শীতকালীন বাজার নানা শাক-সবজিতে ভরপুর। পুষ্টিগুণে শীতের শাক-সবজির জুড়ি নেই। শরীরের প্রয়োজনীয় যাবতীয় ভিটামিন ও মিনারেলস রয়েছে শীতকালীন সতেজ শাক-সবজিতে। তাই শরীরকে ফিট রাখতে প্রয়োজন নিয়মিত শাক-সবজি গ্রহণ। কিছু জনপ্রিয় শীতকালীন সবজির উপকারিতা। নিম্নে উল্লেখ করা হ’ল।-

মুলা : সাধারণত দু’রকমের মুলা আমাদের দেশে বেশী জন্মায়। সাদা ও লাল মুলা। মুলা কাঁচা এবং রান্না উভয় অবস্থায় খাওয়া যায়। সালাদে ব্যবহার করা যায়। মুলায় প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-সি থাকে। আর মুলার পাতায় ‘এ’ ভিটামিনের পরিমাণ প্রায় ছয়গুণ বেশী। মুলাতে পাওয়া যায় বিটা ক্যারোটিন। যা হৃদরোগের ঝুঁকি অনেকাংশে হ্রাস করে। মুলা বিভিন্ন ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করে, শরীরের ওযন হ্রাস করে, আলসার ও বদহজম দূর করতে সাহায্য করে থাকে এবং কিডনি ও পিত্তথলিতে পাথর তৈরি প্রতিরোধ করে।

ফুলকপি : শীতের খুবই সুস্বাদু একটা সবজি হ’ল ফুলকপি। ফুলকপিতে রয়েছে প্রয়োজনীয় পরিমাণে ভিটামিন ‘এ’, ‘বি’ ও ‘সি’। এতে আয়রন রয়েছে উচ্চমাত্রায়। আমাদের শরীরে রক্ত তৈরিতে আয়রন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। সাধারণত গর্ভবতী মা, বাড়ন্ত শিশু এবং যারা অতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রম করে তাদের জন্য ফুলকপি বেশ উপকারী। ফুলকপি কোলেস্টেরল মুক্ত। এতে চর্বি নেই। ফুলকপি পাকস্থলির ক্যান্সার প্রতিরোধে বিশেষ কার্যকরী। এছাড়া মূত্রথলি ও প্রোস্টেট, স্তন ও ডিম্বাশয় ক্যান্সার প্রতিরোধে ফুলকপি বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। ফুলকপিতে থাকা প্রয়োজনীয় পরিমাণে ভিটামিন-‘এ’ ও ‘সি’ শীতকালীন বিভিন্ন রোগ যেমন জ্বর, কাশি, সর্দি ও টনসিল প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা রাখে। ফুলকপির ভিটামিন ‘এ’ চোখের জন্যও প্রয়োজনীয়।

বাঁধাকপি : শীতকালীন সবজির মধ্যে বাঁধাকপি একটি সুস্বাদু সবজি। বাঁধাকপিতে শর্করা, ভিটামিন, মিনারেল, এমাইনএসিড এবং প্রচুর পানি আছে। বাঁধাকপিতে আছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ‘সি’ ও ‘ই’। বাঁধাকপিতে উপস্থিত ভিটামিন ‘সি’ শরীরের হাড়কে শক্ত ও মযবূত রাখে। এর মাধ্যমে বয়সজনিত হাড়ের সমস্যা থেকে অনেকাংশে রক্ষা পাওয়া যায়। ওযন কমাতে সহায়ক খাবার বাঁধাকপি। এতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকায় ওযন কমানোর ক্ষেত্রে নিয়মিত এর সালাদ খাওয়ার বিকল্প নেই। বাঁধাকপি আলসার প্রতিরোধেও কার্যকরী ভূমিকা রাখে।

শিম : শীতকালীন সবজি শিম একটি সুস্বাদু, পুষ্টিকর, আমিষের একটি ভালো উৎস। শিমের পরিপক্ব বীজে প্রচুর আমিষ ও স্নেহজাতীয় পদার্থ আছে। এতে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন, খনিজ পদার্থ, পানি, অ্যান্টি অক্সিডেন্ট ও পানি। শিমের আঁশ-জাতীয় অংশ খাবার পরিপাকে সহায়তা করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য অনেকাংশে দূর করে। শিম সাধারণত ডায়রিয়ার প্রকোপ কমায়। রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়। শিম শিশুদের অপুষ্টি দূর করে। শিমের ফুল রক্ত আমাশয়ের চিকিৎসায় ব্যবহার করা যায়।

