
(১) গত ৭ হ’তে ১০ই মে ৪ দিনের অবিশ্বাস্য যুদ্ধে এক অনিবার্য মহা বিপর্যয় থেকে বেঁচে গেল ভারত উপমহাদেশের শত-কোটি মানুষ। আল্লাহর অশেষ অনুগ্রহে পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে তেতে ওঠা যুদ্ধ আপাতত শেষ হ’ল। ২২শে এপ্রিল কাশ্মীরের পেহেলগামে পর্যটকদের উপর বর্বরোচিত হামলা যে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতের সাজানো নাটক ছিল, তা বুঝতে কারো বাকি ছিল না। ভারতীয় মিডিয়া যদিও অবিশ্বাস্য মিথ্যাচার ও আষাঢ়ে গালগল্প প্রচার করে এই নাটক ঢাকার জন্য সাধ্যমত চেষ্টা করেছিল। কিন্তু তা ঢাকা সম্ভব হয়নি। নানা হুমকি-ধমকির পর ভারত ৭ই মে পাকিস্তানী ভূখন্ডে কথিত সন্ত্রাস দমনের নামে বিভিন্ন মসজিদ ও বেসমারিক লক্ষ্যবস্ত্ততে হামলা চালায় এবং বহু নিরপরাধ মানুষের প্রাণহানি ঘটায়। আত্মরক্ষার্থে পাকিস্তানও শুরু করে পাল্টা হামলা। ২ দিনের সাঁড়াশী আক্রমণে কাঁপিয়ে দেয় ভারতের কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা ব্যুহ। অদম্য সাহসিকতায় ধ্বংস করে দেয় ভারতের কেনা ৪০ হাযার কোটি টাকার ইস্রাঈলী যুদ্ধাস্ত্র, তাদের তৈরী ২৫টি ভারতীয় ড্রোন। চীনের তৈরী পাকিস্তানের জে-১০সি যুদ্ধ বিমানে পরাস্ত হয় ফ্রান্সের তৈরী অত্যাধুনিক ৫টি রাফাল জঙ্গী বিমান ও ৭৭টি ড্রোন। রাতের অন্ধকারে চোরের মত হামলাকারী ভারতের ‘অপারেশন সিন্দুর’ ভুলুন্ঠিত হয় পাকিস্তানের ‘বুনিয়ানুম মারছুছ’-এর দুর্দমনীয় হামলার সামনে। হতাহত হয় উভয় পক্ষে বহু মানুষ। ভারতীয়রা অস্ত্র পূজায় হতাশ এবং পাকিস্তানীরা ঈমানী চেতনায় উৎফুল্ল। অবশেষে রণে ভঙ্গ দেয় ভারত। থেমে যায় এক ভয়াল যুদ্ধের দামামা। পরাজয় ঘটে মিথ্যুকদের। ২৫জন নিরীহ পর্যটক ক্ষমতাসীনদের বলির পাঠা হয়। বঞ্চিত হ’ল ভারত ভবিষ্যতের পর্যটক খাতের বিশাল অংক থেকে।
এই যুদ্ধে পাকিস্তান যে সামরিক সক্ষমতা দেখিয়েছে, তা রীতিমত অভাবনীয়। আগামীতে ভারত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কিছু করতে গেলে ১০বার চিন্তা করবে। এ ঘটনায় জয় হয়েছে সত্য ও ন্যায়ের। পরাজয় ঘটেছে ভারতীয় বাহিনী ও তাদের দোসর সেদেশী ও এদেশী চিহ্নিত মিডিয়া সমূহের। বিশেষ করে দিল্লীতে বৃষ্টি হলে ঢাকায় ছাতাধারী কথিত ৫৭% পাঠক নন্দিত বলে দাবীকারী পত্রিকাটির হলুদ সাংবাদিকতার। এই যুদ্ধের ফলে লাভ হয়েছে এই যে, ভারত এখন কাশ্মীরের মূল বিরোধীয় বিষয়ের দিকে নযর দিতে বাধ্য হবে। আর সেটি হ’ল তাদের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার। ১৯৪৭ সালের দেশ ভাগের সময় তাদেরকে ভারত বা পাকিস্তান কোন একটিকে বেছে নেওয়ার