পর্ব ১ । পর্ব ২ । পর্ব ৩ । পর্ব ৪ । শেষ পর্ব ।
(মুক্বাল্লিদদের) একটি চালাকি :
আধুনিক যুগে দেওবন্দী ও ব্রেলভী আলেমগণ এই চালাকি করেন যে, তারা তাক্বলীদের অর্থই পরিবর্তন করে দেন। যাতে সাধারণ মানুষ তাক্বলীদের প্রকৃত অর্থ জেনে না যায়। কতিপয় উদাহরণ নিম্নরূপ-
(১) মুহাম্মাদ ইসমাঈল সাম্ভলী বলেছেন, ‘কোন
ব্যক্তির কোন আলেমের এবং দ্বীনের অনুসৃত ব্যক্তির কথা ও কাজকে স্রেফ
সুধারণা ও নির্ভরতার ভিত্তিতে শরী‘আতের হুকুম মনে করে তার উপর আমল করা এবং
আমল করার জন্য সেই মুজতাহিদের উপর নির্ভরতার ভিত্তিতে দলীলের অপেক্ষা না
করা এবং দলীল অবগত হওয়া পর্যন্ত আমলকে মুলতবী না করাকে পরিভাষায় তাক্বলীদ
বলা হয়’।[1]
(২) মুহাম্মাদ যাকারিয়া কান্ধলভী
তাবলীগী দেওবন্দী বলেছেন, ‘কেননা তাক্বলীদের সংজ্ঞা এভাবে করা হয়েছে যে,
শাখা-প্রশাখাগত ফিক্বহী মাসায়েলে মুজতাহিদ নন এমন ব্যক্তির মুজতাহিদের
কথাকে গ্রহণ করে নেয়া এবং তার কাছ থেকে দলীল তলব না করা এই ভরসায় যে, এই
মুজতাহিদের কাছে দলীল রয়েছে’।[2]
(৩)
মুহাম্মাদ তাক্বী ওছমানী দেওবন্দী বলেছেন, ‘বস্ত্ততঃ আল্লামা ইবনুল হুমাম ও
ইবনু নুজায়েম এই শব্দগুলোর মাধ্যমে ‘তাক্বলীদ’-এর সংজ্ঞা প্রদান
করেছেন,التَّقْلِيدُ الْعَمَلُ بِقَوْلِ مَنْ لَيْسَ قَوْلُهُ إحْدَى
الْحُجَجِ بِلَا حُجَّةٍ مِنْهَا- ‘ঐ ব্যক্তির কথার উপর দলীলবিহীন আমল
করাকে তাক্বলীদ বলে, যার কথা (চারটি) দলীলের মধ্য হ’তে একটি নয়’।[3]
‘তাক্বলীদের উদ্দেশ্য এটা যে, যে ব্যক্তির কথা শরী‘আতের উৎসমূহের অন্তর্ভুক্ত নয়, দলীল তলব করা ছাড়াই তার কথার উপর আমল করা’।[4]
এই অনুবাদ ও উদ্ধৃতিগুলিতে দু’টি চালাকি করা হয়েছে।
প্রথমতঃ হুজ্জত ছাড়াই (দলীল ব্যতীত)-এর অনুবাদ ‘দলীল তলব ব্যতিরেকে’ করে দেওয়া হয়েছে। মূল ভাষ্যে তলবের কোন কথাই উল্লেখ নেই।
দ্বিতীয়তঃ অবশিষ্ট ইবারত (ভাষ্য) গোপন করা হয়েছে। যেখানে এটা স্পষ্টভাবে আছে যে, নবী করীম (ছাঃ) এবং ইজমার দিকে প্রত্যাবর্তন করা, সাধারণ মানুষের ‘মুফতী’র (আলেম) কাছে মাসআলা জিজ্ঞাসা করা এবং সাক্ষীদের সাক্ষ্যের ভিত্তিতে বিচারকের ফায়ছালা করা তাক্বলীদ নয়।
(৪) মাস্টার আমীন উকাড়বী দেওবন্দী
বলেছেন, ‘হাকীমুল উম্মত হযরত মাওলানা আশরাফ আলী থানবী (রহঃ) তাক্বলীদের
সংজ্ঞা প্রদান করতে গিয়ে লিখেছেন, ‘তাক্বলীদ বলা হয় কারো কথাকে স্রেফ এই
সুধারণার ভিত্তিতে মেনে নেওয়া যে, ইনি দলীলের অনুকূলে বলবেন এবং তার থেকে
দলীলের তাহক্বীক্ব না করা’।[5] তাক্বলীদের এই সংজ্ঞা মোতাবেক রাবীর বর্ণনাকে গ্রহণ করা তাক্বলীদ ফির-রিওয়ায়াহ (বর্ণনায় তাক্বলীদ)’।[6]
(৫)
মুহাম্মাদ নাযিম আলী খান ক্বাদেরী ব্রেলভী বলেছেন, ‘কুরআনের আয়াত মুজমাল
(সংক্ষিপ্ত) এবং মুশকিল (দুর্বোধ্য) হয়। এর মধ্যে কিছু আয়াত বিবাদমূলক
রয়েছে। কিছু আয়াত কিছু আয়াতের সাথে সাংঘর্ষিকও আছে। সমন্বয়ের ও বিরোধ দূর
করার পদ্ধতি তার জানা নেই। তার দোদুল্যমনতা ও সন্দেহ সৃষ্টি হচ্ছে।
এমতাবস্থায় মানুষ কেবল নিজের বিবেক, চিন্তা-গবেষণা ও শুধুমাত্র মস্তিষ্কের
দ্বারাই কাজ নিবে না। বরং কোন গভীর জ্ঞানের অধিকারী আলেম ও মুজতাহিদের
