[সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয় আইন সেল-এর যুগ্ম সচিব কর্তৃক ০৩.০৪.২০১৬ইং তারিখ স্বাক্ষরিত ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয় যে, সরকার প্রণীত শিক্ষা আইন ২০১৬-এর খসড়া শিক্ষাবিদ ও সমাজের সকল স্তরের জনগণের এবং দেশের সকল সরকারী ও বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীগণের কোন মতামত বা পরামর্শ থাকলে নিম্নোক্ত ছক মোতাবেক আগামী ১০.০৪.২০১৬ইং তারিখের মধ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নিম্নবর্ণিত ই-মেইল নম্বরসমূহের যেকোন একটিতে মতামত দেওয়ার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা যাচ্ছে। ‘ছক’-২ মতামত প্রদানকারী দপ্তর/সংস্থা/ব্যক্তি...।’
অত্যন্ত দ্রুত সময়ে ৬৭টি ধারা ও অসংখ্য উপধারা সম্বলিত বিশাল খসড়া আইনের উপর মন্তব্য করা নিঃসন্দেহে দুরূহ ব্যাপার। এরপরেও ১০ তারিখ সকালে বিজ্ঞপ্তিটি হাতে পেয়ে বিকালে অফিস টাইমের মধ্যেই মন্তব্য লিখে ই-মেইল যোগে প্রেরণ করা হয়। কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিচালক সংস্থা হিসাবে আমরা নিম্নোক্ত মতামত সরকার বরাবর পেশ করি।]
প্রথম অধ্যায়
ধারা ৪(১) : ৪ হইতে ৬ বছর পর্যন্ত বয়সের শিশুদের প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার মেয়াদ হইবে ২ (দুই) বছর’।
ধারা ৫(১) : সকল প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ও ইবতেদায়ী মাদরাসায় প্রাক-প্রাথমিক স্তর থাকিতে হইবে এবং সকল শিশুর জন্য প্রাক-প্রাথমিক ও প্রাথমিক শিক্ষা অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক হইবে এবং এই শিক্ষা শিশুর অধিকার হিসাবে গণ্য হইবে’।
মতামত : ৪ হ’তে ৬ বছর বয়স পর্যন্ত শিশুর জন্য প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা যাবে না। তাতে শিশুর স্বাস্থ্য ও মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হবে। সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রাথমিক শিক্ষা অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক করা সম্ভব হ’লেও বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ইবতেদায়ী মাদরাসা সমূহে এটি আদৌ সম্ভব নয়। কারণ এর সাথে শিক্ষক বেতন ও প্রতিষ্ঠানের ভৌত কাঠামোর বিষয়টি জড়িত।
ধারা ৫(৪) : সকল শিশুর জন্য বৈষম্যহীন শিক্ষাক্রম প্রণয়ন করিবে। যাহাতে লিঙ্গ, ভাষা, বর্ণ, ধর্ম, নৃ-গোষ্ঠী ও প্রতিবন্ধিতা অথবা অন্য কোন কারণে শিশুর প্রতি কোনরূপ বৈষম্য সৃষ্টি না হয়’।
মতামত : এটি অবাস্তব। কেননা লিঙ্গ, ভাষা, বর্ণ ও ধর্মীয় বৈষম্য থাকবেই। এই সকল বৈষম্য অক্ষুণ্ণ রেখেই শিশুকে শিক্ষা দিতে হবে।
ধারা ৭(১) : প্রাক-প্রাথমিক, প্রাথমিক ও ইবতেদায়ী শিক্ষার জন্য ধারাভিত্তিক আবশ্যিক ও ঐচ্ছিক বিষয় ব্যতীত নির্ধারিত কোর বিষয়সমূহের শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যসূচী হইবে অভিন্ন’।
মতামত : প্রাথমিক ও ইবতেদায়ী শিক্ষার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য পৃথক। অতএব উভয়টির স্বাতন্ত্র্য বজায় রাখতে হবে।
