ক্ষমা ও সহিষ্ণুতার কতিপয় ক্ষেত্র

সংঘাতপূর্ণ দুনিয়ায় সম্প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে চলতে যেসব গুণাবলী মানুষকে সর্বাধিক চর্চা ও লালন করতে হয় তন্মধ্যে ক্ষমা ও সহিষ্ণুতা অন্যতম। কেননা প্রত্যেক মানুষের জীবনে কিছু না কিছু ভুল-ত্রুটি বিদ্যমান। এমতাবস্থায় একে অপরের প্রতি ক্ষমাশীল ও সহিষ্ণু হ’লে সার্বিক জীবনে অনেক সমস্যার সমাধান সহজেই হয়ে যাবে। নশ্বর এই দুনিয়া থেকে কিছু মহৎ মানুষ বিদায় নিয়েছেন, যারা ক্ষমা ও সহিষ্ণুতার মাধ্যমে অপরের মন জয় করে ইসলামের সুমহান আদর্শকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। আলোচ্য প্রবন্ধে আমরা ক্ষমা ও সহিষ্ণুতার কয়েকটি উল্লেখযোগ্য দিক ও কিছু বিরল দৃষ্টান্ত উপস্থাপনের চেষ্টা করব, যাতে পাঠকগণ তা থেকে শিক্ষা নিয়ে নিজেদের জীবন সুশোভিত করতে পারেন। 

১. ব্যক্তিগত জীবনে : ব্যক্তিগত জীবনে মানুষ কেউ ভুল-ত্রুটির ঊর্ধ্বে নয়। যেকোন মানুষের যেকোন সময় ভুল হ’তেই পারে। আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, كُلُّ بَنِى آدَمَ خَطَّاءٌ وَخَيْرُ الْخَطَّائِيْنَ التَّوَّابُوْنَ، ‘প্রত্যেক আদম সন্তান ভুলকারী। আর তওবাকারীরাই সর্বোত্তম ভুলকারী’।[1] এমতাবস্থায় আমরা যদি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে একে অপরের দিকে লক্ষ্য করি তাহ’লে জীবনের অনেক সমস্যা সহজেই সমাধান হয়ে যাবে। বিশ্বমানবতার সর্বোত্তম আদর্শ হযরত মুহাম্মাদ (ছাঃ) ব্যক্তিগত জীবনে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন; কিন্তু তার প্রতিশোধ না নিয়ে তিনি ক্ষমা করেছেন জানি দুশমনকেও। যেমন-

আয়েশা (রাঃ) বর্ণনা করেন, মদীনার ইহুদী গোত্র বনু যুরাইক্বের মিত্র লাবীদ বিন আ‘ছাম নামক জনৈক মুনাফিক তার মেয়েকে দিয়ে রাসূল (ছাঃ)-এর মাথার ছিন্ন চুল ও চিরুনীর ছিন্ন দাঁত চুরি করে এনে তাতে জাদু করে এবং মন্ত্র পাঠ করে চুলে ১১টি গিরা দেয়। এর প্রভাবে রাসূল (ছাঃ) কোন কাজ করলে ভুলে যেতেন ও ভাবতেন যে করেননি। অন্য বর্ণনা অনুযায়ী ৪০ দিন বা ৬ মাস এভাবে থাকে। এক রাতে রাসূল (ছাঃ) স্বপ্নে দেখেন যে, দু’জন লোক এসে একজন তাঁর মাথার কাছে অন্যজন পায়ের কাছে বসে। অতঃপর তারা বলে যে, বনু যুরায়েক্ব-এর খেজুর বাগানে যারওয়ান কূয়ার তলদেশে পাথরের নীচে চাপা দেওয়া খেজুরের কাঁদির শুকনো খোসার মধ্যে ঐ জাদু করা চুল ও চিরুনীর দাঁত রয়েছে। ওটা উঠিয়ে এনে গিরা খুলে ফেলতে হবে। সকালে তিনি আলী (রাঃ)-কে সেখানে পাঠান এবং যথারীতি তা উঠিয়ে আনা হয়। অতঃপর আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) গিরাগুলি খুলে ফেলেন এবং তিনি সুস্থ হয়ে যান।[2]

এ সময় আল্লাহ সূরা ফালাক্ব ও নাস নাযিল করেন। যার ১১টি আয়াতের প্রতিটি পাঠের সাথে সাথে জাদুকৃত চুলের ১১টি গিরা পরপর খুলে যায় এবং রাসূল (ছাঃ) হালকা বোধ করেন ও সুস্থ হয়ে যান। রাসূল (ছাঃ)-কে প্রতিশোধ নিতে বলা হ’লে তিনি বলেন, أَمَّا أَنَا فَقَدْ شَفَانِى اللهُ، وَكَرِهْتُ أَنْ أُثِيْرَ عَلَى النَّاسِ شَرًّا- ‘আল্লাহ আমাকে আরোগ্য দান করেছেন। আমি এ বিষয়টি অপসন্দ করি যে, লোকদের মধ্যে মনদ ছড়িয়ে পড়ুক’।[3] রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) শত্রুর তথ্য জানতে পেরেও প্রতিশোধ নেননি, বরং ক্ষমাশীলতার পথ অবলম্বন করেছেন।

