রাজশাহী ২৩ ও ২৪শে ফেব্রুয়ারী বৃহস্পতি ও শুক্রবার : ‘আহলেহাদীছ আন্দোলন বাংলাদেশ’-এর দু’দিনব্যাপী ২৭তম বার্ষিক তাবলীগী ইজতেমা রাজশাহী মহানগরীর নওদাপাড়া ট্রাক টার্মিনাল ময়দানে সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। ফালিল্লা-হিল হাম্দ। ১ম দিন বাদ আছর বিকাল ৪-টায় তাবলীগী ইজতেমা’১৭-এর সভাপতি ও ‘আহলেহাদীছ আন্দোলন বাংলাদেশ-এর মুহতারাম আমীরে জামা‘আত প্রফেসর ডঃ মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব-এর সভাপতিত্বে ইজতেমার কার্যক্রম শুরু হয়। প্রথমে অর্থসহ পবিত্র কুরআন তেলাওয়াত করেন আল-মারকাযুল ইসলামী আস-সালাফী নওদাপাড়া, রাজশাহীর হিফয বিভাগের প্রধান হাফেয লুৎফর রহমান এবং স্বাগত ভাষণ পেশ করেন তাবলীগী ইজতেমা’১৭ ব্যবস্থাপনা কমিটির আহবায়ক ও ‘আন্দোলন’-এর কেন্দ্রীয় গবেষণা ও প্রকাশনা সম্পাদক অধ্যাপক মুহাম্মাদ আব্দুল লতীফ।

উদ্বোধনী ভাষণ :

বাদ আছর ইজতেমার উদ্বোধনী ভাষণে মুহতারাম আমীরে জামা‘আত বলেন, আমাদের সংগঠনের লক্ষ্য, সার্বিক জীবনে আল্লাহর দাসত্ব করা। ‘আহলেহাদীছ আন্দোলন বাংলাদেশ’ এদেশের মাটিতে উক্ত আহবান নিয়ে যে পদযাত্রা শুরু করেছিল, সময়ের বিবর্তনে তা আজ সকলের কাছে স্পষ্ট হয়ে গেছে। এ দাওয়াতের প্রতি অকৃত্রিম ভালবাসা মানুষের হৃদয়ে যে গভীর অনুভূতি সৃষ্টি করেছে, তা কোন জেল-যুলুম বা দুনিয়াবী লোভ-লালসা দ্বারা প্রতিহত করা সম্ভব নয়। যে কারণেই দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলসমূহ থেকে এমনকি দেশের বাহির থেকেও প্রাণের টানে আপনারা আজকের এ ইজতেমায় ছুটে এসেছেন। মুমিনের সেই প্রাণের আহবানই হচ্ছে ‘আহলেহাদীছ আন্দোলন বাংলাদেশ’-এর প্রকৃত আহবান। 

কোন আন্দোলনের গতিশীলতা নির্ভর করে তার প্রাণস্রোত, তার লক্ষ্য-উদ্দেশ্য ও মূলনীতি এবং সঠিক কর্মসূচী ও কর্মপদ্ধতির উপর। আর সবগুলোর ঐক্যতান যাদের হৃদয়ে অটুট থাকে, তারা দেশে বা প্রবাসে যেখানেই থাকুক না কেন, তাদের অন্তরে গভীর অনুরণন সৃষ্টি করে। এই অনুরণন যখন বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষের হৃদয়ে সমভাবে জাগ্রত হবে এবং তা ঐক্যবদ্ধ রূপ নিবে, তখনই এদেশের মাটিতে আল্লাহপাকের সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠা লাভ করবে ইনশাআল্লাহ।

আমাদের এই আহবান দল-মত ও ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সমগ্র মানবজাতির নিকটে। সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ তাঁর নবী ও রাসূলগণের মাধ্যমে মানুষের প্রতি যে আহবান জানিয়েছেন, আহলেহাদীছ আন্দোলনের কর্মী হিসেবে আমাদেরও সেই একই আহবান সকল আদম সন্তানের প্রতি। সকল মানুষের নিকট উক্ত দাওয়াত পেঁŠছানোর জন্যই আমাদের এই তাবলীগী ইজতেমা।