অনুসরণ ও অনুকরণ করবে। তার নিকটে রাস্তা ও পন্থা অনুসন্ধান করবে। অন্য কারো
দিকে প্রত্যাবর্তন করবে না। এটাই হ’ল তাক্বলীদে শাখছী। যা রাসূল (ছাঃ) ও
ছাহাবায়ে কেরামের যুগ হ’তে রয়েছে’।[7]
(৬) সাঈদ আহমাদ পালনপুরী দেওবন্দী লিখেছেন, ‘আলেমদের নিকট থেকে মাসআলা জিজ্ঞেস করা, অতঃপর তার অনুসরণ করাই তাক্বলীদ’।[8]
তাক্বলীদের এই মনগড়া ও সূত্রবিহীন সংজ্ঞা দ্বারা জানা গেল যে, দেওবন্দী ও ব্রেলভী সাধারণ জনতা যখন তাদের আলেমের (মৌলভী ছাহেব) নিকট থেকে মাসআলা জিজ্ঞাসা করে তার উপর আমল করে, তখন তারা ঐ আলেমের মুক্বাল্লিদ বনে যায়। সাঈদ আহমাদের কাছ থেকে মাসআলা জিজ্ঞাসাকারী হানাফী থাকে না। বরং সাঈদ আহমাদী (অর্থাৎ সাঈদ আহমাদ ছাহেবের মুক্বাল্লিদ) বনে যায়।
এ সকল সংজ্ঞা মনগড়া। যেগুলির প্রমাণ পূর্ববর্তী আলেমদের কাছ থেকে পাওয়া যায় না। এ সংজ্ঞাগুলিকে বিকৃতি (تحريفات) বলাই সঙ্গত।
তাক্বলীদের মর্ম স্রেফ এটাই যে, নবী করীম (ছাঃ) ব্যতীত অন্য কারো দলীলবিহীন কথাকে হুজ্জত (দলীল) হিসাবে মেনে নেয়া, যা চারটি দলীলের অন্তর্ভুক্ত নয়। এই সংজ্ঞার উপর জমহূর বিদ্বানের ঐক্যমত রয়েছে।
জ্ঞাতব্য : অভিধানে তাক্বলীদের অন্যান্য অর্থও আছে। কতিপয় আলেম এই আভিধানিক অর্থগুলিকে কোন কোন সময় ব্যবহার করেছেন। যেমন-
১.
আবূ জা‘ফর ত্বাহাবী হাদীছ মানাকে তাক্বলীদ বলেছেন। যেমন তিনি বলেছেন,
فَذَهَبَ قَوْمٌ إِلَى هَذَا الْحَدِيْثِ فَقَلَّدُوْهُ ‘একটি দল এই
(মারফূ) হাদীছের দিকে গিয়েছেন। ফলে তারা এই (হাদীছের) তাক্বলীদ করেছেন’।[9]
পূর্বে হানাফী, মালেকী, শাফেঈ ও হাম্বলীদের গ্রন্থসমূহ হ’তে বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করা হয়েছে যে, নবী করীম (ছাঃ)-এর কথা (অর্থাৎ হাদীছ) মানা তাক্বলীদ নয়। সুতরাং ইমাম ত্বাহাবীর হাদীছের ব্যাপারে তাক্বলীদ শব্দটি ব্যবহার করা ভুল। ইমাম আবূ হানীফা (রহঃ)-এর ব্যাপারে এটি প্রমাণিত সত্য যে, তিনি হাদীছ মানতেন। তাহ’লে কি এখন এ কথা বলা ঠিক হবে যে, ইমাম আবূ হানীফা মুজতাহিদ নন; বরং মুক্বাল্লিদ ছিলেন? হাদীছ মেনে তিনি যদি মুক্বাল্লিদ না হন, তাহলে অন্য মানুষ হাদীছ মেনে কিভাবে মুক্বাল্লিদ হ’তে পারে?
২. ইমাম শাফেঈ (রহঃ) বলেছেন,ولا يقلد أحد دون رسول الله صلى الله عليه وسلم- ‘রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ব্যতীত কারো তাক্বলীদ করা যাবে না’।[10]
এখানে তাক্বলীদ শব্দটি রূপকভাবে ব্যবহার করা হয়েছে। ইমাম শাফেঈর কথার উদ্দেশ্য এটা যে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ব্যতীত কোন ব্যক্তির কথাকে দলীল ছাড়াই গ্রহণ করা উচিত নয়।
তাক্বলীদের অন্তর্নিহিত মর্মের সারাংশ : যেমনটা পূর্বে বর্ণনা করে দেয়া হয়েছে যে, নবী ব্যতীত অন্যের দলীলবিহীন কথাকে চোখ বন্ধ করে, চিন্তা-ভাবনা ছাড়া মানাকে তাক্বলীদ বলা হয়।
তাক্বলীদের দু’টি প্রকার প্রসিদ্ধ রয়েছে-
(১) তাক্বলীদে গায়ের শাখছী (তাক্বলীদে মুত্বলাক্ব) :
এতে তাক্বলীদকারী (মুক্বাল্লিদ) কোনরূপ খাছ করা ছাড়াই নবী ব্যতীত অন্যের দলীলবিহীন কথাকে চোখ বন্ধ করে, চিন্তা-ভাবনা ছাড়াই মান্য করে।
