ভূমিকা :
পার্থিব দৃষ্টিকোণে সহায়-সম্পদ মর্যাদার কারণ হ’লেও আখেরাতের বিচারে তা মর্যাদার বিষয় নয়। জান্নাত পিয়াসী মুমিন তাই দুনিয়াপূজারী হ’তে পারে না। পার্থিব মোহে সে মোহাচ্ছন্ন হয় না। কেননা মহান আল্লাহ মানুষকে দুনিয়ার প্রতারণা থেকে বেঁচে থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহ বলেন, يَا أَيُّهَا النَّاسُ إِنَّ وَعْدَ اللهِ حَقٌّ فَلَا تَغُرَّنَّكُمُ الْحَيَاةُ الدُّنْيَا وَلاَ يَغُرَّنَّكُمْ بِاللهِ الْغَرُوْرُ ‘হে মানব জাতি! নিশ্চয়ই আল্লাহর ওয়াদা সত্য। অতএব পার্থিব জীবন যেন তোমাদেরকে ধোকায় না ফেলে। আর সেই প্রতারক (শয়তান) যেন তোমাদেরকে আল্লাহ সম্পর্কে প্রতারিত না করে’ (ফাতির ৩৫/৫)। সম্মান বা মর্যাদার একমাত্র মানদন্ড হচ্ছে তাক্বওয়া (হুজুরাত ৪৯/১৩)। বিদায় হজ্জের ঐতিহাসিক ভাষণে সমবেত ছাহাবীদের উদ্দেশ্যে রাসূল (ছাঃ) বলেন, يَا أَيُّهَا النَّاسُ أَلاَ إِنَّ رَبَّكُمْ وَاحِدٌ وَإِنَّ أَبَاكُمْ وَاحِدٌ أَلاَ لاَ فَضْلَ لِعَرَبِىٍّ عَلَى أَعْجَمِىٍّ وَلاَ لِعَجَمِىٍّ عَلَى عَرَبِىٍّ وَلاَ لِأَحْمَرَ عَلَى أَسْوَدَ وَلاَ أَسْوَدَ عَلَى أَحْمَرَ إِلاَّ بِالتَّقْوَى ‘হে লোক সকল! জেনে রেখো! নিশ্চয়ই তোমাদের রব (আল্লাহ) এক এবং তোমাদের পিতা (আদম) এক। অতএব কোন অনারবী ব্যক্তির উপরে আরবী ব্যক্তির প্রাধান্য নেই। অনুরূপভাবে কোন আরবী ব্যক্তির উপরেও অনারবী ব্যক্তির, কালো বর্ণের উপরে লাল বর্ণের ও লাল বর্ণের উপরে কালো বর্ণের লোকের কোনই প্রাধান্য নেই, কেবলমাত্র তাক্বওয়া বা পরহেযগারিতা ব্যতীত’।[1] সাহল বিন সা‘দ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘একদা জনৈক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তখন তিনি তাঁর নিকটে উপবিষ্ট ব্যক্তিকে জিজ্ঞেস করলেন, এই যে লোকটি চলে গেল তার সম্পর্কে তোমার ধারণা কি? সে বলল, তিনি তো সম্ভ্রান্ত লোকদের একজন। আল্লাহর কসম তিনি এমন যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তি, যদি তিনি কোন নারীকে বিবাহের প্রস্তাব দেন তার সাথে বিবাহ দেওয়া হবে। আর যদি কারো সম্পর্কে সুপারিশ করেন, তখন তার সুপারিশ গ্রহণ করা হবে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তখন কিছু সময় চুপ থাকলেন। অতঃপর আরেকজন ব্যক্তি তাঁর পাশ দিয়ে চলে গেল। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, এই ব্যক্তি সম্পর্কে তোমার অভিমত কি? সে বলল, এই ব্যক্তি তো গরীব মুসলমানদের একজন। সে এমন ব্যক্তি যে বিবাহের প্রস্তাব দিলে তা গ্রহণযোগ্য হবে না। কারো জন্য সুপারিশ করলেও তা কবুল করা হবে না। এমনকি সে কোন কথা বললেও তা শ্রবণ করা হবে না। তখন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, এই
ব্যক্তি দুনিয়া ভর্তি ঐ ব্যক্তির (পূর্ববর্তী) চাইতে উত্তম’।[2]
সুতরাং সামাজিক প্রভাব প্রতিপত্তিশীল আমলহীন ফাসিক ব্যক্তি নয় বরং তাক্বওয়াশীল আমলে ছালেহ সম্পাদনকারী ব্যক্তির মর্যাদাই আল্লাহর নিকটে বেশী, হতে পারে সে গরীব কিংবা ধনী। আলোচ্য নিবন্ধে গরীব ও দুর্বল শ্রেণীর মর্যাদা ও অবস্থান সম্পর্কে আলোকপাত করা হ’ল।-
গরীব ও মিসকীনদের ভালবাসতে রাসূল (ছাঃ)-এর নির্দেশ :
অধিকাংশ
মানুষের স্বাভাবিক প্রবণতা হচ্ছে গরীব-মিসকীন ও অসহায়কে অবজ্ঞার চোখে
দেখা। এরা অভাব-অনটনে যেমন জর্জরিত, তেমনি সম্পদশালীর নিকটে অবহেলিত। এদের
পক্ষে কথা বলার কোন মানুষ নেই। নেই তাদের মানসিক কষ্টগুলো ভাগাভাগি করে
নেওয়ার মত কোন সুজনও। সামাজিকভাবে যেহেতু এরা মর্যাদাহীন, তাই ব্যক্তির
নিকটও মূল্যহীন। মানুষের ভালবাসা থেকে এরা নিদারুণভাবে বঞ্চিত। অথচ বিশ্ব
মানবতার নবী মুহাম্মাদ (ছাঃ) এই শ্রেণীর লোকদের ভালবাসার প্রতি গুরুত্বারোপ
করেছেন। আবু যর (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, ‘আমার বন্ধু মুহাম্মাদ (ছাঃ)
আমাকে সাতটি কাজের নির্দেশ দিয়েছেন। (১) আমি যেন গরীব-মিসকীনকে ভালবাসি ও
তাদের নৈকট্য লাভ করি। (২) আমি যেন ঐ ব্যক্তির দিকে তাকাই, যে আমার চেয়ে
নিম্ন স্তরের এবং ঐ ব্যক্তির দিকে না তাকাই যে আমার চেয়ে উচ্চ পর্যায়ের।
(৩) আমি যেন আত্মীয়-স্বজনের সাথে সদাচরণ করি, যদিও তারা একে ছিন্ন করে। (৪)
আমি যেন কারো নিকটে কিছু যাচ্ঞা না করি। (৫) আমি যেন সর্বদা ন্যায় ও সত্য
কথা বলি, যদিও তা তিক্ত হয়। (৬) আমি যেন আল্লাহর ব্যাপারে কোন নিন্দুকের
