অদ্য ১৭ই ডিসেম্বর ২০১৬ শনিবার বেলা সাড়ে ১১-টায় মিয়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলমানদের উপর অব্যাহত গণহত্যা ও নিকৃষ্টতম বর্বরতার প্রতিবাদে ‘আহলেহাদীছ আন্দোলন বাংলাদেশ’-এর উদ্যোগে রাজশাহী মহানগরীর সাহেব বাজার জিরো পয়েন্টে অনুষ্ঠিত মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশে জাতিসংঘের প্রতি উপরোক্ত আহবান জানান মুহতারাম আমীরে জামা‘আত প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব। তিনি বলেন, আরাকানের মগ দস্যুদের দ্বারা একসময় এদেশের মানুষ নির্যাতিত হয়েছিল, আজও সেই মগ দস্যুদের দ্বারা আরাকানের মুসলমানরা নির্যাতিত হচ্ছে। তিনি মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও বৌদ্ধ সন্ত্রাসীদের নির্যাতন থেকে রোহিঙ্গা মুসলমানদের রক্ষায় স্থায়ী পদক্ষেপ নিতে জাতিসংঘ সহ বিশ্ব নেতৃবৃন্দের প্রতি উদাত্ত আহবান জানান। তিনি বাংলাদেশ সরকারের নীরব ভূমিকার সমালোচনা করে বলেন, আল্লাহকে ভয় করে কিছু করুন ও নির্যাতিতদের পাশে দাঁড়ান। নতুবা কাল ক্বিয়ামতের দিন ১৭ কোটি মানুষ আপনাদের বিরুদ্ধে আপিল করবে। দয়া করে মানবিক হৌন। গণতন্ত্রী হওয়ার চাইতে মানবিক হওয়া বেশী যরূরী।

পালিয়ে আসা অসহায় রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি আবেদন জানিয়ে তিনি বলেন, কুরআন ও হাদীছের নির্দেশনা অনুযায়ী আল্লাহর যেকোন বান্দা, সে মুসলিম হৌক, হিন্দু হৌক, বৌদ্ধ হৌক যদি সে বিপদে পড়ে, মুসলিম হিসাবে তাকে সাহায্য করা আমাদের আবশ্যিক দায়িত্ব। তাই যদি সরকার অনুমতি দেয়, তবে এদেশের মানুষ চাঁদা তুলে তাদের খাওয়াবে ইনশাআল্লাহ। সরকারের একটি পয়সাও খরচ করতে হবে না।

সমাবেশে ‘আন্দোলন’-এর কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক ড. মুহাম্মাদ সাখাওয়াত হোসাইন বলেন, আরাকানের মুসলমানরা ধর্ম, বর্ণ ও ভাষার ভিন্নতার কারণে যুগ যুগ ধরে নির্যাতিত হচ্ছে। সেদেশে সামরিক জান্তা সরকার ১৯৮২ সালে আরাকানের মুসলমানদের নাগরিকত্ব ছিনিয়ে নেয়। ফলে নিজ স্বাধীন ভূখন্ডে এরা আজ নাগরিকত্বহীন ও ভূমিহীন উদ্বাস্ত্ত। যদি বর্ণ, ভাষা ও ধর্মীয় ভিন্নতা নাগরিকত্বের মানদন্ড হয় তাহ’লে বাংলাদেশে বসবাসকারী উপজাতিদের এ দেশে বাস করার কোন অধিকার নেই। তিনি বাংলাদেশ সরকারের নীরব ভূমিকার সমালোচনা করতে গিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বক্তব্য তুলে ধরে বলেন, হিন্দু প্রধানমন্ত্রী যদি সারা বিশ্বের নির্যাতিত হিন্দুদের নিজ দেশে আশ্রয়ের অঙ্গীকার করতে পারেন, তাহ’লে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম রাষ্ট্র বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী কেন প্রতিবেশী নির্যাতিত মুসলমানদের পক্ষে কথা বলছেন না?

প্রশিক্ষণ সম্পাদক ড. মুহাম্মাদ কাবীরুল ইসলাম বলেন, ‘আরাকানের মযলূম মুসলমানরা নিজ দেশে থাকতে না পেরে বাংলাদেশ সহ বিভিন্ন দেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছে। সেখানে তারা মানবেতর জীবন যাপন করছে। অপর দিকে মুসলমানদের রক্তের স্রোতে ভাসছে আরাকান। সেখানে মানবতার লেশমাত্রও নেই। এহেন অমানবিক কর্মকান্ডের পরেও জাতিসংঘসহ মানবাধিকার সংস্থাগুলো আরাকানের মযলূম মুসলমানদের ব্যাপারে নিশ্চুপ কেন? যে জাতিসংঘ ইন্দোনেশিয়া ভাগ করে পূর্ব তিমুর এবং সুদান ভাগ করে খ্রিষ্টানদের জন্য পৃথক রাষ্ট্র দক্ষিণ সুদান তৈরী করেছে, সেই জাতিসংঘের উচিত দীর্ঘ দিন যাবৎ নির্যাতিত আরাকানী মুসলমানদের জন্য পৃথক রাষ্ট্র গঠনের ব্যবস্থা করা’।

আল-মারকাযুল ইসলামী আস-সালাফীর ভাইস প্রিন্সিপ্যাল নূরুল ইসলামের পরিচালনায় উক্ত মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য পেশ করেন আহলেহাদীছ আন্দোলন বাংলাদেশ-এর কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক ড. মুহাম্মাদ সাখাওয়াত হোসাইন, প্রশিক্ষণ সম্পাদক ড. মুহাম্মাদ কাবীরুল ইসলাম, দফতর সম্পাদক অধ্যাপক আমীনুল ইসলাম, রাজশাহী-পশ্চিম সাংগঠনিক যেলা সভাপতি অধ্যাপক দুররুল হুদা, সহ-সভাপতি মাওলানা দুররুল হুদা, সাংগঠনিক সম্পাদক ড. শিহাবুদ্দীন আহমাদ, রাজশাহী-সদর সাংগঠনিক যেলার সহ-সভাপতি আশরাফুল ইসলাম প্রমুখ।

সমাবেশে নিম্নোক্ত দাবীসমূহ পেশ করা হয় :

(১) সাম্প্রতিক গণহত্যা বন্ধে মিয়ানমারের উপর সকল প্রকারের কূটনৈতিক চাপ প্রয়োগ করার জন্য এ সমাবেশ বাংলাদেশ সরকারের প্রতি জোর দাবী জানাচ্ছে এবং প্রয়োজনে তাদের সাথে সকল প্রকার কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করার আহবান জানাচ্ছে। (২) বিতাড়িত রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে পুনরায় ফেরৎ না পাঠানোর জন্য এবং তাদেরকে সম্মানজনক পুনর্বাসনের জন্য সরকারের প্রতি আকুল আবেদন জানাচ্ছে। (৩) এ সমাবেশ মিয়ানমার নেত্রী ‘অং সান সুচি’-র নোবেল শান্তি পুরস্কার বাতিলের জন্য আন্তর্জাতিক নোবেল কমিটির প্রতি আহবান জানাচ্ছে। (৪) এ সমাবেশ প্রতিবেশী চীন ও ভারতকে এবং মুসলিম রাষ্ট্রনেতাদেরকে মিয়ানমারের উপর কঠোর চাপ সৃষ্টির দাবী জানাচ্ছে। (৫) এ সমাবেশ বর্মী দুঃশাসন থেকে মুক্ত করার লক্ষ্যে রোহিঙ্গা মুসলিমদের জন্য জাতিসংঘের প্রতি অতীতের ন্যায় পৃথক ‘আরাকান রাষ্ট্র’ ঘোষণার আহবান জানাচ্ছে।

(১৮ই ডিসেম্বর জাতীয় দৈনিক ইনকিলাব, প্রথম আলো, নয়াদিগন্ত ও জনকণ্ঠ এবং স্থানীয় দৈনিক সোনালী সংবাদ, সানশাইন ও সোনারদেশ পত্রিকায় প্রকাশিত)






আরও
আরও
.