পর্ব ১ । পর্ব ২ । পর্ব ৩ । পর্ব ৪ । পর্ব ৫ । পর্ব ৬ শেষ পর্ব । 

[২০০৫ সালের ২২ শে ফেব্রুয়ারী থেকে ২০০৬ সালের ৮ই জুলাই। ১ বছর ৪ মাস ১৪ দিন]

ফেব্রুয়ারী আসলেই কেন যেন মনের কোণে জেগে ওঠে তৌহীদি শিহরণ। জান্নাত পিয়াসী মানুষের অন্তরে উত্থিত হয় অগ্রযাত্রার আলোড়ন। জান্নাতের পথযাত্রী যুব কাফেলার জীবনে জাগে অফুরন্ত জাগরণ। ১৯৭৮ সালের ৫ই ফেব্রুয়ারী বাংলার তরুণ ও যুবকদের পথের দিশারী হিসাবে ‘বাংলাদেশ আহলেহাদীছ যুবসংঘ’-এর পদযাত্রা শুরু হয়। এই মাসেই অধিকাংশ সময় সংগঠনের বার্ষিক তাবলীগী ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। যে কারণে ফেব্রুয়ারীকে ভোলা যায় না।

২০০৫ সালের ২৪-২৫ ফেব্রুয়ারী ছিল আহলেহাদীছ আন্দোলন বাংলাদেশ-এর ১৫তম বার্ষিক তাবলীগী ইজতেমার ধার্য তারিখ। এ মাসের প্রথম থেকেই সারা দেশে সাজ সাজ রব পড়ে যায় তাবলীগী ইজতেমায় যোগদানের জন্য। কেন্দ্রীয় দায়িত্বশীল হিসাবে আমাকে দু’দিন আগেই যেতে হবে। তাই ২২ তারিখ মঙ্গলবারেই আমি রাজশাহী পৌঁছে গেলাম। নওদাপাড়া মাদরাসার দিকে নযর পড়তেই দেখি বহু পুলিশের আনাগোনা। জিজ্ঞেস করলে তারা বলল, ইজতেমার নিরাপত্তার জন্য আমরা এসেছি।

অতঃপর রাত যত বেশী হয়, নিরাপত্তা বেষ্টনী তত বৃদ্ধি পায়। আমি দারুল ইমারতে বসে ইজতেমার অনুষ্ঠানসূচী তৈরী করছি। ইতিমধ্যে ঘড়ির কাটা রাত দেড়টার ঘরে। হঠাৎ করে আমার রুমে এসে একজন পুলিশ বলল, আমীরে জামা‘আত কোথায় আছেন? বললাম, কেন? আপনাদের ইজতেমার অনুমতি বাতিল হয়েছে। এক্ষুণি কমিশনার স্যারের নিকট যেতে হবে। সরল মনে আমি মুহতারাম আমীরে জামা‘আতকে ডাকতে উপর তলায় তাঁর বাসায় যাচ্ছি। পিছনে তাকিয়ে দেখি, পুলিশের কয়েকজন বড় অফিসার আমার সাথে। আমীরে জামা‘আত লুঙ্গি ও গেঞ্জি পরিহিত অবস্থায় দরজা খুললে একজন অফিসার সালাম দিয়ে বলল, কমিশনার স্যার আপনাকে সালাম দিয়েছেন। তাঁর সাথে একটু দেখা করতে যেতে হবে। আমীরে জামা‘আত বললেন, সকালে যাব। আমি কমিশনার ছাহেবের সাথে এখন কথা বলে নিচ্ছি। তখন আরেক অফিসার সালাম দিয়ে বললেন, স্যার আমাদের কিছু করার নেই, উপরের নির্দেশ। স্যার বুঝতে পারলেন, এরা তাঁকে গ্রেফতার করতে এসেছে। তাই আমাকে কিছু না বলেই  ভিতরে গিয়ে পোষাক পরিবর্তন করে দ্রুত চলে এলেন।

অতঃপর স্যার পুলিশের সাথে চলে গেলে আমি বিমর্ষ অবস্থায় নীচে অফিসে বসে আছি। এমন সময় কয়েকজন পুলিশ এসে বলল, স্যার একা একা কেমন করে ফিরে আসবেন তাই আপনাকেও সাথে যেতে বললেন। আমি তাদের সাথে বেরিয়ে পড়লাম। আম চত্বরে যেতে যেতে দেখি, মারকাযের প্রতিটি পয়েন্টে পুলিশ। ছাদে, গাছের উপরে, মসজিদের কোণায় সর্বত্র পজিশন নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে পুলিশ, যেন রণক্ষেত্র।

একজন পুলিশ অফিসার মোবাইলে বলছেন, কেমন ইনফরমেশন! আমরা তো দেখছি সবাই সহজ-সরল মানুষ। একজন রাগ করে বললেন, যতসব বাজে কথা আমাকে বলা হ’ল। তারা খুব দুর্ধর্ষ, বহু অস্ত্র মজুদ আছে তাদের কাছে। দু’চার, দশ ঘণ্টা যুদ্ধ হ’তে পারে। প্রস্ত্ততি নিয়ে যাবেন। এখন দেখছি সব ভুয়া কথা। ভুল ইনফরমেশন। যত...সব...’। এই বলে তিনি রাগে গর গর করতে করতে গাড়িতে এসে বসলেন।

অতঃপর তারা আমাকে ও সালাফী ছাহেবকে পৃথক গাড়িতে বোয়ালিয়া থানায় নিয়ে গেল এবং ওসির কক্ষে বসিয়ে রাখল। পরে জানলাম যে, আমীরে জামা‘আত ও আযীযুল্লাহকে এক গাড়িতে রাজপাড়া থানায় নিয়ে গেছে। পরদিন সকালে আমাদের কোর্ট হাজতে নিয়ে যাওয়া হ’ল। সেখানে  আমরা বারান্দায় চারটি চেয়ারে মুহতারাম আমীরে জামা‘আত সহ বসে আছি। হাজতের চারপাশে মানুষের উপচেপড়া ভিড়। সবাই অপলক নেত্রে আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে। দু’একজনের চোখ দিয়ে নীরবে অশ্রু বইছে। হঠাৎ মানুষের ভিড় ঠেলে আমাদের সামনে এগিয়ে এসে সালাম দিলেন এক নওজোয়ান। দীর্ঘদেহী উক্ত যুবকের চেহারায় ফুটে উঠেছে বিষাদের চিহ্ন। মনে বইছে আবেগ আর প্রতিবাদের প্রবল ঝড়। কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর বলিষ্ঠ কণ্ঠে বলে উঠল, ‘স্যার! চিন্তা করবেন না। জোট সরকার কোন ক্ষতি করতে পারবে না ইনশাআল্লাহ! জানতে চাইলাম, তিনি কে? উত্তর আসলো ‘খায়রুযযামান লিটন’।

