বিবিসি
বাংলার তথ্যানুসন্ধানী রিপোর্ট অনুযায়ী, জাতিসংঘের জনসংখ্যা তহবিলের
অর্থায়নে ২০১৪ সাল থেকে ২০১৮ সালের শেষ পর্যন্ত ৫ বছর মেয়াদী বাংলাদেশ
সরকারের ‘জেনারেশন ব্রেক থ্রু’ নামক একটি প্রকল্প সম্প্রতি শেষ হয়েছে। যা
পুনরায় শুরু হ’তে যাচ্ছে। উক্ত প্রকল্পে ঢাকা সিটি, বরিশাল সিটি, পটুয়াখালী
ও বরগুনার ৩০০টি স্কুল ও ৫০টি মাদ্রাসাকে যুক্ত করা হয়েছে। উদ্দেশ্য,
পাশ্চাত্য দেশগুলির ন্যায় এদেশের কিশোর-কিশোরীদের শ্রেণী কক্ষে যৌন শিক্ষা
প্রদান করা। সাবেক বামপন্থী শিক্ষামন্ত্রী নূরুল ইসলাম নাহিদ-এর আমলে চালু
করা এ কোর্সটি এতদিন তেমন প্রচার পায়নি এবং বৃহত্তর জনগণের নযরে পড়েনি। এই
ব্যর্থ শিক্ষামন্ত্রী যেমন শতভাগ পাসের নামে শিক্ষার্থীদের শিক্ষার মান
ধ্বংস করেছেন, মাদ্রাসা শিক্ষার উন্নয়নের নামে যেভাবে সেগুলিকে আধা
সেক্যুলার বানিয়েছেন, তেমনি শিক্ষার্থীদের নৈতিকতা ধ্বংসের জন্য অন্যান্য
অপতৎপরতার সাথে উপরোক্ত ধ্বংসাত্মক প্রকল্প চালু করে গেছেন। দেশে ইভটিজিং,
ব্যভিচার ও ধর্ষণ ব্যাপকভাবে বৃদ্ধির জন্য এই শিক্ষামন্ত্রী ও সরকারকে
পরকালে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে।
প্রকল্প পরিচালকের বক্তব্য মতে, সব বিদ্যালয় থেকে এসেছে অভূতপূর্ব সাড়া। এই প্রকল্পে উৎসাহ দাতা বাংলাদেশের অতি সেক্যুলার তথাকথিত প্রগতিবাদী দৈনিক পত্রিকাটি তাদের অনুগামী জনৈক গবেষককে দিয়ে সম্প্রতি অর্ধ পৃষ্ঠাব্যাপী একটি বিরাট কলাম লিখিয়েছেন। সেখানে তিনি উক্ত প্রকল্পের পক্ষে ইনিয়ে-বিনিয়ে অনেক যুক্তি প্রদর্শন করেছেন এবং আলেম সমাজকে মিছরীর ছুরি দিয়ে ঘায়েল করার চেষ্টা করেছেন। তাঁর চার কলামব্যাপী লেখায় বিভিন্ন কথার মধ্যে লিখেছেন যে, প্রজনন স্বাস্থ্য বিষয়ে শিক্ষা উদ্যোগটি এ রকম বহু বিবেচনায় দরকারি। এটা অন্য কোন শিক্ষার বিকল্প নয় সম্পূরক মাত্র। বর্তমানে ১১ থেকে ১৮ বছর বয়সীরা জনসংখ্যার এক-চতুর্থাংশ। বয়ঃসন্ধিকালে এদের মধ্যে অনেক কৌতূহল তৈরি হয়। তার সঠিক ও বিজ্ঞানসম্মত উত্তর তাদের কাছে থাকা জরুরি। এদের লক্ষ্য করেই স্বাস্থ্যশিক্ষার এই উদ্যোগ। যেসব স্কুলে এসব পাঠ্যক্রম চলছে, সেখানে সামান্য ব্যতিক্রম বাদে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা উদ্যোগটি ইতিবাচকভাবে নিয়েছে বলেই দেখা যায়। বিবিসি বাংলা বিভাগের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, যেসব মাদ্রাসাকে এই কার্যক্রমের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, সেখানেও ভাল সাড়া পাওয়া গেছে’।
