পর্ব ১ । পর্ব ২ । পর্ব ৩ । পর্ব ৪ । পর্ব ৫ । পর্ব ৬ । পর্ব ৭ । পর্ব ৮ । শেষ পর্ব ।
চতুর্থ উপায় :তাক্বওয়া অবলম্বন করা
তাক্বওয়া বা আল্লাহভীতি অবলম্বনের মাধ্যমে মানব জাতির ইহকাল ও পরকাল কল্যাণময় হবে। কারণ তাক্বওয়া মানুষকে আল্লাহর নিকটে সম্মানিত করে। যেমন মহান আল্লাহ বলেন, إِنَّ أَكْرَمَكُمْ عِنْدَ اللهِ أَتْقَاكُمْ ‘তোমাদের মধ্যে ঐ ব্যক্তিই আল্লাহর নিকট অধিক মর্যাদাসম্পন্ন যে অধিক মুত্তাক্বী’ (হুজুরাত ৪৯/১৩)। তাক্বওয়া অবলম্বন করলে আল্লাহ সকল সমস্যা দূর করে দেন এবং অভাবনীয় উৎস থেকে জীবিকা প্রদান করেন। মহান আল্লাহ বলেন, وَمَنْ يَتَّقِ اللهَ يَجْعَلْ لَهُ مَخْرَجًا، وَيَرْزُقْهُ مِنْ حَيْثُ لاَ يَحْتَسِبُ ‘যে ব্যক্তি আল্লাহকে ভয় করে আল্লাহ তার পথ বের করে দিবেন। আর তাকে ধারণাতীত উৎস হ’তে রিযিক্ব দান করবেন’ (তালাক্ব ৬৫/২-৩)। তাক্বওয়া অবলম্বনে মানুষের সকল কাজ সহজ হয়ে যায় এবং আল্লাহ সব গোনাহ মাফ করে দেন। আর তাকে দান করেন মহাপুরস্কার। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, وَمَنْ يَتَّقِ اللهَ يَجْعَلْ لَهُ مِنْ أَمْرِهِ يُسْرًا، ذَلِكَ أَمْرُ اللهِ أَنْزَلَهُ إِلَيْكُمْ وَمَنْ يَتَّقِ اللهَ يُكَفِّرْ عَنْهُ سَيِّئَاتِهِ وَيُعْظِمْ لَهُ أَجْرًا ‘আল্লাহকে যে ভয় করে আল্লাহ তার কাজ-কর্ম সহজ করে দেন। এটা আল্লাহর বিধান, যা তিনি তোমাদের প্রতি অবতীর্ণ করেছেন। আর আল্লাহকে যে ভয় করে তিনি তার পাপরাশি মোচন করে দেন এবং তাকে দেন মহাপুরস্কার’ (তালাক্ব ৬৫/৪-৫)।
মুমিনদেরকে তাক্বওয়া অবলম্বন করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন, يَا أَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوا اتَّقُوا اللهَ حَقَّ تُقَاتِهِ وَلَا تَمُوتُنَّ إِلَّا وَأَنْتُمْ مُسْلِمُوْنَ ‘হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় করার মতো ভয় কর এবং তোমরা মুসলমান না হয়ে মৃত্যুবরণ করো না’ (আলে ইমরান ৩/১০২)। তিনি আরো বলেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوْا اتَّقُوا اللهَ وَقُوْلُوْا قَوْلاً سَدِيْدًا- يُصْلِحْ لَكُمْ أَعْمَالَكُمْ وَيَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوْبَكُمْ وَمَنْ يُطِعِ اللهَ وَرَسُوْلَهُ فَقَدْ فَازَ فَوْزًا عَظِيْمًا-
‘হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং সঠিক কথা বল। তাহ’লে তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের কর্ম ত্রুটিমুক্ত করবেন এবং তোমাদের পাপ ক্ষমা করবেন। যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে, তারা অবশ্যই মহাসাফল্য অর্জন করবে’ (আহযাব ৩৩/৭০-৭১)।
মানব জাতির সকল কল্যাণ নিহিত রয়েছে আল্লাহভীতির মধ্যে। আর তাক্বওয়া পূর্ণতা লাভ করে সৎ আমল এবং রাসূল (ছাঃ)-এর প্রতি ঈমান আনয়ন ও আনুগত্যের মাধ্যমে। মহান আল্লাহ বলেন, يَا أَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوا اتَّقُوا اللهَ وَآمِنُوْا بِرَسُولِهِ يُؤْتِكُمْ كِفْلَيْنِ مِنْ رَحْمَتِهِ وَيَجْعَلْ لَكُمْ نُوْرًا تَمْشُوْنَ بِهِ وَيَغْفِرْ لَكُمْ وَاللهُ غَفُوْرٌ رَحِيْمٌ ‘হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান আন, তিনি তাঁর অনুগ্রহে তোমাদেরকে দ্বিগুণ পুরস্কার দিবেন। আর তিনি তোমাদেরকে দিবেন আলো, যার সাহায্যে তোমরা চলবে এবং তিনি তোমাদেরকে ক্ষমা করবেন। আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু’ (হাদীদ ৫৭/২৮)।
