
ভূমিকা :
কুরআন ও হাদীছ উভয়টির সমন্বয়েই ইসলাম পরিপূর্ণ। এর কোন একটিকে বাদ দিলে পূর্ণরূপে ইসলাম মানা সম্ভব নয়। কেননা কুরআনের ব্যাখ্যা হ’ল হাদীছ। রাসূল (ছাঃ) নিজে বাস্তব জীবনে কুরআনের প্রয়োগ ঘটিয়েছেন এবং উদাহরণ দিয়ে উম্মতকে কুরআনের মর্ম বুঝিয়েছেন। হাদীছ ব্যতিরেকে কুরআনের প্রকৃত অর্থ কোনভাবেই বুঝা সম্ভব নয়। খুবই দুঃখজনক বিষয় হ’ল, ইসলাম আজ শত শত ফির্কায় বিভক্ত। এসব ফির্কা সৃষ্টির মূলে ব্যক্তিস্বার্থ, দলীয় স্বার্থ, গোত্রীয় কোন্দল, রাজনৈতিক স্বার্থ, নিজের মতাদর্শ প্রচার, কোন গোষ্ঠীর কর্তৃত্ব বজায় রাখা ইত্যাদি পরিদৃষ্ট হয়। নবুঅতের যুগ পার হওয়ার পরপরই শী‘আ ও খারেজী সম্প্রদায়ের হাত ধরে বিভিন্ন দল তৈরী হয়। ইদানীং একটি ফির্কার আবির্ভাব হয়েছে, যারা নিজেদেরকে ‘আহলে কুরআন’ বা কুরআনপন্থী বলে পরিচয় দেয়। তারা হাদীছ বা সুন্নাহকে প্রত্যাখ্যান করে এবং কুরআনকেই যথেষ্ট মনে করে। মূলত তাদের মধ্যে রয়েছে হাদীছ অস্বীকারের হীন চক্রান্ত। আলোচ্য প্রবন্ধে এ ব্যাপারে আলোচনা করার চেষ্টা করব ইনশাআল্লাহ।
কুরআন ও হাদীছের উৎস অভিন্ন :
ইসলামী শরী‘অতের মূল উৎস হচ্ছে অহি। দ্বীনের ভিত্তি আল্লাহর নাযিলকৃত অহি-র উপর প্রতিষ্ঠিত। অহি দুই প্রকার যথা- ক. অহিয়ে মাতলূ (আল-কুরআন) খ. অহিয়ে গায়র মাতলূ (হাদীছ)। অহিয়ে মাতলূ তেলাওয়াত করা হয় এবং অহিয়ে গায়র মাতলূ তেলাওয়াত করা হয় না। অহি পরিবর্তন পরিবর্ধনের ক্ষমতা আল্লাহ আমাদের রাসূল (ছাঃ)-কে দেননি। মহান আল্লাহ বলেন,قُلْ مَا يَكُوْنُ لِي أَنْ أُبَدِّلَهُ مِنْ تِلْقَاءِ نَفْسِيْ إِنْ أَتَّبِعُ إِلَّا مَا يُوحَى إِلَيَّ إِنِّي أَخَافُ إِنْ عَصَيْتُ رَبِّي عَذَابَ يَوْمٍ عَظِيمٍ، ‘তুমি বল, একে নিজের পক্ষ থেকে পরিবর্তন করা আমার কাজ নয়। আমি তো কেবল তারই অনুসরণ করি যা আমার নিকট অহি করা হয়। আমি যদি আমার প্রতিপালকের অবাধ্যতা করি, তাহ’লে আমি এক ভয়াবহ দিবসের শাস্তির ভয় করি’ (ইউনুস ১০/১৫)। অন্যত্র আল্লাহ বলেন, وَمَا يَنْطِقُ عَنِ الْهَوَى، إِنْ هُوَ إِلَّا وَحْيٌ يُوحَى، ‘তিনি নিজ খেয়াল-খুশীমত কোন কথা বলেন না। (যা বলেন) সেটি অহি ব্যতীত নয়, যা তার নিকট প্রত্যাদেশ করা হয়’ (নাজম ৫৩/৩-৪)। অন্যত্র আল্লাহ বলেন,وَلَوْ تَقَوَّلَ عَلَيْنَا بَعْضَ الْأَقَاوِيلِ، لَأَخَذْنَا مِنْهُ بِالْيَمِينِ، ثُمَّ لَقَطَعْنَا مِنْهُ الْوَتِينَ، فَمَا مِنْكُمْ مِنْ أَحَدٍ عَنْهُ حَاجِزِينَ- ‘আর যদি সে আমাদের উপর কোন কথা বানিয়ে বলত, তাহ’লে অবশ্যই আমরা তাকে ডান হাত দিয়ে ধরে ফেলতাম। অতঃপর আমরা তার গর্দানের প্রাণশিরা কেটে দিতাম। আর তখন তোমাদের মধ্যে এমন কেউ থাকত না, যে তার ব্যাপারে আমাদের বাধা দিতে পারে’ (হাক্কাহ ৬৯/৪৪-৪৭)।
আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত, তিনি বলেন,كَانَ إِذَا تَوَضَّأَ أَخَذَ كَفًّا مِنْ مَاءٍ فَأَدْخَلَهُ تَحْتَ حَنَكِهِ فَخَلَّلَ بِهِ لِحْيَتَهُ وَقَالَ هَكَذَا أَمَرَنِى رَبِّى عَزَّ وَجَلَّ- ‘রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ওযূ করার সময় হাতে এক অঞ্জলি পানি নিতেন। তারপর ঐ পানি চোয়ালের নিম্নদেশে (থুতনির নীচে) লাগিয়ে দাড়ি খিলাল করতেন এবং বলতেন, আমার মহান প্রতিপালক আমাকে এরূপ করারই নির্দেশ দিয়েছেন’।[1] এখানে স্পষ্টই বুঝা যায়, এ আমলটি কুরআনে না থাকলেও রাসূল (ছাঃ) আল্লাহর আদেশ বলে উল্লেখ করেছেন। তাহ’লে পরোক্ষভাবে রাসূলের কাজকর্ম আল্লাহর আদেশেরই নামান্তর। সুতরাং কুরআন ও হাদীছ উভয়ই আল্লাহর পক্ষ থেকে আগত অহি।
হাদীছ আল্লাহর নাযিলকৃত অহি :
