প্রস্রাবে
ইনফেকশনের সমস্যায় নারী-পুরুষ ও ছোট-বড় সবাই ভোগেন। আবার অনেকেই প্রাথমিক
অবস্থায় এই সংক্রমণের বিষয় টের পান না। ফলে এর মাত্রাতিরিক্ত প্রভাব পড়ে
শরীরে। দীর্ঘ দিনের প্রস্রাব সংক্রমণে বাড়তে পারে লিভার ও কিডনির নানা রোগ।
সারাদিন যত পানি পান করা হয় সবই লিভার ও কিডনি ছেঁকে মূত্রনালি দিয়ে বের
হয়ে যায়। সবার শরীরেই দু’টি কিডনি, দু’টি ইউরেথ্রার, একটি ইউরিনারী ব্লাডার
(মূত্রথলি) ও ইউরেথ্রা (মূত্রনালী) নিয়ে রেচনতন্ত্র গঠিত। এই রেচনতন্ত্রের
যেকোন অংশে যদি সংক্রমণ ঘটে তাহ’লে তাকে ‘ইউরিনারি ট্রাক্ট ইনফেকশন’ বলা
হয়। কিডনি, মূত্রনালি, মূত্রথলি বা একাধিক অংশে একই সঙ্গে এ ধরনের সংক্রমণ
হ’তে পারে। এই সংক্রমণকেই সংক্ষেপে ‘ইউরিন ইনফেকশন’ বলা হয়। সাধারণত সবারই
এই সমস্যাটি হ’তে পারে। তবে নারীদের মধ্যে ইউরিন ইনফেকশনে আক্রান্ত হওয়ার
প্রবণতা বেশী।
প্রাথমিক লক্ষণ : যেসব লক্ষণ দেখে ইউরিন ইনফেকশনে আক্রান্ত বিষয়টি বোঝা যায় তা নিম্নরূপ :
(১) প্রস্রাব গাঢ় হলুদ বা লালচে হওয়া (২) প্রস্রাবে দুর্গন্ধ (৩) বারবার প্রস্রাবের বেগ অনুভব করা (৪) ঠিকমতো প্রস্রাব না হওয়া (৫) প্রস্রাব করার সময় জ্বালাপোড়া বা ব্যথা অনুভব করা (৬) তলপেটে ও পিঠের নিচে প্রচন্ড ব্যথা হওয়া (৭) শরীরে জ্বর জ্বর ভাব (৮) কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসা, বমি ভাব ও বমি হওয়া ইত্যাদি।
যাদের হ’তে পারে :
এ সমস্যা যেকোন বয়সে নারী, পুরুষ সবারই হ’তে পারে। মূত্রাশয়ের সমস্যা মানুষকে নার্ভাস করে ফেলে। বিশেষ করে অপরিচিত কোথাও গেলে বা ভ্রমণকালে অথবা অচেনা মানুষ সাথে থাকলে তো কথাই নেই! এই সমস্যায় মানুষ সংকোচ বা লজ্জা বোধ তো করেই, এমনকি এ সমস্যা নিয়ে সরাসরি কারো সাথে কথাও বলতে চান না। মূত্রাশয়ের এই ‘ইনফেকশন’ বা সংক্রমণ বেশী দিন ধরে বয়ে বেড়ালে এথেকে জটিল অসুখও হ’তে পারে।
যৌনমিলনে সংক্রমণ জীবাণুমুক্ত মূত্রনালি ও মূত্রাশয় ব্যাকটেরিয়ায় সংক্রমিত হ’লে মূত্রাশয়ে জ্বালা এবং ব্যথা হয়। জীবাণু সাধারণত পাকস্থলী ও অন্ত্রের নীচের অংশে থাকে, যা যৌনমিলনের সময় ছড়িয়ে পড়তে পারে। জীবাণু মূত্রনালি দিয়ে মূত্রাশয়ে ঢুকলে সাধারণত প্রস্রাবের সঙ্গে বের হয়ে যায়। তবে জীবাণু বংশবিস্তার শুরু করলে মূত্রাশয়ে সংক্রমণ ঘটে। তাই বিশেষজ্ঞের পরামর্শ, সহবাসের পর জীবাণু ধুয়ে ফেলার জন্য প্রস্রাব করা এবং পরিষ্কার করা উচিত।
নারীরাই ভোগেন বেশী :
