ভূমিকা :

বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ইতিহাসে পহেলা বৈশাখের অবস্থান বেশ মযবুত। কিন্তু আমাদের ইতিহাসে নববর্ষ উদযাপন যতটা সাংস্কৃতিক ব্যাপার, ততোধিক রাজনীতি আকারে বিদ্যমান। দেশে জনগণের মধ্যে প্রতিবছরই নববর্ষ উদযাপনকে কেন্দ্র করে প্রবল মেরুকরণ তৈরি হয়। অত্র প্রবন্ধে আমরা পহেলা বৈশাখের অরিজিন (origin) বা ঐতিহাসিক বিস্তার নিয়ে আলাপ করব না এবং এর পেছনের রাজনীতির সুলুক সন্ধান করার চেষ্টা করব।

পোস্ট-কলোনিয়াল চিন্তা পদ্ধতির কাঠামো থেকে বিবেচনা করলে পহেলা বৈশাখ একটা কলোনিয়াল ফেনোমেনা (phenomena)। আধুনিক পহেলা বৈশাখ প্রথম পালিত হয় ১৯১৭ সালে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ব্রিটিশদের বিজয় কামনা করে সেই বছর পহেলা বৈশাখে হোম কীর্তন ও পূজার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। একই রকম আয়োজন করা হয়েছিল ১৯৩৮ সালেও।[1] সেই সাথে জমিদারী শোষণ-নিপীড়নেরও একটা ঐতিহ্য এর সাথে রয়েছে। এছাড়াও হালের পহেলা বৈশাখের বিভিন্ন চর্চার মধ্যে যেমন, ‘মঙ্গল শোভাযাত্রায়’ এমন কিছু ব্যাপার আছে, যেগুলোকে পূজা-অর্চনা থেকে আলাদা করে দেখা সম্ভব নয়। তাই মুসলিম সমাজে এটা গ্রহণযোগ্য না হওয়ার যৌক্তিক কারণ আছে।

হাযার বছরের বাঙালী সংস্কৃতির মিথ :

অতীতে বৃহত্তর বাংলা কখনো রাজনৈতিকভাবে ঐক্যবদ্ধ ছিল না। রাজা শশাঙ্ক ও বৌদ্ধ পাল শাসকরা একক রাজ্য গঠনের চেষ্টা করলেও ব্যর্থ হন। চৌদ্দ শতকের মাঝামাঝিতে সর্বপ্রথম পুরো বাংলাকে রাজনৈতিকভাবে সংগঠিত করেন শামসুদ্দীন ইলিয়াস শাহ। তিনি তার রাজ্যকে নামকরণ করেন ‘সালতানাত-এ-বাঙ্গালাহ’ নামে এবং নিজে ‘শাহ-ই-বাঙ্গালাহ’ উপাধি ধারণ করেন। ইলিয়াস শাহের আগে কদাচিৎ ‘বং’ বা ‘বংগাল’ শব্দের ব্যবহার হ’লেও তার মধ্যে রাজনৈতিক বা জাতিগত তাৎপর্য ছিল না। সুতরাং বাঙালী জাতির ইতিহাস সাতশ’ বছরকে অতিক্রম করবে না। তাই হাযার বছরের বা আবহমান বাঙালী সংস্কৃতির যে সবক দেশে প্রগতিশীলতার বরকন্দাজরা দিয়ে থাকেন, তার কোন ঐতিহাসিক ও জ্ঞানতাত্ত্বিক ভিত্তি নেই। বরং ‘বাঙালীয়ানা’ বা ‘বাঙালী সংস্কৃতি’র যে রূপায়ণ আমরা তাদের থেকে পাই, সেটা ঔপনিবেশিক ঐতিহ্যের প্রকাশ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আজম বলেন, ‘‘যেই ‘বাঙালী’ ক্যাটাগরিটি আরোপনমূলক, যেখানে বাংলায় কথা বললেই বাঙালী হওয়া যায় না, বিশেষ আরোপিত এলিট বৈশিষ্ট্য সূচক হ’তে হয়, এই যে বাঙালীপনা তৈরি হয়েছে, এটা হ’ল স্পেসিফিক, এটা হ’ল এলিট, এটা হ’ল বিশেষভাবে বিশুদ্ধ। এই ধরনের ‘বাঙালী’ হাযার বছরেরও নয়, আবহমানও নয়। (বরং) স্পেসিফিকেলি নাইন্টিন সেঞ্চুরির কলোনিয়াল বেঙ্গলে উৎপাদিত’’।[2] অর্থাৎ হাযার বছরের নামে যে সংস্কৃতি সুশীল-প্রগতিশীল গোষ্ঠীর চর্চায় বিকশিত হয়, তা আদতে বিগত দুইশ’ বছরের ঔপনিবেশিক সিলসিলা।