মহান আল্লাহ আরো বলেন,يَا أَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوا اتَّقُوا اللهَ وَلْتَنْظُرْ نَفْسٌ مَا قَدَّمَتْ لِغَدٍ وَاتَّقُوا اللهَ إِنَّ اللهَ خَبِيْرٌ بِمَا تَعْمَلُوْنَ ‘হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর। প্রত্যেকেই ভেবে দেখুক যে, আগামীকালের (ক্বিয়ামতের) জন্য সে কি পাঠিয়েছে। আর আল্লাহকে ভয় কর; তোমরা যা কর আল্লাহ সে সম্পর্কে সর্বাধিক জ্ঞাত’ (হাশর ৫৯/১৮)।
তাক্বওয়া অবলম্বন করলে মানুষ ন্যায়-অন্যায়ের পার্থক্য বুঝতে পারবে। মহান আল্লাহ বলেন, يَا أَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوْا إِنْ تَتَّقُوا اللهَ يَجْعَلْ لَكُمْ فُرْقَانًا وَيُكَفِّرْ عَنْكُمْ سَيِّئَاتِكُمْ وَيَغْفِرْ لَكُمْ وَاللهُ ذُو الْفَضْلِ الْعَظِيْمِ ‘হে মুমিনগণ! তোমরা যদি আল্লাহকে ভয় কর তবে তিনি তোমাদেরকে ন্যায়-অন্যায় পার্থক্য করার একটি মানদন্ড দান করবেন, আর তোমাদের গুনাহ সমূহ মিটিয়ে দিবেন এবং তোমাদেরকে ক্ষমা করবেন, আল্লাহ বড় অনুগ্রহশীল ও মঙ্গলময়’ (আনফাল ৮/২৯)।
মুত্তাক্বীদের বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করতে গিয়ে মহান আল্লাহ বলেন, ذَلِكَ الْكِتَابُ لاَ رَيْبَ فِيْهِ هُدًى لِلْمُتَّقِيْنَ، الَّذِيْنَ يُؤْمِنُوْنَ بِالْغَيْبِ وَيُقِيْمُوْنَ الصَّلاَةَ وَمِمَّا رَزَقْنَاهُمْ يُنْفِقُوْنَ، وَالَّذِيْنَ يُؤْمِنُوْنَ بِمَا أُنْزِلَ إِلَيْكَ وَمَا أُنْزِلَ مِنْ قَبْلِكَ وَبِالْآخِرَةِ هُمْ يُوْقِنُوْنَ، أُوْلَئِكَ عَلَى هُدًى مِنْ رَبِّهِمْ وَأُوْلَئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُوْنَ ‘এটা ঐ গ্রন্থ, যার মধ্যে কোনরূপ সন্দেহ নেই; আল্লাহভীরুদের জন্য এটি পথনির্দেশ। যারা অদৃশ্য বিষয়গুলোতে বিশ্বাস স্থাপন করে এবং ছালাত ক্বায়েম করে ও আমি তাদেরকে যে জীবনোপকরণ দান করেছি তা হ’তে ব্যয় করে। আর যারা তোমার প্রতি যা অবতীর্ণ করা হয়েছে ও তোমার পূর্বে যা অবতীর্ণ করা হয়েছিল, তদ্বিষয়ে বিশ্বাস স্থাপন করে এবং পরকালের প্রতি যারা দৃঢ় বিশ্বাস রাখে। তারাই তাদের প্রতিপালক নির্দেশিত পথে রয়েছে এবং তারাই সফলকাম’ (বাক্বারাহ ২/২-৫)।
পঞ্চম উপায় : মাতা-পিতার খেদমত করা
মাতা-পিতার খেদমতই সন্তানের জীবনে কল্যাণ বয়ে আনে। কারণ আল্লাহর ইবাদতের পরেই পিতা-মাতার প্রতি ইহসান করতে বলা হয়েছে। আল্লাহ বলেন, وَاعْبُدُوا اللهَ وَلاَ تُشْرِكُوْا بِهِ شَيْئًا وَبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَانًا- ‘তোমরা আল্লাহরই ইবাদত কর এবং তাঁর সাথে কোন বিষয়ে অংশী স্থাপন করো না। আর পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার কর’ (নিসা ৪/৩৬)।
অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,