২. পারিবারিক জীবনে : পরিবার মানব সমাজের প্রথম ও মূল ভিত্তি। উন্নত পারিবারিক জীবন ব্যতীত সুষ্ঠু মানব সভ্যতা কল্পনা করা যায় না। বিপদে-আপদে পরিবারেই মানুষ প্রকৃত শান্তি ও নিরাপত্তা লাভ করে থাকে। পরিবারের মধ্যেই প্রকৃত মহববত-ভালবাসা তৈরী হয়। আল্লাহ বলেন,وَمِنْ آَيَاتِهِ أَنْ خَلَقَ لَكُمْ مِنْ أَنْفُسِكُمْ أَزْوَاجاً لِتَسْكُنُوْا إِلَيْهَا وَجَعَلَ بَيْنَكُمْ مَوَدَّةً وَرَحْمَةً إِنَّ فِيْ ذَلِكَ لَآَيَاتٍ لِقَوْمٍ يَتَفَكَّرُوْنَ، ‘তাঁর নিদর্শনের মধ্যে রয়েছে যে, তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের মধ্য হ’তেই তোমাদের সঙ্গিনী সৃষ্টি করেছেন যাতে তোমরা তার কাছে প্রশান্তি লাভ করতে পার আর তিনি তোমাদের মধ্যে পারস্পরিক ভালবাসা ও দয়া সৃষ্টি করেছেন। এর মাঝে অবশ্যই বহু নিদর্শন আছে সেই সম্প্রদায়ের জন্য যারা চিন্তা করে’ (রূম ৩০/২১)

পরিবারে দাদা-দাদী, পিতা-মাতা, ভাই-বোন একত্রে বসবাস করেন। পরিবার পরিচালনার মূল দায়িত্ব পালন করেন স্বামী-স্ত্রী। তারা একত্রে মিলে-মিশে জীবন যাপন করবে এটাই আল্লাহর নির্দেশ। আল্লাহ বলেন, هُنَّ لِبَاسٌ لَكُمْ وَأَنْتُمْ لِبَاسٌ لَهُنَّ ‘তারা তোমাদের পোষাক ও তোমরা তাদের পোশাক সদৃশ (বাক্বারাহ ২/১৮৭)। কিন্তু দুঃখজনক হ’লেও সত্য যে, বর্তমানে ক্ষমা ও সহিষ্ণুতার অভাবে শান্তির এ নীড়ে যেন অশান্তির দাবানল জ্বলছে। পিতা-মাতা ও ভাই-বোনের মধ্যে ঝগড়া-বিবাদ ও মারামারি যেন নিত্যদিনের ঘটনা। যে স্বামী সারা জীবন স্ত্রী ও সন্তানের সুখের জন্য দিন-রাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন, এমনকি সামান্য অর্থের জন্য প্রবাস জীবন অতিবাহিত করছেন তার সাথে স্ত্রী উত্তম আচরণ করেন না। তার অনুপস্থিতে সতীত্ব টিকিয়ে রাখেন না। ফলে পরিবারে অশান্তি লেগেই থাকে। আবার যে স্ত্রী সারা জীবন স্বামী ও সন্তানের সেবায় নিজেকে বিলিয়ে দেন তার সামান্য ত্রুটিতেই তাকে অনেকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে, বেদম প্রহার করে, হাত ভেঙ্গে দেয়, এমনকি এক সাথে তিন তালাক বলতেও সামান্য দ্বিধা করে না। অথচ আল্লাহ বলেন,وَعَاشِرُوْهُنَّ بِالْمَعْرُوْفِ فَإِنْ كَرِهْتُمُوْهُنَّ فَعَسَى أَنْ تَكْرَهُوْا شَيْئاً وَيَجْعَلَ اللهُ فِيْهِ خَيْراً كَثِيْراً- ‘তোমরা স্ত্রীদের সাথে সদ্ভাবে বসবাস কর। যদি তোমরা তাদের অপসন্দ কর, (তবে হ’তে পারে) তোমরা এমন বস্ত্তকে অপসন্দ করছ, যার মধ্যে আল্লাহ প্রভূত কল্যাণ রেখেছেন’ (নিসা ৪/১৯)।

রাসূল (ছাঃ) বলেন, إِنَّ الْمَرْأَةَ خُلِقَتْ مِنْ ضِلْعٍ وَإِنَّكَ إِنْ تُرِدْ إِقَامَةَ الضِّلْعِ تَكْسِرْهَا فَدَارِهَا تَعِشْ بِهَا- ‘নিশ্চয়ই মহিলাদের সৃষ্টি করা হয়েছে পাঁজরের হাড্ডি থেকে। যদি তুমি তাকে সোজা করতে চাও তাহ’লে তাকে ভেঙ্গে ফেলবে। সুতরাং তার সাথে উত্তম আচরণ কর ও তার সাথে বসবাস কর’।[4]