আল্লাহ কুরআনের পাশাপাশি হিকমাহ নাযিল করেছেন। আর হিকমাহ হচ্ছে রাসূল (ছাঃ)-এর হাদীছ (কথা, কাজ, সম্মতি)। কুরআনে বর্ণিত আয়াতগুলো সরাসরি জিব্রীল (আঃ)-এর মাধ্যমে এসেছে যা পূর্বে আলোচিত হয়েছে। কিন্তু হিকমাহ হ’ল রাসূল (ছাঃ)-এর প্রতি মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে আসা ইলহাম। যা আল্লাহ কোন ফেরেশতার মাধ্যম ছাড়া নাযিল করেছেন। সে সম্পর্কে আল্লাহ বলেন,رَبَّنَا وَابْعَثْ فِيهِمْ رَسُولًا مِنْهُمْ يَتْلُو عَلَيْهِمْ آيَاتِكَ وَيُعَلِّمُهُمُ الْكِتَابَ وَالْحِكْمَةَ وَيُزَكِّيهِمْ إِنَّكَ أَنْتَ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ، ‘হে আমাদের প্রতিপালক! তুমি তাদের মধ্যে তাদেরই মধ্য থেকে একজন রাসূল প্রেরণ কর, যিনি তাদের কাছে তোমার আয়াতসমূহ তেলাওয়াত করবেন, তাদেরকে কিতাব ও হিকমাহ শিক্ষা দিবেন এবং তাদের (অন্তরসমূহকে) পরিশুদ্ধ করবেন। নিশ্চয়ই তুমি মহা পরাক্রান্ত ও প্রজ্ঞাময়’ (বাক্বারাহ ২/১২৯)। আল্লাহ এই দো‘আ কবুল করে তাদের মধ্যে তথা ইসমাঈলের বংশধর আরব জাতির মধ্যে সেই রাসূল মুহাম্মাদ (ছাঃ)-কে প্রেরণ করেছেন। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেন,لَقَدْ مَنَّ اللهُ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ إِذْ بَعَثَ فِيهِمْ رَسُولًا مِّنْ أَنْفُسِهِمْ يَتْلُو عَلَيْهِمْ آيَاتِهِ وَيُزَكِّيهِمْ وَيُعَلِّمُهُمُ الْكِتَابَ وَالْحِكْمَةَ وَإِنْ كَانُوا مِنْ قَبْلُ لَفِي ضَلَالٍ مُبِينٍ، ‘বিশ্বাসীদের উপর আল্লাহ অনুগ্রহ করেছেন যখন তিনি তাদের নিকট তাদের মধ্য থেকে একজনকে রাসূল হিসাবে প্রেরণ করেছেন। যিনি তাদের নিকট তাঁর আয়াতসমূহ পাঠ করেন ও তাদেরকে পরিশুদ্ধ করেন এবং তাদেরকে কিতাব ও হিকমাহ (কুরআন ও সুন্নাহ) শিক্ষা দেন। যদিও তারা ইতিপূর্বে স্পষ্ট ভ্রান্তির মধ্যে ছিল’ (আলে ইমরান ৩/১৬৪)। এ দু’টি আয়াতে হিকমাহ হচ্ছে রাসূল (ছাঃ)-এর হাদীছ[2], যা তিনি মানুষকে শিক্ষা দিয়েছেন।
অন্যত্র আল্লাহ বলেন,وَاذْكُرُوا نِعْمَتَ اللهِ عَلَيْكُمْ وَمَا أَنْزَلَ عَلَيْكُمْ مِنَ الْكِتَابِ وَالْحِكْمَةِ يَعِظُكُمْ بِهِ وَاتَّقُوا اللهَ وَاعْلَمُوا أَنَّ اللهَ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيمٌ، ‘আর তোমাদের উপর তিনি যে অনুগ্রহ করেছেন এবং তোমাদের উপর তিনি যে কিতাব ও হিকমাহ নাযিল করেছেন, তা স্মরণ কর। তিনি তোমাদেরকে এ ব্যাপারে সাবধান করছেন। তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং জেনে রেখ যে, আল্লাহ সকল বিষয়ে অবগত’ (বাক্বারাহ ২/২৩১)।
আল্লাহ কুরআনে সুন্নাহকে হিকমাহ বলে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি বলেন,وَأَنْزَلَ اللهُ عَلَيْكَ الْكِتَابَ وَالْحِكْمَةَ وَعَلَّمَكَ مَا لَمْ تَكُنْ تَعْلَمُ وَكَانَ فَضْلُ اللهِ عَلَيْكَ عَظِيمًا، ‘আর আল্লাহ তোমার উপর কিতাব ও হিকমাহ অবতীর্ণ করেছেন এবং তোমাকে শিক্ষা দিয়েছেন যা তুমি জানতে না। বস্ত্ততঃ তোমার উপর আল্লাহর করুণা অসীম’ (নিসা ৪/১১৩)। আল্লাহ আরও বলেন,وَاذْكُرْنَ مَا يُتْلَى فِي بُيُوتِكُنَّ مِنْ آيَاتِ اللهِ وَالْحِكْمَةِ إِنَّ اللهَ كَانَ لَطِيفًا خَبِيرًا، ‘আর তোমরা স্মরণ রাখো যে তোমাদের গৃহগুলিতে পঠিত হয় আল্লাহর আয়াত সমূহ এবং সুন্নাহ। নিশ্চয়ই আল্লাহ সূক্ষ্মদর্শী ও সকল বিষয়ে খবর রাখেন’ (আহযাব ৩৩/৩৪)।
বিদ্বানগণ বলেছেন, হিকমাহ হ’ল সুন্নাহ বা হাদীছ। কেননা কুরআন ছাড়া রাসূল (ছাঃ)-এর স্ত্রীদের গৃহে যা পাঠ করা হ’ত তা ছিল রাসূল (ছাঃ)-এর সুন্নাহ।[3] এজন্য রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, সাবধান! আমাকে কিতাব (কুরআন), তার সঙ্গে অনুরূপ কিতাব (হাদীছ) দেওয়া হয়েছে।[4] ইমাম শাফেঈ (রহঃ) বলেন, ‘আল্লাহ এই আয়াতে ‘কিতাব’ উল্লেখ করেছেন, যার অর্থ হচেছ কুরআন। আর হিকমাহ উল্লেখ করেছেন, যার অর্থ হচ্ছে রাসূল (ছাঃ)-এর সুন্নাত। তিনি আরো বলেন, এখানে হিকমাহ অর্থ রাসূল (ছাঃ)-এর সুন্নাত ব্যতীত অন্য কিছু করা জায়েয হবে না। কেননা এখানে কিতাবের কথা উল্লেখ করার সাথে সাথেই হিকমাহ উল্লেখ করা হয়েছে। কারণ আল্লাহ তাঁর নিজের আনুগত্যের সাথে সাথে তাঁর রাসূলের আনুগত্য ও অনুসরণ করা ফরয করেছেন।[5] সুতরাং বুঝা গেল যে, হিকমাহ (হাদীছ) আল্লাহ কর্তৃক নাযিলকৃত। এটি অস্বীকার করার মত কোন দলীল হাদীছ অস্বীকারকারীদের কাছে নেই।
কুরআন ও হাদীছের মধ্যে সম্পর্ক কতটুকু?