অন্যদিকে ‘বাঙালী সংস্কৃতি’র অন্যতম আইকন পহেলা বৈশাখও ঔপনিবেশিক আমলে কৃত্রিমভাবে তৈরি করা একটা আচার। ব্রিটিশদের বর্ষবরণের সাথে তাল মিলিয়ে নিজেদের সংস্কৃতিবান প্রমাণ করতে কলকাতার বর্ণহিন্দুদের ‘পহেলা বৈশাখ’ নামের একটা আচার তৈরি করতে হয়েছিল। যদিও মুঘলদের ইরানী ঐতিহ্য নওরোজের সাথে এর একটা যোগসাজশ আছে বলে দাবী করা হয়। কিন্তু তখনও (বা তারও বহু পর) পর্যন্ত এ নববর্ষ উদযাপনে আপামর জনগণের অংশগ্রহণ ছিল না বললেই চলে। চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের মধ্য দিয়ে যে হিন্দু জমিদার-সূদখোর শ্রেণী ক্ষমতাসীন হয়েছিল, তারাই পহেলা বৈশাখে আমোদ-ফূর্তি করত ও মেলা বসাত। জমিদারীর কশাঘাতে জীর্ণ কৃষকদের জন্য দিনটি ছিল খাজনা আদায় ও বাৎসরিক সূদের হিসাব মেলানোর দিন। আর পান্তা-ইলিশ খাওয়া অতীত রেওয়াজ তো নয়ই বরং অতি-সাম্প্রতিক ঘটনা।

পহেলা বৈশাখকে ব্যাপক পরিসরে কালচারালি গ্রহণ করা হয়েছে মূলতঃ ষাটের দশকে বাঙালী জাতীয়তাবাদী মুভমেন্টের সময়, যে বাঙালী জাতীয়তাবাদ নিজেও ঔপনিবেশজাত। পহেলা বৈশাখকে সেসময় ঠাহর করা হয়েছিল পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সাংস্কৃতিক হাতিয়ার হিসাবে। এই জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের অভিপ্রায়ই ছিল পূর্ব বাংলার বৃহত্তর জনমানুষের জীবনযাপনের সাথে মিশে যাওয়া ইসলামী মূল্যবোধ ও চিহ্নকে ‘অপর’ (other) হিসাবে সাব্যস্ত করা এবং তার ‘আত্ম’ (self)-এর কেন্দ্রস্থিত বিভিন্ন চর্চাকে ইসলামের বিপরীত ও ‘বাঙালী সংস্কৃতি’ বলে নির্মাণ করা। এব্যাপারে ফাহমিদ-উর-রহমান লিখেছেন, ‘ঐতিহাসিক কারণে এই বাঙালী পরিচয় ষাটের দশকে বাঙালী মুসলমানের এক সময়ের রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনের ফসল পাকিস্তানকেই প্রতিপক্ষ বানায় এবং পাকিস্তানের সাথে সংশ্লিষ্ট ইসলাম-মুসলমান পরিচয়কে ছুঁড়ে ফেলতে উদ্যত হয়’।[3] এই সাংস্কৃতিক আন্দোলনে কলকাতা ছিল ত্রাতার ভূমিকায়। অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম লিখেছেন, ‘এ প্রজন্মের মধ্যে ধর্ম ও ধর্মকেন্দ্রিক সংস্কৃতি সম্পর্কে উন্নাসিকতা বেশী ছিল। অন্যদিকে বাঙালী সংস্কৃতির পৃষ্ঠপোষকতার একটা অতিরিক্ত চাপ থাকায় তারা প্রায় বাছবিচারহীনভাবে কলকাতার সাংস্কৃতিক উৎপাদনের দ্বারস্থ হয়েছিলেন’।[4]

