জামালপুর যেলার মাদারগঞ্জ থানার ৬নং আদারভিটা ইউনিয়নের নলকী গ্রামে নানার বাড়ীতে ছোট থেকেই বড় হই প্রচলিত হানাফী সমাজে। যদিও নিজের বংশের লোকেরা আহলেহাদীছ। সরকারী আশেক মাহমূদ কলেজে পড়ার সময় একই থানার পার্শ্ববর্তী গ্রামের আমীনুল নামে এক বন্ধুর সাথে পরিচয় হয় এবং তারই কাছে প্রথম আহলেহাদীছ সম্পর্কে কিছুটা ধারণা লাভ করি। আর সেই বন্ধু আমাকে ছহীহ বুখারী উপহার দেয়। পরবর্তীতে সরকারী তিতুমীর কলেজে অনার্সে পড়াকালে মতীউর রহমান মাদানী সহ আহলেহাদীছ আলেমদের বক্তব্য শুনে এবং বাংলা বুখারী, মুসলিম ও ডঃ আসাদুল্লাহ আল-গালিব স্যারের ছালাতুর রাসূল (ছাঃ) সহ অনেক বই পড়ে ছহীহ হাদীছ ভিত্তিক আমল করা শুরু করি। বক্তাদের বক্তব্য শুনে এবং নিজে অল্প কিছু যা জানি তাই নিয়ে দাওয়াতী কাজ শুরু করি। ফলে গ্রামের কিছু ভাই হকের দাওয়াত পেয়ে ছালাত সহ বিভিন্ন বিষয় সংশোধন করে নেয়। ছালাতে জোরে আমীন বলা, বুকে হাত বাঁধা, রাফঊল ইয়াদায়ন করা ইত্যাদি আমল শুরু করে প্রকাশ্যে। আমরা ফরয ছালাতের পর প্রচলিত মোনাজাত করি না, মীলাদ পড়ি না, কোন তরীকা বা পীরে বিশ্বাস করি না, মাযারে, খানকায় বিশ্বাসী নই। আমরা বিশ্বাস করি যে, রাসূল (ছাঃ) মাটির তৈরী। আমাদের এই আক্বীদা ও আমলের কারণে মসজিদ কর্তৃপক্ষ বলে, এটা হানাফী সমাজের মসজিদ, তোমরা যদি এই মসজিদে আসো তাহ’লে আমাদের মতো ছালাত আদায় করতে হবে। আর তা না হ’লে এই মসজিদে এসো না, আসলে গলা ধাক্কা দিয়ে বের করে দিব।

অতঃপর আমরা পরামর্শ করে ঐ মসজিদ থেকে কিছু দূরে একটা নতুন মসজিদ নির্মাণ করি। মসজিদ নির্মাণ করার শুরু থেকেই মাযহাবপন্থী ভাইয়েরা আমাদেরকে মার-ধর করবে, রক্তের বন্যা বইয়ে দিবে ইত্যাদি ভয়-ভীতি দেখিয়ে আসছিল। ভয়-ভীতির মধ্য দিয়েই আমরা মসজিদে ছালাত আদায় করতে থাকি। জুম‘আর দিনে ইমাম ছাহেবের দলীল ভিত্তিক খুৎবা শুনে এবং মসজিদের মুছল্লীদের নম্র আচরণে ধীরে ধীরে আরও অনেকে আহলেহাদীছের অনুসারী হ’তে থাকে। এভাবে আহলেহাদীছের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাওয়াটা তারা সহ্য করতে পারেনি। ফলে আমাদের বিরুদ্ধে নানা রকম অপবাদ দিতে থাকে। তারা বলে যে, আমরা নাকি রাসূল (ছাঃ)-কে মাটির তৈরী বলে তাঁকে মাটির সাথে মিশিয়ে ফেলেছি, আমরা মীলাদ পড়ি না, আমরা নবী করীম (ছাঃ)-কে সম্মান করি না ইত্যাদি।

এরি মধ্যে গত ১০ই অক্টোবর রোজ বৃহষ্পতিবার আদারভিটা বাজারে আমাদের সম্পর্কে একটি মিটিংয়ের আয়োজন করা হয় এবং পরদিন শুক্রবারে আমাদের মসজিদ ও মুছল্লীদের উপর আক্রমণ করবে বলে ঘোষণা দেয়া হয়। আমরা আইনি সাহায্যের মাধ্যমে জুম‘আর ছালাত আদায় করি। পরবর্তীতে গত ২২শে অক্টোবর’১৬ রোজ শনিবার মাযহাবীরা এলাকায় মাইকিং করে লোক জড়ো করে এবং লাঠি-শোটা নিয়ে মসজিদে আক্রমণের উদ্দেশ্যে রওনা হয়। আমি বেলা সাড়ে ১২-টায় যোহরের ছালাতের আযান দিয়েছি। কিন্তু মাইকে উগ্র বক্তব্য ও লোকজনের হই-হুল্লোড় এবং আক্রমণাত্মকভাবে এগিয়ে আসার কথা শুনে ছালাত আদায় না করে মসজিদ থেকে চলে যাই। ফলে বিরোধীরা মসজিদ দখল করে নেয়। এরা আমাদের মসজিদের জালাল নামে একজন মুছল্লীর বাড়ী ভাংচুর ও তার দোকান লুট করে। এরা মসজিদে গান-বাজনা, মীলাদ করে এবং উগ্র আচরণ করে কিছু মুছল্লীকে ধাওয়া করে তাদেরকে গ্রাম ছাড়তে বাধ্য করে। আর বলতে থাকে, যদি তারা আমাদের কাছে ক্ষমা চায় এবং আমাদের মতো ছালাত আদায় করে, যেকোন একটি তরীকা অনুসরণ করে এবং আমাদের ইমামের পিছনে ছালাত আদায় করে, তাহ’লে তাদেরকে এ মসজিদে ছালাত আদায় করতে দেয়া হবে। এছাড়া তারা আরও শর্তারোপ করে যে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) নূরের তৈরী এই বিশ্বাস করতে হবে এবং কমপক্ষে প্রতি সপ্তাহে একদিন করে মীলাদ পড়তে হবে। আর যদি তা না করে তাহ’লে তারা মসজিদে তো আসতে পারবেই না বরং তারা তাদের নিজ বাড়ীতেও থাকতে পারবে না।