৩. সামাজিক জীবনে : সামাজিক জীবনে কেউ ভুল করলে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তার সাথে উত্তম আচরণ করতেন। ফলে সে ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট হ’ত। যেমন- আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘একদিন জনৈক বেদুঈন মসজিদে দাঁড়িয়ে পেশাব করে দিল। লোকেরা তাকে ঘিরে ধরল। নবী করীম (ছাঃ) তাদেরকে বললেন, তাকে ছেড়ে দাও এবং তার পেশাবের উপর এক বালতি পানি ঢেলে দাও। তোমাদেরকে সহজপন্থা অবলম্বনকারী হিসাবে পাঠানো হয়েছে, কঠোরতা সৃষ্টিকারীরূপে নয়’।[5] রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর উত্তম আচরণে লোকটি মসজিদ থেকে বের হয়ে কালেমায়ে তাওহীদ পাঠ করে ইসলাম কবুল করলেন। লোকটি ছিলেন আক্বরা বিন হাবিস আত-তামীমী।[6]

অথচ আমাদের সমাজে সামান্য কথা কাটাকাটিকে কেন্দ্র করে মারামারি ও খুনাখুনির ঘটনা অহরহ ঘটছে, যা খুবই দুঃখজনক। যেমন সুনামগঞ্জ যেলায় মসজিদে সামান্য কাঁঠালের নিলাম নিয়ে ৪ জন নিহত ও ৪০ জন আহত হল। আমরা রাসূল (ছাঃ)-এর সুন্নাত অনুসরণে একটু ক্ষমাশীল হ’লে এতবড় দুঃখজনক ঘটনা ঘটত না।

৪. রাষ্ট্রীয় জীবনে : রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ছিলেন সফল রাষ্ট্রনায়ক। তিনি ইসলামী রাষ্ট্র পরিচালনায় কাফির, মুশরিক ও মুনাফিকদের পক্ষ থেকে অবর্ণনীয় কষ্টের শিকার হয়েও হাসিমুখে তা বরণ করেছেন। আনাস (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘একদিন আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর সাথে পথ চলছিলাম। তাঁর দেহে ছিল মোটা পাড়ের একটি নাজরানী চাদর। এক বেদুঈন চাদর ধরে জোরে টান দিল। টানের চোটে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) উক্ত বেদুঈনের বুকের কাছে এসে পড়লেন। আনাস (রাঃ) বলেন, আমি তাঁর কাঁধের প্রতি তাকিয়ে দেখলাম, সে জোরে টানার কারণে তাঁর কাঁধে চাদরের ডোরার দাগ পড়ে গেছে। অতঃপর সে বেদুঈন বলল, হে মুহাম্মাদ! আল্লাহ তা‘আলার যে সকল ধন-সম্পদ আপনার কাছে আছে, তা হ’তে কিছু আমাকে দেওয়ার নির্দেশ দিন। এ সময় রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তার দিকে তাকিয়ে হেসে ফেললেন। এরপর তাকে কিছু দেওয়ার নির্দেশ দিলেন’।[7] রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) যে অতুলনীয় ক্ষমাশীল ছিলেন অত্র হাদীছ তার বাস্তব প্রমাণ। তিনি বেদুঈনের অন্যায় আচরণের প্রতিশোধ অন্যায় দ্বারা করেননি। বরং হাসির মাধ্যমে তার প্রতিদান দিয়েছেন।

এছাড়াও রাষ্ট্রীয় জীবনে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর ক্ষমা ও সহনশীলতার প্রমাণ আমরা দেখতে পাই মক্কা বিজয়ের ঘটনায়। যে মক্কাবাসী তাঁকে একে একে ১৬টি মিথ্যা অপবাদ দিয়ে তাড়িয়ে দিয়েছিল, সে মক্কায় তিনি বিজয়ী বেশে প্রবেশ করে শত্রুদের হাতের মুঠোয় পেয়েও ক্ষমা করে দিলেন। তিনি তাদের উপর প্রতিশোধ গ্রহণ করেননি। বিশ্ব ইতিহাসে রক্তপাতহীন বিজয় হ’ল মক্কা বিজয়। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) মক্কা বিজয়ের দিন বললেন,لاَ تَثْرَيْبَ عَلَيْكُمُ الْيَوْمَ يَغْفِرُ اللهُ لَكُمْ وَهُوَ أَرْحَمُ الرَّاحِمِيْنَ، ‘আজ তোমাদের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ নেই। আল্লাহ তোমাদের ক্ষমা করুন। তিনি হ’লেন দয়ালুদের সেরা দয়ালু’ (ইউসুফ ১২/৯২)

প্রসঙ্গত এখানে উল্লেখ করা যায় সম্রাট বাবরের ক্ষমা ও মহত্ত্বের ইতিহাসখ্যাত ঘটনা। তিনি ১৫২৬ খৃষ্টাব্দে পানিপথের প্রথম যুদ্ধে দিল্লীর সম্রাট ইব্রাহীম লোদীকে পরাজিত করে দিল্লীর সিংহাসন লাভ করেন। ভারতের বাইরের মুসলিম সম্রাটগণ বহুবার ভারতের বিভিন্ন অংশে অভিযান চালিয়ে বহু ধন-সম্পদ হস্তগত করে আবার স্বদেশে ফিরে গেছেন। কিন্তু সম্রাট বাবর এর ব্যতিক্রম ছিলেন। তাঁর মধ্যে স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের কোন লক্ষণ দেখা গেল না। রাজা সংগ্রাম সিংহ রীতিমত চিন্তিত হয়ে পড়ল। সে বাবরকে বেশী শক্তিশালী হ’তে আর সময় দিতে চাইল না। তাই সে বাবরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করল। যুদ্ধে সংগ্রাম সিংহ পরাজিত ও নিহত হ’ল। ফলে বাবর আরো শক্তিশালী হ’লেন।

