পর্ব ১। পর্ব ২। পর্ব ৩। পর্ব ৪।
[ব্রিটিশ ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে আহলেহাদীছদের অবদান অতুলনীয়। জেল-যুলুম, ফাঁসি, সম্পত্তি বাযেয়াফ্ত, যাবজ্জীবন দ্বীপান্তর, আন্দামান ও কালাপানির লোমহর্ষক নির্যাতন সত্ত্বেও ব্রিটিশ বেনিয়াদের বিরুদ্ধে আহলেহাদীছ মুজাহিদগণ শতবর্ষব্যাপী জিহাদ আন্দোলনের যে বহ্নিশিখা প্রজ্বলিত রেখেছিলেন, তার খুনরাঙা পথ ধরেই উপমহাদেশে স্বাধীনতার রঙিন সূর্য উদিত হয়। অথচ দেওবন্দী ঘরানার লেখকরা মিথ্যা ইতিহাস রচনা করে তাদেরকে ইংরেজদের সেবাদাস প্রমাণের ব্যর্থ চেষ্টা চালান অহর্নিশ। এ প্রেক্ষিতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের কবল থেকে ভারতবর্ষকে মুক্ত করার রক্তঝরা সংগ্রামে জামা‘আতে আহলেহাদীছ ও হানাফীদের ভূমিকা বিষয়ে ‘তাহরীকে জিহাদ : আহলেহাদীছ আওর আহনাফ’(تحريك جہاد : اھل حديث اور احناف) শিরোনামে উর্দূ ভাষায় একটি গবেষণাধর্মী গ্রন্থ প্রণয়ন করেন হাফেয ছালাহুদ্দীন ইউসুফ। এতে আহলেহাদীছদের বিরুদ্ধে দেওবন্দীদের বিষোদগারের তাত্ত্বিক ও দালীলিক খন্ডন রয়েছে। সেকারণ মাসিক ‘আত-তাহরীক’-এর পাঠকবৃন্দের খিদমতে উক্ত অমূল্য গ্রন্থের বঙ্গানুবাদ পত্রস্থ করা হ’ল।-সম্পাদক]
অধ্যাপক আইয়ূব কাদেরীরজওয়াবে
বলা হয়ে থাকে যে, বর্তমান যুগ বিজ্ঞান ও গবেষণার যুগ। আজকাল গবেষণাকর্মের বড়ই কদর। এজন্য বড় বড় প্রতিষ্ঠান বিদ্যমান রয়েছে। সেখানে গবেষকগণ বিদ্যার সাগরে ডুব দিয়ে জ্ঞান-গবেষণার দামী দামী মণিমুক্তা আহরণ করে জনসমক্ষে প্রকাশ করছেন। কিন্তু তার সাথে এটাও বড় আফসোসের কথা যে, এ ধরনের অনেক গবেষণাকর্মই পক্ষপাতিত্ব, জাতীয় ও গোষ্ঠীগত ধ্যান-ধারণা এবং মানসিক সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে উঠে খোলা মন ও মস্তিষ্ক নিয়ে করা হয় না। অথচ গবেষণাকর্মের জন্য এগুলিই সবচেয়ে বেশী যরূরী। অনেক সময় একজন গবেষক বিশেষ কোন পরিবেশ-পরিস্থিতি অথবা মানসিক কিংবা দলীয় সংকীর্ণতার কারণে কোন বিষয় সম্পর্কে নিজের মস্তিষ্কে একটা কাল্পনিক নকশা কিংবা ভুল ধারণা তৈরি করেন এবং তার ভিত্তিতে পড়া-লেখা না করেই পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা ইতিহাস রচনা করেন। এজন্য তিনি স্বভাবত যেসব তথ্য তার মস্তিষ্ক প্রসূত ধারণা ও কাল্পনিক ইতিহাসের ভিত্তি গড়তে পারে, সেগুলি সংগ্রহ করতে থাকেন। কিন্তু যে সব বাস্তব বিষয় ও ঘটনা তার ধারণাকে ভুল প্রতিপন্ন করতে পারে সেগুলো সম্পূর্ণই তার অগোচরে রয়ে যায়। কেননা তার মস্তিষ্কে তো একটা বিশেষ ধারণা আগে থেকেই বাসা বেঁধে আছে, যা তার গবেষণাকর্মের ধারা একটি বিশেষ দিকে পরিচালিত করে। তারপর আর সত্য উদ্ঘাটন তার উদ্দেশ্য থাকে না, বরং তার মনে বাসা বাঁধা কল্পনাকে বাস্তবের রঙে রঞ্জিত করাই তার ধ্যান-জ্ঞান হয়ে দাঁড়ায়।