وَقَضَى رَبُّكَ أَلاَّ تَعْبُدُوْا إِلاَّ إِيَّاهُ وَبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَانًا إِمَّا يَبْلُغَنَّ عِنْدَكَ الْكِبَرَ أَحَدُهُمَا أَوْ كِلَاهُمَا فَلاَ تَقُلْ لَهُمَا أُفٍّ وَلاَ تَنْهَرْهُمَا وَقُلْ لَهُمَا قَوْلاً كَرِيْمًا، وَاخْفِضْ لَهُمَا جَنَاحَ الذُّلِّ مِنَ الرَّحْمَةِ وَقُلْ رَبِّ ارْحَمْهُمَا كَمَا رَبَّيَانِيْ صَغِيْرًا- ‘তোমার প্রতিপালক নির্দেশ দিয়েছেন যে, তোমরা তিনি ছাড়া অন্য কারো ইবাদত করবে না এবং পিতা-মাতার প্রতি সদ্ব্যবহার করবে; তাদের একজন অথবা উভয়ে তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হ’লে তাদেরকে বিরক্তি সূচক কিছু বল না এবং তাদেরকে ধমক দিও না। তাদের সাথে সম্মানসূচক নম্র কথা বল। অনুকম্পায় তাদের প্রতি বিনয়াবনত থেক। আর বল, হে আমার প্রতিপালক! তাদের উভয়ের প্রতি দয়া করুন যেভাবে শৈশবে তারা আমাকে প্রতিপালন করেছিলেন’ (বনী ইসরাঈল ১৭/২৩-২৪)। তিনি আরো বলেন, وَوَصَّيْنَا الْإِنْسَانَ بِوَالِدَيْهِ حُسْنًا وَإِنْ جَاهَدَاكَ لِتُشْرِكَ بِيْ مَا لَيْسَ لَكَ بِهِ عِلْمٌ فَلاَ تُطِعْهُمَا إِلَيَّ مَرْجِعُكُمْ فَأُنَبِّئُكُمْ بِمَا كُنْتُمْ تَعْمَلُوْنَ- ‘আমি মানুষকে নির্দেশ দিয়েছি তার পিতা-মাতার প্রতি সদ্ব্যবহার করতে; তবে তারা যদি তোমার উপর বল প্রয়োগ করে আমার সাথে এমন কিছু শরীক করতে, যার সম্পর্কে তোমার কোন জ্ঞান নেই, তবে তুমি তাদেরকে মান্য কর না। আমার নিকটেই তোমাদের প্রত্যাবর্তন। অতঃপর আমি তোমাদেরকে জানিয়ে দিব যা তোমরা করতে’ (আনকাবূত ২৯/৮)।
পাপ কাজে কেউ আদেশ দিলে তার কথা শোনা যাবে না এবং সে কাজে সহযোগিতা করা যাবে না। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,لاَ طَاعَةَ فِىْ مَعْصِيَةٍ، إِنَّمَا الطَّاعَةُ فِى الْمَعْرُوْفِ ‘পাপের কাজে কোন আনুগত্য নেই; বরং আনুগত্য শুধু ভাল কাজে’।[1]
পিতা-মাতার উচিত সন্তান-সন্ততিকে উপদেশ দেওয়া, যেভাবে আল্লাহর প্রিয় বান্দা লোকমান তার সন্তানকে উপদেশ দিয়েছিলেন। যেমন- ‘যখন লোকমান উপদেশচ্ছলে তাঁর পুত্রকে বলেছিলেন, হে বৎস! আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক কর না। নিশ্চয়ই শিরক মহা যুলুম। হে বৎস! তা (পুণ্য বা পাপ) যদি সরিষার দানা পরিমাণও হয় এবং তা যদি থাকে শিলাগর্ভে অথবা আকাশে কিংবা ভূগর্ভে আল্লাহ ওটাও হাযির করবেন। আল্লাহ সূক্ষ্মদর্শী, সম্যক অবগত। হে বৎস! ছালাত ক্বায়েম করবে, ভাল কাজের আদেশ করবে ও মন্দ কাজ হ’তে নিষেধ করবে এবং আপদে-বিপদে ধৈর্যধারণ করবে। নিশ্চয়ই এটা দৃঢ় সংকল্পের কাজ। (অহংকারবশে) তুমি মানুষ হ’তে মুখ ফিরিয়ে নিয়ো না এবং পৃথিবীতে উদ্ধতভাবে বিচরণ কর না। কারণ আল্লাহ কোন উদ্ধত, অহংকারীকে পসন্দ করেন না। তুমি চালচলনে মধ্যপন্থা অবলম্বন করবে এবং তোমার কণ্ঠস্বর করবে নীচু; স্বরের মধ্যে গাধার স্বরই সর্বাপেক্ষা অপ্রীতিকর’ (লোকমান ৩১/১৩, ১৬-১৯)।
৬ষ্ঠ উপায় : সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজ হ’তে নিষেধ করা
