সাতক্ষীরা ১২-১৬ই সেপ্টেম্বর : গত ১২ই সেপ্টেম্বর সোমবার ‘আহলেহাদীছ আন্দোলন বাংলাদেশ’-এর মুহতারাম আমীরে জামা‘আত প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব পবিত্র ঈদুল আযহা উপলক্ষে সাতক্ষীরায় গমন করেন এবং ৪ দিন অবস্থান করেন। এসময় তিনি ঈদুল আযহার খুৎবা প্রদান সহ যেলার বিভিন্ন এলাকায় সফর করেন এবং বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বক্তব্য পেশ করেন। উক্ত সফরের পূর্ণ বিবরণ নিম্নে উল্লেখ করা হ’ল।-

ঈদুল আযহার খুৎবা-১ : ১৩ই সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার সকাল সোয়া ৭-টায় সাতক্ষীরা শহরস্থ আব্দুর রাযযাক পার্কে অনুষ্ঠিত ঈদুল আযহার ছালাত মুহতারাম আমীরে জামা‘আত ইমামতি করেন এবং সমবেত কয়েক হাযার মুছল্লীর উদ্দেশ্যে সারগর্ভ খুৎবা প্রদান করেন।

খুৎবায় তিনি ইবরাহীম ও ইসমাঈল (আঃ)-এর অসামান্য আত্মত্যাগের কথা স্মরণ করিয়ে দেন। তিনি বলেন, শেষ জীবনের উপহার নয়নের পুত্তলি ইসমাঈলকে কুরবানী করার এলাহী নির্দেশনা যখন ইবরাহীম (আঃ) স্বপ্নযোগে প্রাপ্ত হ’লেন এবং কোনরকম দ্বিধা ছাড়াই তিনি কুরবানী করতে প্রস্ত্তত হয়ে গেলেন, তখনই আল্লাহ সুবহানাহু তা‘আলা ডাক দিয়ে বললেন, ‘ক্ষান্ত হও হে ইবরাহীম! তুমি তোমার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করেছ। আর এভাবেই আমরা সৎকর্মশীলদের পুরস্কৃত করে থাকি’। একথা আল্লাহ আগে বলেননি। বললেন যখন উভয়েই নির্দ্বিধায় আল্লাহর নির্দেশ বাস্তবায়নে প্রস্ত্তত হয়ে গেলেন। অতএব যেদিন আমরা ইবরাহীমের মত পিতা হ’তে পারব, ইসমাঈলের মত সন্তান হ’তে পারব, আল্লাহর বিধান নির্দ্বিধায় অনুসরণ করতে পারব, সেদিনই সমাজে শান্তি ফিরে আসবে ইনশাআল্লাহ।

তিনি বলেন, প্রত্যেকে যদি এই প্রতিজ্ঞা নিয়ে আজ কুরবানী করতে পারেন যে, আমাকেও যদি ইবরাহীমের মত আগুনে ফেলে নির্যাতন করা হয় আমিও বলব, ‘হাসবুনাল্লাহু নি‘মাল ওয়াকীল’ (আমার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট, তিনি কতই না উত্তম তত্ত্বাবধায়ক) তবেই আপনার কুরবানী সার্থক হবে। অতএব নিঃশর্তভাবে পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছের বিধানের নিকট আত্মসমর্পণ করে বিশুদ্ধ পদ্ধতিতে সকল আমল সম্পন্ন করুন, হারাম থেকে বেঁচে থাকুন, আত্মীয়তা সম্পর্ক বিনষ্টের ব্যাপারে সাবধান থাকুন, মানুষের মধ্যে পারস্পরিক ভালোবাসা বজায় রাখুন, আকাশ সংস্কৃতি থেকে বেঁচে থাকুন, ইন্টারনেট ও মোবাইলের কুপ্রভাব থেকে সন্তানকে দূরে রাখুন, ঘরে বাইরে সর্বত্র সর্বাবস্থায় আল্লাহকে ভয় করুন।

