মুহতারাম আমীরে জামা‘আতকে যেদিন আমাদের থেকে পৃথক করে বগুড়া জেলখানায় নিয়ে যাওয়া হ’ল, সেদিন থেকেই আমার অন্তরে কি যেন এক অজানা শংকা কাজ করত। জেল জীবনের বয়স প্রায় ষোল মাসের কোঠায়। দু’একটি মামলায় যামিন হচ্ছে আর এমন সময় মুহতারাম আমীরে জামা‘আতের পৃথকীকরণ আমার হৃদয়ের গভীরে ক্ষতের সৃষ্টি করে। দিনমণির গতি যখন মন্থর, এর আলোকরশ্মি যখন নিস্তেজের পথে, নীড় ছাড়া পাখী, বাড়ী ছাড়া পশুপ্রাণী যখন স্বজনের সাথে মিলনের মনোবাসনা নিয়ে প্রবল বেগে ছুটছে, আমাদের তখন চৌদ্দ শিকের বন্দিকোঠায় আবদ্ধের ঘণ্টা বাজছে। পাহারাদার বাবু সেকালের পিতলের এক বিরাট তালা হাতে এসে ঘোষণা দিল, আপনারা ভিতরে ঢুকুন ৪-টা বেজে গেছে। এখনি গুনতি দিতে হবে। যা ভাবনা শিকের ভিতরে গিয়ে ভাবুন। অনিচ্ছা সত্ত্বেও ভিতরে গিয়ে শিক ধরে দাঁড়িয়ে ভাবছি, ‘যাঁর চিন্তা-চেতনা বাস্তবায়নের শরীক হিসাবে এ জেলখানায় আগমন, যাঁর শ্লোগান ‘সকল বিধান বাতিল কর, অহি-র বিধান কায়েম কর’; যার আহবান ‘আমরা চাই, এমন একটি ইসলামী সমাজ যেখানে থাকবে না প্রগতির নামে কোন বিজাতীয় মতবাদ, থাকবে না ইসলামের নামে কোনরূপ মাযহাবী সংকীর্ণতাবাদ’ তাঁকে আমাদের থেকে পৃথক করল কেন? সরকারের কি কোন দূরভিসন্ধি আছে, নাকি ক্রস ফায়ারের কৌশল অাঁটছে?

অতীতের বহু স্মৃতি মনে পড়ছে আর চোখ দিয়ে ঝরঝর করে অশ্রু ঝরছে। এমন সময় সুবেদার গোলাম হোসাইন ছাহেব এসে বললেন, আপনার দু’টি খুশির খবর। এক- মুহতারাম আমীরে জামা‘আত বগুড়ায় ভাল আছেন। দুই- এই নিন আপনার বাড়ী থেকে আগত চিঠি। খাম খোলা। জেলখানার নিয়ম হ’ল, পোষ্ট কার্ডে লিখতে হবে। নইলে খাম খুলে জেলার ছাহেব চিঠি পড়ে অনুমোদন দিলে প্রাপকের হাতে পৌঁছবে। যদি আইন বিরোধী কিছু কথা থাকে, তবে তা প্রাপকের হাতে দেওয়া হবে না। আযীযুল্লাহকে বললাম, বাড়ী থেকে চিঠি এসেছে, পড়ছি শোন-