এদিকে পরাজয়ের গ্লানিতে ক্ষুব্ধ রাজপুতদের মধ্য থেকে এক যুবক মনে করল, বাবরকে সরাসরি যুদ্ধে পরাজিত করা যাবে না। তাই ছদ্মবেশ ধারণ করে তাঁর প্রাণ সংহার করতে হবে। যুবক বাবরের রক্তে জন্মভূমির পরাজয়ের গ্লানি মুছে ফেলতে চাইল। তাই সে বাবরের সন্ধানে ছুরিসহ ছদ্মবেশে দিল্লীর রাজপথে ঘুরে বেড়াতে লাগল। বাবরকে ছুরিকাঘাতে নিহত করাই তার একমাত্র পণ।

একদিন সে দিল্লীর রাজপথে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এমন সময় দেখতে পেল, জনগণ রাজপথ ছেড়ে দিগ্বিদিক ছোটাছুটি করছে। রাজপথে পাগলা হাতী ছুটে চলেছে। তারই ভয়ে জনগণের এই ছুটোছুটি। এদিকে পথে একটি শিশু পড়ে আছে। ভয়ে কেউ শিশুটিকে উদ্ধার করতে এগুচ্ছে না। সবাই হায় হায় করে বলতে লাগল যে, শিশুটি হাতির পদতলে পিষ্ট হয়ে মারা যাবে। কে একজন শিশুটির দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু তাকে নিরস্ত করা হ’ল। বলা হ’ল, অচ্ছুৎ মেথরের ছেলেকে ছুঁয়ো না। এমন সময় জনতার ব্যুহ ভেদ করে কে একজন সাহসী ব্যক্তি দ্রুতগতিতে শিশুটিকে উঠিয়ে জনতার কাতারে মিশে গেলেন। হাতীটি হুংকার করতে করতে চলে গেল। পরে জানা গেল সেই সাহসী ব্যক্তিটি ছিলেন স্বয়ং সম্রাট বাবর।

স্বচক্ষে এ দৃশ্য দেখে যুবকটির ভাবান্তর হ’ল। উদ্ধারকর্তাকেও সে চিনতে পারল। তিনিই সে ব্যক্তি যাঁর প্রাণ সংহার করতে সে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। যুবকটি তৎক্ষণাৎ তার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে স্থির করল যে, সে বাবরের কাছে তার পরিচয় দিয়ে দিল্লীর রাজপথে তার ঘুরে বেড়ানোর উদ্দেশ্য ব্যক্ত করবে। পরিণাম যাই-ই হৌক তাতে তার কিছু যায় আসে না। তাই সে ধীরপদে বাবরের সামনে এল এবং লুক্কায়িত ছুরি বের করে বাবরের সামনে রাখল। অতঃপর বলল, এই ছুরির আঘাতে আমি আপনার প্রাণনাশ করতে চেয়েছিলাম। আপনার মহত্ত্ব আমাকে মুগ্ধ করেছে। আমি উপলব্ধি করলাম, প্রাণনাশের চেয়ে প্রাণরক্ষা করাই মহৎ কাজ। বাবর যুবককে ক্ষমা করে বুকে টেনে নিলেন এবং তাঁর দেহরক্ষী হিসাবে নিয়োজিত করলেন।

৫. দাওয়াতী ময়দানে : রাসূল (ছাঃ) ছিলেন ক্ষমা ও সহিষ্ণুতার অতুলনীয় দৃষ্টান্ত। তিনি দাওয়াতী ময়দানে কাফের, মুশরিক ও মুনাফিকদের পক্ষ থেকে অবর্ণনীয় দুঃখ-কষ্ট ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। কিন্তু প্রতিশোধ না নিয়ে তাদেরকে ক্ষমা করেছেন। যেমন- রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) দশম নববী বর্ষের শাওয়াল মাস মোতাবেক ৬১৯ খ্রিষ্টাব্দের গ্রীষ্মকালে মে মাসের শেষে অথবা জুন মাসের প্রথমে স্বীয় মুক্তদাস যায়েদ বিন হারেছাহকে সাথে নিয়ে প্রধানতঃ নতুন সাহায্যকারীর সন্ধানে পদব্রজে ত্বায়েফ রওয়ানা হন। এ সময় রাসূল (ছাঃ)-এর বয়স ছিল ৫০ বছর। এই প্রৌঢ় বয়সে এই দীর্ঘ পথ প্রচন্ড গরমের মধ্যে তিনি পায়ে হেঁটে অতিক্রম করেন। যা ছিল মক্কা হ’তে দক্ষিণ-পূর্বে প্রায় ৯০ কি. মি. দূরে। অতঃপর ত্বায়েফ পৌঁছে তিনি সেখানকার বনু ছাক্বীফ গোত্রের তিন নেতা তিন সহোদর ভাই আব্দু ইয়ালীল, মাসঊদ ও হাবীব বিন আমর ছাক্বাফী-এর সাথে সাক্ষাৎ করেন এবং তাদেরকে তাওহীদের দাওয়াত দেন। সাথে সাথে ইসলামকে সাহায্য করার জন্য তিনি তাদের প্রতি আহবান জানান। উক্ত তিন ভাইয়ের একজনের কাছে কুরায়েশ-এর অন্যতম গোত্র বনু জুমাহ এর একজন মহিলা বিবাহিতা ছিলেন, সেই আত্মীয়তার সূত্র ধরেই রাসূল (ছাঃ) সেখানে গিয়েছিলেন। কিন্তু তিনজনই তাঁকে নিরাশ করেন।