জীবনে কোর্ট-কাচারীতে যাইনি। তাই কোর্ট হাজতের বারান্দায় আমরা চারজন চারটি চেয়ারে বসে ভাবছিলাম, হয়তবা ভুল করে আমাদের ধরে এনেছে, যামিনে ছেড়ে দিবে। বিকালে গিয়ে ইজতেমার কাজ শুরু করব। হঠাৎ মাইকের আওয়ায, ‘নওদাপাড়ায় আহলেহাদীছ আন্দোলন কর্তৃক আয়োজিত তাবলীগী ইজতেমার পারমিশন বাতিল করা হয়েছে। ইজতেমা বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে’। মাইকের প্রতিটি আওয়ায আমার বুকে যেন শেল বিদ্ধ করছিল, অন্তরে চরম আঘাত হানছিল। হৃদয়কে দুমড়ে-মুচড়ে ফেলছিল। সহ্য করতে না পেরে বললাম, ‘ইজতেমা বন্ধ’? সালাফী ছাহেব উত্তর দিলেন ‘ইজতেমা বন্ধ করার জন্যই তো আমাদের এখানে আনা হয়েছে’।

আমীরে জামা‘আত বললেন, ‘চক্রান্ত আরো গভীরে’। বিষণ্ণ বদনে, ভাবনার চিহ্ন প্রকাশ পাচ্ছে। এমন সময় পুলিশের আহবান স্যার চলেন। কোথায়? বলল, স্যার চলেন। উঠলাম প্রিজন ভ্যানে। আমাদের সোজা নিয়ে গেল জেলখানায়। গেইটে ঢুকতেই জেলার ছাহেব হাযির। ডেপুটি জেলার মুহতারাম আমীরে জামা‘আতের ছাত্র। বলা হ’ল, একটু ভাল জায়গায় ব্যবস্থা করো। খাতায় নাম-ঠিকানা লেখা, সই-স্বাক্ষর করার পর জেল পুলিশ ও একজন পুরাতন কয়েদীর (ম্যাট) হাতে আমাদের তুলে দিয়ে বলা হ’ল, ৬ সেলের ৪নং কক্ষ। ম্যাট সোহরাব কিছুটা ইতস্তত করছিল। কারণ পরে বুঝলাম যে, এটিই হ’ল রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের সবচাইতে নিকৃষ্ট বলে পরিচিত সেল। এখানে দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী বন্দীদের প্রথমে এনে রাখা হয়। আমরাও এখন জাতীয়তাবাদী ও ইসলামী মূল্যবোধের চারদলীয় জোট সরকারের দৃষ্টিতে অনুরূপ দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী আসামী। তাই আমাদের স্থান এখানেই হয়েছে। জানালা বিহীন পুরাতন জীর্ণ-শীর্ণ এই সেলটি ম্যাটের বর্ণনা মতে ১০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ৬ ফুট প্রস্থের। যার দরজা মোটা লোহার রড দিয়ে তৈরী। বাহিরে উঁচু দেওয়ালের উপরে কাটাতার দিয়ে মোড়ানো। যাতে কোন আসামী দেওয়াল টপকে বেরিয়ে যেতে না পারে। ভিতরে দুই ফুট উঁচু দেওয়াল ঘেরা টয়লেট। বসলে মাথা দেখা যায়। একজন টয়লেটে গেলে অন্যদের পিছন ফিরে বসে থাকতে হয়। ১৯০৮ সালে তৈরী এই জরাজীর্ণ কক্ষে ঢুকিয়ে জনপ্রতি তিনটি করে পুরাতন কম্বল দিয়ে দরজা তালা মেরে দিল। সাথে ১টি করে এ্যানামেলের উঁচু থালা ও বাটি দিল। যাওয়ার সময় কয়েদীটি বলল, ‘স্যার একটি কম্বল দিয়ে বালিশ তৈরী করবেন, একটি দিয়ে বিছানা ও একটি গায়ে দিবেন। স্যার চিন্তা করবেন না, জেলে না আসলে বড় হওয়া যায় না। আসি স্যার! সকালে দেখা হবে’।

লোকটি চলে গেলে আমরা বিছানা ঠিক করতে লাগলাম। রুমের দেওয়ালে লোনা ধরে গেছে। প্লাস্টার খসে খসে পড়ছে। এত ছোট রুমে চার জন শোয়া কঠিন। শু’লে দেওয়ালে পা ঠেকে। সেই সাথে শুরু হ’ল মশক বাহিনীর হামলা। অগণিত মশার ভনভনানী ও ফাঁক পেলেই প্রচন্ড কামড়। কিছুক্ষণের মধ্যেই অতিষ্ঠ হয়ে পড়লাম। থালা দিয়ে আমি বাতাস করে মশার হাত থেকে নিজেদেরকে রক্ষার আপ্রাণ চেষ্টা করতে লাগলাম। এভাবেই ফজরের আযান হ’ল।

আমীরে জামা‘আতের ইমামতিতে ছালাত আদায় করলাম। অতঃপর তিনি এক হৃদয়গ্রাহী দরস পেশ করলেন। দরসটি ছিল সময়োপযোগী ও মনগলানো। আমার যতদূর মনে পড়ে ‘তোমরা হীনবল হয়ো না, চিন্তিত হয়ো না তোমরাই বিজয়ী। যদি তোমরা ঈমানদার হও’ সূরা আলে ইমরান ১৩৯ আয়াতের উপরে তিনি দরস পেশ  করেছিলেন। এ সময়ে তিনি বললেন, নূরুল ইসলাম আমাদের আন্দোলন আল্লাহ কবুল করেছেন। নবী-রাসূলগণের ন্যায় আমাদের উপরও নির্যাতন নেমে এসেছে। এর মাধ্যমে আল্লাহ আমাদের ঈমানের পরীক্ষা নিচ্ছেন। তোমরা ভীত হয়োনা। সে যুগে যেমন নবীগণ প্রচলিত কোন মনগড়া বিধানের সঙ্গে আপোষ করেননি, আমরা তেমনি সবদিক থেকে মুখ ফিরিয়ে মানুষকে স্রেফ আল্লাহর দিকে আহবান জানিয়েছি। আমরা নেতাদের বলেছি ‘সকল বিধান বাতিল কর, অহি-র বিধান কায়েম কর’। এর কারণে আমরা সকল দল ও মতের নেতাদের বিরাগভাজন হয়েছি। আমাদের পূর্বসূরী আহলেহাদীছ নেতৃবৃন্দ জেল-যুলুমের সম্মুখীন হয়েছেন। বাতিলপন্থীদের হাতে অবর্ণনীয় নির্যাতন ভোগ করেছেন। ফাঁসিতে জীবন দিয়েছেন। কিন্তু ঈমান হারাননি। আমাদের অবস্থাও অনুরূপ হ’তে পারে। অতএব তোমরা যেখানেই থাক না কেন, কোন অবস্থাতেই মিথ্যা বলবে না এবং আল্লাহর উপরে তাওয়াক্কুল হারাবে না। আমাদের চারজনের কথা যেন একই রকম হয়। নূরুল ইসলাম! হয়তবা কিছুক্ষণের মধ্যেই আমাদেরকে বিচ্ছিন্ন করে দিতে পারে। চার জনকে চার জায়গায় নিয়ে যেতে পারে। ভয়-ভীতি দেখিয়ে বা নির্যাতন করে মিথ্যা কথা বলিয়ে নিতে চাইবে। খবরদার মরবে, কিন্তু ঈমান হারাবে না’।

