মানুষ
সামাজিক জীব। সমাজবদ্ধ হয়ে বসবাস করা মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি। একে অন্যের
সহযোগিতা ছাড়া মানুষ একদিনও চলতে পারে না। তাই সামাজিক জীবনে পরস্পরিক
সাহায্য-সহযোগিতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ইসলাম সমাজকল্যাণমূলক ধর্ম। মানব
কল্যাণ ও সমাজকল্যাণ ইসলামের অন্যতম লক্ষ্য। ইসলাম ও সমাজকল্যাণ একটির সাথে
অন্যটি ওতপ্রোতভাবে জড়িত। সমাজকল্যাণ বলতে মানুষের কল্যাণে কার্যকর
পদক্ষেপ গ্রহণ বুঝায়। আর ইসলাম মানুষকে অন্যের কল্যাণে পারস্পরিক
সাহায্য-সহযোগিতা করতে অনুপ্রাণিত করে। মহান আল্লাহ বলেন, وَتَعَاوَنُوا
عَلَى الْبِرِّ وَالتَّقْوَى وَلَا تَعَاوَنُوا عَلَى الْإِثْمِ
وَالْعُدْوَانِ، ‘তোমরা সৎকর্ম ও আল্লাহভীতির কাজে পরস্পরকে সহযোগিতা কর
এবং পাপ ও সীমালংঘনের কাজে পরস্পরকে সহযোগিতা করো না’ (মায়েদাহ ৫/২)।
রাসূলুল্লাহ
(ছাঃ) বলেছেন,إِنَّ الدِّينَ النَّصِيحَةُ إِنَّ الدِّينَ النَّصِيحَةُ
إِنَّ الدِّينَ النَّصِيحَةُ، ‘(অন্যের) কল্যাণকামিতাই দ্বীন, (অন্যের)
কল্যাণকামিতাই দ্বীন, (অন্যের) কল্যাণকামিতাই দ্বীন’।[1] অন্য বর্ণনায়
এসেছে, জারীর বিন আব্দুল্লাহ (রাঃ) বলেন,بَايَعْتُ رَسُولَ اللهِ صلى الله
عليه وسلم عَلَى إِقَامِ الصَّلاَةِ، وَإِيتَاءِ الزَّكَاةِ، وَالنُّصْحِ
لِكُلِّ مُسْلِمٍ، ‘আমি এ মর্মে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর নিকটে বায়‘আত গ্রহণ
করেছি যে, ছালাত প্রতিষ্ঠা করব, যাকাত প্রদান করব এবং প্রত্যেক মুসলিমের
জন্য কল্যাণ কামনা করব’।[2]
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আরো বলেছেন,وَاللهُ فِى عَوْنِ الْعَبْدِ مَا كَانَ الْعَبْدُ فِىْ عَوْنِ أَخِيْهِ، ‘আল্লাহ তা‘আলা তার বান্দাদেরকে ততক্ষণ পর্যন্ত সাহায্য করতে থাকেন যতক্ষণ সে তার ভাইয়ের সাহায্য করতে থাকে’।[3] এ প্রবন্ধে সংক্ষেপে ইসলামে সমাজ কল্যাণমূলক কাজের গুরুত্ব ও ফযীলত তুলে ধরার প্রয়াস পাব ইনশাআল্লাহ।
ইয়াতীম প্রতিপালন :
সমাজের সবচেয়ে অসহায় অবহেলিত, নিঃস্ব, লাঞ্ছিত, বঞ্চিত ও নিরাপত্তাহীনভাবে দীনাতিপাত করে একজন ইয়াতীম শিশু। তাই সমাজকল্যাণমূলক কাজে সহযোগিতা পাওয়ার ক্ষেত্রে এক নম্বরে রয়েছে ইয়াতীম শিশু। মহান রাববুল আলামীন কুরআনুল কারীমের অসংখ্য আয়াতে ইয়াতীম শিশু প্রতিপালন, তাদের সাহায্য-সহযোগিতা প্রদান, নিরাপত্তা দান, তাদের সম্পদ ন্যায়সঙ্গতভাবে রক্ষণাবেক্ষণ, তাদের প্রতি স্নেহ, মায়া-মমতা ও সদাচরণের বিষয়ে আয়াত অবতীর্ণ করে এটিকে অত্যন্ত নেকীর কাজ হিসাবে আখ্যায়িত করেছেন। মহান আল্লাহ বলেন,لَيْسَ الْبِرَّ أَنْ تُوَلُّوا وُجُوهَكُمْ قِبَلَ الْمَشْرِقِ وَالْمَغْرِبِ وَلَكِنَّ الْبِرَّ مَنْ آمَنَ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ وَالْمَلَائِكَةِ وَالْكِتَابِ وَالنَّبِيِّينَ وَآتَى الْمَالَ عَلَى حُبِّهِ ذَوِي الْقُرْبَى وَالْيَتَامَى وَالْمَسَاكِيْنَ وَابْنَ السَّبِيْلِ وَالسَّائِلِيْنَ وَفِي الرِّقَابِ، ‘(ইবাদত কালে) পূর্ব ও পশ্চিমে মুখ ফেরানোটাই কেবল সৎকর্ম নয়, বরং প্রকৃত সৎকর্মশীল ঐ ব্যক্তি, যে বিশ্বাস স্থাপন করে আল্লাহ, বিচার দিবস, ফেরেশতামন্ডলী, আল্লাহর কিতাব ও নবীগণের উপর এবং যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে সম্পদ ব্যয় করে নিকটাত্মীয়, ইয়াতীম, মিসকীন, মুসাফির, প্রার্থী ও দাসমুক্তির জন্য’ (বাক্বারাহ ২/১৭৭)। মহান আল্লাহ আরো বলেন,لَا تَعْبُدُوْنَ إِلَّا اللهَ وَبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَانًا وَذِي الْقُرْبَى وَالْيَتَامَى وَالْمَسَاكِيْنِ، ‘তোমরা আল্লাহ ব্যতীত কারু দাসত্ব করবে না এবং পিতা-মাতা, আত্মীয়-স্বজন, ইয়াতীম ও অভাবগ্রস্তদের সাথে সদ্ব্যবহার করবে’ (বাক্বারাহ ২/৮৩)। অন্য আয়াতে মহান আল্লাহ বলেন,يَسْأَلُونَكَ مَاذَا يُنْفِقُوْنَ قُلْ مَا أَنْفَقْتُمْ مِنْ خَيْرٍ فَلِلْوَالِدَيْنِ وَالْأَقْرَبِيْنَ وَالْيَتَامَى وَالْمَسَاكِيْنِ وَابْنِ السَّبِيْلِ، ‘লোকেরা তোমাকে জিজ্ঞেস করছে, কিভাবে খরচ করবে? তুমি বলে দাও যে, ধন-সম্পদ হ’তে তোমরা যা ব্যয় করবে, তা তোমাদের পিতা-মাতা, নিকটাত্মীয়, ইয়াতীম, মিসকীন ও মুসাফিরদের জন্য ব্যয় কর’ (বাক্বারাহ ২/২১৫)।
যুদ্ধলব্ধ সম্পদের একটি অংশ ইয়াতীমদের জন্য নির্ধারিত করে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,وَاعْلَمُوْا أَنَّمَا غَنِمْتُمْ مِنْ شَيْءٍ فَأَنَّ لِلَّهِ خُمُسَهُ وَلِلرَّسُوْلِ وَلِذِيْ الْقُرْبَى وَالْيَتَامَى وَالْمَسَاكِيْنِ وَابْنِ السَّبِيْلِ، ‘আর তোমরা জেনে নাও যে, যুদ্ধে তোমরা যে সকল বস্ত্ত গণীমত রূপে লাভ করেছ, তার এক পঞ্চমাংশ হ’ল আল্লাহ, তাঁর রাসূল, তাঁর নিকটাত্মীয়, ইয়াতীম, মিসকীন ও মুসাফিরদের জন্য’ (আনফাল ৮/৪১)।
ইয়াতীমদের সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস করার বিষয়ে কঠোর হুঁশিয়ারী দিয়ে আল্লাহ বলেন,وَآتُوا الْيَتَامَى أَمْوَالَهُمْ وَلَا تَتَبَدَّلُوْا الْخَبِيْثَ بِالطَّيِّبِ وَلَا تَأْكُلُوْا أَمْوَالَهُمْ إِلَى أَمْوَالِكُمْ إِنَّهُ كَانَ حُوْبًا كَبِيْرًا، ‘ইয়াতীমদেরকে তাদের মালামাল বুঝিয়ে দাও এবং মন্দকে ভালো দ্বারা বদল করো না। আর তোমাদের মালের সাথে তাদের মাল ভক্ষণ করো না। নিশ্চয়ই এটি গুরুতর পাপ’ (নিসা ৪/২)। নিম্নোক্ত আয়াতে মহান আল্লাহ আরো কঠোর হুঁশিয়ার করে বলেন,إِنَّ الَّذِيْنَ يَأْكُلُونَ أَمْوَالَ الْيَتَامَى ظُلْمًا إِنَّمَا يَأْكُلُونَ فِي بُطُونِهِمْ نَارًا وَسَيَصْلَوْنَ سَعِيرًا ‘যারা অন্যায়ভাবে ইয়াতীমের মাল ভক্ষণ করে, তারা তাদের পেটে কেবল আগুনই ভর্তি করে। সত্বর তারা জাহান্নামে প্রবেশ করবে’ (নিসা ৪/১০)।