নেতাদের কাছ থেকে নিরাশ হয়ে এবার তিনি অন্যদের কাছে দাওয়াত দিতে থাকেন। কিন্তু কেউ তার দাওয়াত কবুল করেনি। অবশেষে দশদিন পর তিনি সেখান থেকে প্রত্যাবর্তনের জন্য পা বাড়ান। এমন সময় নেতাদের উস্কানীতে বোকা লোকেরা এসে তাঁকে ঘিরে অশ্রাব্য ভাষায় গালি-গালাজ ও হৈ চৈ শুরু করে দেয়। এক পর্যায়ে তাঁকে লক্ষ্য করে তারা পাথর ছুঁড়তে আরম্ভ করে। যাতে তাঁর পায়ের গোড়ালী ফেটে রক্তে জুতা ভরে যায়। এ সময় যায়েদ বিন হারেছাহ ঢালের মত থেকে রাসূল (ছাঃ)-কে প্রস্তরবৃষ্টি থেকে রক্ষার চেষ্টা করেন। এভাবে রক্তাক্ত দেহে তিন মাইল হেঁটে তায়েফ শহরের বাইরে তিনি এক আঙ্গুর বাগিচায় ক্লান্ত-শ্রান্ত অবস্থায় আশ্রয় নেন। তখন ছেলেদের দল ফিরে যায়।[8]

ত্বায়েফ সফর বিষয়ে আয়েশা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি একদিন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে জিজ্ঞেস করেন, ‘ওহোদের দিন অপেক্ষা কষ্টের দিন আপনার জীবনে এসেছিল কি? জবাবে তিনি বললেন, হ্যাঁ। তোমার কওমের কাছ থেকে যে কষ্ট পেয়েছি তার চাইতে সেটি অধিক কষ্টদায়ক ছিল। আর তা ছিল আক্বাবার (ত্বায়েফের) দিনের আঘাত। যেদিন আমি (ত্বায়েফের নেতা) ইবনু ‘আব্দে ইয়ালীল বিন ‘আব্দে কুলাল-এর কাছে ইসলামের দাওয়াত নিয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু সে তাতে সাড়া দেয়নি। তখন দুঃখ ভারাক্রান্ত মনে ফিরে আসার পথে ক্বারনুছ ছা‘আলিব (ক্বারনুল মানাযিল) নামক স্থানে পৌঁছার পর কিছুটা স্বস্তি পেলাম। উপরের দিকে মাথা তুলে দেখলাম এক খন্ড মেঘ আমাকে ছায়া করে আছে। অতঃপর ভালভাবে লক্ষ্য করলে সেখানে জিবরীলকে দেখলাম। তিনি আমাকে সম্বোধন করে বলেন, আপনি আপনার কওমের নিকটে যে দাওয়াত দিয়েছেন এবং জবাবে তারা যা বলেছে, মহান আল্লাহ সবই শুনেছেন। এক্ষণে তিনি আপনার নিকটে ‘মালাকুল জিবাল’ (পাহাড়সমূহের নিয়ন্ত্রক) ফেরেশতাকে পাঠিয়েছেন। ঐ লোকদের ব্যাপারে তাকে আপনি যা খুশী নির্দেশ দিতে পারেন। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, অতঃপর মালাকুল জিবাল আমাকে সালাম দিয়ে বললেন, হে মুহাম্মাদ! আল্লাহ আপনার কওমের কথা শুনেছেন। আমি ‘মালাকুল জিবাল’। আপনার পালনকর্তা আমাকে আপনার নিকটে পাঠিয়েছেন, যাতে আপনি আমাকে যা খুশী নির্দেশ দিতে পারেন। আপনি চাইলে আমি ‘আখশাবাইন’ (মক্কার আবু কুবায়েস ও কু‘আইক্বা‘আন) পাহাড় দু’টিকে তাদের উপর চাপিয়ে দিব। উত্তরে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন,بَلْ أَرْجُو أَنْ يُخْرِجَ اللهُ مِنْ أَصْلاَبِهِمْ مَنْ يَعْبُدُ اللهَ وَحْدَهُ لاَ يُشْرِكُ بِهِ شَيْئًا، ‘বরং আমি আশা করি, আল্লাহ তাদের ঔরসে এমন সন্তান জন্ম দিবেন, যারা এক আল্লাহর ইবাদত করবে এবং তাঁর সাথে কাউকে শরীক করবে না’।[9]

ক্ষমা ও সহিষ্ণুতার কি অনুপম দৃষ্টান্ত! রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) মর্মান্তিক নির্যাতনের শিকার হয়েও তায়েফবাসীকে ক্ষমা করে দিলেন। ফেরেশতার সাহায্য পেয়েও তিনি তাদের উপর প্রতিশোধ গ্রহণ করেননি। আমরা কি দাওয়াতী জীবনে এ ঘটনা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারি না?

