দেহের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের মাধ্যমে নানা ধরনের পাপাচার হয়ে থাকে। সেজন্য এগুলো নিয়ন্ত্রণ করা যরূরী। যেসব অঙ্গের মাধ্যমে মানুষ অধিক হারে পাপে নিমজ্জিত হয়, সেগুলোর নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি সম্পর্কে নিম্নে আলোচনা উপস্থাপন করা হ’ল।-

ক. দৃষ্টি সংযত করা : দৃষ্টি অনেক পাপাচারের মূল। দৃষ্টি নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে বহু গোনাহ থেকে বেঁচে থাকা যায়। এই দৃষ্টি সংযত করার ব্যাপারে মহান আল্লাহর নির্দেশ হচ্ছে,قُلْ لِلْمُؤْمِنِينَ يَغُضُّوا مِنْ أَبْصَارِهِمْ وَيَحْفَظُوا فُرُوجَهُمْ ذَلِكَ أَزْكَى لَهُمْ إِنَّ اللهَ خَبِيرٌ بِمَا يَصْنَعُونَ، ‘তুমি মুমিন পুরুষদের বলে দাও, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে অবনত রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হেফাযত করে। এটা তাদের জন্য পবিত্রতর। নিশ্চয়ই তারা যা করে আল্লাহ সে বিষয়ে ভালভাবে খবর রাখেন’ (নূর ২৪/৩০)

হাত, চোখ ও লজ্জাস্থান হেফাযতের গুরুত্ব সম্পর্কে হাদীছে এসেছে, উবাদাহ বিন ছামেত (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূল (ছাঃ) বলেনে,اضْمَنُوا لِى سِتًّا مِنْ أَنْفُسِكُمْ أَضْمَنْ لَكُمُ الْجَنَّةَ اصْدُقُوا إِذَا حَدَّثْتُمْ وَأَوْفُوا إِذَا وَعَدْتُمْ وَأَدُّوا إِذَا ائْتُمِنْتُمْ وَاحْفَظُوا فُرُوجَكُمْ وَغُضُّوا أَبْصَارَكُمْ وَكُفُّوا أَيْدِيَكُمْ. ‘তোমরা তোমাদের পক্ষ থেকে আমার জন্য ছয়টি বিষয়ের যামিন হও, আমি তোমাদের জন্য জান্নাতের যামিন হব; কথা বললে সত্য বল, অঙ্গীকার করলে তা পালন কর, তোমাদের নিকটে কোন আমানত রাখা হ’লে তা আদায় কর, তোমাদের যৌনাঙ্গের হিফাযত কর, তোমাদের চক্ষুকে (হারাম দর্শন হ’তে) অবনত রাখ, আর তোমাদের হাতকে (অন্যায় হ’তে) সংযত রাখ’।[1]

হাফেয ইবনুল ক্বাইয়িম (রহঃ) উল্লেখ করেন, ‘দৃষ্টি জৈবিক চাহিদার বার্তাবাহক ও রাহবার হয়ে থাকে। দৃষ্টির সংরক্ষণ মূলতঃ লজ্জাস্থান ও যৌনচাহিদা পূরণের অবাধ সুযোগের সংরক্ষণ হয়ে থাকে। যে ব্যক্তি স্বীয় দৃষ্টিকে অবাধে বিচরণ করতে দিয়েছে সে নিজেকে ধ্বংসের মাঝে নিপতিত করেছে। মানুষ যেসব ফিতনায় নিমজ্জিত হয় তার মূলে হ’ল দৃষ্টি’।[2]

দৃষ্টির লাগামহীনতা বহু অপরাধের প্রধান উৎস। ইবলীস পরনারীর চেহারা, সূদের অর্থ, ঘুষের টাকা, অশ্লীলতা, গর্হিত কাজ ইত্যাদিকে অতীব নয়নাভিরাম করে মানুষের সম্মুখে উপস্থাপন করে। নফস তা চোখের মাধ্যেমে রিসিভ করে মজা লোটে এবং নিজের মধ্যে পুষে রাখে। সুযোগ পেলেই তা ফুলে-ফেঁপে বিশাল হয়ে ওঠে। এজন্যই পরনারী, তার ছবি কিংবা ভিডিওর প্রতি; অন্যের সম্পদের প্রতি, অন্যের ঘরের প্রতি দৃষ্টি দেওয়া ইসলামে নিষিদ্ধ। কারণ দৃষ্টির এই হেফাযত নফসের জন্য শাসন। যেন সে যা চেয়েছে তা তুমি তাকে দাওনি; বরং তুমি তার উপর চপেটাঘাত করলে। এতে ইবলীস নিরাশ হবে আর অপরদিকে তোমার মালিক খুশি হবেন।

জানা আবশ্যক যে, মানবদেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের মাধ্যমেও যেনার মত জঘন্য অপরাধ সংঘটিত হয়ে থাকে। এ সম্পর্কে হাদীছে এসেছে, আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম (ছাঃ) বলেছেন,كُتِبَ عَلَى ابْنِ آدَمَ نَصِيبُهُ مِنَ الزِّنَا، مُدْرِكٌ ذَلِكَ لَا مَحَالَةَ، فَالْعَيْنَانِ زِنَاهُمَا النَّظَرُ، وَالْأُذُنَانِ زِنَاهُمَا الِاسْتِمَاعُ، وَاللِّسَانُ زِنَاهُ الْكَلَامُ، وَالْيَدُ زِنَاهَا الْبَطْشُ، وَالرِّجْلُ زِنَاهَا الْخُطَا، وَالْقَلْبُ يَهْوَى وَيَتَمَنَّى، وَيُصَدِّقُ ذَلِكَ الْفَرْجُ وَيُكَذِّبُهُ، ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ বনু আদমের জন্য যিনার একটা অংশ নির্ধারিত রেখেছেন। সে তাতে অবশ্যই জড়িত হবে, (এছাড়া) কোন গত্যন্তর নেই। চোখের যিনা হ’ল দেখা, জিহবার যিনা হ’ল কথা বলা, হাতের যিনা (পরনারীকে খারাপ উদ্দেশ্যে) স্পর্শ করা, পায়ের যিনা (ব্যভিচারের উদ্দেশ্যে) গমন করা। অন্তর চায় ও প্রত্যাশা করে এবং যৌনাঙ্গ তা সত্য অথবা মিথ্যা প্রতিপন্ন করে’।[3]

এ হাদীছের ব্যাখ্যায় আল্লামা খাত্তাবী (রহঃ) বলেন, দেখা ও কথা বলাকে যিনা বলার কারণ হ’ল, দু’টোই প্রকৃত যিনার পূর্ববর্তী স্তর। কেননা দৃষ্টি হচ্ছে মনের গোপন জগতের উদ্বোধক আর জিহবা হচ্ছে বাণী বাহক, যৌনাঙ্গ হচ্ছে বাস্তবায়নের হাতিয়ার তথা সত্য প্রমাণকারী।[4]

