১. রাজশাহী-পশ্চিম ২৩শে এপ্রিল রবিবার : পবিত্র ঈদুল ফিতরের পরে সপ্তাহকালীন ছুটিকে দাওয়াতী সফরে ব্যয় করার উদ্দেশ্যে ঈদের পরদিন রবিবার মুহতারাম আমীরে জামা‘আত প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব রাজশাহী-পশ্চিম যেলার গোদাগাড়ী ও মোহনপুর উপযেলার বিভিন্ন এলাকা সফর করেন। রাজশাহী-সদর যেলা সভাপতি মাওলানা দুররুল হুদার নেতৃত্বে মহানগরের কর্মী সালমান ফারেসী-এর নিজস্ব প্রাইভেট কার ও ১টি ভাড়া করা হাইয়েস যোগে নেতা-কর্মীদের সাথে নিয়ে তিনি বেলা ১১টায় নওদাপাড়া মারকায থেকে রওয়ানা হন। এসময় আমীরে জামা‘আতের সফরসঙ্গী ছিলেন ‘আন্দোলন’-এর কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক ড. মুহাম্মাদ সাখাওয়াত হোসাইন, দফতর সম্পাদক ড. মুহাম্মাদ কাবীরুল ইসলাম, আমীরে জামা‘আতের তিন পুত্র হাদীছ ফাউন্ডেশন শিক্ষাবোর্ড-এর চেয়ারম্যান ড. আহমাদ আব্দুল্লাহ ছাকিব, হাদীছ ফাউন্ডেশন গবেষণা বিভাগের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. আহমাদ আব্দুল্লাহ নাজীব ও মারকাযের হেফয বিভাগের সহকারী পরিচালক হাফেয আহমাদ আব্দুল্লাহ শাকির। এতদ্ব্যতীত ‘যুবসংঘ’-এর কেন্দ্রীয় সভাপতি মুহাম্মাদ শরীফুল ইসলাম, ‘আল-‘আওন’-এর সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মাদ জাহিদ, আন্দোলন-এর সুধী ও স্থানীয় ব্যবসায়ী যিয়ারত আলী প্রমুখ।

অতঃপর গোদাগাড়ী উপযেলার দরগাপাড়া, সেরাপাড়া মাদ্রাসা, ঝিনা উত্তরপাড়া, ডাকনীপাড়া মাসাকা গার্ডেন, খানপুর-মহববতপুর ডিগ্রী কলেজ ময়দান, খানপুর-দক্ষিণপাড়া জামে মসজিদে প্রোগ্রাম সেরে রাত ১০-টায় তিনি মারকাযে ফিরে আসেন। বিস্তারিত নিম্নরূপ :

(১) দরগাপাড়া : মারকায থেকে রওয়ানা হয়ে গোদাগাড়ী উপযেলার চবিবশনগরে পৌঁছলে রাজশাহী-পশ্চিম যেলা ‘আন্দোলন’-এর সভাপতি অধ্যাপক মাওলানা দুররুল হুদা ও সেক্রেটারী অধ্যাপক তোফাযযল হোসাইনের নেতৃত্বে অর্ধশতাধিক মোটর সাইকেল যোগে কর্মীরা আমীরে জামা‘আত ও তাঁর সফর সঙ্গীদের অভ্যর্থনা জানান। অতঃপর কাকনহাট রেল স্টেশনের অনতিদূরে বিস্তীর্ণ ধান ক্ষেতের মধ্যে পথিপার্শ্বস্থ দরগাপাড়া আমবাগানে তিনি অর্ধশতাধিক হোন্ডা মিছিলকে একত্রিত করে তাদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখেন। তিনি ফল-ফসলে ভরা সবুজ বাংলাদেশের প্রাকৃতিক দৃশ্য এবং মৃদুমন্দ বায়ু হিল্লোলকে আল্লাহর অপার নিদর্শন হিসাবে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, আজকের এই সবুজ ধান ক্ষেত দু’ দিন পরেই শুকিয়ে নিশ্চিহ্ন হবে। মানুষের যৌবনোচ্ছ্বল জীবন একদিন বার্ধক্যে শেষ হয়ে কবরে নিশ্চিহ্ন হবে। মৃত ধান বীজ থেকে যেমন বৃষ্টির পরশে নতুন ধান গাছ জন্মে, মানুষ তেমনি ক্বিয়ামতের দিন সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর ডাকে সাড়া দিয়ে পুনর্জন্ম লাভ করবে এবং আল্লাহর সামনে জবাবদিহির জন্য একত্রিত হবে।