বর্তমানে আমরা নিজেদের বাড়ী-ঘর সবকিছু ছেড়ে একেক জন একেক জায়গায় অবস্থান করছি। আহলেহাদীছ মসজিদের মুছল্লীরা ফোন করে বলে, কাউছার আমরাতো তাদের কিছুই করিনি তবুও কেন ঘর-বাড়ী ছেড়ে আসতে হ’ল। তাদের বুক ভরা ব্যথা আর কান্নাবিজড়িত কথা শুনে নিজেও চোখের পানি ধরে রাখতে পারি না। আর তাদের এই বলে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করি যে, মুহাম্মাদ (ছাঃ) আল্লাহর পক্ষ থেকে নবী, তিনি ও তাঁর ছাহাবীগণ পর্যন্ত নিজেদের মাতৃভূমি ছেড়ে মদীনায় চলে যেতে বাধ্য হয়েছেন। সে তুলনায় আমাদের কিছুই হয়নি। সবাইকে ধৈর্য ধারণের এবং দ্বীনে হকের উপরে টিকে থাকার উপদেশ দিচ্ছি। এরই মধ্যে গত ২৫শে অক্টোবর’১৬ রোজ সোমবার জনৈক দ্বীনী ভাই ফোনে বলে যে, কাউছার তুমি ভাল কোন জায়গায় আত্মাগোপন কর। কারণ তোমাকে মেরে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তরীকাপন্থীরা। এমন পরিস্থিতিতে আমরা অত্যন্ত শংকার মধ্য দিয়ে দিন কাটাচ্ছি। সবাই আমাদের জন্য দো‘আ করবেন। আল্লাহ যেন এই সংকটময় মুহূর্তে সকলকে হেফাযত করেন এবং বিরোধীদের সঠিক বুঝ দান করেন-আমীন!

[প্রচলিত মাযহাব ও তরীকা পন্থীদের এই হিংস্র আচরণ আইয়ামে জাহেলিয়াতের কথাই স্মরণ করিয়ে দেয়। নিজেদের মনগড়া মতবাদের বিপরীতে রাসূল (ছাঃ)-এর হাদীছ মানার অপরাধে কোন মুসলমানের পক্ষে এমন আচরণ অবিশ্বাস্য। এরা মুসলিম নামের কলঙ্ক। যেদেশে সকল ধর্মের সহাবস্থানের কথা রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃত সেখানে মুসলমান হয়ে কিভাবে অন্যের মসজিদ দখল ও তাদের এলাকা ছাড়া করতে পারে? ধিক এই সমস্ত তরীকাপূজারী মুসলমানদের। হকপন্থী ভাইদের আল্লাহ হেফাযত করুন-আমীন! -সম্পাদক]






অবশেষে হক-এর সন্ধান পেলাম - কামাল আহমাদ, লাকসাম, কুমিল্লা
হকের পথে যত বাধা - মুহাম্মাদ ইসমাঈল হোসাইন - মাইজদী, নোয়াখালী
ছহীহ হাদীছ ভিত্তিক আমলের কারণে শারীরিক নির্যাতন ও হত্যার হুমকি - আত-তাহরীক ডেস্ক
আহলেহাদীছ আক্বীদায় বিশ্বাসী, এটাই কি আমার অপরাধ!
হকের পথে যত বাধা - .
হকের উপরে অবিচল থাকতে দৃঢ় প্রত্যয়ী
এই মসজিদে এসো না, আসলে গলা ধাক্কা দিয়ে বের করে দিব। - কাউছার, মাদারগঞ্জ, জামালপুর।
ভ্রান্ত আক্বীদার বেড়াজাল ছিন্ন হ’ল যেভাবে - -আরিফ হাসান আল-গালিব, শার্শা, যশোর।
আক্বীদার কারণে শত্রুতে পরিণত হওয়া আপন ভাইও শেষ পর্যন্ত হকের দিশা পেলেন - আত-তাহরীক ডেস্ক
তোর মতো ছালাত পড়া তো জীবনে কোথাও দেখিনি! - আকীকুল হাসান
ও চটি বই পড়ে পাগল হয়ে গেছে...
মাযহাব না মানার কারণে আশ্রয় হারাতে হ’ল - -খালিদ সাইফুল্লাহ, গাযীপুর।
আরও
আরও
.