পর্ব ১। পর্ব ২। পর্ব ৩। পর্ব ৪। 

মাওলানা বেলায়েত আলী ছাদেকপুরী (রহঃ)-এর মাসলাক :

মাওলানা বেলায়েত আলী লাক্ষ্ণৌয়ে আরবী শিক্ষা গ্রহণকালে সাইয়েদ আহমাদ শহীদ (রহঃ)-এর সেখানে আগমন ঘটে। মাওলানা বেলায়েত আলী (রহঃ) সেখানে তাঁর সত্যের ঝান্ডাবাহী হাতে বায়‘আত করেন। সাইয়েদ ছাহেব তাকে সাথে করে বেরেলী নিয়ে যান এবং সেখানে শাহ ইসমাঈল শহীদ (রহঃ)-কে তার শিক্ষার দায়িত্ব দেন। মাওলানা আব্দুর রহীম ছাদেকপুরী লিখেছেন, ‘রায়বেরেলীতে অবস্থানকালে তিনি মাওলানা মুহাম্মাদ ইসমাঈল শহীদের জামা‘আতের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন এবং তাঁর নিকটেই হাদীছ পড়তেন।... মাওলানা শহীদ তাঁকে তাঁর জামা‘আতের নায়েব বা স্থলাভিষিক্ত নিযুক্ত করেছিলেন’।[1]

মাওলানা ইসমাঈল শহীদের শিক্ষা, সাহচর্য ও প্রশিক্ষণের ফলে তাঁর তাক্বলীদী জড়তা কেটে যায় এবং সরাসরি সুন্নাতের উপরে আমলের জায্বা সৃষ্টি হয়। এ প্রসঙ্গে মাওলানা অব্দুর রহীম ছাদেকপুরী লিখেছেন, ‘কুরআন ও হাদীছের জ্ঞানার্জনে জনগণকে তাঁর উৎসাহ প্রদান এবং ওয়ায ও নছীহতের ফলে হিন্দুস্থানে ‘আমল বিল-হাদীছ’ তথা হাদীছের উপরে আমলের চর্চা শুরু হয়ে যায় এবং তাক্বলীদ ও মাযহাবী গোঁড়ামির ভিত দুর্বল ও নড়বড়ে হয়ে যায়। কেননা কুরআন ও হাদীছের প্রতি মহববত এবং এগুলির শিক্ষা-দীক্ষার প্রচলন সত্যকে উদ্ভাসিত করে দেয়।جَاءَ الْحَقُّ وَزَهَقَ الْبَاطِلُ ‘সত্য এসেছে, মিথ্যা অপসৃত হয়েছে’ (বনু ইস্রাঈল ১৭/৮১)[2]

মাওলানা মাসউদ আলম নাদভী লিখেছেন, ‘বিদ‘আতের বিরুদ্ধে কয়েকটি কিতাব তিনি প্রকাশ করেন এবং সবচেয়ে বড় কথা এই যে, তিনি স্বীয় পরিবারে ‘আমল বিস-সুন্নাহ’-এর প্রচলন ঘটান। বিহার ও বাংলায় মুসলমানদের মধ্যে বিধবা বিবাহের প্রচলন তিনি নিজ পরিবার থেকেই শুরু করেন। তিনি এই সুন্নাতের ব্যাপক প্রচলন ঘটান। হাযার হাযার বিধবা মহিলার বিবাহ দিয়ে দেন’।[3]

খেয়াল করুন যে, ‘আমল বিল-হাদীছ (হাদীছ অনুযায়ী আমল), ‘আমল বিস-সুন্নাহ’ (সুন্নাহ অনুসারে আমল) জাতীয় শব্দগুলি কোন ব্যক্তির জন্য তখনই ব্যবহৃত হয়, যখন তিনি তাক্বলীদের বেড়াজাল মুক্ত হয়ে সরাসরি কুরআন ও হাদীছ থেকে ফায়েদা লাভ করেন এবং কুরআন ও হাদীছ থেকেই মাসআলা উদ্ভাবন করেন। অতঃপর মাওলানা মাসউদ আলম নাদভী মাওলানা বেলায়েত আলীর মাধ্যমে যেসব সুন্নাতের পুনর্জীবন ঘটেছে তার তালিকা দিয়েছেন। যার মধ্যে একটি সুন্নাত হ’ল- ‘জনৈক মিসকীন আব্দুল গণী নগরনাহ্সাভীকে তিনি একজন বিধবার সাথে মোহর হিসাবে কেবলমাত্র কুরআন পড়ানোর বিনিময়ে বিবাহ দেন’।[4]

এটা সুস্পষ্ট যে, ‘কুরআন পড়ানো’কে মোহর হিসাবে নির্ধারণ করা হানাফী ফিক্বহের সম্পূর্ণ পরিপন্থী। অবশ্য আহলেহাদীছরা এরূপ মোহরের বৈধতার কথা এজন্য বলে থাকেন যে, হাদীছ দ্বারা এ আমল প্রমাণিত। এই উদাহরণ থেকেই মাওলানা বেলায়েত আলীর ‘আহলেহাদীছ’ হওয়ার প্রমাণ সাব্যস্ত হয়ে যায়। এর আরো দৃষ্টান্ত আমরা সামনে তুলে ধরব।

মাওলানা মাসউদ আলম নাদভী তাঁর তাবলীগী খিদমতের আলোচনায় লিখেছেন, ‘তিনি দ্বীনিয়াত-এর তা‘লীমের জন্য নিজ বাড়িতে যোহর থেকে আছর পর্যন্ত কুরআন ও হাদীছের দরস দিতেন। তাঁর বড় ছেলে মৌলভী আব্দুল্লাহ হতেন ক্বারী অর্থাৎ কুরআন শিক্ষাদাতা। অন্যান্য আলেম-ওলামা তাফসীরের কিতাব হাতে নিয়ে বসতেন। আলেম-ওলামা ছাড়াও বড় সংখ্যক সাধারণ ভক্ত-অনুরক্ত উপস্থিত থাকত। কুরআন মাজীদ ও বুলূগুল মারামের তরজমা পুরুষ, মহিলা ও শিশুদের শুনাতেন। শাহ মুহাম্মাদ ইসহাক-এর নিকট থেকে শাহ আব্দুল কাদেরের উর্দূ তরজমা কুরআন এবং শাহ ইসমাঈল শহীদ (রহঃ)-এর লেখা বই-পুস্তক চেয়ে নিয়ে প্রথমবারের মতো সেগুলি ছাপিয়ে প্রকাশ করেন। ... মাওলানা বেলায়েত আলী হজ্জের সফরে ইয়ামন ও অন্যান্য স্থান ভ্রমণ করেন এবং ইয়ামনের বিখ্যাত মুহাদ্দিছ ও আলেম বিচারপতি মুহাম্মাদ বিন আলী শাওকানীর নিকট থেকে হাদীছের সনদ লাভ করেন এবং তাঁর কিছু কিতাব সঙ্গে আনেন’।[5]

এই উদ্ধৃতিতে তাঁর আহলেহাদীছ হওয়ার তিনটি জাজ্বল্যমান প্রমাণ রয়েছে।

এক. দৈনন্দিন মাসআলা-মাসায়েল মহিলাদেরকে অবগত করানোর জন্য কুরআনের সাথে কোন ফিক্বহী কিতাবের পরিবর্তে ‘বুলূগুল মারাম’-এর পাঠদান। একেবারে শুরুতে কোন হানাফীই এই কিতাবের পঠন-পাঠন পসন্দ করেন না। যে যুগের কথা বলা হচ্ছে তখন হাদীছের পঠন-পাঠনের রেওয়াজ সচরাচর খুব একটা ছিল না। ফিক্বহের গ্রন্থাবলীর উপরেই সবচেয়ে বেশী যোর দেওয়া হ’ত। অদ্যাবধি হানাফীদের মধ্যে এ রেওয়াজ চালু রয়েছে যে, ছয়-সাত বছর একাধারে ফিক্বহ ও অন্যান্য বিষয় শিক্ষা দেওয়া হয় এবং শেষে দু-এক বছরে কবিতা আবৃত্তির মতো করে দাওরায়ে হাদীছ পড়িয়ে দেওয়া হয়।

