পর্ব ১ । পর্ব ২ । পর্ব ৩ । পর্ব ৪ । পর্ব ৫ । পর্ব ৬

মসজিদের সাথে সংশ্লিষ্ট কিছু আহকাম :

(১) জামা‘আতে ছালাত আদায় করা : ছালাত আদায় করা যেমন ফরয তেমনি প্রত্যেক পুরুষের জন্য জামা‘আতে ছালাত আদায় করাও যরূরী। মসজিদ হ’ল জামা‘আতে ছালাত আদায়ের অন্যতম স্থান। মহান আল্লাহ বলেন, وَأَقِيْمُوا الصَّلَاةَ وَآتُوا الزَّكَاةَ وَارْكَعُوْا مَعَ الرَّاكِعِيْنَ، ‘তোমরা ছালাত কায়েম কর ও যাকাত আদায় কর এবং রুকূকারীদের সাথে রুকূ কর’ (বাক্বারাহ ২/৪৩)। 

উবাই ইবনু কা‘ব (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদিন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আমাদের সাথে ফজরের ছালাত আদায় করার পর বললেন, অমুক হাযির আছে কি? ছাহাবীগণ বললেন, না। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, এ দুই ওয়াক্ত (ফজর ও এশা) ছালাতই মুনাফিকদের জন্য বেশী ভারী হয়ে থাকে। তোমরা যদি এ দুই ওয়াক্ত ছালাতে কি পরিমাণ ছওয়াব রয়েছে তা জানতে তাহ’লে হামাগুড়ি দিয়ে হ’লেও জামা‘আতে শামিল হ’তে। জামা‘আতের প্রথম কাতার ফেরেশতাদের কাতারের সমতুল্য। তোমরা যদি এর ফযীলত সম্পর্কে জানতে, তাহ’লে অবশ্যই তোমরা এজন্য প্রতিযোগিতা করতে। নিশ্চয়ই দু’জনের জামা‘আত একাকী ছালাত আদায়ের চেয়ে উত্তম। তিনজনের জামা‘আত দু’জনের জামা‘আতের চেয়ে উত্তম। জামা‘আতের লোক সংখ্যা যত বেশী হবে মহান আল্লাহর নিকট তা ততই বেশী পসন্দনীয়।[1]

(২) ইক্বামত দেওয়ার পরে সুন্নাত না পড়া : মসজিদে সুন্নাত আদায় অবস্থায় যদি ইক্বামত আরম্ভ হয়, তখন সুন্নাত ছালাত ছেড়ে দিতে হবে এবং জামা‘আতে শরীক হ’তে হবে। আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেন, إذَا أُقِيْمَتِ الصَّلَاةُ فَلَا صَلَاةَ إِلَّا الْمَكْتُوْبَةَ ‘ছালাতের ইক্বামত দেয়া হ’লে ফরয ছালাত ব্যতীত অন্য কোন ছালাত নেই’।** ‘অনেকে ফজরের জামা‘আত শুরু হওয়ার পরও দ্রুত দু’রাক‘আত সুন্নাত আদায় করেন। অথচ ইতিমধ্যে ফরযের এক বা দু’রাক‘আত শেষ হয়ে যায়। এটি তারা এই ভেবে করেন যে, এই দুই রাক‘আত সুন্নাত ফরযের আগেই আদায় করতে হবে নতুবা সূর্যোদয়ের পরে আদায় করতে হবে। অথচ এটা সঠিক নয়। মুহাম্মাদ ইবনু ইব্রাহীম (রহঃ) ক্বায়েস ইবনু আমর (রাঃ) হ’তে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, নবী করীম (ছাঃ) এক লোককে দেখলেন যে, সে ফজরের ছালাতের পর দু’রাক‘আত ছালাত আদায় করছে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাকে বললেন, ছালাত দু’রাক‘আত, দু’রাক‘আত। তখন ঐ ব্যক্তি বলল, ফজরের ফরয ছালাতের পূর্বের দু’রাক‘আত ছালাত আমি আদায় করিনি। সে ছালাতই এখন আদায় করছি। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তখন চুপ থাকলেন’।[2]

(৩) মূল জামা‘আত হয়ে যাওয়ার পর পুনরায় জামা‘আত কায়েম করা যায় : অনেকের ধারণা মসজিদে মূল জামা‘আত হয়ে যাওয়ার পর আর কোন জামা‘আত করা যাবে না। কারণ এর মাধ্যমে অনেকে প্রথম জামা‘আতকে গুরুত্ব দিবে না। এ ধারণা ঠিক নয়। বরং প্রথম জামা‘আত হয়ে যাওয়ার পর লোকজন থাকলে দ্বিতীয় জামা‘আত করতে পারবে এবং সেক্ষেত্রে দ্বিতীয় জামা‘আতে ইক্বামতও দিবে।[3] আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) বলেন, أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم أَبْصَرَ رَجُلاً يُصَلِّي وَحْدَهُ فَقَالَ ‏أَلاَ رَجُلٌ يَتَصَدَّقُ عَلَى هَذَا فَيُصَلِّيَ مَعَهُ، ‘রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এক ব্যক্তিকে একাকী ছালাত আদায় করতে দেখে বললেন, এ লোকটিকে ছাদাক্বাহ করার মত কি এমন কেউ নেই যে তার সাথে ছালাত আদায় করবে’।[4] আল্লামা নাছিরুদ্দীন আলবানী (রহঃ) এ হাদীছের ব্যাখ্যায় বলেন, ‘অত্র হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, এক মসজিদে একাধিক জামা‘আত হ’তে পারে এবং জামা‘আতে ছালাত আদায়কারী ব্যক্তিও অন্যের সাথে পুনরায় জামা‘আত করতে পারেন’।[5] ইমাম বুখারী (রহঃ) তাঁর বিখ্যাত হাদীছগ্রন্থ ছহীহুল বুখারীর ‘কিতাবুল আযানে’ باب اةيان فما فوقهما جماعة ‘দু’জন বা ততোধিক ব্যক্তি হ’লেই জামা‘আত শিরোনামে’ অধ্যায় রচনা করেছেন। অতঃপর তিনি নিমেণর হাদীছটি নিয়ে এসেছেন। মালিক ইবনু হুওয়াইরিস (রাঃ) সূত্রে নবী করীম (ছাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন,إِذا حَضَرَتِ الصَّلاةُ، فأذِّنا وأَقِيْما، ثُمَّ لِيَؤُمَّكُمَا أكْبَرُكُمَا، ‘ছালাতের সময় হ’লে তোমাদের দু’জনের একজন আযান দিবে এবং ইক্বামত বলবে। অতঃপর তোমাদের মধ্যে যে বয়সে অধিক বড় সে ইমামতি করবে’।[6] সুতরাং যখন দুই বা তার বেশী লোক ছালাত আদায়ের জন্য একত্রিত হবে তখনই জামা‘আত করে ছালাত আদায় করবেন।