হাফেয ইবনুল কাইয়িম (রহঃ) উল্লেখ করেন, দৃষ্টিই যৌন লালসার উদ্রেককারী, বার্তা বাহক। কাজেই এ দৃষ্টির নিয়ন্ত্রণ ও সংরক্ষণ মূলত যৌনাঙ্গেরই হেফাযত। যে ব্যক্তি দৃষ্টিকে অবাধ, উন্মুক্ত ও সর্বগামী করে সে নিজেকে নৈতিক পতন ও ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেয়। মানুষ নৈতিকতার ক্ষেত্রে যত বিপদ ও পদস্খলনেই নিপতিত হয়, দৃষ্টিই হচ্ছে সেসবের মূল। কেননা দৃষ্টি প্রথমত আকর্ষণ সৃষ্টি করে; আকর্ষণ মানুষকে চিন্তা-বিভ্রমে নিমজ্জিত করে। আর এ চিন্তাই মানুষের মধ্যে সৃষ্টি করে লালসার উত্তেজনা। এ যৌন উত্তেজনা ইচ্ছা শক্তিকে উদ্বুদ্ধ করে, আর ইচ্ছা ও প্রবৃত্তি শক্তিশালী হয়ে দৃঢ় সংকল্পে পরিণত হয়। এ দৃঢ় সংকল্প অধিকতর শক্তি অর্জন করে বাস্তব ঘটনা সংঘটিত করে। যখন কোন বাধাই থাকে না, তখন এ বাস্তব অবস্থার সম্মুখীন না হয়ে কারো কোন উপায় থাকে না।[5] অতএব বলা যায়, প্রথমটির অনিবার্য পরিণতি হচ্ছে শেষেরটি অর্থাৎ দৃষ্টি নিয়ন্ত্রিত হ’লেই লজ্জাস্থানের সংরক্ষণ সম্ভব। অন্যথা নিঃসন্দেহে তাকে

চরম নৈতিক অধঃপতনে নিমজ্জিত হ’তে হবে।

নবী করীম (ছাঃ) আলী (রাঃ)-কে লক্ষ্য করে বলেছিলেন,يَا عَلِيُّ لاَ تُتْبِعِ النَّظْرَةَ النَّظْرَةَ فَإِنَّ لَكَ الأُولَى وَلَيْسَتْ لَكَ الآخِرَةُ، ‘হে আলী! একবার কোন পরনারীর প্রতি দৃষ্টি পড়লে পুনরায় তার প্রতি তাকাবে না। কেননা তোমার জন্যে প্রথমবার (ক্ষমাযোগ্য) দ্বিতীয়বার নয়’।[6] এর কারণ সুস্পষ্ট। হঠাৎ কারো প্রতি দৃষ্টি পড়ে যাওয়া আর ইচ্ছাকৃতভাবে কারো প্রতি তাকানো সমান নয়। প্রথমবার দৃষ্টি পড়ে যাওয়া ব্যক্তির অনিচ্ছায় হয়ে থাকে; কিন্তু পুনর্বার তাকে দেখা ইচ্ছাক্রমেই হয়ে থাকে। এজন্য প্রথমবারের দেখায় কোন দোষ হবে না; কিন্তু দ্বিতীয়বার তাকানো ক্ষমার অযোগ্য। কারণ দ্বিতীয়বার দৃষ্টির পিছনে মনের কলুষতা ও লালসার পংকিল উত্তেজনা থাকাই স্বাভাবিক। আর এ ধরনের দৃষ্টিতে পরনারীকে দেখা সুস্পষ্ট হারাম। তবে এর অর্থ এটা নয় যে, পরস্ত্রীকে একবার দেখা জায়েয এবং এব্যাপারে অনুমতি দেয়া হচ্ছে। বরং পরনারীকে দেখা হারাম। এজন্য কুরআন-হাদীছে দৃষ্টি অবনত রেখে চলার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। রাসূল (ছাঃ)-কে জিজ্ঞেস করা হ’ল, পরনারীর প্রতি হঠাৎ দৃষ্টি পড়া সম্পর্কে আপনার হুকুম কি? তিনি বললেন, اصْرِفْ بَصَرَكَ عَنْهُنَّ، ‘তোমার চোখ তাদের থেকে অন্যদিকে ফিরিয়ে নাও’।[7]

রাস্তার হক সম্পর্কিত এক প্রশ্নের উত্তরে রাসূল (ছাঃ) বলেন, রাস্তার হক হচ্ছে,غَضُّ الْبَصَرِ، وَكَفُّ الأَذَى، وَرَدُّ السَّلاَمِ، وَالأَمْرُ بِالْمَعْرُوفِ وَالنَّهْىُ عَنِ الْمُنْكَرِ- ‘চক্ষু অবনত রাখা, কাউকে কষ্ট দেয়া থেকে বিরত থাকা, সালামের জবাব দেয়া এবং সৎকাজের নির্দেশ দেয়া ও অসৎকাজ থেকে নিষেধ করা’।[8]

হারাম দেখা থেকে দৃষ্টি নিয়ন্ত্রণের জন্য কারো ঘরের অভ্যন্তরে তাকানো নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে ইসলাম। হাদীছে এসেছে, আবূ যার (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,مَنْ كَشَفَ سِتْرًا فَأَدْخَلَ بَصَرَهُ فِي البَيْتِ قَبْلَ أَنْ يُؤْذَنَ لَهُ فَرَأَى عَوْرَةَ أَهْلِهِ فَقَدْ أَتَى حَدًّا لاَ يَحِلُّ لَهُ أَنْ يَأْتِيَهُ، لَوْ أَنَّهُ حِينَ أَدْخَلَ بَصَرَهُ اسْتَقْبَلَهُ رَجُلٌ فَفَقَأَ عَيْنَيْهِ مَا عَيَّرْتُ عَلَيْهِ، وَإِنْ مَرَّ الرَّجُلُ عَلَى بَابٍ لاَ سِتْرَ لَهُ غَيْرِ مُغْلَقٍ فَنَظَرَ فَلاَ خَطِيئَةَ عَلَيْهِ، إِنَّمَا الخَطِيئَةُ عَلَى أَهْلِ البَيْتِ. ‘যে লোক পর্দা তুলে কারো ঘরের মধ্যে তাকালো এবং সম্মতি পাওয়ার আগেই ঘরের গোপনীয় বিষয় দেখে ফেলল, সে দন্ডনীয় অপরাধী হয়ে গেল, যা করা তার পক্ষে বৈধ নয়। সে যখন ঘরের ভেতরে তাকিয়ে ছিল, তখন কেউ যদি এগিয়ে এসে তার দু’চোখ ফুড়ে বা সমূলে উপড়ে ফেলে দিত তবে তাকে আমি অপরাধী সাব্যস্ত করতাম না। আর কেউ উন্মুক্ত দরজার পাশ দিয়ে গমনকালে পর্দা বিহিন খোলা দরজা দিয়ে তাকালে তার কোন অপরাধ নেই, বরং অপরাধ বাড়িওয়ালার (পর্দা ঝুলানো তাদের দায়িত্ব)।[9]

