পর্ব ১।

(মার্চ’২০ সংখ্যার পর)

৫. শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দাওয়াত :

কোন জাতি বা গোষ্ঠীকে সুষ্ঠু-সুন্দর ও ন্যায়নিষ্ঠভাবে পরিচালনার জন্য শিক্ষার কোন বিকল্প নেই। ফরাসী দার্শনিক ভলতেয়ার (Voltaire)-এর ভাষায় Education is the backbone of a nation ‘শিক্ষা জাতির মেরুদন্ড’। শিক্ষা ব্যতীত কোন জাতি অগ্রগতি লাভ করতে পারে না। আমরা বলব, শুধু শিক্ষা নয় বরং সুশিক্ষা জাতির মেরুদন্ড। নিঃসন্দেহে নাস্তিক্যবাদী শিক্ষা সুশিক্ষা নয়। কেননা শিক্ষার মূল উদ্দেশ্যই হ’ল মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করা। তাঁর সৃষ্টি সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা ও গবেষণা করা, তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞ হওয়া এবং তাঁর বিধান অনুযায়ী ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্র গড়ে তোলা। মহান আল্লাহ বলেন,

اقْرَأْ بِاسْمِ رَبِّكَ الَّذِي خَلَقَ، خَلَقَ الْإِنْسَانَ مِنْ عَلَقٍ، اقْرَأْ وَرَبُّكَ الْأَكْرَمُ، الَّذِي عَلَّمَ بِالْقَلَمِ، عَلَّمَ الْإِنْسَانَ مَا لَمْ يَعْلَمْ-

‘পড় তোমার প্রভুর নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন। সৃষ্টি করেছেন মানুষকে জমাট রক্তপিন্ড হ’তে। পড়! আর তোমার পালনকর্তা বড়ই দয়ালু। যিনি কলমের মাধ্যমে শিক্ষা দান করেছেন। শিক্ষা দিয়েছেন মানুষকে যা সে জানত না’ (‘আলাক্ব ৯৬/১-৫)

জ্ঞানার্জনের জন্য আবশ্যিক অনুষঙ্গ হচ্ছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। যদিও বর্তমানের ন্যায় বিগত শতাব্দীগুলোতে প্রাতিষ্ঠানিক পাঠদান ব্যবস্থা ছিল না। সে সময়ে ওসতায বা শিক্ষক নির্ভর পাঠদান হ’ত। অর্থাৎ ছাত্ররা শিক্ষকগণের বাড়ীতে গিয়ে তাদের দরস-তাদরীসে অংশগ্রহণের মাধ্যমে ইলমের মণি-মাণিক্য আহরণ করতেন। সভ্যতার উৎকর্ষতার সাথে সাথে শিক্ষা ব্যবস্থায়ও পরিবর্তন এসেছে। পর্যায়ক্রমে আধুনিক থেকে আধুনিকতর হচ্ছে শিক্ষা ব্যবস্থা। ওসতায নির্ভর শিক্ষা ব্যবস্থা রূপ লাভ করেছে পূর্ণাঙ্গ প্রতিষ্ঠানে। আর প্রতিষ্ঠান নির্ভর এ শিক্ষা ব্যবস্থায় প্রত্যেকটি প্রতিষ্ঠানই দাওয়াতের এক একটি বড় এবং অতি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র। কেননা শিক্ষার্থীদের মন-মগজে দ্বীনী শিক্ষা গেঁথে দিতে পারলে তাতে ফল হবে দৃঢ় ও স্থায়ী। শিক্ষার্থীদের কোমল হৃদয়ে তা অতি সহজেই বদ্ধমূল হয়ে যাবে। এজন্য প্রত্যেক ক্লাসের সিলেবাসে ইসলামী শিক্ষার কোর্স থাকা আবশ্যক। কিন্তু আমাদের দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় বিশেষ করে স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সিলেবাসে ইসলামী শিক্ষার কোন বালাই নেই। ফলে আমাদের সন্তানরা সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ থেকে চূড়ান্ত ডিগ্রী অর্জন করেও ইসলাম সম্পর্কে থেকে যায় অজ্ঞ। অথচ স্বভাবগত কারণেই প্রত্যেক মুসলিমের ইসলামের প্রতি আন্তরিক টান থাকে। তাদের নিকটে সঠিকভাবে দ্বীনের দাওয়াত পৌঁছানো সম্ভব হ’লে এরাই আগামী দিনে ইসলামের পুনর্জাগরণে অগ্রণী ভুমিকা পালন করবে ইনশাআল্লাহ। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দাওয়াতের জন্য নিম্নোক্ত পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করা যেতে পারে।-

