এবং বয়সের ছাপ এসে যায়। এই ভিটামিন ত্বকের বলিরেখা উৎপন্নকারী ফ্রি র্যাডিকেলসকে প্রশমিত করে ত্বককে কোমল ও সজীব করে রাখে দীর্ঘদিন।
এছাড়া এই ভিটামিন রোদে পোড়া ত্বককে দ্রুত সজীবতা ফিরে আনতে সাহায্য করে। ভিটামিন-ই চর্বিতে দ্রবণীয়। যে কোন উদ্ভিজ্জ তেলে এই ভিটামিন থাকে প্রচুর পরিমাণে। সাধারণত শাক-সবজি সিদ্ধ করে রান্না করলে এই ভিটামিনের কোন ক্ষতি হয় না। তবে ডুবো তেলে ভাজাভুজি করে খেলে এই ভিটামিন বেশির ভাগই নষ্ট হয়ে যায়। হিমায়িত সবজিতেও ভিটামিন-ই ঠিক থাকে না। এই ভিটামিন প্রাকৃতিকভাবে দেহে তৈরি হয় না। এগুলো অবশ্যই খাদ্য বা পরিপূরকের মাধ্যমে শরীরে সরবরাহ করতে হয়। একজন প্রাপ্ত বয়ষ্ক মানুষের দৈনিক ভিটামিন-ই-এর চাহিদা ১৫-২০ আইইউ। চুলের ক্ষেত্রে প্রতিদিন মানুষের কিছু সংখ্যক চুল পড়ে এবং নতুন চুল গজায়। ভিটামিন ‘এ’ এবং ‘ই’ চুলের কোষ বাড়াতে সাহায্য করে। নারী দেহে ইস্ট্রোমেন ও প্রজেস্টেরন নামে দু’টি মেয়েলী হরমোন রয়েছে। এছাড়াও রয়েছে মেল হরমোন অ্যান্ড্রোজেন। ত্বক ও চুলের তারুণ্য বজায় রাখতে এই হরমোনগুলোর একটি নির্দিষ্ট অনুপাতে নিঃসরণ প্রয়োজন। ইস্ট্রোজেন কমে গেলে ত্বকের টিস্যু তৈরী কমে যায়, ফলে ত্বকের টান টান ভাব ক্রমশ শিথিল হয়ে আসে। তবে আশার কথা হ’ল- চল্লিশোর্ধ বয়সে ইস্ট্রোজেনের এই অভাব পরোক্ষভাবে পূরণ করতে সাহায্য করে ফাইটোস্ট্রোজেন। ফাইটোস্ট্রোজেনের প্রধান উৎস হ’ল উদ্ভিজ্জ উৎস, সয়াবিন। এছাড়াও বরবটি, মটরশুুঁটি, শিম, কমলালেবু, কালো আঙ্গুর, বেদানা, আম, জাম, লেটুসপাতা, গাজর, বিট, ক্যাপসিকাম ইত্যাদি রঙ্গিন শাক-সবজি ও ফলে প্রচুর ফাইটোস্ট্রোজেন থাকে, যা রজ নিবৃত্তির পর নারী দেহের প্রায় সব শারীরিক সমস্যা দূর করতে পারে। সত্যি কথা বলতে কি, সয়াবিনসহ বিভিন্ন রঙ্গিন শাক-সবজি ও ফলে পাওয়া যায় ত্বক ও চুল সর্বোপরি সামগ্রিক তারুণ্য বজায় রাখার প্রয়োজনীয় ভিটামিন ও মিনারেলস। গবেষণায় দেখা গেছে, বেশি বেশি শাক-সবজি আর ফলমূল খাওয়ার ফলে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মস্তিষ্ক এবং অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সঞ্চালন ধীরগতিতে চলে মানুষকে করে তোলে আরও সপ্রাণ, বোধশক্তিসম্পন্ন এবং আরো বেশি জীবনমুখী।
\ সংকলিত \