‘পাকজনাবেষু, আসসালামু আলাইকুম। আশা করি আল্লাহপাকের ইচ্ছায় ভাল থেকে পরকালের পাথেয় জোগাড় করার জন্য ইহকালের কষ্ট ধৈর্যের সাথে বরণ করে নিচ্ছেন। আমি স্বপ্নে দেখেছি, আপনারা অতি তাড়াতাড়ি যামিনে মুক্তি পেয়ে যাবেন। চিন্তা করবেন না। আমরা সবাই ভাল আছি। বড়  ছেলে  ‘রুছাফী’  সাতক্ষীরা  বাঁকাল  মাদ্রাসা  থেকে ৮ম শ্রেণী পাশ করে ঢাকার বংশাল মাদরাসায় ভর্তি হ’তে গিয়েছে। বাড়ীতে থাকলে পুলিশ হয়রানি করতে পারে। তাই ঢাকায় ছিলাম। বড় মেয়ে ‘নুছরাত’ আম্মাপারা মুখস্থ করেছে। ওর বয়স এখন ছয় বছর। সে এবার প্রথম শ্রেণীতে ১ম হয়ে ২য় শ্রেণীতে উঠলো। ছোট মেয়ে ‘নিশাত’ এর বয়স এখন তিন বছর। লাল জুতা পায়ে দিয়ে সারা পাড়া ঘুরে বেড়ায়। আর আববা আববা বলে ডাকাডাকি করে। কেউ যদি জিজ্ঞেস করে তোমার আববা কোথায় গেছে? সে বলে, রাজশাহীতে জান্নাত কিনতে গেছে। এরপর দেঁŠড়ে বাড়ী ফিরে এসে আমাকে বলে, আম্মা জান্নাতে কি কি পাওয়া যায়? আমি বলি, আঙ্গুর, আপেল, কমলা ইত্যাদি সুস্বাদু ফলমূল। সে প্রায়ই প্রশ্ন করে, আম্মা! জান্নাত কিনতে কত দিন লাগে? আমি বলি, ভাল জান্নাত কিনতে সময় বেশী লাগে। তোমার জন্য অনেক ভালো ভালো জিনিস আনবে তো, তাই সময় বেশী লাগছে। তুমি কারো বাড়ী যেয়ো না। কখন হয়তো তোমার আববা এসে পড়বেন, তখন তিনি তোমাকে পাবেন না। ইদানীং নিশাতের আববা আববা ডাক খুব বেশী হয়েছে। তাই বিশ্বাস আরো প্রবল হয়েছে যে, আপনাদের বের হওয়ার সময় ঘনিয়ে এসেছে। আমীরে জামা‘আত, সালাফী ছাহেব ও আযীযুল্লাহর বাড়ীর খবর ভাল। আমি তাঁদের বাড়ীতে ফোনে যোগাযোগ করেছি; তাদের সাথে কথা বলেছি। বিবিসির খবরে শুনলাম, মুহতারাম আমীরে জামা‘আতকে নওগাঁ কারাগার থেকে বগুড়া কারাগারে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। এখন আপনারা ওখানে সাময়িক সময়ের জন্য অভিভাবকহীন হয়ে গেলেন। তবে আমীর শূন্য হননি। তিনি যে উপদেশ দিয়ে গেছেন, সেগুলি পালন করার চেষ্টা করবেন। বের হওয়ার জন্য উদগ্রীব হবেন না। জেলখানার একটি দানা রিযিক আপনাদের জন্য বরাদ্দ থাকতে আপনারা বাইরে আসতে পারবেন না। জেলখানা আমল, আক্বীদা ও ইবাদত-বন্দেগীর জন্য নিরিবিলি স্থান। কবি ইকবালের একটি কথা মনে পড়ে, ‘ইসলাম যিন্দা হোতা হ্যায়, হর কারবালাকে বা‘দ’। আপনারা জেলখানায় যাবার পর থেকে এমন কোন মিডিয়া নেই, যেখানে ‘আহলেহাদীছ’-এর কথা শোনা যায় না। ‘আহলেহাদীছ’ শব্দটি এত ব্যাপক প্রচার হচ্ছে যে, আপনারা যখন নির্দোষ প্রমাণিত হয়ে বেরিয়ে আসবেন, তখন এই প্রচার আমাদের সংগঠনের জন্য সহায়ক হবে ইনশাআল্লাহ। আর নয়! অনেক কথা লিখলাম, দো‘আ করবেন, যাতে ধৈর্যের সাথে ঈমান ও আমল নিয়ে বেঁচে থাকতে পারি। ইতি- আন্দোলনের সাথী- আঞ্জুমান আরা। তাং ৫/৬/২০০৬’।

আমার চিঠি পড়া শেষ না হ’তেই সালাফী ছাহেব ডেকে বললেন, আসুন খাবার রেডি, এক সাথে খেয়ে নেই। সেই দুপুরে তৈরী খাবার নষ্ট হয়ে যাবে। সালাফী ছাহেব ভাগ-বাটোয়ারায় খুব পাকা। যেকোন জিনিস সুন্দর করে ভাগ করে দিতে পারেন। নিজে না খেয়ে অপরের থালায় তুলে দিতেই তিনি বেশী আনন্দ বোধ করতেন। তাই প্রত্যেক দিন তিনিই প্রতিটি খাবার ভাগ করে আমাদের ডেকে খাওয়াতেন।

ঔষধ নয়, ব্যায়াম রোগ নিরাময়কারী :

মুহতারাম আমীরে জামা‘আত নওগাঁ কারাগার থেকে বগুড়া চলে যাওয়ার পর থেকে আমাদের মধ্যে কিছু অনিয়ম দেখা দিল। খাওয়া, ঘুম, ব্যায়াম কিছুই নিয়মতান্ত্রিকভাবে হ’ত না। ফলে আমার ডান পায়ের পাতা থেকে কোমর পর্যন্ত মোটা রগটি টেনে ধরতে লাগল। চরম ব্যথা। কারাগারের ডাক্তার বিভিন্ন ঔষধ দিল, নিরাময় হ’ল না। ফলে কারা কর্তৃপক্ষ রাজশাহী মেডিকেল কলেজ থেকে নিওরোলজিষ্ট নিয়ে আসলেন। তিনি আমাকে বিভিন্নভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর একটি ব্যায়াম শিখিয়ে দিলেন এবং বললেন, তিন দিনের মধ্যে আরাম বোধ করবেন। ব্যায়ামটি হ’ল ‘শক্ত বিছানায় চিত হয়ে মৃত মানুষের মত টান টান হয়ে শুতে হবে। তারপর সমস্ত শরীর বিছানায় ঠিক রেখে শুধু ডান পা এক ফুট পরিমাণ উঁচু করে এক থেকে পঞ্চাশ পর্যন্ত স্বাভাবিকভাবে গুনতে হবে। পঞ্চাশ গোনা শেষ হ’লে ডান পা নামিয়ে বাম পায়ের উপরও ঐ নিয়ম প্রয়োগ করতে হবে। পৃথক পৃথক ভাবে দুই পা শেষ করে দুই পা একত্রে এক ফুট পরিমাণ উঁচু করে কোমর বিছানায় ঠিক রেখে ঐ পঞ্চাশ গণনা পরিমাণ সময় ব্যয় করতে হবে। এরপর দুই পা নামাতে হবে। এরপর শোয়া অবস্থায়ই দুই হাত দিয়ে ডান হাঁটু ভাজ করে বুকের সাথে যতদূর পারা যায় চেপে ধরতে হবে এবং পঞ্চাশ গণনার পরিমাণ সময় ব্যয় করতে হবে। ডান হাঁটুর পর বাম হাঁটু একই নিয়মে চলবে। তারপর শোয়া অবস্থায় দুই হাত দিয়ে ঘাড় চেপে ধরে যতটুক পারা যায় বুকের দিকে আনতে হবে। সর্বাবস্থায় পঞ্চাশ পর্যন্ত গণনার সময় নিতে হবে। এভাবে সকাল-সন্ধ্যা দশ বার করে ব্যায়াম করতে করতে সাইটিকার মত বাত ব্যথা সেরে যাবে ইনশাআল্লাহ।