জ্ঞাতব্য : অজ্ঞ ব্যক্তির আলেমের কাছ থেকে মাসআলা জিজ্ঞাসা করা একেবারেই হক ও সঠিক। একে তাক্বলীদ বলা হয় না। যেমনটি পূর্বে সূত্রসহ বর্ণিত হয়েছে।
কিছু ব্যক্তি ভুল ও ভুল বুঝের কারণে একে তাক্বলীদ বলে। অথচ এটা ভুল। একজন মূর্খ ব্যক্তি যখন তাক্বী ওছমানী দেওবন্দী বা গোলাম রাসূল সা‘ঈদী ব্রেলভীর কাছ থেকে মাসআলা জিজ্ঞাসা করে আমল করে তখন কেউই এটা বলে না ও বুঝে না যে, এই ব্যক্তি তাক্বী ওছমানীর মুক্বাল্লিদ (তাক্বী ওছমানবী) বা গোলাম রাসূলের মুক্বাল্লিদ (গোলাম রাসূলবী)।
(২) তাক্বলীদে শাখছী :
এতে তাক্বলীদকারী (মুক্বাল্লিদ) নির্দিষ্টভাবে নবী করীম (ছাঃ) ব্যতীত কোন একজন ব্যক্তির প্রতিটি কথা ও কাজকে চোখ বন্ধ করে, চিন্তা-ভাবনা ছাড়াই অন্ধের মত মান্য করে।
তাক্বলীদে শাখছীর দু’টি প্রকার রয়েছে :
ক. ইমাম চতুষ্টয় ব্যতীত কোন জীবিত বা মৃত নির্দিষ্ট ব্যক্তির তাক্বলীদে শাখছী করা।
খ. ইমাম চতুষ্টয় (আবূ হানীফা, মালেক, শাফেঈ ও আহমাদ)-এর মধ্য থেকে স্রেফ একজন ইমামের তাক্বলীদে শাখছী। অর্থাৎ চিন্তা-ভাবনা ছাড়া অন্ধের মত চোখ বন্ধ করে প্রত্যেকটি কথা ও কাজের তাক্বলীদ করা।
এই দ্বিতীয় প্রকারটির আরো দু’টি প্রকার রয়েছে :
(১) এই দাবী করা যে, আমরা কুরআন, হাদীছ, ইজমা ও ইজতিহাদ মানি। দলীলভিত্তিক মাসায়েলে তাক্বলীদ করি না। আমরা শুধু ইজতিহাদী মাসায়েলে ইমাম আবূ হানীফা এবং হানাফীদের ফৎওয়া প্রদানকৃত মাসায়েলের তাক্বলীদ করি। যদি ইমামের কথা কুরআন ও হাদীছের বিপরীত হয় তাহ’লে আমরা ছেড়ে দেই...।
এই দাবী নব্য দেওবন্দী ও ব্রেলভী তার্কিকদের যেমন ইউনুস নু‘মানী প্রমুখের।
(২) সকল মাসাআলায় ইমাম আবূ হানীফা ও হানাফীদের ফৎওয়া প্রদানকৃত মাসায়েলের তাক্বলীদ করা। যদিও এই মাসআলাগুলি কুরআন ও হাদীছের খেলাফ এবং অপ্রমাণিতও হয়। ফৎওয়া প্রদানকৃত বক্তব্যের বিপরীতে কুরআন, সুন্নাহ ও ইজমাকে প্রত্যাখ্যান করা।
এটাই সেই তাক্বলীদ, যা বর্তমান দেওবন্দী ও ব্রেলভী সাধারণ মানুষ ও অধিকাংশ আলেম করছেন। যেমনটি সামনে সূত্রসহ আসছে।
দলীলবিহীন
তাক্বলীদের সকল প্রকারই ভুল ও বাতিল। কিন্তু তাক্বলীদের এই প্রকারটি
অত্যন্ত বিপজ্জনক ও গোমরাহী। এটাই সেই (তাক্বলীদ), আহলেহাদীছ ও সালাফী আলেম
এবং তাদের সাধারণ জনগণ কঠিনভাবে যেটির বিরোধিতা করে থাকেন। আমাদের উস্তাদ
হাফেয আব্দুল মান্নান নূরপূরী এই তাক্বলীদের ব্যাখ্যা নিম্নোক্ত বাক্যে
করেছেন- ‘তাক্বলীদ অর্থাৎ কুরআন ও সুন্নাহর বিপরীত কোন কথা ও কাজকে গ্রহণ
করা বা তার উপর আমল করা’।[11]
উছূলে ফিক্বহে দক্ষ হাফেয ছানাউল্লাহ যাহেদী ছাহেব লিখেছেন,
الالتزام بفقه معين من الفقهاء والجمود عليه بكل شدة وعصبية، والاحتيال بتصحيح أخطاءه إن أمكن وإلا فالإصرار عليها، مع التكلف بتضعيف ما صح من حيث الأدلة من رأي غيره من الفقهاء-
অর্থাৎ ফক্বীহগণের মধ্য হ’তে একজন
নির্দিষ্ট ফক্বীহর ফিক্বহকে অত্যন্ত কঠোরতা ও গোঁড়ামির সাথে অাঁকড়ে ধরা ও
তার উপর স্থবির থাকা এবং সাধ্যমত তার ভুলগুলিকে সঠিক প্রমাণ করার জন্য কৌশল
অবলম্বন (এবং চালাকী করা)। আর যদি সম্ভব না হয় তাহ’লে তার উপর যিদ করা।
অন্য ফক্বীহগণের যে সকল দলীল ছহীহ প্রমাণিত হয়েছে সেগুলিকে যঈফ সাব্যস্ত
করার জন্য পূর্ণ কৃত্রিমতার সাথে চেষ্টা করা’।[12]
