২০০১ সালের ১১ই সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কের টুইন টাওয়ার ধ্বংসের ১১শ বার্ষিকী উপলক্ষে এ বছর Innocense of Muslims (মুসলিমদের নির্দোষিতা) শিরোনামে আমেরিকা থেকে একটি সিনেমা চিত্র ইন্টারনেটে ছাড়া হয়েছে। যাতে পবিত্র কুরআন, ইসলাম ও ইসলামের নবী মুহাম্মাদ (ছাঃ) সম্পর্কে জঘন্যতম মন্তব্য ও কুরুচিপূর্ণ চিত্রায়ন করা হয়েছে। ভিডিও চিত্রটি তারা ইউটিউব নামক সামাজিক ওয়েবসাইটে পোষ্ট করেছে এবং আরবীতে অনুবাদসহ মধ্যপ্রাচ্যে ছেড়েছে। ১০০ জন ইহুদীর ৫০ লক্ষ ডলার ব্যয়ে দীর্ঘদিন ধরে নির্মিত উক্ত নিকৃষ্টতম চলচ্চিত্রটির নির্মাতা ও প্রযোজক হ’ল ইসরাঈলী বংশোদ্ভূত মার্কিন ইহুদী নাগরিক ক্যালিফোর্ণিয়ার ৫৬ বছর বয়সী রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ী স্যাম বাসিলে। উক্ত সিনেমায় ইসলামকে ‘ক্যান্সার’ ও মুসলমানকে ‘গাধা’ হিসাবে চিত্রিত করা হয়েছে। সেখানে শেষনবী মুহাম্মাদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লামকে কুৎসিত চরিত্রের মানুষ হিসাবে চিত্রিত করা হয়েছে এবং তাঁকে জঘন্যতম ভাষায় গালি-গালাজ করা হয়েছে। যেমন ইতিপূর্বে ২০১০ সালে ডেনমার্কের কার্টুনিস্ট ফিনলে গার্ড জেনসেন রাসূল (ছাঃ)-এর ব্যঙ্গচিত্র তৈরী করে প্রচার করেছিল ও সারা বিশ্বের নিন্দা কুড়িয়েছিল। সিনেমাটি তথ্যগত ভাবে ডাহা মিথ্যায় ভরা এবং নির্মাণশৈলীর দিক দিয়ে চরম বিকৃত রুচির পরিচায়ক।

প্রতিক্রিয়া : Every action has a reaction ‘প্রত্যেক ক্রিয়ারই একটা প্রতিক্রিয়া থাকে’। এক্ষেত্রে স্বাভাবিকভাবে সেটাই হয়েছে। মার্কিনী হামলায় সদ্য বিধ্বস্ত লিবিয়ার বেনগাযী শহরে মার্কিন কনস্যুলেটে জনগণের হামলায় মার্কিন রাষ্ট্রদূত ক্রিস্টোফার স্টিভেন্সসহ ৪ জন মার্কিন কুটনীতিক ও ১০ জন লিবীয় রক্ষী নিহত হয়েছে। আফগানিস্তানে দু’জন মার্কিন সেনা কর্মকর্তা নিহত হয়েছে। কায়রোতে হাযার হাযার মানুষ বিক্ষোভ করেছে ও দেওয়াল টপকে মার্কিন দূতাবাসে প্রবেশ করে গাড়ী পুড়িয়েছে ও মার্কিন পতাকায় আগুন দিয়েছে। একই অবস্থা তিউনিসিয়া, সূদান, ইয়ামন, লেবানন, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, কুয়েত ও বাংলাদেশ সহ বিশ্বের প্রায় সকল মুসলিম রাষ্ট্রে হয়েছে। এমনকি ইসরাঈলেও ইহুদী শান্তিবাদীরা এর বিরুদ্ধে মিছিল করেছে ও এর তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। ইরানী পার্লামেন্টের আর্মেনীয় ও আসীরিয় দু’জন খৃষ্টান প্রতিনিধি এর প্রতিবাদ করে বলেছেন, এরা অজ্ঞতার যুগে ফিরে গেছে। কুরআনে ঈসা ও মারিয়ামের মর্যাদা বর্ণিত হয়েছে। ফলে এরা কুরআন পুড়িয়ে নিজেদের নবীকে অপমান করেছে’। মার্কিন সাংবাদিক ও লেখক রিক সানচেজ বলেছেন, মুসলমানেরা যদি এখন বাইবেল পোড়ায়, তাহলে কেমনটা হবে? অতএব তাদের