ডাক্তারের কথা মত দুই দিনেই আরাম পেয়ে গেলাম। আমাদের পাশের রুমেই থাকতেন সিভিল সার্জন নূরুল ইসলাম ডাক্তার। তিনি আমার ব্যায়াম দেখে বলতেন, ঔষধ নয় ব্যায়ামেই নিরাময়।

সুবেদার গোলাম হোসাইন :

আমরা যেদিন নওগাঁ কারাগারে আসলাম, সেদিন আমাদের অভ্যর্থনা জানালেন সুবেদার গোলাম হোসাইন। ব্যাগ-ব্যাগেজ আমাদের হাত থেকে নিয়ে অন্য কয়েদীর হাতে দিয়ে পরিচয় করিয়ে দিয়ে বললেন, ওনারা প্রফেসর ডঃ গালিব স্যারের সাথী। ওনাদেরকে দক্ষিণ দিকে পরিষ্কার আলো-বাতাসপূর্ণ সেলে নিয়ে যাও। নতুন কম্বল, থালা-বাসন সহ যাবতীয় কিছুর ব্যবস্থা করে দাও। জেল গেটে ঢুকেই ভিতরে তাকিয়ে দেখি, নয়নাভিরাম এক সুন্দর ফুল বাগান। পশ্চিমের দিকে প্রধান গেট, তিনটি দরজা পাড়ি দিয়ে কারাগার অঙ্গনে ঢুকতেই সুন্দর পরিচ্ছন্ন রাস্তা, সামনে দরজা। দরজা থেকে দু’দিকে দু’টি রাস্তা ওয়ার্ডের দিকে চলে গেছে। রাস্তার দুই ধারে হরেক রকম ফুলের বাগান। তার মাঝে মাঝে সবজির চাষ করা হয়েছে। মূল গেট থেকে দক্ষিণের রাস্তা ধরে আমাদের নিয়ে গেল সর্ব দক্ষিণের নিরিবিলি ৪ রুম বিশিষ্ট একটি সেলে। দক্ষিণ মুখী, পূর্ব-পশ্চিমে লম্বা উক্ত সেলের সর্ব পশ্চিমের রুমটি আমাদের জন্য বরাদ্দ। ঢুকেই দেখি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন। মোজাইক করা মেঝে ও পায়খানা। আছে ফ্যান ও আলোর সুন্দর ব্যবস্থা। সাপ্লাই পানিও রয়েছে। সামনে দক্ষিণের ফাঁকা মাঠের মৃদুমন্দ হাওয়া। মনে হ’ল সুদূর পথ অতিক্রমকারী সম্মানিত অতিথির মাঝপথে বিশ্রামের জন্য সুন্দর রেষ্টহাউজ। কিছুক্ষণ পর হাসতে হাসতে সুবেদার ছাহেব এসে সালাম দিয়ে হাল-হকীকত জিজ্ঞেস করলেন। অতঃপর খাবারের ব্যবস্থা করে চলে গেলেন। সুঠাম দেহ, সুন্দর চেহারার মানুষ তিনি। মিষ্টি হাসি দিয়ে আমাদেরকে আপন করে নিল।

সেদিন আর তার সাথে বেশী কথা হয়নি। পরের দিন সময় করে তার জীবন বৃত্তান্ত শুনালেন। বাড়ী বগুড়া শহরে। ছোটতেই পিতৃহারা। পরের বাড়ীতে মানুষ। অষ্টম শ্রেণী পাশ করে পুলিশের সহযোগিতায় জেলখানার পাহারাদার (বাবু) পদে চাকুরী নেন। দিনে চার ও রাতে চার মোট আট ঘণ্টা ডিউটি। কয়েদী পাহারা দেওয়া আর পুলের নিচে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বই পড়া। এভাবে মেট্রিক পরীক্ষায় ১ম বিভাগে পাশ করেন তিনি। অতঃপর আই.এ, বি.এ পাশ করে বর্তমানে জেলখানার সুবেদার পদে চাকুরীরত। এ সম্মান আল্লাহ তাকে দান করেছেন প্রবল ইচ্ছাশক্তি, কঠোর পরিশ্রম ও অধ্যবসায়ের কারণে বললেন তিনি। জেলখানার ভিতরে যা কিছু দেখছেন, সব আমার আসার পর নিজ হাতে সাজানো। আমার জন্য দো‘আ করবেন- যাতে সম্মান নিয়ে বেঁচে থাকতে পারি।