কিছুটা এমনই এক ‘ঐতিহাসিক সৃষ্টিকর্ম’ হ’ল করাচীর জনৈক অধ্যাপক জনাব মুহাম্মাদ আইয়ূব কাদেরীর একটি প্রবন্ধ, যা প্রথমে করাচীর ‘আল-বালাগ’ এবং পরে লাহোরের সাপ্তাহিক ‘চাটান’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। এই প্রবন্ধে খুবই দুঃখজনকভাবে উপমহাদেশের আহলেহাদীছদের ইতিহাসকে বাস্তবতার সম্পূর্ণ বিপরীতে বিকৃতভাবে চিত্রায়িত করার চেষ্টা করা হয়েছে। যার মূল কথা হ’ল এই যে, স্যার সৈয়দ আহমাদের সময় থেকে জামা‘আতে আহলেহাদীছ তাদের কার্যধারা বদলে ফেলে এবং ইংরেজদের সহযোগিতা ও আনুগত্যকে তাদের নীতি হিসাবে গ্রহণ করে।[2] একই সাথে আরেকটি অপবাদ আরোপ করা হয় যে, ইংরেজী শিক্ষা বিস্তারে এই জামা‘আত উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে। অথচ এই দু’টি অভিযোগই সর্বৈব মিথ্যা এবং বুদ্ধিবৃত্তিক সংকীর্ণতা ও দলীয় গোঁড়ামির নিরেট বহিঃপ্রকাশ মাত্র। সে কথা আমরা প্রথমেই বলে এসেছি। কোন মানুষ ইলমী আমানতদারী ও ঘটনাবলী বিশ্লেষণের সর্বজনগ্রাহ্য নীতিমালা পিছনে ছুঁড়ে ফেলে ইতিহাস রচনায় প্রবৃত্ত না হ’লে উক্ত অপবাদ দু’টি সাব্যস্ত করা আদৌ সম্ভব হ’তে পারে না। ফলত অধ্যাপক ছাহেবের প্রবন্ধে ইতিহাস রচনার এই মন্দ রীতিই অনুসৃত হয়েছে।
প্রথমত আমরা প্রবন্ধকারের বুদ্ধিবৃত্তিক সংকীর্ণতা স্পষ্ট ও পরিষ্কার করা আবশ্যক মনে করছি। কেননা তাঁর ঐ গবেষণার পিছনে এই সংকীর্ণতা ও গোঁড়ামিই কাজ করেছে। লেখক নিজে দেওবন্দী চিন্তাধারার সাথে যুক্ত এবং দেওবন্দী আলেমদের সাথে হৃদয়ের সম্পর্ক রাখেন। যে কারণে আহলেহাদীছ জামা‘আত ও আহলেহাদীছ আলেমদের সাথে দুশমনী রাখতে স্বভাবতই তিনি বাধ্য। সম্ভবতঃ এটিও দেওবন্দী চিন্তাধারার একটি অংশ।
তার বিরোধিতামূলক লেখার দ্বিতীয় সুস্পষ্ট প্রমাণ তার এই গবেষণা যে, স্যার সৈয়দ আহমাদ শুধু আহলেহাদীছই ছিলেন না; বরং কট্টর আহলেহাদীছ ছিলেন। আর এই মত কেবল তিনিই পোষণ করতে পারেন, যার মগযে আহলেহাদীছ বিরোধিতার আবেগ ক্রিয়াশীল। তা না হ’লে এ সত্য কার অজানা যে, আহলেহাদীছ ও স্যার সৈয়দ আহমাদের মধ্যে পূর্ব-পশ্চিমের মতই দূরত্ব বিদ্যমান। উভয়কে এক প্রমাণ করা আগুন ও পানিকে একত্রিত করার নামান্তর। আহলেহাদীছ কুরআন ও সুন্নাহর নির্ভেজাল সালাফী পথের অনুসারী। তার থেকে এক চুলও পিছপা হ’তে তারা রাযী নয়। এজন্য দেওবন্দ আলেমগণ আজকাল আহলেহাদীছ আলেমদেরকে ‘বাহ্যদর্শী’ (যারা কোন জিনিসকে উপর উপর বোঝে, গভীরভাবে তলিয়ে দেখে না বা বুঝতে চেষ্টা করে না) বলে বিদ্রুপ করে থাকেন। আহলেহাদীছ আলেমগণ উক্ত বিদ্রুপকে এই ভেবে মেনে নেন যে, যদিও আমরা এভাবে তিরষ্কারের পাত্র হচ্ছি, তবুও কুরআন ও হাদীছ তো বাচ্চাদের খেলনা হওয়ার হাত থেকে বেঁচে যাচ্ছে। এর বিপরীতে স্যার সৈয়দ কুরআন ও হাদীছের এমন সব নাযুক ও দুর্বল অর্থ করেছেন, যা কোন বাহ্যদর্শীর কাজ হ’তে পারে না। সেটা তো দেওবন্দী আলেমদের মতো কোন ডুবুরীর কাজ হ’তে পারে, যারা কি-না প্রকাশ্য অর্থকে যথেষ্ট মনে করেন না; বরং তার মগয বের করে ছাড়েন। তারপরও উল্টো দাবী যে, স্যার সৈয়দ ‘আহলেহাদীছ’ ছিলেন!