নিন্দাকে ভয় না করি এবং (৭) তিনি আমাকে এই নির্দেশই দিয়েছেন যে, আমি যেন
অধিকাংশ সময় ‘লা হাওলা ওয়া লা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ’ পাঠ করি। কেননা এই
শব্দগুলো আরশের নীচের ভান্ডার থেকে আগত’।[3]
আবূ
সাঈদ খুদরী (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিনি বলেন,أَحِبُّوا الْمَسَاكِيْنَ ‘তোমরা
মিসকীনদের ভালবাস’। কেননা আমি রাসূল (ছাঃ)-কে তাঁর দো‘আয় বলতে
শুনেছি,اللَّهُمَّ أَحْيِنِى مِسْكِينًا وَأَمِتْنِى مِسْكِينًا
وَاحْشُرْنِى فِى زُمْرَةِ الْمَسَاكِينِ ‘হে আল্লাহ! তুমি আমাকে মিসকীন
রূপে জীবিত রাখ, মিসকীন রূপে মৃত্যুদান কর এবং মিসকীনদের দলভুক্ত করে
হাশরের ময়দানে উত্থিত কর’।[4]
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ও ছাহাবীদের জীবন যাপনে দরিদ্রতা :
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ও তাঁর সাথীদের জীবন-যাপন ছিল অনাড়ম্বর। দরিদ্রতা ছিল তাদের নিত্যদিনের সঙ্গী। খেয়ে না খেয়ে তাঁরা দ্বীনে হক্ব প্রচার ও প্রসারে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা নিয়োজিত করেছিলেন। কখনো দু’চারটি খেজুর খেয়ে দিনাতিপাত করেছেন। আবার কখনো কখনো একাধারে কয়েকদিন অভুক্ত থেকেছেন। এরপরও মহান আল্লাহর উপর তাদের আস্থা ছিল অবিচল। ছবর ও কৃতজ্ঞতা ছিল প্রবল। কেননা তারা আখেরাতের চিরস্থায়ী জীবনকে হৃদয়চক্ষু দিয়ে দেখেছিলেন।
ওমর ফারূক
(রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, একদিন আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর খেদমতে
উপস্থিত হয়ে দেখলাম তিনি একটি খেজুর পাতার চাটাইয়ের উপরে শুয়ে আছেন। তার ও
চাটাইয়ের মাঝে কোন চাদর ছিল না। এতে চাটাইয়ের দাগ তার শরীরে লেগে গেল। আর
তিনি (খেজুর গাছের) অাঁশ ভর্তি একটি চামড়ার বালিশের উপর ঠেস দিয়েছিলেন।
(ওমর বলেন) আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) আল্লাহর নিকটে আপনি দো‘আ
করুন, তিনি যেন আপনার উম্মতকে স্বচ্ছলতা দান করেন। পারসিক ও রোমকদেরকে
স্বচ্ছলতা দান করা হয়েছে। অথচ তারা আল্লাহর ইবাদত করে না। তখন রাসূলুল্লাহ
(ছাঃ) বললেন, হে খাত্ত্বাবের পুত্র! তুমি কি এখনো এই ধারণায় আছ? তারা তো
এমন সম্প্রদায়, যাদেরকে পার্থিব জীবনেই নে‘মত সমূহ আগাম দেওয়া হয়েছে। অন্য
বর্ণনায় আছে, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, أَمَا تَرْضَى أَنْ تَكُونَ لَهُمُ
الدُّنْيَا وَلَنَا الآخِرَةُ ‘তুমি কি এতে সন্তুষ্ট নও যে, তাদের জন্য
দুনিয়া নির্ধারিত হোক, আর আমাদের জন্য আখেরাত’।[5]
আয়েশা
(রাঃ) বলেন,مَا شَبِعَ آلُ مُحَمَّدٍ صلى الله عليه وسلم مِنْ خُبْزِ
شَعِيرٍ يَوْمَيْنِ مُتَتَابِعَيْنِ حَتَّى قُبِضَ رَسُولُ اللهِ صلى الله
عليه وسلم ‘মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর পরিবারবর্গ লাগাতার দু’দিন যবের রুটি খেয়ে
পরিতৃপ্ত হন নাই। আর এমতাবস্থায়ই তাঁর মৃত্যু হয়েছে’।[6]
আবু হুরায়রা (রাঃ) একদা এমন এক সম্প্রদায়ের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন, যাদের সামনে বকরী ভুনা পেশ করা হয়েছিল। যা খাওয়ার জন্য আবু হুরায়রা (রাঃ)-কে আমন্ত্রণ জানানো হ’ল। কিন্তু তিনি তা খেতে অস্বীকার করে বললেন, خَرَجَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِنَ الدُّنْيَا وَلَمْ يَشْبَعْ مِنْ خُبْزِ الشَّعِيْرِ ‘রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছেন অথচ যবের রুটি দ্বারাও পরিতৃপ্ত হ’তে পারেননি’।[7] রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর দীর্ঘ দশ বছরের খাদেম আনাস (রাঃ) বলেন, مَا أَمْسَى عِنْدَ آلِ مُحَمَّدٍ صلى الله عليه وسلم صَاعُ بُرٍّ وَلاَ صَاعُ حَبٍّ وَإِنَّ عِنْدَهُ لَتِسْعَ نِسْوَةٍ ‘রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর পরিবারের নিকট কোন সন্ধ্যাকালেই এক ছা‘ গম বা এক ছা‘ অন্য কোন খাদ্যদানা অবশিষ্ট থাকত না। অথচ তাঁর নয় জন স্ত্রী ছিল’।[8] এতদ্ব্যতীত ক্ষুধার তীব্রতায় ছাহাবীদের পেটে পাথর বাঁধার দৃষ্টান্তও হাদীছে বিধৃত হয়েছে।
আবু
হুরায়রা (রাঃ) বলেন, আল্লাহর কসম, তিনি ব্যতীত কোন মা‘বূদ নেই। আমি
ক্ষুধার তাড়নায় উপুড় হয়ে পড়ে থাকতাম। আবার কখনো পেটে পাথর বেঁধে রাখতাম।
একদিন আমি (ক্ষুধার যন্ত্রণায়) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ও ছাহাবীদের রাস্তায় বসে