পাকিস্তানের বিরোধিতাকে এ সময়ের জাতীয়তাবাদীরা বিবেচনা করেছিলেন ইসলামের বিরোধিতা হিসাবেই এবং তৎকালীন ভারতীয় নেতৃত্ব কংগ্রেসের তাত্ত্বিকরাও পূর্ববঙ্গের পাকিস্তান বিরোধিতাকে দেখেছিল ‘উপমহাদেশে মুসলিম জাতীয়তাবাদের কাঠামোগত বিপর্যয়’ ও ‘দ্বিজাতি তত্ত্বের সংশোধন’ আকারে।[5] ফলত বাঙালীয়ানার ব্যানারে তৎকালীন যাবতীয় সাংস্কৃতিক আচার বা প্রতীক প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ইসলামের বিপরীত প্রবণতার প্রকাশ হিসাবেই গণ্য হ’ত।

সর্বজনীনতার রাজনীতি :

দেশের সাংস্কৃতিক বরকন্দাজ ও সুশীল মিডিয়া পহেলা বৈশাখকে হাযির করে ‘সর্বজনীন’ হিসাবে। বৈশাখের উদযাপনকে সর্বজনীনতার মোড়কে উপস্থাপন করার এই রাজনীতিকে দু’টি দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্লেষণ করা সম্ভব।

প্রথমত, ‘বাঙালী’ বর্গের মধ্যে বাংলাদেশের আপামর বাংলাভাষীকে যুক্ত করে বিবেচনা করলে পহেলা বৈশাখকে ‘সার্বজনীন’ হিসাবে প্রচার করা একটি আরোপনমূলক ফ্যাসিস্ট কারবার। দেশের অতি ক্ষুদ্র কালচারাল এলিট গোষ্ঠী, জনগণের সাথে যাদের সম্পৃক্ততা নেই, শুধুমাত্র তারাই এর উদ্যাপনকে আবশ্যিক হিসাবে বিচার করেন। বিপরীতে দেশের বিশাল সংখ্যক ইসলামপ্রিয় জনতা সচেতনভাবে নববর্ষ উদযাপনের বিরোধিতা করে থাকে। এছাড়া অধিকাংশ জনগণ সক্রিয় বিরোধিতা না করলেও নববর্ষ উদ্যাপন ও তার নানান চর্চা থেকে বিযুক্ত থাকে। তাহ’লে যেই চর্চার মধ্যে দেশের অধিকাংশ জনগণের অংশগ্রহণ নেই, সেটাকে ‘জাতীয় বা সর্বজনীন সংস্কৃতি’ বলে চালিয়ে দেয়ার রাজনীতিটা কি?

মার্ক্সবাদী তাত্ত্বিক ফরহাদ মজহার রাজনীতিটা খোলাসা করেছেন এভাবে, ‘‘নিজের শ্রেণী আধিপত্য বজায় রাখার জন্যই ‘বাঙালীর নববর্ষ’ নামক একটা বয়ান পরজীবী শ্রেণীকে বানাতে হয়েছে। তারা বাংলার সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের সঙ্গে কোন সম্পর্ক রাখে না। ...বাংলা নববর্ষ বাঙালীর সর্বজনীন সংস্কৃতি দাবী করার নগদ লাভ হচ্ছে, যারা নিজেদের শুধু বাঙালী মনে করেন না বা বাঙালীয়ানার আড়ালে বিশেষ শ্রেণী বা গোষ্ঠীর মতলব বোঝেন, তাদের সাংস্কৃতিক বা রাজনৈতিকভাবে কাবু করার জন্যও এটা বেশ শক্ত হাতিয়ার হিসাবে কাজ করে’’।[6] কাজেই নববর্ষ উদ্যাপনকে ‘সার্বজনীন’ আকারে হাযির করা আদতে ‘কালচারাল ফ্যাসিজমে’র প্রকাশ, যা রাজনৈতিক মেরুকরণকেও প্রকট করে তোলে।

