অসাধারণ গুণে
ভরপুর সুপরিচিত ধনে বা ধনিয়া একটি সুগন্ধি ঔষধি গাছ। এটি দক্ষিণ-পশ্চিম
এশিয়া ও উত্তর আফ্রিকার স্থানীয় উদ্ভিদ। বঙ্গ অঞ্চলের প্রায় সর্বত্র ধনের
বীজ খাবারের মসলা হিসাবে ব্যবহৃত হয়।
তবে সুস্বাদু ধনে পাতা এশীয় চাটনি ও মেক্সিকান সালসাতে ব্যবহার করা হয়। ধনে পাতাকে আমরা সালাদ এবং রান্নার স্বাদ বাড়ানোর কাজে সবচেয়ে বেশী ব্যবহার করে থাকি। কিন্তু শুধু স্বাদ এবং ঘ্রাণ বাড়ানোর কাজেই এর গুণাগুণ শেষ হয়ে যায় না।
অধিকাংশ মানুষ ধনে পাতার উপকারিতা না জেনেই নিয়মিত বিভিন্ন তরকারিতে ব্যবহার করে আসছে। এবার জেনে নিন ধনে পাতার অসাধারণ স্বাস্থ্য উপকারিতা সম্পর্কে-
১. ধনে পাতা খেলে শরীরে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমে যায়, ভাল কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি পায়।
২. ধনে পাতা হজমে উপকার করে, যকৃতকে সঠিকভাবে কাজ করতে সাহায্য করে এবং পেট পরিষ্কার করে।
৩. ডায়াবেটিসে আক্রান্তদের জন্য ধনে পাতা বিশেষ উপকারী। এটি ইনসুলিনের ভারসাম্য বজায় রাখে এবং রক্তের সুগারের মাত্রা কমায়।
৪. ঋতুস্রাবের সময় রক্ত সঞ্চালন ভালো হওয়ার জন্য ধনে পাতা খেলে উপকার পাওয়া যায়। এতে থাকা আয়রন রক্তশূন্যতা সারাতেও বেশ উপকারী।
৫. ধনে পাতার ফ্যাট স্যলুবল ভিটামিন এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ভিটামিন ‘এ’ ফুসফুস এবং পাকস্থলীর ক্যান্সার প্রতিরোধে কাজ করে।
৬. এতে রয়েছে অ্যান্টি ইনফ্লামেটরি উপাদান যা বাতের ব্যথাসহ হাড় এবং জয়েন্টের ব্যথা উপশমে কাজ করে।
৭. স্মৃতিশক্তি প্রখর এবং মস্তিষ্কের নার্ভ সচল রাখতে সাহায্য করে ধনে পাতা।
৮. ধনে পাতার ভিটামিন ‘কে’ অ্যালঝেইমার রোগের চিকিৎসায় বেশ কার্যকরী।
৯. ডিসইনফেকট্যান্ট, ডিটক্সিফাইং বা বিষাক্ততা রোধকারী, অ্যান্টিসেপটিক, অ্যান্টিফাঙ্গাল এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান থাকার কারণে এরা বিভিন্ন ত্বকের অসুস্থতা (একজিমা, ত্বকের শুষ্কতা এবং ফাঙ্গাল ইনফেকশন) সারাতে সাহায্য করে। ত্বক সুস্থ ও সতেজ রাখতে তাই ধনে পাতার উপকারিতা অনেক।
১০. এটা শরীরের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং অ্যালার্জি বা এর ক্ষতিকারক প্রভাব থেকে দূরে রাখে।
১১. কারও মুখে যদি দুর্গন্ধ হয় ও অরুচি লাগে তাহ’লে ধনে ভেজে বোতলে ভরে রাখুন। মাঝে মাঝে চিবিয়ে খান মুখে দুর্গন্ধ থাকবে না।
১২. কারও মাথাব্যথা হ’লে ধনে পাতা ও গাছের রস কপালে লাগান। মাথাব্যথা কমে যাবে।
১৩. ধনে পাতা চিবিয়ে দাঁত মাজলে দাঁতের মাড়ি মযবূত হয় এবং দাঁতের গোড়া হ’তে রক্ত পড়া বন্ধ হয়।
