পর্ব ১ । পর্ব ২ । পর্ব ৩ । পর্ব ৪ । পর্ব ৫ । পর্ব ৬ । শেষ পর্ব 

মসজিদে অবস্থানের ফযীলত :

মসজিদ পবিত্র স্থান, যেখানে আল্লাহর ইবাদত করা হয়। মসজিদে ইবাদতের আগে ও পরে অবস্থান করার মধ্যেও বান্দার জন্য অনেক নেকী রয়েছে। যেমন-

(১) ফেরেশতাদের দো‘আ লাভ : যারা মসজিদে এসে তাহিয়্যাতুল মসজিদ দু’রাক‘আত ছালাত আদায় করার পর ফরয ছালাতের জন্য বসে থাকে কিংবা ফরয ছালাতের পরে মসজিদে বসে থাকে তাদের জন্য ফেরেশতাগণ ক্ষমা লাভের দো‘আ করতে থাকেন। আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,

الْمَلاَئِكَةُ تُصَلِّي عَلَى أَحَدِكُمْ مَا دَامَ فِي مُصَلاَّهُ مَا لَمْ يُحْدِثْ اللَّهُمَّ اغْف‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏ لاَ يَزَالُ أَحَدُكُمْ فِي صَلاَةٍ مَا دَامَتِ الصَّلاَةُ تَحْبِسُهُ، لاَ يَمْنَعُهُ أَنْ يَنْقَلِبَ إِلَى أَهْلِهِ إِلاَّ الصَّلاَةُ-

‘তোমাদের কেউ যতক্ষণ তার ছালাতের স্থানে থাকে তার ওযূ ভঙ্গ না হওয়া পর্যন্ত তার জন্য ফেরেশতাগণ এই বলে দো‘আ করেন যে, হে আল্লাহ! আপনি তাকে ক্ষমা করুন, হে আল্লাহ! আপনি তাকে রহম করুন। আর তোমাদের মাঝে যে ব্যক্তির ছালাত তাকে বাড়ি ফিরে যাওয়া হ’তে বিরত রাখে, সে ছালাতরত আছে বলে পরিগণিত হবে’।[1]

(২) আল্লাহর রহমত পাওয়ার মাধ্যম : মসজিদে অবস্থান করে আল্লাহর যিকিরকারীর জন্য বহু ফযীলত রয়েছে। কোন সম্প্রদায়ের লোকেরা যখন আল্লাহর ঘর সমূহ হ’তে কোন ঘরে একত্রিত হয়, যাতে তারা আল্লাহর কিতাব তিলাওয়াত করে বা পরস্পর আলোচনা করে, তাদের উপর প্রশান্তি নাযিল হ’তে থাকে, তাদেরকে রহমত ঢেকে রাখে এবং ফেরেশতারা তাদের বেষ্টন করে রাখেন। আর আল্লাহ তা‘আলা নিকটবর্তীদের সাথে তাদের আলোচনা করেন। আর যার আমল তাকে পিছিয়ে দেয়, তার বংশ তাকে এগিয়ে নেয় না’।[2]

(৩) আল্লাহ আনন্দিত হন : আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবী করীম (ছাঃ) বলেছেন,

مَا تَوَطَّنَ رَجُلٌ مُسْلِمٌ الْمَسَاجِدَ لِلصَّلاَةِ وَالذِّكْرِ إِلاَّ تَبَشْبَشَ اللهُ لَهُ كَمَا يَتَبَشْبَشُ أَهْلُ الْغَائِبِ بِغَائِبِهِمْ إِذَا قَدِمَ عَلَيْهِمْ-

‘কোন মুসলিম ব্যক্তি যতক্ষণ মসজিদে ছালাত ও যিকিরে রত থাকে, ততক্ষণ আল্লাহ তাঁর প্রতি এতটা আনন্দিত হন, প্রবাসী ব্যক্তি তাঁর পরিবারে ফিরে এলে তারা তাকে পেয়ে যেরূপ আনন্দিত হয়’।[3] 

(৪) আল্লাহ গর্ব করেন : আব্দুল্লাহ বিন আমর (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর সাথে মাগরিবের ছালাত আদায় করলাম। তারপর যার চলে যাওয়ার চলে গেল এবং যার থেকে যাওয়ার থেকে গেল। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) এত দ্রুতবেগে আসলেন যে, তাঁর দীর্ঘ নিঃশ্বাস বের হ’তে লাগল। তিনি তাঁর দু’হাঁটুর উপর ভর করে বসে গেলেন এবং বললেন, তোমরা সুসংবাদ গ্রহণ কর। তোমাদের প্রতিপালক আসমানের একটি দরজা খুলে দিয়েছেন এবং ফেরেশতাদের নিকটে তোমাদের সম্পর্কে গর্ব করে বলছেন, তোমরা আমার বান্দাদের দিকে তাকিয়ে দেখ, তারা এক ফরয আদায়ের পর পরবর্তী ফরয আদায়ের জন্য অপেক্ষা করছে’।[4]