দুই. শাহ ইসমাঈল শহীদের রচনাসমূহ প্রকাশ করার চিন্তা তাঁর সমদর্শন ও সমমাসলাকের অনুসারী একজন ব্যক্তিই করতে পারেন।

তিন. ইমাম শাওকানীর কাছ থেকে হাদীছের সনদ লাভও তাঁর আহলেহাদীছ হওয়ার প্রমাণ। বিদ্বানগণ খুব ভালো করেই এ বিষয়টি জানেন যে, ইমাম শাওকানী (রহঃ) সালাফী মাসলাকের ধারক ও বাহক এবং তাক্বলীদের ঘোর বিরোধী ছিলেন। তাঁর রচনাবলীতেও এ কথা স্পষ্ট ফুটে উঠেছে। তাঁর নিকট থেকে হাদীছের সনদ লাভ এবং তাঁর রচনাবলী সঙ্গে আনা এ কথার জোরালো প্রমাণ যে, মাওলানা বেলায়েত আলীও তাক্বলীদী জড়তা থেকে মুক্ত এবং সালাফী মাসলাকের অনুসারী ছিলেন।

সম্মানিত প্রবন্ধকার অধ্যাপক কাদেরী ছাহেব একটা দাবী করেছেন যে, শাহ ইসমাঈল শহীদ আহলেহাদীছ চিন্তাধারার অগ্রগতি সাধন করেন এবং নিজের অনুসারীদের একটি জামা‘আত তৈরি করে নেন। আর এ কথা খুবই স্পষ্ট যে, মাওলানা বেলায়েত আলী শাহ ইসমাঈল শহীদের জামা‘আতের সেই বিশেষ স্তম্ভ ছিলেন; যার স্বীকৃতি মাওলানা ওবায়দুল্লাহ সিন্ধী হানাফীও দিয়েছেন। সিন্ধী লিখেছেন, ‘পাটনার মাওলানা বেলায়েত আলী মরহূম বালাকোটের যুদ্ধে উপস্থিত ছিলেন না। তিনি মাওলানা ইসমাঈল শহীদ (রহঃ)-এর সেই জামা‘আতের একজন বিশেষ স্তম্ভ ছিলেন, যা মাওলানা ইসমাঈল শহীদ ‘হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগাহ’ পড়ার পর তার উপর আমলকারী হিসাবে গড়ে তুলেছিলেন। এঁরা (ছালাতে) রাফউল ইয়াদায়েন করতেন ও জোরে আমীন বলতেন’।[6]

এখন এ কথার পর মাওলানা বেলায়েত আলী যে আহলেহাদীছ ছিলেন, সে বিষয়ে কি আর কোন সন্দেহ থাকতে পারে? তদুপরি আরো পরিষ্কার করার জন্য আমরা তাঁর রচনাবলী থেকে তাঁর মাসলাকের উপর আলোকপাত করছি। যাতে বিষয়টি পুরাপুরি স্পষ্ট ও প্রমাণিত হয়ে যায়।

রচনাবলীর আলোকে বেলায়েত আলীর মাসলাক :

তাঁর রচনাসমগ্র ‘মাজমূ‘আ রাসায়েলে তিস‘আ’ নামে ছাপা হয়েছে। তন্মধ্যে সাতটি পুস্তিকা খোদ মাওলানা বেলায়েত আলী রচিত। এই রচনাসমগ্রের প্রথম পুস্তিকার নাম ‘রদ্দে শির্ক’। এর শেষে একটি কবিতা আছে। যেখানে তিনি বলেছেন,

صد حيف كہ عالمان ايں دہر + كردند شعار خود دغا را

قرآن و حديث را بہ پوشند + تبديل كنند مدّعا را

ائے مومن پاك وائے مسلمان + گرمى خواہى ره رضا را

قرآن و حديث را بسر نہ + بگذار كلام ما سوا را

‘শত আফসোস যে, এযুগের আলেমরা ধোঁকা দেওয়াকেই নিজেদের নিদর্শনে পরিণত করেছেন। তারা কুরআন ও হাদীছকে গোপন রেখে তার বক্তব্য পরিবর্তন করেন। হে পাকদিল মুমিন মুসলমান! যদি তুমি তাঁর (অর্থাৎ আল্লাহর) সন্তুষ্টি চাও, তাহ’লে কুরআন ও হাদীছ অনুযায়ী জীবন গড়ো। অন্য কারু কথায় চলোনা’।[7] এ ধরনের বক্তব্য একজন সালাফী আলেমের কলম থেকেই বের হতে পারে।

‘আমল বিল-হাদীছ’ বা ‘হাদীছ অনুযায়ী আমল’ নামে তাঁর আরেকটি বই আছে, যা বিশেষভাবে এ বিষয়েই অর্থাৎ হাদীছের অনুসরণ ও ইমামদের তাক্বলীদ বর্জন বিষয়ক প্রশ্নসমূহের উত্তরে লেখা হয়েছে। বইয়ের শুরুতে তিনি লিখেছেন, ‘হাদীছের ও ফিক্বহের অনুসরণ সম্পর্কে এই ফকীরের নিকট বহু প্রশ্ন আসছে। এজন্য আমি ভাবলাম যে, এই বিষয়ে এবার একটি সংক্ষিপ্ত পুস্তিকা সংকলন করি, যা সকল জিজ্ঞাসু মনের খোরাক হবে। মানুষকে বারবার কষ্ট থেকে রেহাই দেবে এবং বন্ধুদের কাছেও একটা স্মৃতি হয়ে থাকবে’।[8]

এটি ফার্সী ভাষায় লিখিত অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত কিন্তু অত্যন্ত সারগর্ভ রচনা। এর পুরোটাই এখানে উল্লেখ করার মতো এবং তা দারুণ চিত্তাকর্ষকও বটে। কিন্তু আলোচনা সংক্ষেপের স্বার্থে এর কিছু প্রয়োজনীয় অংশ এখানে তুলে ধরা হচ্ছে। এই পুস্তিকায় তিনটি অধ্যায় রয়েছে। প্রথম অধ্যায় দ্বীনের বুঝ ও তার ফযীলতের উপর। দ্বিতীয় অধ্যায় তাক্বলীদ জায়েয হওয়া না হওয়া সম্পর্কে এবং তৃতীয় অধ্যায় কুরআন ও হাদীছ সহজবোধ্য হওয়া সম্পর্কে।