সালাফী ছাহেব আগে থেকেই অসুস্থ ছিলেন। তাই পরের দিন তাকে কারা হাসপাতালে স্থানান্তর করা হ’ল। আমরা তিনজন আরো একদিন ঐ কক্ষে থাকলাম। ২য় দিন সকালে বের হ’লে পাশের কক্ষের বন্দীদের সাথে সাক্ষাৎ হ’ল। দু’একজন বয়স্ক ছাড়া সবই তরুণ। তাদেরকে খুব হাসি-খুশী দেখলাম। আযীযুল্লাহর সঙ্গে ওদের ভাব জমে গেল। ওরা খুশী মনে বলল, আমাদের কোন ভয় নেই। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আমাদের সাহায্যে আছেন। পত্রিকার হৈ চৈ থামানোর জন্য আমাদের ৬৭ জনকে ধরে এনেছে। সত্বর মুক্তি পাব’। আমরা আশ্চর্য হয়ে গেলাম। জেএমবি হওয়া সত্ত্বেও এরা মুক্তি পাবে? হ্যাঁ। পরে যখন আমরা নওগাঁ জেলে, তখন জানতে পারলাম যে, এদের ৪০ জন একদিনে এবং তার দু’সপ্তাহ পরে বাকী ২৭ জন মুক্তি পেয়েছে। হ্যাঁ, একেই বলে আইওয়াশ।

তৃতীয় দিন স্যারকে হাসপাতালে নেওয়া হ’ল। থাকলাম আমি এবং আযীযুল্লাহ। এ দিন সোহরাব এসে সালাম দিয়ে আমাদের হাতে একটি করে টিকিট (আমল নামা) ধরিয়ে দিল। তাতে আমাদের নামে যে সমস্ত মামলা দেওয়া হয়েছে তার তালিকা ও ধারা লেখা আছে। সোহরাব বিশ বছর ধরে মিথ্যা মামলায় সশ্রম কারাদন্ডের আসামী। ধারাগুলি তার মুখস্থ। কোন ধারায় কত বছরের জেল হবে, কোন ধারায় ফাঁসি হবে সে ঠিক ঠিক বলে দিতে পারে। আমাদের দু’জনকে আর এক সাথে না রেখে আযীযুল্লাহকে পাশের রুমে পাঠিয়ে দেওয়া হ’ল।

আমাদের টিকিট দেখে সে বলল, বড় স্যারের হবে ৩৮০ বছর, হুযুর স্যারের (সালাফী ছাহেবের) হবে ২৩০ বছর, আর আপনাদের হবে ১৮০ বছর করে। শুনে তো চক্ষু ছনাবড়া। বেটা বলে কি? সে বলল, স্যার চিন্তা করবেন না। এসব ধারা হ্যালোতে হ্যান্ডকাপ পরায়, আবার হ্যালোতে খসে যায়। স্যার চিন্তা করবেন না! কিছুই হবে না। আপনারা আল্লাহওয়ালা মানুষ, আল্লাহ আপনাদের পরীক্ষা করছেন। আপনাদের ঈমান ইবরাহীম (আঃ)-এর মত, না ঈসমাঈলের মত? মূসা (আঃ)-এর মত, না ঈসা (আঃ)-এর মত? না-কি আমাদের নবী মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর মত? যার মত ঈমান হবে তাঁর সাথে জান্নাতে যাবেন। ভাবলাম, মূর্খ সোহরাব কতই না গভীর জ্ঞানের মানুষ! সে আমাকে কৌশলে তাহাজ্জুদ ছালাতের উপদেশ দিয়ে গেল।

৪র্থ দিন নাশতা শেষ না হ’তেই বাবু এসে সালাম দিল। অতঃপর ব্যাগ গুছিয়ে নিয়ে তার সাথে দরবার হলে গিয়ে হাযির হলাম। দেখলাম সেখানে সালাফী ছাহেব ও আযীযুল্লাহকে ডান্ডাবেড়ি পরিয়ে বসিয়ে রাখা হয়েছে। তারা আমার জন্য অপেক্ষা করছেন। আমাকে দেখে সালাফী ছাহেবের চোখ দিয়ে দরদর করে অশ্রু ঝরে পড়ল। আমিও চোখের পানি রুখতে পারলাম না। এসময় আমাকেও ডান্ডাবেড়ী পরানো হ’ল। সোহরাব ম্যাট সান্ত্বনা দিয়ে বলল, স্যার ধৈর্য ধারণ করুন, সব ঠিক হয়ে যাবে, সব অভ্যাস হয়ে যাবে।

তারপর আমাদের তিন জনকে একদল পুলিশ মাইক্রোতে নিয়ে রওনা হ’ল। কোথায়, কেন? কিছুই বুঝতে পারছি না। মাইক্রো দ্রুতগতিতে নাটোর হয়ে কুষ্টিয়া পাড়ি দিল। তখন আমাদের দায়িত্বশীল এসকর্ট অফিসারকে জিজ্ঞেস করলাম, আমরা কোথায় যাচ্ছি? তিনি বললেন, গোপালগঞ্জ কারাগারে। আগামীকাল সেখানে আপনাদের বিরুদ্ধে কোটালীপাড়া ব্রাক অফিসে ডাকাতি মামলার হাযিরা আছে।

অফিসার শাহ আলম অত্যন্ত ভদ্রলোক। তিনি বুঝতে পারছেন, আমরা ভয় পাচ্ছি। তাই আমাদের স্বাভাবিক করার জন্য টুকিটাকি প্রশ্ন ও আলাপ-আলোচনা শুরু করলেন। প্রথম প্রশ্ন : বলুন তো ছালাত শেষে আপনারা দলবদ্ধ মোনাজাত করেন না কেন? সালাফী ছাহেব সুন্দর করে বুঝিয়ে দিলেন। তাতে তিনি খুবই সন্তুষ্ট হ’লেন। ছালাতের পার্থক্যমূলক সমস্ত কথাগুলোই আলোচনা হ’ল। তারপর রাজনীতি, অর্থনীতি, সঊদী আরবের সাথে আমাদের কতটা মিল ইত্যাদি প্রশ্নের মাধ্যমে তিনি কৌশলে আমাদের রাজনৈতিক অবস্থান সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পেয়ে গেলেন। কথায় কথায় সফরটা ভালই হ’ল। গোপালগঞ্জ জেলখানায় পৌঁছতে রাত ৮-টা বেজে গেল। তার আগে থানায় নিয়ে আমাদের নাম-ঠিকানা ইত্যাদি আনুষ্ঠানিকতা সারা হয়।