(৫) পাপের কাফফারা : ইবনু আববাস (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘আজ রাতে আমার মহান ও বরকতময় প্রভু সবচেয়ে সুন্দর চেহারায় আমার নিকটে এসেছেন। বর্ণনাকারী বলেন, আমার মতে তিনি বলেছেন, ঘুমের মধ্যে স্বপ্নযোগে। তারপর তিনি বলেন, হে মুহাম্মাদ! তুমি কি জান, এ সময় উচ্চতর জগতের অধিবাসীরা কি নিয়ে বিবাদ করছে? রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, আমি বললাম, না। তিনি তাঁর হাত আমার দুই কাঁধের মধ্যখানে রাখলেন। এমনকি আমি আমার দুই স্তনের বা বুকের মাঝে এর শীতলতা অনুভব করলাম। আসমান-যমীনে যা কিছু আছে আমি তা অবগত হ’লাম। তিনি বললেন, হে মুহাম্মাদ! তুমি কি জান, এ সময় উচ্চতর জগতের অধিবাসীরা কি নিয়ে বিবাদ করছে? আমি বললাম, হ্যাঁ, কাফফারাত নিয়ে বিবাদ করছে। কাফফারাত অর্থ- ‘ছালাতের পর মসজিদে বসে থাকা, ছালাতের জামা‘আতে উপস্থিতির জন্য হেঁটে যাওয়া এবং কষ্টকর সময়েও সুন্দরভাবে ওযূ করা’। যে লোক এসব কাজ করবে সে কল্যাণের মধ্যে বেঁচে থাকবে, কল্যাণের সাথে মরবে এবং সে জন্মদিনের মত গুনাহ হ’তে পবিত্র হয়ে যাবে’।[5]

(৬) নবীর সুন্নাত : জাবের বিন সামুরা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম (ছাঃ) ফজরের ছালাত আদায়ের পর সূর্য উঠা পর্যন্ত নিজের ছালাতের স্থানে বসে থাকতেন।[6]

(৭) পূর্ণ হজ্জ ও পূর্ণ ওমরার নেকী লাভ : আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলূল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,

مَنْ صَلَّى الْغَدَاةَ فِي جَمَاعَةٍ ثُمَّ قَعَدَ يَذْكُرُ اللهَ حَتَّى تَطْلُعَ الشَّمْسُ ثُمَّ صَلَّى رَكْعَتَيْنِ كَانَتْ لَهُ كَأَجْرِ حَجَّةٍ وَعُمْرَةٍ‏ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم تَامَّةٍ تَامَّةٍ تَامَّةٍ-

‘যে ব্যক্তি ফজরের ছালাত জামা‘আতে আদায় করে, তারপর সূর্য উঠা পর্যন্ত বসে বসে আল্লাহ তা‘আলার যিকর করে, তারপর দুই রাক‘আত ছালাত আদায় করে, তার জন্য একটি হজ্জ ও একটি ওমরার ছওয়াব রয়েছে। আনাস (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, পূর্ণ, পূর্ণ, পূর্ণ (হজ্জ ও ওমরার ছওয়াব)।[7]

(৮) ছালাতের মত ছওয়াব লাভ : একজন মুসলমান যতক্ষণ মসজিদে অবস্থান করবেন ততক্ষণ ছালাতের মধ্যেই থাকবেন। অর্থাৎ ছালাত আদায়ের ন্যায় ছওয়াব পাবেন। হুমাইদ (রহঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, আনাস (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করা হ’ল, আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) কি আংটি ব্যবহার করতেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ। এক রাতে তিনি এশার ছালাত অর্ধরাত পর্যন্ত বিলম্ব করে আদায় করলেন। ছালাত শেষ করে আমাদের দিকে মুখ ফিরিয়ে বললেন, লোকেরা ছালাত আদায় করে ঘুমিয়ে গেছে। কিন্তু তোমরা যতক্ষণ ছালাতের জন্য অপেক্ষা করেছ, ততক্ষণ ছালাত রত ছিলে বলে গণ্য করা হবে। আনাস (রাঃ) বলেন, এ সময় আমি আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)-এর আংটির উজ্জ্বলতা লক্ষ্য করছিলাম।[8]

মসজিদে অবস্থানের আদব :

(১) অপবিত্র অবস্থায় মসজিদে না বসা : মসজিদ হ’ল পবিত্র স্থান। সুতরাং পবিত্র লোকেরাই সেখানে আসবে ও বসবে। তবে বিশেষ প্রয়োজনে অপবিত্র ব্যক্তি মসজিদে আসতে পারে অথবা মসজিদের উপর দিয়ে গমন করতে পারে কিন্তু সে মসজিদে বসবে না। আল্লাহ বলেন,

يَا أَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوْا لَا تَقْرَبُوْا الصَّلَاةَ وَأَنْتُمْ سُكَارَى حَتَّى تَعْلَمُوْا مَا تَقُوْلُوْنَ وَلَا جُنُبًا إِلَّا عَابِرِي سَبِيْلٍ حَتَّى تَغْتَسِلُوْا

‘হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা নেশার অবস্থায় ছালাতের নিকটবর্তী হয়ো না, যতক্ষণ না তোমরা কি বলছ, তা বুঝতে পার এবং অপবিত্র অবস্থাতেও নয়, যদি তোমরা পথচারী না হও, যতক্ষণ পর্যন্ত না তোমরা গোসল কর’ (নিসা ৪/৪৩)

ইবনে কাছীর (রহঃ) বলেন, অনেক ইমাম এ আয়াত দ্বারা এ কথার উপর প্রমাণ পেশ করেন যে, গোসল ফরয হওয়া ব্যক্তির জন্য মসজিদে অবস্থান করা হারাম। তবে তার জন্য মসজিদ ত্যাগ করার জন্য অতিক্রম করা বৈধ। অনুরূপভাবে ঋতুবর্তী ও নিফাসগ্রস্ত মহিলার বিধানও একই।[9]