সুবেদার ছাহেব আমীরে জামা‘আতকে অত্যধিক সম্মান করতেন। আমীরে জামা‘আত বগুড়া চলে যাওয়ার পরেও আমাদের প্রতি তার ভক্তি-শ্রদ্ধায় এতটুকুও কমতি হয়নি। একদিন সকালবেলা আমাদের সাথে সাক্ষাৎ করতে এসে হেসে হেসে বলছেন, ‘চারিদিকের আবহাওয়ায় বলছে আপনারা বেশীদিন এখানে থাকবেন না। দীর্ঘদিন আমীরে জামা‘আতের সাথে মিশে এবং গতকাল বগুড়া জেলখানায় ওনার সাথে দেখা করে ওনার থিম আমি বুঝতে পেরেছি। এদেশে আপনাদের পথেই শান্তি আসবে, এটা আমার একান্ত বিশ্বাস। ওনাকে দেখে এসে রাত্রে বসে বসে অনেক চিন্তা করেছি। পরে চার লাইন কবিতা লিখেছি। আপনি তো বেশ কয়টি কবিতা লিখেছেন। তাই এর সাথে মিল করে আর কয়েক লাইন লিখে আমাকে দিবেন।

গতকাল আমি দেখে আসলাম

ড. গালিব বগুড়ার জেলে,

না জেনে অনেকে মহাজনদের

পিছনে কথা বলে।

কেউ কেউ বলে ড. গালিব

একাই নিয়েছেন ঝুঁকি

ধর্মান্ধদের পথ দেখাতে,

তাঁর সাথীদেরও লক্ষ্য একই (গোলাম হোসেন)

কেউ কেউ বলে অনাচার আর

দুর্নীতির এই দেশে,

সূদ-ঘুষ যুলুম-নির্যাতন

সমাজে গেছে মিশে।

ধর্মে বর্ণে মানুষের মাঝে

দ্বন্দ্ব হয়েছে বেশী,

খুন-খারাবী বোমাবাজী

ঘটিতেছে দিবানিশি।

শক্তিমানের আগ্রাসনের

এ অশান্ত কলিকালে,

ড. গালিব গড়িবে স্বর্গরাজ্য

সইবে কি দেশের ভালে?

প্রশ্ন তোমার যতই থাকুক

কাজ কর মনেপ্রাণে,

সহসা দেখিবে ভ্রমর জুটিবে

সততার সুঘ্রাণে।

তুমি কি দেখনি সাহারা মরুতে

বাতিলের হুংকার,

নিমেষে নিভিল গর্জে উঠিল

তাওহীদী ঝংকার।

সৎ মানুষের ঈমানী পরশে

বদর প্রান্তর থেকে,

ভাগিল বেদ্বীন স্থায়ী হ’ল দ্বীন

গায়েবী মদদ দেখে।

সুনীতি যাদের জীবনের ব্রত

নেই তাদের পরাজয়,

জীবনে মরণে প্রভুর স্মরণে

হবেই তাদের মহা জয়।

পরের দিন সুবেদার ছাহেব এসেই বললেন, কই আপনার কবিতা? আমি বালিশের নীচ থেকে কাগজটি বের করে উপরোক্ত কবিতা শুনিয়ে দিলাম। সুবেদার ছাহেব ধন্যবাদ জানিয়ে আরো লেখার জন্য উৎসাহ দিয়ে চলে গেলেন।

যামিনে মুক্তি লাভ :