জান্নাতী লোকদের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন, وَيُطْعِمُونَ الطَّعَامَ عَلَى حُبِّهِ مِسْكِيْنًا وَيَتِيْمًا وَأَسِيْرًا، إِنَّمَا نُطْعِمُكُمْ لِوَجْهِ اللهِ لَا نُرِيْدُ مِنْكُمْ جَزَاءً وَلَا شُكُورًا، ‘তারা আল্লাহর মহববতে অভাবগ্রস্ত, ইয়াতীম ও বন্দীদের আহার্য প্রদান করে। (তারা বলে) শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য আমরা তোমাদের খাদ্য দান করি। আর আমরা তোমাদের নিকট থেকে কোন প্রতিদান ও কৃতজ্ঞতা কামনা করি না’ (দাহর ৭৬/৮-৯)।
ইয়াতীম
প্রতিপালনকারীদের মর্যাদা সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,أَنَا
وَكَافِلُ الْيَتِيمِ فِى الْجَنَّةِ هَكَذَا وَأَشَارَ بِالسَّبَّابَةِ
وَالْوُسْطَى، وَفَرَّجَ بَيْنَهُمَا شَيْئًا. ‘আমি ও ইয়াতীম প্রতিপালনকারী
জান্নাতে এভাবে থাকব। এ বলে তিনি তর্জনী ও মধ্যমা আঙ্গুল দিয়ে ইশারা
করলেন এবং এ দু’টির মাঝে কিছুটা ফাঁকা করলেন’।[4] প্রায় অনুরূপ হাদীছ এসেছে ছহীহ মুসলিম[5] ও সুনানে আবূদাঊদে।[6]
রাসূলুল্লাহ
(ছাঃ) আরো বলেছেন,مَنْ ضَمَّ يَتِيماً بَيْنَ أَبَوَيْنِ مُسْلِمَيْنِ
إِلَى طَعَامِهِ وَشَرَابِهِ حَتَّى يَسْتَغْنِىَ عَنْهُ وَجَبَتْ لَهُ
الْجَنَّةُ أَلْبَتَّةَ، ‘যে ব্যক্তি মাতা-পিতা মারা যাওয়া কোন মুসলিম
ইয়াতীমকে স্বাবলম্বী হওয়া পর্যন্ত নিজ পানাহারে শামিল করে, ঐ ব্যক্তির জন্য
জান্নাত অবধারিত হয়ে যায়’।[7]
বিধবাকে সহায়তা দান :
সমাজের
আরেক অসহায় শ্রেণীর নাম হচ্ছে বিধবা। বিশেষ করে দরিদ্র, নিঃস্ব, অবহেলিত
বিধবা নারী। এমন বিধবাকে সাহায্য-সহযোগিতা করাকে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ইবাদত
তুল্য নেকীর কাজ হিসাবে আখ্যায়িত করেছেন এবং তাদেরকে সাহায্য-সহযোগিতা করার
জন্য অনুপ্রাণিত করেছেন। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,السَّاعِى عَلَى
الأَرْمَلَةِ وَالْمِسْكِيْنِ كَالْمُجَاهِدِ فِى سَبِيلِ اللهِ
وَأَحْسِبُهُ قَالَ، يَشُكُّ الْقَعْنَبِىُّ كَالْقَائِمِ لاَ يَفْتُرُ،
وَكَالصَّائِمِ لاَ يُفْطِرُ، ‘যে ব্যক্তি বিধবা ও মিসকীনের সমস্যা
সমাধানের জন্য ছুটোছুটি করে সে যেন আল্লাহর রাস্তায় জিহাদে লিপ্ত।
বর্ণনাকারী বলেন, আমার মনে হয় রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এ কথাও বলেছেন, সে যেন ঐ
ব্যক্তির ন্যায় যে সারা রাত ছালাত আদায় করে এবং সারা বছরই ছিয়াম পালন করে’।[8]
নিঃস্ব, দরিদ্র ও ক্ষুধার্তকে খাদ্য দান :
নিঃস্ব, দরিদ্র ও ক্ষুধার্তকে খাদ্য দান করার জন্য মহান আল্লাহ রাববুল আলামীন ও রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাকীদ দিয়েছেন। জান্নাতের প্রবেশের ঘাঁটির সন্ধান দিয়ে মহান আল্লাহ বলেন,أَوْ إِطْعَامٌ فِي يَوْمٍ ذِي مَسْغَبَةٍ، يَتِيْمًا ذَا مَقْرَبَةٍ، أَوْ مِسْكِيْنًا ذَا مَتْرَبَةٍ، ‘অথবা ক্ষুধার দিনে অন্নদান করা, ইয়াতীম নিকটাত্মীয়কে অথবা ভূলুণ্ঠিত অভাবগ্রস্তকে’ (বালাদ ১৪-১৬)।
মুমিনদের বৈশিষ্ট্য হ’ল তারা একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে নিঃস্ব-দরিদ্র, ইয়াতীম ও কারাবন্দীদেরকে খাদ্য দান করে। এ সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,وَيُطْعِمُونَ الطَّعَامَ عَلَى حُبِّهِ مِسْكِيْنًا وَيَتِيْمًا وَأَسِيْرًا، إِنَّمَا نُطْعِمُكُمْ لِوَجْهِ اللهِ لَا نُرِيْدُ مِنْكُمْ جَزَاءً وَلَا شُكُورًا، ‘তারা আল্লাহর মহববতে অভাবগ্রস্ত, ইয়াতীম ও বন্দীদের আহার্য প্রদান করে। (তারা বলে) শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য আমরা তোমাদের খাদ্য দান করি। আর আমরা তোমাদের নিকট থেকে কোন প্রতিদান ও কৃতজ্ঞতা কামনা করি না’ (দাহর ৭৬/৮-৯)। কাফিরদের বৈশিষ্ট্য হ’ল- অভাবীদেরকে খাদ্য দান না করা। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,أَرَأَيْتَ الَّذِي يُكَذِّبُ بِالدِّيْنِ، فَذَلِكَ الَّذِيْ يَدُعُّ الْيَتِيْمَ، وَلَا يَحُضُّ عَلَى طَعَامِ الْمِسْكِيْنِ، ‘তুমি কি দেখেছ তাকে, যে বিচার দিবসে মিথ্যারোপ করে? সে হ’ল ঐ ব্যক্তি, যে ইয়াতীমকে গলাধাক্কা দেয়, এবং অভাবগ্রস্তকে খাদ্য দানে উৎসাহিত করে না’ (মাঊন ১০৭/১-৩)। অভাবীদেরকে খাদ্য দান না করা জাহান্নামীদের বৈশিষ্ট্যও বটে। জান্নাতীরা জাহান্নামীদেরকে জিজ্ঞেস করবে, مَا سَلَكَكُمْ فِي سَقَرَ، قَالُوا لَمْ نَكُ مِنَ الْمُصَلِّيْنَ، وَلَمْ نَكُ نُطْعِمُ الْمِسْكِيْنَ، ‘কোন বস্ত্ত তোমাদেরকে ‘সাকারে’ প্রবেশ করাল? তারা বলবে, আমরা মুছল্লীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলাম না। আমরা অভাবগ্রস্তকে আহার্য দিতাম না’ (মুদ্দাছছির ৭৪/৪২-৪৪)।
যারা অভাবীদেরকে খাদ্য দান করে না হাশরের দিনে আল্লাহ তা‘আলা ফেরেশতাদেরকে আদেশ দিবেন তাদের গলায় রশি লাগিয়ে টেনে হিছড়ে জাহান্নামে প্রবেশ করাতে। আল্লাহ বলেন,خُذُوْهُ فَغُلُّوْهُ، ثُمَّ الْجَحِيمَ صَلُّوهُ، ثُمَّ فِي سِلْسِلَةٍ ذَرْعُهَا سَبْعُوْنَ ذِرَاعًا فَاسْلُكُوْهُ، إِنَّهُ كَانَ لَا يُؤْمِنُ بِاللهِ الْعَظِيْمِ، وَلَا يَحُضُّ عَلَى طَعَامِ الْمِسْكِيْنِ، ‘(তখন ফেরেশতাদের বলা হবে) শক্তভাবে ধরো ওকে। অতঃপর (হাত সহ) গলায় বেড়ীবদ্ধ করো ওকে। অতঃপর জাহান্নামে প্রবেশ করাও ওকে। অতঃপর সত্তর হাত লম্বা শিকলে পেঁচিয়ে বাঁধো ওকে। সে মহান আল্লাহতে বিশ্বাসী ছিল না। সে অভাবগ্রস্তকে খাদ্য দানে উৎসাহ প্রদান করত না’ (হা-ক্কাহ ৬৯/৩০-৩৪)।
অভাবগ্রস্ত, ক্ষুধার্তকে খাদ্যদান না করলে আল্লাহ তা‘আলা দুনিয়াতেই শাস্তি স্বরূপ তাদের সম্পদ কমিয়ে দেন অথবা ধ্বংস করে দেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
