চাঁদের রূপালী আলোয় পথ চলতে চলতে বিশাল আকাশের পানে মাঝে মাঝে চেয়ে দেখি অজস্র তারার মিলনমেলা। লোকালয় থেকে অদূরে ফসলী ক্ষেতকে ছুয়ে আসা প্রবাহিত বায়ুর সাথে ভেসে আসে নিকটবর্তী কোন স্থানে মুসলমানদের মাহফিলের সুরে-বেসুরে বক্তাদের বক্তব্যের অংশ। মাথাটা ঝিম ঝিম করে উঠে, আসলেই তো তাই। আমরা যে মূর্তির পূজা করি, খাবার দেই তারা তো এগুলো খায় না। একটা মাছি মূর্তির নাকের উপর বসলেও সে তা দূর করতে পারে না। তাহ’লে কেন আমরা তাদের কাছে সাহায্য চাই। মানুষেরাই এই মূর্তিগুলো তৈরী করে আবার পূজা শেষে মূর্তিগুলো পানিতে ফেলে বিসর্জন দেয়।

... না ভাবতে পারছি না, সময়গুলো কেমন জানি থমকে দাঁড়ায়। কি ভাবছি! না এসব ধর্মবিরোধী চিন্তা-ভাবনা। এগুলো ভাবতে নেই। সময়ের আবর্তনে দিন-মাস-বছর গড়িয়ে আবার শীতের মৌসুম শুরু হয়। কিছুদিন পর পর বিভিন্ন স্থানে মাহফিল। মনটা কেমন যেন উদাস হয়ে যায়। কানটা কি কোন আহক্ষান শ্রবণের প্রতীক্ষায় থাকে? হয়তো হ্যঁা।

কিন্তু কি সেই আহক্ষান। তাদের নবী ইবরাহীমের সেই কথাগুলো- তোমরা কি আল্লাহর পরিবর্তে এমন কিছুর ইবাদত কর...।

মাঝে মাঝে প্রতিবেশী মুসলমান ভাইয়েরা অবশ্য বলে শ্যামল ইসলাম গ্রহণ কর। কিন্তু মন সায় দেয় না। হেসে উড়িয়ে দেই। কিন্তু তাদের কুরআনের সুমিষ্ট আয়াতের আহক্ষান এড়িয়ে যাওয়া এক সময় আমার পক্ষে আর সম্ভব হয়নি। একদিন দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করে ফেললাম ‘ইসলামই জগতে সত্য ধর্ম, আমি ইসলাম গ্রহণ করব’।

ভেবে-চিন্তে আব্দুল বারেক নামে একজন ইমাম ছাহেবের নিকট কালেমা পড়ে মুসলমান হয়ে ঐ মসজিদ সংযুক্ত কক্ষে থাকতে লাগলাম। তখন আমি একটা পোশাক কারখানায় চাকুরী করি। আমার নাম শ্যামল চন্দ্র বর্মন, পিতা রমেশ চন্দ্র বর্মন। তিন ভাই তিন বোনের মধ্যে আমি পঞ্চম। আমার বড় বোন (লক্ষ্মীরাণী বর্মন) তখন আমাদের এলাকার সংরক্ষিত আসনের মেম্বার। তাই ইসলাম গ্রহণের কথা শ্রবণের সাথে সাথে পরিবারে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া হ’ল।

মা কান্নাকাটি করছেন, ভাই-বোনরা দুঃখে ও ক্ষোভে জর্জরিত। তাদের আহক্ষান স্ব-ধর্মে ফিরে যাওয়ার। সপ্তাহখানেক পর মায়ের মুখচ্ছবি, ভাই-বোনদের সাথে সুখ-দুঃখের স্মৃতিগুলো বার বার মনকে ব্যথিত করায় ইসলাম ত্যাগ করে বাড়িতে ফিরে গেলাম। জনপ্রতিনিধি বোন এলাকার পুরুষ মুসলমান জনপ্রতিনিধি ও সাথীদের ডেকে বাড়িতে আমাকে সংশোধন হয়ে আসায় এই ধর্মের উপর দৃঢ় থাকার জন্য জোরালো মনোভাব ব্যক্ত করলেন।