বস্ত্ততঃ ইসলামী সমাজ জীবনের পবিত্রতা রক্ষার্থে পুরুষদের পক্ষে যেমন ভিনমেয়েলোক দেখা হারাম, তেমনি হারাম মেয়েদের পক্ষেও ভিনপুরুষদের দেখা। এ সম্পর্কে কুরআন-হাদীছে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। উম্মে সালামা বর্ণিত এক হাদীছের ভিত্তিতে আল্লামা শাওকানী লিখেছেন,يحرم على المرأة نظر الرجل كما يحرم على الرجل نظر المرأة، ‘পুরুষদেরকে দেখা মেয়েদের জন্য হারাম, ঠিক যেমন হারাম পুরুষদের জন্য মেয়েদের দেখা’।[10]

এর কারণ স্বরূপ তিনি লিখেছেন,ولأن النساء أحد نوعي الآدميين فحرم عليهن النظر إلى النوع الآخر قياسا على الرجال ويحققه أن المعنى المحرم للنظر هو خوف الفتنة وهذا في المرأة أبلغ فإنها اشد شهوة وأقل عقلا فتسارع إليها الفتنة أكثر من الرجل ‘কেননা নারীরা মানব জাতির অন্তর্ভুক্ত প্রজাতি। তাই পুরুষের মতই মহিলাদের জন্য তারই মত অপর প্রজাতি পুরুষদের দেখা হারাম করা হয়েছে। এ কথার যথার্থতা বোঝা যায় এ দিক দিয়েও যে, গায়র মাহরামের প্রতি তাকানো হারাম হওয়ার মূল কারণ হচ্ছে যৌন বিপর্যয়ের ভয়। আর মেয়েদের ক্ষেত্রে এ ভয় অনেক বেশী। কেননা যৌন উত্তেজনা যেমন মেয়েদের বেশী, সে পরিমাণে বুদ্ধিমত্তা তাদের কম। আর পুরুষদের তুলনায় মেয়েদের কারণেই অধিক যৌন বিপর্যয় ঘটে থাকে’।[11]

মোটকথা, গায়র মাহরাম নারীর প্রতি দৃষ্টি দেয়া কিংবা লালসার দৃষ্টি নিক্ষেপ করা ইসলামে নিষিদ্ধ। এতে পারিবারিক জীবনে শুধু যে পঙ্কিলতার বিষবাষ্প জমে তা নয়, বরং এর কারণে ঘটতে পারে প্রলয়ঙ্করী ভাঙ্গন ও বিপর্যয়। স্মর্তব্য যে, কোন পুরুষের দৃষ্টিতে কোন পরস্ত্রী অতিশয় সুন্দরী ও লাস্যময়ী হয়ে দেখা দিল। পুরুষ তার প্রতি নিবেদন করল মন মাতানো হৃদয় ভুলানো প্রেম-ভালবাসা। মহিলা তাতে আত্মহারা হয়ে ঐ লোকের নিকটে নিজেকে সমর্পণ করল। ফলে যা হবার তা হচ্ছে- ঐ পুরুষ তার নিজ স্ত্রীর প্রতি বিরাগভাজন হবে। মহিলাও নিজের স্বামীর প্রতি অনাসক্ত, আনুগত্যহীন হয়ে পড়বে। আর এর বিষম ফল হ’ল উভয়ের পারিবারিক জীবনে কলংক এবং নিজ পরিবার থেকে সম্পূর্ণরূপে ছিন্ন হওয়া। এরূপ অবাঞ্ছিত ও অনভিপ্রেত ঘটনা

আজকাল অহরহ ঘটছে।

দৃষ্টি নিয়ন্ত্রণের ফযীলত সম্পর্কে রাসূল (ছাঃ) বলেন,ثَلَاثَةٌ لَا تَرَى أَعْيُنُهُمُ النَّارَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ: عَيْنٌ بَكَتْ مِنْ خَشْيَةِ اللهِ، وَعَيْنٌ حَرَسَتْ فِي سَبِيلِ اللهِ، وَعَيْنٌ غَضَّتْ عَنْ مَحَارِمِ اللهِ عَزَّ وَجَلَّ. ‘তিন শ্রেণীর চোখ কিয়ামতের দিন জাহান্নাম প্রত্যক্ষ করবে না; যে চোখ আল্লাহর ভয়ে ক্রন্দন করে, যে চোখ আল্লাহর রাস্তায় পাহারা দেয় এবং যে চোখ আল্লাহর নিষিদ্ধ বস্ত্ত থেকে অবনমিত থাকে’।[12]

খ. কানের হেফাযত করা : ইসলাম অনর্থক ও অশ্লীল কথা শোনা থেকে বিরত থাকার নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। মুমিনদের গুণাবলী উল্লেখ করে আল্লাহ বলেন,وَإِذَا سَمِعُوا اللَّغْوَ أَعْرَضُوا عَنْهُ وَقَالُوا لَنَا أَعْمَالُنَا وَلَكُمْ أَعْمَالُكُمْ سَلَامٌ عَلَيْكُمْ لَا نَبْتَغِي الْجَاهِلِينَ، ‘তারা যখন অসার বাক্য শ্রবণ করে তখন তা উপেক্ষা করে ও বলে, আমাদের কর্মফল আমাদের এবং তোমাদের কর্মফল তোমাদের। তোমাদের প্রতি সালাম (অর্থাৎ পরিত্যাগ)। আমরা মূর্খদের সাথে জড়াতে চাই না’ (ক্বাছাছ ২৮/৫৫)। অন্যত্র তিনি বলেন,وَالَّذِينَ هُمْ عَنِ اللَّغْوِ مُعْرِضُونَ ‘যারা অনর্থক কাজ হ’তে বিরত’ (মুমিনূন ২৩/৩)