إِنَّا بَلَوْنَاهُمْ كَمَا بَلَوْنَا أَصْحَابَ الْجَنَّةِ إِذْ أَقْسَمُوا لَيَصْرِمُنَّهَا مُصْبِحِيْنَ، وَلَا يَسْتَثْنُوْنَ، فَطَافَ عَلَيْهَا طَائِفٌ مِنْ رَبِّكَ وَهُمْ نَائِمُوْنَ، فَأَصْبَحَتْ كَالصَّرِيمِ، فَتَنَادَوْا مُصْبِحِيْنَ، أَنِ اغْدُوا عَلَى حَرْثِكُمْ إِنْ كُنْتُمْ صَارِمِيْنَ، فَانْطَلَقُوا وَهُمْ يَتَخَافَتُوْنَ، أَنْ لَا يَدْخُلَنَّهَا الْيَوْمَ عَلَيْكُمْ مِسْكِيْنٌ، وَغَدَوْا عَلَى حَرْدٍ قَادِرِيْنَ، فَلَمَّا رَأَوْهَا قَالُوا إِنَّا لَضَالُّوْنَ، بَلْ نَحْنُ مَحْرُومُوْنَ، قَالَ أَوْسَطُهُمْ أَلَمْ أَقُلْ لَكُمْ لَوْلَا تُسَبِّحُونَ، قَالُوا سُبْحَانَ رَبِّنَا إِنَّا كُنَّا ظَالِمِيْنَ، فَأَقْبَلَ بَعْضُهُمْ عَلَى بَعْضٍ يَتَلَاوَمُوْنَ، قَالُوا يَا وَيْلَنَا إِنَّا كُنَّا طَاغِيْنَ-
‘আমরা তাদের পরীক্ষায় ফেলেছি, যেমন পরীক্ষায় ফেলেছিলাম বাগান মালিকদের। যখন তারা শপথ করেছিল যে, তারা খুব ভোরে অবশ্যই বাগানের ফল পেড়ে নিবে। কিন্তু তারা ‘ইনশাআল্লাহ’ বলেনি। অতঃপর তোমার প্রতিপালকের পক্ষ হ’তে ঐ বাগিচার উপর এক আসমানী গযব আপতিত হ’ল, যখন তারা নিদ্রামগ্ন ছিল। ফলে তা পুড়ে কালো ভস্মের ন্যায় হয়ে গেল। অতঃপর তারা প্রত্যুষে উঠে পরস্পরকে ডেকে বলল, যদি তোমরা ফল পাড়তে চাও, তবে সকাল সকাল বাগানে চল। অতঃপর তারা চলল চুপিসারে কথা বলতে বলতে, যেন আজ বাগিচায় তোমাদের নিকট কোন অভাবগ্রস্ত প্রবেশ না করে। অতঃপর তারা দ্রুতপায়ে খুব ভোরে যাত্রা করল। কিন্তু যখন তারা বাগানের চেহারা দেখল, তখন বলল আমরা পথভ্রষ্ট হয়েছি। বরং আমরা বঞ্চিত হয়েছি। তাদের জ্ঞানী ব্যক্তিটি বলল, আমি কি তোমাদের বলিনি, যদি না তোমরা আল্লাহর পবিত্রতা বর্ণনা করতে (অর্থাৎ ইনশাআল্লাহ বলতে)! তারা বলল, আমরা আমাদের প্রতিপালকের পবিত্রতা ঘোষণা করছি। আমরা নিশ্চিতভাবে সীমালংঘনকারী ছিলাম। অতঃপর তারা একে অপরকে দোষারোপ করতে লাগল। তারা বলল, হায় দুর্ভোগ আমাদের! আমরা অবাধ্য ছিলাম’ (ক্বালাম ৬৮/১৭-৩১)।
নিঃস্ব, দরিদ্র ও ক্ষুধার্তকে খাদ্য খাওয়ানো ইসলামের উত্তম আমল। হাদীছে বর্ণিত হয়েছে,
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرٍو رضى الله عنهما أَنَّ رَجُلاً سَأَلَ النَّبِىَّ صلى الله عليه وسلم أَىُّ الإِسْلاَمِ خَيْرٌ قَالَ تُطْعِمُ الطَّعَامَ،
‘আব্দুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, জনৈক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে জিজ্ঞেস করল, ইসলামের কোন কাজটি উত্তম? তিনি বললেন, ‘তুমি (অভাবীকে) খাদ্য খাওয়াবে’।[9] প্রতিবেশীকে অভুক্ত রেখে নিজে পেটপুরে খাওয়া কোন মুমিনের কাজ নয়।
রাসূলুল্লাহ
(ছাঃ) বলেছেন,لَيْسَ الْمُؤْمِنُ الَّذِي يَشْبَعُ وَجَارُهُ جَائِعٌ
إِلَى جَنْبِهِ، ‘সে ব্যক্তি পূর্ণ মুমিন নয়, যে উদরপূর্তি করে খায় অথচ তার
পাশেই তার প্রতিবেশী ক্ষুধার্ত থাকে’।[10]
উল্লিখিত আয়াত সমূহ ও হাদীছ থেকে প্রতীয়মান হয় যে, নিঃস্ব, দরিদ্র ও ক্ষুধার্তকে খাদ্য দান করা ইসলামের অন্যতম সমাজ কল্যাণমূলক কাজ, যার মাধ্যমে জান্নাত লাভ এবং জাহান্নাম থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
রোগীর সেবা করা ও দেখতে যাওয়া :
রোগীর
সেবা করা বা রোগীকে দেখতে যাওয়া ইসলামের অন্যতম সমাজকল্যাণমূলক ও পুণ্যময়
কাজ। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) একে এক মুসলিমের প্রতি অন্য মুসলিমের হক্ব বা
অধিকার বলে অভিহিত করেছেন। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, لِلْمُؤْمِنِ عَلَى
الْمُؤْمِنِ سِتُّ خِصَالٍ يَعُودُهُ إِذَا مَرِضَ وَيَشْهَدُهُ إِذَا
مَاتَ وَيُجِيبُهُ إِذَا دَعَاهُ وَيُسَلِّمُ عَلَيْهِ إِذَا لَقِيَهُ
وَيُشَمِّتُهُ إِذَا عَطَسَ وَيَنْصَحُ لَهُ إِذَا غَابَ أَوْ شَهِدَ.
‘একজন মুমিনের ওপর অপর মুমিনের ছয়টি অধিকার রয়েছে। যথা- ১. যখন কোন মুমিনের
রোগ-ব্যাধি হয়, তখন তার সেবা-শুশ্রূষা করা ২. কেউ মৃত্যুবরণ করলে তার
জানাযাহ ও দাফন-কাফনে উপস্থিত হওয়া ৩. কেউ দাওয়াত করলে তা গ্রহণ করা অথবা
কারো ডাকে সাড়া দেয়া ৪. সাক্ষাতে সালাম প্রদান করা ৫. হাঁচি দিলে জবাব দেয়া
এবং ৬. উপস্থিত-অনুপস্থিত সকল অবস্থায় মুমিনের কল্যাণ কামনা করা’।[11]
রোগীকে
দেখতে যাওয়ার নির্দেশ দিয়ে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, أَطْعِمُوا
الْجَائِعَ، وَعُوْدُوا الْمَرِيضَ، وَفُكُّوا الْعَانِىَ ‘ক্ষুধার্তকে
খাবার দাও, অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে যাও এবং বন্দীকে মুক্ত কর’।[12] অন্য
বর্ণনায় এসেছে, عُودُوا الْمَرِيضَ وَاتَّبِعُوا الْجَنَازَةَ
تُذَكِّرُكُمُ الآخِرَةَ ‘অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে যাবে, জানাযায় অনুসরণ
করবে, তাহ’লে তা তোমাকে আখেরাতের কথা স্মরণ করিয়ে দিবে’।[13]
অসুস্থ
ব্যক্তিকে সেবা না করলে বা দেখতে না গেলে এর জন্য হাশরের দিন আল্লাহর নিকট
জবাবদিহি করতে হবে। অসুস্থ ব্যক্তিকে সেবা করার মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য
লাভ করা যায়। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,إِنَّ اللهَ عَزَّ وَجَلَّ يَقُولُ
يَوْمَ الْقِيَامَةِ يَا ابْنَ آدَمَ مَرِضْتُ فَلَمْ تَعُدْنِى قَالَ يَا
رَبِّ كَيْفَ أَعُوْدُكَ وَأَنْتَ رَبُّ الْعَالَمِيْنَ قَالَ أَمَا
عَلِمْتَ أَنَّ عَبْدِى فُلاَنًا مَرِضَ فَلَمْ تَعُدْهُ أَمَا عَلِمْتَ
أَنَّكَ لَوْ عُدْتَهُ لَوَجَدْتَنِى عِنْدَهُ، ‘আল্লাহ তা‘আলা ক্বিয়ামতের
দিনে বলবেন, হে আদম সন্তান! আমি অসুস্থ হয়েছিলাম; কিন্তু তুমি আমার
সেবা-শুশ্রূষা করনি। সে বলবে, হে পরওয়ারদিগার! আমি কি করে তোমার
সেবা-শুশ্রূষা করব, অথচ তুমি সারা জাহানের প্রতিপালক। আল্লাহ বলবেন, তুমি
কি জানতে না যে, আমার অমুক বান্দা অসুস্থ হয়েছিল, আর তুমি তার সেবা করনি,