(৪) মসজিদে ঈদের ছালাত আদায় : ঈদুল আযহা ও ঈদুল ফিতরের ছালাত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) সর্বদা খোলা মাঠে আদায় করেছেন। যদিও মসজিদে নববী পৃথিবীর তিনটি গুরুত্বপর্ণ মসজিদের অন্যতম এবং এখানকার এক ছালাত হাযার ছালাতের চেয়ে উত্তম। তবে ওযর বশত মসজিদে ঈদের ছালাত আদায় করা যায়। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর বৃষ্টির কারণে এক বছর মসজিদে নববীতে ঈদের ছালাত আদায় করেছিলেন। আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, أَنَّه أَصَابَهُمْ مَطَرٌ فِيْ يَوْمِ عِيْدٍ فَصَلّى بِهِمُ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم صَلَاةَ الْعِيْدِ فِي الْمَسْجِدِ ‘একবার ঈদের দিন সেখানে বৃষ্টি হচ্ছিল। তাই নবী করীম (ছাঃ) তাদের সবাইকে নিয়ে মসজিদে ঈদের ছালাত আদায় করলেন’।[7] কিন্তু দুঃখজনক যে, আমাদের দেশে অনেক এলাকায় বৃষ্টি বিহীন আবহাওয়ায় এবং মাঠ থাকার পরেও তারা মসজিদে ঈদের ছালাত আদায় করে থাকে, যা সুন্নাতের সুস্পষ্ট লংঘন।

(৫) সূর্য ও চন্দ্রগ্রহণের ছালাত : সূর্য ও চন্দ্রগ্রহণের ছালাত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) মসজিদে আদায় করেছেন। আয়েশা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর জীবদ্দশায় সূর্যগ্রহণ সংঘটিত হ’লে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) মসজিদের দিকে বের হন। তিনি আল্লাহু আকবার বলে ছালাত আরম্ভ করেন এবং লোকজন তাঁর পিছনে কাতারবদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে যান। অতঃপর তিনি লম্বা ক্বিরাআত পাঠ করেন, তারপর তাকবীর বলে রুকূতে গিয়ে দীর্ঘক্ষণ তাতে অতিবাহিত করেন। এরপর মাথা তুলে ‘সামি‘আল্লাহু লিমান হামিদাহ, রববানা ওয়ালাকাল হামদ’ বলে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে যান। অতঃপর আবার লম্বা ক্বিরাআত পড়েন, তবে তা প্রথমবারের চেয়ে কম দীর্ঘ ছিল। অতঃপর তাকবীর বলে দীর্ঘক্ষণ রুকূ‘ করেন, তবে তা প্রথমবারের চেয়ে কম দীর্ঘ ছিল। অতঃপর ‘সামি‘আল্লাহু লিমান হামিদাহ, রববানা ওয়ালাকাল হামদ’ বলেন। অতঃপর দ্বিতীয় রাক‘আতেও অনুরূপ করেন। এভাবে পুরো ছালাত চার রুকূ ও চার সিজদাহ সহকারে আদায় করেন। ছালাত শেষে প্রত্যাবর্তনের পূর্বেই সূর্য গ্রহণ মুক্ত হয়ে যায়’।[8]

(৬) মসজিদে জানাযার ছালাত আদায় করা : রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ওযর ব্যতীত মসজিদের বাইরে জানাযার ছালাত আদায় করতেন। তবে মসজিদে জানাযার ছালাত আদায়ে কোন সমস্যা নেই।[9] আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,مَنْ صَلَّى عَلَى الْجَنَازِةِ فِي الْمَسْجِدِ، فَلاَ شَيْءَ لَهُ، ‘যে ব্যক্তি মসজিদের ভিতরে জানাযার ছালাত পড়ে তার কোন গুনাহ নেই’।[10] আবু সালামাহ ইবনু আব্দুর রহমান (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, সা‘দ ইবনু আবূ ওয়াক্কাছ (রাঃ) মৃত্যুবরণ করলে (তাঁর লাশ বাড়ী হ’তে দাফনের জন্য আনার পর) আয়েশা (রাঃ) বললেন, তার জানাযা মসজিদে নিয়ে আস, তাহ’লে আমিও জানাযা আদায় করতে পারব। লোকেরা (জানাযা মসজিদে আনতে) অস্বীকার করলেন (কারণ তারা ভাবলেন, মসজিদে জানাযার ছালাত কিভাবে আদায় করা যেতে পারে)। তখন আয়েশা (রাঃ) বলেন, وَاللهِ لَقَدْ صَلَّى رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم عَلَى ابْنَيْ بَيْضَاءَ فِي الْمَسْجِدِ: سُهَيْلٍ وَأَخِيهِ، ‘আল্লাহর কসম! রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ‘বায়যা’ নামক মহিলার দু’ছেলে সুহায়ল ও তার ভাইয়ের জানাযার ছালাত মসজিদে আদায় করিয়েছিলেন’।[11]