ধনে পাতার কিছু ক্ষতিকর দিক :
আমরা প্রতিদিন যে পরিমাণে ধনে পাতা খাই তা স্বাস্থ্যের কোন ক্ষতি করে না। কিন্তু অতিমাত্রায় ধনে পাতার রস সেবন করা বা খাদ্যে ব্যবহার করা ঠিক নয়। এতে খাবারের স্বাদ বাড়ালেও স্বাস্থ্যের জন্য অনেক সময় ক্ষতিকর হ’তে পারে এই ধনে পাতা। আসুন জেনে নেই এর সম্ভাব্য ক্ষতিকর দিকগুলো।
১. অতিরিক্ত ধনেপাতা খেলে এটি লিভারের কার্যক্ষমতাকে খারাপভাবে প্রভাবিত করে থাকে। এতে থাকা এক ধরনের উদ্ভিজ তেল শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে আক্রান্ত করে ফেলে। এছাড়া এটাতে এক ধরনের শক্তিশালী অ্যান্টি অক্সিডেন্ট রয়েছে, যেটা সাধারণত লিভারের বিভিন্ন সমস্যা দূর করে। কিন্তু দেহের মধ্যে এর অতিরিক্ত মাত্রার উপস্থিতি লিভারের ক্ষতি সাধন করে।
২. অতিরিক্ত ধনেপাতা খাওয়ার ফলে হৃৎপিন্ড ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এটি নিম্ন রক্তচাপ সৃষ্টি করে। চিকিৎসকরা উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে ধনেপাতা খাওয়ার পরামর্শ দেন। তবে অতিরিক্ত খেলে সেটা নিম্ন রক্তচাপের সৃষ্টি করে।
৩. গবেষণা বলছে, সপ্তাহে ২০০ গ্রামের বেশী ধনেপাতা খেলে তা গ্যাসের ব্যথা, পেটে ব্যথা, পেট ফোলা, বমি হওয়া এমনকি ডায়রিয়ার কারণ হ’তে পারে।
৪. শ্বাসকষ্টের রোগীদের ধনেপাতা খাওয়ার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা দেন চিকিৎসকরা। কেননা এটি শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা করে। যার ফলে ফুসফুসে অ্যাজমার সমস্যা সৃষ্টি হ’তে পারে। শ্বাসকষ্টের রোগীরা ধনেপাতা খেলে ছোট ছোট নিঃশ্বাস নিতেও সমস্যা তৈরি হয়।
৫. ধনেপাতার প্রোটিন উপাদানটি শরীরে আইজিই নামক অ্যান্টিবডি তৈরি করে, যা শরীরের বিভিন্ন রাসায়নিক উপাদানকে সমানভাবে বহন করে থাকে। কিন্তু এর অতিরিক্ত মাত্রা উপাদানগুলোর ভারসাম্য নষ্ট করে। ফলে অ্যালার্জী তৈরি হয়। এই অ্যালার্জীর ফলে দেহে চুলকানি, ফুলে যাওয়া, জ্বালাপোড়া করা, র্যাশ ওঠা ইত্যাদি সমস্যা তৈরি করে।
৬. অতিরিক্ত ধনেপাতা খাওয়ার আরেকটি ক্ষতিকর দিক হ’ল মুখে ব্যথা হওয়া। ধনেপাতায় বিভিন্ন এসিডিক উপাদান রয়েছে, যা ত্বককে সংবেদনশীল করে থাকে। পাশাপাশি এটি মুখে প্রদাহেরও সৃষ্টি করে। বিশেষ করে ঠোঁট, মাড়ি এবং গলা ব্যথা হওয়া। সারা মুখ লালও হয়ে যেতে পারে।
৭. নারীদের গর্ভকালীন সময়ে অতিরিক্ত ধনেপাতা খাওয়া ভ্রূণের বা বাচ্চার শরীরের জন্য বেশ ক্ষতিকারক। ধনেপাতাতে থাকা কিছু উপাদান নারীদের প্রজনন গ্রন্থির কার্যক্ষমতাকে নষ্ট করে ফেলে। যার ফলে নারীদের বাচ্চাধারণ ক্ষমতা হ্রাস পায়।
[সংকলিত]