এই কাজে প্রভূত কল্যাণ নিহিত। মহান আল্লাহ বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে একটা দল থাকা উচিত যারা কল্যাণের দিকে আহবান করবে এবং ভাল কাজের আদেশ করবে ও মন্দ কাজের নিষেধ করবে। আর তারাই সফলকাম হবে। তাদের সদৃশ হয়ো না, যাদের নিকট প্রকাশ্য প্রমাণ আসার পর তারা বিচ্ছিন্ন হয়েছে ও বিরোধ করেছে। আর তাদের জন্য রয়েছে কঠোর শাস্তি। সেদিন (ক্বিয়ামতের দিন) কতক মুখমন্ডল হবে উজ্জ্বল এবং কতক মুখমন্ডল হবে কালো বর্ণের। (তাদেরকে বলা হবে) তবে কি তোমরা বিশ্বাস স্থাপনের পরে অবিশ্বাসী হয়েছ? অতএব তোমরা শাস্তির স্বাদ গ্রহণ কর, যেহেতু তোমরা অবিশ্বাস করেছিলে। আর যাদের মুখমন্ডল শুভ্র উজ্জ্বল হবে, তারা আল্লাহর করুণার অন্তর্ভুক্ত; তারা সেখানে সদা অবস্থান করবে’ (আলে ইমরান ৩/১০৪-১০৭)। আল্লাহ আরো বলেন, كُنْتُمْ خَيْرَ أُمَّةٍ أُخْرِجَتْ لِلنَّاسِ تَأْمُرُوْنَ بِالْمَعْرُوْفِ وَتَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنْكَرِ- ‘তোমরাই শ্রেষ্ঠতম সম্প্রদায়, মানব জাতির জন্য তোমাদের আবির্ভাব হয়েছে, তোমরা ভাল কাজের আদেশ করবে ও মন্দ কাজের নিষেধ করবে’ (আলে ইমরান ৩/১১০)।
যারা মানুষকে দ্বীনের পথে, হকের পথে ও আল্লাহর দিকে ডাকে তাদেরকে ‘দাঈ’ বলা হয়। দাঈদের প্রথম কর্তব্য হবে মানুষকে সঠিক আক্বীদা শিক্ষা দেওয়া। কারণ আক্বীদা হচ্ছে মূল। আক্বীদা ঠিক না হ’লে কোন আমলই গ্রহণযোগ্য হবে না। সেই সাথে সৎ কাজের আদেশ দেওয়া ও অসৎ কাজ থেকে নিষেধ করতে হবে। আর পৃথিবীতে সবচেয়ে বড় অসৎ কাজ হচ্ছে শিরক ও বিদ‘আত। সুতরাং যারা শুধু সৎ কাজের আদেশ করে, কিন্তু অসৎ কাজ থেকে নিষেধ করে না, তারা আল্লাহর কালাম ও রাসূল (ছাঃ)-এর সুন্নাত বিরোধী কাজ করে। কারণ আল্লাহ তা‘আলা সৎ কাজের আদেশের সাথে অসৎ কাজের নিষেধের কথাও উল্লেখ করেছেন। মহান আল্লাহ বলেন,
الَّذِيْنَ إِنْ مَكَّنَّاهُمْ فِي الْأَرْضِ أَقَامُوا الصَّلاَةَ وَآتَوُا الزَّكَاةَ وَأَمَرُوْا بِالْمَعْرُوْفِ وَنَهَوْا عَنِ الْمُنْكَرِ وَلِلَّهِ عَاقِبَةُ الْأُمُوْرِ
‘আমরা তাদেরকে পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠা দান করলে তারা ছালাত কায়েম করবে, যাকাত দিবে এবং সৎ কাজের আদেশ করবে ও অসৎ কাজ হ’তে নিষেধ করবে। সকল কর্মের পরিণাম আল্লাহর ইখতিয়ারে’ (হজ্জ ২২/৪১)।
আয়াতটিতে ছালাত আদায় ও যাকাত প্রদান করার পাশাপাশি সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজ থেকে নিষেধ করার কথা বলা হয়েছে। আর এখানে সৎ কাজের আদেশ বলতে তাওহীদ প্রতিষ্ঠা এবং অসৎ কাজের নিষেধ বলতে শিরকের উচ্ছেদ বুঝানো হয়েছে।[2]
সমাজ আজকে শিরকী ও বিদ‘আতী কাজে পরিপূর্ণ। অথচ কিছু লোক পড়ে আছে শুধু ফাযায়েলে আমল নিয়ে। যারা মানুষকে শিরক-বিদ‘আতের ভয়াবহ পরিণতি ও তা থেকে বিরত থাকার কথা বলে না, শুধু চিল্লা আর ফযীলত নিয়েই ব্যস্ত। এটা রাসূল (ছাঃ)-এর দাওয়াতের পদ্ধতি নয়। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন,
مَنْ رَأَى مِنْكُمْ مُنْكَرًا فَلْيُغَيِّرْهُ بِيَدِهِ فَإِنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَبِلِسَانِهِ فَإِنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَبِقَلْبِهِ وَذَلِكَ أَضْعَفُ الإِيْمَانِ
‘যে ব্যক্তি কাউকে অসৎ কাজ করতে দেখবে সে যেন সেটাকে হাত দিয়ে বাধা দেয়। যদি এটাতে সমর্থ না হয়, তাহ’লে মুখে বলবে। যদি মুখে বলতে সমর্থ না হয় তাহ’লে অন্তরে ঘৃণা করবে। আর এটাই সর্বাধিক দুর্বল ঈমান’।[3]