আয়েশা (রাঃ) বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আমাকে বললেন, মসজিদ থেকে আমার মুছাল্লা নিয়ে এসো। আমি বললাম, আমি তো ঋতুবতী। তিনি বললেন, তোমার হায়েয তো তোমার হাতে লেগে নেই।[10] আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে অন্য হাদীছে এসেছে, একদিন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ই‘তিকাফরত অবস্থায় মসজিদ থেকে বললেন,

يا عائِشَةُ، ناوِلِينِي الثَّوْبَ. فَقالَتْ: إنِّيْ حائِضٌ، فَقالَ: إنَّ حَيْضَتَكِ ليسَتْ في يَدِكِ فَناوَلَتْهُ. 

‘হে আয়েশা! আমাকে কাপড়টা এগিয়ে দাও। তিনি (আয়েশা রাঃ) বললেন, আমি যে ঋতুবতী! জবাবে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, ঋতু তো তোমার হাতে নেই। তারপর আমি তা এনে দিলাম’।[11]

(২) বসার পূর্বে দুই রাক‘আত ছালাত আদায় করা : অনেকে মসজিদে ঢুকেই সরাসরি বসে যান। এটা সুন্নাত বিরোধী কাজ। মসজিদে বসার আগে দু’রাক‘আত ছালাত আদায় করা রাসূল (ছাঃ)-এর আদেশ। আবূ ক্বাতাদাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (ছাঃ) বলেছেন,إِذَا دَخَلَ أَحَدُكُمُ الْمَسْجِدَ فَلْيَرْكَعْ رَكْعَتَيْنِ قَبْلَ أَنْ يَجْلِسَ ‘তোমাদের কেউ মসজিদে প্রবেশ করলে সে যেন বসার আগে দু’রাক‘আত ছালাত আদায় করে নেয়’।[12] একই রাবী থেকে অন্য বর্ণনায় আছে যে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) দু’রাক‘আত ছালাত আদায় না করে বসতে নিষেধ করেছেন। তিনি বলেন,إذا دخلَ أحدُكمُ المسجدَ فلا يجلِسْ حتّى يصلِّيَ رَكعتينِ ‘যখন তোমাদের কেউ মসজিদে প্রবেশ করবে তখন সে যেন না বসে, যতক্ষণ না দু’রাক‘আত ছালাত আদায় করে’।[13] এমনকি জুম‘আর দিন ইমাম খুৎবারত অবস্থায় মসজিদে প্রবেশ করলেও দু’রাক‘আত ছালাত আদায় করে বসতে হবে। জাবের (রাঃ) বলেন, ‘নবী করীম (ছাঃ) জুম‘আর দিনে খুৎবা দিচ্ছিলেন। এমতাবস্থায় জনৈক ব্যক্তি মসজিদে প্রবেশ করে। তখন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাকে বললেন, তুমি কি ছালাত আদায় করেছ? সে বলল, না। তখন তিনি বললেন, তুমি দাঁড়াও দু’রাক‘আত ছালাত আদায় কর’।[14]

অন্য হাদীছে দু’রাক‘আত ছালাত আদায় না করে মসজিদ অতিক্রম করাকে ক্বিয়ামতের আলামত হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,إِنَّ مِنْ أَشْرَاطِ السَّاعَةِ أَنْ يَمُرَّ الرَّجُلُ فِي الْمَسْجِدِ لاَ يُصَلِّيْ فِيْهِ رَكْعَتَيْنِ، ‘ক্বিয়ামতের অন্যতম আলামত হ’ল, লোকেরা মসজিদ অতিক্রম করে চলে যাবে অথচ সেখানে দু’রাক‘আত ছালাত আদায় করবে না’।[15] 

(৩) পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা : মসজিদকে সব সময় পরিস্কার-পরিচ্ছন রাখতে হবে। মসজিদ নোংরা করা, অপরিচ্ছন্ন রাখা সবচেয়ে নিন্দনীয় কাজ।[16] আনাস বিন মালিক (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম (ছাঃ) বলেছেন, মসজিদে থুথু ফেলা গুনাহের কাজ, আর তার কাফফারা হচ্ছে তা মুছে ফেলা।[17] একই রাবী কর্তৃক অন্যত্র বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি বলেন,

أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم رَأَى نُخَامَةً فِي الْقِبْلَةِ، فَشَقَّ ذَلِكَ عَلَيْهِ حَتَّى رُئِيَ فِي وَجْهِهِ، فَقَامَ فَحَكَّهُ بِيَدِهِ فَقَالَ إِنَّ أَحَدَكُمْ إِذَا قَامَ فِي صَلاَتِهِ، فَإِنَّهُ يُنَاجِي رَبَّهُ أَوْ إِنَّ رَبَّهُ بَيْنَهُ وَبَيْنَ الْقِبْلَةِ فَلاَ يَبْزُقَنَّ أَحَدُكُمْ قِبَلَ قِبْلَتِهِ، وَلَكِنْ عَنْ يَسَارِهِ، أَوْ تَحْتَ قَدَمَيْهِ‏ ثُمَّ أَخَذَ طَرَفَ رِدَائِهِ فَبَصَقَ فِيهِ، ثُمَّ رَدَّ بَعْضَهُ عَلَى بَعْضٍ، فَقَالَ‏ أَوْ يَفْعَلْ هَكَذَا-