যদি কেউ শুধু মুখে বলে যে, ‘আমি আহলেহাদীছ’ ‘আমি হানাফী’ ব্যস অমনি সে আহলেহাদীছ ও হানাফী হয়ে গেল? তারপর তার ঈমান-আক্বীদা ও তার সারা জীবনের কার্যধারার মাঝে কি এটা তলিয়ে দেখা যরূরী নয় যে, তার মৌখিক দাবী ও বাস্তব আমলের মধ্যে কোন মিল আছে কি-না? সম্মানিত প্রবন্ধকারের নিকট আমাদের আরয, মির্যা গোলাম আহমাদ কাদিয়ানীও নিজেকে ‘হানাফী’ দাবী করতেন। তারই সমনামের ও সমবয়সের গোলাম আহমাদ পারভেযও নিজের হানাফী হওয়ার ডঙ্কা বাজাতেন। এ দাবী বিশ্বাসযোগ্যও। তাহ’লে কি জনাবের বর্ণনাকৃত মূলনীতি অনুযায়ী কাদিয়ানী ও পারভেযীদেরকে হানাফীদের একটা উপদল বলা যাবে? মোটকথা, আমরা এটা বলতে চাচ্ছি যে, স্যার সৈয়দ আহমাদকে আহলেহাদীছ বানানোর অপচেষ্টা প্রবন্ধকারের বুদ্ধিবৃত্তিক গোঁড়ামির দলীল মাত্র।
তাছাড়াও পুরো লেখার প্রতিটি অংশ এ কথার সাক্ষ্য বহন করে যে, প্রবন্ধকার আমানতদারী ও নিরপেক্ষতার পরিবর্তে নির্ভেজাল সংকীর্ণতা ও পক্ষপাতিত্বের সাথে কাজ করেছেন।
দ্বিতীয়তঃ আজকাল দেশ জুড়ে যে বিপজ্জনক রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং শিক্ষা-দীক্ষার প্রসার ঘটছে, তাতে হকপন্থী দলগুলোর যেখানে একত্রে মিলেমিশে কাজ করা আবশ্যক, সেখানে হকপন্থী একটি দলের বিরুদ্ধে এভাবে কষ্টদায়ক রচনা হকপন্থীদেরই আরেকটি দলের পক্ষ থেকে কেন প্রকাশ করা হচ্ছে তা আমাদের বোধগম্য নয়। কিছু সময়ের জন্য যদি মেনে নেওয়া হয় যে, এই অভিযোগ সঠিক এবং আহলেহাদীছরা সত্যিই ইংরেজদের অনুগত ছিল, তবুও তো এখন যখন তারা অন্য সব ইসলামী দলের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে বাতিলপন্থীদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে, তখন এ ধরনের গবেষণার উদ্দেশ্য কী? আহলেহাদীছ জামা‘আতের এমন কী অপরাধ যে, এই নাযুক পরিস্থিতিতেও আমাদের এই মেহেরবান লেখক তা মাফ করতে প্রস্ত্তত নন? আমাদের অপরাধ কি এমনই যে, যার প্রতি এক আরব কবি ইশারা করেছেন,
وُجُوْدُكَ ذَنْبٌ لَا يُقَاسُ بِهِ ذَنْبٌ
‘তোমার অস্তিত্বই তোমার অপরাধ।
তার চেয়ে বড় কোন অপরাধ আর নেই’।
তৃতীয়তঃ এই প্রবন্ধ ‘চাটান’ পত্রিকায় প্রকাশ আরও বেশী আশ্চর্যজনক ও বিস্ময়কর। এ পত্রিকার সম্পাদক মুহতারাম আগা শূরেশ কাশ্মীরী যিনি নিজেও ইংরেজ স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে লড়াইকারী, এ পথে পদচারণার ফলে পায়ে ফোস্কা ফেলে আহত-যখম ব্যক্তি, আযাদী কাফেলার অবশিষ্টদের একজন, যার সামনে আহলেহাদীছ জামা‘আতের জিহাদ ও সংগ্রামের পুরো নকশা মওজূদ আছে। এর বিস্তারিত ইতিহাস সম্পর্কে তিনি সম্পূর্ণরূপে অবগত আছেন এবং জামা‘আতের খেদমতকে যিনি স্বীকার করেন। তিনি তো আজ থেকে তিন বছর আগে লাহোরে আহলেহাদীছদের এক মহাসম্মেলনে আহলেহাদীছ জামা‘আত সম্পর্কে বলেছিলেন যে, হিন্দুস্তানের স্বাধীনতা যুদ্ধে সবচেয়ে বেশী রক্ত এই জামা‘আতের লোকদের ঝরেছে। সেই বক্তৃতার কিছু নির্বাচিত অংশ ‘চাটান’ পত্রিকাতেও ছাপা হয়েছিল। আগা ছাহেব সেদিন বলেছিলেন,