খুবই সম্ভব যে, কতিপয় দেওবন্দী ও ব্রেলভী আলেম এই ‘তাক্বলীদে শাখছী’কে অস্বীকার করতে পারেন। এজন্য আপনাদের খেদমতে কতিপয় উদ্ধৃতি পেশ করা হচ্ছে-
(১)
আব্দুল্লাহ বিন ওমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত নবী করীম (ছাঃ) বলেছেন,إِنَّ
المُتَبَايِعَيْنِ بِالخِيَارِ فِي بَيْعِهِمَا مَا لَمْ يَتَفَرَّقَا أَوْ
يَكُوْنُ البَيْعُ خِيَارًا، ‘ক্রেতা ও বিক্রেতা যতক্ষণ (দৈহিকভাবে)
বিচ্ছিন্ন না হবে, ততক্ষণ তাদের কেনা-বেচার ব্যাপারে উভয়ের এখতিয়ার থাকবে।
আর যদি খিয়ারের শর্তে ক্রয়-বিক্রয় হয় (তাহ’লে পরেও এখতিয়ার থাকবে’। (নাফে‘
বলেন) ইবনু ওমর (রাঃ) কোন বস্ত্ত ক্রয় করার পর তা পসন্দ হ’লে মালিক হ’তে
(দৈহিকভাবে) পৃথক হয়ে যেতেন’।[13]
হানাফী আলেমগণ এই মাসআলা মানেন না। অথচ ইমাম শাফেঈ ও মুহাদ্দিছীনে কেরাম এই ছহীহ হাদীছগুলির কারণে এই মাসআলার প্রবক্তা ও আমলকারী।
মাহমূদুল
হাসান দেওবন্দী ছাহেব বলেছেন,يترجح مذهبه وقال : الحق والإنصاف أن الترجيح
للشافعي في هذه المسئلة ونحن مقلدون يجب علينا تقليد إمامنا أبي حنيفة
والله اعلم- অর্থাৎ তার (ইমাম শাফেঈর) মাযহাব অগ্রগণ্য। তিনি (মাহমূদুল
হাসান) বলেছেন, ‘হক ও ইনছাফ এই যে, এই মাসআলায় (ইমাম) শাফেঈর অগ্রাধিকার
রয়েছে। আর আমরা মুক্বাল্লিদ। আমাদের উপর ওয়াজিব হ’ল আমাদের ইমাম আবূ
হানীফার তাক্বলীদ করা। আল্লাহই ভাল জানেন’।[14]
গভীরভাবে
চিন্তা করুন! কিভাবে হক ও ইনছাফকে ত্যাগ করে স্বীয় কল্পিত ইমামের
তাক্বলীদকে বুকের সাথে লাগিয়ে নেয়া হয়েছে। এই মাহমূদুল হাসান ছাহেবই
পরিষ্কারভাবে ঘোষণা করেন যে, ‘কিন্তু ইমাম ব্যতীত অন্য কারো কথার মাধ্যমে
আমাদের উপর হুজ্জাত কায়েম করা বিবেকবর্জিত’।[15]
মাহমূদুল হাসান দেওবন্দী ছাহেব আরো বলেছেন, ‘কেননা মুজতাহিদের কথাও রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর কথা হিসাবেই গণ্য হয়’।[16]
জনাব
মুহাম্মাদ হুসাইন বাটালভী ছাহেব দেওবন্দী ও ব্রেলভীদের কাছ থেকে তাক্বলীদে
শাখছী ওয়াজিব হওয়ার দলীল চেয়েছিলেন। এর জবাব দিতে গিয়ে মাহমূদুল হাসান
ছাহেব দাবী করেছেন, ‘আপনি আমার কাছ থেকে তাক্বলীদ ওয়াজিব হওয়ার দলীল
চাচ্ছেন। আমি আপনার কাছ থেকে মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর অনুসরণ এবং কুরআনের
অনুসরণের সনদ তলব করছি’।[17]
(২) নবী করীম
(ছাঃ)-এর যুগে একজন মহিলা নবী করীম (ছাঃ)-এর শানে বেআদবী করত। ফলে তার
স্বামী তাকে হত্যা করে। নবী করীম (ছাঃ) বললেন, أَلَا اشْهَدُوْا أَنَّ
دَمَهَا هَدَرٌ ‘তোমরা সাক্ষী থাক! তার রক্ত বৃথা’।[18]
এই হাদীছ ও অন্যান্য দলীলসমূহ দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, রাসূল (ছাঃ) সম্পর্কে বেআদবীকারীকে হত্যা করা আবশ্যক।[19] এই মত ইমাম শাফেঈ ও মুহাদ্দিছীনে কেরামের। অথচ হানাফীদের নিকটে রাসূলকে গালিদাতার যিম্মা অবশিষ্ট থাকে।[20]
শায়খুল
ইসলাম ইবনু তায়মিয়াহ (রহঃ) লিখেছেন,وَأَمَّا أَبُو حَنِيفَةَ
وَأَصْحَابُهُ فَقَالُوا : لَا يُنْتَقَضُ الْعَهْدُ بِالسَّبِّ، وَلَا
يُقْتَلُ الذِّمِّيُّ بِذَلِكَ لَكِنْ يُعَزَّرُ عَلَى إظْهَارِ ذَلِكَ...