প্রথম অধ্যায়ে দ্বীনের বুঝ অর্জনের ফযীলত ও তার তাৎপর্য বর্ণনা করার পর কুরআন ও হাদীছে চিন্তা ও গবেষণার বিষয়ে লোকদের কার্যপদ্ধতির সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘কুরআন ও হাদীছকে দেখা ও গবেষণা করার বিষয়টি লোকেরা একেবারে বন্ধ করে দিয়েছে এবং কোন কথা কোন ফিক্বহের কিতাবে দেখলেই তা কুরআন ও হাদীছের সপক্ষে না বিপক্ষে তার বাছ-বিচার না করেই বিশ্বাস করে নিচ্ছে। তাদের মধ্যে কিছু লোক তো কুরআন-হাদীছের পাতা উল্টেও দেখেনা। কিছু লোক দেখলেও তা বুঝতে চেষ্টা করেনা। কিছু লোক বুঝলেও তা কেবল ক্বিয়ামত, বরযখ, দুনিয়া ত্যাগ প্রভৃতি বিষয়ক নছীহতের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে। শরী‘আতের হুকুম-আহকাম বিষয়ে তাদের এই ধারণা বদ্ধমূল হয়ে আছে যে, আগেকার ফক্বীহগণ এসব বিষয়ে গবেষণা শেষ করেছেন। অতএব এদিকে মনোযোগ দেওয়ার কোন প্রয়োজন নেই। তারা যদি কুরআন ও হাদীছে তাদের মাযহাবী কিতাবের খেলাফ কোন হুকুম দেখতে পান, তবে তাদের কেউ কেউ কুরআন-হাদীছের প্রকাশ্য অর্থকে ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে নিজেদের কিতাবের সপক্ষে করে নেন। কিন্তু এটা বুঝতে চান না যে, কুরআন ও হাদীছের তাবেদারী করাই হ’ল মূল উদ্দেশ্য। কেউ কেউ এসব ব্যাপার থেকে পালাতে চান এবং চোখ বুঁজে থাকেন। এইসব জ্ঞানীদের সম্পর্কে খোদ রাসূলে করীম (ছাঃ) বলেন, رُبَّ حَامِلِ فِقْهٍ غَيْرُ فَقِيهٍ ‘অনেক ফক্বীহ আছেন যারা প্রকৃত অর্থে ‘ফক্বীহ’ নন’। আল্লাহপাক আমাদেরকে এদের অনিষ্টকারিতা হ’তে রক্ষা করুন! তাই তাক্বলীদ কোথায় গ্রহণযোগ্য এবং কোথায় অগ্রহণযোগ্য সে সম্পর্কে দ্বিতীয় অধ্যায়ে অবহিত করার প্রয়োজনীয়তা বোধ করছি’।[9]

অতঃপর দ্বিতীয় অধ্যায়ে তিনি লিখেছেন, ‘যে ব্যক্তি নিরক্ষর এবং নিজের বিভিন্ন ব্যস্ততার কারণে লেখাপড়া করার সুযোগ পাননি, আলেমদেরকে জিজ্ঞেস করা ভিন্ন যার কোন উপায় নেই, তিনি হাদীছ শাস্ত্রে অভিজ্ঞ কোন আলেম যিনি দ্বীনদার, আল্লাহভীরু এবং কুরআন ও হাদীছের জ্ঞানে প্রসিদ্ধ, তাঁর কাছে গিয়ে এভাবে মাসআলা জিজ্ঞেস করবেন যে, আমাকে এই মাসআলায় ‘মুহাম্মাদী’ তরীকা বাৎলিয়ে দিন’।

অর্থাৎ মাওলানা বেলায়েত আলীর দৃষ্টিতে কোন জাহিলের জন্যেও তাক্বলীদ যরূরী নয়। মাসআলা জিজ্ঞেসকালে তিনি কোন নিরক্ষর ব্যক্তিকে এই পরামর্শ দিতেন না যে, তুমি স্রেফ কোন বিশেষ ইমামের অনুসারী ব্যক্তির নিকট থেকে তার ফিক্বহ অনুযায়ী মাসআলা জিজ্ঞেস করবে, যেমনটা মুক্বাল্লিদদের নিয়ম। বরং তিনি পরিষ্কার ভাষায় তাকে বলছেন যে, শুধু কুরআন ও হাদীছে অভিজ্ঞ আলেমের কাছেই এভাবে মাসআলা জিজ্ঞেস করবে যে, এই বিষয়ে মুহাম্মাদী তরীকা কোনটি?

তারপর বেলায়েত আলী লিখেছেন, ‘যদি কোন ছাত্র অন্তরে দ্বীনী ইলম অর্জনের বাসনা রাখে, তাহ’লে তার জন্য প্রথমে কুরআন ও হাদীছ অধ্যয়ন করা সমীচীন হবে। তারপর অন্যান্য বিষয়ের বই-পুস্তক পড়বে। তাহ’লে তার সামনে আয়নার মতো স্পষ্ট হয়ে যাবে যে, কোন বিদ্বানের কথা কোথায় সঠিক হয়েছে এবং কোথায় ভুল হয়েছে। সুতরাং যে মাসআলা কুরআন ও হাদীছে ছাফ ছাফ পাবে, তাতে কোন মুজতাহিদের তাক্বলীদ করবে না। কেননা সুস্পষ্ট মাসআলায় ইজতিহাদের কোন সুযোগ নেই। ... যতক্ষণ পর্যন্ত কুরআন ও হাদীছে মাসআলার হুকুম স্পষ্ট পাবে, ততক্ষণ ইজতিহাদের শরণাপন্ন হওয়া উচিত হবে না। মুজতাহিদগণের কিতাবে যদি কুরআন ও হাদীছের পরিপন্থী কথা বেরিয়ে আসে, তবে সেদিক থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে নিয়ে কুরআন ও হাদীছকে আঁকড়িয়ে ধরা অবশ্য কর্তব্য। নইলে মুজতাহিদ ইমামগণের কথা দ্বারা কুরআন-হাদীছ মানসূখ হওয়ার শামিল হবে। ইমাম আবু হানীফা (রহঃ), যিনি ইজতিহাদের পথের পথিকদের গুরু ছিলেন, তাঁর থেকে দু’টি উক্তি বর্ণিত আছে। প্রথম উক্তি ‘যদি আমার কথা হাদীছের বিপরীত পাও তবে তা দেয়ালে ছুঁড়ে মেরো’।[10] এতে পরিষ্কার বুঝা গেল যে, হাদীছের বিপরীতে মুজতাহিদগণের কথা মানলে ইমাম ছাহেবের কথা মতই ঐ তাক্বলীদকারী তাক্বলীদের গন্ডী অতিক্রম করবে। এমন তাক্বলীদকারী কখনই হানাফী থাকবে না। দ্বিতীয় উক্তি ‘আমার কথা অনুযায়ী আমল করা কারো জন্য ততক্ষণ পর্যন্ত জায়েয হবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত না সে জানবে যে, কোত্থেকে এ কথা আমি বলেছি’। সুতরাং বুঝা গেল যে, ইমাম ছাহেবের কথা না বুঝে-শুনে গ্রহণ করা এবং তাঁর দলীল ও ক্বিয়াসের বিভিন্ন দিকের সঠিকতা-বেঠিকতা নিয়ে চিন্তা-ভাবনা না করা কখনই ইমাম ছাহেবের পসন্দ নয়। সুতরাং ইমাম আবু হানীফা (রহঃ) তো এভাবে বলে যাওয়ার দরুন ক্বিয়ামতের দিন আল্লাহর পাকড়াও থেকে রেহাই পেয়ে যাবেন। কিন্তু তার অবুঝ মুক্বাল্লিদরা আল্লাহর জিজ্ঞাসাবাদ থেকে নিস্তার পাবেন না। তোমরা কি দেখ না যে, ইমামগণের শিষ্যগণ যে ক্ষেত্রে তাদের শিক্ষকগণের কথায় আশ্বস্ত হতে পারেননি সেক্ষেত্রে ভিন্ন মত প্রকাশ করেছেন। ইমাম মুহাম্মাদ (রহঃ) তো ইমাম আবু হানীফা (রহঃ)-এর বিপরীতে এতদূর পর্যন্ত বলেছেন যে, তাকে একটা স্বতন্ত্র মাযহাব আখ্যা দেয়া যেতে পারে। সারকথা হ’ল, যে কথা কুরআন ও হাদীছের পরিপন্থী তা পরিহারে কোন প্রকার দ্বিধা-সংকোচ কাম্য নয়’।