তুমি কি জানতে না যে, তুমি তার সেবা-শুশ্রূষা করলে আমাকে তার কাছেই পেতে’।[14]
রাসূলুল্লাহ
(ছাঃ)-এর নিকট বৈধ ঝাড়ফুঁক সম্পর্কে জানতে চাওয়া হ’লে তিনি বলেন,مَنِ
اسْتَطَاعَ مِنْكُمْ أَنْ يَنْفَعَ أَخَاهُ فَلْيَنْفَعْهُ، ‘তোমাদের যে
কেউ নিজের কোন ভাইয়ের কোন উপকার করতে পারে, সে যেন অবশ্যই তার উপকার করে’।[15]
যে
ব্যক্তি কোন রোগীর সেবা করে বা দেখতে যায় তার ফযীলত সম্পর্কে
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, مَنْ عَادَ مَرِيضًا لَمْ يَزَلْ فِىْ خُرْفَةِ
الْجَنَّةِ قِيلَ يَا رَسُولَ اللهِ وَمَا خُرْفَةُ الْجَنَّةِ قَالَ
جَنَاهَا- ‘কোন ব্যক্তি যখন রোগীকে সেবা করে বা দেখতে যায়, তখন সে
জান্নাতের উদ্যানে ফল আহরণ করতে থাকে। বলা হ’ল, হে রাসূল (ছাঃ)! ‘খুরফা’
কি? তিনি বললেন, জান্নাতের ফল’।[16]
অন্যত্র
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, مَنْ عَادَ مَرِيضًا خَاضَ فِي الرَّحْمَةِ إِذَا
قَعَدَ اسْتَقَرَّ فِيْهَا ‘যে ব্যক্তি কোন রোগীর পরিচর্যা করে, সে রহমতের
মধ্যে ডুব দেয়, এমনকি যখন সেখানে বসে পড়ে, তখন সে তো রীতিমতো রহমতের
মধ্যেই অবস্থান করে’।[17]
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)
আরো বলেন,مَا مِنْ مُسْلِمٍ يَعُوْدُ مُسْلِمًا غُدْوَةً إِلاَّ صَلَّى
عَلَيْهِ سَبْعُوْنَ أَلْفَ مَلَكٍ حَتَّى يُمْسِىَ وَإِنْ عَادَهُ
عَشِيَّةً إِلاَّ صَلَّى عَلَيْهِ سَبْعُوْنَ أَلْفَ مَلَكٍ حَتَّى
يُصْبِحَ وَكَانَ لَهُ خَرِيْفٌ فِى الْجَنَّةِ، ‘এমন কোন মুসলমান নেই যে
সকাল বেলা কোন মুসলমান রোগীকে দেখতে যায়, অথচ তার জন্য সন্ধ্যা পর্যন্ত
সত্তর হাযার ফেরেশতা দো‘আ না করে। আর সন্ধ্যা বেলা কোন রোগী দেখতে যায়,
সকাল পর্যন্ত তার জন্য সত্তর হাযার ফেরেশতা দো‘আ না করে। আর তার জন্য
জান্নাতে একটি ফলের বাগান সুনির্ধারিত করে দেয়া হয়’।[18]
রাসূলুল্লাহ
(ছাঃ) বলেছেন,إِذَا عَادَ الْمُسْلِمُ أَخَاهُ أَوْ زَارَهُ قَالَ اللهُ
عَزَّ وَجَلَّ طِبْتَ وَطَابَ مَمْشَاكَ وَتَبَوَّأْتَ فِى الْجَنَّةِ
مَنْزِلاً ‘যখন কোন মুসলিম তার কোন ভাইয়ের রোগ দেখতে যায় অথবা সাক্ষাৎ করতে
যায়, তখন আল্লাহ তা‘আলা বলেন, তোমার জীবন সুখের হ’ল, তোমার চলন উত্তম হ’ল
এবং তুমি জান্নাতে একটি ইমারত বানিয়ে নিলে’।[19]
প্রতিবেশীর সাথে সদাচরণ করা :
প্রতিবেশী হচ্ছে মানুষের সবচেয়ে নিকটজন, যিনি তার খবরা-খবর সম্পর্কে অন্যদের তুলনায় বেশী জানেন। সুখ-দুঃখ, বিপদাপদে প্রতিবেশীই সবার আগে এগিয়ে আসে। তাই প্রতিবেশীর সাথে সদাচরণ করার জন্য মহান আল্লাহ তা‘আলা নির্দেশ দিয়েছেন এবং রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)ও প্রতিবেশীর সাথে সদাচরণ করা, তাদের বিপদাপদে এগিয়ে যাওয়া, সাহায্য-সহযোগিতা করার বিষয়ে অত্যন্ত গুরুত্বারোপ করেছেন। কেননা সুখী-সমৃদ্ধশালী, সুশৃংখল, নিরাপদ ও শান্তিপূর্ণ সমাজ গঠনে প্রতিবেশীর সাথে সদাচরণের বিকল্প নেই। প্রতিবেশীর সাথে সদাচরণের নির্দেশ দিয়ে মহান আল্লাহ বলেন,وَاعْبُدُوا اللهَ وَلَا تُشْرِكُوْا بِهِ شَيْئًا وَبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَانًا وَبِذِي الْقُرْبَى وَالْيَتَامَى وَالْمَسَاكِيْنِ وَالْجَارِ ذِي الْقُرْبَى وَالْجَارِ الْجُنُبِ وَالصَّاحِبِ بِالْجَنْبِ، ‘আর তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর এবং তার সাথে কাউকে শরীক করো না। তোমরা পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার কর এবং আত্মীয় পরিজন, ইয়াতীম, মিসকীন, আত্মীয় প্রতিবেশী, অনাত্মীয় প্রতিবেশী, পার্শ্ববর্তী সাথী, পথের সাথী ও তোমাদের দক্ষিণ হস্ত যাদের মালিক (দাস-দাসী) তাদের সাথে সদ্ব্যবহার কর’ (নিসা ৪/৩৬)।
রাসূলুল্লাহ
(ছাঃ) বলেছেন,مَا زَالَ جِبْرِيْلُ يُوصِيْنِى بِالْجَارِ حَتَّى ظَنَنْتُ
أَنَّهُ سَيُوَرِّثُهُ، ‘জিবরীল (আঃ) সদা-সর্বদা আমাকে প্রতিবেশীর অধিকার
পূর্ণ করার উপদেশ দিতেন। এমনকি আমার মনে হচ্ছিল যে, তিনি প্রতিবেশীকে
উত্তরাধিকারী বানিয়ে দিবেন’।[20] প্রতিবেশীর সাথে অসদাচরণ করলে সে কখনো
পূর্ণাঙ্গ মুমিন হ’তে পারে না। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,وَاللهِ لاَ
يُؤْمِنُ وَاللهِ لاَ يُؤْمِنُ وَاللهِ لاَ يُؤْمِنُ. قِيْلَ مَنْ يَا
رَسُولَ اللهِ؟ قَالَ الَّذِيْ لاَ يَأْمَنُ جَارُهُ بَوَائِقَهُ. ‘আল্লাহর
ক্বসম সে ঈমানদার হবে না, আল্লাহর ক্বসম সে ঈমানদার হবে না, আল্লাহর ক্বসম
সে ঈমানদার হবে না। জিজ্ঞেস করা হ’ল, হে আল্লাহর রাসূল! কে সে? তিনি
বললেন, যার প্রতিবেশী তার অনিষ্ট থেকে নিরাপদ নয়’।[21]
রাসূলুল্লাহ
(ছাঃ) আরো বলেছেন,لاَ يَدْخُلُ الْجَنَّةَ مَنْ لاَ يَأْمَنُ جَارُهُ
بَوَائِقَهُ، ‘ঐ ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে না, যার প্রতিবেশী তার
অনিষ্ট থেকে নিরাপদ নয়’।[22] অন্য বর্ণনায় এসেছে,مَنْ كَانَ يُؤْمِنُ
بِاللهِ وَالْيَوْمِ الآخِرِ فَلاَ يُؤْذِ جَارَهُ، ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ ও
পরকালের প্রতি বিশ্বাস রাখে, সে যেন তার প্রতিবেশীকে কষ্ট না দেয়’।[23]
প্রতিবেশী
অভুক্ত থাকা সত্ত্বেও তাদেরকে খাদ্য না দিয়ে যে ব্যক্তি পেটপুরে খায় সেও
প্রকৃত মুমিন নয়। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, لَيْسَ الْمُؤْمِنُ بِالَّذِيْ
يَشْبَعُ وَجَارُهُ جَائِعٌ إِلَى جَنْبِهِ، ‘ঐ ব্যক্তি ঈমানদার নয়, যে
ব্যক্তি তৃপ্তি সহকারে পেটপুরে খায়, অথচ তার পাশেই তার প্রতিবেশী ক্ষুধার্ত
থাকে’।[24]
অন্য বর্ণনায় এসেছে, রাসূলুল্লাহ
(ছাঃ) বলেছেন,إِذَا طَبَخْتَ مَرَقَةً فَأَكْثِرْ مَاءَهَا وَتَعَاهَدْ
جِيْرَانَكَ، ‘তোমরা যখন তরকারী রান্না করবে, তাতে পানি বেশী করে দিবে এবং