‘১৮৫৭ সালে দিল্লী যখন মৃত্যুপুরী, রাষ্ট্রক্ষমতা মুসলমানদের হাতছাড়া হয়ে গিয়েছিল এবং তাদের জন্য হিন্দুস্তানের মাটি সংকীর্ণ হয়ে পড়েছিল, তখন যে জামা‘আতকে সবচেয়ে বেশী ইংরেজ সাম্রাজ্যবাদের চুলার জ্বালানী হ’তে হয়েছিল, যাদের আলেমদের নামে অসংখ্য মামলা-মোকদ্দমা দায়ের করা হয়েছিল, তারা হ’লেন আহলেহাদীছ। মামলা-মোকদ্দমার এই সিলসিলা ঊনিশ শতকের শেষ আট ও নয় দশক পর্যন্ত জারী ছিল। তখন হিন্দুস্তানের বধ্যভূমিতে যারা জীবন দিয়েছিলেন তাদের সংখ্যা ছিল পৌনে দুই লাখ। এই গণহত্যার কথা যোর-যবরদস্তি করে ভুলিয়ে দেওয়ার কারণে তাদের ব্যক্তিগত নামসমূহ আজ আর সংরক্ষিত নেই। কিন্তু তাদের জামা‘আতের নাম থেকে গেছে। এখন যে রেকর্ড সামনে আসছে তাতে এ কথার সত্যতা মেলে যে, তাদের রক্তের উপর যে নামের ছাপ লাগানো হয়েছিল তা ছিল ‘ওহাবী’। এ এক ঐতিহাসিক বাস্তবতা যে, সবচেয়ে বড় সংস্কারবাদী এই জামা‘আত এবং তাদের আত্মমর্যাদাসম্পন্ন নেতৃবৃন্দকে বৃটিশ ঔপনিবেশিক শাসকবৃন্দ ও তাদের এ দেশীয় নব্য দোসররা নানা মিথ্যা অভিযোগ ও অপবাদের লক্ষ্যে পরিণত করে ইসলামের শক্তিকে দুর্বল করে দিয়েছিল এবং ইসলামের মূলতত্ত্ব বা পরিচয়কে ক্ষত-বিক্ষত করে দিয়েছিল। নতুবা একটি নির্দিষ্ট সময় ধরে হিন্দুস্তানে ইসলামের ইতিহাস এই ওহাবী জামা‘আতের কৃতজ্ঞতা পাশে আবদ্ধ। আমি আহলেহাদীছকে এই হিসাবে স্বীকার করি এবং আমার অবাক লাগে যে, এমন এক একটা মুক্তার দানাও মুসলমানদের মধ্যে ছিল- যারা দ্বীনকে পরিশুদ্ধ করেছেন, কিন্তু নিজেরা অপমানিত হয়েছেন; যারা ইসলামকে উঁচু করেছেন, কিন্তু নিজেরা গযবের শিকার হয়েছেন; যারা বিদেশী সাম্রাজ্যবাদের কঠোর মোকাবেলা করেছেন, কিন্তু নিজেরা দেশী-বিদেশীদের খঞ্জরে ঘায়েল হয়েছেন’ (সাপ্তাহিক ‘চাটান’ ১৩ই নভেম্বর ১৯৬৭)।
আহলেহাদীছ জামা‘আতের প্রতি আগা ছাহেবের এমন সুধারণা এবং তাদের খেদমত স্বীকার করার পরও অধ্যাপক কাদেরীর প্রবন্ধ ‘চাটান’ পত্রিকায় প্রকাশে আমরা বিস্মিত হয়েছি। কেননা এ প্রবন্ধে আগা ছাহেবের ধারণার বিপরীত ধারণা ব্যক্ত করা হয়েছে। সম্ভবত গবেষণা ও সমালোচনার উদ্দেশ্যে তিনি তা ছেপেছেন, যাতে ইতিহাসের চাপা পড়া একটি দিক মানুষের সামনে উন্মোচিত হ’তে পারে। এজন্যই আগা ছাহেব তার মন্তব্যে এ বিষয়ে গবেষণার জন্য উন্মুক্ত আহবান জানিয়েছেন। এ আহবানকে স্বাগত জানিয়ে আমরা কিছু নিবেদন পেশ করছি।
স্যার সৈয়দ আহমাদ খানের যে চিন্তাধারা ছিল তা অধ্যাপক আইয়ূব কাদেরীর ভাষাতেই শুনুন। তিনি লিখেছেন,
