সারা দেশে এখন গ্রীষ্মের প্রচন্ড দাবদাহে জীবন ওষ্ঠাগত। প্রচন্ড গরম, তার ওপর বিদ্যুৎ-বিভ্রাট যেন মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা। এই গরমে শিশু-কিশোর, যুবক-যুবতী, বৃদ্ধ-বৃদ্ধা সবাই প্রতিনিয়তই কোন না কোন স্বাস্থ্য-সমস্যায় আক্রান্ত হচ্ছেন। একটু সতর্ক হ’লেই অস্বাভাবিক এ স্বাস্থ্য-সমস্যাগুলো রক্ষা পাওয়া যায়।

গরমে যেসব স্বাস্থ্য-সমস্যা হয় :

(১) ডিহাইড্রেশন বা পানিশূন্যতা (২) হিট স্ট্রোক (৩)  ডায়রিয়া (৪) গ্যাস্ট্রিক (৫) হজমে গোলমাল (৬) গরমজনিত ঠান্ডাজ্বর ইত্যাদি।

আবহাওয়ার তারতম্যের কারণে আমাদের শরীর থেকে ঘাম নিঃসৃত হয় এবং এই ঘামের সঙ্গে নিঃসৃত হয় সোডিয়াম ক্লোরাইড, যা আমাদের শরীরের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। গরমের দিনে এবং কঠিন পরিশ্রমে শরীর থেকে প্রায় তিন-চার লিটার ঘাম নিঃসৃত হয়। সে সঙ্গে লবণ বেরিয়ে যায়। ফলে শরীর পানিশূন্য হয়ে পড়ে।

করণীয় :

(১) এই গরমে পানি, তরলজাতীয় ও ঠান্ডা খাবার যেমন ডাব, লেবুর শরবত, খাবার স্যালাইন, তরমুজ, ঠান্ডা দুধ এবং সহজে হজম হয় এমন খাবার খেতে হবে।

(২) পূর্ণবয়স্ক মানুষকে দৈনিক কমপক্ষে পাঁচ লিটার (২০ গ্লাস) পানি পান করতে হবে।

(৩) ‘পানিশূন্যতা’ বা ডিহাইড্রেশন’ রোধ করতে বার বার পানি ও খাবার স্যালাইনের পাশাপাশি স্বাভাবিক সব খাবার গ্রহণ করতে হবে।

(৪) ‘হিট স্ট্রোক’ হ’লে বা রোগী অজ্ঞান হয়ে পড়লে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব হাসপাতালে নেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। রোগীর গা থেকে পোশাক-পরিচ্ছদ যত দূর সম্ভব সরিয়ে ফেলতে হবে। ঠান্ডা পানি দিয়ে বার বার শরীর মুছিয়ে দিতে হবে ও মাথা ধুয়ে দিতে হবে। যাতে শরীরের তাপমাত্রা কমে। সাধারণতঃ ভেজা কাপড় শরীরে জড়িয়ে রাখলে তাপমাত্রা দ্রুত কমে যায়। তাই বলে বরফ বা খুব ঠান্ডা পানিতে শরীর ডোবানো উচিত নয়। এতে হিতে বিপরীত হ’তে পারে।

(৫) পাতলা পায়খানা বা ডায়রিয়া হ’লে প্রতিবার পাতলা পায়খানার পর পর্যাপ্ত খাবার স্যালাইন ও তরলজাতীয় খাবার খেতে হবে। পাশাপাশি স্বাভাবিক সব খাবার খেতে হবে। পাতলা পায়খানা এমনিতেই বন্ধ হয়ে যাবে।

(৬) হজমে গোলমাল বা গ্যাস্ট্রিক থেকে রক্ষা পেতে তেলে ভাজা খাবার, বাইরের খাবার, অধিক ঝাল ও মশলাযুক্ত খাবার পরিহার করতে হবে।

(৭) পোশাকের ক্ষেত্রে হালকা সুতি ও আরামদায়ক কাপড় পরিধান করাই ভালো। ঘামে পোশাক ভিজে গেলে দ্রুত পাল্টে ফেলতে হবে। বার বার গোসল করা থেকে বিরত থাকতে হবে, নয়তো গরমজনিত ঠান্ডা বা জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

শিশুদের ক্ষেত্রে করণীয় :

(১) শিশুদের ঠান্ডা ও তরলজাতীয় খাবার বেশী করে খেতে দিতে হবে। (২) বাচ্চাকে ‘ফ্যান’ বা ‘এসি’ যেকোন একটিতে অভ্যস্ত করতে হবে। (৩) খাবার বেশী করে খেতে দিতে হবে। (৪) ঘামে ভেজা জামা দ্রুত পাল্টে ফেলতে হবে। (৫) বাচ্চার ডায়রিয়া বা বমি হ’লে হাসপাতালে নেওয়ার আগ পর্যন্ত বাসাতেই ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রতিবার পাতলা পায়খানার পর স্যালাইন, ভাতের পানি, চিঁড়ার পানি অল্প অল্প করে খাওয়াতে হবে। পাশাপাশি স্বাভাবিক সব খাবার খেতে দিতে হবে।

পরিবারের ছোট-বড় যে কেউ এই গরমে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়তে পারে। এই হঠাৎ অসুস্থতায় তাৎক্ষণিক করণীয় জানা থাকলে অনেক অনাকাংখিত পরিস্থিতি থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে ইনশাআল্লাহ।

ওষুধের যথেচ্ছ ব্যবহার রোগ ডেকে আনছে

অনেকে এন্টিবায়োটিক সেবনকে রোগ নিরাময়ের নিশ্চিত উপায় বলে মনে করেন। কিন্তু এন্টিবায়োটিকের যথেচ্ছ ব্যবহারের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ও পরিণতি সম্পর্কে খুব কম লোকই অবগত। মানুষ ওষুধের দোকানে গেলেই এন্টিবায়োটিক কিনতে পারে। কিন্তু একটু সুস্থবোধ করলেই পুরো কোর্স শেষ না করে ওষুধ সেবন বন্ধ করে দেয়। এতে করে ঔষধের কার্যকারিতা কমে যায় এবং রোগের কারণ সৃষ্টিকারী অণুজীবগুলো সেই ওষুধের কার্যকরিতার বিরুদ্ধে শক্তিশালী হয়ে ওঠে। অনেক সময় রোগীদের চাপে পড়ে এন্টিবায়োটিক দিতে বাধ্য হন চিকিৎসকরা। আবার হাতুড়ে ডাক্তাররা, এমনকি তথাকথিত অভিজ্ঞ চিকিৎসকরাও কিছু এন্টিবায়োটিক ওষুধের ব্যবস্থাপত্র দেন, যেগুলোর আসলে কোন প্রয়োজনীয়তাই নেই। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় প্রতিবছর ১ লাখ ৮০ হাযার রোগী পাওয়া যায়, যাদের ক্ষেত্রে এন্টিবায়োটিক কাজ করে না। এদের কারণে আরো প্রায় ৪০ কোটি মানুষ ঐ রোগের ওষুধ প্রতিরোধী জীবাণু সংক্রমণের ঝুঁকিতে থাকেন। এজন্য ব্যাপকভাবে জনসচেতনতা সৃষ্টি করা একান্ত যরূরী।

\ সংকলিত \






আরও
আরও
.