তা প্রতিবেশীদের মাঝে বিতরণ করবে।[25]
কর্যে হাসানাহ :
আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে কর্যে হাসানাহর গুরুত্ব ও তাৎপর্য অপরিসীম। চির অভিশপ্ত সূদী কারবারকে প্রতিহত করতে হ’লে কর্যে হাসানার বিকল্প নেই। সামাজিক দৈন্য, পারিবারিক কলহ সহ নানা অসংগতি দূরীকরণে কর্যে হাসানাহ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এর মাধ্যমে পরস্পরের মাঝে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন দৃঢ়করণ, দারিদ্রবিমোচন, ধনী-দরিদ্রের বিভেদ সহজেই দূর করা সম্ভব।
কর্যে হাসানাহ প্রদান
সাধারণ দান-ছাদাক্বার ন্যায় নেকআমল। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,مَا مِنْ
مُسْلِمٍ يُقْرِضُ مُسْلِمًا قَرْضًا مَرَّتَيْنِ إِلاَّ كَانَ
كَصَدَقَتِهَا مَرَّةً، ‘যদি কোন মুসলিম ব্যক্তি তার অপর কোন মুসলিম ভাইকে
দু’বার ঋণ দান করে তবে তার আমলনামায় এ অর্থ একবার ছাদাক্বা করার ন্যায়
হবে’।[26] অন্যত্র রাসূল (ছাঃ) বলেন, إِنَّ السَّلَفَ يَجْرِى مَجْرَى شَطْرِ الصَّدَقَةِ ‘নিশ্চয়ই নিঃস্বার্থ দান ছাদাক্বার অর্ধেক’।[27] তিনি আরো বলেন, كُلُّ قَرْضٍ صَدَقَةٌ ‘প্রত্যেক কর্যে ছাদাক্বার ছাওয়াব রয়েছে’।[28]
ক্ষেত্র
বিশেষে দান-ছাদাক্বার চেয়েও কর্যে হাসানার ছওয়াব বেশী হয়। রাসূলুল্লাহ
(ছাঃ) বলেছেন,دَخَلَ رَجُلٌ الْجَنَّةَ فَرَأَى عَلَى بَابِهَا مَكْتُوبًا
الصَّدَقَةُ بِعَشْرِ أَمْثَالِهَا، وَالْقَرْضُ بِثَمَانِيَةَ عَشَرَ
‘জনৈক ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করে তার দরজায় লিখিত দেখতে পেল যে,
ছাদাক্বায় দশগুণ (ছওয়াব) এবং ঋণদানে আঠারগুণ (ছওয়াব রয়েছে)’।[29]
অসচ্ছল ঋণগ্রহীতাকে ঋণ পরিশোধে সহজ ব্যবস্থা করে দিলে বা ক্ষমা করে দিলে ক্বিয়ামতের দিন আল্লাহ তা‘আলা তাকে দুঃখ-কষ্ট থেকে মুক্তি দিবেন। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,مَنْ سَرَّهُ أَنْ يُنْجِيَهُ اللهُ مِنْ كُرَبِ يَوْمِ الْقِيَامَةِ فَلْيُنَفِّسْ عَنْ مُعْسِرٍ أَوْ يَضَعْ عَنْهُ، ‘যে ব্যক্তি এটা চায় যে, আল্লাহ তাকে ক্বিয়ামত দিবসের দুঃখ-কষ্ট থেকে মুক্তি দিক সে যেন ঋণগ্রস্ত অক্ষম লোককে সহজ ব্যবস্থা করে দেয় কিংবা ঋণ মওকূফ করে দেয়’।[30] অন্য বর্ণনায় এসেছে, হাশরের দিন আল্লাহ তা‘আলা তাকে তাঁর আরশের ছায়ায় স্থান দিবেন। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,مَنْ أَنْظَرَ مُعْسِرًا أَوْ وَضَعَ لَهُ أَظَلَّهُ اللهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ تَحْتَ ظِلِّ عَرْشِهِ يَوْمَ لاَ ظِلَّ إِلاَّ ظِلُّهُ، ‘যে ব্যক্তি ঋণগ্রস্ত অভাবী লোককে সুযোগ দিবে অথবা (সম্পূর্ণ বা কিছুটা ঋণ) মওকূফ করে দিবে, ক্বিয়ামত দিবসে আল্লাহ তাকে তাঁর আরশের নীচে ছায়া দান করবেন যে দিন তাঁর ছায়া ব্যতীত কোন ছায়া থাকবে না’।[31] তিনি আরো বলেন,مَنْ يَسَّرَ عَلَى مُعْسِرٍ يَسَّرَ اللهُ عَلَيْهِ فِى الدُّنْيَا وَالآخِرَةِ، ‘আর যে ব্যক্তি কোন ঋণ পরিশোধে অক্ষম ব্যক্তির প্রতি সহজ করবে, আল্লাহ দুনিয়া ও আখেরাতে তার প্রতি সহজ করবেন’।[32]
ঋণগ্রস্ত
অক্ষম ব্যক্তিকে পরিশোধের জন্য সময় দিলে ঋণ পরিশোধ না করা পর্যন্ত ছওয়াব
পাওয়া যায়। বুরায়দা হতে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি রাসূল (ছাঃ)-কে বলতে
শুনেছি,مَنْ أَنْظَرَ مُعْسِراً فَلَهُ بِكُلِّ يَوْمٍ مِثْلُهُ صَدَقَةٌ.
قَالَ ثُمَّ سَمِعْتُهُ يَقُولُ مَنْ أَنْظَرَ مُعْسِراً فَلَهُ بِكُلِّ
يَوْمٍ مِثْلَيْهِ صَدَقَةٌ. قُلْتُ سَمِعْتُكَ يَا رَسُولَ اللهِ تَقُولُ
مَنْ أَنْظَرَ مُعْسِراً فَلَهُ بِكُلِّ يَوْمٍ مِثْلُهُ صَدَقَةٌ. ثُمَّ
سَمِعْتُكَ تَقُولُ مَنْ أَنْظَرَ مُعْسِراً فَلَهُ بِكُلِّ يَوْمٍ
مِثْلَيْهِ صَدَقَةٌ. قَالَ لَهُ بِكُلِّ يَوْمٍ صَدَقَةٌ قَبْلَ أَنْ
يَحِلَّ الدَّيْنُ فَإِذَا حَلَّ الدَّيْنُ فَأَنْظَرَهُ فَلَهُ بِكُلِّ
يَوْمٍ مِثْلَيْهِ صَدَقَةٌ. ‘যে কোন অভাবী ব্যক্তিকে ঋণ পরিশোধের সময়
বাড়িয়ে দেয় তার জন্য প্রতিদিনের বিনিমিয়ে সমপরিমাণ ছাদাক্বাহ রয়েছে। এরপর
তাকে বলতে শুনলাম, যে কোন অভাবী ব্যক্তিকে ঋণ পরিশোধের সময় বাড়িয়ে দেয় তার
জন্য প্রতিদিনের বিনিমিয়ে দ্বিগুণ পরিমাণ ছাদাক্বাহ রয়েছে। আমি বললাম,
আপনাকে বলতে শুনলাম, যে কোন অভাবী ব্যক্তিকে ঋণ পরিশোধের সময় বাড়িয়ে দেয়
তার জন্য প্রতিদিনের বিনিমিয়ে সমপরিমাণ ছাদাক্বাহ রয়েছে। এরপর বলতে শুনলাম,
যে কোন অভাবী ব্যক্তিকে ঋণ পরিশোধের সময় বাড়িয়ে দেয় তার জন্য প্রতিদিনের
বিনিমিয়ে দ্বিগুণ পরিমাণ ছাদাক্বাহ রয়েছে। তখন তিনি বললেন, কেউ যদি কোন
দরিদ্র ঋণগ্রহীতাকে ঋণ আদায়ের ব্যাপারে কিছু সময় দেয় তাহ’লে সে প্রতিদিন
ততটুকু অর্থ একবার ছাদাক্বা করার ছওয়াব পাবে যতক্ষণ না ঋণ আদায়ের সে
নির্ধারিত দিন এসে যায়। উক্ত নির্ধারিত দিন এসে যাওয়ার পর যদি সে তাকে
দ্বিতীয়বারের মতো আরো কিছু সময় বাড়িয়ে দেয় তাহ’লে সে প্রতিদিন ততটুকু অর্থ
দু’বার ছাদাক্বা করার ছাওয়াব পাবে’।[33]
ঋণ
পরিশোধে অক্ষম ব্যক্তিকে ক্ষমা করে দিলে আল্লাহ তা‘আলাও তাকে ক্ষমা করে
দিবেন। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,كَانَ رَجُلٌ يُدَايِنُ النَّاسَ فَكَانَ
يَقُولُ لِفَتَاهُ إِذَا أَتَيْتَ مُعْسِرًا فَتَجَاوَزْ عَنْهُ لَعَلَّ
اللهَ يَتَجَاوَزُ عَنَّا فَلَقِىَ اللهَ فَتَجَاوَزَ عَنْهُ، ‘পূর্ব যুগের
জনৈক লোক মানুষকে ঋণ দান করত। আর সে তার চাকরকে (কর্মচারীকে) বলত, অভাবী
ঋণগ্রস্ত কোন লোকের কাছে (ঋণের অর্থ আদায় করতে) গেলে তাকে ক্ষমা করে দিও।
আশা করা যায় আল্লাহও আমাদেরকে ক্ষমা করে দিবেন। এরপর মৃত্যুবরণ করে সে
আল্লাহর সাক্ষাৎ লাভ করল। তখন তিনি তাকে ক্ষমা করে দিলেন’।[34]