কয়েক যেলায় যামিন লাভের পর এবার গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া থানার মামলার পালা। সেই ২০০৫ সালের মার্চ মাসে রিম্যান্ড শেষ করে গোপালগঞ্জ থেকে আমাদের নিয়ে এসেছে। এরপর আমাদেরকে সেখানে আর নিয়ে যায়নি। এখন সংবাদ পেলাম, আগামী ধার্য তারিখে ঐ মামলা থেকে আমাদেরকে অব্যাহতি না দিলেও যামিন দেওয়া হবে। অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি। অনেকে বলছেন, এখানে যেহেতু আপনাদের আর কোন মামলা নেই, সুতরাং আপনারা গোপালগঞ্জে চলে যাবেন। তাহ’লে যেদিন যামিন হবে সেদিনই বের হ’তে পারবেন। তা না হ’লে ওখান থেকে যামিনের কাগজ নওগাঁয় আসতে আবার দু’চার দিন সময় লেগে যেতে পারে। আমরা বললাম, দেড় বছরের কাছে দু’চার দিন কোন সমস্যা নয়। আমাদের আশা আমরা নওগাঁ থেকেই বের হব। অবশেষে তাই হয়েছিল। নির্ধারিত দিন আসল, সকাল থেকে আমরা অধীর আগ্রহে সংবাদ শোনার অপেক্ষায় আছি। সেলের গেটের দিকে বার বার তাকাচ্ছি কখন সুবেদার ছাহেব আসবেন। আর কখন তিনি সংবাদটা দিবেন। অবশেষে অপেক্ষার অবসান ঘটল। বিহারী এসে বলল, সুবেদার স্যার আসছেন। তিনি গুটি গুটি পায়ে হেঁটে এদিকে ওদিকে না গিয়ে সরাসরি আমাদের সেলে আসলেন। তারপর একটু গম্ভীর হয়ে বললেন, আপনাদের কপাল মন্দ। আমাদের চেহারাটা নিমিষেই মলিন হয়ে গেল। তারপরও মনে খুব জোর নিয়ে বললাম, হেঁয়ালি ছাড়েন, খবর বলেন। তখন সুবেদার ছাহেব বললেন, আপনাদের চারজনেরই আজকের মামলায় যামিন হয়ে গেছে। আমরা জোরে আলহামদুলিল্লাহ বলে উঠলাম। বললাম, তবে  যে বললেন কপাল মন্দ? তখন তিনি বললেন, কপাল মন্দ না! এখানে এত আরামে আছেন, খাচ্ছেন, ঘুমাচ্ছেন। তাতো আর পারবেন না। আমরা ইচ্ছা করলেও আপনাদের আর আটকে রাখতে পারব না। রসিকতার ছলে এই কথাগুলো বলতে বলতে মনের অজান্তে কখন যে সুবেদার ছাহেবের চোখ পানিতে ভরে উঠেছে তা তিনি নিজেই বুঝে উঠতে পারেননি। যখন বুঝে উঠলেন, তখন তাঁর চোখের পানি আমাদের থেকে আড়াল করার জন্য অন্য কোন কথা না বলে দ্রুত সেল থেকে বের হয়ে চলে গেলেন। নিয়ম অনুযায়ী বিহারী আব্দুল জাববার পিছনে পিছনে গিয়েছিল। পরে এসে বলল, স্যার আপনাদের সেল থেকে বের হয়ে পকেট থেকে রুমাল বের করে চোখ মুছতে মুছতে চলে গেলেন।

২৯.৬.২০০৬ইং তারিখে তারীকুযযামান, আব্দুর রশীদ আখতার ও আমার ছেলে আব্দুল্লাহ মারূফ রুছাফী নওগাঁ কারাগারে দেখা করতে এসে সমস্ত কেসের খবর, দেশ ও সংগঠনের ভিতর-বাইরের বিষয়ে বিস্তারিত সংবাদ দেয়। সিরাজগঞ্জ, নওগাঁ সহ অন্যান্য মামলায় যামিন হয়েছে জানিয়ে বলে, আগামী ২.৭.২০০৬ তারিখে গোপালগঞ্জের কাগজ আমরা হাতে পাব ইনশাআল্লাহ। ঐ দিন বিকালে কিংবা পরের দিন আপনারা রেডি থাকবেন। ৩ তারিখ সকাল থেকে মনের মধ্যে নিরানন্দ কাজ করছিল। সালাফী ছাহেব, আযীযুল্লাহ বিছানা-পত্র গুটিয়ে দীর্ঘ ১৬ মাসের জেল সংসারের আসবাবপত্র বিলিবণ্টন করতে আরম্ভ করল। আমি বাইরে দাঁড়িয়ে ষোল মাসের স্মৃতিচারণ করছিলাম। সেদিন সালাফী ছাহেব বললেন, আগে আমীরে জামা‘আতকে বের করে পরে আমাদের বের করবে। কিন্তু আমীরে জামা‘আতকে রেখে আমরাইতো আগে বের হচ্ছি। আমীরে জামা‘আত বলেছিলেন, নূরুল ইসলাম! আমি আল্লাহকে বলেছি, ‘হে আল্লাহ! আমার কোন কর্মীকে জেলে রেখে তুমি আমাকে মুক্তি দিয়ো না। দেখবা, তোমরাই আগে যামিন পাবা’। এখন দেখছি তাইতো হ’ল। ইত্যাদি নানান চিন্তা মনের কোণে ভেসে উঠছিল। বেলা যত বেশী হচ্ছে বাইরে যাওয়ার আগ্রহ তত বেড়ে যাচ্ছে। কিন্তু কোন খবর হ’ল না। বিকাল হ’লে লকাপের ঘণ্টা বাজল, জেলগেট থেকে কোন খবর আসল না। সালাফী ছাহেব তো রাগে বকাবকি শুরু করে দিলেন। আমাদের মিথ্যা আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। সরকার আবার কোন ফন্দি-ফিকির করছে কে জানে? আমি তো বলেই ছিলাম যে, আমীরে জামা‘আতের যামিন না হওয়া পর্যন্ত আমাদের যামিন হবে না ইত্যাদি ইত্যাদি। সেদিনের মত মন খারাপ করে হাযারো ভাবনা ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়লাম। এরপর তিন চার দিনের মধ্যে কোন খবর নেই। না চিঠিপত্র, না দেখা-সাক্ষাৎ, না সুবেদার ছাহেব। মুক্তির আশা একরকম বাদ দিয়েই নিশ্চিন্তে বসে দিন কাটাচ্ছি।