(২) সেরাপাড়া দারুলহাদীছ সালাফিইয়াহ মাদ্রাসা, কাকনহাট, গোদাগাড়ী : দরগাপাড়া আমবাগান থেকে হোন্ডা শোভাযাত্রাসহ বেলা ১২-টায় আমীরে জামা‘আত হাদীছ ফাউন্ডেশন শিক্ষাবোর্ড-এর অধিভুক্ত চলতি বছরের জানুয়ারীতে প্রতিষ্ঠিত কাকনহাট সেরাপাড়া দারুলহাদীছ সালাফিইয়াহ মাদ্রাসায় পৌঁছেন। এসময় এলাকাবাসী ও কর্মীদের সেলাগানে চারদিক মুখরিত হয়ে ওঠে। আমীরে জামা‘আত আমবাগান বেষ্টিত নিরিবিলি গ্রামীণ পরিবেশে টিনশেড মাদ্রাসা ক্যাম্পাস পরিদর্শন করেন। অতঃপর অফিস কক্ষে মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটি, শিক্ষকবৃন্দ এবং অভিভাবক ও অন্যান্য দায়িত্বশীলদের উদ্দেশ্যে সংক্ষিপ্ত ভাষণ দেন।

এখানে হোন্ডা মিছিল নিয়ে যোগদান করেন পার্শ্ববর্তী চাঁপাই নবাবগঞ্জ-দক্ষিণ যেলা ‘আন্দোলন’-এর সাধারাণ সম্পাদক শরীফুল ইসলাম, প্রচার সম্পাদক ইয়াসীন আলী, যেলা ‘যুবসংঘে’র সাধারণ সম্পাদক এমদাদুল হক, সাংগঠনিক সম্পাদক সনীরুল ইসলাম, প্রশিক্ষণ সম্পাদক তাওহীদুল ইসলাম, ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক আব্দুর রহমানসহ ১৫জন নেতা-কর্মী।

(৩) ঝিনা-উত্তরপাড়া আহলেহাদীছ জামে মসজিদ, গোদাগাড়ী : সেরাপাড়া মাদ্রাসা থেকে রওয়ানা হয়ে হোন্ডা শোভাযাত্রাসহ আমীরে জামা‘আত বেলা ১-টায় ঝিনা-উত্তরপাড়া আহলেহাদীছ জামে মসজিদে পৌঁছেন। সেখানে যেলা ‘আন্দোলন’-এর অর্থ সম্পাদক আবুল কালাম আযাদসহ স্থানীয় নেতৃবৃন্দ তাঁকে অভ্যর্থনা জানান। অতঃপর তিনি সেখানে যোহর ও আছর ছালাত জমা ও ক্বছরসহ আদায় করেন। অতঃপর দীর্ঘক্ষণ ধরে অপেক্ষমান কর্মী ও সুধীদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দেন। তিনি অত্রাঞ্চলের প্রবীণ আহলেহাদীছদের কথা শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন। তিনি স্মৃতিচারণ করে বলেন, ১৯৭৮ সালের ৫ই ফেব্রুয়ারী ঢাকায় আনুষ্ঠানিকভাবে ‘বাংলাদেশ আহলেহাদীছ যুবসংঘে’র যাত্রা শুরু হ’লে রাজশাহী অঞ্চলে স্বতঃস্ফূর্তভাবে এখানেই সর্বপ্রথম শাখা গঠিত হয়। পরে সেটি ‘ঝিনা সাংগঠনিক যেলা’ হিসাবে গণ্য হয়। সে সময় নেতৃত্ব দিয়েছিলেন ঝিনার মুসলিম ভাই ও পার্শ্ববর্তী উপরবিল্লীর মৃত আব্দুল খালেক মাষ্টার। তিনি অনুষ্ঠানে উপস্থিত মুসলিম ভাই ও নযরুল ইসলামকে পেয়ে আপ্লুত হন এবং মৃত আব্দুল খালেক মাষ্টার ও অন্যান্য কর্মীদের রূহের মাগফেরাত কামনা করেন। তিনি বলেন, এখানকার কর্মী যীনাত আলী আমাদের ‘শিরক হইতে বাঁচুন!’ পুস্তিকাটি কাব্যাকারে লেখেন ও প্রকাশ করেন। এখানকার কর্মী মমতাজ আলী খান-এর বহু কবিতা মাসিক আত-তাহরীকে প্রকাশিত হয়। মৃত আব্দুল খালেক মাষ্টারের বড় ছেলেকে তিনি উপদেশ দেন ও তার আম্মা ও পরিবারের খোঁজ-খবর নেন।