‘চিন্তা-ভাবনার পর স্যার সৈয়দ আহমাদ খান এই সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে, ইংরেজদের স্থায়ী ও স্বাধীন শাসন প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে, মুসলমানদের এখন ইংরেজদের সাথে মিলেমিশে থাকা এবং শান্তিপূর্ণ ও নিরাপদ জীবন যাপন করা উচিত। শাসক ও শাসিতের মধ্যকার ভুল বুঝাবুঝির অবসান হওয়া আবশ্যক। আর কিছুদিনের জন্য মুসলমানদের রাজনীতি থেকে একেবারেই দূরে থাকতে হবে এবং সরকারের মনে নিজেদের আনুগত্যের পুরো ছবি বসিয়ে দিতে হবে। যাতে মুসলমানদের প্রতি ইংরেজদের মন্দ ধারণা দূর হয়ে যায়। সেই সাথে ইংরেজী শিক্ষা ও পাশ্চাত্য সংস্কৃতির দিকেও মুসলমানদের দৃষ্টি দিতে হবে’।
অর্থাৎ ১৮৫৭ সালের পর মুসলমানদের সীমাহীন দুরবস্থায় ব্যথিত স্যার সৈয়দ চাইছিলেন যে, মুসলমানরা ইংরেজদের সঙ্গে শত্রুতা না করে বরং মিত্রতা ও সহযোগিতার নীতি অবলম্বন করুক।
এখন তার এই দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখার বিষয় এই যে, সমস্ত মুসলমানের মধ্যে প্রকৃত অর্থে যে জামা‘আত ইংরেজদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহাত্মক মনোভাব পোষণ করছিল এবং সেজন্য বাস্তবে যথাসাধ্য ত্যাগ স্বীকার করছিল, সে জামা‘আতের নাম আহলেহাদীছ। (যার স্বীকৃতি কাদেরী ছাহেবও দিয়েছেন।) তাদেরকেই ‘জামা‘আতে মুজাহিদীন’ বলা হ’ত এবং তারাই ‘ওহাবী’ নামে কথিত হ’ত। এ কারণেই ইংরেজদের অত্যাচার-নিপীড়ন ও যোর-যুলুমের শিকার প্রায়শ এই জামা‘আতকেই হ’তে হয়েছে। ১৮৬৪ থেকে ১৮৮১ খৃ. পর্যন্ত ওহাবী মোকদ্দমা সমূহের রোয়েদাদ আমাদের এ কথার সাক্ষ্য বহন করে।[3] এদিকে উইলিয়াম হান্টারও (১৮৭২ সালে) ওহাবীদের বিরুদ্ধে গরম গরম রিপোর্ট দেন। তিনি ইংরেজ শাসনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের দায় কেবল ‘ওহাবী-আহলেহাদীছদের’ উপরেই চাপান। তার এই রিপোর্ট গরম কড়াইয়ে ফুটন্ত তেলের কাজ করে এবং ইংরেজ সরকারের রাষ্ট্রযন্ত্র এই জামা‘আতকে নিশ্চিহ্ন করতে উঠে-পড়ে লাগে।
এ ছিল সেই পটভূমি, যার প্রেক্ষিতে স্যার সৈয়দ আহমাদ ওহাবীদের রক্ষার্থে ময়দানে অবতীর্ণ হয়েছিলেন এবং ঘোষণা করেছিলেন, ‘আমি একজন ওহাবী, আমার আক্বীদা-বিশ্বাসের ভিত্তিতে আমি ইংরেজ শাসনের অনুগত এবং কোন ওহাবী ইংরেজ শাসনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করতে পারে না’।
স্যার সৈয়দ মরহূমের এ ঘোষণা প্রকৃতপক্ষে তার সেই মনোবেদনার বহিঃপ্রকাশ। যার প্রেক্ষিতে তিনি ‘আসবাবে বাগাওয়াতে হিন্দ’ বা ‘হিন্দুস্তানে বিদ্রোহের কারণ’ নামক বই রচনা করেছিলেন এবং মুসলিম জাতিকে কোন না কোনভাবে রক্ষা করার চিন্তা করেছিলেন। এ থেকে এ সিদ্ধান্তে কিভাবে উপনীত হওয়া যায় যে, স্যার সৈয়দ আহমাদ ‘আহলেহাদীছ’ ছিলেন? যার উপর ভিত্তি করে মুহতারাম কাদেরী ছাহেব নিজ প্রবন্ধের পুরো সৌধ নির্মাণ করলেন? যে হানাফীদের হান্টার ছাহেব ওহাবীদের বিপরীতে ‘সুন্নী’ নামে আখ্যায়িত করেছেন, তারা যদি বিদ্রোহের জোশের আগুনে জ্বলতো তাহ’লে নিশ্চয়ই স্যার সৈয়দ নিজেকে ‘হানাফী’ ঘোষণা দিয়ে তাদের রক্ষার্থে ঐ একই কথা বলতেন। কিন্তু সুন্নীরা তো সে সময় সন্দেহ বশে ধরপাকড়ের ভয়ে হিজাযের পথে পা বাড়িয়েছিল অথবা জুববা-জামা নিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে ব্যস্ত ছিল, কিংবা হত-দুর্বল ওহাবীদের মসজিদ থেকে বের করে দেওয়ার ফৎওয়া দিতে ব্যস্ত ছিল। ঘটনা তো অনেক লম্বা! কবি বলেন,