‘নবী করীম (ছাঃ) ক্বিবলার দিকে (দেয়ালে) ‘কফ’ দেখলেন। এটা তার নিকটে কষ্টদায়ক মনে হ’ল। এমনকি তাঁর চেহারায় তা ফুটে উঠলো। তিনি উঠে গিয়ে তা হাত দিয়ে পরিস্কার করলেন। অতঃপর বললেন, তোমাদের কেউ যখন ছালাতে দাঁড়ায় তখন সে তার রবের সাথে একান্তে কথা বলে। অথবা বলেছেন, তার ও ক্বিবলার মাঝখানে তার রব আছেন। কাজেই তোমাদের কেউ যেন ক্বিবলার দিকে থুতু না ফেলে। বরং সে যেন তার বাম দিকে অথবা পায়ের নীচে তা ফেলে’।[18] আয়েশা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) পাড়ায় পাড়ায় মসজিদ নির্মাণ করার এবং তা পরিচ্ছন্ন ও সুগন্ধিময় রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।[19]

আনাস (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদিন আমরা রাসূল (ছাঃ)-এর সঙ্গে মসজিদে নববীতে বসে আছি। এমন সময় হঠাৎ এক বেদুঈন এসে মসজিদের মধ্যে দাঁড়িয়ে পেশাব করতে লাগল, তা দেখে ছাহাবীগণ থামো থামো বলে তাকে পেশাব করতে বাধা দিলেন। আনাস (রাঃ) বলেন, তখন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, তোমরা তাকে বাধা দিও না, বরং তাকে ছেড়ে দাও। লোকেরা তাকে ছেড়ে দিল, সে পেশাব সেরে নিল। তখন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাকে ডেকে বললেন, এটা হ’ল মসজিদ। এখানে পেশাব করা কিংবা ময়লা আবর্জনা ফেলা যাবে না। বরং এ হ’ল আল্লাহর যিকির করা, ছালাত আদায় করা এবং কুরআন পাঠ করার স্থান’।[20]

মসজিদ পরিচ্ছন্ন রাখা একটি মর্যাদাপূর্ণ কাজ। আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘একজন কাল ব্যক্তি বা মহিলা মসজিদে ঝাড়ু দিত। লোকটি মারা গেল কিন্তু তার মৃত্যু সম্পর্কে রাসূল (ছাঃ)-কে জানানো হয়নি। একদিন রাসূল (ছাঃ) তার আলোচনায় তার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে জানতে পারেন লোকটি মারা গেছে। তিনি বললেন, তোমরা আমাকে জানাওনি কেন? আমাকে তার কবরটা দেখিয়ে দাও। অতঃপর তিনি তার কবরের নিকট গেলেন এবং তার জানাযার ছালাত আদায় করলেন’।[21] 

(৪) আযানের পর মসজিদ থেকে বের না হওয়া : কেউ মসজিদে অবস্থানকালে কোন ছালাতের জন্য আযান হয়ে গেলে ওযর ব্যতীত মসজিদ থেকে বের হওয়া উচিত নয়। আবু শা‘ছা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, 

خَرَجَ رَجُلٌ مِنَ الْمَسْجِدِ بَعْدَ مَا أُذِّنَ فِيهِ بِالْعَصْرِ فَقَالَ أَبُو هُرَيْرَةَ أَمَّا هَذَا فَقَدْ عَصَى أَبَا الْقَاسِمِ صلى الله عليه وسلم

‘আছরের ছালাতের আযান হয়ে যাওয়ার পর এক ব্যক্তি মসজিদ হ’তে বেরিয়ে চলে গেল। আবু হুরায়রা (রাঃ) বললেন, এই ব্যক্তি আবুল কাসিম (ছাঃ)-এর নির্দেশ অমান্য করল।[22] তবে পবিত্রতা অর্জনের জন্য, টয়লেটে অথবা অন্য কোন যরূরী প্রয়োজনে বের হওয়া জায়েয আছে। আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, (একবার) ছালাতের ইক্বামত দেওয়া হয়ে গেল, লোকেরা তাদের কাতার সোজা করে নিয়েছে, আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) বেরিয়ে আসলেন এবং সামনে এগিয়ে গেলেন, তখন তাঁর উপর গোসল ফরয ছিল। তিনি বললেন, তোমরা নিজ নিজ জায়গায় অপেক্ষা কর। অতঃপর তিনি ফিরে গেলেন এবং গোসল করলেন, অতঃপর ফিরে আসলেন, তখন তাঁর মাথা হ’তে পানি টপ টপ করে পড়ছিল। অতঃপর সবাইকে নিয়ে ছালাত আদায় করলেন’।[23] 

(৫) প্রয়োজন পূরণের পর অবস্থান করা : খাবার থাকা অবস্থায় ক্ষুধার্ত হয়ে এবং পেশাব-পায়খানার বেগ চেপে রেখে মসজিদে অবস্থান করা বা ছালাত আদায় করা অপসন্দনীয়। আয়েশা (রাঃ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি, لاَ صَلاَةَ بِحَضْرَةِ الطَّعَامِ وَلاَ وَهُوَ يُدَافِعُهُ الأَخْبَثَانِ،‏ ‘খাবার হাযির হ’লে কোন ছালাত আদায় চলবে না। কিংবা পায়খানা-পেশাবের বেগ নিয়ে ছালাত আদায় করা যাবে না’।[24] 