গাজর : গাজর পুষ্টিকর, সুস্বাদু ও খাদ্য আঁশসমৃদ্ধ শীতকালীন সবজি, যা এখন প্রায় সারা বছরই পাওয়া যায়। তরকারি বা সালাদ হিসাবে এই সবজি খাওয়া যায়। এতে আছে বিটা ক্যারোটিন, যা দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখে। অন্যান্য উপাদানগুলো অন্ত্রের ক্যান্সার প্রতিরোধ করে, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। গাজরে উপস্থিত ক্যারোটিনয়েড ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে।

টমেটো : ক্যালরিতে ভরপুর এই সবজিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-সি। কাঁচা-পাকা উভয় অবস্থাতে টমেটো খাওয়া যায়। এতে উপস্থিত ভিটামিন-সি ত্বক ও চুলের রুক্ষভাব দূর করে, ঠান্ডাজনিত রোগ ভালো করে। যেকোন চর্মরোগ প্রতিরোধ করে। টমেটোতে রয়েছে লাইকোপিন, যা শরীরের মাংস পেশীকে মযবূত করে, দেহের ক্ষয় রোধ করে, দাঁতের গোড়াকে করে আরও শক্তিশালী এবং চোখের পুষ্টি জোগায়।

পালংশাক : পালংশাক উচ্চমানের পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর একটি শীতকালীন সবজি। পালংশাকে প্রচুর পরিমাণে ফলিক অ্যাসিড, ক্যালসিয়াম ও আয়রন আছে। তাই আর্থ্রাইটিস প্রতিরোধ ছাড়াও এটা হৃদরোগ এবং কোলন ক্যান্সার প্রতিরোধে ভূমিকা রাখে। পালংশাকের উপাদান সমূহ ক্যান্সার, বিশেষ করে ত্বকের ক্যান্সার, প্রস্টেট ক্যান্সার ও ওভারিয়ান ক্যান্সার প্রতিরোধ করে। তাছাড়া পালংশাক হাড়কে মযবূত করে তুলতে, শরীরের কার্ডিওভাস্কুলার সিস্টেম ও মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে।

ব্রোকলি : কপিজাতীয় শীতকালীন সবজি হিসাবে ব্রোকলি বর্তমানে আমাদের দেশে চাষ করা হচ্ছে। ব্রোকলিতে প্রচুর পরিমাণে আয়রন ও ক্যালসিয়াম বিদ্যমান। ব্রোকলি অত্যন্ত উপাদেয়, সুস্বাদু ও পুষ্টিকর একটি সবজি। এটি চোখের রোগ, রাতকানা, অস্থি বিকৃতি প্রভৃতির উপসর্গ দূর করে ও বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।

ধনেপাতা : ধনে পাতায় থাকা ভিটামিন ‘সি’, ‘এ’ এবং ফলিক এসিড ত্বকে প্রতিদিনের পুষ্টি জোগায় এবং চুলের ক্ষয়রোধ করে। এটি মুখ গহ্বরের ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই করে। ধনে পাতার ভিটামিন ‘এ’ চোখের পুষ্টি জোগায়, রাতকানা রোগ দূর করতে ভূমিকা রাখে। কোলেস্টেরলমুক্ত ধনেপাতা দেহের চর্বির অপসারনে সহায়তা করে। এতে উপস্থিত আয়রন রক্ত তৈরিতে সাহায্য করে এবং রক্ত পরিষ্কার রাখে। ধনেপাতা হাড়ের ভঙ্গুরতা দূর করে শরীরকে শক্ত-সামর্থ্য করে। তবে ধনেপাতা রান্নার চেয়ে কাঁচা খেলে উপকার বেশী পাওয়া যায়। অ্যালঝেইমারস নামে এক ধরনের মস্তিষ্কের রোগ রয়েছে, যা নিরাময়ে ধনে পাতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ধনে পাতা শীতকালীন ঠোঁট ফাঁটা, ঠান্ডা লাগা, জ্বর জ্বর ভাব দূর করতে যথেষ্ট অবদান রাখে।

আমাদের প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় যে খাবারগুলো থাকে তার মধ্যে শাক-সবজিতেই বেশী উপকার পাওয়া যায়। তাই আমাদের যতবেশী সম্ভব শাক-সবজি খাওয়ায় অভ্যস্ত হ’তে হবে। তবে স্মরণ রাখা উচি যে, উচ্চতাপ বা চড়া আঁচে খাবার তৈরি করলে সবজির পুষ্টিগুণ কমে যায়। শাক, টমেটো হাইফেমে সিদ্ধ করে পানি ঝরিয়ে ফেললে পুষ্টি রঙ ও বুনন ঠিক থাকে। অন্যদিকে নরম সবজি যেমন- ব্রোকলি, ফুলকপি, গাজর ও শতমূলী সিদ্ধ করার চেয়ে ভাপে রান্না করা ভালো। স্বাদের সঙ্গে বজায় থাকে পুষ্টিও। \ সংকরিত \







আরও
আরও
.