সুতরাং শুধু ফযীলতের কথা নিয়ে ব্যস্ত না থেকে হারাম কাজগুলো থেকেও নিষেধ করতে হবে। বিশেষ করে তাওহীদের শিক্ষা দান এবং শিরক-বিদ‘আত থেকে মানুষকে নিষেধ করা। ফাযায়েলে আমলের নামে জাল-যঈফ হাদীছ প্রচার করা থেকে বিরত থাকতে হবে। জাল-যঈফ হাদীছ বর্ণনা করা রাসূলের উপরে মিথ্যারোপের নামান্তর। এতে ব্যক্তির পরকাল নষ্ট হয়ে যাবে। কারণ রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর উপর মিথ্যা আরোপ করলে জাহান্নামে যেতে হবে। রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, مَنْ كَذَبَ عَلَىَّ مُتَعَمِّدًا فَلْيَتَبَوَّأْ مَقْعَدَهُ مِنَ النَّارِ ‘যে ব্যক্তি ইচ্ছা করে আমার উপর মিথ্যা আরোপ করল, সে যেন তার নিজের স্থান জাহান্নামে বানিয়ে নিল’।[4]
সুতরাং দাওয়াতী কাজ করার জন্য অবশ্যই কুরআন-সুন্নাহর জ্ঞান থাকতে হবে। মহান আল্লাহ বলেন, قُلْ هَذِهِ سَبِيْلِيْ أَدْعُوْ إِلَى اللهِ عَلَى بَصِيْرَةٍ أَنَا وَمَنِ اتَّبَعَنِيْ وَسُبْحَانَ اللهِ وَمَا أَنَا مِنَ الْمُشْرِكِيْنَ ‘(হে নবী!) বলুন, এটাই আমার পথ, আল্লাহর দিকে মানুষকে আহবান করি জাগ্রত জ্ঞান সহকারে আমি ও আমার অনুসারীগণ। আল্লাহ মহা পবিত্র। আর আমি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত নই’ (ইউসুফ ১২/১০৮)।
সকল দাঈকে কুরআন-হাদীছের জ্ঞান অর্জন করে তদনুযায়ী দাওয়াত দিতে হবে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর তুমি জান যে, আল্লাহ ছাড়া কোন সত্য মা‘বূদ নেই (মুহাম্মাদ ৪৭/১৯)। সুতরাং কথা এবং কাজের পূর্বে জ্ঞান অর্জন করা আবশ্যক। নবী করীম (ছাঃ) বলেন,مَنْ يُرِدِ اللهُ بِهِ خَيْرًا يُفَقِّهْهُ فِى الدِّيْنِ، وَإِنَّمَا الْعِلْمُ بِالتَّعَلُّمِ ‘আল্লাহ যার কল্যাণ কামনা করেন তাকে দ্বীনের জ্ঞান দান করেন। আর অধ্যয়নের মাধ্যমেই জ্ঞান অর্জিত হয়’।[5]
দাওয়াতী কাজ শুরু করতে হবে পরিবার থেকে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, وَأَنْذِرْ عَشِيْرَتَكَ الْأَقْرَبِيْنَ‘তোমার নিকটাত্মীয়দেরকে সতর্ক করে দাও’ (শু‘আরা ২৬/২১৪)।
ইবনু আববাস (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘তুমি তোমার নিকটাত্মীয়দেরকে সতর্ক কর’ আয়াতটি অবতীর্ণ হ’লে রাসূল (ছাঃ) বের হয়ে ছাফা পর্বতে আরোহণ করলেন এবং সকাল বেলার বিপদ সাবধান বলে উচ্চৈঃস্বরে ডাক দিলেন। আওয়াজ শুনে তারা বলল, এ কে? তারপর সবাই তাঁর কাছে গিয়ে সমবেত হ’ল। তিনি বললেন, আমি যদি তোমাদেরকে বলি, একটি অশ্বারোহী সেনাবাহিনী এ পর্বতের পিছনে তোমাদের উপর আক্রমণ করার জন্য প্রস্ত্তত হয়ে আছে, তাহ’লে কি তোমরা আমার কথা বিশ্বাস করবে? সকলেই বলল, আপনার মিথ্যা বলার ব্যাপারে আমাদের অভিজ্ঞতা নেই। তখন তিনি বললেন, আমি তোমাদের আসন্ন কঠিন শাস্তি সম্পর্কে সাবধান করছি (সাবা ৩৪/৪৬)। একথা শুনে আবু লাহাব বলল, তোমার ধ্বংস হোক। তুমি কি এজন্যই আমাদেরকে একত্র করেছ? অতঃপর রাসূল (ছাঃ) দাঁড়ালেন। তারপর অবতীর্ণ হ’ল ‘ধ্বংস হোক আবু লাহাবের দু’হাত এবং ধ্বংস হোক সে নিজেও’ (লাহাব ১)।