জেলখানায় পৌঁছলে জেলার সালাফী ছাহেবকে বললেন, হুযুর আপনারা পরিস্থিতির শিকার। দুঃখ করবেন না। আমি আপনাদের জন্য অনেকক্ষণ ধরে অপেক্ষা করছি। আপনাদের কোথায় যে থাকতে দেই? এখানে মাত্র ২৫০ জন আসামীর থাকার জায়গা আছে। কিন্তু আছে এখন ৪৫০ জন। তারপরেও রাত্রে কোনভাবে বসে কাটানো যায় কি-না সেজন্য নিয়ে গেলেন ‘আমদানী’ ওয়ার্ডে। গিয়ে দেখি একদল ঘুমিয়ে আছে, আরেকদল দেওয়ালের সাথে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ঢুলছে। ৪ ঘণ্টা পরে ঘুমন্তদের দাঁড় করিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা লোকদের ঘুমানোর জায়গা করে দিবে। এভাবে ঐ জেলখানায় রাত্রি যাপন করতে হয়। এখানে আবার আমরা তিনজন গিয়ে হাযির। জেলার আসামীদের ম্যাটকে ডেকে বললেন, এঁরা বিশিষ্ট ভদ্রলোক। একটু ব্যবস্থা করে দাও। ম্যাট দু’জনকে তুলে দিয়ে আমাদের বসার জায়গা করে দিল। আমরা কোন মতে বসলাম। কিন্তু খাবার কোথায়? জেলখানায় খাবার শেষ হয় বিকাল ৪-টায়। আর এখন রাত ৮-টা। একজন কয়েদী তার ব্যাগ থেকে দু’মুঠো চিড়া বের করে আমাদের দিয়ে বলল, চিবিয়ে পানি খেয়ে রাত কাটান। সকালে ব্যবস্থা হবে। আমি ও আযীযুল্লাহ খেতে আরম্ভ করলাম। সালাফী ছাহেব গামছার গাঁট থেকে এক টুকরা রুটি বের করে গালে দেওয়ার আগে বললেন, ঐ যে রাজশাহীতে সকালের নাশতা একটি রুটি চার ভাগ করে তিন ভাগ খেয়েছিলাম আর এক ভাগ রেখেছিলাম নিদানকালের জন্য। সেই সকালের এক টুকরা শুকনো রুটি সালাফী ছাহেব মড়মড় করে সামনের দাঁত দিয়ে কামড়াচ্ছিলেন। আর আমি কবিতা আবৃত্তি করছিলাম-

শুকনো রুটিরে সম্বল করে

যে ঈমান আর যে প্রাণের জোরে

ঘুরিছে জগৎ মন্থন করে

সে শক্তি আজ ফিরিয়ে আন।

আমাদের হাতেই উড়িবে দেশে

তাওহীদের ঐ জয় নিশান।

সালাফী ছাহেব শত দুঃখের মধ্যেও হেসে বললেন, আল্লাহ কবুল করুন-আমীন!

বসে ঢুলতে ঢুলতে ফজরের আযান কানে ভেসে আসল ১৬ ফুট উঁচু প্রাচীরের বাধা পেরিয়ে। জায়গার সংকীর্ণতার কারণে একজন একজন করে ছালাত শেষ করলাম। সকাল ৬-টার ঘণ্টা হ’লে লকাপ খোলা হ’ল। আমাদের বের করে হাতে একটি গরম রুটি দিয়ে তাড়াতাড়ি খেয়ে নিতে বললেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই মাইক্রো এসে হাযির। আবার রওনা। কোথায়, কে জানে? কোর্টে হাযির করা হ’ল না। অতঃপর কিছু দূর যেতেই ফেরিঘাট। বুঝতে পারলাম ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ফেরি পার হয়েই আমাদের কালো কাপড় দিয়ে চোখ বেঁধে দেওয়া হ’ল। আতংকে শরীর শিউরে উঠল। ভাবলাম, হয়তবা এক এক করে ফাঁকা রাস্তার ধারে নামিয়ে ক্রস ফায়ারে দিবে। তিন জনের কথা বন্ধ হয়ে গেল। মনে মনে দো‘আ ইউনুস পড়তে পড়তে মৃত্যুর অপেক্ষা করতে থাকলাম। কিন্তু না! মানুষের কোলাহল ও যানবাহনের শব্দ বেড়েই চলল। এক পর্যায়ে মাইক্রোর গতি কমে এল। আমাদের নামতে বলা হ’ল। এবার চোখ খুলে দেওয়া হ’ল। তাকিয়ে দেখি ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট থানা। তখন বেশ রাত।

থানা অফিসের আনুষ্ঠানিকতা সেরে আমাদের নেওয়া হ’ল একটা কক্ষে। সেখানে গোছগাছ শেষে আমরা শোয়ার প্রস্ত্ততি নিচ্ছি। এমন সময় হঠাৎ পাশের  কক্ষের দরজার গ্রিল থেকে গুরুগম্ভীর কণ্ঠের আওয়ায এল, লা তাহযান। ইন্নাল্লা-হা মা‘আনা। দু’তিন বার একই আওয়ায শুনে আমরা নিশ্চিত হয়ে গেলাম যে, পাশের কক্ষেই আছেন মুহতারাম আমীরে্জামা‘আত। আনন্দে মনটা নেচে উঠল। এই ভেবে যে, স্যার বেঁচে আছেন। তাঁকে মেরে ফেলেনি। আলহামদুলিল্লাহ। বারান্দায় কড়া  পুলিশ প্রহরা। তাই বাংলায় কোন কথা বলার সুযোগ নেই। ফলে আমীরে জামা‘আত কুরআনী আয়াতের মাধ্যমে আমাদের সান্ত্বনা দিলেন এবং জানিয়ে দিলেন যে, আমি ভালো আছি। দুশ্চিন্তা করো না।

পরের দিন স্যারের এসকর্ট অফিসারের মাধ্যমে আমাদের এসকর্ট অফিসার জানতে পারেন যে, একই দিন স্যারকে রাজশাহী কারাগার থেকে বিকেলে বের করে রাতে বগুড়া কারাগারে এনে রাখা হয়। পরদিন সকালে তাঁকে বগুড়া থেকে পুলিশের ভ্যানে করে ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট থানায়  আনা হয়। আমাদের পূর্বেই তাঁকে পাশের বড় কক্ষে একাকী রাখা হয়।

উল্লেখ্য যে, দু’টির অধিক ফৌজদারী মামলা থাকলে সেইসব বন্দীর পায়ে বেড়ী পরানো হয়। বিশেষ করে কারাগারের বাইরে নেওয়ার সময়। আমাদের ৬টি করে মামলা ছিল এবং স্যারের ১০টি মামলা ছিল বিভিন্ন যেলায়। আমাদের ডান্ডাবেড়ী পরানো হ’লেও স্যারের পরানো হয়নি। অতঃপর জেআইসিতে স্যারের ধমকের পর আমাদের বেড়ী খুলে দেওয়া হয়। পরে ১৬ মাসের কারা জীবনে স্যারের কেস পার্টনার হওয়ার সম্মানে  আমাদের আর ডান্ডাবেড়ী পরানো হয়নি। আলহামদুলিল্লাহ। আল্লাহ আমাদেরকে জেলখানার এই কঠিন কষ্ট থেকে বাঁচিয়েছেন।

