এপ্রিল মাসের শেষ পক্ষে এসে হঠাৎ করেই বিশ্বের প্রায় সকল প্রভাবশালী গণমাধ্যমের সংবাদ শিরোনামে উঠে আসে বাংলাদেশ। তবে এ শিরোনামে আসা কোন অর্জনের জন্য নয়।
গার্ডিয়ানের মতে, ‘বাংলাদেশে ভুতুড়ে পরিবেশ বিরাজ করছে যা যুদ্ধাবস্থার থেকেও খারাপ’। গত ২৫শে এপ্রিল বিকেলে নিজ বাসায় সন্ত্রাসীদের চাপাতির আঘাতে খুন হন বাংলাদেশের প্রথম সমকামী পত্রিকা রূপবানের সম্পাদক জুলহাস মান্নান ও তার বন্ধু তন্ময়। জুলহাস সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান মজিনার প্রটোকল অফিসার ছিলেন এবং পরবর্তীতে মার্কিন উন্নয়ন সংস্থা ইউএসএইডের কমকর্তা হিসাবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। তন্ময় পেশায় মঞ্চ অভিনেতা ছিলেন। ইসলামী নামধারী সন্ত্রাসী সংগঠন আইএস এ হত্যাকান্ডের দায় স্বীকার করে। এরপর থেকে একের পর এক আন্তর্জাতিক প্রভাবশালী গণমাধ্যমগুলোর সংবাদ শিরোনামে উঠে আসে বাংলাদেশ। মার্কিন সরকার এ হত্যাকান্ডের ঘটনাকে ব্যক্তিগতভাবে নিয়েছে বলে জানায়। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি এ হত্যাকান্ডের পর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে কথা বলেন। তিনি দ্রুত এ হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনার উপর গুরুত্ব দেন। বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শিয়া ব্লুম বার্নিকাট স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সাথে দেখা করার পর গণমাধ্যমকে জানান, বাংলাদেশে আইএস আছে। তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তার এই অভিযোগ অস্বীকার করেন। প্রধানমন্ত্রী এ হত্যাকান্ডের জন্য বিএনপি-জামায়াতকে দায়ী করে বক্তব্য দেন। তবে যুক্তরাষ্ট্রের উপ-পররাষ্ট্র সচিব এন্টনি ব্লিঙ্কেন বলেছেন, যদিও সরকার এসব হামলার জন্য বিরোধী দলকে দায়ী করছে কিন্তু এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত প্রমাণাদি নির্দেশ করছে যে, এসব হামলার জন্য চরমপন্থী গ্রুপগুলো দায়ী। এরা হ’তে পারে স্থানীয় কিংবা আইএস/আল-কায়েদার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট।
ফিনান্সিয়াল টাইমসের মতে, ২০১৩ সাল থেকে ৩ বছরে বাংলাদেশে মোট ৩৫ জন ধর্মনিরপেক্ষ লেখক, ব্লগার, প্রফেসর ও বিদেশী খুন হয়েছে। এর মধ্যে ২৩ জনের হত্যার দায় আল-কায়েদা বা আইএস স্বীকার করেছে। মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শিয়া ব্লুম বার্নিকাট স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাৎকালে ৩১ জনের হত্যার একটি তালিকা হস্তান্তর করেছেন। পুলিশ ও গোয়েন্দা সূত্র মতে, গত বছরের অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশে ২২টি সন্ত্রাসী হামলা হয়। এর বেশিরভাগ ঘটনা নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জেএমবির দ্বারা সংঘটিত। ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার ও কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের প্রধান মনীরুল ইসলাম বলেছেন, বাংলাদেশে আইএসের কোন সাংগঠনিক কাঠামো নেই। তবে আইএসের অনুসারী আছে। যারা বিভিন্ন সন্ত্রাসী ঘটনা ঘটিয়ে আইএসের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করছে। কেউ কেউ আইএসের নাম দাবী করে অপপ্রচার চালাচ্ছে বলেও তিনি জানান।