(৪) ডাকনীপাড়া‘মাসাকা গার্ডেন’ গোদাগাড়ী : ঝিনাতে অনুষ্ঠান শেষ করে আমীরে জামা‘আত তাঁর সফর সঙ্গীদের নিয়ে প্রায় ৪ কি.মি. দূরবর্তী ডাকনীপাড়ায় ‘মাসাকা গার্ডেনে’ যাত্রা বিরতি করেন। রাজশাহী-পশ্চিম যেলা সংগঠনের পক্ষ থেকে সেখানে দুপুরের আতিথেয়তার ব্যবস্থা করা হয়। কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় শতাধিক কর্মী ও সুধী সেখানে দুপুরের খাবার গ্রহণ করেন। অতঃপর সমবেত কর্মীদের উদ্দেশ্যে আমীরে জামা‘আত সংক্ষিপ্ত নীতি নির্ধারণী ভাষণ দেন। রাজশাহী-সদর যেলা সভাপতি মাওলানা দুররুল হুদার পরিচালনায় এ সময় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, ‘আন্দোলন’-এর কেন্দ্রীয় দফতর সম্পাদক ড. মুহাম্মাদ কাবীরুল ইসলাম, হাদীছ ফাউন্ডেশন শিক্ষাবোর্ড-এর চেয়ারম্যান ড. আহমাদ আব্দুল্লাহ ছাকিব ও ‘বাংলাদেশ আহলেহাদীছ যুবসংঘে’র কেন্দ্রীয় সভাপতি মুহাম্মাদ শরীফুল ইসলাম।

(৫) খানপুর-মহববতপুর ডিগ্রী কলেজ ময়দান, মোহনপুর : ডাকনীপাড়ায় যাত্রাবিরতি ও সংক্ষিপ্ত আলোচনাসভা শেষ করে আমীরে জামা‘আত মোহনপুর উপযেলার খানপুর-দক্ষিণপাড়ার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন। যাত্রা পথে বিকাল সাড়ে পাঁচটায় তিনি খানপুর-মহববতপুর ডিগ্রী কলেজ ময়দানে পৌঁছেন। এসময় তিনি কলেজ ময়দানে খোলা আকাশের নীচে সমবেত এলাকাবাসী এবং উপস্থিত ফুটবল খেলোয়াড় ও তরুণদের উদ্দেশ্যে নছীহতপূর্ণ ভাষণ দেন। তিনি সকলকে ক্ষণস্থায়ী এই দুনিয়ার মোহজাল ছিন্ন করে চিরস্থায়ী জান্নাতের প্রস্ত্ততি গ্রহণের আহবান জানান। অতঃপর তিনি পার্শ্ববর্তী পানের বরজে প্রবেশ করেন ও দেশ বিখ্যাত এই উপযেলার পান চাষের অভিজ্ঞতা লাভ করেন।

(৬) খানপুর-দক্ষিণপাড়া কেন্দ্রীয় আহলেহাদীছ জামে মসজিদ, মোহনপুর : কলেজ ময়দান থেকে অনুষ্ঠান শেষে করে আমীরে জামা‘আত অত্র মসজিদে এসে মাগরিবের ছালাত আদায় করেন। আমীরে জামা‘আতের আগমন উপলক্ষে বাদ আছর থেকে এখানে সুধী সমাবেশ চলছিল। অতঃপর তিনি মসজিদ ভর্তি মুছল্লীদের উদ্দেশ্যে হৃদয়গ্রাহী ভাষণ পেশ করেন। উপযেলা ‘আন্দোলন’-এর সভাপতি আফাযুদ্দীনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উক্ত অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ‘আন্দোলন’-এর কেন্দ্রীয় দফতর সম্পাক ড. মুহাম্মাদ কাবীরুল ইসলাম, ‘যুবসংঘ’-এর অর্থ সম্পাদক মীনারুল ইসলাম, ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক আসাদুল্লাহ আল-গালিব, ‘যুবসংঘ’ তানোর উপযেলার সভাপতি আবুবকর ছিদ্দীক প্রমুখ।