ধারা ৭(২) : প্রাথমিক ও ইবতেদায়ী শিক্ষার স্তরসমূহে বাঙালী সংস্কৃতি, ইতিহাস, স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং বিভিন্ন নৃ-গোষ্ঠীর স্ব স্ব বিষয়সমূহ নির্দিষ্ট শ্রেণীর পাঠ্যসূচী অনুযায়ী নির্ধারিত বিষয়সমূহ বাধ্যতামূলক হইবে’। ধারা ৭(৪) : প্রাথমিক স্তর, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড কর্তৃক প্রণীত, বাংলা, ইংরেজী, ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষা, বাংলাদেশ স্টাডিজ, বিশ্ব পরিচয়, গণিত, পরিবেশ পরিচিতি, তথ্য প্রযুক্তি এবং বিজ্ঞান বিষয়ের পাঠ্যপুস্তকসমূহ বাধ্যতামূলক হইবে’।
মতামত : বাংলা, আরবী, ইংরেজী, গণিত এবং ধর্মীয় ও নৈতিক বিষয়ের বাইরে বাকীগুলি পরিহার করতে হবে। কেননা এতে শিশুদের উপর সিলেবাসের বোঝা ভারি করা হবে।
ধারা ৭(৩) : কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান উপধারা (১) ও (২)-এ উল্লেখিত পাঠ্যসূচী লংঘন করিয়া কোন বিষয় পাঠদান করিলে অথবা উক্ত পাঠ্যসূচী অনুযায়ী পাঠদান না করিলে উহা এই আইনের অধীন অপরাধ হিসাবে গণ্য হইবে এবং উক্ত অপরাধের জন্য তিনি অনধিক দুই লক্ষ টাকা অর্থদন্ডে বা ছয় মাসের কারাদন্ডে অথবা উভয়দন্ডে দন্ডিত হইবেন’।
মতামত : অবশ্যই বাতিল করতে হবে।
ধারা ৭(১১) : সরকার নির্ধারিত স্তর পর্যন্ত জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের মাধ্যমে শ্রেণী ও বিষয়ভিত্তিক পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন করিবে এবং উহা শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিনামূল্যে বিতরণ নিশ্চিত করিবে। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড কর্তৃক প্রণয়নকৃত পুস্তক ব্যতীত অন্য কোন পুস্তক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক পাঠ্যসূচীতে অন্তর্ভুক্ত করা যাইবে না’।
মতামত : এটাও বাতিলযোগ্য। কেননা বোর্ডের সকল বই প্রশ্নাতীত নয়। ইতিমধ্যেই বোর্ডের বিভিন্ন বই সম্পর্কে প্রচুর অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে। এরপরেও রাখতে হ’লে সেখানে অবশ্যই ইসলামী শিক্ষার জন্য হানাফী ও আহলেহাদীছ এবং অন্যান্যদের জন্য তাদের দক্ষ ব্যক্তিদের কমিটিতে নিতে হবে।
ধারা ৭(১২) : কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান উপধারা (১১)-এ উল্লেখিত বিধান লংঘন করিলে উহা এই আইনের অধীন অপরাধ হিসাবে গণ্য হইবে এবং উক্ত অপরাধের জন্য তিনি (প্রকাশক/প্রতিষ্ঠান প্রধান) অনধিক দুই লক্ষ টাকা অর্থদন্ডে বা ছয় মাসের কারাদন্ডে অথবা উভয়দন্ডে দন্ডিত হইবেন’।
মতামত : বাতিলযোগ্য।
ধারা ৮(১) : প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ইবতেদায়ী মাদরাসায় ভর্তি উপযোগী শিশুকে তাহার জন্ম নিবন্ধন সনদ বা সরকারী বা সরকার অনুমোদিত কোন প্রাক-প্রাথমিক বা প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হইতে শিক্ষা সমাপ্তির সনদ দাখিল সাপেক্ষে উপযুক্ত শ্রেণীতে ভর্তি করা যাইবে’।
মতামত : এটি অপ্রয়োজনীয়।
ধারা ৮(২) : সরকার কর্তৃক নির্ধারিত পদ্ধতিতে সমতার নীতি অবলম্বন করিয়া প্রাক-প্রাথমিকসহ প্রথম শ্রেণীতে ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন হইবে’।
মতামত : সমতার নীতি বলতে যদি লিঙ্গ সমতা বুঝায়, তবে সেটি বাতিলযোগ্য। কারণ কন্যাশিশুরা বালিকা বিদ্যালয় বা বালিকা মাদরাসায় পড়বে।
