আমাদের দেশে
সারা বছরই কমবেশী শাক-সবজি, ফলমূল ইত্যাদি জন্মে। তবে পুষ্টি আর স্বাদের
দিক দিয়ে এসবের মধ্যে কিছুটা পার্থক্য রয়েছে। শীতকালে বেশী পাওয়া যায়
ফুলকপি, বাঁধাকপি, ওলকপি, মূলা, গাজর, শালগম, সীম, টমেটো, পেঁয়াজ কালি,
মটরশুঁটি, লালশাক, পালংশাক ইত্যাদি। মৌসুমে এসবের স্বাদ যেমন বেশী থাকে,
তেমনি পুষ্টিগুণও থাকে অন্যান্য সময়ের তুলনায় বেশী।
লালশাক : চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের মতে, যেসব শাকে প্রচুর ক্যালসিয়াম রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম হ’ল লালশাক। এই শাক শিশুদের অতিপ্রিয়। প্রতি ১০০ গ্রাম লাল শাকে ক্যালসিয়ামের পরিমাণ প্রায় ৩৮০ মিলিগ্রাম। যেখানে মূলা শাকে রয়েছে প্রায় ২৮ মিলিগ্রাম, পুঁইশাকে প্রায় ১৬৫ মিলিগ্রাম, ডাঁটা শাকে প্রায় ৮০ মিলিগ্রাম। ক্যালসিয়াম ছাড়া লালশাকে অন্যান্য যে পুষ্টি উপাদান আছে তাও অন্যান্য শাক-সবজির তুলনায় বেশী।
পালংশাক : পালংশাকও কম ক্যালরী এবং অধিক ভিটামিন ও মিনারেলযুক্ত একটি গাঢ়সবুজ শাক। এটি দৃষ্টিশক্তি বাড়ায়, চোখের নানা রকম রোগ নিরাময়ে সাহায্য করে। বাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে রাখে, শরীরের রক্ত চলাচল ঠিক রাখে, হাইপার টেনশন কমায়, ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখে ও প্রতিরোধ করে। তাছাড়া এতে প্রচুর ভিটামিন ‘সি’ থাকায় ভিটামিন সি-এর অভাব জনিত রোগ দূর করে।
মটরশুঁটি : মটরশুঁটির প্রতি ১০০ গ্রামে আছে প্রায় ৭০ ক্যালরী। অথচ অন্যান্য সবজিতে ৪০ ক্যালরীর বেশী থাকে না। কোন কোন সবজিতে ১০০ গ্রামে ক্যালরী থাকে মাত্র প্রায় ২০। মিষ্টি আলুতে প্রতি ১০০ গ্রামে ক্যালরী আছে প্রায় ১০।
ফুলকপি : ফুলকপিকে বলা হয় উচ্চমাত্রার পুষ্টিকর সবজি। এতে রয়েছে ভিটামিন ‘এ’ ও ‘সি’, ক্যালসিয়াম, ফলিক অ্যাসিড, পানি। এছাড়া এতে এমন কিছু উপাদান আছে যা ক্যান্সারের বিরুদ্ধেও লড়াই করে। এর গুণ এতই বেশী যে, কিডনির পাথর গলিয়ে দেয়ারও যাদুকরী ক্ষমতা আছে।
বাঁধাকপি : বাঁধাকপি ভিটামিন ‘সি’ এবং ভিটামিন ‘কে’ সমৃদ্ধ সবজি। বাঁধাকপির ভেতরের আবরণের তুলনায় বাইরের সবুজ আবরণে প্রচুর মিনারেলস রয়েছে। এই সবজি রান্না করে এবং কাঁচা সালাদ হিসাবেও খাওয়া যায়। এটি রক্তের কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। বিশেষ করে রক্তে খারাপ কোলেস্টেরল বা এলডিএলের মাত্রা কমায়। এটি কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সহায়তা করে। এছাড়া বাঁধাকপির রস ত্বকের শুষ্কভাব দূর করে।