স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তাদের হিন্দু শাসক হরি সিং অন্যায়ভাবে ভারতে যোগ দেন। ভারত সেটাকে লুফে নিয়ে সেখানে সৈন্য পাঠায় ও যবরদস্তী কাশ্মীর কুক্ষিগত করে। তখন থেকেই চলছে অধিকৃত কাশ্মীর ও আযাদ কাশ্মীর দ্বন্দ্ব। ১৯৪৮ সালে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে গৃহীত হয় ২৫৬ নং প্রস্তাব। যাতে গণভোটের মাধ্যমে তাদেরকে সিদ্ধান্ত নিতে বলা হয়। কিন্তু অদ্যাবধি তা বাস্তবায়িত হয়নি। বলা বাহুল্য, কাশ্মীর সমস্যা সমাধানের পথ এখানেই। কিন্তু অস্ত্র ব্যবসায়ী পরাশক্তিগুলি তাদের অস্ত্র বাণিজ্যের স্বার্থে দ্বিমুখী কুটনীতি চালিয়ে যাচ্ছে সর্বত্র। বিশেষ করে মুসলিম রাষ্ট্র সমূহে।
ভারতের ২৫টি রাজ্যের মধ্যে সবচাইতে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম রাজ্য হ’ল কাশ্মীর। যার ৮২% মুসলমান। ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগের সময় দ্বিজাতি তত্বের অনুযায়ী এটা পাকিস্তানের সাথে যুক্ত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কাশ্মীরী সন্তান নেহরু ও কাশ্মীরের হিন্দু শাসক হরি সিংয়ের মধ্যে চুক্তির ফলে এবং সাথে সাথে গভর্ণর জেনারেল মাউন্টব্যাটেনের সমর্থনের কারণে কাশ্মীরী সংখ্যাগুরু মুসলিম জনগণের ইচ্ছা-আকাংখাকে পিষ্ট করে ভারত জোর করে কাশ্মীরকে নিজ অধিকৃত রাজ্যে পরিণত করে। অথচ হায়দারাবাদের মুসলিম শাসক নিযাম যখন পাকিস্তানে যোগ দিতে চান, তখন কিন্তু সেখানকার সংখ্যাগুরু হিন্দু প্রজাদের দোহাই দিয়ে ভারত সেটাকে নিজের দখলে নিয়ে নেয়। এভাবে বিভিন্ন ছলচাতুরী ও শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে গোয়া, মানভাদর, জুনাগড় প্রভৃতি দেশীয় রাজ্যগুলিকে ভারত গ্রাস করে নেয়। তার সর্বশেষ আগ্রাসনের শিকার হয়েছে সিকিম। তাই আধিপত্যবাদী ভারতের পার্শ্ববর্তী ছোট-বড় সকল রাষ্ট্র সদা সন্ত্রস্ত। কোন প্রতিবেশীই ভারতকে বিশ্বাস করেনা।
(২) বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ভবিষ্যতের বড় যুদ্ধগুলো পানি নিয়ে সংঘটিত হবে। দক্ষিণ এশিয়ার প্রেক্ষাপটে এ সম্ভাবনা আরও প্রবল, বিশেষ করে হিমালয় অঞ্চল ঘিরে। কাশ্মীর অঞ্চলে অবস্থিত বিশাল হিমবাহ থেকে উদ্ভব হওয়া ঝিলম, চেনাব, সাটলেজ, রাভি, বিয়াস এবং সিন্ধু নদ ভারতের প্রায় এক বিলিয়ন মানুষের পানি ও বিদ্যুৎ সরবরাহে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। একইসঙ্গে পাকিস্তানের কৃষিনির্ভর অর্থনীতিও মূলত এই নদীগুলোর পানির ওপর নির্ভরশীল। ফলে পানি আজ কৌশলগত এক অস্ত্রে পরিণত হয়েছে। ভারত এই সুযোগটাকে কাজে লাগিয়ে আন্তর্জাতিক আইন লংঘন করে ইতিমধ্যে সিন্ধু নদের পানিবন্টন চুক্তি স্থগিত করেছে।