সন্ত্রাসীরা আইএসের অংশ কি-না তা নিশ্চিত হ’তে হয়তো আরো অনুসন্ধান প্রয়োজন। তবে এ কথা অস্বীকার করা যাবে না যে, যারাই এই সন্ত্রাসের সঙ্গে যুক্ত বাংলাদেশে তাদের শক্ত ও গভীর নেটওয়ার্ক রয়েছে। কেননা বাংলাদেশে কবে, কোথায়, কে, কিভাবে ইসলামের বিরুদ্ধাচরণ করেছে তা দেশের অনেক সচেতন মানুষের অজ্ঞাত থাকলেও সন্ত্রাসীরা তাদের কুল ঠিকুজিসহ অবগত। একইসাথে দীর্ঘদিন ধরে একের পর এক একই ধরনের সন্ত্রাস পরিচালনা করে ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকায় এ কথা বলা হয়তো অনুচিত হবে না যে, এর সাথে দেশের প্রভাবশালী মহলের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। অন্যদিকে হামলার পর কয়েক মিনিটের মধ্যে যেভাবে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোতে দায় স্বীকার ও প্রচার প্রোপাগান্ডা চালানো হয় তাতে এ কথাও মনে করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে যে, হামলাকারীরা বিচ্ছিন্ন নয়, তাদের সাথে আন্তর্জাতিক মহলের গভীর যোগাযোগ রয়েছে। পুলিশের কাউন্টার টেররিজম কর্মকর্তা যতই অস্বীকার করুন, আইএস নামধারীরা কিন্তু বাংলাদেশ বিষয়ে তাদের প্রচার ও বক্তব্য ক্রমশ স্পষ্ট ও আরো শক্তিশালী করছে। সম্প্রতি বিভিন্ন গণমাধ্যমে তাদের বরাত দিয়ে প্রকাশিত তথ্যে এর প্রমাণ মিলছে। যেমন আল-কায়েদার কথিত ভারতীয় উপমহাদেশ শাখার মুখপাত্র মুফতী আবদুল্লাহ আশরাফের পক্ষ থেকে জুলহাস হত্যার দায় স্বীকার করে টুইটে বলা হয়, ‘আলহামদুলিল্লাহ! আল্লাহ তা‘আলার অনুগ্রহে আনছার আল- ইসলামের দুঃসাহসী মুজাহিদীনরা বাংলাদেশে সমকামী প্রসারের পথিকৃৎ, সমকামীদের গুপ্ত সংগঠন রূপবান-এর পরিচালক জুলহাস মান্নান ও তার সহযোগী সামির মাহবূব তন্ময়কে হত্যা করেছেন। শুধু তাই নয় সংগঠনটি তার পরবর্তী টার্গেট সম্পর্কে নিজস্ব ওয়েবসাইটে জানিয়েছে, কে হবে আমাদের পরবর্তী নিশানা- সেই তালিকায় ৮টি পর্যায় রয়েছে।
জঙ্গি সংগঠনটির মতে, এই তালিকাভুক্ত যে কোন ব্যক্তিকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেওয়ার কারণ, তারা ইসলামকে অবমাননা করছে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘আল্লাহ ও আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) ও দ্বীন ইসলামকে হেয়কারী যে কোন ব্যক্তি তাদের পরবর্তী নিশানায় রয়েছে। হামলার নিশানা শুধু তারা যারা ‘নাস্তিকতা’ ও ‘মুক্তচিন্তা’ চর্চার আড়ালে রাসূল ও দ্বীন ইসলামকে নিয়ে কটূক্তি করছে’। খুনের তালিকায় থাকছে ‘আল্লাহ ও তাঁর রাসূল এবং দ্বীন ইসলামকে হেয়কারী, কটূক্তিকারী এবং তাদের রক্ষাকারী, সাহায্যকারী, তাদের আর্থিক-সাংগঠনিক-বুদ্ধিবৃত্তিক মদদদাতা ও পৃষ্ঠপোষক। এরকমই ৮টি পর্যায় উল্লেখ করেছে জঙ্গি সংগঠনটি। বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ ও স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকা, মেয়র-মোড়ল বা মাতববর, কোন প্রতিষ্ঠানের প্রধান কিংবা আইনজীবী, বিচারক ও চিকিৎসকদের বিশেষ শ্রেণীতে ভাগ করে হুমকি দেওয়া হয়েছে। ধর্মের সমালোচনা করা গল্প লেখক, ঔপন্যাসিক, কবি, বুদ্ধিজীবী, কোন পত্রিকার সম্পাদক, সাংবাদিক, নাট্যকার, সিনেমা প্রযোজক ও অভিনেতা-অভিনেত্রীদেরও হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে। আনছার আল-ইসলাম জানিয়েছে, ‘বাংলাদেশে বসবাসকারী কোন হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ও সাধারণ মুসলমানের চিন্তার কারণ নেই। শুধুমাত্র যারা ইসলামকে আঘাত করবে তাদেরই সরিয়ে দেওয়া হবে’।