প্রতীক্ষায় থাকলাম। কখন আসবে গোপালগঞ্জ থেকে নওগাঁ কারাগারে আমাদের মুক্তির আদেশপত্র? অবসরে সুবেদার ছাহেব আবার আসলেন আমাদের সেলে। বললেন, কমপক্ষে ৩ দিন সময় লাগবে। নিশ্চিত মুক্তির সংবাদ পেয়ে এই কয়দিন আমরা নির্ঘুম সময় কাটিয়েছি। নানা রকম চিন্তা মাথায় এসে জমা হ’ত। গ্রেফতার হ’লাম চারজন; কিন্তু বের হচ্ছি তিনজন। আমীরে জামা‘আত কবে বের হবেন, কিছুই বুঝা যাচ্ছে না। আমরা বের হওয়ার সাথে সাথে আমাদের উপর চেপে বসবে বড় বড় দু’টি দায়িত্ব। একটি হ’ল সংগঠনের দায়িত্ব, আরেকটি হ’ল আমীরে জামা‘আতের মুক্তির দায়িত্ব। অপরদিকে আযীযুল্লাহও এখন ‘যুবসংঘে’র কেন্দ্রীয় সভাপতি। সেও বলছে, ভাই আগে অন্যের অধীনে থেকে কাজ করেছি, এখন আমাকেই অন্যের দায়িত্ব নিয়ে কাজ করতে হবে। তার উপর সংগঠনের এই নাযুক পরিস্থিতি। তাকেও বিভিন্ন উৎসাহ ব্যঞ্জক কথা বলে সান্ত্বনা দিচ্ছি, অভয় দিচ্ছি। এমনিভাবে নানা রকম চিন্তা করতে করতে কখন যে সময় পার হয়ে মুক্তির শুভক্ষণ উপস্থিত হয়ে গেছে বুঝতেই পারিনি।

৯ই জুলাই’০৬ রবিবার দুপুর ১-টা। সুবেদার ছাহেব এসে বললেন, নওগাঁ আদালত হয়ে আপনাদের মুক্তির আদেশ আমাদের জেল সুপার ছাহেবের কাছে চলে এসেছে। সুতরাং আপনারা নিজেদের প্রয়োজনীয় জিনিস-পত্র, কাপড়-চোপড়, বই-পত্র গোছগাছ করে নিন। তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম, আমাদের নেওয়ার জন্য বাইরে কি কেউ এসেছে, নাকি আমাদের একা একা যেতে হবে? সুবেদার ছাহেব এব্যাপারে খোলাছা করে কিছুই বললেন না। বুঝতে পারলাম, আমাদের চলে যাওয়ার বিষয়টা তাঁর মনও সহজভাবে মেনে নিচ্ছে না। কিন্তু ঐ যে রবীন্দ্রনাথ বলেছেন, ‘যেতে নাহি দেব হায়! তবু যেতে দিতে হয়, তবু চলে যায়’। নিজেরা বলাবলি করলাম, অবশ্যই কেউ না কেউ এসেছে, চিন্তার কোন কারণ নেই। প্রস্ত্ততি গ্রহণ করলাম। যেসব জিনিস বাইরে এসে তেমন প্রয়োজন নেই, সেসব জিনিস আগে থেকেই যাকে যা দেওয়া যায় তাকে তা দিয়ে জিনিসপত্র কমিয়ে ফেলেছি। এখন যেগুলো নিতান্ত প্রয়োজনীয় জিনিস ছিল সেগুলো গোছগাছ করার পালা। আযীযুল্লাহ তার পি.এইচ.ডির বিষয়ে পড়ার জন্য যেসব বই কারাগারে নিয়েছিল সেগুলো সুন্দর করে বেঁধে নিল। আমরাও পড়ার জন্য যেসব বই নিয়েছিলাম তাও গুছিয়ে নিলাম। একে একে আমাদের গোছগাছ শেষ হ’ল। এদিকে সুবেদার ছাহেব আমাদের জিনিসপত্রগুলো সেল থেকে কারাগারের গেট পর্যন্ত পৌঁছানোর জন্য কয়েকজন কয়েদীকে ডেকে নিয়ে এসেছেন। আমাদের আব্দুল জাববার বিহারী তো আছেই। সেল থেকে আমরা যখন বের হচ্ছিলাম, তখন সেখানে এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হ’ল। সেলের সকল আসামীর চোখে পানি। অনেকে সশব্দে কেঁদে ফেললেন। ঐ পরিবেশ থেকে বের হয়ে আসতে আমাদেরও খুব কষ্ট হচ্ছিল। কিন্তু কিছুই করার নেই। সেলের কারারক্ষী হাজতী, কয়েদী, ফাঁসির আসামী সকলের সঙ্গে পর্যায়ক্রমে মুছাফাহা করে বিদায় নিলাম। পেছন ফিরে দেখলাম, সকলেই অপলক নেত্রে আমাদের দিকে তাকিয়ে আছেন।