এ সময় মুসলমান জনপ্রতিনিধি ধমক দিয়ে বললেন, পুনরায় উল্টাপাল্টা করলে বেঁধে যবেহ করে পার্শ্ববর্তী নদীতে ফেলে দিব। আমিও ধমক খেয়ে চুপ করে রইলাম। ধর্মান্তরিত হয়ে অতিবাহিত করা এক সপ্তাহের স্মৃতি নিজেকে সারাটা ক্ষণ বিষিয়ে তুলছে। হৃদয়ে অনুভূতির ব্যাপকতা তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। শুধুই মনে হচ্ছে শয়তানের প্ররোচনায় দুনিয়ার ভালোবাসায় সত্য ধর্মটা পেয়েও হারিয়ে ফেললাম! পরিবার, স্বজন কেউ তো এ পৃথিবীতে চিরকাল থাকবে না। যার যার হিসাব তাকে দিতে হবে। আমি এটা কি করলাম? এভাবেই প্রতিনিয়ত রাত-দিন মানসিক যন্ত্রণা শেষে মাসাধিক কালের মধ্যেই পুনরায় দৃঢ় সিদ্ধান্ত নিলাম, যা-ই হউক যতদিন বেঁচে থাকি অবশ্যই মুসলমান হিসাবে এই পৃথিবীতে জীবনযাপন করব। তখন রামাযান মাস, বাড়ি থেকে বিদায় নিয়ে কারখানার অদূরে অবস্থান করার জন্য গেলাম। বাড়ি থেকে বার বার বলে দেয়া হয়েছে পুনরায় যেন ধর্মান্তরিত না হই। কথাগুলো কানে শ্রবণ করেছি। কিন্তু হৃদয়ে স্থান দেয়ার সময় কোথায়?

কাথোরা, বোর্ডবাজার এলাকার ইয়াতীমখানা মাদ্রাসার মসজিদের ইমাম ছাহেব লোকমান ভাইকে বিস্তারিত জানালে তিনি বললেন, আপনি পুনরায় যাচাই করে তারপর সিদ্ধান্ত নিন। সাথী ইবরাহীম ভাইও একই কথা বললেন। আমি বললাম, আর যাচাই করে সময় ক্ষেপণের সুযোগ নেই। আমি এবার দৃঢ় সিদ্ধান্ত নিয়েই এসেছি। তখন ইমাম ছাহেব আমাকে কালেমা পড়ালেন।

আলহামদুলিল্লাহ! মহান আল্লাহর রহমতে আমি একজন মুসলমান হিসাবে নিজেকে ফিরে পেলাম। শ্যামল থেকে খালিদ সাইফুল্লাহ নাম ধারণ করে মুসলমান হিসাবে নিজেকে ঘোষণা দেয়ার পর পরিবার থেকে পুনরায় চাপ আসতে থাকে। তবে প্রথমবারের মতো জোরালো নয়। এরই মধ্যে মসজিদের পাশেই আমার থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। আমি ধীরে ধীরে ছালাতের নিয়মাবলীসহ ইসলামী শরী‘আতের অন্যান্য বিষয়গুলো সম্পর্কে ধারণা নিয়ে সাধ্যমতো আমলের চেষ্টা করতে থাকি। সময়ের পরিক্রমায় একদিন দেখা হয় তাজুল নামে এক ভাইয়ের সাথে। তিনি নিজেও কয়েক বছর পূর্বে ব্রাহ্মণ থেকে মুসলমান হয়েছেন। তিনি আমাকে বললেন মহান আল্লাহর রহমতে যাচাই করে ধর্মান্তরিত হয়েছেন। তাই এই ধর্মের দিক-নির্দেশনাগুলোও তো সঠিকভাবে জানতে হবে তাই না?

বললাম, অবশ্যই ভাই। তিনি আমাকে ছহীহ-শুদ্ধভাবে রাসূল (ছাঃ)-এর নিয়মে ছালাত আদায় করার জন্য একটা ছালাত শিক্ষা বই দিলেন। ছালাতের প্রতিটি নিয়ম-কানূন দলীলসহ উল্লেখ ছিল। মহান আল্লাহর রহমতে সত্যটা বুঝতে আমার বেগ পেতে হয়নি। নিজে পড়ে বইটি ইমাম ছাহেবকে দেখিয়ে বললাম, এখানে যা উল্লেখ করা আছে তা কি সঠিক? তিনি পড়ে বললেন, জ্বী সঠিক। আপনার ইচ্ছা আপনি কিভাবে ছালাত আদায় করবেন। মাযহাব অনুযায়ী আমাদেরটাও সঠিক। ইমাম ছাহেব যেহেতু সঠিক বলেছেন এবং আমারও বিশ্বাস জন্মেছে রাসূল (ছাঃ)-এর ছালাত এই বইটি সত্যের অধিক নিকটবর্তী। তখন থেকে আমি ছহীহ হাদীছ অনুযায়ী ছালাত আদায় শুরু করি।

মুছল্লীরা প্রথম থেকেই বিব্রত হচ্ছেন। অনেকেই বুঝিয়েছেন, তবে কঠোরতা আরোপ করেননি। আফসোস করে বলেছেন, তুমি মাযহাব মেনে আমল কর, আমরাই তোমার বিবাহ, বাসস্থানের ব্যবস্থা করে দেব ইনশাআল্লাহ। আমি এক বাক্যেই বলেছি, যাচাই করে ধর্মান্তরিত হয়েছি, যাচাই করেই সঠিকটা মানার চেষ্টা করব ইনশাআল্লাহ। তখন প্রভাবশালী এক ভাই বলেছেন, নিজের মতের উপর যেহেতু অটল থাকবে তাহ’লে তুমি এই মসজিদে ছালাত আদায় না করে তোমার মতো করে যারা ছালাত আদায় করেন, অদূরেই তাদের মসজিদ আছে সেখানে গিয়ে ছালাত আদায় কর।