ہميں ياد ہےسب ذرا ذرا + تمہيں ياد ہو كہ نہ ياد ہو
‘আমাদের তো সব মনে আছে কম কম। তোমাদের তা স্মরণ আছে, কিংবা স্মরণ নেই’।
উক্ত দু’লাইন হঠাৎই কলমের ডগায় এসে গেল। নতুবা আমাদের হৃদয়ে তো সকল বুযুর্গের প্রতি অঢেল সম্মান রয়েছে। আল্লাহ বলেন,تِلْكَ أُمَّةٌ قَدْ خَلَتْ لَهَا مَا كَسَبَتْ وَلَكُمْ مَا كَسَبْتُمْ وَلَا تُسْأَلُونَ عَمَّا كَانُوا يَعْمَلُونَ- ‘তারা এক উম্মাহ, যারা বিগত হয়ে গেছে। তারা যা করেছে তার বিনিময় তারা পাবে, আর তোমরা যা করছ তার বিনিময় তোমরা পাবে। তারা যা করত সেজন্য তোমরা জিজ্ঞাসিত হবে না’ (বাক্বারাহ ২/১৩৪)।
কাদেরী ছাহেবের প্রবন্ধের ভুল-ভ্রান্তি : এই প্রবন্ধে কাদেরী ছাহেব আরও লিখেছেন, ‘হিন্দুস্তানের মুসলমানরা অধিকাংশ হানাফী মাযহাবের অনুসারী। বিশিষ্টজন ও আলেমদের মধ্যে কিছু আহলেহাদীছও রয়েছেন। মৌলভী ইসমাঈল শহীদ এই আহলেহাদীছ চিন্তাধারার প্রসারে বিশেষ ভূমিকা পালন করেন এবং এজন্য নিজ অনুসারীদের একটি দল প্রতিষ্ঠা করেন। অবশ্য মুজাহিদ বাহিনীতে আহলেহাদীছ ও হানাফী উভয় শ্রেণীর লোক মওজুদ ছিল। সাইয়েদ আহমাদ ব্রেলভী (রহঃ)-এর খেয়াল তো স্পষ্টই হানাফী মাযহাবের প্রতি ছিল। মাওলানা বেলায়েত আলী ছাদেকপুরীর মাযহাবও হানাফী ছিল। মাওলানা বেলায়েত আলী এক স্থানে বলেছিলেন, ‘আমি হানাফী মাযহাবের অনুসারী। আর এ মাসআলা সর্বসম্মত যে, যদি কোন হানাফী সুস্পষ্ট এবং অরহিত (حديث صريح غير منسوخ) কোন হাদীছ পেয়ে কোন ফিক্বহী মাসআলার বিপরীতে আমল করে, তবে হানাফী মাযহাব থেকে সে খারিজ হবে না’। এই পুরো উদ্ধৃতি তার প্রবন্ধটির ভুল হওয়ার আয়না স্বরূপ বলা চলে।
প্রথমতঃ এই প্রবন্ধে বলা হয়েছে যে, শাহ ইসমাঈল শহীদ মুজাহিদ বাহিনীতে আহলেহাদীছ চিন্তাধারার বিশেষ প্রসার ঘটিয়েছেন। অন্য কথায়, শাহ ইসমাঈল শহীদ মুজাহিদ বাহিনীতে যেখানে হানাফী ও আহলেহাদীছ উভয় শ্রেণীর লোক ছিলেন, তাদের মাঝে ফিক্বহী ও দলীয় গোঁড়ামির গোড়াপত্তন করেন। অথচ এ কথা সম্পূর্ণ বাস্তবতা বিবর্জিত। শাহ ইসমাঈল শহীদ (রহঃ) অবশ্যই আহলেহাদীছ ছিলেন, কিন্তু ফিক্বহী মাসআলা সমূহের পিছনে প্রবন্ধকারের ইঙ্গিত মতো তিনি তাঁর যোগ্যতা ও সামর্থ্য কখনও ব্যয় করেননি। তাঁর লক্ষ্য বেশীর ভাগ ছিল শিরক-বিদ‘আত মিশ্রিত বিশ্বাস, অনৈসলামী ও জাহেলী রসম-রেওয়াজ উৎখাত এবং আক্বীদা-বিশ্বাস সংশোধনে কেন্দ্রীভূত। তাঁর দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য ছিল এই মিশনকে বাঁচিয়ে রাখা, যা তিনি সৈয়দ আহমাদ ব্রেলভী (রহঃ)-এর নেতৃত্বাধীনে শুরু করেছিলেন। আহলেহাদীছদের যেসব মাসআলা ‘ব্রাদারানে ইউসুফ’-এর (হিংসুটেদের) মেহেরবানীতে আমাদেরকে একটা পৃথক মাসআলাধারী সমাজ বানিয়ে দিয়েছে, তাকে মাওলানা শহীদ না তার গবেষণার বিষয় বানিয়েছিলেন, না মুজাহিদ বাহিনীতে তিনি বিশেষভাবে তার প্রচার-প্রসার ঘটিয়েছিলেন।