‘তাছাড়া হাদীছসমূহের সনদ বা বর্ণনাসূত্র রয়েছে। কিন্তু মুজতাহিদগণের কথার কোন সনদ নেই। অর্থাৎ হাদীছ বর্ণনাকারীদের জীবনবৃত্তান্ত এবং তাদের খ্যাতি ও নির্ভরযোগ্যতা শর্তসহ রিজালশাস্ত্রে উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু মুজতাহিদগণের নামে যেসব কথা বর্ণিত হয়েছে, তার কোন সনদ নেই। ইমামদের নিকট থেকে প্রথম কে শুনলেন, তার থেকে কে বর্ণনা করলেন, তাদের জীবনবৃত্তান্ত কেমন, এসব বিষয়ে বর্ণনাকারীদের পুরা অবস্থা যতক্ষণ পর্যন্ত উল্লেখিত শর্তানুযায়ী ওয়াকিফহাল না হওয়া যাবে, ততক্ষণ পর্যন্ত সে কথারই বা কি মূল্য আছে? কে জানে যে এটা ইমাম ছাহেবের কথা না অন্য কেউ নিজের পক্ষ থেকে জুড়ে দিয়েছে? যেমন কতগুলি নাদান ধোঁকাবশতঃ কতগুলি ডাহা মিথ্যা কথা ইমামে আযমের দিকে সম্পর্কিত করে থাকে। দ্বিতীয় আরেকটি কারণ, সমস্ত ওলামায়ে কেরাম একথার উপরে একমত যে, মুজতাহিদের রায় কখনো ভুল হয়, কখনো সঠিক হয়। অতএব বুঝা গেল যে, হাদীছ- যা একজন নিষ্পাপ রাসূলের সনদযুক্ত বাণী, তার মুকাবিলায় এমন কথা যা সনদবিহীন ও ত্রুটির আশংকাযুক্ত, তার কোনই মূল্য নেই’।[11]

কোন হানাফী মুক্বাল্লিদ হাদীছ ও ফিক্বহ সম্পর্কে এমন সুস্পষ্ট ধারণা পোষণ করতে পারেন অথবা তা এভাবে খোলাখুলি প্রকাশ করতে পারেন এমনটি আমাদের জানা নেই। যদি হানাফীরা বাস্তবিকই এমন দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করে থাকেন তাহলে হানাফী ও আহলেহাদীছের মাঝে পারস্পরিক মতভেদপূর্ণ মাসআলা কিছু থাকে বলে তো আমাদের বুঝে আসে না।

মুক্বাল্লিদগণ সাধারণত প্রকাশ্য হাদীছের বিরোধিতা করার বৈধতার পক্ষে যুক্তি দিয়ে একটি কথা বলে থাকেন যে, আমাদের ইমামও কোন না কোন হাদীছের উপরেই তার কথার ভিত্তি রেখেছেন। যদিও সে হাদীছ এখন আমাদের সামনে নেই। অর্থাৎ ইমামের কথা মেনে চললে কখনো যে কোন হাদীছের বিরোধিতাও হতে পারে, সেকথা তারা মানতেই নারায। এটা স্পষ্ট করতে গিয়ে মাওলানা বেলায়েত আলী লিখেছেন, ‘মুজতাহিদগণের বহু কথা যে হাদীছের খেলাফ পাওয়া যায়, তার কারণ এই যে, তাঁদের সময়ে হাদীছসমূহ বিক্ষিপ্ত ছিল। সেসবের নিয়মমাফিক সংকলন তখনও পর্যন্ত হয়নি। সেকারণ তাদের সামনে সমস্ত হাদীছ মওজুদ ছিল না। ফলে তারা নিরুপায় হয়ে ইজতিহাদ ও ক্বিয়াসের ব্যাপারে বাধ্য ছিলেন’।[12]

তারপর তিনি লিখেছেন, ‘কিছু মানুষের ধারণা, মানুষের মধ্যে নিজেকে হানাফী বলে পরিচয় দেওয়াও দ্বীন ইসলামের একটি যরূরী বিষয়। এজন্য তারা মনে করেন যে, ইমাম ছাহেবের কথার কোন ব্যত্যয় ঘটলে তাদের হানাফিয়াত টিকে থাকবে না। এ কথার উত্তরে এতটুকু বলব যে, যত মাসআলা ইমাম আবু হানীফার নামে চালু আছে তা দু’প্রকার। এক. সেই সকল মাসআলা যা ইমাম ছাহেব থেকে বর্ণিত হয়েছে। এ ধরনের কথাগুলিকে ফিক্বহের গ্রন্থসমূহে عَنْ أَبِىْ حَنِيْفَةَ ‘আবু হানীফা থেকে বর্ণিত হয়েছে’ বলে উল্লেখ করা হয়। দুই. ঐ সকল মাসআলা যা অন্য ফকীহগণ ইমাম ছাহেবের কথা থেকে নির্ণয় করে তাঁর মাযহাব বলে উল্লেখ করেছেন। এ ধরনের মাসআলাগুলিকে ফিক্বহের কিতাবগুলিতে عِنْدَ أَبِىْ حَنِيْفَةَ ‘আবু হানীফার নিকটে’ বলে উল্লেখ করা হয়। এটা ইজতিহাদের মধ্যে ইজতিহাদ। কারণ প্রথমে তো সেটি কুরআন ও হাদীছ থেকে উদ্ভাবিত হয়েছিল, পরে আবার সেই উদ্ভাবিত কথা থেকে অন্যান্য মাসআলা বের করা হয়েছে। এভাবে এই মাসআলা সমূহে দুই ধরনের ভুলের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। কেননা প্রত্যেকবার মাসআলা বের করতে ভুল হওয়ার একটা সম্ভাবনা থাকে। আর এসব কারণেই ইমাম ছাহেবের শিষ্যগণ এবং অন্যান্য বিদ্বানগণ কোন কোন ক্ষেত্রে ইমাম ছাহেবের মাযহাব থেকে আলাদা মতামত উল্লেখ করেছেন। আবার ঐ মুক্বাল্লিদরাও সেসব ক্ষেত্রে অন্যান্য বিদ্বানদের মত গ্রহণ করেছেন এবং ইমাম আবু হানীফার তাক্বলীদ পরিত্যাগ করেছেন। ফলে এরা কিছু জায়গায় হানাফী, কিছু জায়গায় আবু ইউসুফী, কিছু জায়গায় মুহাম্মাদী (ইমাম মুহাম্মাদ-এর অনুসারী), কিছু জায়গায় যুফারী আবার কোন জায়গায় আবুল লায়ছী[13] হয়ে গেছেন। তাহলে তাদের হানাফিয়াত বাকী থাকল কোথায়? ... এ আলোচনার উদ্দেশ্য হ’ল যাতে আমরা জানতে পারি যে, মুহাক্কিকদের উদ্দেশ্য হয় সত্যের অনুসরণ, ব্যক্তি বিশেষের দিকে সম্পর্কিত হওয়া নয়’।[14]

তারপর তিনি এ কথা পরিষ্কার করেছেন যে, ইমাম আবু হানীফা থেকে আদতেই এমন কোন কিতাব রচনার কথা বর্ণিত নেই, যার উপর তাঁর মাযহাবের ভিত রচিত হতে পারে। হানাফী ফিক্বহের কিতাবগুলির অধিকাংশ মাসআলা ইমাম ছাহেবের নয়; বরং তা অন্য আলেমদের। এমতাবস্থায় যদি কোন ব্যক্তি ঐ সমস্ত প্রসিদ্ধ কিতাবসমূহের কোন মাসআলাকে কুরআন অথবা হাদীছের পরিপন্থী হওয়ায় অথবা ইজতিহাদের মাধ্যমে উদ্ভাবিত হওয়ায় অপসন্দ হেতু তা উপেক্ষা করে, তাহলে তাতে কোন ক্ষতি হবে না। অতঃপর তিনি ক্বিয়াসী মাসআলা-মাসায়েল যাচাইয়ের জন্যও কুরআন ও হাদীছকে মানদন্ড নির্ধারণ করার উপর যোর দিয়েছেন।[15]

তৃতীয় অধ্যায়ে বেলায়েত আলী প্রমাণ করেছেন যে, কুরআন ও হাদীছ বুঝা এবং তার উপরে আমল করা কঠিন নয়; বরং সহজ। দু’একটি উদ্ধৃতি লক্ষ্য করা যাক।