কুরআন হ’ল মূল আর হাদীছ হ’ল তার ব্যাখ্যা। হাদীছে বর্ণিত আমল, আদেশ-নিষেধও অবশ্য পালনীয়। কুরআনের ন্যায় হাদীছও পরিপূর্ণ ও স্বয়ংসম্পূর্ণ একটি দলীল। দ্বিতীয়তঃ কুরআন কতক মৌলিক ও সাধারণ নীতিমালার সমষ্টি। কিন্তু হাদীছ তার সংজ্ঞা ও ব্যাখ্যা প্রদান করে। যেমন মহান আল্লাহ বলেন,بِالْبَيِّنَاتِ وَالزُّبُرِ وَأَنْزَلْنَا إِلَيْكَ الذِّكْرَ لِتُبَيِّنَ لِلنَّاسِ مَا نُزِّلَ إِلَيْهِمْ وَلَعَلَّهُمْ يَتَفَكَّرُونَ، ‘(তাদের প্রেরণ করেছিলাম) সুস্পষ্ট নিদর্শনসমূহ ও কিতাব সমূহ নিয়ে। আর আমরা তোমার নিকটে কুরআন নাযিল করেছি, যাতে তুমি লোকদের নিকট বিশদভাবে ব্যাখ্যা করে দাও যা তাদের প্রতি নাযিল করা হয়েছে এবং যাতে তারা চিন্তা-গবেষণা করে’ (নাহল ১৬/৪৪)।
মূলতঃ কুরআন ও হাদীছ দু’টিই ওহী। এ দুটির মাঝে মৌলিক পার্থক্য হচ্ছে কুরআন ওহীয়ে মাতলূ, যা তিলাওয়াত করা হয়। আর হাদীছ ওহীয়ে গায়রে মাতলূ, যা তিলাওয়াত করা হয় না।
কুরআন ও হাদীছ অনুসরণের নির্দেশ :
আল্লাহর কিতাবকে অাঁকড়ে ধরা যেমন ফরয ঠিক তেমনি তাঁর রাসূলের আনুগত্য করাও ফরয। কুরআন ও হাদীছ একটি অপরটির পরিপূরক। দু’টির কোনটিকেই অস্বীকার করা যাবে না। যদি কোন ব্যক্তি কুরআন-হাদীছের একটিকে স্বীকার ও অপরটি অস্বীকার করে অথবা কিছু অংশ অস্বীকার করে অথবা কোন একটি বিধান অস্বীকার করে তবে সে ইসলামের গন্ডি থেকে বের হয়ে যাবে। মহান আল্লাহ এমনটিই নির্দেশ দিয়েছেন, যার কিছু প্রমাণ নিম্নে উল্লেখ করা হ’ল-
১. রাসূল (ছাঃ)-এর আনুগত্য আল্লাহরই আনুগত্য : মহান আল্লাহ বলেন,مَنْ يُطِعِ الرَّسُولَ فَقَدْ أَطَاعَ اللهَ وَمَنْ تَوَلَّى فَمَا أَرْسَلْنَاكَ عَلَيْهِمْ حَفِيظًا، ‘যে ব্যক্তি রাসূলের আনুগত্য করে, সে আল্লাহরই আনুগত্য করে। আর যে ব্যক্তি মুখ ফিরিয়ে নেয়, আমি তাদের উপর তোমাকে তত্ত্বাবধায়ক করে পাঠাইনি’ (নিসা ৪/৮০)।
২. রাসূল (ছাঃ)-এর উপর ঈমান আনা ও তাঁর আনুগত্য করা ফরয : মহান আল্লাহ বলেন,يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا أَطِيعُوا اللهَ وَرَسُولَهُ وَلَا تَوَلَّوْا عَنْهُ وَأَنْتُمْ تَسْمَعُونَ، ‘হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য কর এবং জেনেশুনে তাঁর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ো না’ (আনফাল ৮/২০)। অন্যত্র তিনি বলেন,وَأَطِيعُوا اللهَ وَأَطِيعُوا الرَّسُولَ وَاحْذَرُوا فَإِنْ تَوَلَّيْتُمْ فَاعْلَمُوْا أَنَّمَا عَلَى رَسُولِنَا الْبَلَاغُ الْمُبِينُ، ‘আর তোমরা আল্লাহর আনুগত্য কর ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য কর এবং (হারাম থেকে) সতর্ক হও। অতঃপর যদি তোমরা মুখ ফিরিয়ে নাও, তাহ’লে জেনে রাখ যে, আমাদের রাসূলের দায়িত্ব কেবল স্পষ্টভাবে পৌঁছে দেওয়া’ (মায়েদাহ ৫/৯২)।
৩. আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের মধ্যে পার্থক্যকারীগণ হক থেকে বিচ্যুত : মহান আল্লাহ বলেন,إِنَّ الَّذِيْنَ يَكْفُرُوْنَ بِاللهِ وَرُسُلِهِ وَيُرِيْدُوْنَ أَنْ يُفَرِّقُوا بَيْنَ اللهِ وَرُسُلِهِ وَيَقُولُونَ نُؤْمِنُ بِبَعْضٍ وَنَكْفُرُ بِبَعْضٍ وَيُرِيْدُوْنَ أَنْ يَتَّخِذُوا بَيْنَ ذَلِكَ سَبِيلًا، أُولَئِكَ هُمُ الْكَافِرُونَ حَقًّا وَأَعْتَدْنَا لِلْكَافِرِينَ عَذَابًا مُهِينًا، ‘নিশ্চয়ই যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলগণকে অবিশ্বাস করে এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলগণের মধ্যে পার্থক্য করতে চায় ও বলে যে, আমরা কতক নবীকে বিশ্বাস করি ও কতক নবীকে অবিশ্বাস করি, আর এভাবে তারা মধ্যবর্তী একটা পথ অবলম্বন করতে চায়। ওরা হ’ল প্রকৃত কাফের। আর কাফেরদের জন্য আমরা হীনকর শাস্তি প্রস্ত্তত করে রেখেছি’ (নিসা ৪/১৫০-৫১)।
৪. রাসূল (ছাঃ)-এর বিরোধিতাকারীরা লাঞ্ছিত ও অপমানিত হবে : আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিরুদ্ধাচরণ করে তারা লাঞ্ছিত হয়, যেভাবে লাঞ্ছিত হয়েছে তাদের পূর্ববর্তীরা। অথচ আমরা সুস্পষ্ট আয়াত সমূহ নাযিল করেছি। আর কাফেরদের জন্য রয়েছে হীনকর শাস্তি’ (মুজাদালা ৫৮/৫)। আল্লাহ আরও বলেন,وَمَنْ يَعْصِ اللهَ وَرَسُولَهُ وَيَتَعَدَّ حُدُوْدَهُ يُدْخِلْهُ نَارًا خَالِدًا فِيْهَا وَلَهُ عَذَابٌ مُهِينٌ، ‘পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের অবাধ্যতা করবে এবং তাঁর নির্ধারিত সীমা সমূহ লংঘন করবে, তিনি তাকে জাহান্নামে প্রবেশ করাবেন। সেখানে সে চিরকাল থাকবে। আর তার জন্য রয়েছে হীনকর শাস্তি’ (নিসা ৪/১৪)।