সেদিন দুপুরের খাবার খেতে কেন যেন ভাল লাগছে না, তাই বিলম্ব হয়ে গেছে। ইতিমধ্যে পাহারা বাবুদের ডিউটি পরিবর্তন হয়ে বিকালের বাবু এসে আমাদের দিকে তাকিয়ে কি যেন বলতে চেয়ে বললেন না- শুধু জানালেন বাইরে অনেক আলেম-ওলামা টুপি-দাড়ীওয়ালা মানুষ সকাল থেকে ভীড় করে আছে। ভাবলাম কোন মহৎ ব্যক্তির হয়তো জেল হয়েছে, তাকে কোর্ট থেকে আনছে তাই এত ভীড়। আযীযুল্লাহ আমার দিকে তাকিয়ে হাসতে হাসতে বলছে, আরে ভাই আমাদেরও তো হ’তে পারে? এদিকে সালাফী ছাহেব রেগে রেগে বলছেন, রাখুন ওসব চিন্তা-ভাবনা। বিকাল ৩-টা বাজতে গেল, এখনো দুপরের খাবার খেলেন না, তাড়াতাড়ি আসুন। তিনি তিনজনের থালাতে ভাত তুলে দিয়ে তরকারী দিচ্ছেন। আমি হাত ধুয়ে ভাতে হাত দিয়েছি এমন সময় দ্রুতপায়ে সুবেদার ছাহেব এসে বললেন, কালবিলম্ব না করে তাড়াতাড়ি রেডি হৌন! আপনাদের যামিনের কাগজ তৈরী হয়ে গেছে সকাল থেকে আপনাদের সংগঠনের লোকজন এসে ভীড় জমিয়ে বসে আছে। চলুন আমার সাথে। থালার ভাত থালাতেই থাকল, হাতের ভাত ঝেড়ে ফেলে দিয়ে শুধু পাঞ্জাবী গায়ে দিয়ে দীর্ঘ ১৬ মাসের কারাজীবনের গোছানো সংসার অন্যান্য কয়েদীদের হাতে তুলে দিয়ে ঊর্ধ্বশ্বাসে জেল গেটে এসে হাযির হ’লাম।

আমরা মুক্তি পাচ্ছি এ সংবাদ কারাগারের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ল। এক নযর দেখার জন্য সবারই লক্ষ্য সেলের প্রধান ফটকের দিকে। আমরা বের হওয়ার সাথে সাথে চৌকায় কর্মরত কয়েদীরা দূর থেকে হাত নেড়ে আমাদেরকে অশ্রুসিক্ত নয়নে বিদায় জানাল। এরপর সেল থেকে কারাগারের প্রধান ফটক পর্যন্ত হেঁটে আসার সময় দূরের ওয়ার্ডগুলো থেকে এবং মেডিকেল ওয়ার্ড থেকে একইভাবে হাজতী-কয়েদীরা হাত নেড়ে বিদায় জানালো।

সুবেদার ছাহেব আমাদের সঙ্গে আছেন। কিন্তু কোন কথা বলছেন না। মাথা নীচু করে হাঁটছেন। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, তিন মিনিটের পথ যেন তার কাছে তিন ঘণ্টার পথ হয়ে গেছে। মেইন গেটে এসে দায়িত্বপ্রাপ্ত কারারক্ষীকে ইশারায় গেট খুলতে বললেন। মুখে বললে, যদি আমরা কিছু বুঝে ফেলি? গেট খোলা হ’ল, আমরা অফিসে প্রবেশ করলাম। আমাদের জিনিসপত্রগুলো ইতিমধ্যে বিধি মোতাবেক গেটে নামমাত্র চেক হয়ে বাইরে আমাদের লোকের কাছে পৌঁছে গেছে। অফিসে আমাদের সকলের স্বাক্ষর নিয়ে অফিসিয়াল নিয়ম-কানূন সমাপ্ত হ’ল। সুপার, জেলার, ডেপুটি জেলারসহ উপস্থিত সকলের সাথে মুছাফাহা করে আস্তে আস্তে আমরা কারাগারের বাইরের গেটের দিকে অগ্রসর হ’লাম। এবার সুবেদার ছাহেব কারারক্ষীকে ইশারা না করে মুখেই মেইন গেট খোলার নির্দেশ দিলেন। ইতিমধ্যে হয়তো তিনি নিজেকে সামলে নিয়েছেন। কিন্তু আমরা সামলাতে পারিনি। তাকে জড়িয়ে ধরে চোখের পানিতে শুকরিয়া জানালাম। তিনিই ছিলেন কারাজীবনে আমাদের বড় হিতাকাঙ্ক্ষী। আল্লাহ তাঁকে এর সর্বোত্তম বিনিময় দান করুন- আমীন!

অতঃপর বিকেল ৫-টায় বাইরের গেট খোলা হ’ল। গেটের বাইরে এসে যেটা দেখলাম সেটা আমরা বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। আমরা ভেবেছিলাম, আমাদের নিতে হয়তো রাজশাহী এবং নওগাঁর কিছু নেতা-কর্মী আসতে পারেন। কিন্তু বাইরে বের হয়ে দেখি কয়েক হাযার মানুষ আমাদের নেওয়ার জন্য কারাগারের বাইরের চত্বরে ও রাস্তায় উপস্থিত। খুশিতে আমাদের সকলের চোখ আবার ভিজে উঠল। আমাদের দেখা মাত্র সকাল থেকে চাতকের মত অপেক্ষমান জান্নাত পিয়াসী কর্মী ভাইদের দু’গন্ড বেয়ে আনন্দাশ্রু ঝরতে লাগল। সালাম-মুছাফাহা করতে করতে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়ানো কর্মীদের দুই লাইনের সরু পথ দিয়ে দূরে দাঁড়ানো মাইক্রোর দিকে এগিয়ে চলছিলাম। তখন আমীরে জামা‘আতকে একাকী জেলখানায় রেখে বের হওয়ার বেদনায় আমার দু’গন্ড বেয়ে অশ্রু পড়ছিল।