(৬) কাউকে তার জায়গা থেকে উঠিয়ে সেখানে না বসা : জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, لا يقيمن أحدكم أخاه يوم الجمعة ثم ليخالف إلى مقعده، فيقعد فيه، ولكن يقول: افسحوا، ‘তোমাদের কেউ যেন তোমার ভাইকে তার স্থান থেকে না উঠায় এবং তাকে তার জায়গা থেকে সরিয়ে দিয়ে সে স্থানে না বসে। তবে তাকে বলবে, তুমি জায়গা প্রশস্ত কর।[25] ইবনু ওমর (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম (ছাঃ) নিষেধ করেছেন, কেউ যেন তার ভাইকে স্বীয় বসার স্থান হ’তে উঠিয়ে দিয়ে নিজে সে জায়গায় না বসে। ইবনু জুরাইজ (রহঃ) বলেন, আমি নাফে‘ (রহঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম, এ কি শুধু জুম‘আর ব্যাপারে? তিনি বললেন, জুম‘আহ ও অন্যান্য (ছালাতের) ব্যাপারেও।[26]

(৭) ছালাত আদায়ের জন্য কোন স্থানকে নির্ধারণ না করা : মসজিদ আল্লাহর ঘর। সুতরাং এখানে সবার অধিকার সমান। যিনি আগে আসবেন তিনিই আল্লাহর নিকটে সবচেয়ে প্রিয়। সুতরাং যিনি প্রথমে আসবেন তিনি যেখানে ইচ্ছা সেখানে বসবেন। অতঃপর যিনি আসবেন এবং যেখানে ফাঁকা পাবেন সেখানে বসবেন। এক্ষেত্রে কারো জন্য মসজিদের একটা নির্ধারিত স্থান রেখে দেওয়া ও অন্যকে বসতে না দেওয়া জায়েয নয়। আব্দুর রহমান ইবনু শিবল (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত, তিনি বলেন, 

نَهَى رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم عَنْ نَقْرَةِ الْغُرَابِ وَافْتِرَاشِ السَّبُعِ وَأَنْ يُوَطِّنَ الرَّجُلُ الْمَكَانَ فِي الْمَسْجِدِ كَمَا يُوَطِّنُ الْبَعِيْرُ-

‘রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) নিষেধ করেছেন কাকের ঠোকরের মত (তাড়াতাড়ি) সিজদাহ করতে, চতুস্পদ জন্তুর ন্যায় বাহু বিছাতে এবং উটের ন্যায় মসজিদের মধ্যে স্থান নির্দিষ্ট করে নিতে’।[27] 

(৮) ঘুম আসলে স্থান পরিবর্তন করা : মসজিদে অবস্থান কালে কারো ঘুম আসলে তিনি স্থান পরিবর্তন করতে পারবেন, যাতে করে তার ঘুম চলে যায়। আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ) হ’তে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, إِذَا نَعَسَ أَحَدُكُمْ وَهُوَ فِي الْمَسْجِدِ فَلْيَتَحَوَّلْ مِنْ مَجْلِسِهِ ذَلِكَ إِلَى غَيْرِهِ، ‘যখন মসজিদে তোমাদের কারো তন্দ্রা আসে, সে যেন স্বীয় মজলিস থেকে উঠে অন্যত্র গিয়ে বসে’।[28] অন্যত্র রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,إِذَا نَعَسَ أَحَدُكُمْ يَوْمَ الْجُمُعَةِ فَلْيَتَحَوَّلْ مِنْ مَجْلِسِهِ ذَلِكَ، ‘যখন তোমাদের কারো জুম‘আর দিন তন্দ্রা আসে, সে যেন ঐ মজলিস থেকে উঠে অন্যত্র চলে যায়’।[29] 

(৯) মানুষের কাঁধের উপর দিয়ে না যাওয়া : মসজিদে কাউকে ডিঙ্গিয়ে কাঁধের উপর দিয়ে না যাওয়া মসজিদের অন্যতম আদব। আব্দুল্লাহ বিন বুসর (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন,

جَاءَ رَجُلٌ يَتَخَطَّى رِقَابَ النَّاسِ يَوْمَ الْجُمُعَةِ وَالنَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم يَخْطُبُ فَقَالَ لَهُ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم"‏ اجْلِسْ فَقَدْ آذَيْتَ،

‘একদা জুম‘আর দিন এক ব্যক্তি লোকদের ঘাড় ডিঙ্গিয়ে অগ্রসহ হচ্ছিল। নবী করীম (ছাঃ) তখন খুৎবা দিচ্ছিলেন। নবী করীম (ছাঃ) বললেন, তুমি বস, তুমি (লোকদের) কষ্ট দিচ্ছ’।[30]

(১০) দুই জনের মাঝখানে ফাঁকা না করা : ছালাতে যেমন পাশাপাশি দাঁড়াতে হয় তেমনি মসজিদে বসার সময়ও ফাঁকা ফাঁকা না হয়ে মিলে মিশে বসতে হবে। সালামান ফারসী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম (ছাঃ) বলেছেন, 