‘আবূ হানীফা ও তাঁর সাথীগণ বলেছেন, (রাসূলকে) গালি দেয়ার কারণে চুক্তি ভঙ্গ
হবে না এবং এজন্য যিম্মীকে হত্যা করা যাবে না। তবে প্রকাশ্যে এরূপ করলে
ভৎর্সনা করা হবে’।[21]
এই নাযুক মাসআলার
ব্যাপারে ইবনু নুজায়েম হানাফী লিখেছেন,نَعَمْ نَفْسُ الْمُؤْمِنِ تَمِيْلُ
إلَى قَوْلِ الْمُخَالِفِ فِي مَسْأَلَةِ السَّبِّ لَكِنَّ اتِّبَاعَنَا
لِلْمَذْهَبِ وَاجِبٌ- ‘হ্যাঁ, গালির ব্যাপারে মুমিনের অন্তর বিরোধীদের
মতের দিকে ঝুঁকে পড়ে। কিন্তু আমাদের জন্য মাযহাবের আনুগত্য করা ওয়াজিব’।[22]
(৩)
হুসাইন আহমাদ মাদানী টান্ডাবী লিখেছেন, ‘একটি ঘটনা বর্ণিত হয়েছে যে, একবার
তিনজন আলেম (হানাফী, শাফেঈ ও হাম্বলী) একত্রিত হয়ে এক মালেকীর কাছে গেলেন
এবং জিজ্ঞাসা করলেন যে, তুমি কেন ‘ইরসাল’ কর? তিনি জবাব দিলেন যে, আমি ইমাম
মালেকের মুক্বাল্লিদ। তার কাছে গিয়ে দলীল জিজ্ঞাসা কর। যদি আমার দলীল জানা
থাকত তাহ’লে কেন তাক্বলীদ করব? তখন তারা চুপ হয়ে গেলেন’।[23]
ইরসাল অর্থ হাত ছেড়ে দিয়ে ছালাত আদায় করা।
(৪)
একটি বর্ণনায় এসেছে,أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
كَانَ يُوتِرُ بِرَكْعَةٍ، وَكَانَ يَتَكَلَّمُ بَيْنَ الرَّكْعَتَيْنِ
وَالرَّكْعَةِ- ‘নবী করীম (ছাঃ) এক রাক‘আত বিতর পড়তেন এবং তিনি দু’রাক‘আত ও
এক রাক‘আতের মাঝে কথা বলতেন’।[24]
এমন একটি
বর্ণনা হাকেমের আল-মুসতাদরাক থেকে উল্লেখ করে আনওয়ার শাহ কাশ্মীরী দেওবন্দী
বলেছেন,وَلَقَدْ تَفَكَّرْتُ فِيْهِ قَرِيْباً مِنْ أَرْبَعَةَ عَشَرَ
سَنَةً ثُمَّ اسْتَخْرَجْتُ جَوَابَهُ شَافِياً وَذَلِكَ الْحَدِيْثُ
قَوِيُّ السَّنَدِ- ‘আমি এই হাদীছের (জওয়াবের) ব্যাপারে প্রায় ১৪ বছর
চিন্তা করেছি। অতঃপর এর সান্ত্বনাদায়ক ও সঠিক জবাব বের করেছি। আর তা এই যে,
হাদীছটি সনদের দিক থেকে শক্তিশালী’।[25]
(৫)
আহমাদ ইয়ার খান নাঈমী ব্রেলভী লিখেছেন, ‘এক্ষণে একটি ফায়ছালাকারী জওয়াব
দিচ্ছি। সেটা এই যে, আমাদের দলীল এই বর্ণনাগুলি নয়। আমাদের আসল দলীল তো
ইমামে আযম আবূ হানীফা (রাঃ)-এর আদেশ। আমরা এই আয়াত ও হাদীছগুলো মাসআলা
সমূহের সমর্থনের জন্য পেশ করে থাকি। হাদীছসমূহ বা আয়াতসমূহ হ’ল ইমাম আবূ
হানীফা (রাঃ)-এর দলীল’।[26]
উপরোল্লিখিত নাঈমী ছাহেব আরো লিখেছেন, ‘কেননা হানাফীদের দলীল এই বর্ণনাগুলি নয়। তাদের দলীল স্রেফ ইমামের বক্তব্য’।[27]
(৬) এক ব্যক্তি মুফতী মুহাম্মাদকে (দেওবন্দী, প্রতিষ্ঠাতা : দারুল ইফতা ওয়াল ইরশাদ, নাযিমাবাদ, করাচী) পত্র লিখেন যে, ‘এক ব্যক্তি তৃতীয় রাক‘আতে ইমামের সাথে শরীক হল। ইমাম যদি সহো সিজদার জন্য সালাম ফিরায় তাহ’লে তৃতীয় রাক‘আতে শরীক হওয়া মাসবূকও সালাম ফিরাবে, না ফিরাবে না? এখানে একজন বিতর্ক করছেন যে, যদি সালাম না ফিরায় তাহ’লে ইমামের ইক্তিদা (অনুসরণ) অবশিষ্ট থাকবে না। আপনি দলীল দিয়ে সন্তুষ্ট করবেন’ (মুজাহিদ আলী খান, করাচী)।
দেওবন্দী ছাহেব তার প্রশ্নের নিম্নোক্ত জবাব দিয়েছেন-
‘জবাব :
মাসবূক অর্থাৎ যে প্রথম রাক‘আতের পরে ইমামের সাথে শরীক হয়েছে, সে সহো
সিজদায় ইমামের সাথে সালাম ফিরাবে না। যদি ইচ্ছাকৃতভাবে সালাম ফিরায় তাহ’লে
ছালাত বাতিল হয়ে যাবে। ভুলে (সালাম) ফিরালে সহো সিজদা আবশ্যক। মাসআলা না
জানা থাকার কারণে (সালাম) ফিরালে ছালাত ফাসেদ হয়ে গেল। সাধারণ মানুষের জন্য