দ্বিতীয়ত, ঊনিশ শতকে কলকাতায় বর্ণহিন্দুর (জয়া চ্যাটার্জির মতে, ভদ্রলোক শ্রেণী) ডিসকোর্সে যেই ‘বাঙালী’ পরিচয় ও সংস্কৃতি নির্মিত হয়, তার মধ্যে ‘মুসলমানরা’ অনুপস্থিত। পাকিস্তান আমলে বাঙালী জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের মধ্য দিয়ে কলকাতার এই বয়ানটিই বাংলাদেশে দিন দিন বলবান হয়ে উঠেছে। এ প্রসঙ্গে অধ্যাপক আল-মামূন বলেন, ‘‘‘বাঙালী’ নামের আধুনিক জাতিবাদী ভাবকল্প ও জাতীয়তাবাদের আঁতুরঘর ঔপনিবেশিক আমলের কলকাতা এবং বাংলাদেশে বাঙালী বনাম মুসলমান বাইনারিকে চাগিয়ে রাখতে ও বলবান করতে সাংস্কৃতিক আধিপত্যের চিহ্ন হিসাবে কলকাতা এখনো অবদান রেখে চলেছে’’।[7]

‘বেঙ্গল রেনেসাঁস’ (কার্যত হিন্দু রিভাইভালিজম) বলে যেই ফেনোমেনা ঔপনিবেশিক কলকাতায় সম্পন্ন হয়েছিল, তার রথী-মহারথীদের ডিসকোর্সে ‘বাঙালী’ বর্গের মধ্যে ‘মুসলমান’ ছিল গরহাযির। তাদের বয়ানে মুসলমান কখনো ‘বাঙালী’ হ’তে পারে না কিন্তু বাঙালী মাত্রই ‘হিন্দু’। এজন্যই শরৎচন্দ্রের উপন্যাস শ্রীকান্তে ‘বাঙালী’ আর ‘মুসলমান’ ছেলেদের মধ্যে ফুটবল খেলার আয়োজন করা হয় (‘হিন্দু’ আর ‘মুসলমান’ ছেলেদের মধ্যে নয়)। ঊনিশ শতকের আরেক মহারথী বঙ্কিমচন্দ্র যেই ‘বাঙালী’ আবিষ্কার করেছিলেন সেখানেও ‘সবচেয়ে নীচু স্তরে’র বাঙালী হ’ল ‘বাঙালী মুসলমান’। শরৎ ও বঙ্কিমের মনোভাব সে সময়ের বর্ণহিন্দু বা ভদ্রলোক শ্রেণীর সামষ্টিক মনোভাবেরই প্রতিফলন মাত্র। পাকিস্তান বিরোধী আন্দোলনে এই বাঙালীত্বই সে সময়ের তাত্ত্বিকদের বিপুল চর্চায় ফুলে ফেপে ওঠে, যার অন্যতম আইকন পহেলা বৈশাখ। এ অর্থে পহেলা বৈশাখ (বিশেষত মঙ্গল শোভাযাত্রা) ‘বাঙালী’র সার্বজনীন উৎসবই বটে, মুসলিম মানস যেখানে অনুপস্থিত।

বাঙালীয়ানার এই বয়ান আজও বেশ প্রভাবশালী। উদাহরণ হিসাবে আমরা অধ্যাপক আল-মামূনের অভিজ্ঞতা থেকে জানতে পারি। তিনি লিখেছেন, ‘‘কলকাতায় আমি যে বাড়িতে থাকতাম সেই বাড়ির মালিক ছায়া বৌদি আমাকে বলতেন, মামুন, তোমার খাবারদাবারের অভ্যাস তো দেখছি বাঙালীদের মতো। আমি তাজ্জব হয়ে বলতাম, আচ্ছা। ...বউদি ব্যতিক্রমহীনভাবে মজা করে (আমার ছেলে) অরিত্রকে বলতেন, তোকে কলকাতার একটা বাঙালী মেয়ের সাথে বিয়ে দিয়ে কলকাতায় রেখে দেবো! জলজ্যান্ত আমরা উপস্থিত আছি, বাংলায় কথা বলছি, আমার চৌদ্দপুরুষ বাঙালী, কিন্তু তিনি আমাদের ‘বাঙালী’ হিসাবে চিনতে পারতেন না। এ রকম অভিজ্ঞতা আমার বারবার হয়েছে। ...কলকাতায় এখনো এই মতটিই প্রবল যে বাঙালী মানে আবশ্যিকভাবেই হিন্দু’’।[8] এ কারণেই এদেশের প্রগতিশীলতা কলকাতা অভিমুখী।