দ্বিতীয়তঃ তিনি দাবী করেছেন যে, মুজাহিদ বাহিনীর নেতৃত্ব সাধারণত হানাফীদের হাতে ছিল। এ কারণেই উপরের উদ্ধৃতিতে তিনি সাইয়েদ আহমাদ শহীদের সাথে মাওলানা বেলায়েত আলীর মতো হাদীছের উপর আমলকারী বিখ্যাত ব্যক্তিত্বকেও হানাফী মতের সাথে জুড়ে দিয়েছেন। অথচ বাস্তব সত্য এই যে, মুজাহিদ বাহিনীর নেতৃত্ব আগাগোড়াই বেশীর ভাগ সময় ও ক্ষেত্রে আহলেহাদীছ মান্যবরদের হাতেই ছিল। খোদ এই প্রবন্ধ থেকেও এ কথা সাব্যস্ত হয় যে, আহলেহাদীছরাই এই বাহিনীর মূলধন ও প্রাণ স্পন্দন ছিল। ইতিপূর্বে আমরা সে কথার প্রতি ইঙ্গিত দিয়ে এসেছি। তাছাড়াও যেসব বিশিষ্ট হানাফী এই বাহিনীতে শামিল ছিলেন তারাও অলিউল্লাহী চিন্তাধারার সাথে সম্পর্কিত ছিলেন। যদিও তারা হানাফী ফিক্বহের উপর আমল করতেন, তবুও সেই অন্ধ তাক্বলীদ থেকে তারা পুরোপুরি মুক্ত ছিলেন, যে তাক্বলীদের উপর দেওবন্দী আলেমগণ বিশেষভাবে আমল করে আসছেন। তাদের হানাফিয়াতের মাঝে হাদীছের উপর আমলের আগ্রহ প্রতিনিয়ত বাড়ছিল। ফলে এই বাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত আহলেহাদীছ নেতৃবৃন্দের এ ধরনের হানাফীদের নিয়ে কোন সমস্যা ছিল না। ফলশ্রুতিতে এই নির্মল পরিচ্ছন্ন জামা‘আত আমে-দুধে মিশে জনগণের আক্বীদা সংস্কারে লিপ্ত হয়েছিলেন এবং বাতিলপন্থীদের বিরুদ্ধে সংগ্রামে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিলেন।
কবির ভাষায়, خدا رحمت كند اىں عاشقان پاك طينت را ‘এই পবিত্র স্বভাবের প্রেমিকদের উপর আল্লাহ অনুগ্রহ করুন’।
উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, হযরত সাইয়েদ আহমাদ শহীদ (রহঃ) হানাফী ছিলেন। কিন্তু ছিরাতুল মুস্তাক্বীম তথা সরল পথের এই পথিক জ্ঞানীদের জন্য চোখের সুর্মা সম ছিলেন। জানা প্রয়োজন যে, ‘ছিরাতে মুস্তাক্বীম’ সাইয়েদ আহমাদ শহীদ (রহঃ)-এর বাণীসমূহের সংকলন। তাতে তিনি বলেছেন, ‘প্রচলিত চার মাযহাবের অনুসরণ সাধারণভাবে ঠিক আছে। কিন্তু নববী ইলমকে একজন মুজতাহিদের মাঝে সীমাবদ্ধ ভাবা ঠিক হবে না। কেননা সে সময় গ্রন্থাকারে সংকলিত না থাকার কারণে নববী ইলম তথা হাদীছ মুসলিম বিশ্বের সর্বত্র ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ছিল। প্রত্যেক মুজতাহিদ স্বীয় সময়ের প্রয়োজন মাফিক তা থেকে হিস্যা লাভ করেছেন। তারপর যখন হাদীছের গ্রন্থগুলো লিখিতভাবে আত্মপ্রকাশ করল, তখন তাতে সকল নববী ইলমের একত্র সমাবেশ ঘটল। তাই এখন যে মাসআলাতেই স্পষ্ট এবং অরহিত ছহীহ হাদীছ (حديث صحيح صريح غير منسوخ) মিলবে, সেই মাসআলাতে হাদীছের খেলাফ কোন মুজতাহিদেরই অনুসরণ করা যাবে না। এক্ষেত্রে আহলেহাদীছ মুহাদ্দিছগণকে অনুসরণ করতে হবে। তাঁদের সাথে মহববত রাখা এবং তাঁদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা যরূরী হবে। তাঁরাই তো নববী ইলমের বাহক। ফলে নবী করীম (ছাঃ)-এর সঙ্গে তাঁদের এক ধরনের সংযোগ ও ছোহবত থাকায় তাঁর নিকটে তাঁদের গ্রহণযোগ্যতা অর্জিত হয়েছে’।[4] নীতিগতভাবে আহলেহাদীছদের বক্তব্য এটাই। এ মতের ধারক-বাহকদের হানাফী বলা চলে না।