অশ্রুসজল চোখে বিদায় নিয়ে সেই মসজিদে গমন করলাম। আমার পরিচয়, ধর্মান্তর, মাযহাব ত্যাগ সম্পর্কে দায়িত্বশীল ও ইমাম ছাহেবকে অবহিত করলাম। তারা আমাকে সানন্দেই আশ্রয় দিলেন। সেই থেকে এখনও মসজিদের পার্শ্ববতী বাড়িতে বাসা ভাড়া করে থাকি। সমাজের ও মসজিদের দায়িত্বশীলদের সহযোগিতায় জীবনসঙ্গীনী ও একমাত্র সন্তানকে নিয়ে দিন অতিবাহিত করছি। স্বায়ত্বশাসিত একটি প্রতিষ্ঠানে শিফটে ভাগ হয়ে নিরাপত্তা প্রহরী হিসাবে কাজ করি। আর আহলেহাদীছ আলেমদের লিখিত বই প্রতি জুম‘আয় বিভিন্ন মসজিদে এবং অবসরে ধর্মীয় সভায় বিক্রয় করি। পাশাপাশি ছোট্ট একটি বই বিক্রয়ের দোকানও রয়েছে আলহাম্দুলিল্লাহ।

মায়ের কথা মনে হ’লেই সাধ্যমতো উপহার সামগ্রী নিয়ে মা ও স্বজনদের সাথে দেখা করতে ফেলে আসা ঠিকানায় যাই। তাদেরও ইসলামের সুশীতল ছায়ায় প্রবেশের জন্য বিভিন্নভাবে অনুরোধ করি, মহান আল্লাহর কাছেও তাদের জন্য প্রতিক্ষণ হেদায়াতের দো‘আ করি।

অথচ জন্মগতভাবে যারা মুসলমান তাদের অধিকাংশই পাঁচ ওয়াক্ত ছালাত আদায় করেন না, সকল ধরনের অনৈসলামী কাজের সাথে জড়িত আছেন, দুনিয়ার লোভে নিজেদের আখেরাত নষ্ট করছেন। ইসলামের শাশ্বতরূপ আস্বাদন থেকে প্রতিনিয়ত বঞ্চিত হচ্ছেন। সকলের কাছে আমার আহবান থাকবে নিজের আক্বীদাকে সংশোধন করুন, পাঁচ ওয়াক্ত ছালাত আদায় করুন, সাধ্যমতো জ্ঞানী ব্যক্তিদের সান্নিধ্যে থেকে পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছের আলোকে লেখা বইগুলো বিশেষত ‘হাদীছ ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ’ প্রকাশিত বই-পুস্তক অধ্যয়ন করে নিজে সংশোধন হৌন, পরিবার, আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশীদের মাঝে সত্যের দাওয়াত ছড়িয়ে দিন। আল্লাহ আমাদের সবাইকে দ্বীনে হকের উপরে টিকে থাকার তাওফীক্ব দান করুন-আমীন!







আহলেহাদীছ আক্বীদায় বিশ্বাসী, এটাই কি আমার অপরাধ!
আক্বীদার কারণে শত্রুতে পরিণত হওয়া আপন ভাইও শেষ পর্যন্ত হকের দিশা পেলেন - আত-তাহরীক ডেস্ক
কোন মুফতী লাগবে না... তুই কাফের হয়ে গেছিস - ডা. মুহাম্মাদ মাহবূবুর রহমান
কুসংস্কারাচ্ছন্ন একটি সমাজে তাওহীদের চারাগাছ রোপিত হ’ল যেভাবে - মুহাম্মাদ বেলাল বিন ক্বাসেম
যেভাবে হকের দিশা পেলাম! - আত-তাহরীক ডেস্ক
যেভাবে আহলেহাদীছ আক্বীদা গ্রহণ করলাম - আত-তাহরীক ডেস্ক
তুমি বেলাইনে চলে গেছ - মুহাম্মাদ হাবীবুর রহমান
থাপড়িয়ে দাঁত ফেলে দেব - -আব্দুল্লাহ, গাযীপুর।
এই মসজিদে এসো না, আসলে গলা ধাক্কা দিয়ে বের করে দিব। - কাউছার, মাদারগঞ্জ, জামালপুর।
হক-এর পথে যত বাধা - হাসান আলী ঈশ্বরদী,পাবনা
তোর মতো ছালাত পড়া তো জীবনে কোথাও দেখিনি! - আকীকুল হাসান
হকের পথে যত বাধা - .
আরও
আরও
.