প্রথমত: শিক্ষকগণ এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারেন। একাডেমিক শিক্ষার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদেরকে দিতে পারেন প্রয়োজনীয় ধর্মীয় শিক্ষা। ইসলামের মৌলিক বিষয় যেমন তাওহীদ, রিসালাত ও আখেরাত সম্পর্কে জ্ঞান দান এবং সেই সাথে ন্যায়-অন্যায়, সত্য-মিথ্যা, হালাল-হারাম, আদব-আখলাক, বিশুদ্ধ আক্বীদা ও অশুদ্ধ আক্বীদা, আমলে ছালেহ বা সৎকর্ম এবং জান্নাত-জাহান্নাম সম্পর্কেও প্রয়োজনীয় জ্ঞান দান করতে পারেন। মিথ্যা ও অসততার ভয়াবহতা ও মাতা-পিতার অবাধ্যতার পরিণতিও তুলে ধরতে পারেন তাদের নিকটে। জানাতে পারেন শিরক-বিদ‘আতের পরিণাম সম্পর্কে। প্রত্যেক সন্তান যেহেতু পিতা-মাতার পর উসতায বা শিক্ষকের কথা মেনে নেয় অকপটে, সেকারণ এটিকে মোক্ষম সুযোগ মনে করে কাজে লাগালে আগামী দিনে এরাই সুসন্তান ও আদর্শ নাগরিক হিসাবে গড়ে উঠবে এবং অবদান রাখবে দেশ ও জাতির কল্যাণে। তবে এক্ষেত্রে শিক্ষককে অবশ্যই আদর্শবান ও ধর্মীয় বিষয়ে সম্যক জ্ঞানের অধিকারী হ’তে হবে।  

দ্বিতীয়ত: শিক্ষকদের পাশাপাশি ছাত্রদের মধ্য থেকেও একাধিক দাওয়াতী টীম শিক্ষাঙ্গনে দাওয়াতী কাজ আঞ্জাম দিতে পারে। ছাত্রবন্ধুদের মাঝে পৌঁছে দিতে পারে ইসলামের নির্মল ও নিষ্কলুষ আদর্শ। টিফিনের সময়, ক্লাসের ফাঁকে, বাড়ি ফেরার সময়গুলো হ’তে পারে দাওয়াতের সুযোগ। তাছাড়া এক্ষেত্রে বড় ছুটিগুলো কাজে লাগানো যায়। ছুটিতে পড়াশুনার চাপ কিছুটা কম থাকে। সেকারণ এই সময়টা বন্ধুদের সামনে ইসলামের স্বচ্ছ বিধান তুলে ধরার কাজে ব্যয় করতে পারে। পর্নোগ্রাফি, মাদক ও নেশার মরণছোবলের বিরুদ্ধে ক্যাম্পাসে প্রচারণা চালানো যায়। শিরক-বিদ‘আত ও প্রচলিত বিভিন্ন কুসংস্কার এবং সমসাময়িক বিষয় নিয়ে করা যায় সেমিনার-সিম্পোজিয়াম। ইসলামিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে রচনা বা বক্তৃতা প্রতিযোগিতার আয়োজন করা যেতে পারে। বিজয়ীদের জন্য থাকতে পারে আকর্ষণীয় পুরস্কার। এছাড়াও বিভিন্ন দাওয়াতী লিফলেট, বই-পুস্তক, ইসলামী ম্যাগাজিন বিতরণ করা যায় বিভিন্ন উপলক্ষে। ঈমানী জাযবাসূচক বিভিন্ন অনুষ্ঠানও করা যেতে পারে ক্যাম্পাসে। যেখানে অভিজ্ঞ ব্যক্তিগণ বিষয়ভিত্তিক আলোচনা করবেন। আর শিক্ষার্থীরা উন্মুক্ত প্রশ্ন করার সুযোগ পাবে। এছাড়া বিভিন্ন দাওয়াতী সংগঠনের পক্ষ থেকেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের মধ্যে দাওয়াতী কর্মসূচী গ্রহণ করা যেতে পারে এবং ছাত্র সংগঠনগুলোও হ’তে পারে একেকটি দাওয়াতী প্লাটফর্ম।