দলীল চাওয়া জায়েয নয়। আর না শারঈ মাসায়েলের ব্যাপারে আপোসে বিতর্ক করাও
জায়েয আছে। বরং কোন নির্ভরযোগ্য মুফতীর নিকট থেকে মাসআলা জেনে নিয়ে তার উপর
আমল করা যরূরী’।[28]
মুফতী মুহাম্মাদ ছাহেব আরো লিখেছেন, ‘মুক্বাল্লিদের জন্য তার ইমামের কথাই সবচেয়ে বড় দলীল’।[29]
(৭)
ছহীহ হাদীছে এসেছে,مَنْ أَدْرَكَ مِنَ الصُّبْحِ رَكْعَةً قَبْلَ أَنْ
تَطْلُعَ الشَّمْسُ، فَقَدْ أَدْرَكَ الصُّبْحَ، ‘সূর্য উদিত হওয়ার পূর্বে
যে ফজরের এক রাক‘আত পেল, সে অবশ্যই ফজরের (ছালাত) পেয়ে গেল’।[30]
হানাফী
ফিক্বহ এই ছহীহ হাদীছের বিরোধী। মুফতী রশীদ আহমাদ লুধিয়ানবী দেওবন্দী এ
মাসআলার ব্যাপারে কিছুটা গবেষণা করে লিখেছেন, ‘সারকথা হ’ল, এ মাসআলাটি এখনও
গবেষণাধীন। এতদসত্ত্বেও আমাদের ফৎওয়া ও আমল ইমাম আবূ হানীফা (রহঃ)-এর
বক্তব্য অনুযায়ীই থাকবে। এজন্য যে, আমরা ইমাম আবূ হানীফার মুক্বাল্লিদ। আর
মুক্বাল্লিদের জন্য ইমামের বক্তব্য হুজ্জাত বা দলীল হয়। দলীল চতুষ্টয়
(কুরআন, হাদীছ, ইজমা ও কিয়াস) নয়। কারণ এগুলি থেকে দলীল সাব্যস্ত করা
মুজতাহিদের কাজ’।[31]
লুধিয়ানবী ছাহেব
অন্যত্র লিখেছেন, ‘প্রশস্ততার খাতিরে বিদ‘আতীরা হানাফী ফিক্বহকে ছেড়ে কুরআন
ও হাদীছ থেকে দলীল গ্রহণ করে। আর লাগাম ঢিল দেয়ার জন্য আমরাও এ পদ্ধতি
গ্রহণ করে নেই। তা না হ’লে মুক্বাল্লিদের জন্য স্রেফ ইমামের কথাই হুজ্জাত
(দলীল) হয়ে থাকে’।[32]
মুফতী রশীদ আহমাদ
লুধিয়ানবী ছাহেব লিখেছেন, ‘এই আলোচনা দয়া করে লিখে দিয়েছি। নতুবা হাদীছের
দিকে প্রত্যাবর্তন করা মুক্বাল্লিদের কাজ নয়’।[33]
(৮) ক্বাযী যাহেদ হুসায়নী দেওবন্দী লিখেছেন, ‘অথচ প্রত্যেক মুক্বাল্লিদের জন্য শেষ দলীল হ’ল মুজতাহিদের বক্তব্য। যেমনটা ‘মুসাল্লামুছ ছুবূত’ গ্রন্থে আছে,أَمَّا الْمُقَلِّدُ فَمُسْتَنَدُهُ قَوْلُ الْمُجْتَهِدِ ‘মুক্বাল্লিদের দলীল হ’ল মুজতাহিদের কথা’।
এখন যদি একজন ব্যক্তি ইমাম
আবূ হানীফার মুক্বাল্লিদ হওয়ার দাবীদার হয় এবং সাথে সাথে সে ইমাম আবূ
হানীফার কথার সাথে বা আলাদাভাবে কুরআন ও সুন্নাহর দলীল তলব করে, তবে অন্য
কথায় সে নিজের ইমাম ও পথ প্রদর্শকের দলীল উপস্থাপনের উপর দৃঢ় বিশ্বাস রাখে
না’।[34]
(৯) আমের ওছমানীকে কেউ পত্র লিখেছেন, ‘রাসূল (ছাঃ)-এর হাদীছ দ্বারা জবাব দিবেন’।
আমের
ওছমানী ছাহেব তার জবাব দিয়েছেন, ‘এখন কিছু কথা এ বাক্য সম্পর্কেও বলে দেই।
যা আপনি প্রশ্নের উপসংহারে লিখেছেন। অর্থাৎ ‘রাসূলের হাদীছ দ্বারা জবাব
দিবেন’। এ ধরনের আবেদন অধিকাংশ প্রশ্নকারী করে থাকেন। এটা আসলে এই বিধান না
জানার ফল যে, মুক্বাল্লিদদের জন্য কুরআন ও হাদীছের উদ্ধৃতিসমূহের প্রয়োজন
নেই। বরং ফক্বীহ ও ইমামদের ফায়ছালা ও ফৎওয়াসমূহের প্রয়োজন রয়েছে’।[35]
(১০)
শায়খ আহমাদ সারহিন্দী লিখেছেন, ‘মুক্বাল্লিদের জন্য প্রযোজ্য নয় যে,
মুজতাহিদের রায়ের বিপরীতে কুরআন ও সুন্নাহ হ’তে বিধানাবলী গ্রহণ করবে এবং
তার উপর আমল করবে’।[36]
সারহিন্দী ছাহেব
তাশাহহুদে আঙ্গুল দ্বারা ইশারা করা সম্পর্কে বলেছেন, ‘যখন গ্রহণযোগ্য
বর্ণনাসমূহে ইশারা করার নিষিদ্ধতা রয়েছে এবং এর অপসন্দনীয় হওয়ার উপর ফৎওয়া
দেয়া হয়েছে; আর ইশারা ও মুষ্টিবদ্ধ করা থেকে নিষেধ করে থাকি এবং একে মাযহাব
প্রণেতাদের যাহেরী উছূল বা প্রকাশ্য মূলনীতি বলে থাকি, তখন আমাদের