থাকলাম। আবুবকর (রাঃ) পাশ দিয়ে গেলেন। আমি তাকে পবিত্র কুরআনের একটি আয়াত
সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম এই উদ্দেশ্যে যে, তিনি আমাকে তৃপ্তি সহকারে
খাওয়াবেন। কিন্তু তিনি কিছু না করেই চলে গেলেন। অতঃপর ওমর (রাঃ) অতিক্রম
করলেন। তাকেও একইভাবে প্রশ্ন করলাম। তিনিও কোন কিছু না করে চলে গেলেন।
অতঃপর আবুল কাসেম (ছাঃ) যাচ্ছিলেন। তিনি আমাকে দেখে মুচকি হাসলেন। আমার মন ও
চেহারার অবস্থা তিনি বুঝতে পারলেন। তিনি বললেন, হে আবু হুরায়রা! আমার
সঙ্গে চল। এই বলে তিনি চললেন। আমিও তাঁর সাথে চললাম। তিনি ঘরে প্রবেশের
অনুমতি চাইলেন এবং আমাকেও অনুমতি দিলেন। ঘরে প্রবেশ করে তিনি একটি পেয়ালায়
কিছু দুধ পেলেন। জিজ্ঞেস করলেন, এই দুধ কোথা থেকে এলো। তারা (গৃহবাসী) বলল,
অমুকের পক্ষ থেকে হাদিয়া স্বরূপ দেওয়া হয়েছে। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)
বললেন, হে আবু হুরায়রা! ‘আহলে ছুফফার’ নিকটে যাও এবং তাদেরকে ডেকে নিয়ে আস।
রাবী বলেন, ছুফফাবাসীরা ছিল ইসলামের মেহমান। তাদের কোন পরিবার সম্পদ ও
কারো উপর ভরসা করার মত কেউ ছিল না। যখন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর কাছে কোন
ছাদাক্বাহ আসত, তখন তিনি তা তাদের কাছে পাঠিয়ে দিতেন। এ থেকে কিছুই গ্রহণ
করতেন না। আর যখন কোন হাদিয়া আসত, তখন তার কিছু অংশ তাদেরকে দিতেন ও কিছু
অংশ নিজের জন্য রাখতেন। এর মধ্যে তাদেরকে শরীক করতেন। (আবু হুরায়রা বলেন) এ
আদেশ শুনে আমি নিরাশ হয়ে গেলাম। মনে মনে ভাবলাম যে, এ সামান্য দুধ দিয়ে
ছুফফাবাসীদের কি হবে? এ সামান্য দুধ তো আমার জন্যই যথেষ্ট হ’ত। এটা পান করে
আমার শরীরে শক্তি ফিরে আসত। যখন তারা এসে গেল, তখন তিনি আমাকে আদেশ দিলেন
আমিই যেন তা তাদেরকে দেই। এতে আমার আর কোন আশাই থাকল না যে, আমি এই দুধ
থেকে কিছু পাব। কিন্তু আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (ছাঃ)-এর নির্দেশ না মেনে কোন
উপায় নেই। তাই তাদের কাছে গিয়ে তাদেরকে ডেকে আনলাম। তারা এসে ভেতরে
প্রবেশের অনুমতি চাইলে তিনি তাদেরকে অনুমতি দিলেন। ঘরে প্রবেশ করে তারা
বসলেন। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, হে আবু হুরায়রা! আমি বললাম, আমি হাযির হে
আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)। তিনি বললেন, পেয়ালাটি নাও এবং তাদের মধ্যে পরিবেশন
কর। আমি পেয়ালাটি নিয়ে তাদের একজনকে দিলাম। তিনি তৃপ্তি সহকারে পান করে
পেয়ালাটি আমার নিকট ফেরত দিলেন। অতঃপর আরেকজনকে পেয়ালাটি দিলাম। তিনিও
তৃপ্তি সহকারে পান করে আমাকে ফিরিয়ে দিলেন। এভাবে দিতে দিতে আমি
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) পর্যন্ত পৌঁছে গেলাম। তারা সবাই তৃপ্তি সহকারে পান
করলেন। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) পেয়ালাটি নিজ হাতে নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে
মৃদু হাসলেন এবং বললেন, হে আবু হুরায়রা এখনতো তুমি আর আমি আছি। আমি বললাম,
আপনি ঠিক বলেছেন হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! তিনি বললেন, তুমি বস এবং পান কর।
তখন আমি বসে পান করলাম। তিনি বললেন, আরও পান কর। আমি আরও পান করলাম। তিনি
আমাকে পান করার নির্দেশ দিতেই থাকলেন। এমনকি আমি বললাম যে, আর না। ঐ সত্তার
কসম, যিনি আপনাকে সত্য দ্বীনসহ পাঠিয়েছেন, আমার পেটে আর জায়গা নেই। তিনি
বললেন, তাহ’লে আমাকে দাও। আমি পেয়ালাটি তাঁকে দিলাম। তিনি আল্লাহর প্রশংসা
করলেন ও বিসমিল্লাহ বলে বাকী দুধটুকু পান করলেন।[9]
আয়েশা
(রাঃ) বলেন,مَا أَكَلَ آلُ مُحَمَّدٍ صلى الله عليه وسلم أَكْلَتَيْنِ فِى
يَوْمٍ إِلاَّ إِحْدَاهُمَا تَمْرٌ ‘মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর পরিবারবর্গ একদিনে
দু’বেলা খানা খেয়ে একবেলা শুধু খুরমা খেয়েই কাটিয়ে দিতেন’।[10] তিনি আরও
বলেন,كَانَ يَأْتِى عَلَيْنَا الشَّهْرُ مَا نُوقِدُ فِيهِ نَارًا إِنَّمَا
هُوَ التَّمْرُ وَالْمَاءُ إِلاَّ أَنْ نُؤْتَى بِاللُّحَيْمِ ‘আমাদের উপর
দিয়ে মাস কেটে যেত, অথচ আমরা এর মধ্যে ঘরে (রান্নার) আগুন জ্বালাতাম না।
আমরা কেবল খুরমা ও খেজুরের উপর চলতাম। তবে যৎসামান্য গোশত আমাদের নিকট
আসত’।[11] অন্যত্র আবূ সালামা আয়েশা (রাঃ)-এর বরাতে বর্ণনা করেন, মুহাম্মাদ
(ছাঃ)-এর পরিবারবর্গের কোন কোন মাস এমনভাবে অতিবাহিত হ’ত যে, তাদের কারো