একাজটি একেবারেই অজ্ঞতাসুলভ হয়েছে’। প্রেসিডেন্ট ওবামা এ ঘটনার নিন্দা করেছেন ও রাষ্ট্রদূত হত্যার প্রতিশোধ নেওয়ার হুমকি দিয়ে লিবিয়া সীমান্তে দু’টি রণতরী পাঠিয়েছেন। এছাড়াও বিদেশে সকল মার্কিন দূতাবাসে যরূরী সতর্কবার্তা পাঠিয়েছেন। ইরান মুসলিম বিশ্বের নিকট ক্ষমা প্রার্থনার জন্য প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার প্রতি আহবান জানিয়েছে। বাংলাদেশ সরকারও এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে এবং অনতিবিলম্বে উক্ত সিনেমা বন্ধ করার জন্য মার্কিন সরকারের প্রতি আহবান জানিয়েছে। এভাবে বিশ্বের সর্বত্র নিন্দাবাদ অব্যাহত রয়েছে। বিশ্বব্যাপী বিরূপ প্রতিক্রিয়ায় ভীত হয়ে বীরপুঙ্গব স্যাম বাসিলে গা ঢাকা দিয়েছে। অতঃপর গোপন অবস্থান থেকে টেলিফোনে বলেছে যে, ‘সে ইসলামকে ক্যান্সারের মত মনে করে এবং এই চলচ্চিত্রের মাধ্যমে সে ইসলাম ধর্মের ত্রুটিগুলি মানুষের সামনে তুলে ধরেছে। যা ইসরাঈলের পক্ষে রাজনৈতিকভাবে সহায়ক হবে’। উল্লেখ্য যে, তার এই ভিডিও নির্মাণে সমর্থন জুগিয়েছেন নিউইয়র্কের বিতর্কিত খৃষ্টান ধর্মযাজক টেরি জোন্স। যিনি ২০১১ ও ১২ সালে প্রকাশ্যে কুরআন পোড়ানোর কারণে সারা বিশ্বে নিন্দিত হন। এখন প্রকাশ পেয়েছে যে, ঐ যাজক হ’ল মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ-র প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত চর। পাদ্রী হওয়াটা তার বাহ্যিক রূপ মাত্র।

ফিরে দেখা : ১৯১৭ সালে কুখ্যাত বেলফোর চুক্তির মাধ্যমে জাতিসংঘের তদারকিতে ফিলিস্তীনের মুসলিম ভূখন্ডে ইহুদী রাষ্ট্র কায়েমের চক্রান্ত বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া শুরু হয়। হাযার বছরের আরব মুসলিমদের বিতাড়িত করে সেখানে বিভিন্ন দেশে ছড়ানো-ছিটানো ইহুদীদের বসতি স্থাপন করা হয়। উক্ত প্রক্রিয়া আজও অব্যাহত রয়েছে। ১৯৪৮ সালে ফিলিস্তীনের একাংশে ‘ইসরাঈল’ নামক রাষ্ট্র কায়েম করা হয় এবং সেখানকার স্থায়ী মুসলিম অধিবাসীরা বিতাড়িত হয়ে আশপাশের মুসলিম রাষ্ট্রগুলিতে উদ্বাস্ত্ত হিসাবে শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়। আজও তারা সেভাবেই মানবেতর জীবন যাপন করছে। পরাশক্তিগুলির পারস্পরিক যোগসাজশে প্রতিষ্ঠিত ইসরাঈল রাষ্ট্র মূলতঃ মধ্যপ্রাচ্যের তৈল ভান্ডারের উপর স্থায়ীভাবে ছড়ি ঘুরানোর জন্য এবং সেখানকার তৈল স্বল্পমূল্যে ভোগ করার জন্য একটি সামরিক কলোনী মাত্র। পরাশক্তির সমর্থন ব্যতীত একদিনও এ রাষ্ট্রের টিকে থাকার ক্ষমতা নেই। আল্লাহ বলেন, ‘(ওদের নিরাপত্তার ব্যাপারে) আল্লাহর প্রতিশ্রুতি (নিরপরাধ বৃদ্ধ ও নারী-শিশুদের হত্যা না করা) ও মানুষের প্রতিশ্রুতি (সন্ধিচুক্তি) ব্যতীত তারা যেখানেই অবস্থান করুক না কেন ওদের উপর লাঞ্ছনা চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। ওরা আল্লাহর ক্রোধ অর্জন করেছে। আর ওদের উপর মুখাপেক্ষিতা আরোপ করা হয়েছে। একারণে যে, ওরা আল্লাহর আয়াত সমূহকে অস্বীকার করেছে এবং তারা নবীগণকে অন্যায়ভাবে হত্যা করেছে। ওরা অবাধ্যতা করেছিল ও সীমা লংঘন করেছিল’ (আলে ইমরান ৩/১১২)।  