[6] অতএব সবার উচিত নিজের ছেলে-মেয়ে, স্ত্রী-পরিবার এবং ভাই-বোন, আত্মীয়-স্বজন এবং নিজের গ্রাম, সমাজকে সর্বাগ্রে সংশোধন করা, পরকালের কঠিন শাস্তি থেকে বাঁচার জন্য সর্বাগ্রে তাদের মাঝে দাওয়াতী কাজ করা। সবাই এ পদ্ধতি গ্রহণ করলে ইনশাআল্লাহ সমাজে বিশৃঙ্খলা থাকবে না। আল্লাহ বলেন, يَا أَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوْا قُوْا أَنْفُسَكُمْ وَأَهْلِيْكُمْ نَارًا وَقُوْدُهَا النَّاسُ وَالْحِجَارَةُ عَلَيْهَا مَلاَئِكَةٌ غِلاَظٌ شِدَادٌ لاَ يَعْصُوْنَ اللهَ مَا أَمَرَهُمْ وَيَفْعَلُوْنَ مَا يُؤْمَرُوْنَ ‘হে মুমিনগণ! তোমরা নিজেদেরকে এবং তোমাদের পরিবার-পরিজনকে রক্ষা কর ঐ অগ্নি হ’তে, যার ইন্ধন হবে মানুষ ও পাথর। যাতে নিয়োজিত আছে নির্মম হৃদয়, কঠোর স্বভাব ফেরেশতাগণ, যারা অমান্য করে না আল্লাহ যা তাদেরকে আদেশ করেন তা এবং তারা যা করতে আদিষ্ট হন তাই করেন’ (তাহরীম ৬৬/৬)।
আবু হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘তোমার নিকট আত্মীয়দের সতর্ক কর’ (শু‘আরা ২১৪) যখন এ আয়াত অবতীর্ণ হ’ল, তখন রাসূল (ছাঃ) দাঁড়ালেন এবং বললেন, হে কুরাইশ সম্প্রদায়! নিজেদের কিনে নাও। আমি আল্লাহর নিকট তোমাদের কোন উপকারে আসব না। হে বনী আবদে মানাফ! আল্লাহর নিকট আমি তোমাদের কোন উপকারে আসব না। হে আববাস ইবনু আব্দুল মুত্ত্বালিব! আমি আল্লাহর নিকট তোমার কোনই উপকারে আসব না। হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)-এর ফুফু ছাফিয়্যাহ! আমি তোমার কোন উপকার করতে পারব না। হে মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর কন্যা ফাতেমা! আমার ধন-সম্পদ থেকে যা ইচ্ছা চাও, কিন্তু আল্লাহর নিকট আমি তোমার কোনই উপকারে আসব না’।[7]
আল্লাহ বলেন, ‘সেদিন মানুষ পলায়ন করবে তাঁর নিজের ভাই হ’তে এবং তার মাতা-পিতা, তার স্ত্রী ও তার সন্তান হ’তে, তাদের প্রত্যেকের সেদিন এমন গুরুতর অবস্থা হবে যা তাকে সম্পূর্ণরূপে ব্যস্ত রাখবে। সেদিন অনেক মুখমন্ডল উজ্জ্বল হবে, অনেক মুখমন্ডল হবে সহাস্য ও প্রফুল্ল এবং অনেক মুখমন্ডল হবে সেদিন ধূলি ধূসর। সেগুলোকে আচ্ছন্ন করবে কালো বর্ণ। তারাই কাফির ও পাপাচারী’ (আবাসা ৮০/৩৪-৪২)।
৭ম উপায় : নারীদের পর্দা পালন
পর্দা প্রথা ইসলামের এক অমোঘ বিধান। যা নারী-পুরুষ সকল মুমিনের জন্য পালন করা অতীব যরূরী। কেননা পর্দাহীনতার ফলে সমাজে যেনা-ব্যভিচার বৃদ্ধি পায়, নারী নির্যাতন ছড়িয়ে পড়ে। এজন্য সবাইকে পর্দা মেনে চলা উচিত। বিশেষত নারীদের পর্দা মেনে চলা যরূরী। তারা কোন প্রয়োজনে বাড়ী থেকে বের হ’লে পর্দার সাথে বের হবে এবং বিনা প্রয়োজনে বের হবে না। মহান আল্লাহ বলেন, وَقَرْنَ فِيْ بُيُوْتِكُنَّ وَلاَ تَبَرَّجْنَ تَبَرُّجَ الْجَاهِلِيَّةِ الْأُولَى وَأَقِمْنَ الصَّلاَةَ وَآتِيْنَ الزَّكَاةَ وَأَطِعْنَ اللهَ وَرَسُوْلَهُ إِنَّمَا يُرِيْدُ اللهُ لِيُذْهِبَ عَنْكُمُ الرِّجْسَ أَهْلَ الْبَيْتِ وَيُطَهِّرَكُمْ تَطْهِيْرًا- ‘আর তোমরা স্বগৃহে অবস্থান করবে; প্রাচীন জাহেলী যুগের সৌন্দর্য প্রদর্শনের মত নিজেদেরকে প্রদর্শন করে বেড়াবে না। তোমরা ছালাত প্রতিষ্ঠা করবে ও যাকাত প্রদান করবে এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (ছাঃ)-এর আনুগত্য করবে। আল্লাহ তো চান হে আহলে বাইত! তোমাদের হ’তে নাপাকী দূর করতে এবং তোমাদেরকে সম্পূর্ণরূপে পূত-পবিত্র করতে’ (আহযাব ৩৩/৩৩)।