ধারা ১০(১) : প্রাক-প্রাথমিক ও প্রাথমিক শিক্ষাস্তরে কিন্ডারগার্টেন, ইংরেজী মাধ্যম, ইংলিশ ভার্সন (version) ও ইবতেদায়ী মাদরাসাসহ সকল বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন ও পরিচালনার জন্য নির্ধারিত কর্তৃপক্ষের নিকট হইতে নিবন্ধন এবং পাঠদানে উপর্যুক্ত সকল বিধি-বিধান অনুসরণ বাধ্যতামূলক হইবে’।
মতামত : এর ফলে সরকারী দুর্নীতি বাড়বে এবং বেসরকারী উদ্যোগ বন্ধ হয়ে যাবে। যাতে শিক্ষা সংকুচিত হবে।
ধারা ১০(২) : কোন ব্যক্তি উপধারা (২)-এর বিধান লংঘন করিলে উহা এই আইনের অধীন অপরাধ হিসাবে গণ্য হইবে এবং উক্ত অপরাধের জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা ব্যক্তিগণ সর্বোচ্চ তিন লক্ষ টাকা অর্থদন্ড বা ৬ (ছয়) মাস কারাদন্ড অথবা উভয়দন্ডে দন্ডিত হইবেন’।
মতামত : অবশ্যই বাতিলযোগ্য।
ধারা ১১(১-৩) : (১) সরকার ক্ষেত্রমতে জনসংখ্যার ঘনত্ব, ভৌগলিক অবস্থান, ভৌগলিক গুরুত্ব, অনগ্রসরতা, দূরত্ব প্রতিকূল যোগাযোগ ব্যবস্থা ইত্যাদি বিবেচনা করিয়া নতুন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করিতে পারিবে’। (২) নিবন্ধন ব্যতীত কোন অবস্থাতেই কোন বেসরকারী বিদ্যালয় বা মাদরাসা স্থাপন ও পরিচালনা করা যাইবে না’। (৩) কোন এলাকা বা অঞ্চলে কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনার প্রয়োজনীয়তা না থাকিলে সরকার নীতিমালা প্রণয়নপূর্বক উহা একীভূত/একত্রীকরণ/স্থানান্তর/বিলুপ্ত করিয়া দিতে পারিবে’।
মতামত : বাতিলযোগ্য। কেননা এতে সরকারী দুর্নীতি বাড়বে এবং বেসরকারী উদ্যোগ বিলুপ্ত হবে।
ধারা ১২(১) : প্রাথমিক স্তরের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের ধারাবাহিক মূল্যায়ন হইবে’।
মতামত : এটি অপ্রয়োজনীয়। এতে শিশু ও অভিভাবকের উপর মানসিক ও আর্থিক চাপ বৃদ্ধি পাবে। তাছাড়া এতে দুর্নীতি হয়ে থাকে। কেননা শিশুরা অন্যের মাধ্যমে ব্যবহারিক কাজ করে আনে। এতে শিশু অবস্থাতেই তারা দুর্নীতিতে অভ্যস্ত হয়।
ধারা ১২(৩) : প্রথম শ্রেণী হইতে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত পাবলিক পরীক্ষার পদ্ধতি, সংখ্যা ও স্তর সরকার কর্তৃক প্রণীত বিধিমালা বা নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে নির্ধারিত হইবে। তবে অষ্টম শ্রেণী শেষে একটি পাবলিক পরীক্ষা হইবে’।
মতামত : পঞ্চম শ্রেণীতে সমাপনী পাবলিক পরীক্ষা অবশ্যই বাতিলযোগ্য। অষ্টম শ্রেণীতেও পাবলিক পরীক্ষা বাতিল করা উচিত। কেননা পাবলিক পরীক্ষাগুলি শিশু মনে দুর্নীতির বীজ বপন করছে।
ধারা ১৩(২) : ইবতেদায়ী মাদরাসাসহ প্রাক-প্রাথমিক ও প্রাথমিক শিক্ষা স্তরের সকল বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এবং ধারা ১০-এর বিধান অনুসারে নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নির্বাচনের লক্ষ্যে সরকার একটি স্থায়ী ‘বেসরকারী শিক্ষক নির্বাচন কমিশন’ গঠন করিবে’।
মতামত : এটি অপ্রয়োজনীয়। এতে প্রতিষ্ঠান ব্যবস্থাপনায় বিশৃংখলা দেখা দিবে। উদ্যোক্তা ব্যক্তি ও সংস্থাকে স্বাধীনতা দিতে হবে। সরকার কেবল সহায়ক ভূমিকা পালন করবে এবং শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতাসহ অন্যান্য আর্থিক ও অবকাঠামোগত উন্নয়নে পৃষ্ঠপোষকতা দিবে।