উপস্থিত সকলের উদ্দেশ্যে আমাদের উপদেশ- ইজতেমার ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য রক্ষা করুন। এক ভাই অপর ভাইকে সহযোগিতা করুন। কেননা আল্লাহ তার বান্দার সাহায্যে অতক্ষণ থাকেন, যতক্ষণ বান্দা তার ভাইয়ের সাহায্যে থাকে। অতএব এক ভাই অপর ভাইকে আন্তরিক সহযোগিতার মাধ্যমে নেকী উপার্জনে প্রতিযোগিতা করুন। সবশেষে তিনি আল্লাহর নামে দু’দিনব্যাপী তাবলীগী ইজতেমার শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করেন।

মুহতারাম আমীরে জামা‘আতের উদ্বোধনী ভাষণের পর পূর্ব নির্ধারিত বিষয়বস্ত্ত সমূহের উপরে ১ম দিন রাত পৌনে ১-টা পর্যন্ত বক্তব্য পেশ করেন মাওলানা রুস্তম আলী (মারকায), ড. মুহাম্মাদ আবু তাহের (সিলেট), আব্দুল হালীম (মারকায), আব্দুর রশীদ আখতার (কুষ্টিয়া), মাওলানা আব্দুল মান্নান (সাতক্ষীরা), মাওলানা আমানুল্লাহ বিন ইসমাঈল (পাবনা), মাওলানা শফীকুল ইসলাম (নারায়ণগঞ্জ), ইকবাল কবীর (নরসিংদী), মুহাম্মাদ আল-আমীন (বগুড়া) ও মুহাম্মাদ শহীদুল ইসলাম (মাদারীপুর)।

২য় দিন শুক্রবার বাদ ফজর দারুল হাদীছ জামে মসজিদে দরসে কুরআন পেশ করেন মুহতারাম আমীরে জামা‘আত। একই সময় প্যান্ডেলে দরসে হাদীছ পেশ করেন মাওলানা আমানুল্লাহ বিন ইসমাঈল (পাবনা)। অতঃপর সকাল ৯-টা পর্যন্ত বিষয় ভিত্তিক বক্তব্য সমূহ পেশ করেন, অধ্যাপক মুহাম্মাদ সিরাজুল ইসলাম (যশোর), অধ্যাপক আমীনুল ইসলাম (মারকায), জামীলুর রহমান (কুমিল্লা), মাওলানা সাইফুল ইসলাম বিন হাবীব (ঢাকা) ও মাওলানা ছফিউল্লাহ (কুমিল্লা)।

অতঃপর ২য় দিন বাদ আছর হ’তে রাত ৪-টা পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে বক্তব্য পেশ করেন, অধ্যাপক জালালুদ্দীন (নরসিংদী), অধ্যাপক দুররুল হুদা (রাজশাহী), ড. মুহাম্মাদ কাবীরুল ইসলাম (মারকায), মুহাম্মাদ আহসান (ঢাকা), মাওলানা সাঈদুর রহমান (ব্রাহ্মণবাড়িয়া), তাসলীম সরকার (ঢাকা), মীযান বিন আব্দুল আযীয জৈনপুরী (ঢাকা), ড. মুহাম্মাদ সাখাওয়াত হোসাইন (মারকায), মাওলানা জাহাঙ্গীর আলম (খুলনা), মাওলানা দুররুল হুদা (রাজশাহী), অধ্যাপক শেখ রফীকুল ইসলাম (সাতক্ষীরা), মুহাম্মাদ আফযাল হোসাইন (নওগাঁ), মাওলানা শামসুর রহমান (ঢাকা), মাওলানা আবুবকর (রাজশাহী) ও মাওলানা মুখলেছুর রহমান (নওগাঁ) প্রমুখ।