তৃতীয়ত: প্রতিষ্ঠানের লাইব্রেরীকে দ্বীনী বই-পুস্তক দ্বারা সমৃদ্ধ করাও এক্ষেত্রে বিশেষ গুরুত্ব বহন করবে। লাইব্রেরীতে অন্যান্য বই-পুস্তকের পাশাপাশি ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ের উপরে নির্ভরযোগ্য লেখকের ছহীহ দলীলভিত্তিক রচিত বিভিন্ন বই-পুস্তক রাখতে হবে। কুরআন, হাদীছ, তাফসীর, সীরাত, ইতিহাস ও আক্বীদা সংক্রান্ত মৌলিক ও সমকালীন গ্রন্থাবলীর বেশ ভাল রকম সন্নিবেশ থাকবে সেখানে। প্রয়োজনে ইসলামিক বই-পুস্তকের পৃথক র‌্যাক/আলমারী বা কর্ণার করা যেতে পারে। যেখান থেকে শিক্ষার্থীরা আলো গ্রহণ করবে। তবে আক্বীদা বিধ্বংসী কোন বই-পুস্তক রাখা যাবে না, যা যুবচরিত্র ধ্বংসে ভূমিকা রাখে। এক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদেরকে লাইব্রেরী ওয়ার্ক করার জন্য শ্রেণীশিক্ষকগণ উদ্বুদ্ধ করবেন। বিখ্যাত মনীষীগণের পড়াশুনার দৃষ্টান্ত তাদের সামনে তুলে ধরবেন। যা শ্রবণে শিক্ষার্থীরা উৎসাহ বোধ করবে এবং সময়ের অপচয় না করে জীবনের গুরুত্বপূর্ণ এ সময়গুলো জ্ঞানার্জনের জন্য কঠিন অধ্যবসায়ে ব্যয় করবে। উদাহরণ স্বরূপ- হাদীছ শাস্ত্রের অন্যতম দিকপাল আধুনিক যুগের খ্যাতনামা মুহাদ্দিছ আল্লামা নাছিরুদ্দীন আলবানী (রহঃ)-এর দৃষ্টান্ত। যিনি দামেশকের যাহেরিয়া লাইব্রেরীতে নিয়মিত দৈনিক ৬/৮ ঘণ্টা পড়াশুনা করতেন। কখনো কখনো ১২ ঘণ্টা অবধি চলত তাঁর নিরবচ্ছিন্ন গবেষণা। অনেক সময় লাইব্রেরীর সিঁড়িতে দাঁড়িয়েই ঘণ্টার পর ঘণ্টা অধ্যয়নে কেটে যেত। কর্তৃপক্ষ তাঁর পড়ার জন্য লাইব্রেরীর একটি কক্ষ বরাদ্দ করেন এবং সার্বক্ষণিক উপকৃত হওয়ার জন্য লাইব্রেরীর একটি চাবি তাঁকে প্রদান করেন।[1] অনুুরূপভাবে সমকালীন বিখ্যাত আলেম শায়েখ আব্দুল্লাহ বিন বায, শায়েখ উছায়মীন, শায়েখ মুখতার শানক্বীতী, শায়েখ ফাওযান এবং পূববর্তী মনীষীগণের মধ্যে কুতুবুস সিত্তার ইমামগণসহ ইমাম ইবনে তায়মিয়া ও হাফেয ইবনে হাজার আসক্বালানী (রহঃ) প্রমুখের জীবনেতিহাস তুল ধরে শিক্ষার্থীদের উদ্বুদ্ধ করবেন।

৬. কর্মস্থলে দাওয়াত :

দাওয়াতের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র হচ্ছে পেশাগত কর্মস্থল। কর্মস্থল এমন একটি জায়গা, যেখানে বিভিন্ন স্থানের বিভিন্ন আক্বীদা ও আমলের বহু মানুষের সমাগম হয়। বহু মায়ের সন্তান কর্মস্থলে একত্রিত হন কর্মের কারণে। দীর্ঘদিন একসঙ্গে থাকার কারণে তাদের পরস্পরের মধ্যে গড়ে উঠে সদ্ভাব ও সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক। প্রগাঢ় হয় পারস্পরিক মুহাববত। বিশেষ করে প্রবাস জীবনে এই বাস্তবতা ব্যাপকভাবে পরিস্ফুট হয়ে ওঠে। তারা এক পরিবারের ন্যায় এমনকি সহোদর ভাইয়ের ন্যায় পরস্পরে মিলেমিশে বসবাস করে। একের আনন্দে যেমন আনন্দিত হন সকলে তেমনি একজনের ব্যথায়ও ব্যথিত হন সকলে। আনন্দ ও কষ্ট ভাগাভাগি করেই এগিয়ে চলে তাদের জীবন তরি।

নো‘মান ইবনে বাশীর (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) যথার্থই বলেছেন যে,تَرَى الْمُؤْمِنِيْنَ فِىْ تَرَاهُمِهِمْ وَ تَوَادِّهِمْ وَ تَعَاطُفِهِمْ كَمَثَلِ الْجَسَدِ اِذَ اشْتَكَى عُضْوًا تَدَاعَى لَهُ سَائِرُ الْجَسَدِ بِالسَّهْرِ وَالْحُمَّى- ‘মুমিনদেরকে তুমি পারস্পরিক সহানুভূতি, বন্ধুত্ব ও দয়া-অনুগ্রহের ক্ষেত্রে একটি দেহের মত দেখবে। যখন দেহের কোন অংশ অসুস্থ হয়ে পড়ে তখন সমস্ত শরীর তজ্জন্য বিনিদ্রতা ও জ্বরে আক্রান্ত হয়’।[2] রাসূল (ছাঃ) আরো বলেন, اَلْمُؤْمِنُ لِلْمُؤْمِنِ كَالْبُنْيَانِ يَشُدُّ بَعْضُهُ بَعْضًا ثُمَّ شَبَّكَ بَيْنَ اَصَابِعِهِ- ‘এক মুমিন অপর মুমিনের জন্য প্রাসাদ স্বরূপ, যার এক অংশ অপর অংশকে সুদৃঢ় রাখে। অতঃপর তিনি তাঁর এক হাতের আঙ্গুল অন্য হাতের আঙ্গুলের মধ্যে প্রবেশ করালেন’।[3]

সুতরাং কর্মস্থলের এই সুন্দর পরিবেশ ও সুযোগকে কাজে লাগানো যায় দাওয়াতের মাধ্যমে। সহকর্মীদেরকে আখেরাতমুখী করার কোশেশ করা তথা ছহীহ দ্বীনের দাওয়াত তাদের নিকটে পৌঁছে দিতে হবে ঈমানী দায়িত্ববোধ থেকে। কেননা রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, بَلِّغُوا عَنِّى وَلَوْ آيَةً ‘আমার পক্ষ থেকে একটি আয়াত হ’লেও পৌঁছে দাও’।[4]