মুক্বাল্লিদদের জন্য উপযুক্ত নয় যে, হাদীছ অনুযায়ী আমল করে ইশারা করার
দুঃসাহস দেখাব এবং এত মুজতাহিদ আলেমদের ফৎওয়া থাকার পরেও হারাম, মাকরূহ ও
নিষিদ্ধ কাজের পাপী হব’।[37]
উল্লেখিত
সারহিন্দী খাজা মুহাম্মাদ পারসা-এর ‘ফুছূলে সিত্তাহ’ থেকে উল্লেখ করেছেন
যে, ‘হযরত ঈসা (আঃ) অবতরণের পর ইমামে আযম (রাঃ)-এর মাযহাব অনুযায়ী আমল
করবেন’।[38]
(১১) আবুল হাসান কারখী হানাফী বলেছেন,
اَلأَصْل أَن كل آيَة تخَالف قَولَ أَصْحَابنِا فَإِنَّهَا تحمل على النّسخ أَو على التَّرْجِيح وَالْأولَى أَن تحمل على التَّأْوِيل من جِهَة التَّوْفِيق-
‘আসল
কথা হ’ল, প্রত্যেকটি আয়াত যা আমাদের মাযহাব প্রণেতাদের (ফকীহদের) মতের
বিপরীত হবে, সেগুলিকে ‘মানসূখ’ (হুকুম রহিত) কিংবা ‘মারজূহ’ (অগ্রহণযোগ্য)
হিসাবে গণ্য করতে হবে। উত্তম হ’ল সামঞ্জস্য বিধান করতে গিয়ে সেগুলিকে তাবীল
করা’।[39]
শাববীর আহমাদ ওছমানী দেওবন্দী
লিখেছেন, ‘(জ্ঞাতব্য : দুধ ছাড়ানোর মেয়াদ যা এখানে দু’বছর বর্ণনা করা হয়েছে
(তা) অধিকাংশের অভ্যাস অনুযায়ী। ইমাম আবূ হানীফা (রহঃ) যিনি সর্বোচ্চ
মেয়াদ আড়াই বছরের কথা বলেছেন, তার কাছে অন্য কোন দলীল থাকতে পারে। জমহূরের
নিকটে (দুধ ছাড়ানোর মেয়াদ) দু’বছরই। আল্লাহই ভাল জানেন’।[40]
এই উদ্ধৃতিগুলো দ্বারা প্রতীয়মান হ’ল যে, তাক্বলীদকারী আলেমরা না কুরআন মানেন আর না হাদীছ। আর না ইজমাকে নিজেদের জন্য হুজ্জাত (দলীল) মনে করেন। তাদের দলীল হচ্ছে স্রেফ ইমামের কথা।
শাহ অলীউল্লাহ দেহলভী লিখেছেন,
فَإِنْ شِئْتَ أَنْ تَرَى أُنْمُوْذَجَ الْيَهُوْدِ فَانْظُرْ إِلَى عُلَمَاءِ السُّوءِ، مِنَ الَّذِيْنَ يَطْلُبُوْنَ الدُّنْيَا، وَقَدِ اعْتَادَوْا تَقْلِيْدَ السَّلَفِ وَأَعْرَضُوْا عَنْ نُصُوْصِ الْكِتَابِ وَالسُّنَّةِ وَتَمَسَّكُوْا بِتَعَمُّقِ عَالِمٍ وَتَشَدُّدِهِ وَاسْتِحْسَانِهِ فَأَعْرَضُوْا كَلاَمَ الشَّارِعِ الْمَعْصُوْمِ بِأَحَادِيْثَ مَوْضُوْعَةٍ وَتَأْوِيْلاَتٍ فَاسِدَةٍ، كَانَتْ سَبَبَ هَلاَكِهِمْ-
‘যদি
তুমি ইহূদীদের নমুনা দেখতে চাও তাহ’লে (আমাদের যুগের) মন্দ আলেমদেরকে দেখ।
যারা দুনিয়া সন্ধান করে এবং পূর্ববর্তী আলেমদের তাক্বলীদ করায় অভ্যস্ত হয়ে
গেছে। তারা কুরআন ও সুন্নাহর দলীল থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। তারা (নিজের
পসন্দনীয়) আলেমের চিন্তা-ভাবনা, তার কঠোরতা ও ইসতিহসানকে কঠিনভাবে আঁকড়ে
ধরেছে। তারা নিষ্পাপ রাসূলের কথাকে ত্যাগ করে জাল হাদীছসমূহ ও বিকৃত
ব্যাখ্যাগুলিকে গলায় জড়িয়ে ধরেছে। (এটাই) তাদের ধ্বংসের কারণ ছিল’।[41]
ফখরুদ্দীন
রাযী লিখেছেন, ‘আমাদের উস্তাদ- যিনি ছিলেন সর্বশেষ মুহাক্কিক্ব ও
মুজতাহিদ- বলেছেন, আমি মুক্বাল্লিদ ফক্বীহদের একটি দলকে দেখেছি যে, আমি
তাদেরকে আল্লাহর কিতাবের এমন অসংখ্য আয়াত শুনিয়েছি যেগুলি তাদের তাক্বলীদী
মাযহাবের বিপরীত ছিল। তারা শুধু সেগুলো গ্রহণ করা থেকে বিরত থেকেছেন তাই
নয়; বরং সেগুলির দিকে কোন দৃকপাতই করেননি’।[42]
তাক্বলীদ ও মুক্বাল্লিদদের আসল চেহারা আপনাদের সামনে তুলে ধরা হ’ল। এখন এই তাক্বলীদের খন্ডন পেশ করা হচ্ছে।
[চলবে]
[1]. তাক্বলীদে আইম্মায়ে দ্বীন আওর মাক্বামে আবূ হানীফা, পৃঃ ২৪-২৫।
[2]. শরী‘আত ওয়া তরীকত কা তালাযুম, পৃঃ ৬৫।