ঘরের চুলা থেকে ধোঁয়া বের হ’তে দেখা যেত না। (আবু সালামা বলেন) আমি জিজ্ঞেস
করলাম, তাদের খাবার কি ছিল? তিনি বললেন, দু’টি কাল জিনিস। খেজুর ও পানি।
তবে আমাদের আনছারী প্রতিবেশীরা ছিল সত্যপ্রিয়। তারা বকরী পালতেন এবং বকরীর
দুধ উপঢৌকন স্বরূপ রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর জন্য পাঠাতেন। রাবী মুহাম্মাদ বিন
আমর বলেন, তাঁর পরিবারবর্গ নয় ঘরে বিভক্ত ছিল’।[12]
ইবনে
আববাস (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, তিন বলেন,كَانَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه
وسلم يَبِيتُ اللَّيَالِىَ الْمُتَتَابِعَةَ طَاوِيًا وَأَهْلُهُ لاَ
يَجِدُونَ عَشَاءً وَكَانَ أَكْثَرُ خُبْزِهِمْ خُبْزَ الشَّعِيرِ
‘রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর পরিবার-পরিজন একাধারে কয়েক রাত ক্ষুধার্ত অবস্থায়
কাটিয়ে দিতেন। তার পরিবারে রাতের খাবার জুটত না। আর অধিকাংশ সময় যবের রুটিই
ছিল তাদের খাদ্য’।[13]
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর
বিছানা সম্পর্কে আয়েশা (রাঃ) বলেন, كَانَ فِرَاشُ رَسُولِ اللهِ صلى الله
عليه وسلم مِنْ أَدَمٍ وَحَشْوُهُ مِنْ لِيفٍ ‘রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর বিছানা
ছিল চামড়ার তৈরী এবং তার ভেতরে ছিল খেজুরের ছাল’।[14]
আবূ
ওয়ায়েল (রহঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, একবার আমরা খাববাব (রাঃ)-এর
শুশ্রূষায় গেলাম। খাববাব তখন বললেন, আমরা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য
রাসূল (ছাঃ)-এর সাথে হিজরত করেছি। এর কর্মফল আল্লাহর নিকটেই প্রাপ্য।
আমাদের মধ্যে অনেকেই এই কর্মফল দুনিয়াতে লাভ করার আগেই ইন্তিকাল করেছেন।
তন্মধ্যে মুছ‘আব বিন উমায়ের (রাঃ) অন্যতম। যিনি ওহোদের যুদ্ধে শহীদ হন।
তিনি শুধুমাত্র একখানা কাপড় রেখে যান। আমরা কাফনের জন্য এটা দিয়ে তাঁর মাথা
ঢাকলে পা বের হয়ে যেত এবং পা ঢাকলে মাথা বের হয়ে যেত। তখন রাসূলুল্লাহ
(ছাঃ) নির্দেশ দিলেন, এটা দিয়ে তার মাথা ঢেকে দাও এবং পায়ের উপর ‘ইযখির’
(إِذْخِر) ঘাস দিয়ে ঢেকে দাও। অথচ এখন আমাদের মধ্যে এমনও আছে, যাদের ফল
পেকেছে এবং তারা তা সংগ্রহ করছে’।[15]
সা‘দ
বিন আবী ওয়াক্কাস (রাঃ) বলেন, ‘আমিই প্রথম আরব, যে আল্লাহর পথে তীর
নিক্ষেপ করেছে। যুদ্ধের সময় আমাদের অবস্থা এমন ছিল যে, দুবলা পাতা ও ঝাউগাছ
ব্যতীত খাবারের কিছুই ছিল না। এমনকি আমাদের মল বকরীর মলের মত হয়ে
গিয়েছিল’।[16]
মুহাম্মাদ বিন সীরীন বলেন,
একদা আমরা আবু হুরায়রা (রাঃ)-এর নিকট উপস্থিত ছিলাম। সে সময় তার পরিধানে
ছিল গোলাপী রংয়ের দু’টি কাতান কাপড়। তিনি একটি কাপড় দিয়ে নাক পরিষ্কার করতে
করতে বললেন, বেশ! বেশ! আবূ হুরায়রা আজ কাতান কাপড় দিয়ে নাক পরিষ্কার করছে।
অথচ আমার অবস্থা এরূপ ছিল যে, আমি ক্ষুধার তাড়নায় কাতর হয়ে রাসূলুল্লাহ
(ছাঃ)-এর মিম্বর ও আয়েশা (রাঃ)-এর কামরার মাঝখানে পড়ে থাকতাম। এ পথে কেউ
এসে আমার ঘাড়ের উপর পা রাখত এবং ধারণা করত যে, আমি পাগল হয়ে গেছি। অথচ আমার
মধ্যে কোন পাগলামী ছিল না। বরং ক্ষুধার যন্ত্রণায় আমার এরূপ অবস্থা হত’।[17]
ফাযালা
বিন উবায়েদ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) যখন লোকদের
নিয়ে ছালাত আদায় করতেন, তখন কিছু লোক অসহনীয় ক্ষুধার জ্বালায় ছালাতে
দাঁড়ানো অবস্থা থেকে পড়ে যেত। তারা ছিল ছুফফার সদস্য। তাদের অবস্থা দেখে
বেদুঈনরা বলত, এরা পাগল নাকি? রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ছালাত শেষে তাদের দিকে মুখ
ফিরিয়ে বলতেন,لَوْ تَعْلَمُونَ مَا لَكُمْ عِنْدَ اللهِ لأَحْبَبْتُمْ
أَنْ تَزْدَادُوا فَاقَةً وَحَاجَةً ‘আল্লাহর কাছে তোমাদের যে কি মর্যাদা
তা যদি তোমরা জানতে, তাহ’লে তোমরা আরো ক্ষুধার্ত, আরো অভাব অনটনে থাকতে
পসন্দ করতে’।[18]
নু‘মান বিন বাশীর (রাঃ)
বলেন,أَلَسْتُمْ فِى طَعَامٍ وَشَرَابٍ مَا شِئْتُمْ لَقَدْ رَأَيْتُ
نَبِيَّكُمْ صلى الله عليه وسلم وَمَا يَجِدُ مِنَ الدَّقَلِ مَا يَمْلأُ
بِهِ بَطْنَهُ ‘তোমরা তো এখন ইচ্ছা মতো পানাহার করতে পারছ, অথচ আমি
তোমাদের নবী (ছাঃ)-কে দেখেছি যে, তিনি এই শুকনো খেজুরও পেতেন না, যদ্বারা
তাঁর পেট ভরতে পারেন’।[19]
গরীব ও দুর্বলদের মর্যাদা
১. গরীব ও দুর্বলদের কারণে রিযিক প্রদান করা হয় :