পরদিন সকাল ৯-টার আগে আমাদের বের করা হ’ল। অতঃপর মাইক্রোতে উঠিয়ে চোখ বেঁধে নতুন গন্তব্যে নেওয়া হ’ল। অনেকক্ষণ পর মাইক্রো থামলে আমাদেরকে সিঁড়ি বেয়ে অনেক উপরে একটি কক্ষে নিয়ে চোখ খুলে দেওয়া হ’ল। কক্ষের ভিতর একটি লম্বা টেবিল, কয়েকটি চেয়ার। চতুর্দিকে শাস্তি দেওয়ার নানা রকম কলা-কৌশল দেওয়াল ঘেষে টাঙ্গানো আছে। গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া থানার এসকর্ট অফিসার আমার পাশে বসে আমাকে শাস্তি দেওয়ার নানান ধরনের যন্ত্রের সাথে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছেন। একটি স্টিলের সাদা চেয়ার, দাম ৯ লাখ টাকা। তৈরী আমেরিকায়। ঐ চেয়ারে বন্দীকে বসিয়ে হাত, পা চেয়ারের সাথে শক্ত করে বেঁধে বিদ্যুতের সুইচ টিপলেই সমস্ত দেহে বিদ্যুৎ সঞ্চালন হ’তে থাকবে। চরম ঝাঁকুনী হ’তে থাকবে। কষ্টে নাক-মুখ দিয়ে ফেনা বের হবে। তখন সে সত্য কথা বলতে বাধ্য হবে।

একটি ব্লাক বোর্ডে ছোট ছোট পিন আটকানো আছে। বন্দীর হাত, পা, দেহটা ভালভাবে ব্লাক বোর্ডের সাথে বেধে বোর্ডটিতে সুইচ দিলে তা চরকির মত ঘুরতে থাকবে। তার সাথে সাথে মানুষটিও ঘুরতে থাকবে। একবার মাথা নীচে পা উপরে, আবার পা নীচে মাথা উপরে উঠতে থাকবে। এতে প্রস্রাব, পায়খানা হয়ে যাবে। ফলে সে সত্য কথা বলতে বাধ্য হবে। এভাবে হরেক রকম যন্ত্রের সাথে তিনি পরিচয় করিয়ে দিলেন। এটি ছিল সরকারের ভাড়া করা একটি বিল্ডিং-এর তৃতীয় তলা।

হঠাৎ এ সময় আমাদের এসকর্ট অফিসার আমাদের বললেন, দ্বিতীয় তলায় আপনাদের আমীর ছাহেবকে আনা হয়েছে। তিনি শুনতে পেয়েছেন যে, আপনাদের পায়ে বেড়ী পরানো হয়েছে। তাতে তিনি সিংহের মত গর্জে উঠে বলেছেন যে, আমার নায়েবে আমীরের পায়ে বেড়ী পরানো থাকবে, আর আমি আপনাদের সাথে কথা বলব? অসম্ভব, বেড়ী খুলে দিন’। তাঁর হুমকিতে জেআইসিতে উপস্থিত ২৩ জন দেশসেরা অফিসার চমকে গিয়েছেন। তারা সাথে সাথে আপনাদের বেড়ী খুলে দেওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন।

আমরা বসে আছি। আর ভাবছি কখন কোন শাস্তির হুকুম হয়। কিন্তু না। দেখলাম কিছুক্ষণের মধ্যেই ঢাকা কারাগার থেকে বেড়ী খোলার চাবি এনে আমাদের বেড়ী খুলে দেওয়া হ’ল। পুলিশ অফিসাররা পরস্পর বলতে লাগল, দেখেছ সত্যের কি তেজ? এখানে যতবড় বাঘ আসুক না কেন, এই চেয়ারে বসলেই ভয়ে বিড়াল বনে যায়। অথচ ইনি দেখছি, এখানে এসে সিংহ হয়ে গেলেন। এরূপ সাহসী মানুষ আমাদের জীবনে এই প্রথম দেখলাম।

এসকর্ট অফিসার শাহ আলম ছাহেব আমার জীবন বৃত্তান্ত লিখছেন। এমন সময় দরজায় করাঘাত শুনে আমাকে তাড়াতাড়ি প্রস্ত্ততি নিয়ে দাঁড়াতে বললেন। ১৫/২০ জন লোকের একটা দল এল। ঘরে ঢুকেই তারা বললেন, বসুন! একজন আমাকে হাত ধরে চেয়ারে বসিয়ে দিল। আমি চেয়ারে বসে ভয়ে দো‘আ ইউনুস পড়তে লাগলাম। জিজ্ঞেস করলেন, আপনাদের ইজতেমায় কত লোক হয়? বললাম লক্ষাধিক। তাদের থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা কি? বললাম, প্যান্ডেলেই। গালিব স্যার তো বললেন, দুই/তিন লক্ষ। তিনি কি তাহ’লে মিথ্যা বললেন? বললাম, স্যার দুই/তিন লক্ষ বলেননি, আমার বিশ্বাস। বললেন, আপনাদের মাসিক আয় কত? টাকা কোথায় পান? বললাম, ত্রিশটি যেলায় আমাদের কাজ হয়। কোন যেলা থেকে তিন শত, কোন যেলা থেকে পাঁচশত টাকা হারে এয়ানত আদায় হয়। তাছাড়া যাকাত, ফেৎরা, ওশর ইত্যাদি থেকে প্রায় ১ লাখের মত আয় হয়। নিট হিসাব অফিস সহকারী জানেন। বললেন, আমরা মোফাক্ষার ছাহেবকে ধরে এনেছি। তিনি তো বললেন, মাসে প্রায় দশ লক্ষ টাকা আয় হয়। বিভিন্ন যেলা সভাপতিদের বেতন দেওয়া হয়। লোকদের দান করার জন্য আমীরে জামা‘আতকে মাসে এক লাখ করে টাকা দেওয়া হয়। আমি বললাম, এসব ভুল কথা। আমীরে জামা‘আতকে আমরা কিছুই দেইনা। তাছাড়া আমাদের সহ যেলা সভাপতিদের কাউকে বেতন দেওয়া হয় না। ‎আমাদের আয়-ব্যয়ের হিসাব, রশিদ ও ভাউচার সবই ক্যাশ বইতে লিপিবদ্ধ আছে। তা দেখলে সঠিক হিসাব জানা যাবে। মৌখিক কথা ভুল হ’তে পারে। একজন প্রশ্ন করলেন আচ্ছা আপনারা ছালাত আদায় করেন তো হাত উঁচু করেন কেন? আবার আমীনও জোরে বলেন? আমি উত্তর দিচ্ছি এমন সময় একজন বললেন, চলেন স্যারের কাছে যাই। এই বলে সবাই আমার কাছ থেকে বেরিয়ে গেলেন।

