মানুষের দেহ রহস্যাবৃত। কয়েক ট্রিলিয়ন (১০০ বিলিয়ন= এক ট্রিলিয়ন) ছোট ছোট জীবন্ত তুলতুলে বস্ত্ত দিয়ে মানুষের শরীর গঠিত। এই তুলতুলে বস্ত্তগুলোর নাম কোষ। আর প্রত্যেক কোষের চারপাশে অন্তত ১০টি ব্যাকটেরিয়া থাকে। আকারে খুবই ছোট্ট হওয়ায় এদের খালি চোখে দেখা যায় না। একমাত্র শক্তিশালী অণুবীক্ষণ যন্ত্রেই এদের দেখা সম্ভব।
অন্য জীবন্ত প্রাণীর মতোই ব্যাকটেরিয়ারাও খাওয়া-দাওয়া করে। বংশ বিস্তার করে এবং তারপর মারা যায়। আমাদের দেহের ঘামের বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ কিংবা নাড়িভুঁড়ির (ক্ষুদ্রান্ত্র) লবণ খেয়ে বেঁচে থাকে ব্যাকটেরিয়ারা। সেই সঙ্গে তৈরি করে একগাদা আবর্জনা। এসব আবর্জনার কারণেই শরীর ও মুখ থেকে বিশ্রি দুর্গন্ধ সৃষ্টি হয়।
অনেকে মনে করছেন তাহলে ওইসব ব্যাক্টেরিয়ার কারণেই বার বার শরীর অসুস্থ হয়। একথাটাও পুরো সত্য নয়। আসলে জন্মের সময়ই মায়ের কাছ থেকে সবার দেহে ব্যাকটেরিয়া আসে। বেশিরভাগ ব্যাকটেরিয়া বছরের পর বছর দেহে বসবাস করে কোন ক্ষতি না করেই। প্রতিদিন খাবার আর পানির সঙ্গেও আমরা অসংখ্য ব্যাকটেরিয়া খাচ্ছি। অনেক ক্ষেত্রে আমাদের সুস্থতার জন্য ওদের দরকার। কিছু ব্যাকটেরিয়া দিয়ে টিকা আর ওষুধ তৈরি হয়।
প্রত্যেকটি মানুষের হাতের ছাপ আলাদা হয় এটা সবার জানার কথা। সেরকম সব মানুষের ব্যাকটেরিয়া বা অণুজীবও আলাদা। দেহে অসংখ্য প্রজাতির ব্যাকটেরিয়া থাকলেও এদের মধ্যে চারটি বিখ্যাত। সেগুলো হলো:
১. অ্যাকটিনোমাইকোসিস ভিসকোসাস : এই ব্যাক্টেরিয়ার কারণেই দাঁতে বাদামি থকথকে প্যাক জমে মুখে দুর্গন্ধ হয়। দাত ক্ষয়ে যায়। যন্ত্রপাতি দিয়ে দাঁতের চিকিৎসক যখন প্যাক তোলেন, তখন তিনি আসলে মুখে বাস করা এই ব্যাকটেরিয়াদের আক্রমণ করেন।
২. ই কোলাই : এ অণুজীবের বাস নাড়িভুঁড়ির ভেতরে। এরা সব সময়ই কাজে ব্যস্ত। উপকারী ই কোলাই আমাদের দেহের প্রয়োজনীয় ভিটামিন তৈরি করে। আর ক্ষতিকর ই কোলাইর কারণে সারাদিন বমিও হতে পারে।
৩. মিথেনোজেনস : বিশ্বের অর্ধেক মানুষের নাড়িভুঁড়িতে এই অণুজীব বাস করে। মানুষসহ সব প্রাণীদেহে এরা মিথেন গ্যাস তৈরি করে। পেটের এ গ্যাস বাইরে বের হলে দুর্গন্ধ পাওয়া যায়।
৪. ব্রেভিব্যাকটেরিয়াম লিলেনস : এ বিশ্রী গন্ধের অণুজীবগুলো থাকে ঘামের মধ্যে। এদের কারণেই জুতা খুললেই ভক করে নাকে দুর্গন্ধ লাগে।