[3]. আমীর বাদশাহ আল-বুখারী, তায়সীরুত তাহরীর (মিসরীয় ছাপা ১৩৫১ হিঃ), ৪/২৪৬, ইবনু নুজায়েম, ফাৎহুল গাফ্ফার শারহুল মানার (মিসরীয় ছাপা: ১৩৫৫ হিঃ), ২/৩৭।
[4]. তাক্বলীদ কী শারঈ হায়ছিয়াত (ষষ্ঠ প্রকাশ ১৪১৩ হিঃ), পৃঃ ১৪।
[5]. আল-ইক্বতিছাদ, পৃঃ ৫।
[6]. তাহক্বীক্ব মাসআলায়ে তাক্বলীদ, পৃঃ ৩; মাজমূ‘আয়ে রাসায়েল (ছাপা : অক্টোবর ১৯৯১), ১/১৯।
[7]. তাহাফ্ফুযে আক্বায়েদে আহলে সুন্নাত (লাহোর : ফরীদ বুক স্টল), পৃঃ ৮০৬।
[8]. তাসহীল : আদিল্লায়ে কামেলাহ (করাচী : ক্বাদীমী কুতুবখানা), পৃঃ ৮৬।
[9]. শারহু মা‘আনিল আছার ৪/৩, ‘ক্রয়-বিক্রয়’ অধ্যায়, ‘গমের বিনিময়ে যব অতিরিক্ত পরিমাণে বিক্রি করা’ অনুচ্ছেদ।
[10]. মুখতাছারুল মুযানী, ‘বিচার’ অনুচ্ছেদ। গৃহীত : সৈয়ূত্বীর ‘আর-রাদ্দু ‘আলা মান উখলিদা ইলাল আরয’, পৃঃ ১৩৮।
[11]. আহকাম ওয়া মাসায়েল, পৃঃ ৫৮১।
[12]. তায়সীরুল উছূল, পৃঃ ৩২৮।
[13]. ছহীহ বুখারী, হা/২১০৭; ‘ক্রয়-বিক্রয়’ অধ্যায়, ‘(ক্রেতা-বিক্রেতার) ক্রয়-বিক্রয় বাতিল করার এখতিয়ার কতক্ষণ থাকবে’? অনুচ্ছেদ; ছহীহ মুসলিম, হা/১৫৩১।
[14]. তাক্বরীরে তিরমিযী, পৃঃ ৩৬, অন্য সংস্করণ, পৃঃ ৩৯।
[15]. ঈযাহুল আদিল্লাহ (দেওবন্দ : মাত্ববা‘ ক্বাসেমী মাদরাসা ইসলামিয়া, ১৩৩০ হিঃ), পৃঃ ২৭৬, লাইন ১৯।
[16]. তাক্বারীরে হযরত শায়খুল হিন্দ, পৃঃ ২৪; আল-ওয়ারদুশ শাযী, পৃঃ ২।
[17]. আদিল্লায়ে কামিলাহ, পৃঃ ৭৮।
[18]. আবুদাঊদ হা/৪৩৬১, ‘দন্ডবিধি’ অধ্যায়, ‘রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে গালি দাতার হুকুম’ অনুচ্ছেদ, সনদ ছহীহ।
[19]. কিন্তু এই দায়িত্ব পালন করবে দেশের সরকার, কোন ব্যক্তি বা সংগঠন নয়।-সম্পাদক।
[20]. হেদায়া, ১/৫৯৮।
[21]. আছ-ছারিমুল মাসলূল। গৃহীত : রাদ্দুল মুহতার আলাদ দুর্রিল মুখতার, ৩/৩০৫।
[22]. আল-বাহরুর রায়েক্ব শরহ কানযুদ দাক্বায়েক্ব, ৫/১১৫।
[23]. তাক্বরীরে তিরমিযী (উর্দূ), (মুলতান : কুতুবখানা মজীদিয়াহ), পৃঃ ৩৯৯।
[24]. মুছান্নাফ ইবনু আবী শায়বাহ, হা/৬৮০৩, ২/২৯১।
[25]. আল-‘আরফুশ শাযী, ১/১০৭, শব্দগুলি এর; ফায়যুল বারী, ২/৩৭৫; বিন্নূরী, মা‘আরিফুস সুনান, ৪/২৬৪; দরসে তিরমিযী, ২/২২৪।
[26]. জা-আল হক্ব (পুরাতন সংস্করণ), ২/৯১।
[27]. জা-আল হক্ব, ২/৯।
[28]. সাপ্তাহিক ‘যারবে মুমিন’, করাচী, বর্ষ ৩, সংখ্যা ১৫, ২১-২৭ যিলহজ্জ, ১৪১৯ হিঃ, ৯-১৫ এপ্রিল ১৯৯৯, পৃঃ ৬, কলাম : ‘আপ কে মাসায়েল কা হাল্ল’।
[29]. ঐ।
[30]. বুখারী হা/৫৭৯; মুসলিম হা/৬০৮।
[31]. ইরশাদুল ক্বারী ইলা ছহীহিল বুখারী, পৃঃ ৪১২।
[32]. ইরশাদুল ক্বারী, পৃঃ ২৮৮।
[33]. আহসানুল ফাতাওয়া, ৩/৫০।
[34]. আব্দুল ক্বাইয়ূম হক্কানী লিখিত ‘দিফায়ে‘ ইমাম আবু হানীফা’ গ্রন্থের ভূমিকা, পৃঃ ২৬।
[35]. মাসিক তাজাল্লী, দেওবন্দ, বর্ষ ১৯, সংখ্যা ১১-১২, জানুয়ারী-ফেব্রয়ারী ১৯৬৮ ইং, পৃঃ ৪৭; আব্দুল গফূর আছারী, আছলী আহলে সুন্নাত, পৃঃ ১১৬।
[36]. মাকতূবাতে ইমামে রববানী (নির্ভরযোগ্য উর্দূ অনুবাদ), ১/৬০১, পত্র নং ২৮৬।
[37]. ঐ, ১/৭১৮, পত্র নং ৩১২।
[38]. ঐ, ১/৫৮৫, পত্র নং ২৮২।
[39]. উছূলুল কারখী, পৃঃ ২৯; মাজমূ‘আহ ক্বাওয়ায়েদুল ফিক্বহ, পৃঃ ১৮।
[40]. তাফসীরে ওছমানী, পৃঃ ৫৪৮, লোকমান ৩১/১৪, টীকা-১০।
[41]. আল-ফাওযুল কাবীর, পৃঃ ১০,১১।
[42]. তাফসীরে কাবীর, তওবাহ ৩১ আয়াতের ব্যাখ্যা দ্রঃ, ১৬/৩৭; আছলী আহলে সুন্নাত, পৃঃ ১৩৫, ১৩৬।