(৭) মসজিদে নফল ছালাত আদায় করার হুকুম : মসজিদ মূলত ফরয ছালাত জামা‘আতে আদায় করার স্থান। আর নফল ছালাত আদায় করার উত্তম স্থান হ’ল বাড়ী। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘তোমরা তোমাদের ঘরগুলো কবরে পরিণত কর না। (ঘরেও কিছু সুন্নাত বা নফল ছালাত আদায় কর)।[12] অন্যত্র রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, হে লোক সকল! তোমরা নিজ নিজ ঘরেই নফল ছালাত আদায় করবে। কেননা ফরয ছালাত ব্যতীত তোমাদের বাড়িতে আদায়কৃত ছালাতই সর্বোৎকৃষ্ট’।[13] তবে মসজিদেও কেউ ইচ্ছা করলে নফল ছালাত আদায় করতে পারবেন। জুম‘আর ছালাতের ব্যাপারে বলা হয়েছে, مَنْ كَانَ مِنْكُمْ مُصَلِّيًا بَعْدَ الْجُمُعَةِ فَلْيُصَلِّ أَرْبَعًا، ‘তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি জুম‘আর ছালাতের পর ছালাত আদায় করতে চায় সে যেন চার রাক‘আর আদায় করে’।[14] এছাড়াও মাগরিবের আযানের পরে দু’রাক‘আত আদায় করা, জুম‘আর আগে ছালাত আদায় করা এবং তারাবীর ছালাত মসজিদে আদায় করার প্রমাণ পাওয়া যায়’।[15]

(৮) মসজিদ স্থানান্তর করা যাবে এবং সেই স্থান অন্য কাজে ব্যবহার করা যাবে : কোন স্থানে কখনো মসজিদ নির্মাণ করা হ’লে এবং ছালাত আদায় করা হ’লে পরবর্তীতে প্রয়োজনে সেই স্থান থেকে মসজিদ অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া যাবে এবং সেই স্থানকে যে কোন ভাল কাজে ব্যবহার করা যাবে। ওমর (রাঃ)-এর যুগে কূফার দায়িত্বশীল ছিলেন আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ (রাঃ)। একদা মসজিদ হ’তে বায়তুল মাল চুরি হয়ে গেলে সে ঘটনা ওমর (রাঃ)-কে জানানো হয়। তিনি মসজিদ স্থানান্তর করার নির্দেশ দেন। ফলে মসজিদ স্থানান্তরিত হয় এবং পূর্বের স্থান খেজুর বিক্রির বাযারে পরিণত হয়।[16] 

প্রকাশ থাকে যে, ছহীহুল বুখারী ২৭৬৪নং হাদীছে ‘ওয়াক্ফের সম্পত্তি বিক্রি করাও যাবে না এবং হেবাও করা যাবে না’ মর্মে যে বর্ণনা এসেছে তার প্রেক্ষিতে কোন কোন আলেম মনে করেন ‘যেহেতু মসজিদের সম্পত্তি ওয়াক্ফকৃত, তাই তাকে পরিবর্তন করা যাবে না’। উক্ত হাদীছের ব্যাখ্যা এ রকম নয়। কারণ ইমাম ইবনু তায়মিয়াহ (রহঃ) একথার উত্তরে বলেন, ‘ওয়াক্ফের সম্পত্তি বিক্রি করে তার চেয়ে উন্নতমানের সম্পত্তি ক্রয় করলে ওয়াক্ফকে নষ্ট করা হয় না বা পরিবর্তন করাও হয় না। যেমন জিহাদের জন্য ওয়াক্ফকৃত ঘোড়া বৃদ্ধ হয়ে গেলে সেটা বিক্রি করে তার চেয়ে উন্নতমানের ঘোড়া ক্রয় করে জিহাদের জন্য রেখে দিলে তাতে ওয়াক্ফের কোন পরিবর্তন হয় না; বরং আরো উত্তম হয়’।[17]

(৯) কবর সরিয়ে সেখানে মসজিদ নির্মাণ করা যাবে : কোন স্থানে কবর থাকলে সেখানে মসজিদ নির্মাণ করা যাবে না। তবে কবর সরিয়ে সেখানে মসজিদ নির্মাণ করা যাবে। মসজিদে নববী নির্মাণ প্রসঙ্গ উল্লেখ করে আনাস (রাঃ) বলেন, ‘আমি তোমাদেরকে বলছি, এখানে মুশরিকদের কবর ও ভগ্নাবশেষ ছিল। আর ছিল খেজুর গাছ। নবী করীম (ছাঃ)-এর নির্দেশে মুশরিকদের কবর খুঁড়ে ফেলা হ’ল, অতঃপর ভগ্নাবশেষ সমতল করে রাখা হ’ল, খেজুর গাছগুলো কেটে ফেলা হ’ল অতঃপর মসজিদের কিবলায় সারিবদ্ধ করে রাখা হ’ল এবং তার দুই পাশে পাথর বসানো হ’ল।[18]