ইসলামে যা বলা হারাম, তা শোনাও হারাম। অবলীলায় যে কোন কিছু শোনা অন্তরে মুনাফেকী সৃষ্টির অন্যতম কারণ। যেমন গান সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন,وَمِنَ النَّاسِ مَنْ يَشْتَرِي لَهْوَ الْحَدِيثِ لِيُضِلَّ عَنْ سَبِيلِ اللهِ بِغَيْرِ عِلْمٍ وَيَتَّخِذَهَا هُزُوًا أُولَئِكَ لَهُمْ عَذَابٌ مُهِينٌ، ‘লোকদের মধ্যে এমন লোকও আছে, যারা অজ্ঞতা বশে বাজে কথা খরীদ করে মানুষকে আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুৎ করার জন্য এবং তারা আল্লাহর পথকে ঠাট্টার বস্ত্তরূপে গ্রহণ করে। এদের জন্য রয়েছে হীনকর শাস্তি’ (লোক্বমান ৩১/৬)। এ আয়াতের ব্যাখ্যায় আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) বলেন,الْغِنَاءُ وَاللهِ الَّذِي لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ، يُرَدِّدُهَا ثَلَاثَ مَرَّاتٍ. ‘সেটা হচ্ছে গান, আল্লাহর শপথ, যিনি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। কথাটি তিনি তিনবার পুনরাবৃত্তি করেন’। ইবনু ওমর (রাঃ)ও একই কথা বলেছেন। মুজাহিদ (রহঃ) বলেন,إِنَّ لَهْوَ الْحَدِيثِ فِي الْآيَةِ الِاسْتِمَاع إِلَى الْغِنَاءِ وَإِلَى مِثْلِهِ مِنَ الْبَاطِلِ. ‘নিশ্চয়ই আয়াতে ‘বাজে কথা’ বলতে গান শ্রবণ করা এবং অনুরূপ বাতিল জিনিস শ্রবণ করা’। হাসান বছরী (রহঃ) বলেন,لَهْوُ الْحَدِيثِ الْمَعَازِفُ وَالْغِنَاءُ. ‘বাজে কথা হচ্ছে বাজনা ও গান’।[13] গান-বাজনার পার্থিব পরিণতি সম্পর্কে ইবনু মাসঊদ (রাঃ) বলেন,الْغِنَاءُ يُنْبِتُ النِّفَاقَ فِى الْقَلْبِ كَمَا يُنْبِتُ الْمَاءُ الزَّرْعَ، ‘পানি যেমন ভূমিতে তৃণলতা উৎপন্ন করে তেমনি গান মানুষের অন্তরে নিফাক সৃষ্টি করে’।[14]

বস্ত্তত গান-বাজনা ও অশ্লীলতা শ্রবণ করা শয়তানী ধোঁকা ছাড়া কিছুই নয়। সে সৃষ্টির শুরু থেকে কিয়ামত পর্যন্ত মানুষকে ধোঁকা দিয়ে পাপে নিমজ্জিত করার মাধ্যমে জাহান্নামী করার চেষ্টায় সদা তৎপর। যেমন ইবলীস আদম সন্তানকে ধোঁকা দেওয়ার আবেদন জানালে আল্লাহ ইবলীসকে সম্বোধন করে বলেন,وَاسْتَفْزِزْ مَنِ اسْتَطَعْتَ مِنْهُمْ بِصَوْتِكَ وَأَجْلِبْ عَلَيْهِمْ بِخَيْلِكَ وَرَجِلِكَ، ‘আর তাদের মধ্য থেকে যাকে পার তুমি সত্যচ্যুত কর তোমার আহবান দ্বারা এবং তুমি তাদের উপর হামলা কর তোমার অশ্বারোহী ও পদাতিক বাহিনী দ্বারা’ (ইসরা ১৭/৬৪)। এ আয়াতের ব্যাখ্যায় আব্দুল্লাহ ইবনে আববাস (রাঃ) বলেন, যে সকল বস্ত্ত পাপাচারের দিকে আহবান করে সেসবই ইবলীসের আওয়াজ। সুতরাং সকল পাপাচার থেকে কানের হেফাযত করা হ’লে এটাও হবে নফসের উপর শক্তিশালী শাসন এবং ইবলীসের জন্য পেরেশানির কারণ। এতে আল্লাহ খুশি হবেন। আল্লাহ বলেন, وَاتَّقُوا اللهَ وَاسْمَعُواْ، ‘অতএব তোমরা (সাক্ষ্য দানে) আল্লাহকে ভয় কর এবং (তাঁর বিধান সমূহ) শ্রবণ কর’ (মায়েদা ৫/১০৮)। সুতরাং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের নির্দেশ মোতাবেক কানের হেফাযত না করে নিষিদ্ধ বস্ত্ত শ্রবণ করলে পরকালে শাস্তির সম্মুখীন হ’তে হবে। তখন তারা আফসোস করবে। আল্লাহ বলেন,وَقَالُوا لَوْ كُنَّا نَسْمَعُ أَوْ نَعْقِلُ مَا كُنَّا فِي أَصْحَابِ السَّعِيرِ، ‘তারা আরও বলবে, যদি আমরা সেদিন (নবীদের কথা) শুনতাম ও তা অনুধাবন করতাম, তাহ’লে আমরা আজ জাহান্নামবাসীদের অন্তর্ভুক্ত হ’তাম না’ (মুলক ৬৭/১০)। কোন মানুষের গোপনীয় কথা শোনার শাস্তি সম্পর্কে হাদীছে এসেছে,وَمَنِ اسْتَمَعَ إِلَى حَدِيثِ قَوْمٍ يَكْرَهُونَهُ صُبَّ فِى أُذُنَيْهِ الآنُكُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ، ‘যে ব্যক্তি কোন কওমের কথা কান পেতে শুনবে, অথচ তারা এটা অপসন্দ করে, কিয়ামতের দিন তার কানে গলিত সীসা ঢেলে দেয়া হবে।[15] অতএব পরকালীন শাস্তির ভয়ে কানের হেফাযত করা যরূরী। এতে কানের মাধ্যমে সংঘটিত পাপ থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে।

গ. যবানের হেফাযত করা : মানবদেহে প্রয়োজনীয় অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ আল্লাহ দান করেছেন। তিনি বলেন, أَلَمْ نَجْعَلْ لَهُ عَيْنَيْنِ، وَلِسَانًا وَشَفَتَيْنِ ‘আমরা কি দেইনি তাকে দু’টি চোখ? এবং জিহবা ও দু’টি ঠোঁট’? (বালাদ ৯০/৮-৯)। সুতরাং মানব দেহের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ জিহবার হেফাযত অতীব যরূরী। কেননা যবানের লাগামহীনতা বহু গোনাহের কারণ। মিথ্যা বলা, গীবত করা, গালি দেয়া, ঝগড়া করা থেকে শুরু করে হেন অপরাধ নেই যা যবান দ্বারা সংঘটিত হয় না। এ অপরাধগুলোকে মোহনীয় করে ইবলীস নফসের সামনে পেশ করে। নফস তা যবানের মধ্যমে গ্রহণ করে। এজন্যই রাসূলুল্লাহ বলেছেন,إِذَا أَصْبَحَ ابْنُ آدَمَ فَإِنَّ الأَعْضَاءَ كُلَّهَا تُكَفِّرُ اللِّسَانَ فَتَقُولُ اتَّقِ اللهَ فِينَا فَإِنَّمَا نَحْنُ بِكَ فَإِنِ اسْتَقَمْتَ اسْتَقَمْنَا وَإِنِ اعْوَجَجْتَ اعْوَجَجْنَا، ‘আদম সন্তান যখন সকালে উপনীত হয়, তখন তার সমস্ত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ জিহবাকে নিবেদন করে যে, তুমি আমাদের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় কর। কারণ আমাদের ব্যাপারসমূহ তোমার সাথেই সম্পৃক্ত। যদি তুমি সোজা-সরল থাক, তাহ’লে আমরাও সোজা-সরল থাকব। আর তুমি যদি বাঁকা পথে যাও তাহ’লে আমরাও বাঁকা পথে যেতে বাধ্য হব’।[16]