খৃষ্টানরা ঈসা ও তার মা মারিয়ামের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করে তাঁদেরকে আল্লাহর সমকক্ষ সাব্যস্ত করেছে। ইহুদী ও নাছারা উভয় জাতি আল্লাহর কিতাবকে বিকৃত ও বিনষ্ট করেছে ও তার বিনিময়ে দুনিয়া উপার্জন করেছে। তাদের কেতাবে শেষনবী মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর আগমনের সুসংবাদ লিপিবদ্ধ থাকা সত্ত্বেও তারা তা মানেনি এবং শেষনবীকে পেয়েও তাঁকে স্বীকার করেনি। শুধু তাই নয়, তারা তাঁর ও তাঁর উম্মতের বিরুদ্ধে সবধরনের চক্রান্ত করেছে। অতঃপর বিগত নবীগণের ন্যায় শেষনবীকেও হত্যার ষড়যন্ত্র করেছে। আজও তারা একই অভ্যাসের পুনরাবৃত্তি করছে। তাই এদের হাত থেকে বাঁচার জন্য আল্লাহর নিকটে আমাদেরকে সূরা ফাতিহায় প্রার্থনা করতে বলা হয়েছে, ‘হে আল্লাহ! আপনি আমাদেরকে ঐ লোকদের পথে পরিচালিত করবেন না, যারা অভিশপ্ত হয়েছে ও পথভ্রষ্ট হয়েছে’। এই দো‘আর শেষে বলতে হয় ‘আমীন’ (হে আল্লাহ! আপনি কবুল করুন)। ছাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! এই লোকগুলি কারা? তিনি বললেন, ওরা হ’ল ইহুদী ও নাছারা’ (তিরমিযী)। মুসলিম উম্মাহকে সাবধান করে আল্লাহ বলেন, হে বিশ্বাসীগণ! ইয়াহূদ ও নাছারাদের তোমরা বন্ধু হিসাবে গ্রহণ করো না। ওরা একে অপরের বন্ধু। তোমাদের মধ্যে যারা ওদের সাথে বন্ধুত্ব করবে, সে তাদের মধ্যেই গণ্য হবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ সীমা লংঘনকারীদের সুপথ প্রদর্শন করেন না’ (মায়েদাহ ৫/৫১)। ওদের চক্রান্তে অতিষ্ঠ রাসূলকে উদ্দেশ্য করে আল্লাহ বলেন, ‘ইহুদী-নাছারাগণ কখনোই আপনার উপর খুশী হবে না, যতক্ষণ না আপনি ওদের দলভুক্ত হন। আপনি বলে দিন যে, আল্লাহ প্রেরিত সুপথই হ’ল সুপথ। অতএব আপনি যদি আপনার নিকট নিশ্চিত জ্ঞান (অহি-র বিধান) এসে যাওয়ার পরেও ওদের খোশ-খেয়াল সমূহের অনুসরণ করেন, তাহলে আল্লাহর পক্ষ হতে আপনার কোন বন্ধু ও সাহায্যকারী থাকবে না’ (বাক্বারাহ ২/১২০)। দুর্ভাগ্য! মুসলিম উম্মাহর রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ নিজেদের কাছে অহি-র বিধান কুরআন ও ছহীহ সুন্নাহ থাকা সত্ত্বেও তা বাদ দিয়ে ইহুদী-নাছারাদের চালান করা নানা ভ্রান্ত মতবাদের অনুসারী হয়েছেন ও প্রায় সর্বক্ষেত্রে তাদের তাবেদার হয়েছেন। পাশ্চাত্য বিশ্বের নেতারা সালমান রুশদী সহ এযাবত কোন ব্যঙ্গকারীকে শাস্তি দেয়নি। বরং বাক ও ব্যক্তি স্বাধীনতার দোহাই দিয়ে তাদের আশ্রয় ও প্রশ্রয় দিয়েছেন। যদি তারা তাদের যথোপযুক্ত শাস্তি দিতেন, তাহলে আজকে এ পরিস্থিতির উদ্ভব ঘটতো না। অতএব বর্তমান ঘটনার জন্য মূলতঃ পাশ্চাত্যের নেতারাই দায়ী। সেকারণ তাদের উপরে নেমে আসছে একের পর এক লাঞ্ছনা ও অপমানকর পরিণতি। শান্তিপ্রিয় বিশ্বের এ ক্ষোভ ও ঘৃণা থেকে বাঁচার উপায় তাদের নেই।