(১০) বিধর্মীরা প্রয়োজনে মসজিদে প্রবেশ করতে পারবে : মসজিদ মুসলিমদের ইবাদতের জায়গা। যেখানে মুশরিক অন্য ধর্মের লোকদের প্রবেশ নিষেধ। তবে বিশেষ প্রয়োজনে মসজিদে বির্ধমীরা প্রবেশ করতে পারবে। আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবী করীম (ছাঃ) কয়েকজন অশ্বারোহী মুজাহিদকে নজদের দিকে পাঠালেন। তারা বনু হানীফা গোত্রের ছুমামাহ ইবনু উছাল নামক এক ব্যক্তিকে নিয়ে এসে তাকে মসজিদের খুঁটির সাথে বেঁধে রাখলেন। নবী করীম (ছাঃ) তার নিকটে গেলেন এবং বললেন, ছুমামাকে ছেড়ে দাও। (ছাড়া পেয়ে) তিনি মসজিদে নববীর নিকটবর্তী এক খেজুর বাগানে গিয়ে সেখানে গোসল করলেন, অতঃপর মসজিদে প্রবেশ করে বললেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ব্যতীত প্রকৃত কোন উপাস্য নেই এবং মুহাম্মাদ (ছাঃ) আল্লাহর রাসূল।[19] তবে মসজিদে হারাম বা বায়তুল্লায় কাফেরদের প্রবেশ করা সম্পূর্ণ নিষেধ (তাওবা ৯/২৮)

(১১) বহুতল বিশিষ্ট মসজিদের নীচতলায় দোকান করে ভাড়া দেওয়া যাবে : মসজিদের কল্যাণার্থে বৈধ ব্যবসা পরিচালনার জন্য উপরে মসজিদ রেখে নীচে দোকান ভাড়া দেওয়া যাবে। ইমাম ইবনে তায়মিয়াহ (রহঃ) বলেন, ‘মসজিদের নীচে দোকানপাট তৈরী করা যায়। তাতে কোন দোষ নেই।[20] মিয়াঁ নাযীর হুসইন দেহলভী (রহঃ) বলেন, ‘মসজিদের কল্যাণার্থে নীচে ও উপরে দোকানপাট করা যায়’।[21]

(১২) মহিলাগণ মসজিদে ছালাত আদায় করতে পারবেন : মহিলারা ইচ্ছা করলে জুম‘আসহ পাঁচ ওয়াক্ত ছালাত মসজিদে এসে আদায় করতে পারবেন। আব্দুল্লাহ বিন ওমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, إِذَا اسْتَأْذَنْتَ أَحَدُكُمْ امْرَأَتَهُ إِلىَ الْمَسْجِدِ فَلَا يَمْنَعْهَا ‘যখন তোমাদের কোন মহিলা তোমাদের নিকট মসজিদে যাওয়ার অনুতমতি চায়, তোমরা তাদের নিষেধ কর না’।[22] আব্দুল্লাহ বিন ওমর (রাঃ) বলেন, তোমরা মহিলাদের রাতের বেলা মসজিদে যেতে অনুমতি দাও। তখন তার ছেলে (বেলাল) বলল, আল্লাহর শপথ! আমি তাদেরকে (রাতের বেলা মসজিদে যেতে) অনুমতি দিব না। এটাকে তারা বাহানা হিসাবে গ্রহণ করবে। আল্লাহর শপথ আমি কখনও তাদেরকে অনুমতি দিব না। একথা শুনে আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর (রাঃ) রাগান্বিত হয়ে বলেন, আমি তোমাকে বলছি, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, তোমরা মহিলাদের অনুমতি দাও, আর তুমি কিনা বলছ, আমি তাদেরকে অনুমতি দিব না।[23] অন্যত্র রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘তোমরা আল্লাহর বান্দীদেরকে আল্লাহর মসজিদে গমনে বাধা দিও না’।[24]

তবে ফরয ছালাতসহ সকল ছালাত মহিলাদের জন্য মসজিদে আদায় করার চেয়ে ঘরে আদায় করা উত্তম। আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবী করীম (ছাঃ) বলেছেন,صَلاَةُ الْمَرْأَةِ فِى بَيْتِهَا أَفْضَلُ مِنْ صَلاَتِهَا فِى حُجْرَتِهَا وَصَلاَتُهَا فِى مَخْدَعِهَا أَفْضَلُ مِنْ صَلاَتِهَا فِى بَيْتِهَا ‘মহিলাদের জন্য ঘরের আঙ্গিনায় ছালাত আদায়ের চাইতে তার গৃহে ছালাত আদায় করা উত্তম। আর গৃহের অন্য কোন স্থানে ছালাত আদায়ের চাইতে তার গোপন কামরায় ছালাত আদায় করা অধিক উত্তম’।[25] অন্যত্র রাসূলুল্লাহ (ছা্ঃ) বলেছেন, ‘তোমরা মহিলাদেরকে মসজিদে যেতে নিষেধ কর না। তবে তাদের ঘরই তাদের জন্য উত্তম’।[26]

তবে মসজিদে মহিলাদের আসার আগে নিমেণাক্ত বিষয়গুলোর প্রতি খেয়াল রাখা যরূরী:

(১) মসজিদে গমনের সময় সুগন্ধি ব্যবহার না করা : রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,إذا شَهِدَةْ إحداكُنَّ العشاء فلا ةطيَّب ةلك الليلة، ‘যখন কোন মহিলা এশার ছালাতে উপস্থিত হ’তে চায়, সে যেন ঐ রাত্রিতে সুগন্ধি ব্যবহার না করে’।[27] অন্যত্র রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘যখন তোমাদের কেউ মসজিদে উপস্থিত হয়, সে যেন খোশবু স্পর্শ না করে’।[28]