অনুষ্ঠান শেষে আমীরে জামা‘আত সফরসঙ্গীদের নিয়ে খানপুর শাখা ‘আন্দোলন’-এর সহ-সভাপতি আব্দুল খালেকের বাসায় রাতের খাবার গ্রহণ করেন। অতঃপর দিনব্যাপী দাওয়াতী সফর শেষে রাত ১০-টায় তিনি মারকাযে ফিরে আসেন।

২. নাটোর ২৭শে এপ্রিল বৃহস্পতিবার : অদ্য ২৭শে এপ্রিল বৃহস্পতিবার মুহতারাম আমীরে জামা‘আত নাটোর যেলার ৭টি এলাকায় দাওয়াতী সফর করেন। রাজশাহী-সদর যেলা সভাপতি মাওলানা দুররুল হুদার নেতৃত্বে মহানগরের কর্মী সালমান ফারেসী-এর নিজস্ব প্রাইভেট কার ও ১টি ভাড়া করা প্রাইভেট কার ও হাইয়েস যোগে ১৮জন সফরসঙ্গী নিয়ে তিনি বেলা সাড়ে ৯-টায় নওদাপাড়া মারকায থেকে রওয়ানা হন। নাটোর-সদর উপযেলার বালিয়াডাঙ্গা, হয়বতপুর, হালসা; নলডাঙ্গা উপযেলার শাঁখারীপাড়া এবং গুরুদাসপুর উপযেলার মহারাজপুর ও মুক্তবাজার প্রভৃতি স্থানে দিনব্যাপী বিরামহীন সফর শেষে রাত সোয়া ১২-টায় তিনি মারকাযে ফিরে আসেন।

এই সফরে রাজশাহী থেকে তাঁর সফরসঙ্গী ছিলেন ‘আন্দোলন’-এর কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক ড. মুহাম্মাদ সাখাওয়াত হোসাইন, কেন্দ্রীয় দফতর সম্পাদক ড. মুহাম্মাদ কাবীরুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় শূরা সদস্য কাযী হারূণুর রশীদ, ‘যুবসংঘে’র কেন্দ্রীয় সভাপতি মুহাম্মাদ শরীফুল ইসলাম, রাজশাহী-সদর যেলা ‘আন্দোলন’-এর সাধারণ সম্পাদক মুস্তাক্বীম আহমাদ, ‘হাদীছ ফাউন্ডেশন শিক্ষাবোর্ড’-এর সচিব শামসুল আলম, ‘স্বেচ্ছাসেবী নিরাপদ রক্তদান সংস্থা’ আল-‘আওন-এর সভাপতি ডা. আব্দুল মতীন, সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মাদ জাহিদ, সাংগঠনিক সম্পাদক হাফেয আহমাদ আব্দুল্লাহ শাকির, ‘আন্দোলন’-এর কেন্দ্রীয় দাঈ অধ্যাপক আব্দুল হামীদ, পবা-পূর্ব উপযেলা ‘আন্দোলন’-এর যুববিষয়ক সম্পাদক আব্দুল মান্নান, কেন্দ্রীয় আইটি বিভাগে কর্মরত জিএম ওয়ালিউল্লাহ, আব্দুল্লাহিল কাফী প্রমুখ। এছাড়া পুঠিয়া থেকে যোগ দেন রাজশাহী-পূর্ব সাংগঠনিক যেলা ‘আন্দোলন’-এর সহ-সভাপতি আনোয়ারুল ইসলাম ও পুঠিয়া উপযেলা ‘আন্দোলন’-এর সাংগঠনিক সম্পাদক মুহাম্মাদ যিল্লুর রহমান। বিস্তারিত নিম্নরূপ :