কারাফটক থেকে একেবারে বাইরের রাস্তা পর্যন্ত লাইন দিয়ে দুই ধারে নেতা-কর্মীরা সকাল থেকেই দাঁড়িয়ে আছে।  উদ্দেশ্য আমরা বের হওয়ার পর আমাদের সাথে একটু মুছাফাহা করা। আমরা বের হয়ে পর্যায়ক্রমে মুছাফাহা করতে করতে আমাদের জন্য নির্দিষ্ট স্থানে রক্ষিত মাইক্রোবাসে এসে উঠলাম। পর্যায়ক্রমে আমাদের নিতে আসা সকলে যার যার রিজার্ভ গাড়িতে উঠল। আস্তে আস্তে সকল গাড়ি লাইন দিয়ে রাস্তায় উঠে গেল। এমনিভাবে আমরা তিনজন আমাদের ১ বছর ৪ মাস ১৪ দিনের কারাজীবনের অবসান ঘটিয়ে রাজশাহীর উদ্দেশ্যে রওয়ানা হ’লাম।

বগুড়া, নওগাঁ, জয়পুরহাট, রাজশাহী, মেহেরপুর থেকে যেলা কর্মপরিষদের দায়িত্বশীল, সাতক্ষীরা থেকে আযীযুল্লাহর আত্মীয়-স্বজন সহ যেলার দায়িত্বশীল, কেন্দ্রীয় দায়িত্বশীল এবং নওদাপাড়া মাদরাসার শিক্ষক-ছাত্রদের তিনটি মাইক্রো সিরিয়াল করে রাখা আছে। তাদের আবেদন তিন মাইক্রোতে তিন জনকে উঠতে হবে। আমি সিদ্ধান্ত দিলাম আমরা তিন জন কেন্দ্রীয় নেতা এক মাইক্রোতে রাজশাহী কেন্দ্র পর্যন্ত যাব। ১৬ মাস পূর্বে মিথ্যা মামলার আসামী করে ‘আহলেহাদীছ আন্দোলন’কে দুনিয়ার বুক থেকে নিভিয়ে দেওয়ার যে হীন চক্রান্তে আমাদেরকে গ্রেফতার করা হয়েছিল, সেই দারুল ইমারত হবে আমাদের প্রথম অবতরণ স্থল। প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস বহর সহ কর্মীরা আমাদের নিয়ে চলল রাজশাহীর উদ্দেশ্যে। আমরা ছহীহ-সালামতে বাদ মাগরিব মারকাযে এসে উপস্থিত হ’লাম। ফালিল্লা-হিল হাম্দ। 






নববী চিকিৎসা পদ্ধতি (৭ম কিস্তি) - কামারুযযামান বিন আব্দুল বারী
কাদিয়ানীদের বিরুদ্ধে আন্দোলনে ভারতীয় উপমহাদেশের আহলেহাদীছ আলেমগণের অগ্রণী ভূমিকা - ড. নূরুল ইসলাম
আলেমে দ্বীনের মর্যাদা ও বৈশিষ্ট্য - হাফেয আব্দুল মতীন - পিএইচ.ডি গবেষক, আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, মালয়েশিয়া
জামা‘আতবদ্ধ জীবন যাপনের আবশ্যকতা (৪র্থ কিস্তি) - মুহাম্মাদ আব্দুর রহীম
এপ্রিল ফুল্স - আত-তাহরীক ডেস্ক
আহলেহাদীছ জামা‘আতের বিরুদ্ধে কতিপয় মিথ্যা অপবাদ পর্যালোচনা (৫ম কিস্তি) - তানযীলুর রহমান - শিক্ষক, বাউটিয়া দাখিল মাদ্রাসা, রাজশাহী
বিদায়ের আগে রেখে যাও কিছু পদচিহ্ন (৪র্থ কিস্তি) - মুহাম্মাদ আব্দুল মালেক
শোকর (প্রথম কিস্তি) - মুহাম্মাদ আব্দুল মালেক
তাক্বলীদের বিরুদ্ধে ৮১টি দলীল (৩য় কিস্তি) - মুহাম্মাদ আব্দুল মালেক
আল্লাহ ও রাসূল (ছাঃ) সম্পর্কে কতিপয় ভ্রান্ত আক্বীদা (শেষ কিস্তি) - হাফেয আব্দুল মতীন - পিএইচ.ডি গবেষক, আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, মালয়েশিয়া
ধন-সম্পদ : মানব জীবনে প্রয়োজন, সীমালংঘনে দহন (৩য় কিস্তি) - ড. মুহাম্মাদ সাখাওয়াত হোসাইন
আদালত পাড়ার সেই দিনগুলি - শামসুল আলম
আরও
আরও
.