(২) পরিপূর্ণ পর্দা সহকারে বের হওয়া : মহিলাদের সব সময়ই পর্দার সাথে বের হ’তে হবে। তবে মসজিদের উদ্দেশ্যে বের হওয়ার সময় আরো সতর্ক থাকতে হবে, যাতে ছওয়াব কামাই করতে গিয়ে গুনাহ না হয় এবং সমাজে ফিৎনার সৃষ্টি না হয়।

(৩) মহিলাদের জন্য পৃথক দরজার ব্যবস্থা করা : মহিলারা মসজিদে আসলে পুরুষদের সাথে না দাঁড়িয়ে আলাদা জায়গায় দাঁড়াবেন। তারা মসজিদে প্রবেশ ও বের হওয়ার সময় পৃথক দরজা দিয়ে বের হবেন। 

(৪) মহিলাগণ পুরুষদের পিছনে দাঁড়াবেন : দাঁড়ানোর সময় অবশ্যই পুরুষরা মহিলাদের আগে থাকবেন। আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) বলেন, নবী করীম (ছাঃ) উম্মু সুলাইম (রাঃ)-এর ঘরে ছালাত আদায় করেন। আমি ও একটি ইয়াতীম ছেলে তাঁর পিছনে দাঁড়ালাম আর উম্মু সুলাইম (রাঃ) আমাদের পিছনে দাঁড়ালেন।[29] অন্যত্র রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, خَيْرُ صُفُوفِ الرِّجالِ أوَّلُها، وشَرُّها آخِرُها، وخَيْرُ صُفُوفِ النِّساءِ آخِرُها، وشَرُّها أوَّلُها. ‘পুরুষদের সর্বোত্তম কাতার হচ্ছে প্রথমটি আর সবচেয়ে নিকৃষ্ট কাতার হচ্ছে শেষেরটি। পক্ষান্তরে মহিলাদের সর্বোত্তম কাতার হচ্ছে শেষেরটি আর সবচেয়ে নিকৃষ্ট হচ্ছে প্রথমটি’।[30]

(৫) পুরুষ মহিলার একত্রিত জামা‘আতে ইমাম ভুল করলে পুরুষরা ‘সুবহানআল্লাহ’ বলবেন এবং নারীরা হাতের তালুতে মেরে আওয়াজ করবেন। সাহল ইবনু সা‘দ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এরশাদ করেছেন, ‘ছালাতের মধ্যে যে ব্যক্তির কাছে কোন কিছু আপতিত হয় সে ব্যক্তি যেন ‘সুব্হানাল্লা-হ’ পড়ে নেয়। আর হাতে হাত মারা কেবল মহিলাদের জন্য নির্দিষ্ট’।[31]

(৬) মহিলারা মসজিদ থেকে আগে বের হবেন : ছালাত শেষ হওয়ার সাথে সাথে মহিলারা বের হবেন আর মহিলাদের বের হওয়া শেষ হ’লে পুরুষরা বের হবেন। হিন্দ বিনত হারিছ (রহঃ) হ’তে বর্ণিত, নবী করীম (ছাঃ)-এর স্ত্রী সালামাহ (রাঃ) তাঁকে জানিয়েছেন, 

أنَّ النِّساءَ في عَهْدِ رَسولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كُنَّ إذا سَلَّمْنَ مِنَ المَكْتُوبَةِ، قُمْنَ وثَبَتَ رَسولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ومَن صَلّى مِنَ الرِّجالِ ما شاءَ اللهُ، فَإِذا قامَ رَسولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قامَ الرِّجالُ

‘নারীরা আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)-এর সময় ফরয ছালাতের সালাম ফিরানোর সাথে সাথে উঠে যেতেন এবং আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) ও তাঁর সঙ্গে ছালাত আদায়কারী পুরুষগণ, আল্লাহ যতক্ষণ ইচ্ছা করেন অবস্থান করতেন। অতঃপর আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) উঠলে পুরুষরাও উঠে যেতেন’।[32]

(৭) মহিলারা মহিলাদের ইমাম হ’তে পারবেন : মহিলারা পুরুষদের ইমাম হ’তে পারবেন না। তবে মহিলারা মহিলাদের ইমাম হ’তে পারবেন। সেক্ষেত্রে মহিলা ইমাম পৃথক কাতারে না দাঁড়িয়ে প্রথম কাতারের মাঝখানে দাঁড়াবেন।

(১৪) মসজিদে প্রয়োজনীয় কথা বলা যাবে : ইমাম ও মুছল্লীগণ দুনিয়াবী কথাসহ প্রয়োজনীয় যে কোন কথাই বলতে পারবেন। জাবের ইবনু সামুরাহ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) যে স্থানে ছালাত আদায় করতেন সূর্য পূর্ণভাবে না ওঠা পর্যন্ত ঐ স্থান হ’তে উঠতেন না। সূর্য উদয় হ’লে উঠে দাঁড়াতেন। আর ইত্যবসরে কথাবার্তা বলতেন এবং জাহিলী যুগের কাজ-কারবারের আলোচনা করে ছাহাবীগণ হাসতেন এবং রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)ও মুচকি হাসতেন’।[33] এক্ষেত্রে মুছল্লীদের যাতে অসুবিধা না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। উল্লেখ মসজিদে দুনিয়াবী কথা বললে চল্লিশ বছরের আমল বাতিল হয়ে যাবে মর্মে বর্ণিত হাদিছটি জাল।[34]