এবারের তাবলীগী ইজতেমার উপস্থিতি ছিল বিগত সকল ইজতেমার তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। ফলে উদ্বোধনী ভাষণের সময়েই মূল প্যান্ডেল কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। অতঃপর রাতে জায়গা না পেয়ে হাযার হাযার শ্রোতাকে প্যান্ডেলের বাইরে মহাসড়কে ও অন্যত্র খোলা আকাশের নীচে অবস্থান নিতে হয়। মহিলা প্যান্ডেলের অবস্থাও ছিল একই রকম। প্যান্ডেলে সংকুলান না হওয়ায় উঁচু প্রাচীর ঘেরা মহিলা মাদরাসা ক্যাম্পাসের সর্বত্রই মহিলাদের বসে বক্তব্য শ্রবণ করতে হয়েছে। এমনকি মহিলা মারকাযের ভিতরের পুকুরের শুকনা অংশে তাদের বসতে হয়েছে।

বাইরের যেলাগুলি থেকে সর্বমোট ২৮৪টি বড় রিজার্ভ বাস, ১১টি মাইক্রোবাস এবং কার, ভটভটি ও সিএনজি ছাড়াও বিচ্ছিন্নভাবে ৫২টি সাংগঠনিক যেলা থেকে ও বাইরের অন্য যেলা থেকেও ট্রেন, বাস, মাইক্রো, মটর সাইকেল, বাই সাইকেল ইত্যাদি বিভিন্ন যানবাহন যোগে হাযার হাযার মুছল্লী ইজতেমায় অংশগ্রহণ করেন। সঊদী আরব ও সিঙ্গাপুর সহ অন্যান্য দেশ থেকেও সদ্য দেশে ফেরা অনেক প্রবাসী কর্মী ও সুধী ইজতেমায় যোগদান করেন। প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত থেকেও অনেকে ভিসা নিয়ে ইজতেমায় অংশগ্রহণ করেন। ইন্টারনেট সংযোগের মাধ্যমে বিদেশী শাখা সমূহের কর্মীগণ ইজতেমার সরাসরি লাইভ প্রোগ্রাম শোনেন ও দেখেন।

দু’দিনব্যাপী তাবলীগী ইজতেমার বিভিন্ন অধিবেশনে সঞ্চালকের দায়িত্ব পালন করেন ‘হাদীছ ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ’-এর গবেষণা সহকারী নূরুল ইসলাম (রাজশাহী), ঢাকা যেলা ‘আন্দোলন’-এর অর্থ সম্পাদক কাযী হারূনুর রশীদ ও ‘যুবসংঘ’ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল মান্নান (রাজশাহী) প্রমুখ।

তাবলীগী ইজতেমার বিভিন্ন অধিবেশনে কুরআন তেলাওয়াত করেন হাফেয লুৎফর রহমান (বগুড়া), আব্দুল্লাহ আল-মা‘রূফ (বগুড়া), আহমাদ আব্দুল্লাহ শাকির (সাতক্ষীরা), হাফেয শাহরিয়ার (রাজশাহী) ও ক্বারী মুনীরুল ইসলাম (রাজশাহী)। ইসলামী জাগরণী পরিবেশন করেন আব্দুল্লাহ আল-মা‘রূফ (বগুড়া), মুহাম্মাদ মীযানুর রহমান (জয়পুরহাট), আব্দুল্লাহ আল-মামূন (সাতক্ষীরা), রোকনুযযামান (সাতক্ষীরা), আব্দুল গফূর (বগুড়া), ইয়াকূব (মেহেরপুর), আব্দুল আলীম (দিনাজপুর) এবং আল-মারকাযুল ইসলামী আস-সালাফী, নওদাপাড়া, রাজশাহীর ছাত্র ওমর ফারূক (৯ম শ্রেণী), আলে ইমরান (৭ম শ্রেণী), মীর বখতিয়ার (৬ষ্ঠ শ্রেণী) প্রমুখ।






আরও
আরও
.