৭. অধীনস্থ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে দাওয়াত :

প্রত্যেক বিভাগেই ঊর্ধ্বতন ব্যক্তি তার অধীনস্থদের ব্যাপারে দায়িত্বশীল। রাসূল (ছাঃ) বলেন,

أَلاَ كُلُّكُمْ رَاعٍ، وَكُلُّكُمْ مَسْئُولٌ عَنْ رَعِيَّتِهِ، فَالإِمَامُ الَّذِى عَلَى النَّاسِ رَاعٍ وَهْوَ مَسْئُولٌ عَنْ رَعِيَّتِهِ، وَالرَّجُلُ رَاعٍ عَلَى أَهْلِ بَيْتِهِ وَهْوَ مَسْئُولٌ عَنْ رَعِيَّتِهِ، وَالْمَرْأَةُ رَاعِيَةٌ عَلَى أَهْلِ بَيْتِ زَوْجِهَا وَوَلَدِهِ وَهِىَ مَسْئُولَةٌ عَنْهُمْ، وَعَبْدُ الرَّجُلِ رَاعٍ عَلَى مَالِ سَيِّدِهِ وَهْوَ مَسْئُولٌ عَنْهُ، أَلاَ فَكُلُّكُمْ رَاعٍ وَكُلُّكُمْ مَسْئُولٌ عَنْ رَعِيَّتِهِ-

‘সাবধান তোমরা প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল। ক্বিয়ামতের দিন তোমাদের প্রত্যেকের দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে। সুতরাং শাসক জনগণের দায়িত্বশীল। ক্বিয়ামতের দিন তাকে তার দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে। পুরুষ তার পরিবারের দায়িত্বশীল, তাকে পরিবারের দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে। স্ত্রী তার স্বামীর সংসার এবং সন্তানের উপর দায়িত্বশীল। ক্বিয়ামতের দিন তাকে এ দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে। এমনকি দাস-দাসীও তার মালিকের সম্পদের ব্যাপারে দায়িত্বশীল। সেদিন তাকেও তার দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে। অতএব মনে রেখো, তোমরা প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল, আর তোমাদের প্রত্যেককেই ক্বিয়ামতের দিন এই দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে’।[5]

আর এই দায়িত্বশীলতার কারণে তার জবাবদিহীতাও বেশী। বিষয়টি যেমন দুনিয়াবী ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, তেমনি ধর্মীয় ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। কেননা অধীনস্থদের নিকটে দাওয়াত পৌঁছে দেওয়া ঊর্ধ্বতন ব্যক্তির দায়িত্ব। দ্বীনী কর্মের সুযোগ না দিয়ে কর্মচারীদের নিকট থেকে শুধু দুনিয়াবী ফায়েদা হাছিল করা মোটেই সমীচীন নয়। অথচ এটিই ঘটছে আমাদের সমাজে অহরহ। অনেক কর্তৃপক্ষ তার অধঃস্তন কর্মচারীদের ছালাতের সময়টুকুও দিতে রাযী নন। আবার অনেক কর্তৃপক্ষের তরফে অধীনস্থদের জন্য ছালাতের সময়ে কর্মবিরতি থাকলেও কর্মচারীদের গাফেলতী পরিদৃষ্ট হয়। এক্ষেত্রে উভয় অবস্থাতেই নছীহত তথা দাওয়াত যরূরী। রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, الدِّيْنُ النَّصِيحَةُ ‘দ্বীন হ’ল নছীহত’।[6] প্রত্যেক মুমিনের দায়িত্ব পরস্পরকে হক-এর উপদেশ দেওয়া (আছর ১০৩/৩)।  দাওয়াতের ক্ষেত্রে বরং এটি বিশেষ সুযোগ যে, অধীনস্থরা সাধারণত অনুগত হয়, উদ্ধত হয় না। আর এই আনুগত্যের সুযোগে তাদের নিকটে ইসলামের সুমহান আদর্শ তুলে ধরা যায় সহজে। যেমন কাউকে শিরক কিংবা বিদ‘আত করতে দেখলে বা কোন ফরয কাজে গাফেলতি দেখলে তাকে বলবে, শিরক বর্জন কর। কেননা শিরক হচ্ছে সবচেয়ে বড় যুলুম। তওবা ব্যতীত যা আল্লাহ ক্ষমা করেন না। অনুরূপভাবে বিদ‘আত হচ্ছে শরী‘আতে নতুন সৃষ্টি, যা কখনো গ্রহণযোগ্য নয়। বিদ‘আতী আমল করে জান্নাতে যাওয়া যাবে না। অনুরূপভাবে কাউকে কোন অন্যায় করতে দেখলে বলবে, হে ভাই! আল্লাহকে ভয় কর! অন্যায় থেকে বিরত হও।  