৫. রাসূল (ছাঃ)-এর বিরোধীরা ক্বিয়ামতের দিন আফসোস করবে : মহান আল্লাহ বলেন,وَيَوْمَ يَعَضُّ الظَّالِمُ عَلَى يَدَيْهِ يَقُولُ يَالَيْتَنِي اتَّخَذْتُ مَعَ الرَّسُولِ سَبِيلًا، ‘যালেম সেদিন নিজের দু’হাত কামড়ে বলবে, হায়! যদি আমি (দুনিয়াতে) রাসূলের পথ অবলম্বন করতাম!’ (ফুরক্বান ২৫/২৭)। আল্লাহ আরও বলেন,يَوْمَ تُقَلَّبُ وُجُوهُهُمْ فِي النَّارِ يَقُولُونَ يَالَيْتَنَا أَطَعْنَا اللهَ وَأَطَعْنَا الرَّسُولَا، ‘যেদিন তাদেরকে উপুড়মুখী করে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে, সেদিন তারা বলবে, হায়! যদি আমরা আল্লাহর আনুগত্য করতাম ও রাসূলের আনুগত্য করতাম!’ (আহযাব ৩৩/৬৬)।
৬. রাসূল (ছাঃ)-এর সুন্নাত বিরোধী আমল বাতিল : মহান আল্লাহ বলেন,يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا أَطِيعُوا اللهَ وَأَطِيعُوا الرَّسُولَ وَلَا تُبْطِلُوا أَعْمَالَكُمْ، ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহর ও আনুগত্য কর তাঁর রাসূলের। আর তোমরা তোমাদের আমলগুলিকে বিনষ্ট করো না’ (মুহাম্মাদ ৪৭/৩৩)।
৭. রাসূল (ছাঃ)-এর ফায়ছালার ব্যাপারে মুমিনের এখতিয়ার নেই : মহান আল্লাহ বলেন,وَمَا كَانَ لِمُؤْمِنٍ وَلَا مُؤْمِنَةٍ إِذَا قَضَى اللهُ وَرَسُولُهُ أَمْرًا أَنْ يَكُونَ لَهُمُ الْخِيَرَةُ مِنْ أَمْرِهِمْ وَمَنْ يَعْصِ اللهَ وَرَسُولَهُ فَقَدْ ضَلَّ ضَلَالًا مُبِينًا، ‘আর আল্লাহ ও তাঁর রাসূল কোন বিষয়ে ফায়ছালা দিলে কোন মুমিন পুরুষ বা নারীর সে বিষয়ে তাদের নিজস্ব কোন ফায়ছালা দেওয়ার এখতিয়ার নেই। বস্ত্ততঃ যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের অবাধ্যতা করে, সে স্পষ্ট ভ্রান্তিতে পতিত হয়’ (আহযাব ৩৩/৩৬)।
মহান আল্লাহ আরও বলেন,وَإِذَا دُعُوا إِلَى اللهِ وَرَسُولِهِ لِيَحْكُمَ بَيْنَهُمْ إِذَا فَرِيقٌ مِنْهُمْ مُعْرِضُونَ، وَإِنْ يَكُنْ لَهُمُ الْحَقُّ يَأْتُوا إِلَيْهِ مُذْعِنِينَ، أَفِي قُلُوبِهِمْ مَرَضٌ أَمِ ارْتَابُوا أَمْ يَخَافُونَ أَنْ يَحِيفَ اللهُ عَلَيْهِمْ وَرَسُولُهُ بَلْ أُولَئِكَ هُمُ الظَّالِمُونَ، ‘যখন তাদেরকে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের দিকে আহবান করা হয় তাদের মধ্যে ফায়ছালা করার জন্য, তখন তাদের একদল মুখ ফিরিয়ে নেয়। আর যদি সেখানে তাদের কোন স্বার্থ থাকে, তাহ’লে তারা তাঁর কাছে ছুটে আসে বিনীতভাবে। তাদের অন্তরে কি ব্যাধি আছে, না তারা সন্দেহে পতিত হয়েছে, নাকি ভয় করে যে, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল তাদের উপর যুলুম করবেন? বরং তারাই তো যালেম’ (নূর ২৪/৪৮-৫০)।
৮. রাসূল (ছাঃ)-এর ফায়ছালায় সন্দেহকারী মুমিন নয় : আল্লাহ বলেন,فَلَا وَرَبِّكَ لَا يُؤْمِنُونَ حَتَّى يُحَكِّمُوكَ فِيمَا شَجَرَ بَيْنَهُمْ ثُمَّ لَا يَجِدُوا فِي أَنْفُسِهِمْ حَرَجًا مِمَّا قَضَيْتَ وَيُسَلِّمُوا تَسْلِيمًا، ‘অতএব তোমার প্রতিপালকের শপথ! তারা কখনোই (পূর্ণ) মুমিন হ’তে পারবে না, যতক্ষণ না তারা তাদের বিবাদীয় বিষয় সমূহে তোমাকে বিচারক রূপে মেনে নিবে। অতঃপর তোমার দেওয়া ফায়ছালায় তাদের মনে কোনরূপ দ্বিধা না রাখবে এবং সর্বান্তঃকরণে তা মেনে নিবে’ (নিসা ৪/৬৫)।
৯. হাদীছের অনুসরণই হেদায়াত লাভের পথ : আল্লাহ বলেন,قُلْ أَطِيعُوا اللهَ وَأَطِيعُوا الرَّسُولَ فَإِنْ تَوَلَّوْا فَإِنَّمَا عَلَيْهِ مَا حُمِّلَ وَعَلَيْكُمْ مَا حُمِّلْتُمْ وَإِنْ تُطِيعُوهُ تَهْتَدُوا وَمَا عَلَى الرَّسُولِ إِلَّا الْبَلَاغُ الْمُبِينُ، ‘বল, তোমরা আল্লাহর আনুগত্য কর ও রাসূলের আনুগত্য কর। অতঃপর যদি তোমরা মুখ ফিরিয়ে নাও, তাহ’লে রাসূলের দায়িত্বের জন্য তিনি দায়ী হবেন এবং তোমাদের দায়িত্বের জন্য তোমরা দায়ী হবে। আর যদি তোমরা তার আনুগত্য কর, তাহ’লে তোমরা সুপথ প্রাপ্ত হবে। বস্ত্ততঃ রাসূলের উপর দায়িত্ব হ’ল কেবল সুস্পষ্টভাবে (আল্লাহর বাণী) পৌঁছে দেওয়া’ (নূর ২৪/৫৪)। তিনি আরো বলেন,وَمَنْ يُطِعِ اللهَ وَرَسُولَهُ وَيَخْشَ اللهَ وَيَتَّقْهِ فَأُولَئِكَ هُمُ الْفَائِزُونَ، ‘যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে এবং আল্লাহকে ভয় করে ও তাঁর অবাধ্যতা হ’তে বেঁচে থাকে, তারাই হ’ল সফলকাম’ (নূর ২৪/৫২)।