‘কিয়ামতের দিন এই কুরআন ও হাদীছ সম্পর্কেই জিজ্ঞেস করা হবে; অন্য কোন কিতাব সম্পর্কে নয়। খুব ভালো করে বুঝুন যে, কুরআন ও হাদীছ ছাড়া অন্য সব গ্রন্থ অধ্যয়ন হয় নিষিদ্ধ, নয় বে-ফায়েদা ...’।[16]

‘আল্লাহ তা‘আলা পূর্ববর্তী মুহাদ্দিছগণকে রহমতের বারিধারায় সিক্ত করুন! তারা মওযূ (মিথ্যা) হাদীছকে গায়ের মওযূ (সত্য) হাদীছ থেকে এবং শক্তিশালী হাদীছকে দুর্বল হাদীছ থেকে পৃথক করে নিজেদের গ্রন্থে বিষয়ভিত্তিক সংকলন করেছেন এবং প্রত্যেক মাসআলার জন্য পৃথক পৃথক অধ্যায় ও অনুচ্ছেদ নির্ধারণ করেছেন। দেখেই বুঝা যায়, হাদীছসমূহে ছোট ছোট মাসআলাও অসংখ্য রয়েছে। এখন তো হাদীছ শাস্ত্র ফিক্বহের গ্রন্থগুলির মত একেবারে সহজ হয়ে গেছে। যে মাসআলাই সামনে আসবে তার অধ্যায়ে তা তালাশ করবে, তাহলে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর পসন্দ কি তা জানতে পারবে। বরং হাদীছ তো ফিক্বহের চাইতেও বেশী সহজ হয়ে গেছে। কেননা ফিক্বহের গ্রন্থ অসংখ্য এবং এগুলির রচয়িতাও হাযার হাযার। যদি একটি কিতাবে এক মাসআলা জায়েয লেখা থাকে তবে প্রবল ধারণা যে, অন্য কিতাবে তা নাজায়েয লেখা থাকবে। তাহলে কার কথা মতো আমল করা হবে? এতসব গ্রন্থের কোত্থেকে মাসআলা নেওয়া হবে? এত অবকাশ ও বয়সই বা কোত্থেকে মিলবে যে, তা ব্যয় করে মানুষ ঐসব গ্রন্থ তালাশ করে আল্লাহর বিধান জানতে পারবে’?[17]

এই উদ্ধৃতিগুলি থেকে যা ফুটে উঠেছে তাতে এটা সুস্পষ্ট যে, কোনো মুক্বাল্লিদ নিজ মাযহাবের ফিক্বহ সম্পর্কে এ ধরনের চিন্তা-চেতনা প্রকাশ করতে পারেনা।

মাওলানা বেলায়েত আলীর আরেকটি পুস্তিকা হ’ল ‘তায়সীরুছ ছালাত’। যেটি ‘মাজমূ‘আ রাসায়েলে তিস‘আ’য় প্রকাশিত হয়েছে। এই রচনাসমগ্রের সাতটি পুস্তিকা মাওলানা বেলায়েত আলীর নিজের রচিত। এ পুস্তিকাটি সহজ উর্দূতে লেখা। এতে ছালাতের মাসআলা-মাসায়েল বর্ণিত হয়েছে। এতেও তাঁর হাদীছের উপরে আমলের জায্বা ফুটে উঠেছে। অনেক জায়গায় তিনি হাদীছের মুকাবিলায় হানাফী ফিক্বহের মাসআলাগুলিকে এড়িয়ে গেছেন। যেমন দুই কুল্লা পানিতে নাপাকী পড়লে পানির রং, গন্ধ ও স্বাদ পরিবর্তন না হওয়া পর্যন্ত পাক থাকার মাসআলা, দুধপানকারী ছেলে ও মেয়ের পেশাবের মাঝে পার্থক্যের মাসআলা, সফরে দুই ওয়াক্তের ছালাত প্রথম ওয়াক্তে অথবা শেষ ওয়াক্তে জমা করে পড়ার মাসআলা, গায়েবানা জানাযার ছালাত আদায়, জানাযার ছালাতে সূরা ফাতেহা পাঠের মাসআলা ইত্যাদি। এ সকল মাসআলায় তিনি হাদীছ সামনে রেখে হানাফী ফিক্বহের বিপরীতে আহলেহাদীছদের দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করেছেন।

একই ‘রচনা সমগ্রে’ তাঁর ‘রিসালায়ে দাওয়াত’ নামে একটি পুস্তিকা রয়েছে। তাতে তিনি প্রত্যেক জায়গায় নিজের জামা‘আত ও অনুসারীদেরকে ‘মুহাম্মাদী’ বলে উল্লেখ করেছেন। বিদ্বানরা এ কথা ভালো করেই জানেন যে, সালাফী, আছারী, মুহাম্মাদী ও আহলেহাদীছ একই দলের বিভিন্ন নাম। মুক্বাল্লিদরা এসব নামে কখনো অভিহিত হন না। এ নামগুলি ঐ দলের জন্য নির্দিষ্ট, যারা সরাসরি কুরআন ও হাদীছ থেকে ফায়েদা লাভ করতে বলেন এবং কোন ইমামের তাক্বলীদকে যরূরী মনে করেন না। উপরন্তু সমকালীন জনৈক ইংরেজও এ কথার সাক্ষ্য দিয়েছেন যে, শাহ ইসমাঈল শহীদের অনুসারীরা নিজেদেরকে ‘মুহাম্মাদী’ বলতেন। তিনি বলেন যে, ‘মুজাহেদীন’ জামা‘আত দু’টি পরস্পর বিরোধী গ্রুপে বিভক্ত ছিল। একটি গ্রুপের নেতা ছিলেন মাওলানা আব্দুল হাই ও মাওলানা কেরামত আলী জৌনপুরী, যারা আহলেসুন্নাত-এর তরীকা অনুসরণ করতেন। অন্য গ্রুপটির নেতা ছিলেন মৌলবী ইসমাঈল। যিনি চার ইমামের তাক্বলীদ হ’তে মুক্ত ছিলেন এবং সরাসরি হাদীছকে দলীলের উৎস গণ্য করতেন। স্বয়ং সৈয়দ আহমাদ আমলের দিক দিয়ে ‘হানাফী’ হ’লেও মৌলবী ইসমাঈলের উপর নেতৃত্ব করতেন, যিনি নিজেকে ‘মুহাম্মাদী’ বলতেন’।[18]

এ সমস্ত ভেতর-বাহিরের (মুসলিম-অমুসলিম নির্বিশেষে) অকাট্য সাক্ষ্যের পরে এ বিষয়ে কোন সন্দেহ বাকী থাকতে পারে না যে, মাওলানা বেলায়েত আলী মাযহাবগত দিক থেকে কোনভাবেই হানাফী ছিলেন না; বরং আহলেহাদীছ ছিলেন। তাঁকে হানাফী গণ্য করা সত্যলিখন নয়, বরং সত্যের অপনোদন মাত্র। সম্মানিত অধ্যাপক ছাহেবের এই একটি দাবী থেকেই তার ইতিহাস লেখার আসল রূপ ভালভাবে বুঝা যাচ্ছে যে, কিভাবে তিনি ঐতিহাসিক ঘটনাগুলিকে গলদ রঙে রাঙানোর চেষ্টা করেছেন। কবি বলেছেন,

قياس كن گلستان من بہار مرا

‘আমার পুষ্পোদ্যান দেখেই আমার বসন্ত বিচার কর’।

মাওলানা বেলায়েত আলীর হানাফিয়াতের তত্ত্ব রহস্য :