لاَ يَغْتَسِلُ رَجُلٌ يَوْمَ الْجُمُعَةِ، وَيَتَطَهَّرُ مَا اسْتَطَاعَ مِنْ طُهْرٍ، وَيَدَّهِنُ مِنْ دُهْنِهِ، أَوْ يَمَسُّ مِنْ طِيبِ بَيْتِهِ ثُمَّ يَخْرُجُ، فَلاَ يُفَرِّقُ بَيْنَ اثْنَيْنِ، ثُمَّ يُصَلِّي مَا كُتِبَ لَهُ، ثُمَّ يُنْصِتُ إِذَا تَكَلَّمَ الإِمَامُ، إِلاَّ غُفِرَ لَهُ مَا بَيْنَهُ وَبَيْنَ الْجُمُعَةِ الأُخْرَى،

‘যে ব্যক্তি জুম‘আর দিন গোসল করে এবং যথাসাধ্য ভালরূপে পবিত্রতা অর্জন করে ও নিজের তেল ব্যবহার করে বা নিজ ঘরের সুগন্ধি ব্যবহার করে, অতঃপর বের হয় এবং দু’জন লোকের মাঝে ফাঁক না করে, অতঃপর নির্ধারিত ছালাত আদায় করে এবং ইমামের খুৎবা দেয়ার সময় চুপ থাকে, তাহ’লে তার সে জুম‘আহ হ’তে আরেক জুম‘আহ পর্যন্ত সময়ের যাবতীয় গুনাহ মাফ করে দেয়া হয়’।[31] 

(১১) মুছল্লীর সামনে ও তার সুতরার মাঝে না হাঁটা : মসজিদে কোন মুছল্লী একাকী ছালাত আদায় করলে ক্বিবলার দিকে লাঠি, দেওয়াল বা অন্য কোন বস্ত্ত দ্বারা আড়াল করে দাঁড়ানো মুছল্লীর দায়িত্ব। আর অন্যান্য মুছল্লীগণ এই আড়ালের ভিতর দিয়ে অতিক্রম করবেন না। এই আড়াল করাই হ’ল সুতরা। আবু জুহায়ম (রাঃ) বলেছেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, 

لَوْ يَعْلَمُ الْمَارُّ بَيْنَ يَدَىِ الْمُصَلِّي مَاذَا عَلَيْهِ لَكَانَ أَنْ يَقِفَ أَرْبَعِيْنَ خَيْرًا لَهُ مِنْ أَنْ يَمُرَّ بَيْنَ يَدَيْهِ. قَالَ أَبُو النَّضْرِ لاَ أَدْرِيْ أَقَالَ أَرْبَعِينَ يَوْمًا أَوْ شَهْرًا أَوْ سَنَةً،

‘যদি মুছল্লীর সামনে দিয়ে অতিক্রমকারী জানতো যে, এটা কত বড় অপরাধ, তাহ’লে সে মুছল্লীর সামনে দিয়ে অতিক্রম করার চেয়ে চল্লিশ (দিন/মাস/বছর) দাঁড়িয়ে থাকা উত্তম মনে করত। আবুন-নাযর (রহঃ) বলেন, আমার জানা নেই যে, তিনি কি চল্লিশ দিন বলেছেন, নাকি মাস কিংবা চল্লিশ বছর বলেছেন।[32] অন্যত্র রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,

إِذَا صَلَّى أَحَدُكُمْ فَلْيُصَلِّ إِلَى سُتْرَةٍ وَلْيَدْنُ مِنْهَا وَلاَ يَدَعْ أَحَدًا يَمُرُّ بَيْنَ يَدَيْهِ فَإِنْ جَاءَ أَحَدٌ يَمُرَّ فَلْيُقَاتِلْهُ فَإِنَّهُ شَيْطَانٌ

‘তোমাদের যে কেউ ছালাত আদায় করতে চাইলে যেন সুতরা সামনে রেখে ছালাত আদায় করে এবং তার নিকটবর্তী হয়। আর সে যেন তার সামনে দিয়ে কাউকে অতিক্রম করতে না দেয়। অতএব যদি কেউ সামনে দিয়ে অতিক্রম করে. তাহ’লে সে যেন প্রতিরোধ করে। কারণ সে একটা শয়তান’।[33] 

(১২) জুম‘আর দিন খুৎবার সময় চুপ থাকা : মসজিদে সবসময় মুছল্লীরা চুপচাপ আল্লাহর ইবাদত করবে। কখনও অনর্থক কথাবার্তায় লিপ্ত হবে না। বিশেষ করে জুম‘আর দিন আরো গুরুত্ব দিবেন। এমনকি কেউ কথা বললেও বলা যাবে না যে, তুমি চুপ কর বা চুপ থাক। আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, إِذَا قُلْتَ لِصَاحِبِك‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏‏ وَالإِمَامُ يَخْطُبُ فَقَدْ لَغَوْتَ ‘জুম‘আর দিন যখন তোমার পাশের মুছল্লীকে চুপ থাক বলবে, অথচ ইমাম খুৎবা দিচ্ছেন, তাহ’লে তুমি একটি অনর্থক কথা বললে’।[34] 