ঈদুল আযহার খুৎবা-২ : সাতক্ষীরা আব্দুর রাযযাক পার্কে জামা‘আত ও খুৎবা শেষে আমীরে জামা‘আত নিজ জন্মভূমি সদর থানাধীন বুলারাটি, মাহমূদপুর, তালবাড়িয়া তিন গ্রামের সমন্বিত ঈদগাহ ময়দানে (ছাদেকের আম বাগান) সর্বস্তরের মুছল্লীদের অনুরোধে সকাল সাড়ে আট-টায় দ্বিতীয়বার ঈদের ছালাত আদায় করান এবং সমবেত হাযারো মুছল্লীর উদ্দেশ্যে গুরুত্বপূর্ণ খুৎবা প্রদান করেন। তিনি বলেন, কেবলমাত্র রাসূল (ছাঃ)-এর সুন্নাতকে অনুসরণের লক্ষ্যেই আজ আমরা সুসজ্জিত মসজিদ ছেড়ে ফাঁকা ময়দানে এসে ঈদের ছালাত আদায় করছি। এভাবে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে যদি আমরা পূর্ণ ভালোবাসা নিয়ে সুন্নাতের নিঃশর্ত অনুসরণ করতে পারি, তবেই পরকালীন মুক্তি নিশ্চিত হবে ইনশাআল্লাহ।

তিনি বলেন, মাহমূদপুর গ্রামের ভাইয়েরা! মনে রেখ, তোমাদের গ্রামের প্রতিষ্ঠাতা রফী মাহমূদ, যিনি আমার ঊধ্বতন ৪ নম্বর দাদা। তিনি সহ আমাদের পূর্বপুরুষ প্রত্যেকেই সমাজ থেকে জাহেলিয়াত দূর করতে করতেই দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছেন। তাই তোমাদের কাছে আমার দাবী- রক্তের ঋণ শোধ করো। নিজ নিজ সমাজ থেকে জাহেলিয়াত দূর করার ব্যাপারে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হও। এভাবে সকলের প্রচেষ্টায় সমাজে পরিবর্তন আসবে ইনশাআল্লাহ।

তিনি আরো বলেন, আজকে অনেকেই বলছেন, ক্ষমতায় না গেলে ইসলাম পালন করা ও কায়েম করা সম্ভব নয়। আমরা বলি, মানুষের মাঝে ইসলামের শাশ্বত বাণী পৌঁছে দেওয়ার জন্য ক্ষমতার কোন প্রয়োজন নেই। আবুবকর, ওমর, ওছমান, আলী, হামযাহ (রাঃ)-এর মত মহান ছাহাবীগণ কি তরবারির ভয়ে ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন? কখনোই নয়। বলুন, ফেরাউন তার সাড়ে সাত লক্ষ বাহিনী নিয়ে যখন পানিতে ডুবে মরল, তখন মূসা (আঃ) কেন ফিরে গিয়ে ফেরাউনের সিংহাসনে বসে পুরো মিসরে ইসলামী শাসন কায়েম করলেন না? কারণ মূসা (আঃ) জানতেন লাঠি মেরে জোরপূর্বক বিধান চাপিয়ে দিয়ে ছালাত আদায় করালে তা হয়তো সাময়িকভাবে চলবে। কিন্তু পরক্ষণেই তা হারিয়ে যাবে। এলাহী বাণী যদি অন্তরে দাগ না কাটে, আল্লাহ ভীতি যদি হৃদয়ে জাগ্রত না হয়, তবে কি সেই ছালাত কোন কাজে আসে? তা কি কবুলযোগ্য হবে? তাই ‘আহলেহাদীছ আন্দোলন বাংলাদেশ’ ক্ষমতার রাজনীতি করে না, তারা নবীদের তরীকা অনুযায়ী মুসলিম-অমুসলিম নির্বিশেষে সর্বস্তরের মানুষের মাঝে আক্বীদা ও আমল সংস্কারের দাওয়াত দেয়।

সুধী সমাবেশ : একই দিন বাদ মাগরিব বুলারাটি আহলেহাদীছ জামে মসজিদে বুলারাটি এলাকা ‘আন্দোলন’-এর উদ্যোগে এক সুধী সমাবেশে অনুষ্ঠিত হয়। প্রধান অতিথির ভাষণে সেখানে মুহতারাম আমীরে জামা‘আত এলাকাবাসীর উদ্দেশ্যে বলেন, ক্বিয়ামতের দিন আমরা আমাদের জীবনকাল কোন কাজে ব্যয় করেছি সে ব্যাপারে জিজ্ঞাসিত হব। অতএব মৃত্যুর কথা সবসময় স্মরণ করুন। প্রতিনিয়ত আমরা মৃত্যুর দিকে এগিয়ে চলেছি। নিজ পিতা-মাতার কথা একবার স্মরণ করুন। তাদের মত আমাদেরকেও চলে যেতে হবে। তাই সদাসর্বদা বিশুদ্ধ দ্বীনের উপর টিকে থাকার চেষ্টা করুন। গ্রামের ধর্মীয় ঐতিহ্য যেকোন মূল্যে বজায় রাখুন। নতুবা আমাদের সন্তানরা নষ্ট হয়ে যাবে, আমাদের ঘরে আমাদের সন্তানরাই চুরি-ডাকাতি করবে, তখন কিছুই করার থাকবে না। তিনি তরুণদের কাছ থেকে ওয়াদ নেয় তারা গ্রাম থেকে সকল দুর্নীতি দূর করতে রাযী আছে কি-না,তারা নিয়মিত ছালাত