‘বাঙালী সংস্কৃতি’র নামে এই যে আরোপন মূলকতা, তা যেই কারণেই হোক না কেন, তার মূল উদ্দেশ্য হ’ল স্বতন্ত্র মুসলিম সংস্কৃতির উপস্থিতি ও তার সম্ভাবনাকে নির্মূল করা এবং কলকাতা কেন্দ্রিক চর্চার বিরোধীদের রাজনৈতিকভাবে ‘অপর’ (other) হিসাবে চিহ্নিত করা।

মঙ্গল শোভাযাত্রা :

মঙ্গল শোভাযাত্রাকে বাংলার হাযার বছরের সংস্কৃতির অংশ হিসাবে দেখানোর চেষ্টা প্রগতিশীল মিডিয়া খুব জোরের সাথে করে আসছে। ১৯৮৫ সালে যশোরে সর্বপ্রথম সামরিক শাসন বিরোধী আন্দোলনের অংশ হিসাবে ‘শোভাযাত্রা’ পালিত হয়েছিল। পরবর্তীতে ১৯৮৯ সাল থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগ প্রতি বছর শোভাযাত্রার আয়োজন করে আসছে। শুরুতে ‘আনন্দ শোভাযাত্রা’ বলা হ’লেও পরে এর নাম দেয়া হয় ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’। মাত্র চার দশক আগে চালু হওয়া শোভাযাত্রা কেন এক বিচিত্র কারণবশত হাযার বছরের সংস্কৃতিতে রূপান্তরিত হয়েছে! আর খুব দ্রুতই এর কর্ণধারেরা ইসলামের চিন্তা-বিশ্বাসকে নিজেদের প্রতিপক্ষ বানিয়ে নিয়েছে। ক্রমাগত প্যাঁচা, বাঘ, সিংহ, ইঁদুর, হাতি, হাঁস এবং এর মত বিশুদ্ধ পৌত্তলিকতাবাদী হিন্দু ধর্মীয় প্রতীকসমূহের প্রতিকৃতিকে শোভাযাত্রার অত্যাবশ্যকীয় প্রতীক হিসাবে গ্রহণ করা হয়। মঙ্গল শোভাযাত্রার গায়ে চড়ানো হয় ‘মৌলবাদ’ বিরোধিতার চাদর। ‘মৌলবাদ’ বলতে এদেশের প্রগতিশীলতা ইসলামী চর্চা, চিন্তা, বিশ্বাস ও মূল্যবোধকেই বুঝানো হয়ে থাকে।[9]

কলকাতার প্রগতিশীল পত্রিকা আনন্দবাজারও মঙ্গল শোভাযাত্রাকে চিত্রিত করে ‘মৌলবাদের মোকাবেলা’ হিসাবে।[10]

আনন্দবাজারের মূল্যায়ন বেশ তাৎপর্যপূর্ণ একটা ব্যাপার। কারণ বঙ্কিমের আনন্দমঠ উপন্যাস যে মানসিকতার ফসল, আনন্দবাজার পত্রিকাও সেই মানসিকতারই বাহক।[11]

উপসংহার :

বর্তমান নিওলিবারেল যুগে ‘বাঙালী সংস্কৃতি’ বাংলাদেশে স্ফীত হচ্ছে মুসলমান পরিচয় ও সংস্কৃতিকে ‘প্রান্তিকায়িত’ (marginalized) করে দূরে সরিয়ে দেয়ার মধ্য দিয়ে। ধর্ম ও সংস্কৃতির স্বতন্ত্র সীমা নির্ধারণ করে ধর্মকে (আদতে ইসলামকে) সংস্কৃতির বাইরে রাখার সবক ক্রমাগত সবখান থেকে আসছে। ফলে সাধারণ বাংলা ভাষাভাষী মুসলমানদের মধ্যে মুসলিম পরিচয় নিয়ে হীনমন্যতা সৃষ্টি হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। সেই দিক বিবেচনায় আমাদের নিজেদের সংস্কৃতির প্রতি মনোযোগী হ’তে হবে এবং বৃহত্তর জনমানুষের জীবনযাপনের সাথে জড়িত মসজিদ, ঈদ, রামাযান, ইফতার, কুরবানীসহ নানান ইসলামী চর্চা যে একই সাথে সাংস্কৃতিক তাৎপর্যও বহন করে, আমাদের তা স্পষ্ট করে মুসলিম সমাজে প্রকাশ করতে হবে। আল্লাহ আমাদের সকল মুসলমানকে ইসলামী সংস্কৃতি বুঝার এবং তা ধারণ ও লালন করার মন-মানসিকতা দান করুন। অন্যের থেকে ধার করা সংস্কৃতি থেকে নিজেদেরকে দূরে রাখার তাওফীক দিন- আমীন!