(১) বালিয়াডাঙ্গা, নাটোর-সদর : রাজশাহী থেকে রওয়ানা হয়ে পুঠিয়া উপযেলার ঝলমলিয়া পৌঁছলে নাটোর যেলা ‘আন্দোলন’-এর সভাপতি ড. মুহাম্মাদ আলীর নেতৃত্বে বিভিন্ন পর্যায়ে শতাধিক মোটরসাইকেল যোগে নেতা-কর্মী আমীরে জামা‘আত ও তাঁর সফরসঙ্গীদের অভ্যর্থনা জানান। সেখান থেকে হোন্ডা শোভাযাত্রাসহ তারা সদর থানাধীন বালিয়াডাঙ্গা-পশ্চিমপাড়া আহলেহাদীছ জামে মসজিদে পৌঁছেন। অতঃপর সেখানে সমবেত মুছল্লীদের উদ্দেশ্যে আমীরে জামা‘আত দিকনির্দেশনা পূর্ণ ভাষণ পেশ করেন।

উল্লেখ্য যে, উক্ত গ্রামের আহলেহাদীছ আক্বীদা গ্রহণকারী কয়েকজন যুবককে গ্রামের মসজিদের ইমাম ও কতিপয় মুছল্লী কর্তৃক অপদস্থ ও লাঞ্ছিত হন এবং তাদেরকে মসজিদ থেকে বের করে দেওয়া হয়। ফলে ২০১৩ সালে নিজেদের দানকৃত জায়গায় টিন দিয়ে উক্ত মসজিদটি নির্মাণ করা হয়। কিন্তু ২০১৪ সালের ৯ই অক্টোবর বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১০টার দিকে স্থানীয় জনপ্রিতিনিধির নেতৃত্বে ও মাযহাবী আলেমদের উস্কানীতে উত্তেজিত জনতা অত্র মসজিদের উপর অতর্কিত হামলা চালায় ও মসজিদটি আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়। মসজিদের কার্পেট, কুরআন মাজীদ ও হাদীছের কিতাব সমূহ তাদের হিংস্রতার কবল থেকে রক্ষা পায়নি। বিষয়টি প্রশাসনকে জানানো হয়। ফলে ১২ই অক্টোবর রবিবার সকালে নাটোর-সদর উপযেলা চেয়ারম্যান আলহাজ্জ রমাযান আলীর মধ্যস্থতায় কোনরূপ ক্ষতিপূরণ ছাড়াই আপোষ মীমাংসা হয়। অতঃপর পার্শ্ববর্তী ফাঁকা জায়গায় পুনরায় টিন দিয়ে মসজিদটি পুনর্নির্মাণ করা হয়। অতঃপর গত বছর ২০২২ সালে মসজিদটি ‘আহলেহাদীছ আন্দোলন’ সঊদী আরব শাখার সাধারণ সম্পাদক জনাব আব্দুল হাই-এর মাধ্যমে জনৈকা সঊদী দাতার অর্থায়নে তিন তলা ভিত দিয়ে এক তলা নির্মাণ সম্পন্ন হয়।

যেলা ‘আন্দোলন’-এর সভাপতি ড. মুহাম্মাদ আলীর সভাপতিত্বে উক্ত অনুষ্ঠানে পুরা ঘটনা বিবৃত করে বক্তব্য রাখেন ‘আন্দোলন’-এর কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক ড. মুহাম্মাদ সাখাওয়াত হোসাইন।

উল্লেখ্য যে, বালিয়াডাঙ্গা থেকে রওয়ানা হয়ে আমীরে জামা‘আত নাটোর শহর থেকে ৩ কি.মি. দূরে ১২০ বিঘা জমির উপরে প্রতিষ্ঠিত দিঘাপতিয়া রাজবাড়ী, যা বর্তমানে দেশের উত্তরাঞ্চলের গভর্ণমেন্টস হাউস বা ‘উত্তরা গণভবন’ নামে পরিচিত, তা পরিদর্শনের জন্য সেখানে গমন করেন। আমীরে জামা‘আত সফরসঙ্গীদের নিয়ে গণভবন ঘুরে দেখেন। উল্লেখ্য, মূল প্যালেস বা রাজার দরবার হল ও বাসভবনে সাধারণ দর্শনার্থীদের প্রবেশ নিষিদ্ধ। ডিসি বা এনডিসির অনুমতি ব্যতীত কেউ সেখানে প্রবেশ করতে পারে না। আমীরে জামা‘আতের আগমনের সংবাদ এনডিসিকে জানানো হ’লে তিনি আমীরে জামা‘আতের সাথে মোবাইলে কথা বলেন এবং সীমিত সংখ্যক সাথী নিয়ে মূল প্যালেস দেখার অনুমতি দেন এবং দায়িত্বরত কর্মকর্তাকে এ বিষয়ে নির্দেশনা প্রদান করেন। অতঃপর উক্ত কর্মকর্তা মূল ফটক খুলে দরবার হল সহ প্রত্যেকটি কক্ষ, আসবাবপত্র, ভবন নির্মাণশৈলী, বাগানবাড়ী সবকিছু আমীরে জামা‘আতকে দেখান এবং এর ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট ব্যাখ্যা করেন।