বাংলাদেশে আইএস আছে কি নেই সে বিচারের আগে আইএসের উৎপত্তি ও পৃষ্ঠপোষক সম্পর্কে একটু আলোকপাত প্রয়োজন। আইএস বা ইসলামিক স্টেটস বা আইএসআইএসের পুরো নাম ‘ইসলামিক স্টেটস ইন ইরাক এন্ড সিরিয়া’ বা ‘ইসলামিক স্টেটস অব ইরাক এন্ড আশ-শাম’। আইএস আবার কোথাও আইএসআইএল বা ‘ইসলামিক স্টেটস অব ইরাক এন্ড দ্য লেভান্ট’ নামেও পরিচিত। আইএসের অন্তর্ভুক্ত একটি জঙ্গিগোষ্ঠীর নাম ‘দায়েশ’। আরবীতে এর পুরো নাম ‘আদ-দাওলা আল-ইসলামিয়া ফিল ইরাক ওয়াশ-শাম’। মধ্যপ্রাচ্যে একটি খেলাফত রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ২০১৪ সালে এই জঙ্গিগোষ্ঠী আত্মপ্রকাশ করে। কিন্তু কারা এর পেছনে? প্রথমেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার কথা শোনা যাক। ভাইস নিউজকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে ওবামা জানিয়েছেন, ইরাকে বুশ প্রশাসনের সামরিক অভিযানের ফলেই জঙ্গিগোষ্ঠী ‘ইসলামিক স্টেট’ (আইএস)-এর দ্রুত উত্থান ঘটেছে। অবশ্য এর সম্পূর্ণ বিপরীত কথা বলেছেন রিপাবলিকান দলের সম্ভাব্য প্রেসিডেন্ট প্রার্থী স্যান্টোরাম। আমেরিকার ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যের ওরল্যান্ডোতে রিপাবলিকান দলের এক সভায় স্যান্টোরাম বলেন, সিরিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যে আইএস সৃষ্টির জন্য প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন দায়ী। তিনি দাবী করেন, মার্কিন জেনারেল ও সামরিক উপদেষ্টাদের পরামর্শ উপেক্ষা করে হিলারি ও ওবামা এই সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে সৃষ্টি করার রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। কিউবার সাবেক প্রেসিডেন্ট ফিদেল ক্যাস্ত্রো আইএসের উত্থানের পেছনে ইসরাঈল ও যুক্তরাষ্ট্রকে দায়ী করেছেন। কিউবার রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থায় প্রকাশিত ক্যাস্ত্রোর লেখা এক প্রবন্ধের বরাত দিয়ে ‘রাশিয়া টুডে’সহ বিভিন্ন গণমাধ্যম এ সংবাদ প্রকাশ করে। ক্যাস্ত্রো তার প্রবন্ধে লিখেছেন, ‘ইসরাঈলী গোয়েন্দা সংস্থা ‘মোসাদ’ ও মার্কিন সিনেটর ‘জন ম্যাককেইন’ ষড়যন্ত্র করে আইএস গঠন করেছে’। আলোচিত ও পলাতক সাবেক মার্কিন গোয়েন্দা এডওয়ার্ড স্নোডেন বলেছেন, ব্রিটিশ, আমেরিকা ও ইসরাঈলী গোয়েন্দা সংস্থা একত্রে আইএস সৃষ্টি করেছে। প্রায় একই রকম কথা বলেছেন, কানাডার একটি গবেষণা সংস্থা। তার প্রকাশিত এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, আইএস মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থারই সৃষ্টি। আর সহযোগিতা করেছে ব্রিটেনের এমআই-৬, ইসরাঈলের মোসাদ, পাকিস্তানের ইন্টার-সার্ভিসেস ইন্টেলিজেন্স (আইএসআই), সঊদী আরবের জেনারেল ইন্টেলিজেন্স প্রেসিডেন্সি (জিআইপি) গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। অন্যদিকে সঊদী আরবের গ্রান্ড মুফতি শায়খ আব্দুল আযীয শেখ বলেছেন, ইসলামী চরমপন্থী সংগঠন আইএস ইসরাঈলের একটি অংশ। শুধু তাই নয়, আইএসে ইসরাঈলী সৈন্যরা যুদ্ধ করছে, আহত আইএস সদস্যদের উদ্ধার করে চিকিৎসা দেয়ার খবর ও ছবিও গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। সে কারণেই সম্ভবত মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকেও বলতে শোনা যায়, তালেবান আমাদের শত্রু নয়। অন্যদিকে ২০১৪ সালের ২১শে জুলাই গার্ডিয়ানে প্রকাশিত এক রিপোর্টে বলা হয়েছে,
‘Nearly all of the highest-profile domestic terrorism plots in the United States since 9/11 featured the 'direct involvement' of government agents or informants.’
