কোল্ড ড্রিঙ্কস থেকে সাবধান। সম্প্রতি একটি গবেষণা পত্রে প্রকাশিত হয়েছে যে, চিনির মাত্রা বেশী রয়েছে এমন ঠান্ডা পানীয় খেলে মায়ের শারীরিক ক্ষতি তো হয়ই, সেই সঙ্গে বাচ্চা জন্ম নেয়ার পর তার অ্যাস্থেমার মতো রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও বৃদ্ধি পায়।
আমেরিকান থোরাসিক সোসাইটির ম্যাগাজিনে প্রকাশিত এই স্টাডিটি চলাকালীন গবেষকরা লক্ষ্য করেছিলেন যে গর্ভাবস্থায় যে মায়েরা বেশী মাত্রায় কোল্ড ড্রিঙ্কস খেয়ে থাকেন, তাদের বাচ্চারা জন্ম নেয়ার ৭-৯ বছরের মধ্যে ক্রণিক অ্যাস্থেমায় আক্রান্ত হয়। তাই আপনার বাচ্চাকে যদি সুন্দর, স্বাস্থ্যকর ভবিষ্যত উপহার দিতে চান, তাহ’লে ভুলেও এই নয় মাসে একবারও কোল্ড ড্রিঙ্কস চেখে দেখবেন না।
কোল্ড ড্রিঙ্কসের সঙ্গে যে কেবল অ্যাস্থেমা রোগেরই যোগ রয়েছে এমন নয়। একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত এমন পানীয় পান করলে আরো নানা ধরনের রোগও হ’তে পারে। তাই এই বিষয়ে জনসাধারণকে সচেতন করতে গত কয়েক দশক ধরে চিকিৎসকেরা বলে আসছেন যে কোল্ড ড্রিঙ্কস শরীরের পক্ষে ভালো নয়। তবুও মানুষ তা আমলে নিচ্ছে না। কোল্ড ড্রিঙ্কসের কিছু ক্ষতিকর দিক নিম্নে তুলে ধরা হ’ল।-
এক বোতল কোল্ড ড্রিঙ্কস খেলে আমাদের শরীরে প্রায় ১৪০ গ্রাম ক্যালরি প্রবেশ করে। এই পরিমাণ ক্যালরিকে বার্ন করার জন্য যে মাত্রায় শরীরচর্চা করা উচিত, তা আমাদের মধ্যে ক’জনই বা করেন? ফলে শরীরের জমতে থাকা এই অতিরিক্ত ক্যালরি এক সময়ে গিয়ে ওযন বৃদ্ধির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। আর ওযন বাড়লে কী হ’তে পারে তা নিশ্চয় সবারই জানা। অনেকে বলেন, ডায়েট সোডায় যেহেতু চিনি থাকে না, তাই এটি খেলে শরীরের কোন ক্ষতিই হয় না। এই ধরণা একেবারে ভুল। কারণ একাধিক গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে, ডায়েট সোডায় চিনি না থাকলেও এমন কিছু উপাদান থাকে, যা আমাদের শরীরের পক্ষে একেবারেই ভালো নয়। শুধু তাই নয়, মাত্রাতিরিক্ত ডায়েট সোডা খেলে শরীরের একাধিক অঙ্গের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কাও বৃদ্ধি পায়, ফলে নানাবিধ জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বহুগুণে বৃদ্ধি পায়।
কোল্ড ড্রিঙ্কস খেলে কিভাবে আমাদের শরীরের ক্ষতি হয়?