ত্রাণ বিতরণ :
ধনী-দরিদ্র
নির্বিশেষে মানুষ দুর্যোগে নিপতিত হয়ে সাময়িক বা স্থায়ীভাবে নিঃস্ব হ’তে
পারে। যেমন- ঘূর্ণিঝড়, সাইক্লোন, বন্যা, নদী ভাঙ্গাসহ যেকোন প্রাকৃতিক
দুর্যোগ বা যেকোন সংকটময় অবস্থায় অসহায় মানুষের সাহায্যে এগিয়ে আসার জন্য
আহবান জানিয়ে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,مَنْ نَفَّسَ عَنْ مُؤْمِنٍ
كُرْبَةً مِنْ كُرَبِ الدُّنْيَا نَفَّسَ اللهُ عَنْهُ كُرْبَةً مِنْ
كُرَبِ يَوْمِ الْقِيَامَةِ، ‘যে ব্যক্তি কোন মুমিনের দুনিয়ার বিপদ সমূহের
কোন একটি বিপদ দূর করে দিবে, আল্লাহ তা‘আলা তার আখিরাতের বিপদসমূহের মধ্য
হ’তে একটি (কঠিন) বিপদ দূর করে দিবেন।[35] অন্য বর্ণনায় এসেছে,وَمَنْ
يَسَّرَ عَلَى مُعْسِرٍ يَسَّرَ اللهُ عَلَيْهِ فِى الدُّنْيَا
وَالآخِرَةِ، ‘যে ব্যক্তি কোন মুমিনের পার্থিব দুঃখ-কষ্ট দূর করবে, আল্লাহ
তা‘আলা ক্বিয়ামতে তার দুঃখ-কষ্ট দূর করবেন’।[36] পৃথিবীর অধিবাসীদের
বিপদাপদে, সংকটময় মুহূর্তে সাহায্যে এগিয়ে আসলে আসমানের অধিবাসী আল্লাহ তার
প্রতি দয়া করেন। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ارْحَمُوا مَنْ فِى الأَرْضِ
يَرْحَمْكُمْ مَنْ فِى السَّمَاءِ، ‘তোমরা পৃথিবীবাসীদের প্রতি দয়া কর,
তাহ’লে যিনি আসমানে আছেন তিনি তোমাদের প্রতি দয়া করবেন’।[37]
শরণার্থীদেরকে আশ্রয় ও সাহায্য দান :
শরণার্থীর ইংরেজী প্রতিশব্দ হ’ল Refugee তথা উদ্বাস্ত্ত। Convention related to the status of Refugee এর অনুচ্ছেদ-১ এ বলা হয়েছে: ‘শরণার্থী হ’ল এমন ব্যক্তি যারা ধর্ম, বর্ণ ভাষা, গোষ্ঠী বা জাতীয়তা বা সমাজের কোন নির্দিষ্ট গোষ্ঠী বা রাজনৈতিক মতাদর্শের ভিন্নতার কারণে, অত্যাচারিত, নির্যাতিত ও নিপীড়িত হওয়ার সুনিশ্চিত ভয় থেকে অনিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও নিজেকে সুরক্ষা করার জন্য দেশত্যাগ করে বা ত্যাগ করতে বাধ্য হয়ে অন্য কোন দেশে আশ্রয় গ্রহণ করেন এবং এ অবস্থার প্রেক্ষিতে ঐ ব্যক্তি যে দেশে আশ্রয় গ্রহণ করেন সেটা তার সাধারণ বাসস্থান যেটা সাধারণ অবস্থার পরিপন্থী’।
ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় শরণার্থীর বিষয়টি নতুন কোন বিষয় নয়। অতীতকাল থেকেই মানুষ নিজ জন্মভূমিতে বিভিন্ন কারণে নির্যাতিত, নিষ্পেষিত, বিতাড়িত হয়ে পার্শ্ববর্তী দেশে উদ্বাস্ত হিসাবে আশ্রয় গ্রহণ করেছে। ইসলামের প্রাথমিক যুগে মুসলমানগণ মক্কার কাফির-মুশরিকদের দ্বারা নির্যাতিত নিষ্পেষিত হয়ে প্রথমে আবিসিনিয়ায় এবং পরবর্তীতে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) সহ মদীনায় হিজরত করেন।
আল্লাহপাক
ঈমানের বরকতে আনছাগণের মধ্যে এমন মহববত সৃষ্টি করে দিয়েছিলেন যে,
মুহাজিরগণকে ভাই হিসাবে পাওয়ার জন্য প্রত্যেকে উদ্গ্রীব ছিলেন। যদিও তাদের
মধ্যে সচ্ছলতা ছিল না। কিন্তু তারা ছিলেন ঈমানী প্রাণ-প্রাচুর্যে ভরা। সবাই
মুহাজিরগণকে স্ব স্ব পরিবারে পেতে চান। ফলে মুহাজিরগণকে আনছারদের সাথে ভাই
ভাই হিসাবে ঈমানী বন্ধনে আবদ্ধ করে দেওয়া হয়। তারা তাদের জমি, ব্যবসা ও
বাড়ীতে মুহাজিরদেরকে অংশীদার করে নেন। এমনকি যাদের দু’জন স্ত্রী ছিল, তারা
একজনকে তালাক দিয়ে মুহাজির ভাইকে দেওয়ার প্রস্তাব দেন। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ও
মুহাজিরগণের প্রতি এরূপ অকুণ্ঠ সহযোগিতার জন্য তাঁরা ইতিহাসে ‘আনছার’
নামে অভিহিত হয়েছেন।[38]
মুহাজিরদের আশ্রয়দানকারী আনছারদের প্রশংসায় মহান আল্লাহ বলেন,وَالَّذِيْنَ تَبَوَّءُوا الدَّارَ وَالْإِيْمَانَ مِنْ قَبْلِهِمْ يُحِبُّوْنَ مَنْ هَاجَرَ إِلَيْهِمْ وَلَا يَجِدُونَ فِي صُدُورِهِمْ حَاجَةً مِمَّا أُوتُوا وَيُؤْثِرُونَ عَلَى أَنْفُسِهِمْ وَلَوْ كَانَ بِهِمْ خَصَاصَةٌ وَمَنْ يُوقَ شُحَّ نَفْسِهِ فَأُولَئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ ‘আর যারা মুহাজিরদের আগমনের পূর্বে এ নগরীতে বসবাস করত এবং ঈমান এনেছিল। যারা মুহাজিরদের ভালবাসে এবং তাদেরকে (ফাই থেকে) যা দেওয়া হয়েছে, তাতে তারা নিজেদের মনে কোনরূপ আকাঙ্ক্ষা পোষণ করে না। আর তারা নিজেদের উপর তাদেরকে অগ্রাধিকার দেয়, যদিও তাদেরই রয়েছে অভাব। বস্ত্ততঃ যারা হৃদয়ের কার্পণ্য হ’তে মুক্ত, তারাই সফলকাম’ (হাশর ৫৯/৯)।
কোন মানুষ নিজ মাতৃভূমিতে নির্যাতিত, নিষ্পেষিত হয়ে অন্য দেশে আশ্রয় নিলে তাদেরকে কিভাবে আশ্রয় দিতে হয়, সাহায্য করতে হয় এবং ভালোবাসার বন্ধনে আবদ্ধ করতে হয় তার বাস্তব দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন মদীনার আনছারগণ। এমন বদান্যতার দৃষ্টান্ত বিশ্বের ইতিহাসে সত্যিই বিরল।
বর্তমান বিশ্বে মুসলিম ও অমুসলিম দেশ তথা
আফ্রিকা, ল্যাটিন আমেরিকা, সিরিয়া, ইরাক, ইরান, ইয়েমেন, লিবিয়া, সোমালিয়া,
সুদান, বসনিয়া, আফগানিস্তান এবং সাম্প্রতিককালে মায়ানমারের শরণার্থী সমস্যা
জটিল রূপ ধারণ করেছে। তাই এ সকল শরণার্থীদের সাহায্য-সহযোগিতায় এগিয়ে আসা
উচিত। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,وَاللهُ فِىْ عَوْنِ الْعَبْدِ مَا كَانَ
الْعَبْدُ فِىْ عَوْنِ أَخِيهِ ‘আল্লাহ তা‘আলা স্বীয় বান্দাদেরকে ততক্ষণ
পর্যন্ত সাহায্য করতে থাকেন, যতক্ষণ সে তার ভাইকে সাহায্য করতে থাকে’।[39]
অন্য বর্ণনায় এসেছে, لاَ يَرْحَمُ اللهُ مَنْ لاَ يَرْحَمُ النَّاسَ ‘যে
ব্যক্তি মানুষের প্রতি দয়া করে না, আল্লাহ তা‘আলাও তার প্রতি দয়া করেন না’।[40]
রক্তদান :