১০. মতভেদপূর্ণ বিষয়ে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (ছাঃ)-কে গ্রহণ করা : মহান আল্লাহ বলেন,يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا أَطِيعُوا اللهَ وَأَطِيعُوا الرَّسُولَ وَأُولِي الْأَمْرِ مِنْكُمْ فَإِنْ تَنَازَعْتُمْ فِي شَيْءٍ فَرُدُّوهُ إِلَى اللهِ وَالرَّسُولِ إِنْ كُنْتُمْ تُؤْمِنُونَ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ ذَلِكَ خَيْرٌ وَأَحْسَنُ تَأْوِيلًا، ‘হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহর এবং আনুগত্য কর রাসূলের ও তোমাদের নেতৃবৃন্দের। অতঃপর যদি কোন বিষয়ে তোমরা বিতন্ডা কর, তাহ’লে বিষয়টি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের দিকে ফিরিয়ে দাও। যদি তোমরা আল্লাহ ও আখেরাতে বিশ্বাসী হয়ে থাক। এটাই হ’ল কল্যাণকর ও পরিণতির দিক দিয়ে সর্বোত্তম’ (নিসা ৪/৫৯)।
উল্লেখিত আয়াতগুলো দ্বারা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয় যে, হেদায়াত ও রহমত একমাত্র রাসূল (ছাঃ)-এর আনুগত্য করার মধ্যেই নিহিত। কুরআনের স্পষ্ট ঘোষণা হ’ল, রাসূল (ছাঃ)-এর আনুগত্য কর। এখন যদি কেউ রাসূলের আনুগত্য না করে, তবে সে কি কুরআনের হুকুম স্বীকার করল না অস্বীকার করল? রাসূলের আনুগত্য বা হাদীছ অস্বীকার করার অর্থই হ’ল কুরআন অস্বীকার করা। তাহ’লে শুধু কুরআন মানার কথা বলা ধোঁকা ছাড়া কিছুই নয়। আর রাসূলের আনুগত্য বলতে তাঁর হাদীছের অনুসরণ ও তদনুযায়ী আমল করা বোঝায়। অতএব যারা কুরআন মানার দাবী করবে, তাদের হাদীছ না মেনে উপায় নেই। হাদীছ মানলেই কুরআন মানা হবে এবং সত্যিকার অর্থে তারা কুরআনের অনুসারী এবং প্রকৃত মুসলমান হ’তে পারবে।
কুরআনের বিধান মানার ব্যাপারে হাদীছের প্রয়োজনীয়তা :
যে সকল ইবাদতের নির্দেশ কুরআনে এসেছে তার বিস্তারিত বর্ণনা হাদীছ ছাড়া জানার কোন উপায় নেই। যেমন- কুরআনুল কারীমে এসেছে,وَأَقِيمُوا الصَّلَاةَ وَآتُوا الزَّكَاةَ ‘এবং ছালাত কায়েম করবে ও যাকাত আদায় করবে’ (বাক্বারাহ ২/৮৩)। আরো এসেছে,يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا كُتِبَ عَلَيْكُمُ الصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى الَّذِينَ مِنْ قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ ‘হে বিশ্বাসীগণ! তোমাদের উপর ছিয়াম ফরয করা হ’ল, যেমন তা ফরয করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর। যাতে তোমরা আল্লাহভীরু হ’তে পার’ (বাক্বারাহ ২/১৮৩)। অন্যত্র এসেছে,وَلِلَّهِ عَلَى النَّاسِ حِجُّ الْبَيْتِ مَنِ اسْتَطَاعَ إِلَيْهِ سَبِيلًا وَمَنْ كَفَرَ فَإِنَّ اللهَ غَنِيٌّ عَنِ الْعَالَمِينَ ‘আর আল্লাহর উদ্দেশ্যে এ গৃহের হজ্জ ফরয করা হ’ল ঐ লোকদের উপর, যাদের এখানে আসার সামর্থ্য রয়েছে’ (আলে-ইমরান ৩/৯৭)।
উপরোক্ত তিনটিই মৌলিক আমল। এর কোন একটি আমল সঠিকভাবে পালন করতে হ’লে রাসূল (ছাঃ)-এর বিস্তারিত ব্যাখ্যা জানা ব্যতীত আমল করা সম্ভব নয়।
আল্লাহ বলেন, وَأَقِيمُوا الصَّلَاةَ وَآتُوا الزَّكَاةَ ‘এবং ছালাত কায়েম কর ও যাকাত আদায় কর’ (বাক্বারাহ ২/৮৩)।
কিন্তু ছালাত কার উপর ফরয? কোন কোন সময় আদায় করতে হবে? পাঁচ ওয়াক্ত ছালাতের সময় কখন? দিনে-রাতে কত বার, কত রাক‘আত, কি পদ্ধতিতে আদায় করতে হবে? কি কারণে ছালাত বাতিল হয়? সুন্নাত ছালাতের নিয়ম, রুকূ‘, সিজদা ও তাশাহহুদ কি নিয়মে এবং কখন কোন ক্বিরা‘আত ও দো‘আ পাঠ করতে হবে ইত্যাদি কোন কিছুই কুরআনে উল্লেখ করা হয়নি।
তাছাড়া ছালাতের জন্য কি পদ্ধতিতে কি শব্দ উচ্চারণ করে আহবান করতে হবে? মানুষ মৃত্যুবরণ করলে তার জানাযা ছালাত কিভাবে পড়তে হবে? জুমা‘আর ছালাত কত রাক‘আত? খুৎবা কে কখন দিবে? দু’ঈদের ছালাত বলতে কি কিছু আছে? তাতে অতিরিক্ত তাকবীর কখন দিতে হয়? কত রাক‘আত? এগুলো নবী করীম (ছাঃ)-এর হাদীছ থেকেই জানতে হবে।