(১৩) ধারালো কোন জিনিস বহন করা থেকে বিরত থাকা : আবু বুরদাহ (রহঃ)-এর পিতা আব্দুল্লাহ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, নবী করীম (ছাঃ) বলেছেন, مَنْ مَرَّ فِي شَىْءٍ مِنْ مَسَاجِدِنَا أَوْ أَسْوَاقِنَا بِنَبْلٍ، فَلْيَأْخُذْ عَلَى نِصَالِهَا، لاَ يَعْقِرْ بِكَفِّهِ مُسْلِمًا ‘যে ব্যক্তি তীর নিয়ে আমাদের মসজিদ অথবা বাযার দিয়ে চলে সে যেন তার ফলা হাত দিয়ে ধরে রাখে, যাতে করে তার হাতে কোন মুসলিম আঘাতপ্রাপ্ত না হয়’।[35] অন্যত্র রাসূল (ছাঃ) মসজিদে নববীতে তীরসহ এক ব্যক্তিকে দেখে বলেন, ‘এর ফলাগুলো হাত দিয়ে ধরে রাখ’।[36] 

(১৪) মূল্যবান সময়কে কাজে লাগানো : মসজিদ সবচেয়ে মূল্যবান জায়গা। আর সেই মূল্যবান জায়গায় অবস্থানকালীন সময়কে যিকির-আযকার, তাসবীহ-তাহলীল, কুরআন তিলাওয়াতসহ যে কোন ভাল কাজে ব্যয় করতে হবে। দুনিয়াবী কথা, কাজের মাধ্যমে সময় নষ্ট করা যাবে না। রাসূল (ছাঃ) বলেন,

فَسَيَكُوْنُ فِي آخِرِ الزَّمَانِ قَوْمٌ يَجْلِسُوْنَ فِي الْمَسَاجِدِ حَلَقًا حَلَقًا، إَمَامَهُمُ الدُّنْيَا، فَلاَ تَجَالِسُوْهُمْ، فَإِنَّهُ لَيْسَ لله فِيْهِمْ حَاجَةٌ

‘শেষ যামানায় এমন সম্প্রদায়ের লোকের আবির্ভাব হবে, যারা মসজিদে গোল হয়ে বসবে, তাদের লক্ষ্য হবে দুনিয়া। তোমরা তাদের সাথে বসবে না। কারণ তাদের মধ্যে আল্লাহর জন্য কোন প্রয়োজন নেই’।[37] 

(১৫) মসজিদে দুই হাঁটু উঠিয়ে দুই পা পেটের দিকে গুটিয়ে কাপড় পেচিয়ে না বসা : মু‘আয বিন আনাস (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم نَهَى عَنِ الْحُبْوَةِ يَوْمَ الْجُمُعَةِ وَالإِمَامُ يَخْطُبُ ‘রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) জুম‘আর দিন ইমামের খুৎরা দেয়ার সময় দুই হাঁটু উঠিয়ে দুই পা পেটের দিক গুটিয়ে কাপড় পেঁচিয়ে মাটিতে নিতম্ব রেখে বসা হ’তে নিষেধ করেছেন’।[38]

(১৬) মিম্বরে দাঁড়িয়ে খুৎবা প্রদান করা : রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) জুম‘আর দিন মসজিদের মিম্বরে দাঁড়িয়ে খুৎবা দিতেন। জাবের ইবনু আব্দুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, একজন আনছারী মহিলা আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)-এর নিকট আরয করলেন, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! আমি কি আপনার জন্য এমন একটি জিনিস বানিয়ে দিব না, যার উপর আপনি বসবেন? কেননা আমার একজন কাঠমিস্ত্রি গোলাম আছে। তিনি বললেন, যদি তুমি তা চাও। বর্ণানাকারী বললেন, তারপর সে মহিলা তাঁর জন্য একটি কাঠের মিম্বর তৈরী করলেন। যখন জুম‘আর দিন হ’ল, নবী করীম (ছাঃ) সেই কাঠের তৈরী মিম্বরের উপরে বসলেন। সে সময় যে খেজুর গাছের কান্ডের উপর ভর দিয়ে তিনি খুৎবা দিতেন, সেটি এমনভাবে চিৎকার করে উঠল, যেন তা ফেটে পড়বে। নবী করীম (ছাঃ) নেমে এসে তা নিজের সঙ্গে জড়িয়ে ধরলেন। তখন সেটি ফোঁপাতে লাগল, যেমন ছোট শিশুকে চুপ করানোর সময় ফোঁপায়। অবশেষে তা স্থির হয়ে গেল। (রাবী বলল) খেজুর কান্ডটি যে যিকর-নছীহত শুনত, তা হারানোর কারণে কেঁদেছিল’।[39] [চলবে]

মুহাম্মাদ আব্দুল ওয়াদূদ

সহকারী শিক্ষক, ন্যাশনাল আইডিয়াল স্কুল, খিলগাঁও, ঢাকা।

[1]. বুখারী হা/৬৫৯।

[2]. মুসলিম হা/২৬৯৯

[3]. ইবনু মাজাহ হা/৮০০; আহমাদ হা/৮০০৪; ছহীহ আত-তারগীব হা/৩২৫; ছহীহ ইবনে হিববান হা/১৬০৭; আল-জামে‘উছ ছাগীর হা/৭৮৬১।