তিনি বলেছেন, ‘আলেম সমাজ যদি মনে করে, স্কুল পর্যায়ের বদলে শিক্ষার পরবর্তী স্তরে কিংবা ছাত্র-ছাত্রীদের পৃথকভাবে এরূপ প্রজনন স্বাস্থ্য বিষয়ে শিক্ষা দেওয়া উচিত, তাহলে সে বিষয়ে তারা মতামত দিতে পারে। পুরো বিষয়টা সম্পর্কে তারা ধর্মভিত্তিক একটা পর্যালোচনা ও গঠনমূলক মতামত দিতে পারত। এতে তাঁদের মতামতের কারিগরি মূল্য অনেক বাড়ত। সেটা না করে সমাজের শ্রদ্ধাভাজন এই নেতৃত্ব যেভাবে পুরো পাঠ্যক্রমের বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক অবস্থান নিয়েছেন, তা কতটা বাস্তবসম্মত হয়েছে, সে বিষয়ে পুনর্ভাবনা দরকার। আমাদের দেশে পাঠ্যসূচি প্রায় প্রতিবছর নবায়ন হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে প্রজনন স্বাস্থ্যশিক্ষার বিষয়েও যৌক্তিক মতামত বিবেচনার যথেষ্ট সুযোগ ছিল এবং আছে’।
সবশেষে তিনি বলতে বাধ্য হয়েছেন, ‘সন্দেহ নেই এ ধরনের শিক্ষা উদ্যোগ জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে পরিচালিত হওয়াই উত্তম। প্রয়োজনে আপত্তি উত্থাপনকারীদের সঙ্গেও খোলামেলা কথা হতে পারে। জাতীয় স্বার্থে নেওয়া সুচিন্তিত কোনো কর্মসূচি রাজনৈতিক বিবাদে অন্তর্ভুক্ত না হওয়াই কাম্য’।
আমাদের প্রশ্ন, ২০১৪ সালে যখন এটি চালু করা হয়েছিল, তখন কি সেখানে জাতীয় ঐক্যমত নেওয়া হয়েছিল? গণতান্ত্রিক কোন দেশে জাতীয় ঐক্যমত বলে কিছু আছে কি? পুরা শিক্ষা ব্যবস্থাটাই কি জাতীয় ঐক্যমতের ভিত্তিতে চলছে? ছোট ছোট বাচ্চাদের নিয়ে শিক্ষার নামে বছরের পর বছর ধরে যে এক্সপেরিমেণ্ট চালানো হচ্ছে, সেটা কি জাতীয় ঐক্যমতের ভিত্তিতে হচ্ছে? পাশ্চাত্যের যেসব দেশে এই ধরনের ‘প্রজনন শিক্ষা কোর্স’ চালু আছে, সেখানকার ফলাফলটা কি? ঐসব দেশগুলি ফ্রি সেক্স-এর কবলে পড়ে এখন যে পুরোপুরি শয়তানী দেশে পরিণত হয়েছে, তাতে কি এখন আর কোন রাখ-ঢাক আছে? উদ্যোক্তারা কি চান, বাংলাদেশ অতি দ্রুত অনুরূপ শয়তানী দেশে পরিণত হৌক!