ধারা ১৫(১-৬) : (১) সকল ধারার বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বাধ্যতামূলকভাবে ‘ব্যবস্থাপনা কমিটি’ গঠন করিতে হইবে’। (২) উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ কর্তৃক এই ধারার বিধান সাপেক্ষে বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন, মেয়াদ ও কার্যপরিধি নির্ধারিত হইবে’। (৩) একজন ব্যক্তি সর্বোচ্চ দুই মেয়াদের বেশী বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি মনোনীত বা নির্বাচিত হইতে পারিবেন না’। (৪) বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও অন্যান্য সদস্যদের মনোনয়ন, নির্বাচন, শিক্ষাগত যোগ্যতা এবং প্রাসঙ্গিক অন্যান্য বিষয়ে বিধি/নীতিমালা দ্বারা নির্ধারিত হইবে’। (৫) কর্তৃপক্ষের অনুমোদন সাপেক্ষে বিভিন্ন সরকারী, আধা-সরকারী ও স্বায়ত্বশাসিত সংস্থা কর্তৃক পরিচালিত প্রতিষ্ঠানসমূহের ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন করা যাইবে’। (৬) ব্যবস্থাপনা কমিটি যরূরী পরিস্থিতিতে স্থানীয় প্রশাসনের সহিত সমন্বয় করিয়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সংরক্ষণ এবং পরিচালনা করিবে’।
মতামত : পুরাটাই বাতিলযোগ্য।
তৃতীয় অধ্যায়
ধারা ২০(১) : মাধ্যমিক শিক্ষার স্তর হইবে নবম হইতে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত চার বৎসর মেয়াদী’।
মতামত : পূর্বের ন্যায় দশম শ্রেণী পর্যন্ত মাধ্যমিক এবং একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণীকে উচ্চ মাধ্যমিক রাখা হউক।
ধারা ২০ খ-(২) : দাখিল ও আলিম পর্যায়ে ধর্মীয় শিক্ষার পাশাপাশি বাংলা, ইংরেজী, সাধারণ গণিত, বাংলাদেশ স্টাডিজ, জলবায়ু পরিবর্তনসহ পরিবেশ পরিচিতি এবং বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়সমূহ বাধ্যতামূলক হইবে’।
মতামত : মাদরাসা শিক্ষায় ধর্মীয় শিক্ষা হবে মুখ্য। বাকী বিষয়গুলি থাকবে ঐচ্ছিক।
ধারা খ-(৩) : সরকার কওমী মাদরাসা শিক্ষার মানোন্নয়ন ও কওমী মাদরাসা শিক্ষাকে যুগোপযোগী করিবার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করিবে’।
মতামত : কওমী মাদরাসা শিক্ষা যুগোপযোগী করার ভাষাটিই আপত্তিকর। এসব মাদরাসা যারা চালান ও এখানে যাদের সন্তানরা লেখাপড়া করে, তারা প্রয়োজন মোতাবেক সিলেবাস পরিমার্জন করে থাকেন। যেভাবে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভাগীয় সিলেবাসগুলি সেখানকার শিক্ষকরা করে থাকেন। এখানে সরকারী হস্তক্ষেপ অহেতুক সমস্যা ডেকে আনবে।
চতুর্থ অধ্যায়
ধারা ৪২ : স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে সকল শিক্ষার্থীর মূল্যায়ন অভিন্ন গ্রেডিং পদ্ধতিতে হইবে এবং পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা পদ্ধতির মধ্যে সামঞ্জস্য আনয়ন করিতে হইবে’।
মতামত : গ্রেডিং পদ্ধতি বাতিলযোগ্য। এতে মেধার যথাযথ মূল্যায়ন হয়না। ছাত্রদের প্রতিযোগিতামূলক মনোভাব বিনষ্ট হয়। কেননা এতে ৮০ থেকে ১০০ নম্বর প্রাপ্তদের গ্রেড সমান।
পঞ্চম অধ্যায়
ধারা ৫০(৪) : মাধ্যমিক স্তরের পাঠ্যক্রমে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জেন্ডার স্টাডিজ এবং প্রজনন স্বাস্থ্য অন্তর্ভুক্ত করিবে’।
মতামত : এটি বাতিলযোগ্য। কেননা এতে উঠতি বয়সের কিশোর-কিশোরীদের যৌনতায় প্রলুব্ধ করবে। যা তাদের সর্বনাশ ডেকে আনবে।