প্রিয় পাঠক! এতক্ষণ আমরা দাওয়াতের বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র নিয়ে আলোচনা করেছি। আমাদের অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে, আমরা প্রত্যেকেই ‘দাঈ ইলাল্লাহ’ বা আল্লাহর পথের দাঈ। সমাজের সকল স্তর ও বিভাগে দাওয়াত পৌঁছে দেওয়াই আমাদের দায়িত্ব। তবে দাওয়াত গ্রহণে বাধ্য করা আমাদের দায়িত্ব নয়। দাওয়াত কবুলের বিষয়টি সম্পূর্ণ আল্লাহর হাতে। আর বিনা কারণে দাওয়াত থেকে বিরত থাকলে গোনাহগার হ’তে হবে। কাজেই ঠুনকো অজুহাতে কেউ দাওয়াত দেওয়া থেকে বিরত থাকবে না। প্রবন্ধের দ্বিতীয় অংশে আমরা দাওয়াতের আধুনিক কিছু মাধ্যম সম্পর্কে আলোকপাত করব। যার মাধ্যমে অতি দ্রুত সময়ের মধ্যে বিপুল সংখ্যক মানুষের নিকটে দ্বীনের দাওয়াত পৌঁছানো সম্ভব হয়।-

দাওয়াতের আধুনিক মাধ্যম সমূহ

বিজ্ঞানের উন্নয়নের সাথে মানুষের জীবনচিত্রও বদলেছে। আগের দিনের মানুষে হারিকেনের আলোতে লেখাপড়া করত আর এখন বিদ্যুত বিনে কল্পনাও করা যায় না। পানি জাহাযে করে মাসাধিককাল সময় সাগর-মহাসাগর পাড়ি দিয়ে যেত হজ্জ করতে। আর এখন মাত্র ৬ ঘন্টায় উড়াল জাহাযে চড়ে পৌঁছে যায় পবিত্র নগরী মক্কায় মহান রবের সান্নিধ্যে। আগে টেলিগ্রামের মাধ্যমে যরূরী বার্তা প্রেরণ করা হ’ত, আর এখন বাটন চাপলেই মুহূর্তে কথা হয় হাযার হাযার মাইল দূরে থাকা স্বজনের সাথে। আগে মানুষ রানারের পথপানে তাকিয়ে থাকত গভীর আগ্রহ নিয়ে, কখন আসবে স্বজনের চিঠি, জানবে সব বৃত্তান্ত। আর এখন এসএমএস, ম্যাসেঞ্জার, ই-মেইল, ফেইসবুক ও টুইটারের মাধ্যমে সেকেন্ডেই হচ্ছে সংবাদ আদান-প্রদান। এক কথায়, সারা পৃথিবী এখন একটি গ্রামে পরিণত হয়েছে। বিজ্ঞানের ভাষায় যাকে ‘গ্লোবাল ভিলেজ’ বলা হয়। বিজ্ঞানের এই উৎকর্ষতার যুগে দ্বীনের দাওয়াতের মাধ্যমেও পরিবর্তন এসেছে বেশ। আগে যেখানে মাইলের পর মাইল পায়ে হেঁটে, ঘোড়ায় চড়ে বা অন্য কোন যানবাহনে চড়ে গিয়ে দাওয়াত দিতে হ’ত। এখন সেখানে ঘরে বসেই কম সময়ে আরো অধিক সংখ্যক লোকের নিকটে দাওয়াত পৌঁছানো যায় সহজে। মহান আল্লাহর অশেষ মেহেরবানীতে আজ অসম্ভব যেন সম্ভব হচ্ছে। ফালিল্লাহিল হাম্দ। এ পর্যায়ে আমরা দাওয়াতের কিছু আধুনিক মাধ্যম সম্পর্কে আলোকপাত করব।-

ইন্টারনেট :

ইন্টারনেট (Internet) অর্থ- আন্তর্জাল। এ মাধ্যমটি নেট বা জালের মত গোটা পৃথিবীকে এক সূতায় গেঁথে দিয়েছে। এর ফলে বিশ্বের এক প্রান্তে কোন ঘটনা ঘটলে সেকেন্ডের মধ্যে তা পৃথিবীর অপর প্রান্তে ছড়িয়ে যাচ্ছে। ফলে এখানে কোন ভিডিও বা লেখনী পোস্ট করা হ’লে পৃথিবীর যেকোন প্রান্ত থেকে তা দেখা সম্ভব হচ্ছে।

ফলে আধুনিক যুগে বিশুদ্ধ দাওয়াত প্রচারের অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে ইন্টারনেট। এতে থাকা বিভিন্ন মাধ্যম যেমন ওয়েবসাইট, ইউটিউব, ফেসবুক, টুইটার, ব্লগ সাইট ইত্যাদির মধ্যমে খুব স্বল্প সময়ে, অল্প কষ্টে অসংখ্য মানুষের কাছে দ্বীনের দাওয়াত প্রচার করা যায়। নিম্নে এমনই কিছু মাধ্যম সম্পর্কে আলোকপাত করা হ’ল।-

১. ওয়েবসাইট (website) :