 মুহাম্মাদ আবু হুরায়রা ছিফাত

শিক্ষার্থী, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, রাজশাহী কলেজ, রাজশাহী।


[1]. কিভাবে এল পয়লা বৈশাখ, প্রথম আলো, ১৩ই এপ্রিল ২০১৫ (অনলাইন)।

[2]. মোহাম্মদ আজম, চিন্তা ও সাহিত্যের বিউপনিবেশায়ন ও অন্যান্য প্রসঙ্গ, ২০১৫, ইউটিউব (লেকচার)।

[3]. ফাহমিদ-উর-রহমান, সেকুলারিজম প্রশ্ন (ঢাকা : গার্ডিয়ান পাবলিকেশন্স, ২য় সংস্করণ : ২০২৩), পৃ. ৬৫।

[4]. মোহাম্মদ আজম, সাংস্কৃতিক রাজনীতি ও বাংলাদেশ (ঢাকা : সংহতি প্রকাশন, প্রথম প্রকাশ : ২০২২), পৃ. ৩৪।

[5]. আলতাফ পারভেজ, মুজিব বাহিনী থেকে গণবাহিনী (ঢাকা : ঐতিহ্য, প্রথম প্রকাশ : ২০১৫), পৃ. ২১৪-২১৬।

[6]. ফরহাদ মজহার, নববর্ষ সর্বজনীনতা ও সাম্প্রদায়িকতা, দৈনিক যুগান্তর, ১৬ই এপ্রিল ২০১৪।

[7]. আল-মামুন, সিনেমার সাংস্কৃতিক রাজনীতি (ঢাকা : কথাপ্রকাশ, প্রথম প্রকাশ, ২০২৩), পৃ. ১৭৩।

[8]. প্রাগুক্ত, পৃ. ১৮৬-১৮৭।

[9]. হায়দার আকবর খান রনো, ধর্মীয় মৌলবাদ বনাম বাঙালী সংস্কৃতি, প্রথম আলো, ১৩ই মে ২০১৭।

[10]. মৌলবাদকে পথে নেমে মোকাবিলা বাংলাদেশে, আনন্দবাজার, ১৫ই এপ্রিল ২০১৮।(www.anandabazar.com/amp/bangladesh

/bangladesh-rallies-usher-in-bengali-new-year-1.787099)

[11]. সলিমুল্লাহ খান, স্বাধীনতা ব্যবসায় (ঢাকা : আগামী প্রকাশনী, তৃতীয় মুদ্রণ : ২০২১), পৃ. ৯৫।






ফ্রান্স ও স্পেনে হিজাব নিষিদ্ধ
মিয়ানমার ও ভারতের নাগরিকত্ব আইন বাংলাদেশের জন্য বড় হুমকি - জামালউদ্দীন বারী
শিক্ষা আইন ২০১৬-এর খসড়ার উপর আমাদের মতামত - মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
আরাকানে পুনরায় বিপন্ন মানবতা - ড. আহমাদ আব্দুল্লাহ ছাকিব
তাবলীগ জামাতে সংঘর্ষ
গ্লোবাল টাইগার সামিট
হিজাব ও ঔপনিবেশিকতা : প্রেক্ষিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় - মুহাম্মাদ আবূ হুরায়রা ছিফাত
মূর্তি, ভাস্কর্য ও সমকালীন প্রসঙ্গ - ড. আহমাদ আব্দুল্লাহ ছাকিব
ফারাক্কা-রামপাল : বাংলাদেশ ও ভারত সম্পর্কের বাধা - আনু মুহাম্মদ, বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ
ফিলিস্তীনীদের কান্না কবে থামবে? - শামসুল আলমশিক্ষক, আল-মারকাযুল ইসলামী আস-সালাফী, নওদাপাড়া, রাজশাহী।
উপকূলীয় এলাকা কি বিলীন হয়ে যাবে? - অনিমেষ গাইন, শিবলী সাদিক, মফিজুর রহমান
মিয়ানমার এখন বাংলাদেশকে দূষছে - এ কে এম যাকারিয়া
আরও
আরও
.