সুতরাং যবানকে হারাম কথা ও হারাম খাদ্য থেকে হেফাযত করলে এটাও নফসের উপর একপ্রকার শাসন। এতে ইবলীস নিরাশ হয় এবং আল্লাহ খুশি হন। আর ঈমান দুরস্ত হয়। রাসূলুল্লাহ বলেন,لا يَسْتَقِيمُ إِيْمانُ عبدٍ حتى يَسْتَقِيمَ قلبُهُ، ولا يَسْتَقِيمُ قلبُهُ حتى يَسْتَقِيمَ لسانُهُ، ‘কোন বান্দার ঈমান সঠিক হয় না; যতক্ষণ না তার অন্তর ঠিক হয় এবং তার অন্তরও ঠিক হয় না যতক্ষণ না তার যবান ঠিক হয়’।[17]

জিহবার কারণেই মানুষ জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে। রাসূল (ছাঃ) একদা মু‘আয বিন জাবাল (রাঃ)-কে বললেন,أَلَا أُخْبِرُكَ بِمَلَاكِ ذَلِكَ كُلِّهِ؟ قُلْتُ: بَلَى يَا نَبِيَّ اللهِ، فَأَخَذَ بِلِسَانِهِ قَالَ: كُفَّ عَلَيْكَ هَذَا، فَقُلْتُ: يَا نَبِيَّ اللهِ، وَإِنَّا لَمُؤَاخَذُونَ بِمَا نَتَكَلَّمُ بِهِ؟ فَقَالَ: ثَكِلَتْكَ أُمُّكَ يَا مُعَاذُ، وَهَلْ يَكُبُّ النَّاسَ فِي النَّارِ عَلَى وُجُوهِهِمْ أَوْ عَلَى مَنَاخِرِهِمْ إِلَّا حَصَائِدُ أَلْسِنَتِهِمْ، ‘আমি কি এসব কিছুর সার সম্পর্কে তোমাকে বলব না? আমি বললাম, হ্যাঁ, হে আল্লাহর রাসূল! তিনি তার জিহবা ধরে বললেন, এটা সংযত রাখ। আমি প্রশ্ন করলাম, হে আল্লাহর নবী! আমরা যে কথাবার্তা বলি এগুলো সম্পর্কেও কি পাকড়াও (জবাবদিহি) করা হবে? তিনি বললেন, হে মু‘আয! তোমার মা তোমাকে হারিয়ে ফেলুক! মানুষকে শুধুমাত্র জিহবার উপার্জনের কারণেই অধঃমুখে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে’।[18] অন্যত্র তিনি বলেন,وَهَلْ يُكَبُّ النَّاسُ عَلَى مَنَاخِرِهِمْ فِي جَهَنَّمَ إِلا مَا نَطَقَتْ أَلْسِنَتُهُمْ فَمَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللهِ فَلْيَقُلْ خَيْرًا أَوْ لِيَسْكُتْ عَنْ شَرٍّ قُولُوا خَيْرًا تَغْنَمُوا وَاسْكُتُوا عَنْ شَرٍّ تسلموا، ‘মানুষের যবানে বলা কথা ছাড়া অন্য কিছু কি তাদেরকে নাক ছেঁচড়ে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবে? সুতরাং আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাসী ব্যক্তির উচিত উত্তম কথা বলা নতুবা মন্দ বলা হ’তে চুপ থাকা। তোমরা উত্তম বল, লাভবান হবে এবং মন্দ বলা হ’তে চুপ থাকো, নিরাপত্তা লাভ করবে’।[19] অন্য বর্ণনায় এসেছে, উকবা ইবনে আমের (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি একবার রাসূল (ছাঃ)-কে প্রশ্ন করলাম,يَا رَسُولَ اللهِ مَا النَّجَاةُ؟ قَالَ: امْلِكْ عَلَيْكَ لِسَانَكَ، وَلْيَسَعْكَ بَيْتُكَ، وَابْكِ عَلَى خَطِيئَتِكَ، ‘হে আল্লাহর রাসূল! (আল্লাহর আযাব-গযব থেকে) নাজাতের উপায় কি? রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, ‘তুমি তোমার যবানের হেফাযত কর, তোমার ঘর যেন প্রশস্ত হয় এবং গোনাহের জন্য আল্লাহর দরবারে কান্নাকাটি কর’।[20] রাসূল (ছাঃ) আরো বলেন, مَنْ صَمَتَ نَجَا ‘যে ব্যক্তি চুপ থাকল, সে মুক্তি পেল’।[21]

জানা আবশ্যক যে, মুখ থেকে নির্গত প্রতিটি কথা-বাক্য লিপিবদ্ধ হয়। সেটা ভাল-মন্দ যাই হোক না কেন। তাই কথা বলার সময় সাবধান থাকতে হবে। আল্লাহ বলেন,مَا يَلْفِظُ مِنْ قَوْلٍ إِلَّا لَدَيْهِ رَقِيبٌ عَتِيدٌ، ‘সে যে কথাই উচ্চারণ করে, তা গ্রহণ করার জন্য তার কাছে সদা প্রস্ত্তত প্রহরী থাকে’ (ক্বাফ ৫০/১৮)। এজন্যই রাসূল (ছাঃ) বলেছেন,مَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الآخِرِ فَلْيَقُلْ خَيْرًا أَوْ لِيَصْمُتْ، ‘যে লোক আল্লাহ ও শেষ দিবসে বিশ্বাস রাখে, সে যেন ভাল কথা বলে অথবা চুপ থাকে’।[22] যায়েদ ইবনে আসলাম (রহঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন,أَنَّ عُمَرَ بْنَ الْخَطَّابِ دَخَلَ عَلَى أَبِي بَكْرٍ الصِّدِّيقِ وَهُوَ يَجْبِذُ لِسَانَهُ، فَقَالَ لَهُ عُمَرُ: مَهْ غَفَرَ اللهُ لَكَ، فَقَالَ أَبُو بَكْرٍ: إِنَّ هَذَا أَوْرَدَنِي الْمَوَارِدَ، ‘একদিন ওমর (রাঃ) আবূবকর ছিদ্দীক (রাঃ)-এর নিকট আসলেন, তখন আবূবকর ছিদ্দীক (রাঃ) নিজের জিহবা টানছিলেন। তখন ওমর (রাঃ) বললেন, থামুন, আল্লাহ আপনাকে ক্ষমা করুন! তখন আবূবকর ছিদ্দীক (রাঃ) বললেন, এ জিহবাই আমাকে ধ্বংসের স্থানসমূহে নিক্ষেপ করেছে’।[23]