নিজের তথ্যকে অন্যের নিকটে তুলে ধরার অত্যন্ত সহজ ও জনপ্রিয় মাধ্যম হচ্ছে ওয়েবসাইট। ওয়েবসাইটকে একটি গৃহের সঙ্গে তুলনা করা যায়। যেখানে নানা ধরনের আসবাবপত্র পরিপাটি করে সাজানো থাকে। ওয়েবসাইটও ঠিক তাই। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সকল তথ্য সেখানে সংরক্ষিত থাকে।

দাওয়াতের ক্ষেত্রে ওয়েবসাইট অনন্য ভূমিকা পালন করে আসছে। ইসলামিক এমন অনেক ওয়েবসাইট আছে, যা শত শত প্রবন্ধ-নিবন্ধ, প্রশ্নোত্তর, ইসলামিক বই-পুস্তক, পত্র-পত্রিকা দ্বারা সমৃদ্ধ। সাম্প্রতিক বিভিন্ন ইস্যু নিয়েও লেখা থাকে সেখানে। এসব ওয়েবসাইটের মাধ্যমে দ্বীনের পথে উদ্বুদ্ধ করা হয় এবং আখেরাত নির্ভর জীবন গঠনে উৎসাহিত করা হয়। উল্লেখ্য যে, ভাল-মন্দ দুই ধরনের ওয়েবসাইটই আছে ইন্টারনেটে। আমাদেরকে অবশ্যই ভালটা গ্রহণ করতে হবে এবং মন্দ সাইট থেকে বেঁচে থাকতে হবে। আবার ভাল-র মধ্যেও কিছু সাইট আছে, যেখানে শিরক-বিদ‘আত মিশ্রিত দাওয়াত দেওয়া হয়। সেগুলো থেকেও বেঁচে থাকা যরূরী।

২. ইউটিউব : বর্তমান ইন্টারনেট জগতের একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় ভিডিও শেয়ারিং সাইট হচ্ছে ইউটিউব। ২০০৫ সালে ইউটিউবের যাত্রা শুরু হয়। ইউটিউবের রয়েছে নানাবিধ সুবিধা। এর মাধ্যমে একটি একাউন্ট খুলে যে কোন ভিডিও আপলোড করা যায়। ভিডিও এডিট করার সুবিধাও রয়েছে ইউটিউবে। কত মানুষ ভিডিওটি দেখছে তার হিসাবও ইউটিউব করে দেয়। ফলে সহজেই জানা যায় আপলোডকৃত ভিডিউটির জনপ্রিয়তা ও গ্রহণযোগ্যতা সম্পর্কে। সেই সাথে দর্শক-শ্রোতারা কমেন্ট করে জানাতে পারেন ভিডিউটির বা বক্তব্যটির ভাল-মন্দ দিক, দিতে পারেন পরামর্শও। পরবর্তী ভিডিও তৈরীর ক্ষেত্রে যা গাইড হিসাবে কাজ করে। তবে এ ক্ষেত্রে মন্দ দিক হচ্ছে ভিন্ন মতের কারো ভাল কথা, নছীহত বা উপদেশকেও নেতিবাচক দৃষ্টিতে দেখা ও বাজে মন্তব্য করা। যা মোটেই সমীচীন নয়।

জনপ্রিয়তার দিক দিয়ে ইউটিউব টেলিভিশনকেও ছাড়িয়ে গেছে। বলা চলে এখন টেলিভিশন চ্যানেলগুলোর বিকল্প হয়ে দাঁড়িয়েছে ইউটিউব চ্যানেল। কেননা ইউটিউব সহজলভ্য একটি ইন্টারনেট সাইট। টেলিভিশনের চেয়ে বহুগুণ বেশী সুযোগ-সুবিধা রয়েছে এখানে। ইচ্ছা করলে যখন তখন ঢুকে কাঙ্ক্ষিত ভিডিও দেখা যায়, পসন্দের আলোচকের আলোচনা শ্রবণ করা যায়। তাছাড়া ইউটিউব চ্যানেল খুব সহজেই খোলা যায়। এখানে সরকারী অনুমতিরও প্রয়োজন হয় না। ধরনা দিতে হয় না মন্ত্রণালয়ের দুয়ারে দুয়ারে। ব্যয় করতে হয় না মোটা অংকের অর্থ।

দাওয়াতের একটি বড় মাধ্যম হচ্ছে ইউটিউব। ঘরে বসে যে কোন বিষয়ে দ্বীনী নছীহত ভিডিও করে আপলোড করে দিলে অথবা কোন ইসলামী মজলিসের বক্তব্য বা জুম‘আর খুৎবা ইউটিউবে প্রচার করলে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লক্ষ লক্ষ মানুষ সেটি দেখতে পায়। তাছাড়া লাইভ ভিডিওতে গিয়ে দর্শক-শ্রোতাদের দ্বীন বিষয়ক বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেন। এভাবে ইউটিউবের মাধ্যমে দ্বীনের দাওয়াত অতি সহজেই মানুষের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে।

৩. ফেইসবুক :