১. রক্তচাপ বেড়ে যায় : ডায়েট সোডা এবং কোল্ড ড্রিঙ্কসে সোডিয়ামের পরিমাণ খুব বেশী থাকে। তাই এমন ধরনের পানীয় অধিক মাত্রায় খেলে শরীরে সোডিয়ামের মাত্রা খুব বেড়ে যায়। ফলে ব্লাড প্রেসার বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা থাকে। এ কারণেই প্রেসারের রোগীদের কোল্ড ড্রিঙ্কস খেতে নিষেধ করেন চিকিৎসকেরা।
২. দাঁতের ক্ষতি হয় : ডায়েট সোডায় অ্যাসিডিক এলিমেন্ট খুব বেশী থাকে। যে কারণে এই ধরনের পানীয় খেলে দাঁতের ক্ষয় হ’তে শুরু করে। সেই সঙ্গে নানাবিধ দাঁতের রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও বৃদ্ধি পায়। চিকিৎসকেরা এই গরমে নিয়মিত মধু এবং দারুচিনি খেতে বলেছেন।
৩. ওযন বৃদ্ধি করে : এই ধরনের পানীয়তে ক্যালোরির মাত্রা খুব বেশী থাকে। ফলে কোল্ড ড্রিঙ্কস বা ডায়েট সোডা বেশী মাত্রায় খেলে ওযন বৃদ্ধির সম্ভবনা বহুগুণে বৃদ্ধি পায়। সেই সঙ্গে হজম ক্ষমতা বিগড়ে যাওয়ার কারণে আরো নানা ধরনের রোগের প্রকোপও বৃদ্ধি পায়।
৪. কিডনির কর্মক্ষমতা কমে যায় : বেশী মাত্রায় কোল্ড ড্রিঙ্কস বা ডায়েট সোডা খেলে কিডনি ফাংশন ব্যাহত হয়। সেই সঙ্গে কিডনি স্টোনের আশঙ্কাও বৃদ্ধি পায়। আর এই ধরনের পানীয়, ইউরিনে অ্যাসিড এবং খনিজের ভারসাম্যকে নষ্ট করে দেয়। যে কারণে কিডনি স্টোন হওয়ার আশঙ্কা বৃদ্ধি পায়।
৫. কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি পায় : প্রতিদিন কোল্ড ড্রিঙ্কস খেলে চোখে পড়ার মতো কোলেস্টেরলের বৃদ্ধি ঘটে। ফলে হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কা বাড়ে। শুধু তাই নয়, একাধিক কেস স্টাডি করে দেখা গেছে, কোল্ড ডিঙ্কস খাওয়ার সঙ্গে স্ট্রোকেরও একটা যোগ রয়েছে।
৬. হার্টের রোগ হওয়ার আশঙ্কা বৃদ্ধি পায় : প্রতিদিন ২ ক্যান কোল্ড ড্রিঙ্কস খেলে হার্টের রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা প্রায় ৩০ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। আর হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কা বৃদ্ধি পায় প্রায় ৫০ শতাংশ। তাই এমন ধরনের পানীয় হয়তো তেষ্টা মেটায়, মানসিক শান্তিও দেয়। কিন্তু বাস্তবে তা হার্টকে একেবারে অকেজো করে দেয়।
৭. টাইপ-২ ডায়াবেটিস হ’তে পারে : ঠান্ডা পানীয় পান মানেই লাইফ স্টাইল ডিজিজে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বৃদ্ধি পাওয়া, এই ধারণাটি বাস্তবিকই সত্য। কারণ বেশ কিছু গবেষণাপত্র ইতিমধ্যেই একথা প্রমাণ করেছে যে, কোল্ড ড্রিঙ্কস খেলে শুধু কোলেস্টেরল বা হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কাই বাড়ে না, সেই সঙ্গে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও বহুগুণে বৃদ্ধি পায়। কোল্ড ড্রিঙ্কসে প্রচুর মাত্রায় আর্টিফিশিয়াল সুইটনার ব্যবহার করা হয়, যা নানা দিক থেকে টাইপ-২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার পথকে প্রশস্ত করে।
৮. শরীরের অস্বস্তি বেড়ে যায় : কোল্ড ড্রিঙ্কের সঙ্গে অ্যালকোহল মিলিয়ে পান করলে শরীরের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ে। তাছাড়া ডায়েট সোডায় এসপার্থেম নামে একটি উপাদান থাকে, যা শরীরের পক্ষে মারাত্মক ক্ষতিকারক। তাই ঠান্ডা পানীয় খাওয়ার আগে একবার ভাববেন, আপনি বিষ পান করছেন না তো!
৯. কোষের মারাত্মক ক্ষতি হয় : ডায়েট সোডা এবং বেশীরভাগ কোল্ড ড্রিঙ্কসেই সোডিয়াম বেঞ্জোএট নামে একটি উপাদান থাকে, যা কোষের মারাত্মক ক্ষতি সাধন করে।
১০. শরীরে পানির ঘাটতি দেখা দেয় : এই ধরনের পানীয়তে এমন কিছু উপাদান থাকে, যা শরীরে প্রবেশ করা মাত্র মস্তিষ্কের কাছে সিগনাল যায় যে শরীরে পানির অভাব দেখা দিয়েছে। ফলে একের পর এক নানা ধরনের সমস্যা দেখা দিতে শুরু করে।
১১. হাড়ের রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে : কোল্ড ড্রিঙ্কসের স্বাদ বাড়াতে তাতে ফসফরিক অ্যাসিড নামে একটি উপাদান ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এই উপাদানটির মাত্রা শরীরে বৃদ্ধি পেলে ক্যালসিয়ামের মাত্রা কমতে শুরু করে। আর ক্যালসিয়ামের সঙ্গে যেহেতু হাড়ের স্বাস্থ্যের সরাসরি যোগ রয়েছে, তাই এমনটা হ’লে স্বাভাবিকভাবেই হাড়ের ক্ষতি হ’তে শুরু করে।