উক্ত কথা পরিষ্কার হওয়ার পর এখন এ প্রশ্নের মীমাংসাও যরূরী যে, যদি বাস্তবিকই মাওলানা বেলায়েত আলী আহলেহাদীছ ছিলেন তবে অধ্যাপক ছাহেব যে উদ্ধৃতি পেশ করেছেন তাতে তিনি নিজেকে ‘হানাফী’ কেন বলেছেন? ঘটনা এই যে, যে প্রসঙ্গে তিনি এ কথা বলেছিলেন তার পুরোটা যদি সামনে তুলে ধরা হয় তাহলে তাতে তার হানাফী হওয়ার প্রমাণ সেভাবে মিলবে না, যেভাবে প্রবন্ধকার তা থেকে গ্রহণ করেছেন। প্রসঙ্গত মাওলানা আবদুর রহীম ছাদেকপুরী লিখেছেন, ‘কুরআন ও হাদীছের জ্ঞানার্জনে জনগণকে তাঁর উৎসাহ প্রদান এবং ওয়ায ও নছীহতের ফলে হিন্দুস্থানে ‘আমল বিল-হাদীছ’-এর চর্চা শুরু হয়ে যায় এবং তাক্বলীদ ও মাযহাবী গোঁড়ামীর ভিত দুর্বল ও নড়বড়ে হয়ে যায়। কেননা কুরআন ও হাদীছের প্রতি মহববত এবং এগুলির শিক্ষা-দীক্ষার প্রচলন সত্যকে উদ্ভাসিত করে দেয়।

‘সত্য এসে গেছে, মিথ্যা অপসৃত হয়েছে’ (বনু ইস্রাঈল ১৭/৮১)। হানাফী মাসআলা-মাসায়েল যতক্ষণ পর্যন্ত কোন প্রকাশ্য অরহিত হাদীছের পরিপন্থী না হ’ত, ততক্ষণ পর্যন্ত তিনি ও তাঁর শিষ্যগণ তার উপরে আমল করতেন। কেননা সকল আমলের সারনির্যাস তো আল্লাহর সন্তুষ্টি অন্বেষণ, মতানৈক্য সৃষ্টি নয়। যদি এ উদ্দেশ্য সামনে থাকে তবে (হানাফী ও আহলেহাদীছের মধ্যে) মতানৈক্যের ভিত্তি আপনা থেকেই দুর্বল ও ঢিলেঢালা হয়ে যাবে’।[19]

এ কথা চিন্তা-ভাবনা করে বলুন যে, তিনি কেমন হানাফী ও মুক্বাল্লিদ ছিলেন, যার ওয়ায ও নছীহতে হিন্দুস্থানে তাক্বলীদের ভিত দুর্বল ও নড়বড়ে হয়ে যায় এবং হাদীছ অনুযায়ী আমলের চর্চা শুরু হয়ে যায়। কখনো কি কোন মুক্বাল্লিদের ওয়ায ও তাবলীগের এমন প্রভাব দেখা গেছে? অথবা কোন মুক্বাল্লিদের জীবনী লেখক বিশেষভাবে তার জীবনের এদিকটি তুলে ধরেছেন? বস্ত্তত এ প্রশ্নের উত্তর ‘না’ ছাড়া আর কিছুই হবে না। এ উদ্ধৃতি থেকে তাঁর যে কার্যপদ্ধতি প্রকাশ পায় তা এই যে, তিনি হানাফী মাযহাবকে কুরআন ও হাদীছের সামনে পেশ করতেন, যেসব মাসআলা কুরআন ও হাদীছ মাফিক হত সেগুলির উপরে আমল করতেন, আর যা বিপরীত হত তা ছেড়ে দিতেন। অথচ মুক্বাল্লিদদের চিরাচরিত অভ্যাস হ’ল তারা কুরআন ও হাদীছকে দুমড়ে-মুচড়ে নিজেদের ইমামের কথা মাফিক বানানোর অপচেষ্টা চালিয়ে থাকেন। পুরো বিষয়টি অধিকতর স্পষ্ট করতে আমরা মুনাযারার পুরো ঘটনা উল্লেখ করছি, যাতে তিনি নিজেকে ‘হানাফী’ বলে উল্লেখ করেছিলেন।

‘তাযকেরায়ে ছাদেক্বাহ’ প্রণেতা লিখেছেন, ‘এই সত্য দলের শনৈঃ শনৈঃ উন্নতি-অগ্রগতি ও কুরআন-হাদীছের প্রচার দেখে সংকীর্ণ দৃষ্টির লোকেরা মৌলবী মুহাম্মাদ ফছীহ গাযীপুরীকে দু’হাযার টাকা পুরস্কার দেওয়ার ওয়াদা করে হকপন্থী ওলামায়ে কেরামের সঙ্গে বিতর্ক ও মুনাযারার জন্য দাওয়াত করে। মুনাযারার দিন মাওলানা এনায়েত আলী মৌলবী মুহাম্মাদ ফছীহ ও তার সঙ্গী-সাথীদেরকে নিমন্ত্রণ করেন। বহু আলেম-ফাযেল ও গণ্যমান্য লোক জমায়েত হন। মাওলানা বেলায়েত আলী মৌলবী মুহাম্মাদ ফছীহকে পৃথক একটি কামরায় ডেকে নিয়ে কয়েকজন লোকের উপস্থিতিতে বলেন, ‘আমি হানাফী (ميں حنفى المذهب ہوں) এবং এ বিষয়টি সর্বসম্মত যে, যদি কোন হানাফী কোন গায়ের মানসূখ প্রকাশ্য হাদীছ দেখে কোন ফিক্বহী মাসআলার খেলাফ আমল করে, তবে সে ব্যক্তি হানাফী মাযহাব হ’তে খারিজ হয় না’। যেমন ইমাম আবু হানাফী (রহঃ) বলেছেন, ‘তোমরা রাসূলের হাদীছের মুকাবিলায় আমার কথা পরিত্যাগ কর (أتركوا قولى بخبر الرسول)

‘এই মূলনীতি তার্কিক ছাহেবের বুঝে আসে এবং তিনি সত্যের পক্ষাবলম্বন করে জোরেশোরে ঘোষণা দেন যে, এই জামা‘আত হক-এর উপরে আছে। হাদীছের উপরে আমল করার কারণে কেউ হানাফিয়াত থেকে খারিজ হয়ে যায় না। আমাদের ও তাদের মাসলাক এক ও অভিন্ন’।

সেদিনের মত মুনাযারা মুলতবী হয়ে যায়। কিন্তু তার্কিক ছাহেব তার নিবাস লোদীকড়া মহল্লায় ফিরে যাওয়ার পর তার মুরীদগণ এবং যারা তাকে দাওয়াত দিয়েছিল, তারা তাকে দারুণভাবে অপমানিত ও লজ্জিত করে এবং দ্বিতীয়বার তাকে জনসম্মুখে তর্কে প্রবৃত্ত হতে বাধ্য করে। তারা তাকে সহযোগিতা করার জন্য আরো কিছু আলেমকে বিশেষ করে মৌলভী ওয়ায়েযুল হক ছাহেবকে নিযুক্ত করে। ফলে মৌলভী মুহাম্মাদ ফছীহ তার সহযোগীদের সাথে নিয়ে বিতর্কের উদ্দেশ্যে মৌলভী ইলাহী বখশের বাড়িতে উপস্থিত হন। মাওলানা বেলায়েত আলী ছাহেব বিতর্কের জন্য মৌলভী ফাইয়ায আলীকে এবং তাকে সহযোগিতা করার জন্য মৌলভী হাকীম ইরাদাত হুসাইনকে পাঠিয়ে দেন। হাকীম ছাহেব কিতাব খুলে খুলে বিতর্কের জায়গাগুলি দেখাতে থাকেন। এবারও মৌলভী মুহাম্মাদ ফছীহ ছাহেব সত্যকে স্বীকার করে নেন। কিন্তু এবার প্রয়োজনের তাগিদে বিতর্কের বিষয়গুলি সংক্ষেপে লিপিবদ্ধ করে তার্কিক মৌলভী মুহাম্মাদ ফছীহ ছাহেব গাযীপুরীর নিকট থেকে স্বীকারোক্তিমূলক স্বাক্ষর গ্রহণ করা হয়। যার সারকথা ছিল এই যে, হানাফী মাযহাবের অনুসারী কেউ যদি দলীল-প্রমাণের প্রাধান্যের ভিত্তিতে কোন গায়ের মানসূখ ছহীহ হাদীছ যেমন ছালাতে রাফ‘উল ইয়াদায়েন করা, জোরে আমীন বলা ইত্যাদির উপরে আমল করে, তবে সে নিজ ইমামের অনুসরণের গন্ডী থেকে খারিজ হয়ে যায় না’।[20]