আল্লাহভীরু
গরীব ও দুর্বল শ্রেণীর লোকেরা সমাজিকভাবে হেয় হ’লেও মহান আল্লাহর নিকটে
মর্যাদাশীল এ শ্রেণীর কারণেই আল্লাহ তা‘আলা তাঁর বান্দাদের রিযিক দিয়ে
থাকেন। সা‘দ (রাঃ) নিজেকে নিম্নশ্রেণীর লোকদের চাইতে অধিক মর্যাদাশীল মনে
করলে রাসূল (ছাঃ) বললেন,هَلْ تُنْصَرُوْنَ وَتُرْزَقُوْنَ إِلاَّ
بِضُعَفَائِكُمْ ‘তোমাদের দুর্বল লোকদের দো‘আয় তোমাদেরকে সাহায্য করা হয় ও
রিযিক দেওয়া হয়’।[20]
রাসূল (ছাঃ) আরো
বলেছেন,ابْغُوْنِىْ ضُعَفَاءَكُمْ فَإِنَّمَا تُرْزَقُوْنَ وَتُنْصَرُوْنَ
بِضُعَفَائِكُمْ ‘তোমরা দুর্বলদের মাঝে আমাকে অন্বেষণ কর। কেননা দুর্বলদের
দো‘আর কারণেই তোমাদেরকে রিযিক প্রদান করা হয় এবং সাহায্য করা হয়’।[21]
তাছাড়া দুর্বলদের দো‘আ ও শপথ মহান আল্লাহর দরবারে কবুল হয়। রাসূল (ছাঃ)
বলেছেন,رُبَّ أَشْعَثَ مَدْفُوْعٍ بِالأَبْوَابِ لَوْ أَقْسَمَ عَلَى اللهِ
لأَبَرَّهُ ‘এমন অনেক লোক আছে, যাদের মাথার চুল এলোমেলো, এরা মানুষের
দুয়ার হ’তে বিতাড়িত। তবে সে যদি আল্লাহর নামে শপথ করে, তবে আল্লাহ তার শপথ
পূরণ করেন’।[22]
২. জান্নাতের অধিবাসীদের অধিকাংশ সম্পদহীন গরীব :
সাধারণত সম্পদশালীদের কমসংখ্যকই আল্লাহভীরু হয়ে থাকে। বরং এদের অধিকাংশই হয় উদ্ধত অহংকারী। ধরাকে করে সরা জ্ঞান। আখেরাতে পুনরুত্থান, হিসাব-নিকাশ, পুলছিরাত ও জান্নাত-জাহান্নাম নিয়ে তাদের কোন ভাবনা-চিন্তা নেই। দুনিয়া নিয়েই এরা মহাব্যস্ত। অথচ এই সাধারণ জ্ঞানটুকু তাদের ঠিকই আছে যে, দুনিয়া চিরস্থায়ী নয়। যেকোন সময় এখানে বিদায়ের ঘণ্টা বেজে যাবে। তারপরও আখেরাতের প্রস্ত্ততি নিয়ে তাদের কোন মাথাব্যথা নেই। ফলে চূড়ান্ত বিচারে তারা হবে চরমভাবে ব্যর্থ। জ্বলন্ত হুতাশনে জীবন্ত পুড়বে যুগ যুগ ধরে।
অপরদিকে আল্লাহর পূর্ণ আনুগত্যশীল ব্যক্তি দুনিয়াতে গরীব ও দুর্বল হ’লেও আখেরাতের চূড়ান্ত পরীক্ষায় সে হবে সফলকাম। প্রবেশ করবে চির শান্তির আবাস জান্নাতে। ভোগ করবে অসংখ্য নাজ ও নে‘মত। উল্লেখ্য যে, সমাজের এই গরীব-মিসকীন ও দুর্বল শ্রেণীই অধিকহারে আল্লাহর বিধানের প্রতি আনুগত্যশীল হয়। ফলে জান্নাতের অধিকাংশ অধিবাসীও হবে তারাই। ডান হাতে আমলনামা পেয়ে আনন্দচিত্তে সেদিন বলে উঠবে, ‘পড়ে দেখ আমলনামা। নিশ্চয়ই আমি জানতাম যে, আমাকে হিসাবের সম্মুখীন হ’তে হবে। অতঃপর সে সুখী জীবন যাপন করবে। সুউচ্চ জান্নাতে। যার ফল সমূহ থাকবে অবনমিত। (বলা হবে) বিগত দিনে তোমরা যা প্রেরণ করেছিলে তার প্রতিদানে তৃপ্তি সহকারে খাও এবং পান কর’ (হাক্কাহ ৬৯/১৯-২৪)।
পক্ষান্তরে দুনিয়ার দাম্ভিক অহংকারী যালেম শ্রেণী বাম হাতে আমলনামা পেয়ে বিমর্ষচিত্তে আফসোস করে বলবে, ‘হায়, আমার আমলনামা যদি আমাকে না দেওয়া হ’ত। আমি যদি আমার হিসাব না জানতাম। হায়, আমার মৃত্যুই যদি আমার জন্য চূড়ান্ত হ’ত। আমার ধন-সম্পদ আমার কোন উপকারে আসল না। আমার ক্ষমতাও আজ ধ্বংস হয়ে গেল। (ফেরেশতাদের বলা হবে) ধর একে, গলায় বেড়ি পরিয়ে দাও। অতঃপর জাহান্নামে নিক্ষেপ কর। অতঃপর তাকে বেড়িবদ্ধ কর সত্তর গজ দীর্ঘ এক শিকলে। কেননা নিশ্চয়ই সে মহান আল্লাহতে বিশ্বাসী ছিল না এবং মিসকীনকে খাদ্যদানে উৎসাহিত করত না’ (হাক্কাহ ৬৯/২৫-৩৪)।
রাসূল (ছাঃ) বলেন,أَلاَ أُخْبِرُكُمْ بِأَهْلِ
الْجَنَّةِ، كُلُّ ضَعِيفٍ مُتَضَاعِفٍ ، لَوْ أَقْسَمَ عَلَى اللهِ
لأَبَرَّهُ، أَلاَ أُخْبِرُكُمْ بِأَهْلِ النَّارِ كُلُّ عُتُلٍّ جَوَّاظٍ
مُسْتَكْبِرٍ ‘আমি কি তোমাদেরকে জান্নাতীদের সম্পর্কে অবহিত করব না? (তারা
হ’ল) প্রত্যেক দুর্বল ব্যক্তি এবং এমন ব্যক্তি যাকে দুর্বল মনে করা হয়। সে
যদি আল্লাহর নামে কসম করে তাহ’লে তা তিনি পূর্ণ করে দেন। (তিনি আরো বলেন)
আমি কি তোমাদেরকে জাহান্নামীদের সম্পর্কে অবহিত করব না? (তারা হ’ল)
প্রত্যেক রূঢ় স্বভাব, কঠিন হৃদয় ও দাম্ভিক ব্যক্তি’।[23] অন্যত্র তিনি
বলেন,قُمْتُ عَلَى بَابِ الْجَنَّةِ فَكَانَ عَامَّةَ مَنْ دَخَلَهَا
الْمَسَاكِينُ، وَأَصْحَابُ الْجَدِّ مَحْبُوسُونَ، غَيْرَ أَنَّ أَصْحَابَ
النَّارِ قَدْ أُمِرَ بِهِمْ إِلَى النَّارِ، وَقُمْتُ عَلَى بَابِ
النَّارِ فَإِذَا عَامَّةُ مَنْ دَخَلَهَا النِّسَاءُ ‘আমি জান্নাতের
দরজায় দাঁড়ালাম। দেখলাম, যারা জান্নাতে প্রবেশ করছে তাদের অধিকাংশই
গরীব-মিসকীন। আর ধনীদেরকে (হিসাবের জন্য) আটকে রাখা হয়েছে। এছাড়া