উপরোক্ত আলোচনা থেকে স্পষ্ট ধারণা করা যায় যে, কারা আল-কায়েদা বা আইএসের সৃষ্টিকর্তা এবং কারা তাদের মিত্র শক্তি। অপরদিকে তারাই আবার আইএস/আল-কায়েদা দমনের নামে দেশে দেশে বোমা হামলা করছে। পরামর্শ, প্রশিক্ষণ ও অর্থ সহায়তা করছে। কাজেই একই শক্তি যখন বলছে বাংলাদেশে আইএস রয়েছে তখন সে দাবীকে সরাসরি উড়িয়ে দেয়ার আগে গুরুত্ব দিয়ে ভেবে দেখা যরূরী। প্রশ্ন হচ্ছে, আইএস না থাকার সরকারী দাবী সত্য বলে ধরে নিলে সেক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র যদি কিছু ছবি দেখিয়ে প্রশ্ন করে, এখন থেকে বছর দু’য়েক আগ পর্যন্ত বাংলাদেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বিভিন্ন ব্যক্তিকে ধরে এনে তাদের বুকের উপর আইএসের বড় বড় নেতার স্ট্যাগ লাগিয়ে যে গণমাধ্যমে হাযির করত, তারা কারা ছিল? কী উত্তর দিবেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী? অন্যদিকে তার সহকর্মী তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু ভারতের প্রভাবশালী গণমাধ্যম ‘দি হিন্দুকে’ দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে প্রশিক্ষণ নেয়া আট হাযার আল-কায়েদা সদস্য বাংলাদেশে ফিরে এসে জঙ্গি তৎপরতার সাথে যুক্ত রয়েছে। এক্ষণে কার কথা বিশ্বাস করবে জনগণ?
বৈরী রাজনৈতিক পরিবেশে তাৎক্ষণিক লাভালাভের চিন্তায় প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলো এতটাই অন্ধ হয়ে পড়ে যে, তার চূড়ান্ত বা দীর্ঘমেয়াদী কুফল সম্পর্কে তারা বেখবর থেকে যায়। এ অবস্থায় বাংলাদেশে দেশপ্রেমহীন, প্রতিহিংসাপরায়ণ ও আত্মঘাতী রাজনীতির সুযোগ নিচ্ছে বাংলাদেশবিরোধী ও ইসলামবিরোধী শক্তিগুলো। তারা চলমান সহিংস জঙ্গি তৎপরতাকে প্রতিহিংসাপরায়ণ রাজনীতির পাল্লায় তুলে দিয়ে নিজেদের লক্ষ্যে এগিয়ে চলেছে। কিন্তু বাংলাদেশের রাজনীতিবিদদের সেদিকে ভ্রূক্ষেপ নেই। তারা সাময়িক লাভ তোলার হিসাবে ব্যস্ত। ২০০০ সালের মার্চ মাসে প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন একদিনের সফরে বাংলাদেশে আসেন। তৎকালীন বাংলাদেশ সরকার তথ্য, পররাষ্ট্র ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সহায়তায় দু’টি পুস্তিকা প্রকাশ করে, যা প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন ও তার সহযোগী সফরসঙ্গী কর্মকর্তা ও সাংবাদিকদের মাঝে বিতরণ করা হয়। এ দু’টি বইয়ের নাম ছিল যথাক্রমে ‘Politices of Bangladesh: Democracy vs religious fundamentalism’ এবং ‘Fang of fantices’ বই দু’টিতে বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ বিস্তারের জন্য বিএনপি ও তার সহযোগী শক্তিগুলোকে দায়ী করে তাদের সাথে আফগানিস্তানের আল-কায়েদার সম্পর্কের কথা বলা হয়। বাংলাদেশ সরকার থেকে এ জাতীয় প্রচারণার পর প্রেসিডেন্ট ক্লিনটন তার বাংলাদেশ সফর সংক্ষিপ্ত করেন ও সাভার স্মৃতিসৌধে যাওয়া বাতিল করেন। এরপর ২০০২ সালে বার্টিল লিন্টনার নামে এক সাংবাদিক পরিচয় গোপন করে বাংলাদেশ সফর করে যাওয়ার পর, দেশে ফিরে ২০০২ সালের ৪ঠা এপ্রিল এক ইংরেজী সাপ্তাহিকে বাংলাদেশ সফরের অভিজ্ঞতার উপর ‘Bangladesh: a cocoon of terror’ শিরোনামে একটি প্রবন্ধ রচনা করেন। প্রবন্ধটির শুরুতেই তিনি বলেন, ‘Beware of Bangladesh- Rising fundamentalism and religious intolerance are threatening secularism and moderate Islam’. একযুগ পর বিদেশীরা বাংলাদেশ ভ্রমণে নিজ দেশের নাগরিকদের নোটিশ করছেন, ‘Beware of Bangladesh’. এঘটনার বছর দুয়েক পর হিরন্ময় কার্লেকার নামের এক ভারতীয় সাংবাদিক তো রীতিমতো বই লিখে বসেন, ‘‘Bangladesh : The Next Afghanistan?’’ আজকের প্রেক্ষাপটে অনেকেই হয়তো হিরন্ময় কার্লেকারকে জ্যোতিষী ভেবে ভুল করতে পারেন। শুরু থেকেই আমি বহুবার বিভিন্ন প্রবন্ধে, পুস্তকে বলার চেষ্টা করেছি, জঙ্গিবাদ-এক ধরনের আগুন খেলা। এর পরিণাম শুভ হ’তে পারে না। কিন্তু বাংলাদেশের রাজনীতিবিদ ও আমলাতন্ত্র সেই সতর্কতায় গুরুত্ব দেয়ার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেননি।
এখনো যে খুব সতর্ক হয়েছেন সেটাও বলা যাচ্ছে না। কারণ এখনো ঘটনা ঘটার সাথে সাথে রাষ্ট্রের বিভিন্ন পর্যায় থেকে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষগুলোর দিকে আঙ্গুল তোলা হচ্ছে। অন্যদিকে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষও কাউন্টার করতে বলে দিচ্ছেন, বিতর্কিত নির্বাচনে বিজয়ী সরকার বিশ্বব্যাপী নিজের ক্ষমতায় থাকার গ্রহণযোগ্যতা সৃষ্টি করতে পরিকল্পিতভাবে জঙ্গিবাদ সৃষ্টি করছে। তারা আরও পরিষ্কার করে বলছেন, যখন যখন সরকার বিপদে পড়ে, ঠিক তখন তখন একজন করে ব্লগার হত্যা হয়।
জঙ্গিবাদ বিষয়ক বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ প্রতিষ্ঠায় যুক্ত ষড়যন্ত্রকারী শক্তিগুলোর এটা এক গভীর নীল নকশা। সুগভীর চক্রান্তের নীল নকশায় তারা এমনভাবে নিজেদের কর্মপরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়ন করছে যাতে সাময়িকভাবে কখনো সরকার, কখনো বিরোধী রাজনৈতিক দল তা থেকে ফায়দা লুটছে। এতে তাদের নিয়োগী দেশীয় শক্তির সহায়তা থাকা অসম্ভব নয়। অপ্রিয় হ’লেও সত্য, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে গুড়িয়ে দেয়ার পর দেশের মধ্যে সরকার পরিবর্তনে গণতান্ত্রিক শক্তির অনুপস্থিতিতে সরকার বিরোধী ও ক্ষতিগ্রস্ত জনগণের কোন অংশের মধ্যে সরকার পরিবর্তনে অগণতান্ত্রিক পন্থা ‘মুক্তির কান্ডারী’ হিসাবে গণ্য হয়ে থাকতেও পারে।