ইমাম খত্বীব আল-বাগদাদী স্বীয় সনদে বর্ণনা করেন, একদা ছাহাবী ইমরান বিন হুছায়েন (রাঃ) কিছু ব্যক্তিসহ (শিক্ষার আসরে) বসে ছিলেন। শ্রোতাদের মধ্য হ’তে একজন বলে ফেললেন, আপনি আমাদেরকে কুরআন ছাড়া অন্য কিছু শোনাবেন না। তিনি বললেন, নিকটে আস। অতঃপর বললেন, তুমি কী মনে কর, যদি তোমাদেরকে শুধু কুরআনের উপরই ছেড়ে দেয়া হয়, তুমি কি যোহরের ছালাত চার রাক‘আত, আছর চার রাক‘আত, মাগরিব তিন রাক‘আত, প্রথম দুই রাক‘আতে ক্বিরাত পাঠ করতে হয় ইত্যাদি সবকিছু কুরআনে খুঁজে পাবে? অনুরূপভাবে কা‘বার তাওয়াফ সাত চক্কর এবং ছাফা মারওয়ার তাওয়াফ ইত্যাদি কি কুরআনে খুঁজে পাবে? অতঃপর বললেন, হে মানব সকল! তোমরা আমাদের (ছাহাবীদের) নিকট হ’তে সুন্নাহর আলোকে এসব বিস্তারিত বিধি-বিধান জেনে নাও। আল্লাহর কসম করে বলছি! তোমরা যদি সুন্নাহ মেনে না চল, তাহ’লে অবশ্যই ভ্রষ্ট হয়ে যাবে’।[6]
যাকাত সম্পর্কে কুরআনে এসেছে, وَآتُوا الزَّكَاةَ ‘তোমরা যাকাত আদায় কর’ (বাক্বারাহ ২/৮৩)। কোন ধরনের সম্পদে যাকাত দিতে হবে? কি পরিমাণ সম্পদ হ’লে কি পরিমাণ যাকাত দিতে হবে? বছরে কত বার যাকাত দিতে হবে? নিজের উৎপাদিত ফসলের যাকাত হবে কি? দিতে হ’লে কোন ফসলের যাকাত বের করতে হবে? গৃহপালিত পশুর যাকাত দিতে হবে কি? স্বর্ণ-রৌপ্য বা অন্য কোন অলংকারের যাকাতের বিধান কি? হিসাব না করে মোটা অংকের টাকা দান করলেই কি যাকাত আদায় হয়ে যাবে? ইত্যাদি শত শত প্রশ্নের সমাধান রয়েছে হাদীছে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,لَيْسَ فِيمَا دُونَ خَمْسِ أَوَاقٍ مِنَ الْوَرِقِ صَدَقَةٌ وَلَيْسَ فِيمَا دُونَ خَمْسِ ذَوْدٍ مِنَ الإِبِلِ صَدَقَةٌ وَلَيْسَ فِيمَا دُونَ خَمْسَةِ أَوْسُقٍ مِنَ التَّمْرِ صَدَقَةٌ، ‘পাঁচ উকিয়া এর কম রূপাতে যাকাত নেই। পাঁচ যাউদ এর কম উটে যাকাত নেই’ পাঁচ ওয়াসাকের কম খেজুরে যাকাত নেই’।[7] এই একটি হাদীছে যাকাতের নিছাব সম্পর্কে কয়েকটি ধারণা পাওয়া গেল। এভাবে কুরআনের হুকুমকে হাদীছে ব্যাখ্যা করে উম্মতের আমলকে যথাযথ পালনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
ছিয়াম সম্পর্কে কুরআনে এসেছে,يَاأَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوا كُتِبَ عَلَيْكُمُ الصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى الَّذِينَ مِنْ قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ، ‘হে বিশ্বাসীগণ! তোমাদের উপর ছিয়াম ফরয করা হ’ল, যেমন তা ফরয করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর। যাতে তোমরা আল্লাহভীরু হ’তে পার’ (বাক্বারাহ ২/১৮৩)। রামাযান মাস কিভাবে শুরু হবে? ছাওম অবস্থায় কি কি নিষিদ্ধ? ফরয ছাওমের নিয়ম কি? নফল ছাওমের নিয়ম কি? ছিয়াম সম্পর্কীয় যাবতীয় বিধি-বিধান যেমন- চাঁদ দেখেই ছিয়াম শুরু করতে হবে আবার চাঁদ দেখেই ছিয়াম শেষ হবে এবং কি করলে ছিয়াম সুন্দর হয়, কি করলে নষ্ট হয় ইত্যাদি বিষয়গুলি সবিস্তার হাদীছে আলোচনা করা হয়েছে।
হজ্জ সম্পর্কে কুরআনে বর্ণিত হয়েছে,وَلِلَّهِ عَلَى النَّاسِ حِجُّ الْبَيْتِ مَنِ اسْتَطَاعَ إِلَيْهِ سَبِيلًا وَمَنْ كَفَرَ فَإِنَّ اللهَ غَنِيٌّ عَنِ الْعَالَمِينَ، ‘আর আল্লাহর উদ্দেশ্যে এ গৃহের হজ্জ ফরয করা হ’ল ঐ লোকদের উপর, যাদের এখানে আসার সামর্থ্য রয়েছে। আর যে ব্যক্তি তা অস্বীকার করে (সে জেনে রাখুক যে) আল্লাহ জগদ্বাসী থেকে অমুখাপেক্ষী’ (আলে ইমরান ৩/৯৭)।
হজ্জের বিধান কুরআন মাজীদে সংক্ষিপ্তভাবে এসেছে, এর বিস্তারিত বর্ণনা যেমন- জীবনে কয়বার হজ্জ ফরয? ইহরাম কখন, কোথায় কিভাবে বাধতে হবে? কা‘বা ঘরের তাওয়াফ কিভাবে, কয়বার করতে হবে? কিভাবে কতবার ছাফা মারওয়া সা‘ঈ করতে হবে। আরাফার ময়দানে কখন ও কতক্ষণ অবস্থান করবে, সেখানে কি আমল করতে হবে?
মুজদালিফায় কি দিনের বেলায়, না কি রাতের বেলায় অবস্থান করতে হবে? মিনার আমল কি? সেখানে কত দিন থাকতে হবে? হজ্জের সাথে কুরবানী ও মাথার চুল কাটার সম্পর্ক কি? ইত্যাদি শত শত প্রশ্নের সমাধান রয়েছে কেবল হাদীছে। সুতরাং হাদীছ অস্বীকার করলে কোন ইবাদতই সঠিকভাবে আদায় করা সম্ভব নয়। উপরোক্ত মৌলিক ইবাদতগুলো ছাড়াও এমন অনেক ইবাদত রয়েছে, যা কুরআনের নির্দেশ, কিন্তু হাদীছের সাহায্য ছাড়া জানা যায় না বা পালন করা যায় না। যেমন চুরির শাস্তি, বিবাহের পদ্ধতি, উত্তারাধীকারী আইন, পুরুষের পোষাক ও অলঙ্কার পরিধানের বিধান, নেশা দ্রব্য সেবনের বিধান, মৃত প্রাণী খাওয়ার বিধান ইত্যাদি।
কুরআন অসম্পূর্ণ?