জাহান্নামীদেরকে জাহান্নামে নিক্ষেপের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আর
জাহান্নামের দরজায় দাঁড়িয়ে দেখলাম, তাতে যারা প্রবেশ করছে তাদের বেশীরভাগই
নারী’।[24]
রাসূল (ছাঃ) বলেন,احْتَجَّتِ
الْجَنَّةُ وَالنَّارُ فَقَالَتِ النَّارُ فِىَّ الْجَبَّارُونَ
وَالْمُتَكَبِّرُونَ. وَقَالَتِ الْجَنَّةُ فِىَّ ضُعَفَاءُ النَّاسِ
وَمَسَاكِينُهُمْ. قَالَ فَقَضَى بَيْنَهُمَا إِنَّكِ الْجَنَّةُ رَحْمَتِى
أَرْحَمُ بِكِ مَنْ أَشَاءُ وَإِنَّكِ النَّارُ عَذَابِى أُعَذِّبُ بِكِ
مَنْ أَشَاءُ وَلِكِلاَكُمَا عَلَىَّ مِلْؤُهَا ‘জান্নাত ও জাহান্নামের
মধ্যে বিবাদ হ’ল। জাহান্নাম বলল, আমার মধ্যে উদ্ধত অহংকারী লোকেরা থাকবে।
আর জান্নাত বলল, আমার মধ্যে দুর্বল ও দরিদ্র ব্যক্তিরা থাকবে। অতঃপর আল্লাহ
উভয়ের মধ্যে ফায়ছালা করলেন এইভাবে যে, তুমি জান্নাত আমার রহমত, তোমার
দ্বারা আমি যার প্রতি ইচ্ছা অনুগ্রহ করব। আর তুমি জাহান্নাম আমার শাস্তি,
তোমার দ্বারা আমি যাকে ইচ্ছা শাস্তি দিব। তোমাদের উভয়কেই পরিপূর্ণ করা
আমাদের দায়িত্ব’।[25]
রাসূল (ছাঃ)
বলেন,اطَّلَعْتُ فِي الجَنَّةِ فَرَأَيْتُ أَكْثَرَ أَهْلِهَا الفُقَرَاءَ،
وَاطَّلَعْتُ فِي النَّارِ فَرَأَيْتُ أَكْثَرَ أَهْلِهَا النِّسَاءَ ‘আমি
জান্নাতে উঁকি মেরে দেখলাম যে, এর অধিকাংশ অধিবাসী হ’ল গরীব-মিসকীন। আর
জাহান্নামে দেখলাম যে, এর অধিকাংশই হ’ল নারী’।[26]
যারা দারিদ্র্যকে নিজের দুর্ভাগ্যের কারণ মনে করেন, আশা করি হাদীছগুলো তাদের লালিত বিশ্বাসে চির ধরাতে পারবে। দুনিয়াতে সম্পদের দীনতাই আপনাকে অগ্রগামী জান্নাতী হ’তে সহায়তা করবে ইনশাআল্লাহ।
৩. ধনীদের পাঁচশত বছর আগে জান্নাতে প্রবেশ :
দুনিয়া
বঞ্চিত এই গরীব অসহায়দের জন্য সুখের বিষয় হ’ল যে, ধনীদের আগেই এরা
জান্নাতে প্রবেশ করবে। দুনিয়ার ক্ষণস্থায়ী জীবনে মূল্যহীন থাকলেও আখেরাতের
চিরস্থায়ী জীবনে সবার আগে জান্নাতে প্রবেশের মহা সম্মানে ভূষিত হবে। রাসূল
(ছাঃ) বলেন,فُقَرَاءُ الْمُهَاجِرِينَ يَدْخُلُونَ الْجَنَّةَ قَبْلَ
أَغْنِيَائِهِمْ بِخَمْسِمِائَةِ سَنَةٍ ‘দরিদ্র মুহাজিরগণ তাদের ধনীদের
চাইতে পাঁচ শত বছর আগে জান্নাতে প্রবেশ করবে’।[27] তিনি আরো বলেন,يَدْخُلُ
الْفُقَرَاءُ الْجَنَّةَ قَبْلَ الأَغْنِيَاءِ بِخَمْسِمِائَةِ عَامٍ
نِصْفِ يَوْمٍ ‘দরিদ্ররা ধনীদের চাইতে পাঁচ শত বছর পূর্বে জান্নাতে প্রবেশ
করবে। আর তা হ’ল (আখেরাতের) অর্ধ দিনের সমান’।[28] অন্যত্র তিনি বলেন,
يَدْخُلُ فُقَرَاءُ الْمُسْلِمِيْنَ الْجَنَّةَ قَبْلَ أَغْنِيَائِهِمْ
بِنِصْفِ يَوْمٍ وَهُوَ خَمْسُمِائَةِ عَامٍ ‘দরিদ্র মুসলমানগণ ধনীদের
চাইতে অর্ধদিন পূর্বে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আর এই অর্ধদিন হ’ল পাঁচ শত
বছরের সমান’।[29]
মুমিনদের করণীয়
১. গরীব বলে কাউকে অবজ্ঞা না করা :
গরীব ও অসহায় মুসলমানদের অবজ্ঞা-অবহেলা না করতে পবিত্র কুরআনের বিভিন্ন স্থানে আল্লাহ তা‘আলা নির্দেশ প্রদান করেছেন। তিনি বলেন,وَاصْبِرْ نَفْسَكَ مَعَ الَّذِينَ يَدْعُونَ رَبَّهُمْ بِالْغَدَاةِ وَالْعَشِيِّ يُرِيدُونَ وَجْهَهُ وَلاَ تَعْدُ عَيْنَاكَ عَنْهُمْ تُرِيدُ زِينَةَ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا ‘তুমি নিজেকে তাদেরই সংসর্গে রাখ যারা সকাল ও সন্ধ্যায় তাদের প্রতিপালককে তাঁর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে আহবান করে এবং তুমি পর্থিব জীবনের শোভা কামনা করে তাদের দিক হ’তে তোমার দৃষ্টি ফিরিয়ে নিয়ো না’ (কাহফ ১৮/২৮)। অন্যত্র তিনি বলেন,وَلَا تَطْرُدِ الَّذِينَ يَدْعُونَ رَبَّهُمْ بِالْغَدَاةِ وَالْعَشِيِّ يُرِيدُونَ وَجْهَهُ مَا عَلَيْكَ مِنْ حِسَابِهِمْ مِنْ شَيْءٍ وَمَا مِنْ حِسَابِكَ عَلَيْهِمْ مِنْ شَيْءٍ فَتَطْرُدَهُمْ فَتَكُونَ مِنَ الظَّالِمِينَ- ‘আর তাদেরকে বিতাড়িত করবে না, যারা সকাল-বিকাল স্বীয় পালনকর্তার ইবাদত করে তাঁর সন্তুষ্টি কামনায়। তাদের হিসাব বিন্দুমাত্রও তোমার দায়িত্বে নেই এবং তোমার হিসাবও বিন্দুমাত্র তাদের দায়িত্বে নেই যে, তুমি তাদেরকে বিতাড়িত করবে। অন্যথা তুমি যালেমদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে’ (আন‘আম ৬/৫২)।
উক্ত আয়াত নাযিলের প্রেক্ষাপট
সম্পর্কে হযরত খাববাব (রাঃ) হ’তে বর্ণিত আছে যে, আক্বরা বিন হাবেস
আত-তামীমী ও উয়ায়না বিন হিছন আল-ফাজারী রাসূল (ছাঃ)-এর নিকট এসে তাঁকে