উল্লেখ্য যে, পৃথিবীর ১০টি শীর্ষ ধর্ষণ কবলিত দেশ হ’ল, (১) যুক্তরাষ্ট্র (২) দক্ষিণ আফ্রিকা (৩) সুইডেন (৪) ভারত (৫) যুক্তরাজ্য (৬) জার্মানী (৭) ফ্রান্স (৮) কানাডা (৯) শ্রীলঙ্কা ও (১০) ইথিওপিয়া। ঐসব অমুসলিম দেশে অনেক দিন যাবৎ যৌন শিক্ষা চালু আছে। কিন্তু তাতে সেখানে নারী নির্যাতন ক্রমবর্ধমান হারে বেড়েই চলেছে। বর্তমানে ঐসব দেশের অভিভাবকরা স্কুলে তাদের সন্তানদের যৌন শিক্ষা দানের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ-বিক্ষোভে ফেটে পড়েছেন। এমনকি ব্রাজিলের প্রেসিডেণ্ট নিজেই এর বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন। তাহ’লে বাংলাদেশ সরকার জনগণের কোন কল্যাণের স্বার্থে এই শয়তানী প্রকল্প চালু করেছেন? অবশ্যই তাদেরকে আল্লাহর কাছে ও বান্দার কাছে জওয়াবদিহি করতে হবে। এদেশের হিন্দু-মুসলিম কোন ভদ্র নাগরিক এই প্রকল্প সমর্থন করতে পারেন না। জাতীয় ঐক্যমতের তো প্রশ্নই ওঠে না। আর এজন্যই তো অতি সংগোপনে এটি চালু করা হয়েছে। ১৯৭১-এর পূর্বে এদেশের মানুষ ‘ধর্ষণ’ শব্দের সাথে পরিচিত ছিল কি-না সন্দেহ। অথচ এখন সেটি দিন দিন সস্তা হয়ে যাচ্ছে। যদিও ১৯৯১ সাল থেকে মাঝখানে দু’বছর তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাদ দিয়ে দেশে একটানা ২৬ বছর চলছে নারী শাসন।
হ্যাঁ, এদেশে একটি বিষয়েই মাত্র ঐক্যমত আছে। আর সেটি হ’ল ‘ইসলাম’। অথচ কোন সরকারই বাস্তবে সেটি চান না। ইসলাম কোন বেহায়াপনাকে অনুমোদন দেয় না। প্রজনন শিক্ষার জন্য বয়ঃসন্ধিকালে যা প্রয়োজন, ইসলামী শিক্ষার মধ্যেই সেটি আছে। যা ইসলামী বই-পুস্তকের মাধ্যমে ছাত্র-ছাত্রীরা জানতে পারে। সাথে সাথে তারা তাদের মা-খালাদের কাছ থেকেই সবকিছু জেনে নেয়। ৭ বছর বয়সে মুসলিম বাচ্চাদের ছালাত শিখানোর নির্দেশ রয়েছে (আবুদাঊদ)। তাই বাধ্যতামূলকভাবে তাদের ‘পবিত্রতা’ শিখতে হয়। যুগ যুগ ধরে পারিবারিক শালীন পরিবেশে এগুলি শেখানো হয়ে থাকে। এটিকে স্কুল-মাদ্রাসার ক্লাস রুমে নিয়ে ছেলে-মেয়েদের একত্রে বসিয়ে শিখানোর মত বেহায়াপনা আর কি হ’তে পারে? বাচ্চাদের জ্ঞান-বিজ্ঞানের আলোচনা ফেলে সেক্স নিয়ে আলোচনায় বসালে তার পরিণতি কোথায় গিয়ে গড়াবে, কেউ ভেবে দেখেছেন কি?