কুরআন অবশ্যই পূর্ণাঙ্গ। কুরআনে কোন ত্রুটি নেই। নেই কোন সন্দেহ (বাক্বারাহ ২/২)। আর কুরআনের নির্দেশনা অনুযায়ী আমাদের জন্য অপরিহার্য হচ্ছে, রাসূল (ছাঃ)-এর অনুসরণ করা। আমরা যদি তা না করি তাহ’লে প্রকারান্তরে কুরআনকেই অস্বীকার করা হবে। কেননা রাসূল (ছাঃ) হচ্ছেন কুরআনের ব্যাখ্যা দানকারী। যে কথা কুরআন মাজীদে স্পষ্ট উল্লেখ করা হয়েছে। আল্লাহ বলেন,وَأَنْزَلْنَا إِلَيْكَ الذِّكْرَ لِتُبَيِّنَ لِلنَّاسِ مَا نُزِّلَ إِلَيْهِمْ وَلَعَلَّهُمْ يَتَفَكَّرُونَ، ‘আর আমরা তোমার নিকটে কুরআন নাযিল করেছি, যাতে তুমি লোকদের নিকটে বিশদভাবে ব্যাখ্যা করে দাও যা তাদের প্রতি নাযিল করা হয়েছে এবং যাতে তারা চিন্তা-গবেষণা করে’ (নাহল ১৬/৪৪)। তিনি আরো বলেন,وَمَا أَنْزَلْنَا عَلَيْكَ الْكِتَابَ إِلَّا لِتُبَيِّنَ لَهُمُ الَّذِي اخْتَلَفُوْا فِيهِ وَهُدًى وَرَحْمَةً لِقَوْمٍ يُؤْمِنُونَ، ‘আমরা তোমার প্রতি কুরআন নাযিল করেছি কেবল এজন্য যে, তুমি তাদেরকে বিশদভাবে ব্যাখ্যা করে দিবে যেসব বিষয়ে তারা মতভেদ করে এবং (এটি নাযিল করেছি) মুমিনদের জন্য হেদায়াত ও রহমত স্বরূপ’ (নাহল ১৬/৬৪)। সুতরাং কেউ হাদীছ অস্বীকার করলে ইসলামের মৌলিক বিধানগুলো অস্বীকার করা হয়। আর কেউ তা করলে সে মুসলিম থাকে না।
হাদীছ আমান্যকারীদের ভ্রষ্টতার প্রমাণ : যারা বলে, ‘আমরা হাদীছ মানি না, শুধু কুরআন মানি’ তারা নিজেদেরকে ‘আহলে কুরআন’ বা কুরআনবাদী বলে দাবী করে। মূলতঃ তারা ‘মুনকিরীনে হাদীছ’ বা হাদীছ অস্বীকারকারী। এরা ইসলামের গন্ডি থেকে বহিষ্কৃত, কাফের-মুরতাদ এবং ইসলামের ঘোরতর শত্রু- এ ব্যাপারে পৃথিবীর সকল আলেম একমত।
শায়েখ আব্দুল্লাহ বিন বায (রহঃ) বলেন,من أنكر السنة وقال: السنة لا يحتج بها ويكفي القرآن هذا كافر نعوذ بالله، الله أعطى النبي القرآن ومثله معه ‘যে ব্যক্তি সুন্নাহ (হাদীছ)-কে অস্বীকার করবে এবং বলবে যে, সুন্নাহ দ্বারা দলীল দেয়া যাবে না; কেবল কুরআনই যথেষ্ট, সে কাফের। (আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি) আল্লাহ তা‘আলা নবী করীম (ছাঃ)-কে কুরআন দিয়েছেন সাথে দিয়েছেন অনুরূপ আরেকটি জিনিস (তা হ’ল, সুন্নাহ বা হাদীছ)’। সুতরাং এরা আহলেকুরআন (কুরআনপন্থী) নয়; বরং মিথ্যাবাদী ও কুরআনের দুশমন। কেননা কুরআন নির্দেশ দেয় সুন্নাহর অনুসরণ এবং রাসূল (ছাঃ)-এর আনুগত্য করার। সুতরাং যে সুন্নাহকে অস্বীকার করল সে কুরআনকেই অস্বীকার করল। যে রাসূল (ছাঃ)-এর অবাধ্যতা করল সে কুরআনের অবাধ্যতা করল। এরা কুরআনপন্থী নয়; বরং কুরআন বিরোধী, নাস্তিক, পথভ্রষ্ট এবং আলেমদের সর্বসম্মতিক্রমে কাফের। মহান আল্লাহ বলেন,وَيَقُولُونَ آمَنَّا بِاللهِ وَبِالرَّسُولِ وَأَطَعْنَا ثُمَّ يَتَوَلَّى فَرِيقٌ مِنْهُمْ مِنْ بَعْدِ ذَلِكَ وَمَا أُولَئِكَ بِالْمُؤْمِنِينَ، ‘আর তারা বলে, আমরা আল্লাহ ও রাসূলের উপর ঈমান এনেছি ও তাদের আনুগত্য করি। অতঃপর তাদের একদল মুখ ফিরিয়ে নেয়। বস্ত্ততঃ ওরা মুমিন নয়’ (নূর ২৪/৪৭)। অন্যত্র মহান আল্লাহ বলেন,قُلْ أَطِيعُوا اللهَ وَالرَّسُولَ فَإِنْ تَوَلَّوْا فَإِنَّ اللهَ لَا يُحِبُّ الْكَافِرِينَ، ‘তুমি বল, তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য কর। কিন্তু যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয়, তাহ’লে (তারা জেনে রাখুক যে) আল্লাহ কাফেরদের ভালবাসেন না’ (আলে ইমরান ৩/৩২)। তিনি আরও বলেন,ذَلِكَ بِأَنَّهُمْ شَاقُّوا اللهَ وَرَسُولَهُ وَمَنْ يُشَاقِّ اللهَ فَإِنَّ اللهَ شَدِيْدُ الْعِقَابِ، ‘এটা এ কারণে যে, তারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিরুদ্ধাচরণ করেছিল। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর বিরুদ্ধাচরণ করে, তার জানা উচিৎ যে, আল্লাহ কঠিন শাস্তিদাতা’ (হাশর ৫৯/৪)।
হাদীছ অস্বীকার করার অর্থ হ’ল, ইসলামী শরী‘আতের মূলনীতির দ্বিতীয় উৎসকে অস্বীকার করা। মহান আল্লাহ বলেন,وَمَا آتَاكُمُ الرَّسُولُ فَخُذُوهُ وَمَا نَهَاكُمْ عَنْهُ فَانْتَهُوا وَاتَّقُوا اللهَ إِنَّ اللهَ شَدِيدُ الْعِقَابِ، ‘আর রাসূল তোমাদেরকে যা দেন, তা গ্রহণ কর এবং যা নিষেধ করেন, তা থেকে বিরত হও। তোমরা আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ কঠিন শাস্তিদাতা’ (হাশর ৫৯/৭)। কাজেই হাদীছ অস্বীকার করার মত ধৃষ্টতা প্রদর্শন কারো জন্য ভাল পরিণাম বয়ে আনবে না। এ কাজ ও বিশ্বাস তাকে ইসলাম থেকে বের করে দিবে। আর আখেরাতে সে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে।