ছুহায়ব, বিলাল, আম্মার, খাববাব (রাঃ) প্রমুখ দরিদ্র অসহায় মুমিনদের সাথে
বসা দেখে হেয় জ্ঞান করল। অতঃপর তাঁর নিকটে এসে একাকী বলল, আমরা চাই যে,
আপনি আপনার সাথে আমাদের বিশেষ বৈঠকের ব্যবস্থা করবেন, যাতে আরবরা আমাদের
মর্যাদা উপলব্ধি করতে পারে। কেননা আপনার নিকটে আরবের প্রতিনিধি দল সমূহ
আসে। এই ক্রীতদাসদের সাথে আরবরা আমাদের উপবিষ্ট দেখলে আমরা লজ্জাবোধ করি।
অতএব আমরা যখন আপনার নিকটে আসব তখন আপনি এদেরকে আপনার নিকট থেকে উঠিয়ে
দিবেন। আর আমরা বিদায় নেওয়ার পর আপনি ইচ্ছা করলে তাদের সাথে বসতে পারেন।
রাসূল (ছাঃ) বললেন, আচ্ছা দেখা যাক। তারা বলল, আপনি আমাদের জন্য একটি
চুক্তিপত্র লিখে দেন। রাবী বলেন, তিনি কাগজ আনালেন এবং আলী (রাঃ)-কে লেখার
জন্য ডাকলেন। আমরা এক পাশে বসা ছিলাম। ইত্যবসরে জিবরীল (আঃ) উপরোক্ত আয়াত
নিয়ে অবতরণ করলেন’।[30]
সা‘দ (রাঃ) বলেন, এই
আয়াত আমাদের ছয়জন সম্পর্কে নাযিল হয়েছে। আমি, ইবনে মাসঊদ, ছুহায়ব, আম্মার,
মিকদাদ ও বিলাল (রাঃ)। কুরায়শরা রাসূল (ছাঃ)-কে বলল, আমরা এসব লোকের সাথে
বসতে সম্মত নই। আপনি এদেরকে আপনার নিকট থেকে তাড়িয়ে দিন। তখন এই আয়াত
অবতীর্ণ হয়।[31]
অতএব কোন অবস্থাতেই গরীব ও দুর্বল ভেবে কাউকে হেয় ও অবজ্ঞা করা যাবে না এবং তাদের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ করাও সমীচীন নয়।
২. নিম্ন স্তরের মানুষের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করা :
মুমিনদের
উচিত নিজ অবস্থানের চেয়ে উচ্চ স্তরের কোন ব্যক্তি বা তার সম্পদের দিকে
আক্ষেপের দৃষ্টিতে না তাকিয়ে বরং নিম্নস্তরের মানুষের দিকে তাকিয়ে নিজের
অবস্থার জন্য মহান আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করা। আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে
বর্ণিত, রাসূল (ছাঃ) বলেন, إِذَا نَظَرَ أَحَدُكُمْ إِلَى مَنْ فُضِّلَ
عَلَيْهِ فِي الْمَالِ وَالْخَلْقِ فَلْيَنْظُرْ إِلَى مَنْ هُوَ أَسْفَلَ
مِنْهُ ‘যখন তোমাদের কেউ এমন ব্যক্তির দিকে দেখে যাকে ধন-সম্পদে,
স্বাস্থ্য-সামর্থ্যে শ্রেষ্ঠত্ব প্রদান করা হয়েছে, তখন সে যেন নিজের চাইতে
নিম্ন মানের ব্যক্তির দিকে তাকায়’।[32]
ছহীহ
মুসলিমের বর্ণনায় রয়েছে, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, اُنْظُرُوْا إِلَى مَنْ هُوَ
أَسْفَلَ مِنْكُمْ وَلاَ تَنْظُرُوْا إِلَى مَنْ هُوَ فَوْقَكُمْ فَهُوَ
أَجْدَرُ أَنْ لاَ تُزْدِرُوْا نِعْمَةَ اللهِ عَلَيْكُمْ ‘তোমরা নিজেদের
অপেক্ষা নিম্ন অবস্থার লোকের দিকে তাকাও। এমন ব্যক্তির দিকে তাকাবে না, যে
তোমাদের চাইতে উচ্চ পর্যায়ের। যদি এই নীতি অবলম্বন কর, তাহ’লে আল্লাহ
তোমাকে যে নে‘মত দান করেছেন, তাকে তুমি ক্ষুদ্র বা হীন মনে করবে না’।[33]
৩. অল্পে তুষ্ট থাকা :
মুমিনমাত্রেরই
করণীয় হচ্ছে অল্পে তুষ্ট থাকা। আল্লাহ প্রদত্ত হালাল রূযী যত অল্পই হৌক না
কেন তাতে সন্তোষ প্রকাশ করতঃ শুকরিয়া আদায় করলে দুনিয়ার ধন-সম্পদের মোহ
তাকে বিভ্রান্ত করতে পারবে না। অল্পে তুষ্ট থাকা সম্পর্কে রাসূল (ছাঃ)
বলেন,قَدْ أَفْلَحَ مَنْ هُدِىَ إِلَى الإِسْلاَمِ وَرُزِقَ الْكَفَافَ
وَقَنِعَ بِهِ ‘সফলকাম হয়েছে সেই ব্যক্তি, যাকে ইসলামের দিকে হেদায়াত দেয়া
হয়েছে, প্রয়োজন মাফিক রিযিক দান করা হয়েছে এবং তাতেই সে পরিতুষ্ট থাকে’।[34]
অন্যত্র রাসূল (ছাঃ) বলেন,مَنْ أَصْبَحَ مِنْكُمْ مُعَافًى فِى جَسَدِهِ
آمِنًا فِى سِرْبِهِ عِنْدَهُ قُوتُ يَوْمِهِ فَكَأَنَّمَا حِيزَتْ لَهُ
الدُّنْيَا ‘তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি সুস্থ দেহে পরিবার-পরিজনসহ নিরাপদে
সকালে উপনীত হয় এবং তার নিকটে যদি সারাদিনের খোরাকী থাকে, তাহ’লে তার জন্য
যেন গোটা দুনিয়া একত্রিত করা হল’।[35] এ কারণেই রাসূল (ছাঃ) সবসময়ই প্রয়োজন
মাফিক রিযিকের প্রার্থনা করতেন এভাবে, اللَّهُمَّ ارْزُقْ آلَ مُحَمَّدٍ
قُوتًا ‘হে আল্লাহ! তুমি মুহাম্মাদের পরিবারের জন্য কেবল জীবন ধারণোপযোগী
রিযিকের ব্যবস্থা কর’।[36]
উল্লেখ্য যে, নিম্ন অবস্থানের দিকে গভীর দৃষ্টিতে দেখলে নিজের অবস্থার জন্য সান্ত্বনা খুঁজে পাওয়া যাবে। আর উপরের দিকে তাকালে নিজের দৈন্যদশার জন্য কেবল আফসোস বাড়বে এবং নিজেকে হতভাগ্য মনে হবে। পরিণামে মনের অজান্তেই আল্লাহর অকৃতজ্ঞ বান্দার অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে। যা মুমিনকে ব্যর্থতার অতলে ডুবিয়ে দিতে পারে।