ক্রোধের কারণ : (ক) ওরা কুরআনের উপরে নাখোশ। কারণ কুরআনই পৃথিবীর বুকে একমাত্র ইলাহী ধর্মগ্রন্থ, যা অবিকৃত রয়েছে ও ক্বিয়ামত পর্যন্ত থাকবে এবং যা পৃথিবীর সর্বাধিক পঠিত গ্রন্থ। এর হেফাযতের দায়িত্ব স্বয়ং আল্লাহ নিয়েছেন (হিজর ১৫/৯)। কুরআন মানবজীবনের সকল দিক ও বিভাগের জন্য পূর্ণাঙ্গ গ্রন্থ। যা সত্য ও ন্যায় দ্বারা পূর্ণ। যার পরিবর্তনকারী কেউ নেই (আন‘আম ৬/১১৫)। তাওরাত-ইনজীল ছিল অপূর্ণাঙ্গ ও কেবল সে যুগীয়। তাই আল্লাহ তার স্থায়ীত্বের দায়িত্ব নেননি। ফলে তা স্বাভাবিকভাবেই বিলুপ্ত হয়ে গেছে। তাই রাগে ও ক্ষোভে ওরা কুরআনকে গুলি করে। যেমন ইরাকের আবু গারীব কারাগারে তারা করেছে। কুরআনকে পুড়িয়ে মনের ঝাল মিটায়। যেমন পাদ্রী টেরি জোন্স নিউইয়র্কে গত বছর ও এ বছর করেছে। ইরাকে গত ১৯শে মে’১২ এবং আফগানিস্তানে মার্কিন সেনারা এ বছর কুরআন পুড়িয়েছে। ১৯৮৯ সালে ওরা সালমান রুশদীকে দিয়ে Satanic Verses (স্যাটানিক ভার্সেস) লিখিয়ে কুরআনের আয়াত সমূহকে ‘শয়তানের পদাবলী’ বলেছে। ১৯৯৪ সালে তাসলীমা নাসরীনকে দিয়ে ‘লজ্জা’ উপন্যাস লিখিয়ে কুরআন পরিবর্তনের দাবী করেছে। যেমন ইতিপূর্বে আবু জাহলরা দাবী করেছিল (ইউনুস ১০/১৫)। (খ) ওরা ‘ইসলাম’-কে বরদাশত করতে পারে না। কেননা ‘আল্লাহর নিকট মনোনীত একমাত্র দ্বীন হ’ল ইসলাম’ (আলে ইমরান ৩/১৯)। ইসলামের বাণী যার অন্তরে প্রবেশ করে, সে মুসলমান হয়ে যায়। যেমন নাইন ইলেভেনের পরে পাশ্চাত্যের মানুষ এখন অধিক হারে ইসলাম কবুল করছে। তাদেরই হিসাব মতে ২০৫০ সালের মধ্যে ‘ইসলাম’ বিশ্বধর্মে পরিণত হবে। বড় কথা হ’ল, অন্য ধর্ম ছেড়ে মানুষ ইসলাম কবুল করে। কিন্তু ইসলাম ছেড়ে অন্য ধর্ম কবুলের ঘটনা একেবারেই বিরল। তাই তারা ইসলামকে ‘ক্যান্সার’ বলেছে। আর মুসলমানকে বোকা, ‘গাধা’ বলেছে। আর সেকারণেই খাঁটি ঈমানদারগণের উপর ওদের রাগ বেশী। তাই এ বছর আফগানিস্তানে তালেবানদের মৃত লাশের উপর দাঁড়িয়ে মার্কিন সেনাদের পেশাব করতে এবং তা ভিডিও চিত্রে ধারণ করে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দিতেও এদের লজ্জা হয়নি। দেশে দেশে প্রকৃত ইসলামী নেতারাই এখন  এদের টার্গেট। (গ) মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর উপর রাগের কারণ, তিনিই একমাত্র বিশ্বনবী। মূসা ও ঈসা সহ সকল নবী ছিলেন গোত্রীয় নবী। শেষনবীর আবির্ভাবের পর সকল মানুষের জন্য অনুসরণীয় একমাত্র নবী হলেন মুহাম্মাদ (ছাঃ)। যার আগমনের সুসংবাদ স্বয়ং ঈসা (আঃ) দিয়ে গিয়েছেন (ছফ ৬১/৬)। রাসূল (ছাঃ) বলে গেছেন ‘যার হাতে মুহাম্মাদের জীবন, তার কসম করে বলছি যে, ইহুদী হৌক, নাছারা হৌক, পৃথিবীর যে কেউ আমার আবির্ভাবের কথা শুনেছে, অতঃপর মৃত্যুবরণ করেছে। অথচ আমার আনীত দ্বীনের উপর ঈমান আনেনি, সে ব্যক্তি জাহান্নামের অধিবাসী হবে’ (মুসলিম)। তিনি আরও বলেন, ভূপৃষ্ঠের এমন কোন শহর-গ্রাম ও বস্তিঘর থাকবে না, যেখানে ইসলামের কলেমা প্রবেশ করবে না। তারা সম্মানিত অবস্থায় ইসলাম কবুল করবে অথবা অসম্মানিত অবস্থায় এর অনুগত হবে। আর এভাবেই দ্বীন আল্লাহর জন্য পরিপূর্ণ হয়ে যাবে’ (আহমাদ)। ইহুদী-নাছারা ও তাদের দোসরদের হাযারো চেষ্টা সত্ত্বেও ইসলাম দ্রুত  সারা বিশ্বে ছড়িয়ে  পড়ছে। এক হিসাবে জানা যায় ইসলামের বিরুদ্ধে বছরে তারা ৫০০ কোটি ডলার ব্যয় করে এবং তাদের দু’শোর বেশী ইলেকট্রনিক মিডিয়া বর্তমানে এ কাজে নিয়োজিত রয়েছে। বিভিন্ন দেশের মুসলিম সরকার ও ইসলামী নেতাদের তারা ছলে-বলে-কৌশলে দলে ভিড়াচ্ছে। অথবা ভয় দেখিয়ে গোলাম বানিয়ে রেখেছে। কিন্তু মার্কিন সেনারাই এখন মুসলমান হয়ে যাচ্ছে। খোদ টনি ব্লেয়ারের শ্যালিকা মুসলমান হয়ে গেছেন। তাই বর্তমানে যা কিছু ঘটছে, সবই তাদের আদর্শিক পরাজয়ের ক্ষুব্ধ বহিঃপ্রকাশ মাত্র। আল্লাহ বলেন, হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা নিজেদের ব্যতীত অন্যদের মিত্ররূপে গ্রহণ করো না। তারা তোমাদের ক্ষতি করতে পিছপা হবে না। তোমরা যাতে বিপন্ন হও, তারা সেটাই কামনা করে। তাদের মুখ থেকে বিদ্বেষ সমূহ বেরিয়ে আসে। আর যা তাদের অন্তরে লুকিয়ে রাখে, তা আরও ভয়ংকর। আমরা তোমাদের নিকট আয়াত সমূহ বিবৃত করছি। যাতে তোমরা বুঝ’। ‘সাবধান! তোমরা তাদের ভালোবাস, কিন্তু তারা তোমাদের ভালবাসে না। অথচ তোমরা (পূর্ববর্তী) সকল ইলাহী কিতাবে বিশ্বাস করে থাক। যখন ওরা তোমাদের সাথে মিলিত হয়, তখন বলে আমরা বিশ্বাস করি। আর যখন তোমাদের থেকে পৃথক হয়ে যায়, তখন তোমাদের প্রতি আক্রোশে আঙ্গুল কাটে। আপনি বলুন, তোমরা তোমাদের ক্রোধে মরো। নিশ্চয়ই আল্লাহ সকলের হৃদয়ের খবর রাখেন’ (আলে ইমরান ৩/১১৮-১৯)

অতএব হে মুসলিম ভাই ও বোন! ধৈর্য ধারণ কর। নিজের দ্বীনের উপর আরও দৃঢ় হও। অন্যদের থেকে সাবধান থাক। সার্বিক জীবনে ইসলামের যথার্থ অনুসারী হও। ‘পৃথিবীর মালিক আল্লাহ। তিনি যাকে খুশী এর উত্তরাধিকারী করেন। তবে শুভ পরিণাম কেবলমাত্র আল্লাহভীরু বান্দাদের জন্যই নির্ধারিত’ (আ‘রাফ ৭/১২৮)

জাতিধর্ম নির্বিশেষে বিশ্বের যেসকল বিবেকবান মানুষ এ ঘটনার নিন্দা করেছেন, আমরা তাদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি। সাথে সাথে এর প্রতিক্রিয়া দেখাতে গিয়ে বাড়াবাড়ি না করার জন্য মুসলিমদের প্রতি আহবান জানাচ্ছি। নইলে শত্রুরা এটাকে অজুহাত বানাবে। মনে রাখা আবশ্যক যে, মসজিদে নববীতে জনৈক বেদুঈন দাঁড়িয়ে পেশাব করেছিল। ছাহাবীগণ তাকে মারতে উদ্যত হলে রাসূল (ছাঃ) তাদের নিবৃত্ত করেন ও সেখানে পানি ঢালতে বলেন। অতঃপর বলেন, ‘তোমরা প্রেরিত হয়েছ সরল নীতির ধারক হিসাবে, কঠোর নীতির ধারক হিসাবে নয়’ (বুখারী)। বস্ত্ততঃ এখানেই ইসলামের সৌন্দর্য। আর এভাবেই ইসলাম মানুষের অন্তর জয় করে থাকে ও সর্বত্র বিজয়ী হয়।