(১৫) বিভিন্ন নামে মসজিদের নামকরণ করা যাবে : সকল মসজিদই আল্লাহর ঘর, যেখানে একমাত্র আল্লাহরই ইবাদত হবে। তবে পরিচয়ের জন্য কোন এলাকার সাথে বা কোন ব্যক্তি বা বৈশিষ্ট্যগত দলের সাথে মসজিদের নামকরণ করা যেতে পারে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর যুগে ‘মসজিদে ক্বোবা’, ‘মসজিদে বনী যুরায়েক্ব’ নামে মসজিদসমূহের নামকরণ করা হয়েছিল।[35] ইবনু হাজার আসক্বালানী (রহঃ) এই হাদীছের ব্যাখ্যায় বলেন, ‘এ হাদীছ দ্বারা মসজিদকে এর নির্মাতা বা এতে ছালাত আদায়কারীদের সাথে সম্পর্কিত করা জায়েয হওয়ার ফায়দা পাওয়া যায়’।[36] ইমাম নববী (রহঃ) বলেন, ‘পরিচিতির স্বার্থে এরূপ নামকরণে কোন বাধা নেই’।[37]

(১৬) বিশেষ কারণে বাড়ীতে ছালাত আদায় করা যায় : কোন মুসলমান বাড়ী থেকে শারঈ কোন কারণে মসজিদে যেতে না পারলে তিনি তার অবস্থানেই ছালাত আদায় করবেন। যেমন- অসুস্থতা, ঝড়-বৃষ্টি, তীব্র শীত ইত্যাদি। আবু মালীহ (রহঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, 

كُنَّا مَعَ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِحُنَيْنٍ فَأَصَابَنَا مَطَرٌ، فَنَادَى مُنَادِي رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنْ صَلُّوا فِي رِحَالِكُمْ

‘আমরা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর সাথে হুনায়নে ছিলাম, এ সময়ে আমাদের উপর বৃষ্টি বর্ষণ আরম্ভ হ’ল। তখন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর মুওয়াযযিন ঘোষাণা দিলেন, আপনারা নিজ নিজ বাসস্থানে ছালাত আদায় করুন’।[38] নাফি‘ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, ইবনু ওমর (রাঃ) একদা তীব্র শীত ও বাতাসের রাতে ছালাতের আযান দিলেন। অতঃপর ঘোষণা করলেন, প্রত্যেকেই নিজ নিজ আবাসস্থলে ছালাত আদায় করে নাও। অতঃপর তিনি বলেন,إِنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم كَانَ يَأْمُرُ الْمُؤَذِّنَ إِذَا كَانَتْ لَيْلَةٌ ذَاتُ بَرْدٍ وَمَطَرٍ يَقُولُ أَلاَ صَلُّوا فِي الرِّحَالِ ‘আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) প্রচন্ড শীত ও বৃষ্টির রাত হ’লে মুওয়ায্যিনকে এ কথা বলার নির্দেশ দিতেন- ‘প্রত্যেকে নিজ নিজ আবাসস্থলে ছালাত আদায় করে নাও’।[39]

ইবনু আববাস (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি তাঁর মুওয়ায্যিনকে এক প্রবল বর্ষণের দিনে বললেন, যখন তুমি (আযানে) ‘আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ’ বলবে, তখন ‘হাইয়া আলাছ্ ছালাহ’ বলবে না, বলবে, ‘ছাল্লূ ফী বুয়ূতিকুম’ (তোমরা নিজ নিজ বাসগৃহে ছালাত আদায় কর)। তা লোকেরা অপসন্দ করল। তখন তিনি বললেন, আমার চেয়ে উত্তম ব্যক্তিই (রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তা করেছেন। জুমু‘আ নিঃসন্দেহে যরূরী। আমি অপসন্দ করি তোমাদেরকে মাটি ও কাঁদার মধ্য দিয়ে যাতায়াত করার অসুবিধায় ফেলতে’।[40]

অনুরূপভাবে কোন মহামারী অথবা ছোয়াছে রোগ বৃদ্ধির আশংকা থাকলেও লোকজন মসজিদে একত্রিত না হয়ে বাড়ীতে ছালাত আদায় করতে পারে। মহান আল্লাহ বলেন, وَلَا تَقْتُلُوا أَنْفُسَكُمْ إِنَّ اللهَ كَانَ بِكُمْ رَحِيمًا، ‘আর তোমরা একে অপরকে হত্যা কর না। নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের প্রতি দয়াশীল’ (নিসা ৪/২৯)। অন্যত্র আল্লাহ বলেন,وَلَا تُلْقُوا بِأَيْدِيكُمْ إِلَى التَّهْلُكَةِ وَأَحْسِنُوا إِنَّ اللهَ يُحِبُّ الْمُحْسِنِيْنَ، ‘নিজ হাতে নিজেদেরকে ধ্বংসে নিক্ষেপ কর না। আর ইহসান কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ ইহসানকারীকে ভালবাসেন’ (বাক্বারাহ ২/১৯৫)

আবু সা‘ঈদ সা‘দ ইবনে মালিক ইবনে সিনান আল-খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, لَا ضَرَرَ وَلَا ضِرَارَ ‘ক্ষতি করা উচিত নয়, আর ক্ষতির সম্মুখীন হওয়াও উচিত নয়’।[41] অন্যত্র রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,

الطّاعُونُ آيَةُ الرِّجْزِ، ابْتَلى اللهُ عزَّ وجلَّ به ناسًا مِن عِبادِهِ، فإذا سَمِعْتُمْ به، فلا تَدْخُلُوا عليه، وإذا وقَعَ بأَرْضٍ وأَنْتُمْ بها، فلا تَفِرُّوْا منه