আমরা ছিলাম তৃতীয় তলায় আর স্যার ছিলেন দ্বিতীয় তলায়। ওখানে যা ঘটেছে, তা আমার পাহারাদার এক পুলিশের নিকট থেকে শুনলাম। সে বলল, স্যার এক মজার ঘটনা! আমীর স্যারকে ছালাতের কথা জিজ্ঞেস করলে, তিনি বুখারী-মুসলিমের পৃষ্ঠা নম্বর সহ বলতে লাগলেন। তারা স্যারের মুখ থেকে শুনে পাশের কক্ষে গিয়ে বঙ্গানুবাদ হাদীছের সাথে মিলিয়ে দেখেন সব ঠিক আছে। তখন বারিধারা মসজিদ থেআেনা ওদের জনৈক আলেমকে বলল, আমাদের ছালাত কোন হাদীছে আছে? আলেম তা বলতে পারল না। তখন তারা বলল, বুখারী-মুসলিমে নেই তাহ’লে কোন হাদীছে আছে? পাহারাদার পুলিশ বলল, আমি ওদের কথা শুনে যারপর নেই খুশি হ’লাম। আমি কিন্তু আহলেহাদীছ। স্যার ভয় করবেন না, সত্যের জয় হবেই।

এভাবেই প্রথম দিনের রিম্যান্ড শেষে ক্যান্টনমেন্ট থানা হাজতে আমাদের ফিরিয়ে আনা হ’ল। হাজতে সম্মানজনক অবস্থায় রাখার চেষ্টা করা হ’ল।

ভয় ও শংকার মাঝে সারাদিনের রিম্যান্ড শেষে ক্লান্ত-অবসন্ন দেহে থানায় ফিরে খানা শেষে সন্ধ্যার কিছু পরেই ঘুমিয়ে পড়েছি। রাত ১-টার ঘণ্টা বাজার শব্দ কানে আসল। চোখ খুলে দেখি দরজার কাছে একজন পুলিশ ফিস ফিস করে কান্নার স্বরে বলছে, স্যার! রেডি হৌন, আমি সব ব্যবস্থা করেছি। স্যার আপনাদের পালিয়ে যেতে হবে। এখানে বহু লোককে ধরে এনে ক্রস ফায়ার দেয়। যদি আপনাদের ক্রস ফায়ার দেয়? স্যার আমার ভয় হচ্ছে। তাই আমি মাইক্রো রেডি করেছি। গেটের চাবি ম্যানেজ করেছি। আপনাদের এখান থেকে বের করে দেওয়ার দায়িত্ব আমার। স্যার! দেরি করবেন না, তাড়াতাড়ি করুন। আমি বললাম, আমরা পালালে তোমার কি অবস্থা হবে? চাকরী যাবে, জেল-জরিমানা হবে জীবনও চলে যেতে পারে মিনতির স্বরে কাঁদো কাঁদো কণ্ঠে সে বলল। সে আরো বলল, স্যার আমি পরিণাম বুঝেই সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে, একটি জীবনের বিনিময়ে যদি চার জীবন মুক্ত হয়, একটি প্রাণের বিনিময়ে যদি আমাদের দেশের শ্রেষ্ঠ আলেমদের প্রাণ বেঁচে যায়, তবে সেটাই হবে আমার পরকালে মুক্তির অসীলা। স্যার! দেরি করবেন না। তাড়াতাড়ি করুন। আমি তাকে খুবই বুঝানোর চেষ্টা করলাম যে, দেখ আমরা এমন ব্যক্তি বাংলাদেশে আমাদের লুকানোর কোন জায়গা নেই। যেখানে, যে গ্রামে যাব, সবাই চিনে ফেলবে। তুমি যাও আল্লাহর কাছে দো‘আ কর। স্যার! আমি সব ব্যবস্থা করেছি, ঢাকাতেই থাকবেন। দুই/চার বছর থাকলেও কেউ চিনতে পারবে না কোন অসুবিধাও হবে না। স্যার! আপনাদের বাঁচানো আমার ঈমানী দায়িত্ব। আবুবকর রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে লুকিয়ে রেখেছিলেন, সেজন্য তিনি বিশেষ মর্যাদা পেয়েছেন। এখন নবী-রাসূল নেই, আপনারা ওয়ারাছাতুল আম্বিয়া। আপনারাই বাংলাদেশে রাসূলের ছহীহ হাদীছ প্রচার ও প্রসারের কাজ করেন। তাই আপনাদের বাঁচিয়ে, পরকালে বাঁচার চেষ্টা করা আমাদের দায়িত্ব। স্যার! তালা খুলছি বেরিয়ে আসেন। ওনাদেরও ডাকেন। বললাম, না, আমরা লুকাব না। তুমি দো‘আ করো, কোন ক্ষতি হবে না ইনশাআল্লাহ। ছেলেটি কাঁদতে কাঁদতে চলে গেল। পরে জানলাম, একই কথা সে পাশের কক্ষে স্যারের কাছে গিয়েও বলেছে। কিন্তু তিনি কড়া ভাষায় না করে দিয়েছেন।

পরের দিন সকালে আবার যৌথ জিজ্ঞাসাবাদ সেলে গিয়ে দেখি সবার চেহারায় উৎফুল্লতা ভাব। তারা যেন নতুন কিছু পেয়েছে। বহু আকাঙ্ক্ষিত বিষয় জানতে মহা ব্যস্ত সবাই। আসা-যাওয়া, খাওয়া-দাওয়া, মাসআলা-মাসায়েল জিজ্ঞাসা। এভাবে দশ দিনের রিম্যান্ড শেষে আবার গোপালগঞ্জে ফিরে আসলাম। জেলখানায় ঢুকতেই কয়েদী হযরত আলী সালাম দিয়ে আমাদেরকে অভ্যর্থনা জানিয়ে নির্দিষ্ট কক্ষে নিয়ে গেল। হযরত আলী জেলখানায় তখন ম্যাটের দায়িত্ব পালন করছে। উঁচু বলিষ্ঠ চেহারার মানুষ। গলায় ঝুলছে চাঁদির তৈরী বিশাল তাবীয, শক্ত কালো সুতা দ্বারা বাঁধা। মুখে খোঁচা খোঁচা দাড়ি। দেখে জল্লাদের মত মনে হয়। সে সকলের উদ্দেশ্যে সংক্ষিপ্ত ভাষণে আমাদের সাথে সুন্দর আচরণ করতে বলল। কিন্তু কে শোনে কার কথা? অধিকাংশ কয়েদীর মুখে বিড়ি। গন্ধে বমি হওয়ার উপক্রম। সালাফী ছাহেব কিছুক্ষণ চুপ থেকে কয়েদীদের উদ্দেশ্যে ধূমপানের অপকারিতা সম্পর্কে কুরআন-হাদীছের আলোকে বক্তব্য রাখলেন। গভীর আগ্রহে আলোচনা শুনে সবাই মুগ্ধ। তারপর আমার কথা শেষ না হ’তেই হযরত আলী ঘোষণা দিল এখন থেকেই আমরা এই হারাম খাদ্য পরিহার করলাম। বলার সাথে সাথেই যার কাছে যত বিড়ি ছিল সব ফেলতে লাগল। তাদের বিড়ি ফেলা দেখে মদ হারাম হওয়ার ঘোষণায় মদীনায় ছাহাবীদের মদের মটকা ভেঙ্গে ফেলার দৃশ্য মনে পড়ে গেল।