সাঈদ আল-জুরাইরী জনৈক ব্যক্তি হ’তে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন,رَأَيْتُ ابْنَ عَبَّاسٍ آخِذًا بِثَمَرَةِ لِسَانِهِ وَهُوَ يَقُولُ: وَيْحَكَ قُلْ خَيْرًا تَغْنَمْ، وَاسْكُتْ عَنْ شَرٍّ تَسْلَمْ، فَقَالَ لَهُ رَجُلٌ: يَا ابْنَ عَبَّاسٍ مَا لِي أَرَاكَ آخِذًا بِثَمَرَةِ لِسَانِكَ تَقُولُ: كَذَا وَكَذَا؟ قَالَ: إِنَّهُ بَلَغَنِي أَنَّ الْعَبْدَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ لَيْسَ هُوَ عَلَى شَيْءٍ أَحْنَقَ مِنْهُ عَلَى لِسَانِهِ. ‘আব্দুল্লাহ ইবনু আববাস (রাঃ)-কে জিহবার প্রান্ত ধরে রাখা অবস্থায় দেখেছি, তিনি বলেন, তোমার জন্য আফসোস! উত্তম কথা বল, লাভবান হবে এবং মন্দ কথা বলা হ’তে চুপ থাকো, নিরাপত্তা লাভ করবে। তখন তাকে লোকটি বলল, হে ইবনু আববাস! আমার কি হ’ল যে, আপনাকে জিহবার প্রান্ত ধরে এরূপ এরূপ বলতে দেখছি? তিনি বললেন, আমার নিকটে সংবাদ পৌঁছেছে যে, কিয়ামতের দিন বান্দা স্বীয় জিহবার উপরে এত অত্যধিক রাগান্বিত হবে যা অন্য কিছুর উপরে হবে না’।[24] অতএব গোনাহ থেকে বাঁচতে সালাফে ছালেহীনের ন্যায় জিহবার হেফাযত অতীব যরূরী।

ঘ. মুখের হেফাযত করা : পাপ থেকে বেঁচে থাকার জন্য মুখ হেফাযত করা আবশ্যক। কেননা মুখের মাধ্যমে গীবত-তোহমত, গালি দেওয়া, হারাম খাওয়া ইত্যাদি পাপ মানুষ করে থাকে। আর এই মুখের কারণে বহু মানুষ জাহান্নামী হবে। আবূ হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন,سُئِلَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، مَا أَكْثَرُ مَا يُدْخِلُ الْجَنَّةَ؟ قَالَ: التَّقْوَى، وَحُسْنُ الْخُلُقِ، وَسُئِلَ مَا أَكْثَرُ مَا يُدْخِلُ النَّارَ؟ قَالَ: الْأَجْوَفَانِ: الْفَمُ، وَالْفَرْجُ ‘রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে প্রশ্ন করা হ’ল, কোন কর্মটি সর্বাধিক সংখ্যক মানুষকে জান্নাতে নিয়ে যাবে। তিনি বললেন, আল্লাহভীতি, সদাচার ও উত্তম চরিত্র। আবার তাকে প্রশ্ন করা হ’ল, কোন কাজটি সর্বাধিক সংখ্যক মানুষকে জাহান্নামে নিয়ে যাবে। তিনি বললেন, মুখ ও লজ্জাস্থান’।[25] অন্য বর্ণনায় এসেছে, সাহল ইবনু সা‘দ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,مَنْ يَضْمَنْ لِى مَا بَيْنَ لَحْيَيْهِ وَمَا بَيْنَ رِجْلَيْهِ أَضْمَنْ لَهُ الْجَنَّةَ، ‘যে ব্যক্তি তার দু’চোয়ালের মাঝের বস্ত্ত (জিহবা) এবং দু’উরুর মধ্যস্থলের বস্ত্ত (লজ্জাস্থান)-এর হেফাযতের গ্যারান্টি দিবে, আমি তার জান্নাতের যিম্মাদার হব’।[26]

গায়র মাহরাম নারীকে স্পর্শ করা ও চুমু খাওয়া যিনার শামিল। রাসূল (ছাঃ) বলেন, وَالْفَمُ يَزْنِي فَزِنَاهُ الْقُبَلُ ‘মুখও যিনা করে, মুখের যিনা হচ্ছে চুমু খাওয়া’।[27] সুতরাং এ ধরনের কাজ থেকে বিরত থাকলে ব্যভিচারের ছিদ্রপথ বন্ধ হয় এবং সেসব থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

অনুরূপভাবে হারাম ভক্ষণ থেকে মুখকে হেফাযত করা যরূরী। কেননা হারাম ভক্ষণের কারণে মানুষের কোন আমল কবুল হয় না। তাই আল্লাহ হারাম ভক্ষণ নিষিদ্ধ করেছেন। আল্লাহ বলেন,وَلَا تَأْكُلُوا أَمْوَالَكُمْ بَيْنَكُمْ بِالْبَاطِلِ وَتُدْلُوا بِهَا إِلَى الْحُكَّامِ لِتَأْكُلُوا فَرِيقًا مِنْ أَمْوَالِ النَّاسِ بِالْإِثْمِ وَأَنْتُمْ تَعْلَمُونَ ‘আর তোমরা অন্যায়ভাবে পরস্পরের সম্পদ ভক্ষণ করো না এবং অন্যের সম্পদ অন্যায় পন্থায় গ্রাস করার জন্য জেনে-শুনে তা বিচারকদের নিকট পেশ করো না’ (বাক্বারাহ ২/১৮৮)। তিনি আরো বলেন,وَتَرَى كَثِيرًا مِنْهُمْ يُسَارِعُونَ فِي الْإِثْمِ وَالْعُدْوَانِ وَأَكْلِهِمُ السُّحْتَ لَبِئْسَ مَا كَانُوا يَعْمَلُونَ، لَوْلَا يَنْهَاهُمُ الرَّبَّانِيُّونَ وَالْأَحْبَارُ عَنْ قَوْلِهِمُ الْإِثْمَ وَأَكْلِهِمُ السُّحْتَ لَبِئْسَ مَا كَانُوا يَصْنَعُونَ، ‘আর তুমি তাদের মধ্যে এমন অনেককে দেখবে, যারা পাপকাজে, সীমালংঘনে ও হারাম ভক্ষণে প্রতিযোগিতা করে। কতই না মন্দ কাজ তারা করে! কেন তাদের আল্লাহওয়ালাগণ ও আলেমগণ তাদেরকে তাদের পাপের কথা হ’তে ও হারাম ভক্ষণ হ’তে নিষেধ করে না? কতই না মন্দ কাজ তারা করছে’ (মায়েদাহ ৫/৬২-৬৩)