লন্ডনের খ্যাতনামা সাপ্তাহিকী The Economist ২২.৫.১৯৯১ ইং সংখ্যায় বলেছিল যে, কাশ্মীরী জনগণকে গণভোটের সুযোগ দিলেই তারা পাকিস্তানের দিকে চলে যাবে। ভারতের তথাকথিত One nation theory বা ‘এক জাতি মতবাদ’ ধূলায় লুটাবে’। হয়তবা আসন্ন একবিংশ শতকে ভারতের জন্য নাটকীয় ভাঙ্গন ও অভিনব পরিবর্তন অপেক্ষা করছে। কেননা উক্ত আন্তর্জাতিক সাপ্তাহিকীটির অভিমত হচ্ছে যে, ‘ভারত মাঝে মাঝে নিজেই সন্দেহ করে যে, আসলেই সে নিজে একটি অভিন্ন জাতি কি-না। কেননা অসংখ্য ভাষা ও বর্ণ, ধর্ম ও সংস্কৃতিতে বিভক্ত ভারতের কয়েকটি রাজ্য এতই বড় যে, তারা নিজেরাই এক একটি স্বাধীন রাষ্ট্র ঘোষণা ও পরিচালনা করতে সক্ষম’। সেই সঙ্গে উত্তর-পূর্ব ভারতের Seven Sisters খ্যাত সাতটি রাজ্য তথা অরুণাচল প্রদেশ, আসাম, ত্রিপুরা, নাগাল্যান্ড, মণিপুর, মিজোরাম, মেঘালয় ও সিকিমের ফিৎনা তো আছেই।
ভুক্তভোগীরা বলেন, কাশ্মীরে নিয়মিত রক্ত ঝরার পিছনে আন্তর্জাতিক ইহূদী-খ্রিষ্টান ও ব্রাহ্মণ্যবাদী লবি গোপন অাঁতাতে কাজ করে যাচ্ছে। যাতে কাশ্মীরে আরেকটি স্বাধীন মুসলিম রাষ্ট্রের উত্থান না ঘটে। যাতে একমাত্র পারমাণবিক শক্তিধর মুসলিম রাষ্ট্র পাকিস্তানকে ভারতের মাধ্যমে ধ্বংস কিংবা দুর্বল করা যায় এবং ইউরোপ ও আফ্রিকার মুসলিম দেশগুলোর মত দক্ষিণ এশিয়ার মুসলমানদেরকেও চিরকাল উদ্বাস্ত্ত করে কিংবা পাশ্চাত্যের দেওয়া খুদকুঁড়ো খেয়ে করুণার ভিখারী হয়ে বেঁচে থাকতে হয়।
কাশ্মীর পাকিস্তান ভুক্ত হৌক বা স্বাধীন রাষ্ট্র হৌক এটা তাদের ব্যাপার। কিন্তু আমরা চাই ভারতের অব্যাহত রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস বন্ধ হৌক। ইহূদী রাষ্ট্র ইস্রাঈলের মত ছলে-বলে কৌশলে মিথ্যা নাটক সাজিয়ে সে সর্বদা প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোকে তটস্থ রাখতে চায়। অন্যায় আক্রমণের সুযোগ নিতে চায়। যা ইতিপূর্বে বহুবার প্রমাণিত হয়েছে। অতএব আমরা চাই, উপমহাদেশে শান্তি ও স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার জন্য জাতিসংঘে গৃহীত ২৫৬ নং প্রস্তাব অনুযায়ী কাশ্মীরীদের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার প্রতিষ্ঠিত হৌক। নইলে কাশ্মীর নিয়ে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে চূড়ান্ত যুদ্ধ বেঁধে গেলে শুধু উক্ত দুই দেশের মানুষ নয়, গোটা দক্ষিণ এশিয়া স্থায়ীভাবে অস্থিতিশীল হয়ে উঠবে। এ অঞ্চলের মানুষের ভাগ্যে আসবে সীমাহীন বিপর্যয়, যা কখনই কাম্য নয়। আল্লাহ আমাদেরকে হেফাযত করুন- আমীন! (স.স.)।