উপসংহার :
পরিশেষে দুর্ভাগ্যজনক হ’লেও
সত্য যে, অর্থের লোভ আজ মানুষকে পশুত্বের স্তরে পৌঁছে দিয়েছে। সম্পদশালীর
ঔদ্ধত্য আর সীমাহীন অহংকারে পর্যুদস্ত হচ্ছে ক্ষমতাহীন গরীব ও অসহায় মানুষ।
অর্থনৈতিক বৈষম্যের যাঁতাকলে পিষ্ট হচ্ছে মানবতা। অর্থ-বিত্তের মাঝে
হাবুডুবু খাওয়া মানুষগুলো যেন একটিবারের জন্যও চিন্তা করার সময় পায় না
আখেরাতের অন্তহীন জীবনের কথা। এলাহী বিধানের নির্দেশ মেনে বের করে না যাকাত
ও ওশর। পাশে দাঁড়ায় না হতদরিদ্র ইয়াতীম ও অসহায় মানুষের। বরং সম্পদ
বৃদ্ধির পিছনে এরা এতটাই ব্যস্ত যে, এদের জীবনের লক্ষ্যই যেন অর্থোপার্জন।
রাসূল (ছাঃ) তাই আক্ষেপ করে বলেছেন,تَعِسَ عَبْدُ الدِّينَارِ
وَالدِّرْهَمِ وَالْقَطِيفَةِ وَالْخَمِيصَةِ إِنْ أُعْطِىَ رَضِىَ وَإِنْ
لَمْ يُعْطَ لَمْ يَرْضَ ‘লাঞ্ছিত হোক দীনার ও দিরহামের গোলাম এবং চাদর ও
শালের গোলাম। তাকে দেয়া হ’লে সন্তুষ্ট হয়, না দেয়া হ’লে অসন্তুষ্ট হয়’।[37]
রাসূল (ছাঃ) আরো বলেন, لَيْسَ الْغِنَى عَنْ كَثْرَةِ الْعَرَضِ،
وَلَكِنَّ الْغِنَىْ غِنَى النَّفْسِ ‘ধনের আধিক্য হ’লেই ধনী হয় না, বরং
অন্তরের ধনীই হ’ল প্রকৃত ধনী’।[38]
পক্ষান্তরে গরীব-মিসকীন সমাজে উপেক্ষিত হ’লেও মহান আল্লাহর বিধান মেনে যত কষ্টেই সে দিনাতিপাত করুক না কেন বিচার দিবসে সে-ই হবে মহা সম্মানিত। সবার আগেই প্রবেশ করবে অনন্ত সুখের অনিন্দ্যসুন্দর বাগান জান্নাতে। অতএব আমাদের সকলের উচিত রাসূল (ছাঃ) ও ছাহাবীদের জীবন থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে দুনিয়ার ক্ষণস্থায়ী জীবনে যে যতটুকু সম্পদের অধিকারী হয়েছি তাতে তুষ্ট থেকে আখেরাতের অফুরন্ত জীবনের জন্য পাথেয় সঞ্চয় করা। হে আল্লাহ!& ইবাদতকে আমাদের জীবনের লক্ষ্য বানিয়ে দাও। আর সম্পদকে করো শুধু পার্থিব জীবনে চলার উপকরণ। হে আল্লাহ! তুমি আমাদেরকে বিচার দিবসে তোমার সফলকাম বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত কর-আমীন!
[1]. আহমাদ, সিলসিলা ছহীহাহ হা/২৭০০।
[2]. মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/৫২৩৬ ‘গরীবদের ফযীলত ও নবী (ছাঃ)-এর জীবন যাপন’ অনুচ্ছেদ; ঐ, বঙ্গানুবাদ হা/৫০০৭।
[3]. আহমাদ, মিশকাত হা/৫২৫৯; ছহীহ ইবনে হিববান হা/৪৪৯; সিলসিলা ছহীহাহ হা/২১৬৬।
[4]. ইবনু মাজাহ হা/৪১২৬; সিলসিলা ছহীহাহ হা/৩০৮।
[5]. মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/৫২৪০; ঐ, বঙ্গানুবাদ হা/৫০১১।
[6]. মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/৫২৩৭; ঐ বঙ্গানুবাদ হা/৫০০৮।
[7]. বুখারী, মিশকাত হা/৫২৩৮; ঐ, বঙ্গানুবাদ হা/৫০০৯।
[8]. বুখারী, মিশকাত হা/৫২৩৯; ঐ বঙ্গানুবাদ হা/৫০১০।
[9]. বুখারী হা/৬৪৫২।
[10]. বুখারী হা/৬৪৫৫।
[11]. বুখারী হা/৬৪৫৮; মিশকাত হা/৪১৯২।
[12]. ইবনু মাজাহ হা/৪১৪৫।
[13]. তিরমিযী হা/২৩৬০; ইবনু মাজাহ হা/৩৩৪৭; সিলসিলা ছহীহাহ হা/২১১৯।
[14]. বুখারী হা/৬৪৫৬; মিশকাত হা/৪৩০৭।
[15]. বুখারী হা/৬৪৪৮।
[16]. বুখারী হা/৬৪৫৩; মুসলিম হা/২৯৬৬।
[17]. বুখারী হা/৭৩২৪; তিরমিযী হা/২৩৬৭।
[18]. তিরমিযী হা/২৩৬৮; সিলসিলা ছহীহাহ হা/২১৬৯।
[19]. মুসলিম, মিশকাত হা/৪১৯৫; তিরমিযী হা/২৩৭২।
[20]. বুখারী, মিশকাত হা/৫২৩২।
[21]. আবুদাঊদ, তিরমিযী, মিশকাত হা/৫২৪৬, সনদ ছহীহ।
[22]. মুসলিম, মিশকাত হা/৫২৩১; ছহীহ ইবনে হিববান হা/৬৪৮৩।
[23]. মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/৫১০৬।
[24]. মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/৫২৩৩।
[25]. আহমাদ হা/১১৭৫৪; আল-আদাবুল মুফরাদ হা/৬১৫, সনদ ছহীহ।
[26]. মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/৫২৩৪।
[27]. তিরমিযী হা/২৩৫১, সনদ ছহীহ।
[28]. তিরমিযী হা/২৩৫৩; মিশকাত হা/৫২৪৩।
[29]. তিরমিযী হা/২৩৫৪, সনদ হাসান ছহীহ।
[30]. ইবনু মাজাহ হা/৪১২৭; সিলসিলা ছহীহাহ হা/৩২৯৭।
[31]. ইবনু মাজাহ হা/৪১২৮।
[32]. মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/৫২৪২।
[33]. মুসলিম, মিশকাত হা/৫২৪২।
[34]. ইবনু মাজাহ হা/৪১৩৮, সিলসিলা ছহীহাহ হা/১৫০৬।
[35]. ইবনু মাজাহ হা/৪১৪১; সিলসিলা ছহীহাহ হা/২৩১৮।
[36]. মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/৫১৬৪।
[37]. বুখারী হা/১৮৮৬; মিশকাত হা/৫১৬১।
[38]. মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/৫১৭০।