রক্তদান হ’ল কোন প্রাপ্তবয়স্ক (১৮-৬০) সুস্থ মানুষের স্বেচ্ছায় রক্ত দেয়ার প্রক্রিয়া। এই দান করা রক্ত পরিসঞ্চালন করা হয় অথবা অংশীকরণের মাধ্যমে ঔষধে পরিণত করা হয়। রক্তদান স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী। রক্তদান করার সঙ্গে সঙ্গে শরীরের মধ্যে অবস্থিত অস্থিমজ্জা (Bon Marrow) নতুন রক্ত কণিকা তৈরীর জন্য উদ্দীপ্ত হয় এবং রক্তদান করার দুই/তিন সপ্তাহের মধ্যে নতুন রক্ত কণিকার জন্ম হয়ে ঘাটতি পূরণ করে। অজ্ঞতার কারণে অনেকেই রক্তদানকে ক্ষতিকর মনে করে। কিন্তু এ ধারণা একেবারেই ভুল। বছরে ৩ বার রক্তদান করলে শরীরে লোহিত কণিকাগুলো প্রাণবন্ততা বাড়িয়ে তোলার সাথে সাথে নতুন রক্তকণিকা তৈরীর হার বাড়িয়ে দেয়। উল্লেখ্য, রক্তদান করার মাত্র ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই দেহে রক্তের পরিমাণ স্বাভাবিক হয়ে যায়। নিয়মিত রক্তদান করলে হৃদরোগ ও হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি অনেকটাই কমে যায়। গবেষণায় দেখা গেছে, যারা বছরে দুইবার রক্ত দেয়। অন্যদের তুলনায় তাদের ক্যান্সার আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কম থাকে। বিশেষ করে ফুসফুস, লিবার, কোলন, পাকস্থলী ও গলার ক্যান্সারের ঝুঁকি নিয়মিত রক্তদাতাদের ক্ষেত্রে অনেক কম পরিলক্ষিত হয়। নিয়মিত স্বেচ্ছায় রক্ত দানের মাধ্যমে নিজের শরীরে বড় কোন রোগ আছে কিনা তা বিনা খরচেই জানা যায়। যেমন- হেপাটাইটিস-বি, হেপাটাইটিস-সি, সিফিলিস, এইচআইভি ইত্যাদি।
প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক সুস্থ মানুষের নিয়মিত রক্তদান করে রক্ত সঞ্চয়ের অভ্যাস গড়ে তুলা উচিত। জনৈক কবি বলেছেন,
‘সময় তুমি হার মেনেছ রক্তদানের কাছে
দশটি মিনিট করলে খরচ একটি জীবন বাঁচে’।
উল্লিখিত পঙতি দু’টিতে কবি যথার্থ কথাই বলেছেন। রক্ত দান এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যে, অনেক সময় এমন পরিস্থিতির ক্লু সৃষ্টি হয় মাত্র ১/২ ব্যাগ রক্ত হ’লেই আল্লাহর রহমতে রোগী বেঁচে যেতে পারে। কেননা রক্তের বিকল্প আজও কোন কিছু আবিষ্কৃত হয়নি। থ্যালাসেমিয়া রোগী, অপারেশনের রোগী, এ্যাক্সিডেন্টে রক্ত শূন্য হয়ে মৃত্যু পথযাত্রীসহ এমন সংকটময় মুহূর্তে মাত্র এক ব্যাগ রক্তের বিনিময়ে মহান আল্লাহর ইচ্ছায় বাঁচতে পারে একটি প্রাণ। আর এ প্রাণ বাঁচানো এমনই পুণ্যময় কাজ যে, মহান আল্লাহ রাববুল আলামীন একজন লোককে বাঁচানোকে সমগ্র মানব জাতিকে বাঁচানোর সাথে তুলনা করেছেন। তিনি বলেন,وَمَنْ أَحْيَاهَا فَكَأَنَّمَا أَحْيَا النَّاسَ جَمِيْعًا ‘আর যে ব্যক্তি কারু জীবন রক্ষা করে, সে যেন সকল মানুষের জীবন রক্ষা করে’ (মায়েদাহ ৫/৩২)।
রাসূলুল্লাহ
(ছাঃ) বলেছেন, وَاللهُ فِى عَوْنِ الْعَبْدِ مَا كَانَ الْعَبْدُ فِى
عَوْنِ أَخِيهِ، ‘আল্লাহ তা‘আলা তাঁর বান্দাদেরকে ততক্ষণ পর্যন্ত সাহায্য
করতে থাকেন যতক্ষণ সে তার ভাইয়ের সাহায্য করতে থাকে’।[41]
সাংগঠনিকভাবে সমাজ কল্যাণমূলক কাজ করা :
সমাজ কল্যাণমূলক কাজগুলো এককভাবে ও সাংগঠনিকভাবে এ দু’প্রক্রিয়ায় করা যায়। তবে এককভাবে এগুলো করার চেয়ে সাংগঠনিকভাবে করলে এর সহজতা, উপকারিতা ও ফলাফল অত্যন্ত সুদূর প্রসারী হয়। উদাহরণ স্বরূপ ‘রক্তদান’ কর্মসূচী। কোন সাংগঠনিক প্রচার-প্রচারণা, কার্যক্রম না থাকলে অনেকেই রক্ত দানের গুরুত্ব, প্রয়োজনীয়তা, উপকারিতা ও এর ফযীলত সম্পর্কে জানতে পারে না বিধায় রক্তদানে উৎসাহী হয় না; এমনকি নিজের রক্তের গ্রুপ সম্পর্কেও অনেকেই জানে না এবং রক্ত গ্রহীতাগণও সংকটময় মুহূর্তে জানতে পারে না কোথায় যোগাযোগ করলে বিনামূল্যে নিরাপদ রক্ত পাওয়া যাবে। আবার এমন কিছু দুর্লভ গ্রুপের রক্ত রয়েছে যা সচরাচর পাওয়া যায় না। তাই তারা বাধ্য হয় ‘ব্লাড ব্যাংক’ থেকে উচ্চমূল্যে বাসী ও মাদকাসক্তদের রক্ত সংগ্রহ করতে। ব্লাড ব্যাংকে যারা রক্ত বিক্রি করে তাদের ৯০% মাদকাসক্ত। কারণ মাদকাসক্তরা মাদক কেনার মত টাকা-পয়সা না থাকলে রক্ত বিক্রি করে হ’লেও তারা মাদক ক্রয় করে। আর একজন মাদকাসক্তের রক্ত মানেই বিভিন্ন রোগ জীবানুতে ভরপুর। এ ধরনের রক্ত শরীরে গ্রহণ করা মানেই রোগকে আমন্ত্রণ জানানো। পক্ষান্তরে সাংগঠনিকভাবে ‘রক্তদান’ মানেই সহজলভ্য বিনামূল্যে নিরাপদ ও তাজা রক্ত। উদাহরণ স্বরূপ ‘আহলেহাদীছ আন্দোলন বাংলাদেশ’-এর অধীনে পরিচালিত ‘আল-আওন’ নিরাপদ রক্তদান কর্মসূচী। এটি এমন একটি ‘রক্তদান’ কার্যক্রম দেশের প্রায় প্রতিটি যেলা-উপযেলায় এর সদস্য রয়েছে।
এর প্রতিটি সদস্য দ্বীনদার, পরহেযগার বিধায় এদের রক্ত সম্পূর্ণই মাদকমুক্ত ও নিরাপদ। দেশব্যাপী রয়েছে এদের সদস্যের নেটওয়াক। দেশের যেকোন প্রান্তেরই সংকটময় মুহূর্তে উক্ত সংগঠনের যেকোন দায়িত্বশীল বা কর্মীর সাথে যোগাযোগ করলে বিনামূল্যে নিরাপদ রক্ত পাওয়া যায়। রক্তদাতা স্রেফ মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য রক্তদান করে থাকেন। উক্ত সংগঠনের মাধ্যমে বিনামূল্যে রক্তের গ্রুপ নির্ণয় করা হয় এবং বিভিন্ন সভা-সেমিনার ও সিম্পোজিয়ামের মাধ্যমে কুরআন-হাদীছ ও চিকিৎসা বিজ্ঞানের আলোকে রক্তদানের গুরুত্ব, তাৎপর্য, উপকারিতা ও ফযীলত সম্পর্কে আলোচনার মাধ্যমে জনসচেনতা সৃষ্টি করা হয়।
অনুরূপভাবে ইয়াতীম প্রতিপালন, বিধবাকে সহায়তা দান, নিঃস্ব, দরিদ্রকে খাদ্য-অর্থদান, কর্যে হাসানাহ, ত্রাণ বিতরণ, শরণার্থীদের আশ্রয় ও সাহায্য করা ইত্যাদি ব্যক্তিগতভাবে করার চেয়ে সাংগঠনিকভাবে করলে এর উপকারিতা ও ফলাফল সুদূর প্রসারী।
উপসংহার :
উল্লিখিত আলোচনা থেকে প্রতীয়মান হয় যে, ইসলাম মানব কল্যাণকামী ধর্ম। তাই ইসলামে সমাজকল্যাণমূলক কাজের গুরুত্ব অপরিসীম। সমাজকল্যাণমূলক কাজগুলোকে ইবাদততুল্য কর্ম হিসাবে গণ্য করা হয়েছে। এতে রয়েছে ইহকালীন কল্যাণ ও পরকালীন মুক্তির গ্যারান্টি। তাই প্রত্যেকটি মুসলিমের উচিত এ সকল সমাজকল্যাণ মূলক কাজে আত্মনিয়োগ করে মহান আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টি অর্জন করা এবং জান্নাত লাভের পথকে সুগম করা। মহান আল্লাহ আমাদের সকলকে এ মহান কাজে ব্রতী হওয়ার তাওফীক্ব দান করুন-আমীন!