শীতকালীন সবজিতে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম, বিটা-ক্যারোটিন, ম্যাগনেসিয়াম, আয়রন, ফলিক অ্যাসিড, অ্যান্টি অক্সিডেন্ট, অাঁশ ইত্যাদি রয়েছে। সবজির অাঁশ রক্তের ক্ষতিকর এলডিএল হ্রাস করে। টমেটো ও টমেটোজাত খাদ্য, পালংশাক, মিষ্টি আলু ইত্যাদি প্রচুর পরিমাণে খেলে রক্তচাপ স্বাভাবিক থাকে। এসব শাকসবজি অস্থি ক্ষয় রোধেও পালন করে ব্যাপক ভূমিকা। উন্নত বিশ্বের মানুষ বর্তমানে প্রচুর পরিমাণে এসব খাচ্ছে। কারণ ঐসব দেশের মানুষের উচ্চ রক্তচাপ, স্ট্রোক ইত্যাদি রোগের ঝুঁকি বা জটিলতা বাড়ছে। নারীর গর্ভকালীন সময়ে এসব খাবার মা ও নবজাতক শিশুর জন্য খুবই উপযোগী। এসব খাবার শরীরের রক্তকণিকা বা পাটিলেট গঠনে যথেষ্ট ভূমিকা রাখে। শীতকালীন শাক-সবজি পর্যাপ্ত খেলে মুটিয়ে যাওয়া বা মেদ-ভূড়ি সমস্যাও কমায়। এক্ষেত্রে কাজ করে এসবের ভিটামিন ‘ই’। এ জাতীয় ভিটামিন মানে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট। এসব উপাদান বার্ধক্য রোধেও কাজ করে। অনেক দেশের মানুষ বার্ধক্য রোধে এসব প্রাকৃতিক খাবার খুব বেশী খাচ্ছে। আজকাল বার্ধক্য রোধে যেসব ভেষজ ওষুধ তৈরী হচ্ছে সেসবেও থাকে এসব উপাদান। তবে ভেষজ ওষুধ না খেয়ে সরাসরি এসব শাক-সবজি খাওয়াই বেশী ফলদায়ক। এসব শাকসবজি দামেও ওষুধের তুলনায় যথেষ্ট কম। এসবের ভিটামিন ‘সি’ মাড়ি ও দাঁত সুস্থ রাখে। এর ভিটামিন ‘কে’ রক্ত সঞ্চালন স্বাভাবিক রাখে। বিটা ক্যারোটিন থেকে তৈরি হয় ভিটামিন ‘এ’ যা চক্ষু ও ত্বকের স্বাস্থ্যের জন্য এবং সংক্রমণ প্রতিরোধে বিশেষ উপযোগী। আমেরিকান জার্ণাল অব নিউট্রেশনে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ক্যারোটি নোয়েড-সমৃদ্ধ খাবার করোনারি হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। এদিকে সুইডিশ গবেষকরা বলেছেন, এই উপাদান অর্ধেক কমিয়ে আনে পাকস্থলী ক্যান্সারের ঝুঁকি। পুঁই, পালং ইত্যাদি শাকে এসব থাকে প্রচুর পরিমাণে। গাজর, বিট আর শশার সালাদ শরীরের সব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের জন্য বিশেষ হিতকর। লাউশাক, নটশাক, মিষ্টিকুমড়া প্রভৃতি শাকেও রয়েছে প্রচুর ভিটামিন। বড়দের পাশাপাশি শিশুদের এ জাতীয় শাক-সবজি প্রচুর খাওয়ানোর অভ্যাস করাতে হবে। এসব খাবার রাতকানা সমস্যাও দূর করে। শিশু জন্মের পর তার শরীরে ভিটামিন ‘এ’-এর খুব একটা ঘাটতি হয় না; কিন্তু বড় হওয়ার সাথে সাথে খাদ্যের নানা উপাদানের ঘাটতি বাড়তে থাকে। তখন এসব খাবার তাদের অনেক কাজে আসে। শিশুদের চোখে যে সমস্যা বেশী দেখা দেয়, তার মধ্যে অন্যতম হ’ল বিট স্পট। এতে চোখ শুকিয়ে যায় এবং চোখের বাইরের আবরণে কিছু ছোট দাগ পড়ে। ফলে ঘোলা হয়ে যায় কর্ণিয়া। অনুভূতিও কমে আসে কর্ণিয়ার। এর ফলে দেখতে সমস্যা হয়। বয়স্কদেরও ছানি পড়ে বেশী। অথচ এসব শাক-সবজি পর্যাপ্ত খেলে এসব সমস্যা থাকে না বলা যায়।
\সংকলিত \