মাগরিবের ছালাতের সময় হয়ে গেল। আযান দিবে কে? হযরত আলী সুললিত কণ্ঠে আযান দিল। সালাফী ছাহেবের ইমামতিতে ঘরে অবস্থানরত কিছু হিন্দু বাদে সবাই ছালাতে দাঁড়িয়ে গেল। সবাই যেন এক শান্তির আলো ফিরে পেল। জেলার মন্তব্য করলেন, স্যার! আমি তিন বছর ধরে এখানে আছি। এত সুন্দর শান্তিপূর্ণ পরিবেশ কখনও দেখিনি। লাঠিপেটা করেও ওদের মুখ বন্ধ করা যায় না। আর আপনি কি যাদুর কাঠি মুখে ছোঁয়ালেন, ওরা সব বোবা হয়ে গেল? আমাকে এক হিন্দু কয়েদী ফিস ফিস করে বলল, আপনারা কে? বাড়ী-ঘর কোথায়? আমি বললাম, কেন? আমাদের হিন্দুরা সব বলাবলি করছে, উনারা স্বর্গের দেবতা। নইলে যে বিড়ি ছাড়া এক দন্ড থাকা যায় না, সেই বিড়ি আজ তিন দিন খাই না! একবার মনেও পড়ছে না। ওনাদের মুখের কথায় এত আছর, এত প্রভাব? নিশ্চয়ই উনারা মহামানব। বললাম, আমরা দেবতাও নই, মহামানবও নই। আমরা ‘আহলেহাদীছ আন্দোলন বাংলাদেশ’-এর সদস্য। উনি নায়েবে আমীর; নাম আব্দুছ ছামাদ সালাফী, বাড়ী রাজশাহীতে। আমি ঐ দলের সেক্রেটারী, নাম নূরুল ইসলাম, বাড়ী মেহেরপুরে। আরেক জনের নাম আযীযুল্লাহ, বাড়ী সাতক্ষীরায়। ‘বাংলাদেশ আহলেহাদীছ যুবসংঘ’-এর কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক।

স্যার! আপনাদের দল খুব ভাল। আপনাদের কারণে সবাই শান্ত আছে। নইলে হৈ হুল্লোড়, গন্ডগোল, চিৎকার-চেঁচামেচিতে সব সময় জেলখানা গরম হয়ে থাকে। অথচ এখন কোন কথা নেই, সবাই শান্ত। স্যার! আপনারা অচিরেই মুক্তি পাবেন।

সালাফী ছাহেব অসুস্থ হওয়ার কারণে পরদিন তাঁকে একাকী কোর্টে নেওয়া হয়। অতঃপর সেখান থেকে অনুমতি নিয়ে চিকিৎসার জন্য ফরিদপুর কারা হাসপাতালে পাঠানো হয়। যেতে চাইলে আমাদেরকেও সঙ্গে পাঠানো হয়। সেখানে এক আজব দৃশ্য দেখলাম। কিছু কয়েদীর দু’পায়ে এমন বেড়ী পরানো, যাতে হাটতে গেলে পা বেশী লম্বা করা যায় না। অর্থাৎ দৌঁড়ানোর কোন উপায় নেই। অথচ আমাদের পায়ের বেড়ী থাকা সত্ত্বেও লম্বা ধাপ ফেলা যায়। ফরিদপুর থেকে আমরা রাতেই গোপালগঞ্জ কারাগারে ফিরে আসি।

গোপালগঞ্জ থেকে ৫ম দিন ১৪ই মার্চ সকালে আমাদেরকে সরাসরি নওগাঁ জেলখানায় নিয়ে যাওয়া হয়। নওগাঁ যাওয়ার দু’টি রাস্তা। নাটোর-বগুড়া হয়ে নওগাঁ অথবা নাটোর-রাজশাহী হয়ে নওগাঁ। ওসি ছাহেব আমাদের কাছে পরামর্শ চাইলেন। আমি রাজশাহী হয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিলাম। কারণ বেশ কিছুদিন হ’ল দারুল ইমারত দেখিনি। যাওয়ার পথে যদি এক নযর ‘আন্দোলন’-এর কেন্দ্রীয় অফিস, নওদাপাড়া মাদরাসা ও আশপাশের অবস্থা কিছুটা হ’লেও দেখতে পারি। যদি পরিচিত কারো চোখে চোখ পড়ে ইত্যাদি আকাঙ্ক্ষা নিয়েই ঐ পরামর্শ দিলাম। রাতে কাগজ-কলম জোগাড় করে আমাদের অবস্থান সম্পর্কে জানিয়ে একটি চিঠি লিখলাম। ভাবলাম, যদি রাজশাহী হয়ে যায়, তবে মারকাযের পথে চিঠিটি ফেলে দিব যাতে আমাদের অবস্থান সম্পর্কে কেন্দ্র জানতে পারে। যেমন চিন্তা, তেমনি কাজ। মাইক্রোবাস যখন আমচত্বরে আসলো এক নযর দারুল ইমারত দেখার জন্য মন ব্যাকুল হয়ে উঠল। মাইক্রোর কালো গ্লাস খুলে প্রিয়জন হারানোর ব্যথাতুর আত্মাকে সান্ত্বনা দেওয়ার বৃথা চেষ্টা করলাম। ঐ ফাঁকে চিঠিটি ছুঁড়ে মারলাম, যাতে কারো নযরে পড়ে।

১৪ই মার্চ বিকাল ৪-টায় নওগাঁ নতুন জেলখানায় পেঁŠছলাম। অত্যন্ত সুন্দর পরিপাটি, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পরিবেশ। জেলখানার ভিতরে রাস্তার দু’পাশে নানা রকম ফুলের গাছ দিয়ে সাজানো। জেলার, সুবেদার, জমাদার সবাই আমাদের গ্রহণ করার জন্য অপেক্ষা করছিলেন। আমরা মাইক্রো থেকে নামতেই তাঁরা এসে সালাম দিয়ে অফিসে বসালেন। অতঃপর আনুষ্ঠানিকতা সেরে আমাদের ভিতরে নিয়ে গেলেন। দক্ষিণমুখী পাঁচ কক্ষ বিশিষ্ট সেলের একটি কক্ষে আমাদের থাকার ব্যবস্থা করা হ’ল। আমরা তিন জন একই কক্ষে থাকতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করলাম। নিজের মত করে বিছানা সাজিয়ে নিলাম।

পাশের ৪টি কক্ষের একটিতে আছেন নওগাঁর হাসাইগাড়ি গ্রামের মোসলেম মোল্লা। অশীতিপর বৃদ্ধ লোকটি বিনা দোষে ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত। বেচারা অতি গরীব মানুষ। ঘরে তার দু’টি কন্যা সন্তান। রোজগারের একমাত্র উপায় নৌকায় লোক পারাপার।