উল্লেখ্য যে, ১৭৩৪ সালে রাজবাড়ীটি প্রতিষ্ঠিত হয়। যা ১৮৩৫ সালে পুনর্নির্মিতি হয়। ১৯৪৭ সালে তৎকালীন রাজা কলিকাতায় চলে গেলে প্রাসাদটি পূর্ব পাকিস্তান সরকারের মালিকানায় আসে। অতঃপর ১৯৭২ সালের ৯ই ফেব্রুয়ারী এটিকে ‘উত্তরা গণভবন’ হিসাবে ঘোষণা করা হয়।

(২) শাঁখারীপাড়া-উত্তরপাড়া আহলেহাদীছ জামে মসজিদ, নলডাঙ্গা : উত্তরা গণভবন পরিদর্শন শেষে আমীরে জামা‘আত বেলা আড়াইটায় শাঁখারীপাড়া-উত্তরপাড়া আহলেহাদীছ জামে মসজিদে পৌঁছেন। সেখানে বেলা ১১-টা থেকে আলোচনা অনুষ্ঠান চলমান ছিল। মসজিদের নীচতলা পুরুষ ও দোতলায় মহিলা মুছল্লীদের দ্বারা কানায় কানায় ভরা ছিল। আমীরে জামা‘আত সমবেত মুছল্লীদের উদ্দেশ্যে আহলেহাদীছ আন্দোলনের মৌলিক দাওয়াত তুলে ধরেন। বিশেষ করে মা-বোনদেরকে পরিবার পরিচালনার পাশাপাশি মহিলা অঙ্গনে দাওয়াতী কাজে ভূমিকা পালনের আবেদন জানান। অনুষ্ঠান শেষে মসজিদের ইমাম আনোয়ার হোসাইনের বাসায় দুপুরের খাবার গ্রহণ করেন। এখানে নাটোর শহরে আমীরে জামা‘আত প্রতিষ্ঠিত শুকলপট্টি আহলেহাদীছ জামে মসজিদ ও মাদ্রাসা কমিটির মরহূম সভাপতির ছেলে মোস্তফা তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। 

(৩) হয়বতপুর ‘হাদীছ ফাউন্ডেশন পাঠাগার’ পরিদর্শন, নাটোর-সদর : শাঁখারীপাড়ায় দাওয়াতী কর্মসূচী শেষ করে আমীরে জামা‘আত বিকাল ৫-টায় সদর থানাধীন হয়বতপুরে পৌঁছেন। সেখানে ২০১৫ সালে ডা. জামালুদ্দীন কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত ‘হাদীছ ফাউন্ডেশন পাঠাগার’ পরিদর্শন করেন। এ সময়ে পাঠাগার ও পাঠাগারের বাইরে সমবেত সুধীদের উদ্দেশ্যে তিনি নাতিদীর্ঘ বক্তব্য পেশ করেন। তিনি হাদীছ ফাউন্ডেশনের গুরুত্ব তুলে ধরেন এবং অন্যান্য প্রকাশনা ও সরকারী ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সাথে হাদীছ ফাউন্ডেশনের মৌলিক পার্থক্য বিশ্লেষণ করেন। আল-মারকাযুল ইসলামী আস-সালাফী নওদাপাড়া রাজশাহীর ভাইস-প্রিন্সিপাল ড. নূরুল ইসলাম অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন।