বিশ্বব্যাপী জঙ্গিবাদের পৃষ্ঠপোষকরা এভাবেই একের পর এক রাষ্ট্রকে গ্রাস করেছে। স্বৈরাচারী আসাদ সরকারকে উৎখাতের নামে বিশ্ব সভ্যতার প্রাচীন বেলাভূমি সিরিয়াকে ধ্বংস করে দিচ্ছে আইএসসহ বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠন। অন্যদিকে তাদের নির্মূলে নিজের দেশকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে সিরীয় সেনাবাহিনী ও আসাদ অনুগতরা। এভাবেই প্রাচীন বিশ্ব সভ্যতার সবচেয়ে সমৃদ্ধ রাষ্ট্রটি আজ গোরস্থানে পরিণত হয়েছে।
কোন সন্ত্রাসী সংগঠনের নাম ইসলামী হ’লেই সে সংগঠন জিহাদী হয় না। যেমন কারো নাম মুজাহিদুল ইসলাম হ’লে তিনি ইসলামের মুজাহিদ না হয়ে কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতিও হ’তে পারেন। আব্দুর রব নামধারী ব্যক্তি রবের বা আল্লাহর গোলাম না হয়ে বৈপ্লবিক সমাজতন্ত্রের রাহবার হ’তে পারেন। ঠিক তেমনি আনছারুল্লাহ বাংলা বাহিনী আল্লাহর আনছার না হয়ে আনছারুল ইবলিস হ’তে পারে। আল্লাহর দল নাম নিয়ে যে কেউ শয়তানের পায়রাবী করছে না তাই বা কে বলতে পারে। এসব নিয়ে তদন্ত বর্তমান কাউন্টার টেররিজম করে না। কেননা কাউন্টার টেররিজম পরিচালিত হয় পাশ্চাত্যের থিওরি ও প্রশিক্ষণে। কাউন্টার টেররিজমের অপারেটররা এমনভাবে ঘটনা ঘটান যাতে আপাতদৃষ্টিতে ইসলামপন্থীদের ওপর দোষ চাপানো সহজ হয়। এটি নতুন কোন কৌশল নয়। ইসলামের বিরুদ্ধে এরকম ঘটনার অনেক প্রমাণ ইতিহাসে বর্ণিত রয়েছে। ১৯৩০ সালের ১৮ই এপ্রিল মাস্টারদা সূর্যসেন চট্টগ্রামের অস্ত্রাগার লুণ্ঠন করেন। তার এই দিনটিকে বিশেষভাবে বেছে নেয়ার কারণ এদিন চট্টগ্রামে সর্বভারতীয় মুসলমানদের একটি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। এই সম্মেলন উপলক্ষে ৬শ’ সদস্যের এক স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী গড়ে তোলা হয়। তাদের চেনার জন্য বিশেষ পোষাক ও মাথায় পরিধানের জন্য তুর্কী টুপি তৈরী করা হয়। সূর্যসেনের বাহিনী অস্ত্রাগার লুণ্ঠনের সময় একই ধরনের পোষাক ও টুপী পরিধান করে এবং পালাবার পথে এ সকল পোষাক ও টুপী ছড়িয়ে-ছিঁটিয়ে ফেলে যায়, যাতে ব্রিটিশ সরকার অস্ত্রাগার লুণ্ঠনের জন্য মুসলমানদের দায়ী করতে পারে এবং তাদের বিরুদ্ধে অপারেশন পরিচালনা করে। শুরুতে সূর্যসেনের পরিকল্পনা মতো ঘটেছিলও তাই। তবে তৎকালীন বিভাগীয় ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা খান বাহাদুর আহসানউল্লাহর তদন্তে প্রমাণিত হয় মুসলমানরা নয়, এটি সূর্যসেনের বাহিনীর কাজ। এ বাহিনীর প্রত্যেক সদস্যকে মাথার ওপর গীতা রেখে বুকের রক্ত কালীদেবীর পায়ে অঞ্জলি দিয়ে শপথ নিতে হ’ত। খান বাহাদুর আহসানউল্লাহর তদন্তে সূর্যসেনের নাম প্রকাশ পাওয়ায় তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে তার বিশ্বস্ত অনুচর হরিপদ ভট্টাচার্যকে তাকে হত্যার মিশনে প্রেরণ করেন। ১৯৩১ সালের অক্টোবর মাসে খুব কাছে থেকে গুলি করে হরিপদ খান বাহাদুর আহসানউল্লাহকে খুন করে। বাংলাদেশে জুলহাস মান্নানকে কারা হত্যা করেছে তা এখনো জানা যায়নি। এ প্রেক্ষাপটে ইতিহাসের কিছু ঘটনাবলীর স্মরণ অপ্রাসঙ্গিক নয়। ব্রিটিশ গোয়েন্দা লরেন্স অভ এরাবিয়া, জার্মান গোয়েন্দা কলিন্স হামফ্রে, কিংবা হিটলারের পোল্যান্ড আক্রমণের ইতিহাসের মতো পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জিয়াউল হক হত্যাকান্ড খুব বেশী দূরের নয়। মার্কিন রাষ্ট্রদূত আরনল্ড রাফায়েল এবং কাউন্সিলর সেদেশের সেনাবাহিনীর ব্রিগ্রেডিয়ার পদমর্যাদার অফিসারসহ প্রেসিডেন্ট জিয়াউল হকের বহনকারী বিমান উড়িয়ে দেয়ার জন্য পাকিস্তানীরা সিআইএকে দায়ী করে থাকে। ২০০২ সালে ওয়ার্ল্ড স্ট্রিট জার্নালের দক্ষিণ এশীয় ব্যুরো চিফ ড্যানিয়েল পার্লকে পাকিস্তান থেকে অপহরণ করে গুয়ান্তানামো বে তে বন্দী পাকিস্তানী জঙ্গিদের মুক্তি দাবী করা হয়। পাকিস্তান পরে অপহরণকারীকে আটক করতে সক্ষম হয়। অপহরণকারী ওমর সাঈদ শেখ ব্রিটিশ গোয়েন্দা সংস্থা এমআই সিক্সের চর ছিলেন।
সে কারণে বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটটি একবার দেখা প্রয়োজন। মার্কিন ডেপুটি সেক্রেটারী এন্টনি ব্লিঙ্কেন ৩০শে এপ্রিল গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ মোকাবেলায় ভারতের সাথে একযোগে কাজ করছে। এদিকে পরিবর্তিত বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে ভারত-মার্কিন সামরিক সহযোগিতা এক ভিন্ন মাত্রায় পৌঁছে গিয়েছে। এক সময় বাংলাদেশের চট্টগ্রামে মার্কিন কোম্পানির প্রাইভেট টার্মিনাল নির্মাণে যে ভারতের প্রবল আপত্তি ছিল, সেই দেশটি এখন ভারত মহাসাগরে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে যৌথ সামরিক টহল দিচ্ছে। শুধু তাই নয়, ভারত এখন নিজ দেশের নৌঘাঁটিগুলোতে মার্কিন যুদ্ধ জাহাজগুলো নোঙ্গর করার অনুমতি দিচ্ছে। গুরুত্বপূর্ণ মালাক্কা প্রণালীর প্রবেশমুখে কৌশলগত অবস্থানে ভারতীয় দ্বীপ আন্দামান ও নিকোবরকে চায়না নিজেদের বলে দাবী করার পর থেকে ভারত মহাসাগরে নিরাপত্তায় এ নতুন মাত্রা যুক্ত হয়েছে। ভারতীয় নিরাপত্তা সূত্রের দাবী, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মালাক্কা প্রণালীকে নিরাপদ রাখতে আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জকে নিজেদের অংশ বলে দাবী করার পর ভারত মহাসাগরে চাইনিজ সাবমেরিন টহল বৃদ্ধি করেছে।