মূত্রাশয়ের সংক্রমণের ঝুঁকি পুরুষদের তুলনায় নারীদেরই বেশী। জার্মান একটি জরিপের ফলাফলে জানানো হয়েছে, এ দেশে প্রতি দু’জনের একজন মহিলা জীবনে অন্তত একবার মূত্রাশয়ের সংক্রমণে আক্রান্ত হন। এই সংক্রমণ সাধারণত ব্যাকটেরিয়ার কারণেই হয়ে থাকে। আর একবার যে নারীর এই ইনফেকশন হয়, পরবর্তীতেও তাঁর এই সংক্রমণ হওয়ার আশঙ্কা থাকে। মূত্রনালি পুরুষদের ২০ এবং নারীদের ৪ সেন্টিমিটার হওয়ার ফলে পরিষ্কার রাখা কষ্টসাধ্য হয়।
পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা খুবই যরূরী :
ইউরিন ইনফেকশন থেকে বাঁচার জন্য পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বিশেষ যরূরী। বিশেষ করে মেয়েদের ক্ষেত্রে। পরনের প্যান্টি আন্ডার প্যান্টস বা সিলপ সুতি কাপড়ের হওয়া উচিত। যাতে বাতাস চলাচল করতে সুবিধা হয়। পলিয়েস্টার কাপড়ের তৈরি অন্তর্বাস সহজেই গোপন জায়গায় জীবাণু ছড়াতে পারে, হ’তে পারে ছত্রাকও। তাছাড়া প্রস্রাবের বেগ হওয়া সত্ত্বেও দীর্ঘ সময় প্রস্রাব ধরে বা আটকে রাখা এ রোগ হওয়ার আরো একটি কারণ।
প্রস্রাবে ইনফেকশনের ঘরোয়া প্রতিকার :
প্রস্রাবে ইনফেকশনের লক্ষণ দেখলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবন করুন। পাশাপাশি নিম্নোক্ত কয়েকটি ঘরোয়া প্রতিকারও অনুসরণ করতে পারেন।
(১) দিনে অবশ্যই ২-৩ লিটার পানি খান। প্রসাবে হলুদ ভাব দেখলেই প্রচুর পরিমাণে পানি খেতে হবে। সাধারণত প্রতি ৪-৫ ঘণ্টা পরপর প্রস্রাব হওয়া উচিত। এরও বেশী সময় ধরে প্রস্রাব না হ’লে বেশী করে পানি খান।
(২) পর্যাপ্ত ভিটামিন-সি খেতে হবে। চিকিৎসকরা এক্ষেত্রে রোগীদেরকে দৈনিক ৫০০০ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি খাওয়ার পরামর্শ দেন। ভিটামিন সি মূত্রথলি ভালো রাখে ও প্রস্রাবের সময় জ্বালা ভাব কমায়। এছাড়াও ভিটামিন সি ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে।
(৩) ইউরিন ইনফেকশন হ’লে বেশী পরিমাণে আনারস খাওয়া উচিত। এতে আছে ব্রোমেলাইন নামক একটি উপকারী অ্যানজাইম। গবেষণায় দেখা গেছে, ইউরিন ইনফেকশনে আক্রান্ত রোগীদেরকে সাধারণত ব্রোমেলাইন সমৃদ্ধ অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হয়। তাই ইউরিন ইনফেকশন হ’লে প্রতিদিন এক কাপ আনারসের রস খান।
(৪) ইউরিন ইনফেকশনের কয়েকদিনের মধ্যেই সংক্রমণ কিডনিতে ছড়িয়ে পড়ে। তাই যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসা করানো যরূরী।
(৫) বেকিং সোডা দ্রুত ইউরিন ইনফেকশন সারিয়ে তুলতে সাহায্য করে। এজন্য আধা চামচ বেকিং সোডা এক গ্লাস পানিতে ভালো করে মিশিয়ে দিনে একবার খেলেই প্রস্রাবের জ্বালা ও ব্যথা কমে যাবে।
\ সংকলিত \