তৃতীয়তঃ এ দাবীও বড়ই হাস্যকর যে, ‘মাওলানা বেলায়েত আলী এবং তার সঙ্গী-সাথী ও ছাত্ররা সবাই হানাফী ছিলেন’। তাদের হানাফী বলে দাবী করার পিছনে কারণ এই যে, সাইয়েদ আহমাদ শহীদ ও শাহ ইসমাঈল শহীদের শাহাদতের পর জিহাদ আন্দোলনের পুরো নেতৃত্ব মাওলানা বেলায়েত আলী, তার ভাই মাওলানা এনায়েত আলী এবং পর্যায়ক্রমে তাদের ছাত্রবৃন্দ, বন্ধু-বান্ধব ও তাদের খান্দানের বিভিন্ন সদস্যের হাতে ছিল। তাদের নেতৃত্ব ভিত্তিক কার্যাবলী, জিহাদী তৎপরতা এবং এ পথে তাদের কঠিন কষ্ট ও ত্যাগের কথা মাওলানা মাসঊদ আলম নদভী তার ‘হিন্দুস্তান কী পহেলী ইসলামী তাহরীক’ বইয়ে দরদভরা হৃদয়ে সবিস্তার আলোচনা করেছেন। এতদসঙ্গে ‘তাযকেরায়ে ছাদেক্বাহ’ গ্রন্থও পাঠযোগ্য। এখন যদি তাদের হানাফী সাব্যস্ত করা যায়, তাহ’লে সহজেই প্রমাণিত হবে যে, দুই শহীদের শাহাদতের পর জিহাদ আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব হানাফীদের (দেওবন্দীদের) হাতে এসে গিয়েছিল। এটাই সম্মানিত প্রবন্ধকারের উদ্দেশ্য বলে বুঝা যায়।
অথচ এই দু’টি দাবীই অসত্য। না মাওলানা বেলায়েত আলী এবং তাঁর ছাত্রবৃন্দ, বন্ধু-বান্ধব ও তাঁর খান্দানের সদস্যরা হানাফী ফিক্বহের মুক্বাল্লিদ ছিলেন; না দেওবন্দী আলেমগণ কোন পর্যায়ে জিহাদ আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছেন।
এ স্থানে আমরা মাওলানা বেলায়েত আলীর মাসলাক বা নীতি-আদর্শের উপর কিছুটা আলোকপাত করা সমীচীন মনে করছি। যাতে এই দ্বিধা-দ্বন্দ্ব ও ভুল বুঝাবুঝি থেকে ফায়েদা উঠিয়ে জিহাদ আন্দোলনের বাহবা তার সঙ্গে যারা জড়িত নয় তাদেরকে প্রদান এবং প্রকৃত অংশগ্রহণকারীদেরকে তা থেকে বঞ্চিত করার চোরা পথ বন্ধ হয়ে যায়। [ক্রমশঃ]
মূল (উর্দূ): হাফেয ছালাহুদ্দীন ইউসুফ
পাকিস্তান কেন্দ্রীয় শারঈ আদালতের আজীবন উপদেষ্টা, প্রখ্যাত আহলেহাদীছ আলেম, লেখক ও গবেষক; সাবেক সম্পাদক, সাপ্তাহিক আল-ই‘তিছাম, লাহোর, পাকিস্তান। জন্ম : ১৯৪৫ জয়পুর, রাজস্থান, ভারত; মৃত্যু : ১২ই জুলাই ২০২০ লাহোর, পাকিস্তান।
অনুবাদ : মুহাম্মাদ আব্দুল মালেক
ঝিনাইদহ।
[2]. স্যার সৈয়দ আহমাদ খান (১৮১৭-১৮৯৮ খৃ.) হলেন আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা। তিনি এর মাধ্যমে মুসলমানদের ইংরেজী শিক্ষায় উদ্বুদ্ধ করেন ও ইংরেজদের সাথে আপোষনীতি গ্রহণ করেন। ইংরেজ সরকার খুশী হয়ে তাঁকে ‘স্যার’ উপাধি দেয়।
[3]. ঐ, মামলা সমূহের সংক্ষিপ্ত বিবরণ মাওলানা মাসঊদ আলম নাদভী তাঁর ‘হিন্দুস্তান কী পহেলী ইসলাম তাহরীক’ বইয়ে সন্নিবেশিত করেছেন। যদিও এর সবিস্তার আলোচনার বিষয়টি এখনো চিন্তাশীল ঐতিহাসিকদের অপেক্ষায় রয়েছে।
[4]. ছিরাতে মুস্তাক্বীম, পৃ. ৭৮।