প্রতিমাসে ৩/৪ বার করে চাইনিজ সাবমেরিনগুলো গোপনে ভারতীয় পানিসীমায়, আন্দামানের খুব কাছ দিয়ে ঘুরে যাচ্ছে। দ্বীপ দু’টিতে ভারতীয় নৌবাহিনীর শক্তি বিপুল পরিমাণে বৃদ্ধি করার পরও চাইনিজ সাবমেরিনগুলোর এই গোপন অভিযান তারা ঠেকাতে পারছে না। ফলে নিরুপায় হয়ে ভারত দ্বীপ দু’টির পোতাশ্রয়ে মার্কিন নেভির জাহাজ নোঙ্গর করার অনুমতি দিয়েছে, এমনকি তারা ভারতীয় পানিসীমায় যৌথ টহলেও নিয়মিত অংশ নিচ্ছে। এ থেকে নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞগণ ধারণা করছেন, বঙ্গোপসাগরে মার্কিন নেভির অবস্থানের বিষয়ে ভারতীয় প্রচলিত মনোভাবেও বড় ধরনের পরিবর্তন ঘটে থাকতে পারে। বিষয়টি আঁচ করেই হয়তো চায়নাও তার আগের অবস্থান থেকে সোনাদিয়া দ্বীপে প্রস্তাবিত গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণে এখন ভারতকে সঙ্গী করেও এগুতে পারছে না। এসবের সাথে বাংলাদেশের জাতীয় সার্বভৌমত্বের প্রশ্ন ওতপ্রোতভাবে জড়িত।
ভারত মহাসাগর কেন্দ্রিক বিশ্ব রাজনীতির পরাশক্তিগুলোর এই কৌশলগত লড়াইয়ে বাংলাদেশ ভৌগলিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে। বাংলাদেশের জঙ্গিবাদ প্রতিষ্ঠার ষড়যন্ত্রের সাথে বৈশ্বিক রাজনীতির ওতপ্রোত সম্পর্কের কথা গত একযুগ ধরে আমি বিভিন্ন লেখার মাধ্যমে বহুবার বলার চেষ্টা করেছি। অরক্ষিত সমুদ্র সীমান্ত ও দুর্গম সীমান্তে দুর্বল পাহারার সুযোগে বাংলাদেশের কোন পোর্ট এন্ট্রি ছাড়াই কক্সবাজার ও বান্দরবানে বিদেশীদের গমনাগমন ভাববার বিষয় বটে। আইএস নামধারীরা পরিষ্কার করে বলেছে, তারা বাংলাদেশে ঘাঁটি গেড়ে প্রতিবেশী দেশ ভারত ও মিয়ানমারে হামলা পরিচালনা করতে চায়। আইএসের ম্যাগাজিন দাবীকের ১৪তম সংস্করণ প্রকাশিত হয় ১৩ই এপ্রিল। যেখানে বাংলা খিলাফতের আমীর পরিচয় দিয়ে শেখ আবু ইব্রাহীম আল-হানীফের সাক্ষাৎকার ছাপা হয়। এতে বলা হয়, বাংলাদেশে স্থানীয় মুজাহিদীনের সহায়তায় ঘাঁটি স্থাপন করে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত ও মিয়ানমারে গেরিলা আক্রমণের পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। কিন্তু সেটা কিভাবে করবে তা তারা পরিষ্কার করে বলেনি। হানীফের এ ঘোষণার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার ও কথা বলার সুযোগ প্রতিবেশীদের করে দিয়েছে তারা। বর্তমানে বাংলাদেশ যেভাবে রোড, গ্যাস, ইলেকট্রিসিটি, সাবমেরিন ক্যাবল প্রভৃতি সেক্টরে ভারতের সাথে কানেকটিভিটি গড়ে তুলছে তাতে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে এসব নেটওয়ার্ক ভবিষ্যতে জঙ্গিবাদের কারণে প্রবল নিরাপত্তা ঝুঁকি করতে পারে। এ ধরনের প্রেক্ষাপট বাংলাদেশবিরোধী আন্তর্জাতিক শক্তিগুলোর জন্য লোভনীয় সুযোগ সৃষ্টি করতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র এবার সরাসরি বলেই বসেছে, বাংলাদেশের একার পক্ষে জঙ্গীবাদ মোকাবেলা সম্ভব নয়। তাই দেশের সরকার, রাজনীতিবিদ, আমলাতন্ত্র, পেশাজীবী ও জনগণকে জঙ্গীবাদ সমস্যার স্বরূপ উন্মোচন ও মুক্তির উপায় নির্ধারণে এখনই গভীরভাবে চিন্তা-ভাবনা করতে হবে। (সংকলিত)