দাওয়াতের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ আধুনিক মাধ্যম হচ্ছে ফেইসবুক (Facebook)। ফেইসবুক হচ্ছে বিশ্ব সামাজিক আন্তঃযোগাযোগ ব্যবস্থার সবচেয়ে জনপ্রিয় একটি ওয়েবসাইট। বর্তমান শতাব্দীর পূর্বে এর কোন অস্তিত্ব ছিল না। এ রকম আধুনিক সামাজিক যোগাযোগ সাইট তৈরী হবে মানুষ হয়ত কল্পনাও করেনি। ২০০৪ সালের ফেব্রুয়ারীতে ফেইসবুক প্রতিষ্ঠা লাভ করে। জনৈক আমেরিকান মার্ক জাকারবার্গ হচ্ছেন এর প্রতিষ্ঠাতা।

বর্তমানে সব বয়সের মানুষই এ মাধ্যমটি ব্যবহার করে থাকেন। পৃথিবীর তিনভাগের একভাগ তথা ২৬০ কোটি মানুষ বর্তমানের এ মাধ্যমটির গ্রাহক। এর মাধ্যমে যেকোন রচনা, ছবি, ভিডিও এমনটি লাইভ ভিডিও খুব সহজেই অন্যের সাথে বিনিময় করা যায়। ফলে দাওয়াতের ক্ষেত্রে এটি এখন গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যমে হিসাবে পরিগণিত হচ্ছে।

ফেইসবুকে খুব সহজেই নিজস্ব পেজ অথবা গ্রুপ খুলে বা কোন ইসলামী গ্রুপে যুক্ত হয়ে দ্বীনী বিষয়ে বিভিন্ন পোস্ট করা যায়।

৪. এ্যাপস :

‘এ্যাপ’ হচ্ছে ‘অ্যাপ্লিকেশন’ শব্দের সংক্ষিপ্ত রূপ। এটি এক ধরনের সফটওয়্যার, যা পৃথক পৃথক প্লাটফর্মে চলতে পারে। যেমন- মোবাইল এ্যাপ, ডেক্সটপ এ্যাপ ও ওয়েব এ্যাপ। এর মধ্যে মোবাইল এ্যাপ সবচেয়ে জনপ্রিয় ও পরিচালনায় সহজ। কল করা, ছবি তোলা, ভিডিও করা, যোগাযোগ করা, হিসাব করা, গেমস খেলা ইত্যাদি বহু কাজে ব্যবহৃত হয় এ্যাপ।

অনুরূপভাবে দাওয়াতী কাজেও এ্যাপের ব্যবহার কম নয়। ইসলামিক বিভিন্ন বিষয়ের রয়েছে এ্যাপ। যেমন কুরআন এ্যাপ, হাদীছ এ্যাপ, অডিও-ভিডিও-র এ্যাপ, বিভিন্ন ইসলামী সংগঠন ও সংস্থা বা ইসলামিক পত্রিকার এ্যাপ, ফৎওয়া এ্যাপ ইত্যাদি।

৫. মেসেঞ্জার, হোয়াটসএ্যাপ, টেলিগ্রাম প্রভৃতি : এগুলো জনপ্রিয় ও বহুল ব্যবহৃত এ্যাপস। দাওয়াতের ক্ষেত্রে এই এ্যাপসগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। এই এ্যাপসমূহে গ্রুপভিত্তিক দাওয়াতী কাজ করা যায়। অডিও-ভিডিও আপলোড করা, টেক্সট মেসেজ বা ভয়েস মেসেজের মাধ্যমে দাওয়াত দেওয়া যায়।

৬. ভিডিও কনফারেন্স : ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের শ্রোতাকে সংযুক্ত করে সরাসরি দাওয়াত দেওয়া যায়। এর মাধ্যমে শ্রোতারা যেমন বক্তাকে দেখতে পান, তেমনি বক্তাও শ্রোতাদের দেখতে পান। এতে শ্রোতারা সরাসরি প্রশ্নও করতে পারেন।

অনলাইনে দাওয়াতী কাজের ক্ষেত্রে সতর্কতা :

অনলাইনে দাওয়াতী কাজের ক্ষেত্রে আমাদেরকে সর্বোচ্চ সতর্কতা ও দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে। যেমন-

(১) কোন বিষয় উপস্থাপনের পূর্বে তা বিশুদ্ধ আক্বীদা ও ছহীহ হাদীছ ভিত্তিক কি-না তা যাচাই করতে হবে। কারণ এই পোস্টের ফলে একজন মানুষও যদি শরী‘আত বিরোধী কোন আক্বীদা বা আমলে অভ্যস্ত হয়, তবুও সে পাপের বোঝা পোস্টদাতার আমলনামায় যুক্ত হবে।[7]

(২) কারু মিথ্যাচার, প্রোপাগান্ডা বা কটূ কথার জবাব দেওয়ার ক্ষেত্রে সর্বদা মধ্যমপন্থা বজায় রাখবে, ইসলামী আদব রক্ষা করবে। কখনোই মন্দের প্রতিবাদ মন্দ দিয়ে করা যাবে না। এতে আল্লাহর রহমত হবে ও দাওয়াতের গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি পাবে।

(৩) ফেইসবুক, ইউটিউবসহ অনলাইন দাওয়াতের মাধ্যমগুলো ব্যবহারের ক্ষেত্রে কুরুচিপূর্ণ বিজ্ঞাপন, ছবি ও ভিডিও ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে। সেকারণ এসব থেকে বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাপনা রাখতে হবে। যেমন ব্রাউজার-এ এ্যাড ব্লক সফটওয়্যার ব্যবহার, ইউটিউবের জন্য restricted mode অপশন চালু রাখা ইত্যাদি।