হাদীছ ছেড়ে কুরআন মানার যুক্তি খন্ডন :
আহলেকুরআন তথা হাদীছ অস্বীকারকারীদের দেওয়া যুক্তি স্ববিরোধী। কারণ যারা হাদীছ অস্বীকার করে তারা জানে না কোনটি কুরআন আর কোনটি হাদীছ। কেননা তা জানার উপায় হ’ল হাদীছুন্নাবী (ছাঃ)।
হাদীছ মানে, নবী মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর জীবনচরিত, তার নির্দেশ, পরামর্শ, বক্তব্য, প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সম্মতি এবং এই ধরণের সকল কিছুর সম্মিলন। মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর ওপর কুরআন নাযিল হয়েছে ২৩ বছর ধরে। তিনি যদি নিজে না বলে দেন যে, এই আয়াতটি অমুক সূরার সাথে যুক্ত হবে বা এইমাত্র এই আয়াতটি নাযিল হ’ল, তাহ’লে কোনটি মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর নির্দেশ আর কোনটি আল্লাহর অহী, তা আলাদা করা যাবে না। মুহাম্মাদ (ছাঃ) যে বলেছেন, এটি কুরআনের সূরা, এই কথাটুকুই হাদীছ। হাদীছ অস্বীকার করলে কুরআনের অস্তিত্ব সংকটে পড়বে, কারণ কুরআনের কোন আয়াত রাসূল (ছাঃ)-এর নিজস্ব বক্তব্য কিনা তা বোঝা যাবে না। শুধুমাত্র তিনিই বলতে পারেন, কোনটি আল্লাহর অহী আর কোনটি নবীর নিজের উপদেশ বা পরামর্শ। অর্থাৎ হাদীছ না থাকলে কুরআনের অস্তিত্ব থাকে না। কেননা এতে যে কেউ কুরআনের যেকোন আয়াত নিয়ে দাবী করতে পারে যে, এটি আসলে নবী মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর নিজস্ব মতামত। এটি যে জিব্রীলের মাধ্যমে আসা অহী, তা নবী মুহাম্মাদ (ছাঃ) নিজ মুখে না বললে বুঝার কোন উপায় নেই।
হাদীছ ছাড়া কুরআনের ব্যাখ্যা কিভাবে সম্ভব?
হাদীছ হচ্ছে কুরআনের ব্যাখ্যা। রাসূল (ছাঃ) কুরআনের আয়াত দ্বারা কী বুঝেছেন, ছাহাবীদের কিভাবে কুরআনের আয়াত ব্যাখ্যা করেছেন, সেইসব না জানা থাকলে এক একজন কুরআনের আয়াতের এক এক অর্থ বের করতে পারে। শুধুমাত্র নবী মুহাম্মাদ এবং তাঁর ছাহাবীগণই সঠিকভাবে বলতে পারবেন, কোন প্রেক্ষাপটে কী কারণে কোন আয়াতটি নাযিল হয়েছিল। সেগুলো শুধুমাত্র হাদীছেই পাওয়া সম্ভব। আর এটাই সত্য যে, কুরআনের আয়াতসমূহ সঠিকভাবে বুঝতে গেলে হাদীছের বিকল্প নেই।
মহানবী (ছাঃ) হ’লেন সকল মুসলমানের জন্য আদর্শ। তাই তার জীবন চরিত অনুসরণ না করলে মুসলমান হওয়া সম্ভব নয়। কেউ যদি কোন ছহীহ হাদীছ নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে তাহ’লে সে আসলে মহানবীকে নিয়েই সন্দেহ প্রকাশ করে অর্থাৎ এককথায় ইসলামকেই অস্বীকার করে ফেলে। কোন আয়াত রহিত হয়ে নতুন কোন আয়াত নাযিল হয়েছে, নাযিলের ক্রমানুসারে সূরাগুলোর ক্রম জানতেও হাদীছ, তাফসীর, ছিরাত ও ইতিহাস গ্রন্থগুলোর সাহায্য লাগবে।
কেউ যদি হাদীছ গ্রন্থগুলো বাদ দেয় তাহ’লে পৃথিবী থেকে কুরআনের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যাবে। অনেক ধরনের প্রশ্ন চলে আসবে যার কোন উত্তর পাওয়া যাবে না। যেমন ‘ঈসা কে? আবু লাহাব কে?’ এধরনের অসংখ্য প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবে না শুধু কুরআন নির্ভর ব্যক্তিরা। ইসলাম ধর্ম প্রচার লাভ করার শুরু থেকে এই পর্যন্ত যাদের হাত ধরে প্রসার লাভ করেছে (ছাহাবা, তাবেঈ, তাবি তাবেঈ) তারা কেউই শুধুমাত্র কুরআনের উপর ভরসা করে ইসলাম প্রচার করেননি। রাসূল যেটা আদেশ করেছেন সেটা করা, আর যেটা নিষেধ করেছেন সেটি না করা একজন মুমিন-মুসলমানের দায়িত্ব।
উপসংহার :
হাদীছ ও সুন্নাহ ব্যতীত ইসলামকে কল্পনাই করা যায় না। শরী‘আতের অসংখ্য বিষয় সরাসরি হাদীছের ওপর নির্ভরশীল। ছহীহ হাদীছ অস্বীকার করা আল্লাহর কালামকে অস্বীকার করার শামিল। হাদীছ অস্বীকার করলে ইসলামের পাঁচ ভিত্তির চারটিকেই অস্বীকার করা হয়। একজন মুসলমানের অবশ্যই হাদীছ নিয়ে কোনরূপ সন্দেহ থাকা উচিত নয়। সুন্নাহ অস্বীকার করা মানে মহানবীকেই অস্বীকার করা। অর্থাৎ কাফের হওয়া। তাই একথা স্পষ্টতই বলা যায় যে, শুধু কুরআনের অনুসরণ যথেষ্ট নয়; বরং কুরআন ও হাদীছ উভয়টিই মেনে চলতে হবে। নচেৎ প্রকাশ্য পথভ্রষ্টতায় লিপ্ত হওয়া ব্যতীত কোন উপায় থাকবে না। আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে সঠিক বুঝ দান করুন- আমীন!
মুহাম্মাদ খায়রুল ইসলাম
পরিচালক, মারকাযুল উলূম লিছ ছালিহাত, শ্রীপুর, গাযীপুর।
[1] .আবূদাঊদ হা/১৪৫, সনদ ছহীহ।
[2] .তাফসীর কুরতুবী ১৮/৯২।
[3] .তাফসীর কুরতুবী ১৪/১৮।
[4] .আহমদ হা/১৭১৭৪; আবু দাঊদ হা/৪৬০৪।
[5] .ইসলাম ওয়েব ডট নেট, ফৎওয়া নং ২৪৩০ তাং ১/৭/২০০৩।
[6] .ইসলাম ওয়েব ডট নেট, ক্রমিক নং ২৪৩০৫, ১/৭/২০০৩।
[7] .বুখারী হা/১৪৫৯; মুসলিম হা/২৩১৮।