রেখাটানা বাক্যগুলি দ্বারা প্রবন্ধকার মাওলানা বেলায়েত আলীর হানাফিয়াতের বিষয়টি গ্রহণ করেছেন। কিন্তু বাস্তবতা তো এই যে, এখানে ভেবে দেখলে তার হাদীছের উপরে আমলের মাসলাকই ফুটে ওঠে, হানাফী হওয়া নয়। এই উদ্ধৃতাংশে ভেবে দেখার দিক এই যে, তিনি নিজেকে হানাফী এজন্য বলেননি যে, তাঁর নিকটে হানাফী ফিক্বহের সকল মাসআলা সঠিক এবং এখন আর সেগুলি কুরআন ও হাদীছ দিয়ে যাচাইয়ের কোন প্রয়োজন নেই। যেভাবে এটি তাক্বলীদের দাবী এবং মুক্বাল্লিদদেরও এটাই রীতি। বরং তিনি শুধু এই দৃষ্টিকোণ থেকে নিজেকে হানাফী বলেছেন যে, তিনি ইমাম আবু হানীফা (রহঃ)-এর নিম্নোক্ত বাণী মোতাবেক হাদীছের উপরে আমল করতেন। ইমাম আবূ হানীফা (রহঃ) বলেছেন, ‘তোমরা রাসূলের হাদীছের মুকাবিলায় আমার কথা পরিত্যাগ কর’। তিনি যেন বলতে চাচ্ছেন, এ দৃষ্টিকোণ থেকে আসল হানাফী তো আমরাই। কারণ ইমাম ছাহেবের কথা মতো আমরাই আমল করছি। ঐ সকল গোঁড়া মুক্বাল্লিদ হানাফী নয় যারা কোন অবস্থাতেই ফিক্বহী মাসআলা ত্যাগ করতে সম্মত নয় এবং যারা এভাবে নিজেরাই নিজেদের ইমামের উল্লেখিত বক্তব্যের বিরুদ্ধাচরণ করছে। এটা কথা উপস্থাপনের একটি ধরন, যা বাহাছ-মুনাযারায় সচরাচর ব্যবহার করা হয়। তাঁর প্রকাশ্য উক্তি সমূহ, রচনাবলী ও আমলী যিন্দেগীকে পাশ কাটিয়ে শুধু এই একটা কথার ভিত্তিতে তাঁকে ‘হানাফী’ গণ্য করার দুঃসাহস কেবল অধ্যাপক কাদেরী ছাহেবের মতো গবেষকরাই করতে পারেন।

অধিকন্তু তাঁর আসল মিশন ছিল যেহেতু শির্ক ও বিদ‘আত-এর খন্ডন এবং বাতিলের বিরুদ্ধে জিহাদ করা, সেহেতু নামের তর্কে পড়ে থাকা তিনি পসন্দ করতেন না। হানাফী আখ্যায়িত হয়েও যদি নবীর হাদীছের উপরে তিনি নিজে আমল করতে পারেন এবং অন্যদের আমল করাতে পারেন, তাহলে তা খুব সস্তা কাজ নিশ্চয় ছিল না। খোদ ঐ ঘটনায় এ কথা উল্লেখ আছে যে, হানাফী মৌলভী ছাহেব রাফ‘উল ইয়াদায়েন ও জোরে আমীন বলা ইত্যাদি মাসআলার বিশুদ্ধতা স্বীকার করে তা চূড়ান্ত সত্য বলে মেনে নিয়েছিলেন। যদি প্রকৃতই হানাফীগণ হাদীছ ও ফিক্বহ সম্বন্ধে মৌলিকভাবে মাওলানা বেলায়েত আলীর দৃষ্টিভঙ্গির প্রবক্তা হয়ে যেত, তাহলে বাস্তবে হানাফী ও আহলেহাদীছের মধ্যে কোন মতবিরোধ অবশিষ্ট থাকত না। তখন আহলেহাদীছরা হানাফী এবং হানাফীরা আহলেহাদীছ হয়ে যেত।

মোটকথা, মাওলানা বেলায়েত আলী ছাদেকপুরী মূলতঃ জন্মগতভাবেই আহলেহাদীছ ছিলেন। তিনি আহলেহাদীছ আন্দোলনের প্রচার ও প্রসার করেছেন। লক্ষ লক্ষ মানুষ তাঁর পরশমণিতুল্য সাহচর্য ও হৃদয়গ্রাহী ওয়ায ও নছীহতে প্রভাবিত হয়ে তাক্বলীদের ঘেরাটোপ থেকে মুক্ত হয়ে কুরআন ও হাদীছের প্রেমিক হয়েছেন।

ছোট ভাই মাওলানা এনায়েত আলীকে বড় ভাই মাওলানা বেলায়েত আলী বাংলা অঞ্চলে মুবাল্লিগ নিযুক্ত করেছিলেন। মাওলানা আব্দুর রহীম ছাদেকপুরী তাঁর সম্পর্কে লিখেছেন, ‘তিনি প্রথমবারে একটানা সাত বৎসর বাংলাদেশ এলাকার গ্রামে গ্রামে অবর্ণনীয় কষ্ট ও ধৈর্য সহকারে সফর করেন এবং লাখো মানুষের অন্ধকার হৃদয়ে আলোর চেরাগ জ্বালিয়ে দেন। সকলকে কুরআন ও হাদীছের ইত্তেবার প্রতি আকৃষ্ট করেন। তাঁর অনুসারীগণ আজও বাংলা অঞ্চলে ‘মুহাম্মাদী’ লকবে বৈশিষ্ট্যমন্ডিত রয়েছেন’।[21]

মাওলানা ছানাউল্লাহ অমৃতসরী ১৯১৩ সালে একবার বাংলাদেশ সফরে এসেছিলেন এবং সেখানকার বিভিন্ন স্থানে গিয়েছিলেন। দুমকা (বর্তমানে ঝাড়খন্ড প্রদেশের একটি যেলা) ও মুর্শিদাবাদ যেলার বিভিন্ন গ্রাম যেমন দিলালপুর, ইসলামপুর, জঙ্গীপুর, নারায়ণপুর ইত্যাদি গ্রামে সফর করেছিলেন। ফিরে গিয়ে তিনি সেখানকার একটি সংক্ষিপ্ত ভ্রমণ বৃত্তান্ত লেখেন, যা সাপ্তাহিক ‘আহলেহাদীছ’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল। তাতে এসব অঞ্চলে বিশেষভাবে আহলেহাদীছ জামা‘আতের আধিক্যে বিস্ময়াভিভূত হয়ে তিনি লিখেছেন, ‘আমি এই সফরে একটি কথাই কেবল চিন্তা করেছি যে, বাংলাদেশে আহলেহাদীছের এত সংখ্যাধিক্য কিভাবে হ’ল? তখন আমাকে বলা হ’ল যে, মাওলানা বেলায়েত আলী ও মাওলানা এনায়েত আলীর আন্দোলনেরই বরকত এটা’।[22]

