দেশে প্রথম বেসরকারীভাবে হিজড়া জনগোষ্ঠীর জন্য একটি আলাদা মাদ্রাসা চালু হয়েছে। সেখানে বিনা খরচে তারা পড়তে পারবেন। গত ৬ই নভেম্বর ঢাকার কামরাঙ্গীরচর ছাতা মসজিদ রোড এলাকার দাওয়াতুল কুরআন নামে তৃতীয় লিঙ্গের মাদ্রাসাটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়।
জানা গেছে, আহমাদ ফেরদৌস বারী চৌধুরী ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে এই মাদ্রাসাটি চালু হয়েছে। এই মাদ্রাসায় পড়ালেখার জন্য হিজড়াদের কোনও খরচ লাগবে না। ২০২০ সালে সরকার স্বীকৃত কওমী সিলেবাস অনুযায়ী মাদ্রাসাটি পরিচালিত হবে। প্রাথমিকভাবে ১০ জন শিক্ষকের সমন্বয়ে অনাবাসিক এই মাদ্রাসাটির যাত্রা শুরু হয়েছে।
মাদ্রাসাটির প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক হাফেয মাওলানা আব্দুর রহমান আযাদ জানান, এই মাদ্রাসার কাজ তো শুরু হয়েছে আরও আগে। তখন কামরাঙ্গীরচরে বিভিন্ন জায়গায় প্রায় দেড় শতাধিক হিজড়াকে পড়িয়েছি। তারাও এখানে পড়ালেখা করবে। তবে আপাতত মাদ্রাসাটি অনাবাসিক হবে।
মাদ্রাসাটির শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ সচিব আব্দুল আযীয হোসায়নী বলেন, ‘হিজড়া তো সমাজের মধ্যে অবহেলিত ও সুবিধাবঞ্চিত। তারা শিক্ষা অর্জন করতে পারছে না। এই কারণে তারা উচ্ছৃঙ্খল। কিন্তু তাদের তো আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন। কোনও মায়ের সন্তান। তাদের আদর্শ শিক্ষা দেওয়ার দায়িত্ব তো আমাদেরই। এদের আদর্শবান করতে হ’লে প্রথমে কুরআন শিক্ষা দরকার। তাই এই মাদ্রাসার উদ্যোগ নেওয়া। এরপর তাদের কারিগরি শিক্ষা দিয়ে মানবসম্পদে পরিণত করাই আমাদের চিন্তা।
তিনি বলেন, এখানে নুরানী বিভাগ, হিফযুল কুরআন থেকে দাওরায়ে হাদীছ পর্যন্ত সরকার স্বীকৃত কওমী সিলেবাস অনুযায়ী পড়ানো হবে। শিক্ষকমন্ডলীর বেতন সহ মাদ্রাসার পরিচালনার সব খরচ বহন করছে আহমাদ ফেরদৌস বারী চৌধুরী ফাউন্ডেশন।
মাদ্রাসাটির উদ্বোধন অনুষ্ঠানে হিজড়া কল্যাণ ফাউন্ডেশনের সভাপতি আবিদা সুলতানা মিতু বলেন, ‘তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের জন্য এই প্রথম দেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালু হয়েছে। হিজড়াদের মৌলিক চাহিদা মেটানোর সুযোগ দেওয়া হ’লে তারা রাস্তায় নেমে কাউকে বিরক্ত করবে না। এরূপ মহৎ উদ্যোগের জন্য আমি মাদ্রাসাটির উদ্যোক্তাদের ধন্যবাদ জানাই।
মাদ্রাসার শিক্ষার্থী রাণী হিজড়া বলেন, ‘যাত্রাবাড়ীতে আমাদের অর্ধশতাধিক হিজড়া রয়েছে। সবাই মুসলিম। এখানকার হুজুররা যাত্রাবাড়ীতে আমাদের আবাসস্থলে গিয়ে কুরআন পড়াতেন। মাদ্রাসায় পড়ে কুরআন শিখে আমরাও মাওলানা হ’তে চাই। রাস্তায় গিয়ে টাকা তুলে পেট চালাতে চাই না।