পর্দা প্রথা মেনে চলার পাশাপাশি পরপুরুষের সাথে মিষ্ট ভাষায় কথা বলা থেকে বিরত থাকতে হবে। আল্লাহ বলেন, يَا نِسَاءَ النَّبِيِّ لَسْتُنَّ كَأَحَدٍ مِنَ النِّسَاءِ إِنِ اتَّقَيْتُنَّ فَلاَ تَخْضَعْنَ بِالْقَوْلِ فَيَطْمَعَ الَّذِيْ فِيْ قَلْبِهِ مَرَضٌ وَقُلْنَ قَوْلاً مَعْرُوْفًا ‘হে নবীপত্নীরা! তোমরা অন্য নারীদের মত নও; যদি তোমরা আল্লাহকে ভয় কর তবে (পরপুরুষের সাথে) মিষ্টি কণ্ঠে এমনভাবে কথা বলো না যাতে অন্তরে যার ব্যাধি আছে, সে খারাপ ইচ্ছা পোষণ করে এবং তোমরা ন্যায়সংগত কথা বলবে’ (আহযাব ৩৩/৩২)।
পর্দার মধ্যেই মা-বোনদের জন্য ইহকালীন ও পরকালীন শান্তি এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে তাদের জন্য ক্ষমা ও মহা পুরস্কার রয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ قُلْ لِأَزْوَاجِكَ وَبَنَاتِكَ وَنِسَاءِ الْمُؤْمِنِيْنَ يُدْنِيْنَ عَلَيْهِنَّ مِنْ جَلاَبِيْبِهِنَّ ذَلِكَ أَدْنَى أَنْ يُعْرَفْنَ فَلاَ يُؤْذَيْنَ وَكَانَ اللهُ غَفُوْرًا رَحِيْمًا- ‘হে নবী! তুমি তোমার স্ত্রীদেরকে, কন্যাদেরকে ও মুমিন নারীদেরকে বল, তারা যেন তাদের চাদরের কিছু অংশ নিজেদের উপর টেনে দেয়। এতে তাদের চেনা সহজতর হবে; ফলে তাদেরকে উত্যক্ত করা হবে না। আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু’ (আহযাব ৩৩/৫৯)।
নারী-পুরুষ উভয়কে আল্লাহর হুকুম পালন করতে হবে তাহ’লে ইহ ও পরকালীন কল্যাণ লাভ হবে। আল্লাহ তা‘আলা পবিত্র কুরআনে লজ্জাস্থান হেফাযতকারী নারী-পুরুষের জন্য ক্ষমা ও মহাপুরস্কার রয়েছে বলে ঘোষণা করেছেন’ (আহযাব ৩৩/৩৫-৩৬)।
নারী-পুরুষ উভয়কে শালীন ও তাক্বওয়াশীল পোশাক পরিধান করতে হবে। আল্লাহ বলেন, يَا بَنِيْ آدَمَ قَدْ أَنْزَلْنَا عَلَيْكُمْ لِبَاسًا يُوَارِيْ سَوْآتِكُمْ وَرِيْشًا وَلِبَاسُ التَّقْوَى ذَلِكَ خَيْرٌ ذَلِكَ مِنْ آيَاتِ اللهِ لَعَلَّهُمْ يَذَّكَّرُوْنَ ‘হে বনু আদম! আমি তোমাদেরকে লজ্জাস্থান আবৃত করার ও বেশভূষার জন্য তোমাদের পোশাক-পরিচ্ছদের উপকরণ দিয়েছি। আর আল্লাহভীতির পরিচ্ছদই সর্বোত্তম। এটা আল্লাহর নিদর্শন সমূহের অন্যতম। যাতে মানুষ এটা হ’তে উপদেশ গ্রহণ করে’ (আ‘রাফ ৭/২৬)।
নারী-পুরুষ উভয় তাদের দৃষ্টিকে সংযত করবে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘মুমিনদেরকে বল, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত করে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হেফাযত করে। এটা তাদের জন্য পবিত্রতম, তারা যা করে সে বিষয়ে আল্লাহ অবহিত। মুমিন নারীদের বল, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত করে ও তাদের লজ্জাস্থানের হেফাযত করে, তারা যেন যা সাধারণতঃ প্রকাশমান তা ব্যতীত তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে। তাদের ঘাড় ও বক্ষদেশ যেন মাথার কাপড় (ওড়না বা চাদর) দ্বারা আবৃত করে। তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, (পিতামহ-মাতামহ) শ্বশুর, পুত্র, স্বামীর পুত্র, ভ্রাতা, ভ্রাতুষ্পুত্র, ভগ্নীপুত্র, আপন নারীগণ, তাদের মালিকানাধীন দাসী, পুরুষদের মধ্যে যৌন কামনা রহিত পুরুষ এবং নারীদের গোপন অঙ্গ সম্বন্ধে অজ্ঞ বালক ব্যতীত কারো নিকট তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে। তারা যেন তাদের সৌন্দর্য প্রকাশের উদ্দেশ্যে সজোরে না হাঁটে। হে মুমিনগণ! তোমরা সবাই আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তন কর, যাতে তোমরা সফলকাম হ’তে পারো’ (নূর ২৪/৩০-৩১)।