পরিশেষে আমরা প্রেসিডেন্ট ওবামা সহ সকল ইহুদী-নাছারা ও অমুসলিম বনু আদমকে ইহকালীন মঙ্গল ও পরকালীন মুক্তির স্বার্থে মৃত্যুর আগে ইসলাম কবুল করার আহবান জানাচ্ছি। সেদিনের খ্রিষ্টান বাদশাহ নাজাশী ও তাঁর পাদ্রীরা কুরআন শুনে মুসলমান হয়ে গিয়েছিলেন। আজকের ওবামারা কি সেটা পারেন না? অতএব দু’দিনের এ দুনিয়াবী মরীচিকায় আচ্ছন্ন না থেকে আসুন আল্লাহ প্রেরিত  অভ্রান্ত সত্যের কাছে মাথা নত করি ও জান্নাতের অধিকারী হই। কুরআনকে বুকে ধারণ করি ও মনেপ্রাণে ইসলাম কবুল করে ধন্য হই। ঐ শুনুন, আপনাদের জন্যই  নেমে এসেছে  আসমানী তারবার্তা: ‘(কিয়ামতের দিন অবিশ্বাসীদের  শাস্তি দ্বিগুণ করা হবে) তবে তাদের নয়, যারা তওবা করে এবং ঈমান আনে ও সৎকর্ম সম্পাদন করে। আল্লাহ তাদের পাপসমূহ পুণ্যের দ্বারা পরিবর্তন করে দিবেন। আল্লাহ ক্ষমাশীল ও দয়াবান’ (ফুরক্বান ২৫/৭০)। হে আল্লাহ! তুমি কুরআন, ইসলাম ও ইসলামের নবীর সম্মানকে আরও উচ্চ কর এবং অসম্মানকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাও। যেমন তুমি দিয়েছিলে ফেরাঊনকে। আমীন! ইয়া রববাল আলামীন!!

[এ ঘটনার বিরুদ্ধে সংগঠনের পক্ষ হ’তে আমীরে জামা‘আতের বিবৃতি ১৭ ও ১৮ই সেপ্টেম্বর দৈনিক ইনকিলাবের ২য় পৃষ্ঠায় ও অন্যান্য পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। -সম্পাদক!]






বিষয়সমূহ: বিবিধ
আত-তাহরীক : যাত্রা হ’ল শুরু (৩য় সংখ্যা)
মুছল্লী না সন্ত্রাসী? - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
সত্যের সন্ধানী - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
উত্তরাঞ্চলকে বাঁচান! - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
ভেসে গেল স্বপ্নসাধ! - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
শেয়ার বাজার - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
আহলেহাদীছের বৈশিষ্ট্য সমূহ - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
মৌলিক পরিবর্তন কাম্য - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
সংবিধান পর্যালোচনা - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
সংস্কৃতি দর্শন - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
ইনোসেন্স অফ মুসলিম্স - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
চেতনার সংকট - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
আরও
আরও
.