তিনি জানালেন, এক দিন সন্ধ্যায় তিনি নদীর ঘাটে নৌকা নিয়ে বসে আছেন। তিন জন পথিক এসে পার হ’তে চাইলে তিনি তাদের পার করে দেন। নৌকা থেকে নামার সময় লোকগুলি বলল, বাবাজী! আমরা ঘণ্টাখানের মধ্যেই ফিরে আসব। যদি দয়া করে এখানে অপেক্ষা করেন, তাহ’লে উপকৃত হব। আমরা আপনাকে পুষিয়ে দেব। তাদের আবদার রক্ষার্থে আমি থাকলাম। তারাও ফিরে এসে পার হ’ল এবং আমাকে ৫০০/= টাকা দিয়ে খুশী করে চলে গেল। পাঁচ বছর পর আমি ছোট মেয়েটিকে সাথে নিয়ে গ্রামের বাজারে গিয়েছি। এমন সময় চেŠকিদার এসে বলল, বাবাজী! বড় বাবু আপনাকে দেখা করতে বলেছে। আমি সরল মনে থানায় গেলাম। তারপর তিনি আমার নাম-ঠিকানা জিজ্ঞেস করে কাগজ-পত্র ঠিকঠাক করে সরাসরি আদালত হয়ে জেলখানায় পাঠিয়ে দিলেন। রাস্তায় শুনলাম ঐযে পাঁচ বছর পূর্বে সন্ধ্যায় তিন জনকে পার করেছিলাম, ওরা নাকি ঐদিন আমার নেŠকায় পার হয়ে নিতাইপুরের একজনকে জবাই করে হত্যা করেছি। তাদের তিন জন সহ আমার নামে পলাতক আসামী হিসাবে ফাঁসির রায় হয়েছে। তাদের খোঁজ পাওয়া যায়নি। আমাকে পেয়েছে। তাই...। কথাগুলি বলতে বলতে লোকটি কান্নায় ভেঙ্গে পড়ল। আমরা সান্ত্বনা দিলাম। কিন্তু এসব ঘটনা শুনে আমি মানসিকভাবে  ভেঙ্গে পড়লাম। বুঝলাম, এদেশে বিচার বলতে কিছু নেই। এমন সময় সুবেদার গোলাম হোসেন এসে বললেন, কি হয়েছে? আমি ক্ষোভের সাথে বললাম, এসব কি? বিনা দোষে ফাঁসি? উনি বললেন, স্যার! এসব বলতে নেই। চুপচাপ থাকাই জেলখানার নিয়ম। আমরা বিচারের মালিক নই। আশ্রয়দাতা মাত্র। আমি বিষণ্ণ মনে কক্ষে শুয়ে নানা ভাবনায় ডুবে গেলাম। কয়েক মাস পরে জেলখানা বিষয়ে আমি নিম্নোক্ত কবিতাটি লিখলাম।-

হে মোহিনী জেলখানা

তোমাকে অনেক লেখার ছিল

অব্যক্ত বহু কথাও ছিল

কিন্তু কইতে রয়েছে মানা!

নির্ভেদ প্রাচীরে নির্দোষ জীবন

মৃত্যুর আগেই দন্ডতে মরণ

প্রাণ রাখা কিযে যন্ত্রণা

কিন্তু কইতে রয়েছে মানা!

রাজনীতির ঐ নোংরা ফাঁদে

কত যে জীবন হতাশায় কাঁদে

বুকে চাপা দারুণ বেদনা

কিন্তু কইতে রয়েছে মানা!

গণতন্ত্রের প্রহসনে

আটক রয়েছে বহু বিজ্ঞ জনে,

মুক্তির আশে করছে দিন গণনা।

কিন্তু কইতে রয়েছে মানা \

বহাল রাখতে রাজার গদি

বইয়ে দিচ্ছে রক্তের নদী

ঝরে যায় কত অচেনা প্রাণ,

কিন্তু কইতে রয়েছে মানা।

খুন-খারাবী রাহাযানী

যত করুক হানাহানি

তুমি যে তার শেষ ঠিকানা।

কিন্তু কইতে রয়েছে মানা \

নানা বর্ণের নানা ধর্মের

নানা চিন্তার লোক,

রাজা-প্রজা, শত্রু-মিত্র

যে যাই হোক।

কেউ নির্দোষ কেউ বা দোষী

 কেউ গুণী বা নির্গুণ

সবাইকে তুমি দিয়েছ আশ্রয়

নিবারণে হানাহানি।

থাকার জায়গা পাশাপাশি হ’লেও

মেয়াদ সবার এক নয়।

কেউ আছে দশ-বিশ বছর

কেউ আছে দিন কয়।

কত যে দোষী মুক্তি পেয়ে

করছে অট্টহাসি,

কত যে নির্দোষ

ধুঁকে ধুঁকে মরে

এই বদ্ধ কুঠরী মাঝে।

একই কম্বল, থালা ও বাটি

একই খাবার একই মান,

স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে মোদের

সবাই মোরা এক আদমের সন্তান।

এক সাথে সবার লকাপ খোলা

এক সাথে বন্দী গণনা,

দুনিয়ায় যতই ছোট বড় থাক

কবর মোদের একক ঠিকানা\

[ক্রমশঃ]






বিষয়সমূহ: সংগঠন
দাওয়াতের ক্ষেত্র ও আধুনিক মাধ্যম সমূহ (২য় কিস্তি) - ড. মুহাম্মাদ সাখাওয়াত হোসাইন
১৬ মাসের মর্মান্তিক কারা স্মৃতি (৭ম কিস্তি) - মাওলানা মুহাম্মাদ নূরুল ইসলাম
ইসলামের দৃষ্টিতে সাহিত্য - আসাদুল্লাহ আল-গালিব (শিক্ষার্থী, ইংরেজী বিভাগ, ২য় বর্ষ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়)।
মুসলিম উম্মাহর বর্তমান বিপর্যয়কর পরিস্থিতিতে আমাদের করণীয় - ড. আহমাদ আব্দুল্লাহ নাজীব
ইবাদতের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা (৩য় কিস্তি) - ড. মুহাম্মাদ কাবীরুল ইসলাম
কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে ঈমান (শেষ কিস্তি) - হাফেয আব্দুল মতীন - পিএইচ.ডি গবেষক, আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, মালয়েশিয়া
ঈমান বিধ্বংসী দশটি কারণ - মুহাম্মাদ খায়রুল ইসলাম
ইসলামে শ্রমিকের অধিকার : প্রেক্ষিত মে দিবস - শেখ আব্দুছ ছামাদ
আহলেহাদীছ জামা‘আতের বিরুদ্ধে কতিপয় মিথ্যা অপবাদ পর্যালোচনা (৩য় কিস্তি) - তানযীলুর রহমান - শিক্ষক, বাউটিয়া দাখিল মাদ্রাসা, রাজশাহী
আরবী ভাষা কুরআন বুঝার চাবিকাঠি - ফাতেমা বিনতে আযাদ
দো‘আয় ভুল-ভ্রান্তি ও তা কবুলে দেরী হ’লে করণীয় - আসাদুল্লাহ আল-গালিব
ধন-সম্পদ : মানব জীবনে প্রয়োজন, সীমালংঘনে দহন (২য় কিস্তি) - ড. মুহাম্মাদ সাখাওয়াত হোসাইন
আরও
আরও
.