রাসূল (ছাঃ) বলেন,إِنَّ اللهَ طَيِّبٌ لَا يَقْبَلُ إِلَّا طَيِّبًا، وَإِنَّ اللهَ أَمَرَ الْمُؤْمِنِينَ بِمَا أَمَرَ بِهِ الْمُرْسَلِينَ، فَقَالَ: يَا أَيُّهَا الرُّسُلُ كُلُوا مِنَ الطَّيِّبَاتِ وَاعْمَلُوا صَالِحًا، إِنِّي بِمَا تَعْمَلُونَ عَلِيمٌ وَقَالَ: يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا كُلُوا مِنْ طَيِّبَاتِ مَا رَزَقْنَاكُمْ- ثُمَّ ذَكَرَ الرَّجُلَ يُطِيلُ السَّفَرَ أَشْعَثَ أَغْبَرَ، يَمُدُّ يَدَيْهِ إِلَى السَّمَاءِ، يَا رَبِّ، يَا رَبِّ، وَمَطْعَمُهُ حَرَامٌ، وَمَشْرَبُهُ حَرَامٌ، وَمَلْبَسُهُ حَرَامٌ، وَغُذِيَ بِالْحَرَامِ، فَأَنَّى يُسْتَجَابُ لِذَلِكَ؟ ‘আল্লাহ পবিত্র, তিনি পবিত্র জিনিসকেই গ্রহণ করেন। আল্লাহ রাসূলদের প্রতি যে নির্দেশ করেছেন মুমিনদেরকেও একই নির্দেশ করেছেন। আল্লাহ বলেন, ‘হে রাসূলগণ! তোমরা পবিত্র বস্ত্ত হ’তে ভক্ষণ কর এবং সৎকর্ম কর’ (মুমিনূন ২৩/৫১)। তিনি আরো বলেন, ‘হে বিশ্বাসীগণ! আমরা তোমাদের যে রূযী প্রদান করেছি, সেখান থেকে পবিত্র বস্ত্ত সমূহ ভক্ষণ কর’ (বাক্বারাহ ২/১৭২)। অতঃপর তিনি এক ব্যক্তির অবস্থা উল্লেখ করেন, যে দূর-দূরান্তের সফর করছে, তার মাথার চুল এলোমেলো, শরীর ধূলাবালুতে মাখা। এ অবস্থায় ঐ ব্যক্তি দু’হাত আকাশের দিকে উঠিয়ে কাতর কণ্ঠে ডাকছে, হে রব! হে রব! কিন্তু তার খাদ্য হারাম, পানীয় হারাম, পরনের পোষাক হারাম। আর হারামই সে ভক্ষণ করে থাকে। তাই এ ব্যক্তির দো‘আ কিভাবে কবুল হ’তে পারে?[28] রাসূল (ছাঃ) আরো বলেন,وَلَا يَدْخُلُ الْجَنَّةَ لَحْمٌ نَبَتَ مِنْ سُحْتٍ، وَكُلُّ لَحْمٍ نَبَتَ مِنْ سُحْتٍ فَالنَّارُ أَوْلَى بِهِ، ‘যে দেহের গোশত হারাম দ্বারা গঠিত, তা জান্নাতে প্রবেশ করবে না। আর হারাম দ্বারা পরিপুষ্ট দেহের জন্য জাহান্নামই উপযোগী’।[29] অতএব মুখের হেফাযত অতীব যরূরী।

ঙ. মস্তিষ্কের হেফাযত করা : মুমিন বান্দা চাইলে তার ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ তথা রাষ্ট্রীয় পর্যায়ের সব কাজকেই মস্তিষ্ক তথা চিন্তাশক্তির হেফাযতের মাধ্যমে নেকীর কাজে পরিণত করতে পারে। দুনিয়ার কাজকেও ইতিবাচক নিয়তের মাধ্যমে ইবাদতে পরিণত করা যায়। ইমাম বুখারী (রহঃ) তাঁর বিখ্যাত হাদীছ গ্রন্থ নিয়তের হাদীছ দ্বারাই শুরু করেছেন। আলক্বামাহ ইবনু ওয়াক্কাছ আল-লায়ছী থেকে বর্ণিত, আমি ওমর ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ)-কে মিম্বরের ওপর দাঁড়িয়ে বলতে শুনেছি, আমি আল্লাহর রাসূলকে বলতে শুনেছি,إِنَّمَا الأَعْمَالُ بِالنِّيَّاتِ، وَإِنَّمَا لِكُلِّ امْرِئٍ مَا نَوَى، فَمَنْ كَانَتْ هِجْرَتُهُ إِلَى دُنْيَا يُصِيبُهَا أَوْ إِلَى امْرَأَةٍ يَنْكِحُهَا فَهِجْرَتُهُ إِلَى مَا هَاجَرَ إِلَيْهِ، ‘নিশ্চয় মানুষের কর্মফল নিয়তের উপরে নির্ভরশীল। আর মানুষ তার নিয়ত অনুযায়ী প্রতিফল পাবে। তাই যার হিজরত হবে দুনিয়া লাভের জন্য অথবা কোন মহিলাকে বিবাহ করার

উদ্দেশ্যে, তবে তার হিজরত সে উদ্দেশ্যেই হবে, যেজন্যে সে হিজরত করেছে’।[30]

সুতরাং মস্তিষ্কের হেফাযত করলে এবং যা কিছু ভালো ও নেক আমল তা নিয়ে ভাবলে এটাও হবে নফসের উপর শক্তিশালী শাসন এবং ইবলীসের জন্য বড় পেরেশানির কারণ। আল্লাহ আমাদেরকে নেক নিয়ত, ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি, সুন্দর চিন্তা, কল্যাণমুখী মানসিকতা লালন করার তাওফীক দান করুন- আমীন!

আল্লাহকে লজ্জা করলে পাপ থেকে বেঁচে থাকা যায়। আর আল্লাহকে লজ্জা করার অন্যতম দিক হচ্ছে মস্তিষ্ক হেফাযত করা। আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,اسْتَحْيُوا مِنَ اللهِ حَقَّ الحَيَاءِ. قَالَ: قُلْنَا: يَا رَسُولَ اللهِ إِنَّا نَسْتَحْيِي وَالحَمْدُ لِلَّهِ، قَالَ: لَيْسَ ذَاكَ، وَلَكِنَّ الِاسْتِحْيَاءَ مِنَ اللهِ حَقَّ الحَيَاءِ أَنْ تَحْفَظَ الرَّأْسَ وَمَا وَعَى، وَالبَطْنَ وَمَا حَوَى، وَلْتَذْكُرِ المَوْتَ وَالبِلَى، وَمَنْ أَرَادَ الآخِرَةَ تَرَكَ زِينَةَ الدُّنْيَا، فَمَنْ فَعَلَ ذَلِكَ فَقَدْ اسْتَحْيَا مِنَ اللهِ حَقَّ الحَيَاءِ، ‘তোমরা আল্লাহকে যথাযথভাবে লজ্জা কর। আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! আমরা তো নিশ্চয়ই লজ্জা করি, সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য। তিনি বললেন, তা নয়, বরং আল্লাহকে যথাযথভাবে লজ্জা করার অর্থ এই যে, তুমি তোমার মাথা এবং এর মধ্যে যা কিছু রয়েছে তা সংরক্ষণ করবে এবং পেট ও এর মধ্যে যা কিছু রয়েছে তা হেফাযত করবে। মৃত্যুকে ও এরপর পচে-গলে যাবার কথা স্মরণ করবে। আর যে লোক পরকালের আশা করে, সে যেন দুনিয়াবী জাকজমক পরিহার করে। যে লোক এই সকল কাজ করতে পারে সে-ই আল্লাহকে যথাযথভাবে লজ্জা করে’।[31] [ক্রমশঃ]