সালাফে ছালেহীন তাদের ক্ষমা ও উদারতার মাধ্যমে নিজ দ্বীনী আদর্শ অপরের নিকট তুলে ধরেছেন। ফলে তা শত্রুর মনেও পরিবর্তন এনেছে। কেউ শত্রুতা করলেও তারা ক্ষমা করে দিয়েছেন, প্রতিশোধ নেননি। যেমন- বদরুল হাসান সাহসোয়ানী বলেন যে, একবার আমি মিয়াঁ নাযীর হোসাইন দেহলভী (রহঃ)-কে আমার বাড়ীতে খাওয়ার জন্য দাওয়াত করি। কিন্তু খাওয়া শুরু করার আগেই তাঁর বমি শুরু হয়ে যায়। ফলে তিনি না খেয়ে চলে যান। পরে আমার পাচকের (বাবুর্চির) পেটে ভীষণ বেদনা শুরু হয়। পাচক আব্দুল গণী ছিল রামপুরের বাসিন্দা ও মিয়াঁ ছাহেবের প্রতি দারুণ বিদ্বেষী। অবস্থা সঙ্গীন হয়ে উঠলে সে এক পর্যায়ে মিনতিভরা কণ্ঠে স্বীকার করে যে, সে মিয়াঁ ছাহেবের জন্য খাসির বদলে শূকরের গোস্ত পাকিয়েছিল। এই পেটের বেদনা তার উপরে আল্লাহর গযব ছাড়া কিছুই নয়। অতঃপর তাকে মিয়াঁ ছাহেবের কাছে নিয়ে যাওয়া হ’লে সব কথা খুলে বলে সে ক্ষমা ভিক্ষা করে। মিয়াঁ নাযীর হোসাইন দেহলভী (রহঃ) তাকে ক্ষমা করে দেন। এরপর মিয়াঁ ছাহেব তার জন্য দো‘আ করার সাথে সাথে তার পেটের তীব্র বেদনা প্রশমিত হয়। তখন সে মিয়াঁ ছাহেবের হাতে হাত রেখে তওবা ও বায়‘আত করে। তার নতুন নাম রাখা হয় ‘আব্দুল্লাহ’। এরপর সে মক্কায় হিজরত করে ও সেখানেই বাকী জীবন অতিবাহিত করে। আল্লাহ পাক এভাবেই মিয়াঁ ছাহেবকে হারাম খাদ্য থেকে হেফাযত করলেন।[10] 

৬. সাংগঠনিক জীবনে : সাংগঠনিক জীবনে ক্ষমা ও সহিষ্ণুতা অপরিহার্য। আল্লাহ বলেন,فَبِمَا رَحْمَةٍ مِنَ اللهِ لِنْتَ لَهُمْ وَلَوْ كُنْتَ فَظًّا غَلِيظَ الْقَلْبِ لَانْفَضُّوا مِنْ حَوْلِكَ فَاعْفُ عَنْهُمْ وَاسْتَغْفِرْ لَهُمْ وَشَاوِرْهُمْ فِي الْأَمْرِ فَإِذَا عَزَمْتَ فَتَوَكَّلْ عَلَى اللهِ إِنَّ اللهَ يُحِبُّ الْمُتَوَكِّلِينَ، ‘বস্ত্ততঃ আল্লাহর অনুগ্রহের কারণেই তুমি তাদের প্রতি কোমলহৃদয় হয়েছ। যদি তুমি রূঢ়ভাষী ও কঠিন হৃদয়ের হ’তে, তাহ’লে তারা তোমার পাশ থেকে সরে যেত। অতএব তুমি তাদের মার্জনা কর ও তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা কর। আর যরূরী বিষয়ে তাদের সাথে পরামর্শ কর। অতঃপর যখন তুমি সংকল্পবদ্ধ হবে, তখন আল্লাহর উপর ভরসা কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ তাঁর উপর ভরসাকারীদের ভালবাসেন’ (আলে ইমরান ৩/১৫৯)।

বিভিন্ন পরিবারের নানা পরিবেশের মানুষ একসাথে সংগঠন করে। তাই তাদের মধ্যে কিছু মতপার্থক্য থাকতেই পারে। তাই সবাই ক্ষমাশীল ও সহনশীলতা অবলম্বন করে এগিয়ে যাবে। অন্যথায় সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