‘মহামারী হচ্ছে আযাবের নিদর্শন। আল্লাহ এর মাধ্যমে তাঁর বান্দাদের পরীক্ষা নিয়ে থাকেন। কাজেই তোমরা যদি কোথাও মহামারীর সংবাদ শোন, তাহ’লে সেখানে যাবে না। আর যদি তোমার বসবাসের নগরীতে মহামারী দেখা দেয় তাহ’লে সেখান থেকে পালাবে না’।[42] 

উল্লেখ্য যে, কোন ব্যক্তি যদি নিয়মিত জামা‘আতে ছালাত আদায়কারী হন তাহ’লে শারঈ কোন কারণে জামা‘আতে যেতে না পারলেও জামা‘আতে ছালাতের ছওয়াব পাবেন। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,

إِذَا كَانَ الْعَبْدُ يَعْمَلُ عَمَلاً صَالِحًا فَشَغَلَهُ عَنْهُ مَرَضٌ أَوْ سَفَرٌ كُتِبَ لَهُ كَصَالِحِ مَا كَانَ يَعْمَلُ وَهُوَ صَحِيحٌ مُقِيمٌ

‘কোন বান্দা যদি কোন নেককাজ নিয়মিত পালন করে। অতঃপর কোন রোগ বা ভ্রমণের অপরাগতার কারণে সেই আমলে ছেদ পড়ে। তাহ’লে গৃহে অবস্থানকালীন সুস্থতার দিনগুলোতে কৃত আমলগুলোর সমপরিমাণ ছওয়াব তার আমলনামায় লিপিবদ্ধ হবে’।[43]

দুর্যোগপূর্ণ সময়ে ঘরে অবস্থানের আরো ফযীলত রয়েছে। আয়েশা (রাঃ) বলেন, আমি একবার রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে মহামারী সম্পর্কে জিজ্ঞেস করি। উত্তরে তিনি বলেন,

أنَّه كانَ عَذابًا يَبْعَثُهُ اللهُ على مَن يَشاءُ، فَجَعَلَهُ اللهُ رَحْمَةً لِلْمُؤْمِنِينَ، فليسَ مِن عَبْدٍ يَقَعُ الطّاعُونُ، فَيَمْكُثُ في بَلَدِهِ صابِرًا، يَعْلَمُ أنَّه لَنْ يُصِيبَهُ إلّا ما كَتَبَ اللهُ له، إلّا كانَ له مِثْلُ أجْرِ الشَّهِيدِ

‘মহামারী হ’ল আযাব। যাদের উপর ইচ্ছে, আল্লাহ এ আযাব পাঠান। পরিশেষে তিনি তা ঈমানদারদের জন্য রহমত বানিয়ে দেন এভাবে যে, কোন বান্দা যদি মহামারী আক্রান্ত এলাকায় থাকে এবং নিজ বাড়িতে ধৈর্য সহকারে, ছওয়াবের নিয়তে এ বিশ্বাস নিয়ে অবস্থান করে যে, আল্লাহ তা‘আলা তাক্বদীরে যা রেখেছেন, তার বাইরে কোন কিছু তাকে আক্রান্ত করবে না, তাহ’লে তার জন্য রয়েছে একজন শহীদের সমান ছওয়াব’।[44]  

পরিশেষে বলা যায় যে, মসজিদ একটি পবিত্র জায়গা। সেখানে যথাযথভাবে ইবাদত সম্পন্ন করা যরূরী। সেই সাথে সুন্নাত মোতাবেক মসজিদ আবাদ করা এবং মসজিদ থেকে শরী‘আত বিরোধী কর্মকান্ড দূরে রাখতে হবে। আল্লাহ আমাদের সকলকে মসজিদের পবিত্রতা রক্ষা করে যথাযথভাবে মসজিদ আবাদ করার তাওফীক্ব দান করুন।-আমীন!

মুহাম্মাদ আব্দুল ওয়াদূদ

সহকারী শিক্ষক, ন্যাশনাল আইডিয়াল স্কুল, খিলগাঁও, ঢাকা।

[1]. মুসলিম হা/৬৫১; আবূদাঊদ হা/৫৫৪।

[2]. মুসলিম হা/৭১০; মিশকাত হা/১০৫৮।

[3]. শায়খ উছায়মীন, মাজমূ‘উল ফাতাওয়া ১৫/৮৩-৮৪; আব্দুল্লাহ বিন বায, মাজমূ‘উল ফাতাওয়া ১২/১৬৬।

[4]. আবূদাঊদ হা/৫৭৪; ছহীহুল জামে‘ হা/২৬৫২।

[5]. মিশকাত ১১৪৬ নং হাদীছের ব্যাখ্যা দ্রঃ।

[6]. বুখারী হা/৬৫৮; মুসলিম হা/৬৭৪।

[7]. আবূদাঊদ হা/১১৬০; ইবনু মাজাহ হা/১৩১২; মিশকাত হা/১৪৪৮।

[8]. বুখারী হা/১০৬৬; আবূদাঊদ হা/১১৮০।

[9]. ফিকহুস সুন্নাহ (বৈরূত : দারুল ফিকর, ২য় সংস্করণ ১৯৯৮ খ্রিঃ) ১/৩৯২।

[10]. আবূদাঊদ হা/৩১৯১; ইবনু মাজাহ হা/২১১৭; ছহীহাহ হা/২৩৫১।

[11]. মুসলিম হা/৯৭৩; আবূদাঊদ হা/৩১৯০; মিশকাত হা/১৬৫৬।

[12]. বুখারী হা/৪৩২; তিরমিযী হা/৪৫১; নাসাঈ হা/১৫৯৮; ইবনু মাজাহ হা/১৩৭৭।

[13]. বুখারী হা/৭২৯০; মুসলিম হা/১৭০২; আবূদাঊদ হা/১৩০১; তিরমিযী হা/৪৫০; নাসাঈ হা/১৬০২।