নারীরা যেন পুরুষদের মত হ’তে চেষ্টা না করে এবং পুরুষরাও যেন নারীদের মত হ’তে ইচ্ছা পোষণ না করে। আল্লাহ বলেন, وَلاَ تَتَمَنَّوْا مَا فَضَّلَ اللهُ بِهِ بَعْضَكُمْ عَلَى بَعْضٍ لِلرِّجَالِ نَصِيْبٌ مِمَّا اكْتَسَبُوْا وَلِلنِّسَاءِ نَصِيْبٌ مِمَّا اكْتَسَبْنَ وَاسْأَلُوْا اللهَ مِنْ فَضْلِهِ إِنَّ اللهَ كَانَ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيْمًا ‘আর তোমরা ওসবের আকাংখা করো না যার দ্বারা আল্লাহ তোমাদের কাউকে অন্যের উপর প্রাধান্য দান করেছেন। পুরুষরা যা উপার্জন করেছে তাতে তাদের অংশ রয়েছে এবং নারীরা যা উপার্জন করেছে তাতে তাদের অংশ আছে। আর তোমরা আল্লাহরই নিকট তাঁর অনুগ্রহ প্রার্থনা কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্ব বিষয়ে সম্যক অবগত’ (নিসা ৪/৩২)।
নারীরা পরপুরুষের সাথে মিশবে না এবং এক সাথে বসবে না, বরং তাদের থেকে দূরে সরে থাকবে। আল্লাহ বলেন, ‘যখন তিনি (মূসা) মাদইয়ানের পানির (কূপের) নিকট পৌঁছলেন তখন দেখলেন যে, একদল লোক তাদের জানোয়ারগুলোকে পানি পান করাচ্ছে এবং তাদের পশ্চাতে দু’জন নারী তাদের পশুগুলোকে থামিয়ে রাখছে। মূসা বললেন, তোমাদের কি ব্যাপার? তারা বলল, আমরা আমাদের পশুগুলোকে পানি পান করাতে পারি না, যতক্ষণ রাখালরা তাদের পশুগুলোকে নিয়ে সরে না যায়। আমাদের পিতা অতিবৃদ্ধ। মূসা তখন তাদের পশুগুলোকে পানি পান করালেন। অতঃপর তিনি ছায়ার নীচে আশ্রয় গ্রহণ করলেন ও বললেন, হে আমার প্রতিপালক! আপনি আমার প্রতি যে অনুগ্রহ করবেন আমি তার মুখাপেক্ষী। যখন নারীদ্বয়ের একজন লজ্জা ও শালীনতা সহকারে তার নিকট আসল এবং বলল, আমার পিতা আপনাকে আমন্ত্রণ করছেন, আমাদের পশুগুলোকে পানি পান করাবার পারিশ্রমিক দেয়ার জন্য। অতঃপর মূসা তাঁর নিকট এসে সমস্ত বৃত্তান্ত বর্ণনা করলে তিনি বললেন, ভয় কর না, তুমি যালিম সম্প্রদায়ের কবল হ’তে বেঁচে গেছ’ (ক্বাছাছ ২৮/২৩-২৫)। উপরোক্ত আয়াতগুলো থেকে সুস্পষ্টরূপ বিধৃত হয়েছে পর্দার গুরুত্ব ও তাৎপর্য।
সন্তান-সন্ততি লালন-পালনে মায়ের ভূমিকা অত্যধিক। একজন আদর্শ মা সমাজের অশ্লীল এবং বেহায়াপনা বন্ধ করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। যখন সন্তান-সন্ততি ছোট থাকে তখন যদি মা ছালাত ক্বায়েম করে, কুরআন তেলাওয়াত করে, বাড়ীতে অবস্থান করে ও প্রয়োজনে বাইরে বের হওয়ার সময় পর্দা করে বের হয়, তাহ’লে এসব কাজ-কর্ম সন্তানের উপর প্রভাব ফেলবে। মাকে দেখে সন্তান-সন্ততি শিক্ষা নিবে। অপরপক্ষে পিতা যদি নিয়মিত মসজিদে গিয়ে ছালাত ক্বায়েম করে, বাড়ীতে কুরআন তেলাওয়াত করে, অন্যান্য ফরয কাজগুলো পালন করে, তাহ’লে সন্তানের উপর পিতার এসব কাজের প্রভাব পড়ে। এভাবে ছেলে-মেয়েরা পিতা-মাতার নিকট থেকে শিক্ষা পাবে।
[চলবে]
হাফেয আব্দুল মতীন
লিসান্স ও এম.এ, মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, সঊদী আরব।
[1]. বুখারী হা/৭২৫৭, ১২৪৯।
[2]. আলূসী, রূহুল মা‘আনী ১৭/২১৪।
[3]. মুসলিম হা/৪২৪৯।
[4]. মুসলিম হা/৩।
[5]. বুখারী, তরজমাতুল বাব, ‘কথা ও কর্মের পূর্বে ইলম’ অনুচ্ছেদ।
[6]. বুখারী হা/৪৯৭১।
[7]. বুখারী হা/৪৭৭১।