[1]. নাসাঈ হা/৪২১০; আবূদাঊদ হা/৪৯৪৪; ছহীহ ইবনু হিববান হা/৪৫৭৫, ছহীহ আত-তারগীব হা/১৭৭৬।
[2]. বুখারী হা/৫৭, ৫২৪, ১৪০১; মুসলিম হা/৫৬; তিরমিযী হা/১৯২৫।
[3]. মুসলিম হা/২৬৯৯; তিরমিযী হা/২৯৪৫; আবূদাঊদ হা/৪৯৪৬; ইবনু মাজাহ হা/১৮৫; ছহীহুল জামে‘ হা/৬৫৭৭।
[4]. বুখারী হা/৫৩০৪; ছহীহ ইবনু হিববান হা/৪৬০; গায়াতুল মারাম হা/২৬৫; ছহীহ আদাবুল মুফরাদ হা/১০১; মিশকাত হা/৪৯৫২।
[5]. মুসলিম হা/২৯৮৩।
[6]. আবূদাউদ হা/১১০।
[7]. আহমাদ হা/১৯০৫; ছহীহাহ ৬/৮৯৪ পৃঃ; ছহীহ আত-তারগীব হা/২৫৪৩, ১৮৯৫।
[8]. বুখারী হা/৫৩৫৩, ৬০০৬, ৬০০৭; মুসলিম হা/২৯৮২; ছহীহ ইবনু হিববান হা/৪২৪৫; ছহীহ তিরমিযী হা/১৯৬৯; ছহীহ ইবনু মাজাহ হা/১৭৫৩; ছহীহ নাসাঈ হা/২৫৭৬; ছহীহ আত-তারগীব হা/২৫৪৬।
[9]. বুখারী হা/১২, ২৮, ৬২৩৬; মুসলিম হা/৪২; আহমাদ হা/৬৭৬৫।
[10]. ছহীহুল জামে‘ হা/৫৩৮২; ছহীহ আত-তারগীব হা/২৫৬১; বায়হাক্বী হা/২০১৬০; মিশকাত হা/৪৯৯১।
[11]. তিরমিযী হা/২৭৩৭; নাসাঈ হা/১৯৩৮; ছহীহাহ হা/৮৩২; ছহীহুল জামে‘ হা/৫১৮৮; ছহীহ আত-তারগীব হা/২১৫৭; মিশকাত হা/৪৬৩০।
[12]. বুখারী হা/৫৩৭৩, ৫৬৪৯; আবূদাঊদ হা/৩১০৫; আহমাদ হা/১৯৫১; ছহীহ ইবনু হিববান হা/৩৩২৪; মিশকাত হা/১৫২৩।
[13]. আদাবুল মুফরাদ হা/৫১৮; ছহীহাহ হা/১৯৮১।
[14]. মুসলিম হা/২৫৬৯; ছহীহ ইবনু হিববান হা/৯৪৪; ছহীহ আল জামে‘ আছ-ছগীর হা/১৯১৬; ছহীহ আত-তারগীব হা/৯৫২।
[15]. মুসলিম হা/২১৯৯; আহমাদ হা/১৪৩৮২; ছহীহুল জামে‘ হা/৬০১৬৯; ছহীহাহ হা/৪৮২; মিশকাত হা/৪৫২৯।
[16]. মুসলিম হা/২৫৬৮; তিরমিযী হা/৯৬৮; আহমাদ হা/২২৪২২; ছহীহুল জামে‘ হা/৬৩৮৯।
[17]. আদাবুল মুফরাদ হা/৫২২; বায়হাক্বী হা/৬৮২২; আহমাদ হা/১৪২৬০; মুছান্নাফ ইবনু আবী শায়বা হা/১০৯৩৯; আত-তারগীব ৪/২৪৯ পৃঃ।
[18]. তিরমিযী হা/৯৬৯; আবূদাঊদ হা/৩০৯৮; ইবনু মাজাহ হা/১৪৪২; রিয়াযুছ ছালেহীন হা/৯০০।
[19]. তিরমিযী হা/২০০৮; ছহীহ আত-তারগীব হা/২৫৭৮; ছহীহ আদাবুল মুফরাদ হা/২৬২; আহমাদ হা/৮৫৩৬; ছহীহ ইবনু হিববান হা/২৯৬১; ছহীহুল জামে‘ হা/৬৩৮৭।
[20]. বুখারী হা/৫৬৬৯; মুসলিম হা/২৬২৪; তিরমিযী হা/১৯৪৩; আবূদাঊদ হা/৫১৫২; ছহীহুল জামে‘ হা/১০৫৬৫; মিশকাত হা/৪৯৬৪।
[21]. বুখারী হা/৬০১৬; মুসলিম হা/৪৬; আহমাদ হা/৭৮৭৮; ছহীহুল জামে‘ হা/৭১০২; ছহীহুল হা/৩০০০।
[22]. মুসলিম হা/৪৬; ছহীহুল জামে‘ হা/৭৬৭৫; ছহীহাহ হা/২৭৫; আহমাদ হা/৮৮৫৫।
[23]. বুখারী হা/৫৬৭২; আবূদাঊদ হা/৫১৫৬।
[24]. ছহীহুল জামে‘ হা/৫৩৮২; ছহীহ আত-তারগীব হা/২৫৬১; বায়হাক্বী হা/২০১৬০; মিশকাত হা/৪৯৯১।
[25]. মুসলিম হা/২৬২৫; দারিমী হা/২১২৪; শু‘আবুল ঈমান হা/৯০৯২; মিশকাত হা/১৯৩৭।
[26]. ইবনু মাজাহ হা/২৪৩০; ছহীহ ইবনে হিববান হা/৫০১৮; ছহীহুল জামে‘ হা/৫৭৬৯; বায়হাক্বী ৫/৩৫৩।
[27]. আহমাদ হা/৩৯১১; ছহীহাহ হা/১৫৫৩; ছহীহুল জামে‘ হা/১৬৪০।
[28]. তাবারানী ১/১৪৩ পৃঃ; ছহীহ আত-তারগীব হা/৮৯৯।
[29]. ত্বাবারাণী কাবীর; সিলসিলা ছহীহাহ হা/৩৪০৭।
[30]. মুসলিম হা/১৫৬৩; ছহীহ আত-তারগীব হা/৯০৩।
[31]. তিরমিযী হা/১৩০৬; মুসলিম হা/৩০০৬; ছহীহ আত-তারগীব হা/৯০৯।
[32]. মুসলিম হা/২৬৯৯, ২৭০০; তিরমিযী হা/১৪২৫; ইবনু মাজাহ হা/২৪১৭; ছহীহুল জামে‘ হা/৬৫৭৭।
[33]. মুসনাদে আহমাদ হা/২৩০৯৬; ছহীহাহ হা/৮৬; ইরওয়া হা/১৪৩৮; ছহীহ আত-তারগীব হা/৯০৭।
[34]. বুখারী হা/২০৭৮; মুসলিম হা/১৫৬২।
[35]. বুখারী হা/২৪৪২, ৬৯৫১; মুসলিম হা/২৫৮০, ২৬৯৯; মিশকাত হা/২০৪।
[36]. মুসলিম হা/২৬৯৯; তিরমিযী হা/১৯৩০; আবূদাউদ হা/১৪০০, ৪৯৪৬; ইবনু মাজাহ হা/২২৫।
[37]. তিরমিযী হা/১৯২৪; আবূদাঊদ হা/৪৯৪১; আহমাদ হা/৬৪৯৪; ছহীহুল জামে‘ হা/৩৫২২; ছহীহ আত-তারগীব হা/২২৫৬ হাদীছ হাসান ছহীহ।
[38]. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব, সীরাতুর রাসূল (ছাঃ) (রাজশাহী : হাদীছ ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, ৩য় মুদ্রণ ১৪৩৭ হিঃ/২০১৬ইং) ২৪৩ পৃঃ।
[39]. মুসলিম হা/২৬৯৯; ছহীহ তিরমিযী হা/২৯৪৫; আবূদাঊদ হা/৪৯৪৩; ছহীহ ইবনু মাজাহ হা/১৮৫; ছহীহুল জামে‘ হা/৬৫৭৭।
[40]. বুখারী হা/৭৩৭৬; মুসলিম হা/২৩১৯; তিরমিযী হা/১৯২২; মিশকাত হা/৪৯৪৭।
[41]. মুসলিম হা/২৬৯৯; তিরমিযী হা/২৯৪৫; আবূদাঊদ হা/৪৯৪৬; মিশকাত হা/২০৪।