এলাকা ‘আন্দোলন’-এর সভাপতি আবুল কালাম আযাদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উক্ত সমাবেশে ‘আন্দোলন’ ও ‘যুবসংঘ’-এর দায়িত্বশীলবৃন্দ এবং এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।

অতঃপর বাদ এশা মাহমূদপুর বাজার আহলেহাদীছ জামে মসজিদে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এলাকা ‘আন্দোলন’-এর সভাপতি মাওলানা মহীদুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উক্ত আলোচনা সভায় মুহতারাম আমীরে জামা‘আত এক সারগর্ভ বক্তব্য রাখেন।

আলোচনা সভা : ১৪ই সেপ্টেম্বর বুধবার সকাল ৭-টায় যেলা ও বিভিন্ন উপযেলা নেতৃবৃন্দকে সাথে নিয়ে তিনি কালীগঞ্জ ও শ্যামনগরের উদ্দেশ্যে রওনা হন। সকাল ৯-টায় শ্যামনগর উপযেলার আটুলিয়া ইউনিয়নের হাওয়ালডাঙ্গী গ্রামে বর্তমান চেয়ারম্যান আবু ছালেহ বাবু পরিচালিত জি এম কাদের ফাউন্ডেশন অফিসে সকালের নাশতা করেন এবং শ্যামনগর উপযেলা সভাপতি মাওলানা মুতীউর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন।

মতবিনিময় সভা : সকাল ১০-টায় নীলডুমুর উপযেলা পরিষদ মিলনায়তনে ‘আন্দোলন’ ও ‘যুবসংঘ’-এর স্থানীয় দায়িত্বশীল, কর্মী ও সুধীবৃন্দের সাথে এক মতবিনিময় সভায় মিলিত হন। এসময় তিনি নাতিদীর্ঘ বক্তব্য পেশ করেন। বৈঠকে উপস্থিত নতুন আহলেহাদীছ ভাইয়েরা একে একে তাদের আহলেহাদীছ হওয়ার প্রেক্ষাপট বর্ণনা করেন। অতঃপর বেলা ১১-টায় নেতাকর্মীসহ মুন্সীগঞ্জ ইউনিয়নে সরকারী উদ্যোগে নির্মাণাধীন ‘আকাশ লীনা ইকো টুরিজম’ পর্যটন কেন্দ্র পরিদর্শন করেন। পরে শ্যামনগর উপযেলা ‘আন্দোলন’-এর উপদেষ্টা জনাব গিয়াছুদ্দীনের অনুরোধক্রমে নৌকাযোগে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি সুন্দরবনের দৃষ্টিনন্দন পর্যটন কেন্দ্র ‘কলাগাছিয়া’ পরিদর্শন করেন।

কর্মী ও সুধী সমাবেশ : সেখান থেকে ফিরে বাদ আছর আটুলিয়া ইউনিয়নের চরের বিল আহলেহাদীছ জামে মসজিদে উপযেলা ‘আন্দোলন’-এর উদ্যোগে সভাপতি মাওলানা মুতীউর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত কর্মী ও সুধী সমাবেশে বক্তব্য পেশ করেন। অতঃপর বাদ মাগরিব ভুরুলিয়া ইউনিয়নের দেউলদিয়া এলাকায় নবনির্মিত বায়তুন নূর আহলেহাদীছ জামে মসজিদে মাগরিবের ছালাত আদায় করেন এবং সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন।

অতঃপর রাত ৯-টায় নলতা চৌমহনীর বাসিন্দা আমীরে জামা‘আতের ভায়রা ডা. রফীকুল হাসানের বাসভবনে গমন করেন এবং কালিগঞ্জ উপযেলা সভাপতি অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মুহাম্মাদ ফযলুর রহমান সহ উপযেলা নেতাকর্মীদের সাথে মতবিনিময় করেন। অতঃপর সেখান থেকে ফিরে এসে বুলারাটি গ্রামে বড় বোনের বাসায় রাত্রিযাপন করেন।







আরও
আরও
.