[14]. তিরমিযী হা/৫২৩।

[15]. বুখারী হা/১১২৯; আবূদাঊদ হা/১২৪৩; নাসাঈ হা/১৬০৭।

[16]. ইমাম তাবারাণী, আল-মু‘জামুল কাবীর হা/৮৮৫৪; ফাতওয়া ইবনে তায়মিয়াহ ৩১/২১৭ পৃঃ; ফিক্বহুস সুন্নাহ ৩/৩১২।

[17]. ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ৩১/২১৪।

[18]. বুখারী হা/৪২৮; নাসাঈ হা/৭০২।

[19]. বুখারী হা/৪৬২।

[20]. মাজমূ‘ ফাতওয়া ৩১/২১৮।

[21]. ফাতাওয়া নাযীরিয়াহ ১/৩৬৭ পৃঃ।

[22]. বুখারী হা/৮৭৩, ৫২৩৮; মুসলিম হা/৪৪২; ছহীহুল জামে‘ হা/৩১৯।

[23]. বুখারী হা/৮৯৯; আবূদাঊদ হা/৫৬৮।

[24]. বুখারী হা/৯০০; মুসলিম হা/৪৪২; আবূদাঊদ হা/৫৬৬।

[25]. আবূদাঊদ হা/৫৭০; ইবনে খুযাইমা হা/১৬৮৮, ১৬৯০।

[26]. আবূদাঊদ হা/৫৬৭; আহমাদ হা/৫৪৬৮; ইবনু খুযাইমা হা/১৬৮৪।

[27]. মুসলিম হা/৪৪৩; নাসাঈ হা/৫১৩৪।

[28]. মুসলিম হা/৪৪৩।

[29]. বুখারী হা/৮৭৪।

[30]. মুসলিম হা/৪৪০; আবূদাঊদ হা/৬৭৮।

[31]. বুখারী হা/৬৮৩; মুসলিম হা/৪২১; মিশকাত হা/৯৮৮।

[32]. বুখারী হা/৮৬৬।

[33]. মুসলিম, তিরমিযী হা/২৮৫০; আবূদাঊদ হা/১২৯৪; মিশকাত হা/৪৭৪৭।

[34]. আছ-ছামারুল মুসতাত্বাব ১/৮৩৩; ‘আজলূনী, কাশফুল খাফা হা/২৪৪০; ছাগানী, আল-মাওযূ‘আত হা/৪০।

[35]. বুখারী হা/৪২০; মুসলিম হা/১৮৭০; মিশকাত হা/৩৮৭০।

[36]. ফাৎহুল বারী হা/৪২০-এর ব্যাখ্যা দ্রঃ।

[37]. আল-মাজমূ‘ ২/২০৮; মাসিক আত-তাহরীক অক্টোবর ২০১৬, প্রশ্নোত্তর ৩৬/৩৬।

[38]. নাসাঈ হা/৮৫৪।

[39]. বুখারী হা/৬৬৬; আবূদাঊদ হা/১০৬২; নাসাঈ হা/৬৫৪।

[40]. বুখারী হা/৯০১; আবূদাঊদ হা/১০৬৬।

[41]. ইবনু মাজাহ হা/২৩৪১; দারাকুৎনী ৪/২২৮; বায়হাক্বী হা/১১৭১৮।

[42]. বুখারী হা/৩৪৭৩; মুসলিম হা/২২১৮; ছহীহুল জামে‘ হা/৩৯৪৪।

[43]. আবূদাঊদ হা/৩০৯১, হাদীছ ছহীহ।

[44]. বুখারী হা/৫৭৩৪; আহমাদ হা/২৪৩৫৮।






বিষয়সমূহ: মসজিদ
হাদীছ সংগ্রহ ও সংরক্ষণ পরিক্রমা (৪র্থ কিস্তি) - ড. আহমাদ আব্দুল্লাহ ছাকিব
রোগ-ব্যাধির উপকারিতা - আব্দুল্লাহ আল-মা‘রূফ
ভুল সংশোধনে নববী পদ্ধতি (১ম কিস্তি) - মুহাম্মাদ আব্দুল মালেক
আল্লাহর জন্য কাউকে ভালবাসা (পূর্ব প্রকাশিতের পর) - মুহাম্মাদ আব্দুল ওয়াদূদ
দ্বীন প্রতিষ্ঠায় যুবসমাজের ভূমিকা - হারূনুর রশীদ
বিদ‘আতে হাসানার উদাহরণ : একটি পর্যালোচনা (পূর্ব প্রকাশিতের পর) - কামারুযযামান বিন আব্দুল বারী
সীমালংঘন ও দুনিয়াপূজা : জাহান্নামীদের দুই প্রধান বৈশিষ্ট্য (৫ম কিস্তি) - ড. মুহাম্মাদ সাখাওয়াত হোসাইন
সংগঠনের প্রচার ও প্রসারে তাবলীগী ইজতেমার ভূমিকা - ড. এ এস এম আযীযুল্লাহ
বিদায়ের আগে রেখে যাও কিছু পদচিহ্ন (৬ষ্ঠ কিস্তি) - মুহাম্মাদ আব্দুল মালেক
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর পদ্ধতিতে পানি পান এবং আধুনিক বিজ্ঞান - ইঞ্জিনিয়ার আসিফুল ইসলাম চৌধুরী
ইসলামে তাক্বলীদের বিধান (৪র্থ কিস্তি) - আহমাদুল্লাহ - সৈয়দপুর, নীলফামারী
ছাদাক্বাতুল ফিতরের বিধান - লিলবর আল-বারাদী - যশপুর, তানোর, রাজশাহী
আরও
আরও
.