[1]. আহমাদ হা/২২৮০৯; ছহীহাহ হা/১৪৭০; মিশকাত হা/৪৮৭০।

[2]. হাফেয ইবনুল কাইয়িম, আল-জাওয়াবুল কাফী, পৃঃ ২০৪।

[3]. বুখারী হা/৬২৪৩; মুসলিম হা/২৬৫৭; মিশকাত হা/৮৬।

[4]. মা‘আলিমুস সুনান ৩/২২৩ পৃঃ।

[5]. আল-জাওয়াবুল কাফী, পৃঃ ২০৪।

[6]. আবূদাউদ হা/২১৪৯; তিরমিযী হা/২৭৭৭; ছহীহুল জামে‘ হা/৭৯৫৩।

[7]. বুখারী তরজমাতুল বাব-২; আবূ দাউদ হা/২১৪৮; ইরওয়াউল গালীল হা/১৭৮৮।

[8]. বুখারী হা/৬২২৯; আবু দাউদ হা/৪৮১৫; মিশকাত হা/৪৬৪০।

[9]. তিরমিযী হা/২৭০৭; ছহীহাহ হা/৩৪৬৩।

[10]. শাওকানী, নায়লুল আওত্বার, ৬/১৭৭ পৃঃ।

[11]. নায়লুল আওত্বার, ৬/১৭৭ পৃঃ।

[12]. ত্বাবারাণী, ছহীহাহ হা/২৬৭৩; ছহীহুত তারগীব হা/১৯০০।

[13]. তাফসীরে কুরতুবী, (কায়রো : দারুল কুতুবিল মিছরিয়া, ২য় সংস্করণ, ১৩৮৪হিঃ/১৯৬৪ খ্রীঃ), ১৪/৫২ পৃঃ।

[14]. বায়হাকী হা/২১৫৩৬; তাফসীরে কুরতুবী ১৪/৫২ পৃঃ

[15]. বুখারী হা/৭০৪২; আহমাদ হা/২২১৩; ছহীহুত তারগীব হা/২৭৩২; ছহীহাহ হা/২৩৫৯; মিশকাত হা/৪৪৯৯।

[16]. তিরমিযী হা/২৪০৭; মিশকাত হা/৪৮৩৮; ছহীহুত তারগীব হা/২৮৭১; ছহীহুল জামে‘ হা/৩৫১।

[17]. আহমাদ হা/১৩০৭১; ছহীহাহ হা/২৮৪১; ছহীহুত তারগীব হা/২৫৫৪।

[18]. তিরমিযী হা/২৬১৬; ইবনু মাজাহ হা/৩৯৭৩; ছহীহাহ হা/১১৪৩।

[19]. হাকেম হা/৭৭৭৪; ছহীহাহ হা/৪১২।

[20]. তিরমিযী হা/২৪০৬; মিশকাত হা/৪৮৩৭; ছহীহাহ হা/৮৯০।

[21]. তিরমিযী হা/২৫০১; ছহীহাহ হা/৫৩৫।

[22]. বুখারী হা/৬০১৮, ৬১৩৫; মুসলিম হা/৪৭; মিশকাত হা/৪২৪৩।

[23]. মুওয়াত্ত্বা মালিক হা/৩৬২১; ছহীহুত তারগীব হা/২৮৭৩; ছহীহাহ হা/৫৩৫; মিশকাত হা/৪৮৬৯।

[24]. আহমাদ ইবনু হাম্বল, ফাযাইলুছ ছাহাবাহ (বৈরূত : মুআসসাসাতুর রিসালাহ, ১ম প্রকাশ, ১৪০৩ হিঃ/১৯৮৩ খ্রিঃ), ২/৯৫২ পৃঃ; আবু নু‘আইম, হিলয়াতুল আওলিয়া (বৈরূত : দারুল কুতুবিল ইলমিয়্যাহ, ১৪০৯হিঃ), ১/৩২৭ পৃঃ।

[25]. তিরমিযী হা/২০০৪; ইবনু মাজাহ হা/৪২৪৬; মিশকাত হা/৪৮৩২; ছহীহাহ হা/৯৭৭।

[26]. বুখারী হা/৬৪৭৪; মিশকাত হা/৪৮১২।

[27]. আবূদাউদ হা/২১৫৩; ইরওয়া হা/২৩৭০, সনদ ছহীহ।

[28]. মুসলিম হা/১০১৫; তিরমিযী হা/২৯৮৯; ছহীহুল জামি‘ হা/২৭৪৪; ছহীহুত তারগীব হা/১৭১৭; মিশকাত হা/২৭৬০।

[29]. আহমাদ হা/১৪৪১; শু‘আবুল ঈমান হা/৮৯৭২; দারিমী হা/২৭৭৯; ছহীহাহ হা/২৬০৯।

[30]. বুখারী হা/১; মিশকাত হা/১।

[31]. তিরমিযী হা/২৪৫৮; রাওযুন নাযীর হা/৬০১; মিশকাত হা/১৬০৮; ছহীহুল জামে‘ হা/৯৩৭, সনদ হাসান।






১৬ই ডিসেম্বর সারেন্ডার অনুষ্ঠানে জে. ওসমানী কেন উপস্থিত ছিলেন না? চাঞ্চল্যকর তথ্য - মোবায়েদুর রহমান
নফল ছিয়াম সমূহ - -আত-তাহরীক ডেস্ক
বিদায়ের আগে রেখে যাও কিছু পদচিহ্ন (৫ম কিস্তি) - মুহাম্মাদ আব্দুল মালেক
ইসলামের আলোকে সম্পদ বৃদ্ধির উপায় - মুহাম্মাদ আবু তাহের, পরিচালক, কিউসেট ইনস্টিটিউট, সিলেট।
খারেজীদের আক্বীদা ও ইতিহাস - মীযানুর রহমান মাদানী
মুমিন কিভাবে দিন অতিবাহিত করবে (২য় কিস্তি) - ড. মুহাম্মাদ কাবীরুল ইসলাম
কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে ঈমান (৪র্থ কিস্তি) - হাফেয আব্দুল মতীন - পিএইচ.ডি গবেষক, আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, মালয়েশিয়া
ইসলামের আলোকে জ্ঞান চর্চা (প্রথম কিস্তি) - ড. মুহাম্মাদ আজিবার রহমান
পিতা-মাতার সাথে আদব সমূহ - ড. মুহাম্মাদ কাবীরুল ইসলাম
ইবাদতের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা (৩য় কিস্তি) - ড. মুহাম্মাদ কাবীরুল ইসলাম
‘আহলেহাদীছ আন্দোলন বাংলাদেশ’ কি চায়, কেন চায় ও কিভাবে চায়? - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
আল্লাহর উপর ভরসা (২য় কিস্তি) - মুহাম্মাদ আব্দুল মালেক
আরও
আরও
.