ধারা ৫৩(২) : প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যসূচী প্রণয়নে পরামর্শ প্রদানের জন্য সরকার শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক প্রণয়নে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন, দক্ষ, অবসরপ্রাপ্ত ও বিশেষজ্ঞগণের সমন্বয়ে একটি ‘জাতীয় পরামর্শ কমিটি’ গঠন করিবে’।
মতামত : এটির প্রয়োজন নেই। কারণ এতে রাজনৈতিক দলীয়তা প্রাধান্য পাবে। যদি করা হয়, তাহ’লে সেখানে হানাফী ও আহলেহাদীছ এবং অন্যান্যদের জন্য তাদের দক্ষ ব্যক্তিদের কমিটিতে নিতে হবে।
আমাদের প্রস্তাবসমূহ :
পরিশেষে
এ ব্যাপারে আমাদের প্রস্তাবসমূহ হ’ল : (১) তাওহীদ, রিসালাত ও আখেরাতের
ভিত্তিতে শিক্ষার জাতীয় লক্ষ্য নির্ধারণ করতে হবে। এজন্য শিক্ষার সর্বস্তরে
ধর্মীয় শিক্ষা বাধ্যতামূলক করে দেশে একক শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করতে হবে।
মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত সমন্বিত সিলেবাস রেখে উচ্চ মাধ্যমিক স্তর থেকে কলা,
বাণিজ্য, বিজ্ঞান ও ইসলামী শিক্ষা নামে বিভিন্ন মৌলিক বিভাগ থাকবে।
বিশ্ববিদ্যালয় স্তরে গিয়ে বিষয় ভিত্তিক বিশেষজ্ঞ তৈরীর জন্য বিভিন্ন বিষয়ে
উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের ব্যবস্থা থাকবে। ব্যবহারিক সকল বিষয়ে উচ্চ শিক্ষা
স্তরে কমপক্ষে ২০০ নম্বরের ধর্মীয় শিক্ষা বাধ্যতামূলক থাকবে। (২) বর্তমানের
ত্রুটিপূর্ণ শিক্ষা ব্যবস্থাপনা সংশোধন করতে হবে। সরকার প্রশাসনিক
ব্যাপারে কোনরূপ হস্তক্ষেপ করবে না। তবে প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার মান ক্ষুণ্ণ
হ’লে এবং অন্যান্য কোন বড় ক্ষতির কারণ দেখা দিলে চূড়ান্ত পর্যায়ে সরকার
অবশ্যই হস্তক্ষেপ করবে। সরকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সমূহের শিক্ষক-কর্মচারীদের
বেতন-ভাতা সহ অন্যান্য আর্থিক ও অবকাঠামোগত উন্নয়নে পৃষ্ঠপোষকতা দিবে।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সমূহে সকলপ্রকার রাজনৈতিক দলাদলি নিষিদ্ধ করতে হবে।
শিক্ষক নিয়োগের সময় মেধা ও যোগ্যতা নিরূপনের জন্য সর্বস্তরে উচ্চতর শ্রেণী
দেখার সাথে সাথে তাদের লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা নিতে হবে এবং তাদের আক্বীদা,
আখলাক ও দেশপ্রেম যাচাই করতে হবে। (৩) বর্তমানের সহশিক্ষা ব্যবস্থা বাতিল
করতে হবে এবং ছেলে ও মেয়েদের পৃথক শিক্ষা পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। এজন্য
পৃথক ক্যাম্পাস ও ভৌত কাঠামো সম্ভব না হ’লে একই ক্যাম্পাসে পৃথক সময় ভাগ
করে শিফটিং ব্যবস্থা চালু করতে হবে। (৪) ইসলাম বিরোধী ও আক্বীদা বিনষ্টকারী
সকল প্রকার সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক ক্রিয়াকান্ড থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান
সমূহকে মুক্ত রাখতে হবে। (৫) উচ্চ মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত প্রচলিত পদ্ধতি
বাদ দিয়ে শ্রেণীকক্ষে পাঠদান ও পাঠমুখী পরীক্ষা পদ্ধতি চালু করা আবশ্যক।
তাতে গাইড বুক, সাজেশন ও নকল প্রবণতা আপনা থেকেই বন্ধ হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।