কোন হানাফী মুক্বাল্লিদ কি আহলেহাদীছ মাসলাকের তাবলীগ করতে পারেন? অথবা তার তাবলীগের এমন প্রভাব পড়তে পারে যে, জনসাধারণ তাক্বলীদের বন্ধন খুলে ফেলে মুহাম্মাদী ও আহলেহাদীছ মাসলাক গ্রহণ করতে পারে? দৃশ্যত এটা কোন মুক্বাল্লিদের কাজ নয়। এ কার্যপদ্ধতি কেবল ঐ ব্যক্তির হতে পারে, যিনি তাক্বলীদের প্রতি নাখোশ এবং সরাসরি কুরআন ও হাদীছ থেকে ফায়েদা লাভ ও মাসআলা উদ্ভাবনের প্রবক্তা। এই সূক্ষ্ম গবেষণা ও অনুসন্ধানের নামই তো আহলেহাদীছ। মাওলানা বেলায়েত আলী নিঃসন্দেহে এই চিন্তাধারা ও কার্যপদ্ধতির পতাকাবাহী ও দাঈ ছিলেন।

যখন এ কথা খুব ভালভাবেই স্পষ্ট হয়ে গেল যে, মাওলানা বেলায়েত আলী ও তাঁর ছোট ভাই মাওলানা এনায়েত আলী রহিমাহুমাল্লাহ সালাফী মন-মানসিকতা ও আহলেহাদীছ চিন্তাধারার ধারক ও বাহক ছিলেন, তখন তাদের ছাত্রবৃন্দ, বন্ধুবর্গ ও পরিবারের সদস্যদের আহলেহাদীছ হওয়া আপনা-আপনিই প্রমাণিত হয়ে যায়। এঁরাই দুই বাহাদুর ও মুজাহিদ ভাই, যারা সাইয়েদ আহমাদ শহীদ ও শাহ ইসমাঈল শহীদের শাহাদাতের পরে জিহাদ আন্দোলনকে সেই একই জায্বা ও উদ্যম নিয়ে জিইয়ে রেখেছিলেন, যেই জায্বা ও উদ্যম শহীদায়েনের মধ্যে ক্রিয়াশীল ছিল। ঐ দুই ভাইয়ের নেতৃত্বে এবং তাঁদের মৃত্যুর পরে তাঁদের ছাত্রবৃন্দ, বন্ধুবর্গ ও পরিবারের সদস্যরা জিহাদ আন্দোলনের সেই পতাকাকে ভূলুণ্ঠিত হতে দেননি। রহিমাহুমুল্লাহু রহমাতান ওয়াসি‘আহ (আল্লাহ তাঁদের উপর অজস্র ধারায় রহমত বর্ষণ করুন)।

[ক্রমশঃ]

মূল (উর্দূ): হাফেয ছালাহুদ্দীন ইউসুফ

 পাকিস্তান কেন্দ্রীয় শারঈ আদালতের আজীবন উপদেষ্টা, প্রখ্যাত আহলেহাদীছ আলেম, লেখক ও গবেষক; সাবেক সম্পাদক, সাপ্তাহিক আল-ই‘তিছাম, লাহোর, পাকিস্তান। জন্ম : ১৯৪৫ জয়পুর, রাজস্থান, ভারত; মৃত্যু : ১২ই জুলাই ২০২০ লাহোর, পাকিস্তান।

অনুবাদ : মুহাম্মাদ আব্দুল মালেক

ঝিনাইদহ।

[1]. তাযকেরায়ে ছাদেক্বাহ, পৃঃ ১১১।

[2]. ঐ, পৃঃ ১১৭।

[3]. হিন্দুস্থান কী পহেলী ইসলামী তাহরীক, পৃঃ ৬০।

[4]. ঐ।

[5]. ঐ, পৃ. ৬০-৬১।

[6]. শাহ অলিউল্লাহ আওর উন কী সিয়াসী তাহরীক, পৃ. ১৩০।

[7]. মাজমূ‘আ রাসায়েলে তিস‘আ, পৃ. ২৮-২৯, মাতবা ফারূকী, দিল্লী।

[8]. মাজমূ‘আ রাসায়েলে তিস‘আ পৃ. ২৮-২৯, মাতবা ফারূকী, দিল্লী।

[9]. রিসালা আমল বিল-হাদীছ, পৃ. ১৫, আল-মাকতাবাতুস সালাফিইয়াহ, লাহোর, ১৩৮৫ হিঃ।

[10]. মূলতঃ উক্তিটি ইমাম শাফেঈ (রহঃ)-এর। তিনি বলেন,إِذَا صَحَّ الحَدِيْثُ فَاضْرِبُوا بِقَولِي الحَائِطَ‘যখন ছহীহ হাদীছ পাবে, তখন আমার কথা দেওয়ালে ছুড়ে মারবে’ (যাহাবী, সিয়ারু আ‘লামিন নুবালা ৮/২৪৮)। -সম্পাদক।

[11]. ঐ, পৃ. ১৭-২০।

[12]. ঐ, পৃ. ২১।

[13]. আবুল লায়েছ সামারক্বান্দী (৩৩৩-৩৭৩ হিঃ)। ইনি আবু হানীফা (৮০-১৫০ হিঃ)-এর সরাসরি শিষ্য নন।-সম্পাদক

[14]. ঐ, পৃ. ২২-২৩।

[15]. ঐ, পৃ. ২৩-২৫।

[16]. ঐ, পৃ. ২৮।

[17]. ঐ, পৃ. ৩০-৩১।

[18]. মুসলমানূঁ কা রওশন মুস্তাক্ববেল, পৃ. ১০৪।

[19]. তাযকেরায়ে ছাদেক্বাহ, পৃ. ১১৭।

[20]. তাযকেরায়ে ছাদেক্বাহ, পৃ. ১১৯।

[21]. তাযকেরায়ে ছাদেক্বাহ, পৃ. ১২৩।

[22]. আহলেহাদীছ, অমৃতসর, ১০ম বর্ষ, ২৫শে এপ্রিল ১৯১৩, পৃ. ২৬।






বিষয়সমূহ: সংগঠন
নবী করীম (ছাঃ)-এর প্রতি আদব সমূহ - ড. মুহাম্মাদ কাবীরুল ইসলাম
মানবাধিকার ও ইসলাম (১২তম কিস্তি) - শামসুল আলম
ওয়াহ্হাবী আন্দোলন : উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ; মুসলিম বিশ্বে এর প্রভাব (৪র্থ কিস্তি) - ড. আহমাদ আব্দুল্লাহ ছাকিব
লাইলাতুল মি‘রাজ : করণীয় ও বর্জনীয় - শেখ আব্দুছ ছামাদ
আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আত পরিচিতি (শেষ কিস্তি) - ড. আহমাদ আব্দুল্লাহ ছাকিব
আহলেহাদীছ একটি বৈশিষ্ট্যগত নাম (২য় কিস্তি) - আহমাদুল্লাহ - সৈয়দপুর, নীলফামারী
১৬ মাসের মর্মান্তিক কারা স্মৃতি (২য় কিস্তি) - মাওলানা মুহাম্মাদ নূরুল ইসলাম
রোগ-ব্যাধির উপকারিতা - আব্দুল্লাহ আল-মা‘রূফ
আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আত পরিচিতি (২য় কিস্তি) - ড. আহমাদ আব্দুল্লাহ ছাকিব
হাদীছ সংগ্রহ ও সংরক্ষণ পরিক্রমা (৬ষ্ঠ কিস্তি) (জুলাই ২০২৩-এর পর) - ড. আহমাদ আব্দুল্লাহ ছাকিব
মানব জাতির প্রকাশ্য শত্রু শয়তান - মুহাম্মাদ আব্দুল ওয়াদূদ
শারঈ ঝাড়-ফুঁক : একটি পর্যালোচনা - মুহাম্মাদ আবু তাহের, পরিচালক, কিউসেট ইনস্টিটিউট, সিলেট।
আরও
আরও
.