‘জমঈয়তে আহলে হাদীস পশ্চিমবঙ্গ’-এর সভাপতি ও অক্টোবর ১৯৭২ থেকে আমৃত্যু মাসিক ‘আহলে হাদীস’ পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা ও সম্পাদক হাফেয মাওলানা আইনুল বারী আলিয়াভী (৭৫) গত ১৫ই মে শুক্রবার সন্ধ্যা ৬-টায় কলকাতার মেটিয়াবুরুজে নিজ বাসভবনে মৃত্যুবরণ করেন। ইন্না লিল্ল­া-হি ওয়া ইন্না ইলাইহে রাজে‘ঊন। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, ৪ পুত্র ও ৩ কন্যাসহ বহু আত্মীয়-স্বজন, ছাত্র ও গুণগ্রাহী রেখে যান। পরদিন শনিবার সকাল ১১-টায় মেটিয়াবুরুজের হালদারপাড়া আহলেহাদীছ জামে মসজিদে তাঁর জানাযার ছালাত অনুষ্ঠিত হয়। জানাযায় ইমামতি করেন তাঁর পুত্র হাফেয নাছরুল বারী (শিক্ষক, কলকাতা সরকারী আলিয়া মাদ্রাসা)। জানাযা শেষে তাঁকে হালদারপাড়া কবরস্থানে দাফন করা  হয়।

সংক্ষিপ্ত জীবনী : তিনি ১৯৪৫ সালের ২রা মার্চ কলকাতার মেটিয়াবুরুজের হালদারপাড়ার অন্তর্গত ধোপাপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ছাত্রজীবনে তিনি প্রভূত মেধার পরিচয় দেন। বাল্যকালে তিনি আখড়া মাদ্রাসায় ১ বছরে কুরআন মাজীদ হিফয করেন। তিনি কলকাতা আলিয়া থেকে কামিল (হাদীছ) ডিগ্রী অর্জন করেন এবং রেকর্ডসংখ্যক নম্বর পেয়ে ১ম শ্রেণীতে ১ম স্থান অধিকার করেন। ১৯৬৮-৬৯ শিক্ষাবর্ষে তিনি ঢাকা আলিয়া মাদ্রাসা থেকে উর্দূ ডিপ্লোমা কোর্স সম্পন্ন করেন। তিনি আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম.এ ডিগ্রী অর্জন করেন। ১৯৭৫ সালের মাঝামাঝিতে তিনি কলিকাতা আলিয়া মাদ্রাসায় সহকারী মৌলভী পদে যোগদান করেন। ১৯৮৪ সালে কলকাতা আলিয়ার ২০০ বছর পূর্তি অনুষ্ঠানে তিনি ‘কলিকাতা মাদ্রাসা প্রাক্তন ছাত্র সংসদ’-এর সম্পাদক মনোনীত হন। তিনি ‘ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংক’ (আইডিবি)-এর পূর্ব ভারতের সেন্ট্রাল প্যানেল মেম্বার ছিলেন। তাঁরই সুফারিশে ও প্রচেষ্টায় সংগ্রামপুরে সপ্তগ্রাম এডুকেশন সোসাইটি, কলকাতায় ইসলামিয়া হাসপাতাল সহ পশ্চিমবঙ্গ ও আসাম প্রদেশের বহু মুসলিম প্রতিষ্ঠান আইডিবি থেকে আর্থিক সাহায্য পায়। ২০০৯ সাল পর্যন্ত তিনি কলিকাতা আলিয়া মাদ্রাসায় ইসলামিক থিওলজি বিভাগের অধ্যাপক হিসাবে কর্মরত ছিলেন। ২০০৯ সালে অবসর নেয়ার পরও তিনি ৩ বছর অতিথি অধ্যাপক হিসাবে পাঠদান অব্যাহত রেখেছিলেন।

সাংগঠনিক জীবনে তিনি ১৯৭২ থেকে ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত ‘জমঈয়তে আহলে হাদীস পশ্চিমবঙ্গ’-এর সম্পাদক ও ১৯৯৫ সাল থেকে আমৃত্যু সভাপতি হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া ১৯৯০ থেকে ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত ‘মারকাযী জমঈয়তে আহলেহাদীছ হিন্দ’-এর নায়েবে আমীর হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। পশ্চিমবঙ্গে আহলেহাদীছ আন্দোলনের প্রচার-প্রসারে তাঁর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। ১৯৭২ সালের অক্টোবর থেকে মাসিক ‘আহলে হাদীস’ পত্রিকার সম্পাদনার দায়িত্ব পালন করেন। তিনি পঞ্চাশের অধিক গ্রন্থ রচনা করেছেন। তন্মধ্যে কয়েকটি হ’ল, ১. আইনী তুহফা সলাতে মুস্তফা (২ খন্ড) ২. কুরআন মাজীদ (সহজ অনুবাদ) ৩. তাফসীরে আইনী (২ খন্ড) ৪. হাদীছের ইতিবৃত্ত ৫. কুরআন ও তাফসীরের ইতিবৃত্ত ৬. সিয়াম ও রমাযান ৭. কাদিয়ানী কাহিনী ৮. মীলাদুন্নবী ও বিভিন্ন বার্ষিকী ৯. ইসলামের স্তম্ভ ১০. যাকাত ও সদকা ১১. আহলেহাদীসের প্রকৃত পরিচয় ১২. কোরবানী ও আইনী বিবরণী ১৩. কোরআন পড়িয়ে সওয়াব বখশানো সুন্নাত না বিদ‘আত ১৪. পাকা মাযার ও অসীলার তত্ত্বসার ১৫. ইলিয়াসী তাবলীগ ও দ্বীনে ইসলামের তাবলীগ।

[মুহতারাম আমীরে জামা‘আত ‘আহলেহাদীছ আন্দোলন’-এর উপর ডক্টরেট করার জন্য ৫২ দিনের পাকিস্তান, ভারত ও নেপাল সফরের মাঝে ৩২ দিনের ভারত সফরের এক পর্যায়ে ১৯৮৯ সালের ২রা ফেব্রুয়ারী পশ্চিমবঙ্গে আসেন। তখন মাওলানা আয়নুল বারী পশ্চিম বঙ্গ জমঈয়তে আহলেহাদীসের সাধারণ সম্পাদক হিসাবে তাঁকে মৌখিক ও লিখিত অনেক তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেন (দ্র. থিসিস পৃ. ৪০১ টীকা-৪০)। আমীরে জামা‘আত সেজন্য সর্বদা তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতেন। তিনি তাঁর মৃত্যুতে গভীর দুঃখ প্রকাশ করেন এবং তার রূহের মাগফিরাত কামনা করেন- সম্পাদক]।






আরও
আরও
.