৭. সফরকালে : সফর সুখের জায়গা নয়, বরং কষ্টের জায়গা। এক্ষেত্রে বিভিন্ন জায়গায় দাঁড়ানো, বসা, বিশ্রাম নেওয়া ও ঘুমানোর ক্ষেত্রে অনেক সময় নানা বিপত্তি ঘটে যায়। আমরা যদি অপর ভাই প্রতি একটু সহনশীল হই তাহ’লে সবাই আনন্দে থাকতে পারি। দূরের সফরে নিজে দাঁড়িয়ে অপরকে বসার ব্যবস্থা করলে তিনি আজীবন কৃতজ্ঞ থাকবেন। রাসূল (ছাঃ) সফরে অনেক দুর্ঘটনার শিকার হয়েও ক্ষমাশীলতার পথ বেছে নিয়েছেন।

জাবের বিন আব্দুল্লাহ হ’তে বর্ণিত, এক সফরে নবী করীম (ছাঃ) ও তাঁর ছাহাবীগণ এক মরু উপত্যকায় বিশ্রামের জন্য তাঁবু ফেলেন। নবী করীম (ছাঃ) একটা গাছে তাঁর তরবারি ঝুলিয়ে রেখে শুয়ে পড়েন। ছাহাবীরাও যে যার মত ছায়াদার গাছ দেখে বিশ্রামে মশগূল হয়ে পড়েন। হঠাৎ করে নবী করীম (ছাঃ)-এর গলার আওয়াযে তারা ঘাবড়িয়ে যান। তারা তাঁর কাছে এসে দেখেন তাঁর পাশে একটা লোক দাঁড়িয়ে আছে, আর তার পাশে একটা তরবারি পড়ে আছে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাঁদের বললেন, ‘আমি ঘুমিয়ে ছিলাম, এমন সময় এই লোকটা এসে তরবারি হাতে নেয়। আমি জেগে দেখি, সে আমার শিয়রে দাঁড়িয়ে আছে। আমি কিছু বুঝে ওঠার আগেই দেখলাম, তার হাতে তরবারির খাপ খোলা। সে আমাকে বলল, আমার হাত থেকে কে তোমাকে রক্ষা করবে? আমি বললাম, আল্লাহ। দ্বিতীয়বার সে বলল, আমার হাত থেকে কে তোমাকে রক্ষা করবে? আমি বললাম, আল্লাহ। এবার সে তরবারিটা খাপে পুরে ফেলল। এখন তো তাকে দেখছ, সে বসে পড়েছে’।[11] অন্য বর্ণনায় এসেছে, وَلَمْ يُعَاقِبْهُ وَجَلَسَ ‘তারপরও তিনি কোন প্রতিশোধ নেননি। অথচ সে এখানে বসে আছে’।[12]

৮. গালিগালাজ প্রতিরোধে : আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, ‘একদিন নবী করীম (ছাঃ) বসেছিলেন, এমতাবস্থায় জনৈক ব্যক্তি আবুবকর (রাঃ)-কে গালিগালাজ করতে লাগল। নবী করীম (ছাঃ) এটা শুনে আশ্চর্যান্বিত হ’লেন এবং মুচকি হাসতে লাগলেন। লোকটি যখন অত্যধিক গালমন্দ করল, তখন আবুবকর (রাঃ) তার কথার উত্তর দিলেন। এতে নবী করীম (ছাঃ) রাগান্বিত হ’লেন এবং উঠে গেলেন। তখন আবুবকর (রাঃ) তাঁর পিছনে পিছনে গেলেন এবং বললেন, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! লোকটি আমাকে গালি দিচ্ছিল আর আপনি বসেছিলেন। যখন আমি তার কথার উত্তর দিলাম, তখন আপনি রাগ করে উঠে গেলেন। নবী করীম (ছাঃ) বললেন, তোমার সাথে একজন ফেরেশতা ছিলেন, যিনি ঐ লোকটির জবাব দিচ্ছিলেন। যখন তুমি নিজেই তার জবাব দিলে, তখন তোমাদের মাঝে শয়তান উপস্থিত হ’ল। অতঃপর তিনি বললেন, হে আবুবকর! তিনটি কথা আছে যেগুলির প্রত্যেকটি সত্য। প্রথমতঃ যদি কোন বান্দার উপর যুলুম করা হয় এবং ঐ বান্দা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য যুলুমের বিরুদ্ধে কোন প্রকার প্রতিবাদ না করে চুপ থাকে, তাহ’লে আল্লাহ তা‘আলা তাকে যথেষ্ট সাহায্য করেন। দ্বিতীয়তঃ যে ব্যক্তি তার দানের দরজা খুলে দেয় এবং তার মাধ্যমে আত্মীয়-স্বজনের সাথে সুসম্পর্কের ইচ্ছা পোষণ করে, আল্লাহ তার সম্পদ আরো বাড়িয়ে দেন। তৃতীয়তঃ যে ব্যক্তি ভিক্ষার দরজা খুলে দিয়ে নিজের ধন-সম্পদ বৃদ্ধি করতে চায়, এতে আল্লাহ তার সম্পদ আরো কমিয়ে দেন’।[13]