দাওয়াতের প্রচার-প্রসারে সহযোগিতা করা :

অনেক ভাই আছেন, বিশুদ্ধ দাওয়াত প্রচারের ক্ষেত্রে যাদের পর্যাপ্ত জ্ঞান নেই। সেক্ষেত্রে তারা অন্য কারো দাওয়াতকে সমাজের মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়ার মাধ্যমে একই নেকী লাভ করতে পারেন। যেমন-

বিশুদ্ধ আক্বীদা-আমল সমৃদ্ধ বক্তব্য সংগ্রহ করে বা এরূপ বই-পত্র স্ক্যান করে অনলাইনে বা মেমোরী কার্ডের মাধ্যমে মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়া।

অনেকের অধ্যয়নের অভ্যাস বা সক্ষমতা না থাকায় তারা অডিও-ভিডিওর উপর পুরোপুরি নির্ভরশীল থাকে। তাদের জন্য ইসলামী বই সমূহের অডিও বুক তৈরী করে প্রচার করা।

বিশ্বের বিভিন্ন ভাষাভাষী বিদ্বানদের বই-পত্র ও বক্তব্যসমূহ অনুবাদ বা ডাবিং করার মাধ্যমে নিজ ভাষাভাষী মানুষের মাঝে তা ছড়িয়ে দেয়া।

উপসংহার : পৃথিবীতে আল্লাহর কালেমাকে সমুন্নত করার জন্য দাওয়াতের কোন বিকল্প নেই। আর এজন্য কুরআন ও হাদীছে বার বার দাওয়াতের প্রতি তাকীদ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, একটি আয়াত হ’লেও পৌঁছে দিতে। আলোচ্য নিবন্ধে দাওয়াতের বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র এবং দাওয়াতী কাজে ব্যবহৃত আধুনিক কিছু মাধ্যম তুলে ধরা হয়েছে। আশা করি উক্ত আলোচনা থেকে পাঠকহৃদয়ে নতুন করে দাওয়াতের প্রতি দায়িত্বানুভূতি জাগ্রত হবে এবং স্ব স্ব অবস্থান থেকে সকলে সাধ্যমত দাওয়াতী কাজ আঞ্জাম দিবেন ইনশাআল্লাহ। আল্লাহ আমাদের সকলকে তাঁর দ্বীনের জন্য খালেছভাবে কাজ করার তাওফীক্ব দান করুন-আমীন!!

 

[1]. ইমাম আলবানী হায়াতুহু, দাওয়াতুহু ওয়া জুহূদুহু ২৩-২৫ পৃঃ

[2]. বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৪৯৫৩; ঐ, বঙ্গানুবাদ হা/৪৭৩৬।

[3]. বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৪৯৫৫; ঐ, বঙ্গানুবাদ হা/৪৭৩৮।

[4]. বুখারী হা/৩৪৬১;  মিশকাত হা/১৯৮।

[5]. বুখারী হা/৭১৩৮; মুসলিম হা/১৮২৯; মিশকাত হা/৩৬৮৫।

[6]. বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৪৯৬৬।

[7]. মুসলিম হা/২৬৭৪।






বিষয়সমূহ: দাওয়াত
পবিত্রতা অর্জন সম্পর্কিত বিবিধ মাসায়েল (শেষ কিস্তি) - মুহাম্মাদ শরীফুল ইসলাম মাদানী
বিশ্ব ভালবাসা দিবস - আত-তাহরীক ডেস্ক
প্রাক-মাদ্রাসা যুগে ইসলামী শিক্ষা - আসাদুল্লাহ আল-গালিব (শিক্ষার্থী, ইংরেজী বিভাগ, ২য় বর্ষ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়)।
দ্বীনের পথে ত্যাগ স্বীকার (৫ম কিস্তি) - আব্দুল্লাহ আল-মা‘রূফ
কাদেসিয়া যুদ্ধ - মুহাম্মাদ আব্দুর রহীম
হাদীছ সংগ্রহ ও সংরক্ষণ পরিক্রমা (৬ষ্ঠ কিস্তি) (জুলাই ২০২৩-এর পর) - ড. আহমাদ আব্দুল্লাহ ছাকিব
মানবাধিকার ও ইসলাম (১৩তম কিস্তি) - শামসুল আলম
মাসায়েলে কুরবানী - আত-তাহরীক ডেস্ক
পবিত্রতা অর্জন সম্পর্কিত বিবিধ মাসায়েল (৩য় কিস্তি) - মুহাম্মাদ শরীফুল ইসলাম মাদানী
হজ্জ : গুরুত্ব ও ফযীলত - মুহাম্মাদ আব্দুর রহীম
জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০ : একটি পর্যালোচনা - কামারুযযামান বিন আব্দুল বারী
ইসলামে ভ্রাতৃত্ব (৫ম কিস্তি) - ড. এ এস এম আযীযুল্লাহ
আরও
আরও
.