(৪) মহারাজপুর-পূর্বপাড়া আহলেহাদীছ জামে মসজিদ, গুরুদাসপুর : আমীরে জামা‘আতের আগমন উপলক্ষে বাদ আছর থেকে মহারাজপুর-পূর্বপাড়া আহলেহাদীছ জামে মসজিদে সুধী সমাবেশের আয়োজন করা হয়। শাঁখারীপাড়া-উত্তরপাড়া আহলেহাদীছ জামে মসজিদের অনুষ্ঠান শেষে ‘আন্দোলন’-এর কেন্দ্রীয় দফতর সম্পাদক ড. মুহাম্মাদ কাবীরুল ইসলাম ও ‘যুবসংঘ’-এর কেন্দ্রীয় সভাপতি শরীফুল ইসলাম আগেই সেখানে চলে যান এবং সমবেত সুধীদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য পেশ করেন। আমীরে জামা‘আত ও তার অন্যান্য সফরসঙ্গীগণ হয়বতপুরের অনুষ্ঠান শেষে মাগরিবের প্রাক্কালে সেখানে পৌঁছেন। অতঃপর মাগরিবের ছালাতের পর দ্বিতীয় অধিবেশনের শুরুতে কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক ড. মুহাম্মাদ সাখাওয়াত হোসাইন ও ড. নূরুল ইসলাম সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন। অতঃপর আমীরে জামা‘আত সমবেত সুধীদের উদ্দেশ্যে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য পেশ করেন। তিনি আহলেহাদীছদের শিরক-বিদ‘আতমুক্ত নির্ভেজাল আক্বীদার গুরুত্ব তুলে ধরেন এবং যেকোন মূল্যে শিরকী আক্বীদা ও আমল থেকে বেঁচে থাকার জন্য সকলের প্রতি উদাত্ত আহবান জানান।

(৫) নতুনপাড়া ‘হাদীছ ফাউন্ডেশন পাঠাগার’ পরিদর্শন, গুরুদাসপুর : বাদ মাগরিব মহারাজপুর সুধী সমাবেশে ভাষণ শেষে আমীরে জামা‘আত পার্শ্ববর্তী নতুনপাড়া ও ভিটাপাড়া শাখা ‘আন্দোলন’-এর সহ-সভাপতি মুহাম্মাদ আফাযুদ্দীনের বাসা সংলগ্ন ‘নতুনপাড়া হাদীছ ফাউন্ডেশন পাঠাগার’ পরিদর্শন করেন এবং সেখানে রাতের খাবার গ্রহণ করেন।

(৬) মুক্তবাজার ‘হাদীছ ফাউন্ডেশন পাঠাগার’ উদ্বোধন : অতঃপর রাত সাড়ে ৯-টায় তিনি মুক্তবাজারে স্থানীয় দায়িত্বশীলদের উদ্যোগে স্থাপিত ‘হাদীছ ফাউন্ডেশন পাঠাগার’ উদ্বোধন করেন। এ সময় যেলা ‘আন্দোলন’-এর সভাপতি ড. মুহাম্মাদ আলী অত্র পাঠাগারের জন্য আমীরে জামা‘আত অনূদিত ৩ কপি ‘তরজমাতুল কুরআন’ হাদিয়া দেন। পরবর্তীতে আমীরে জামা‘আতের পক্ষ থেকে তাঁর লিখিত ও হাদীছ ফাউন্ডেশন প্রকাশিত সমস্ত বই এক সেট হাদিয়া হিসাবে প্রেরণ করা হয়। উল্লেখ্য যে, মুক্তবাজার নামকরণ এজন্য হয়েছে যে এখানকার সমাজ ব্যবস্থার কারণে এই বাজারটি চোরমুক্ত, মাদকমুক্ত ও অত্যাচারমুক্ত। কেউ কোন অন্যায় করলে সঙ্গে সঙ্গে ন্যায়বিচার করা হয়।

(৭) হালসা, নাটোর-সদর : মুক্তবাজার থেকে রাত সোয়া ১০-টায় রওয়ানা হয়ে আমীরে জামা‘আত সদর থানাধীন পার-হালসা আহলেহাদীছ জামে মসজিদে গমন করেন। সেখানে মারকাযের ভাইস প্রিন্সিপাল ড. নূরুল ইসলাম তার শ্বশুর বাড়ী হিসাবে আগেই উপস্থিত ছিলেন। তার নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত অপেক্ষমান মুছল্লীদের উদ্দেশ্যে রাত সাড়ে ১০-টায় আমীরে জামা‘আত সর্বশেষ বক্তব্য পেশ করেন। অতঃপর সোয়া ১১-টায় রাজশাহীর উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়ে রাত সোয়া ১২-টায় নওদাপাড়া মারকাযে ফিরে আসেন। ফালিল্লাহিল হাম্দ!






আরও
আরও
.