[4]. ইবনু মাজাহ হা/৮০১; আহমাদ হা/৬৭১১-১২; ছহীহ আত-তারগীব হা/৪৪৫; ছহীহাহ হা/৬৬১।

[5]. তিরমিযী হা/৩২৩৩; আহমাদ হা/৩৪৮৪, সনদ ছহীহ।

[6]. মুসলিম, তিরমিযী হা/৫৮৫; আবূদাঊদ হা/১১৭১।

[7]. তিরমিযী হা/৫৮৬; ছহীহাহ হা/৩৪০৩।

[8]. বুখারী হা/৬৬১।

[9]. তাফসীরে ইবনে কাছীর, নিসা ৪৩নং আয়াতের তাফসীর দ্রঃ।

[10]. মুসলিম হা/৫৭৬, (ই.ফা) হা/৫৮০।

[11]. মুসলিম হা/৫৭৮, (ই.ফা) হা/৫৮২

[12]. বুখারী হা/৪৪৪; মুসলিম হা/৭১৪; নাসাঈ হা/৭৩০; ইবনু মাজাহ হা/১০১৩; মিশকাত হা/৭০৪।

[13]. বুখারী হা/১১৬৩; ছহীহ ইবনে হিববান হা/২৪৯৫।

[14]. বুখারী হা/৯৩০; ছহীহ মুসলিম হা/২০৫৫।

[15]. মু‘জামুল কাবীর হা/৯৪৮৮; শু‘আবুল ঈমান হা/৮৩৯৯; ছহীহাহ হা/৬৪৯।

[16]. মুসলিম হা/৫৫৩; আহমাদ হা/২১৫৪৯; ছহীহ ইবনু হিববান হা/১৬৪১; মিশকাত হা/৭০৯।

[17]. বুখারী হা/৪১৫; মুসলিম হা/৫৫২; আহমাদ হা/১২৭৭৫।

[18]. বুখারী হা/৪০৫।

[19]. আবূদাঊদ হা/৪৫৫; তিরমিযী হা/৫৯৪।

[20]. মুসলিম (হা.এ) হা/৫৪৮।

[21]. বুখারী হা/৪৫৮; মুসলিম হা/৯৫৬।

[22]. মুসলিম হা/৬৫৫; তিরমিযী হা/২০৪; নাসাঈ হা/৬৮৩; ইবনু মাজাহ হা/৭৩৩।

[23]. বুখারী হা/৬৪০।

[24]. মুসলিম (হা.এ) হা/১১৩৩; ছহীহ ইবনে হিববান হা/২০৭৩; ছহীহ আল জামে‘ হা/৭৫০৯।

[25]. মুসলিম হা/২১৭৮।

[26]. বুখারী হা/৯১১।

[27]. আবূদাঊদ হা/৮৬২; নাসাঈ হা/১১১১; ইবনু মাজাহ হা/১৪২৯।

[28]. আবূদাঊদ হা/১১১৯; তিরমিযী হা/৫২৬; আল-জামে‘উছ ছগীর হা/৮৭২।

[29]. তিরমিযী হা/৫২৬; বায়হাক্বী হা/৬১৩৯।

[30]. আবূদাঊদ হা/১১১৮; নাসাঈ হা/১৩৯৭; ছহীহ ইবনে হিববান হা/২৭৯০।

[31]. বুখারী হা/৮৮৩।

[32]. বুখারী হা/৫১০; মুসলিম হা/৭৫০৭।

[33]. বুখারী হা/৫০৯; মুসলিম হা/৫০৫; নাসাঈ হা/৭৫৭; আবূদাঊদ হা/৬৯৭।

[34]. বুখারী হা/৯৩৪; মুসলিম হা/৮৫১।

[35]. বুখারী হা/৪৫২।

[36]. বুখারী হা/৪৫১; মুসলিম হা/২৬১৪; আহমাদ হা/১৪৩১৪।

[37]. তাবারানী, আল-কারীর হা/১০৪৫২; ছহীহাহ হা/১১৬৩; ইবনে হিববান হা/৬৭৬১।

[38]. আবূদাঊদ হা/১১১০; তিরমিযী হা/৫১৪।

[39]. বুখারী হা/২০৯৫; মুসলিম হা/১১০৩।






বিষয়সমূহ: মসজিদ
আল্লাহর উপর ভরসা - মুহাম্মাদ আব্দুল মালেক
পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের কর্তব্য - রফীক আহমাদ - বিরামপুর, দিনাজপুর
আল্লামা আলবানী সম্পর্কে শায়খ শু‘আইব আরনাঊত্বের সমালোচনার জবাব (৪র্থ কিস্তি) - আহমাদুল্লাহ - সৈয়দপুর, নীলফামারী
জন্ম নিয়ন্ত্রণের কুফল ও বিধান - লিলবর আল-বারাদী - যশপুর, তানোর, রাজশাহী
ক্বিয়ামতের আলামত সমূহ (১ম কিস্তি) - মুহাম্মাদ আব্দুর রহীম
যাকাত ও ছাদাক্বা - আত-তাহরীক ডেস্ক
মানব জাতির প্রকাশ্য শত্রু শয়তান (২য় কিস্তি) - মুহাম্মাদ আব্দুল ওয়াদূদ
মুহাসাবা (২য় কিস্তি) - মুহাম্মাদ আব্দুল মালেক
ছাওম ও স্বাস্থ্য বিজ্ঞান - শামসুল আলম
কুরআন শিক্ষা ও তেলাওয়াতের ফযীলত - ইহসান ইলাহী যহীর
মানব জাতির সাফল্য লাভের উপায় (শেষ কিস্তি) - হাফেয আব্দুল মতীন - পিএইচ.ডি গবেষক, আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, মালয়েশিয়া
ঈছালে ছওয়াব : একটি তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ (শেষ কিস্তি) - মুহাম্মাদ আব্দুর রহীম
আরও
আরও
.