ছাহাবীগণ ছিলেন ক্ষমা, সহনশীলতা ও সহিষ্ণুতার আলোকোজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে তাঁরা হয়ে উঠেছিলেন পৃথিবীতে সর্বোত্তম ক্ষমাশীলদের অন্তর্ভুক্ত। তাঁরা গালির পরিবর্তে গালি দিতেন না। যেমন- একদা আব্দুল্লাহ বিন আববাস (রাঃ)-কে এক ব্যক্তি গালি দিলে তিনি তাকে পাল্টা গালি দিলেন না এবং তার কথার জবাব দিলেন না। বরং তিনি তাঁর চাচাতো ভাই ইকরিমাকে বললেন, হে ইকরিমা! দেখ, লোকটির কি কোন কিছুর অভাব আছে যা আমরা পূরণ করতে পারি? এতে লোকটি মাথা নিচু করে লজ্জিত হয়ে ফিরে গেল।[14]

উপসংহার : ক্ষমা ও সহিষ্ণুতার মাধ্যমেই হিংসা ও হানাহানিতে লিপ্ত মানব সমাজ শান্তিপূর্ণ সমাজে পরিণত হ’তে পারে। ক্ষমাশীল ব্যক্তিগণ দুনিয়াতে দুশ্চিন্তামুক্ত জীবন যাপন করতে পারেন। আর পরকালে তারা আল্লাহর ক্ষমা লাভ করে জান্নাতে উচ্চ মর্যাদায় সমাসীন হ’তে পারেন। তাই আসুন! আমরা ক্ষমাশীল ও সহিষ্ণু হই। আল্লাহ তা‘আলা আমাদের সেই তাওফীক দান করুন-আমীন!

ড. মুহাম্মাদ আব্দুল হালীম

শিক্ষক, আল-মারকাযুল ইসলামী আস-সালাফী, নওদাপাড়া, রাজশাহী।


[1]. ইবনু মাজাহ হা/৪২৫১; মিশকাত হা/২৩৪১।

[2]. বুখারী হা/৫৭৬৫, ৫৭৬৬।

[3]. বুখারী হা/৬৩৯১।

[4]. আহমাদ হা/২০১০৫; ছহীহুল জামে‘ হা/১৯৪৪।

[5]. বুখারী হা/২২০; মিশকাত হা/৪৯১।

[6]. বঙ্গানুবাদ মিশকাত, ঢাকা : হাদীছ একাডেমী ২০১৩, ১/৩০১ পৃ.।

[7]. বুখারী হা/৩১৪৯; মুসলিম হা/১২৮ (১০৫৭); মিশকাত হা/৫৮০৩।

[8]. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব, সীরাতুর রাসূল (ছাঃ) পৃ. ১৮৮-৮৯।

[9]. মুসলিম হা/১৭৯৫; বুখারী হা/৩২৩১; মিশকাত হা/৫৮৪৮।

[10]. ফযল হোসাইন বিহারী, আল-হায়াত বা‘দাল মামাত (করাচী : মাকতাবা শু‘আইব, ১৯৫৯ খৃ.), পৃ.২৬৮।

[11]. মুসলিম হা/৮৪৩।

[12]. বুখারী হা/২৯১০, ২৯১৩।

[13]. আহমাদ হা/৯৬২৪; মিশকাত হা/৫১০২।

[14]. গাযালী, ইহয়াউ উলূমিদ্দীন, ৪/৩১০।






আধুনিক বিজ্ঞানে ইসলামের ভূমিকা - ইমামুদ্দীন বিন আব্দুল বাছীর
যুবসমাজের অধঃপতন : কারণ ও প্রতিকার - মুহাম্মাদ আব্দুল মালেক
ইসলামে পোশাক-পরিচ্ছদ : গুরুত্ব ও তাৎপর্য (২য় কিস্তি) - মুহাম্মাদ আবু তাহের, পরিচালক, কিউসেট ইনস্টিটিউট, সিলেট।
ক্বিয়ামতের আলামত সমূহ (১ম কিস্তি) - মুহাম্মাদ আব্দুর রহীম
মাদ্রাসার পাঠ্যবই সমূহের অন্তরালে (৭ম কিস্তি) - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে ভালবাসা (পূর্ব প্রকাশিতের পর) - ইহসান ইলাহী যহীর
ছিয়ামের ফাযায়েল ও মাসায়েল - আত-তাহরীক ডেস্ক
ফৎওয়া : গুরুত্ব, প্রয়োজনীয়তা ও বিকাশ (৪র্থ কিস্তি) - ড. শিহাবুদ্দীন আহমাদ, শিক্ষক, আল-মারকাযুল ইসলামী আস-সালাফী, রাজশাহী
আক্বীদা ও আহকামে হাদীছের প্রামাণ্যতা (৫ম কিস্তি) - মীযানুর রহমান মাদানী
আক্বীদা ও আহকামে হাদীছের প্রামাণ্যতা - মীযানুর রহমান মাদানী
নববী চিকিৎসা পদ্ধতি (শেষ কিস্তি) - কামারুযযামান বিন আব্দুল বারী
‘আহলেহাদীছ আন্দোলন বাংলাদেশ’ কি চায়, কেন চায় ও কিভাবে চায়? - প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
আরও
আরও
.