নারী-পুরুষের মাঝে লজ্জার বাঁধনটুকু ছিন্ন করতে পারলেই শয়তান সেখানে আসন গেড়ে বসতে পারে। আর এরপরেই শুরু হবে তাদের ধ্বংস যাত্রা। হাদীছের ভাষায়, ‘যখন তুমি বেহায়া হ’তে পারবে, তখন তুমি যা খুশী করতে পারবে’ (বুখারী)। আর ‘লজ্জাশীলতা কল্যাণ বৈ কিছুই বয়ে আনে না’ (বুঃ মুঃ)। লজ্জাশীলতা হ’ল ঈমানের অন্যতম প্রধান শাখা (বুঃ মুঃ)। আর ব্যভিচার দূরের কথা ইসলাম ব্যভিচারের কাছে যেতেও নিষেধ করেছে (ইসরা ৩২)। অর্থাৎ যেসব কাজ ব্যভিচারকে উস্কে দেয়, সেইসব নির্লজ্জতার ধারে কাছেও কোন মুসলমান যেতে পারে না। তারা কখনো পরপুরুষ ও পরনারীর প্রতি চোখ তুলে তাকায় না (নূর ৩০-৩১)। একজন মুসলমানের কাছে সকল নারী নিরাপদ। কারণ সে চোখের যেনা, হাতের যেনা, কানের যেনা, পায়ের যেনা সবকিছু থেকে বেঁচে থাকে আল্লাহর ভয়ে (বুখারী)। অথচ আজ তাদেরই সন্তানদের নিয়ে স্কুল-মাদ্রাসায় যৌন শিক্ষার নামে চরম নির্লজ্জতা শিখানো হবে, এটা ভাবতেও ঘৃণা হয়। দিন দিন বেহায়াপনার প্রাদুর্ভাব বৃদ্ধি পাওয়া সত্ত্বেও কোন বিবেচনায় বিদেশের এই উচ্ছিষ্ট প্রকল্প এদেশে চালু করা হ’ল, তার কোন সদুত্তর কর্তৃপক্ষ দিতে পারবেন কি?
মুসলিম সমাজে এখনও যে শালীনতা ও নৈতিকতা টিকে আছে, তা কেবল ইসলামের উন্নত শিক্ষার কারণেই টিকে আছে। এর বিরুদ্ধে যেকোন উদ্যোগ এদেশের ভদ্র ও ঈমানদার মানুষ কখনোই মেনে নিতে পারে না। যাদেরকে দিয়ে এগুলি করানো হচ্ছে, সেইসব স্কুল-মাদ্রাসার কমিটি ও শিক্ষকদের নিশ্চয় অর্থের টোপ দিয়ে বা অন্য কোন সুযোগ-সুবিধা দিয়ে বশ করানো হয়েছে। আর নিশ্চয়ই সেটি জাতীয় ঐক্যমতের ভিত্তিতে হয়নি।
আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই, জাতীয় ঐক্যমতের ধোঁকা নয়, ইসলামী বিধানের ভিত্তিতেই এদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা ঢেলে সাজাতে হবে। মানুষের ঐক্যমতের ভিত্তিতে আল্লাহর বিধানের সত্যাসত্য যাচাই হবে না। বরং আল্লাহর বিধানের ভিত্তিতেই মানুষের মতামত যাচাই হবে। আল্লাহ মানুষের গোলাম নন, মানুষ আল্লাহর গোলাম। অতএব বিদেশী কোন এক্সপেরিমেণ্ট এদেশে যোর করে চাপানোর অপচেষ্টা করবেন না। আমাদের পরামর্শ একটাই, আপনারা ইসলামী নৈতিকতা বৃদ্ধির পক্ষে সবধরনের প্রকল্প গ্রহণ করুন! বিপক্ষে এক পা বাড়াবেন না। ছেলে ও মেয়েদের সহশিক্ষা প্রথা বাতিল করুন! শিক্ষার প্রতি স্তরে ইসলামী শিক্ষা অপরিহার্য করুন! শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কোন বিদেশী সংস্কৃতি নয়, ইসলামী সংস্কৃতির বিকাশ ঘটান। দেশে ঈমানী পরিবেশ সৃষ্টি করুন! ইনশাআল্লাহ ছাত্র-ছাত্রীদের সুস্বাস্থ্য ও দেশের উন্নতি এর মধ্যেই নিহিত রয়েছে। আল্লাহ আমাদের সুমতি দিন- আমীন! (স.স.)।