পর্ব ১। পর্ব ২। পর্ব ৩

ত্যাগ স্বীকারের পথে বাধা সমূহ

দ্বীনের পথ মূলতঃ সফলতার পথ। আল্লাহর দেওয়া অভ্রান্ত সত্যের পথ। যে পথের শেষ ঠিকানা জান্নাত। পৃথিবীর ইতিহাসে কোন নবীর যুগেই এপথ সহজ ছিল না। বরং এ পথে চলতে গিয়ে নবী-রাসূল ও তাঁদের অনুসারীগণ নানা বিপদ-মুছীবত ও কষ্ট-ক্লেশের সম্মুখীন হয়েছেন। যারা তাদের ঈমান ও ধৈর্যের সাথে ত্যাগ স্বীকার করেছেন, তারাই সফলতার মনযিলে মাকছূদে উপনীত হয়েছেন। আর যারা ত্যাগ স্বীকার করতে পারেননি, তারা মূলতঃ বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার ঘেরাটোপে পড়ে ব্যর্থ হয়েছেন। এই পর্যায়ে আমরা সেই ব্যর্থতার কতিপয় কারণ চিহ্নিত করার চেষ্টা করব ইনশাআল্লাহ।

১. ইখলাছহীনতা :

যে কোন ত্যাগ স্বীকারের জন্য একনিষ্ঠতা প্রয়োজন। তবে দ্বীনের পথে ত্যাগ স্বীকার করার জন্য একনিষ্ঠতা অপরিহার্য। কেননা আল্লাহর পথে যে কোন কষ্ট স্বীকার ইবাদতের অন্তর্ভুক্ত। আর ইখলাছ বিহীন কোন ইবাদত আল্লাহর দরবারে কবুল হয় না। পার্থিব স্বার্থে যতই কষ্ট স্বীকার করা হোক না কেন, তা যদি স্রেফ আল্লাহর জন্য না হয়ে থাকে, তাহ’লে এর কোন পরকালীন উপকারিতা নেই। উমামা বাহেলী (রাঃ) বলেন, এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর কাছে এসে বলল, আপনি সেই ব্যক্তি সম্পর্কে কি মনে করেন- যে ছওয়াব ও খ্যাতি উভয়টি লাভের জন্য যুদ্ধ করে? রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, لَا شَيْءَ لَهُ، ‘তার জন্য কিছুই মিলবে না’। তিনি কথাটি তিনবার বললেন। তারপর বললেন,إِنَّ اللهَ لَا يَقْبَلُ مِنَ الْعَمَلِ إِلَّا مَا كَانَ لَهُ خَالِصًا، وَابْتُغِيَ بِهِ وَجْهُهُ، ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ ঐ আমল কবুল করেন না, যা তাঁর জন্য খালেছভাবে করা হয় না এবং এর দ্বারা তাঁর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্য করা হয় না’।[1] তাছাড়া কারো ভিতর যদি খুলুছিয়াত না থাকে, তাহ’লে যে কোন ত্যাগ স্বীকার তার পক্ষে সম্ভব হবে না। যেমন কেউ যদি আল্লাহর ইবাদতে মুখলিছ না হ’তে পারে, তাহ’লে রাতের সুখনিদ্রা ভঙ্গ করে তাহাজ্জুদে দাঁড়ানো তার জন্য খুবই কঠিন হবে অথবা সম্ভবই হবে না। কারণ খুলূছিয়াত শূণ্য হৃদয়ে ত্যাগের পথে পা বাড়লেও শেষতক তার ওপর অবিচল থাকা সম্ভব হয় না। যেমন মুনাফিক নেতা আব্দুল্লাহ ইবনে উবাই তার দল নিয়ে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর সাথে ওহোদ যুদ্ধে রওনা দিয়েছিল বটে, কিন্তু পরে মিথ্যা অযুহাত দিয়ে পৃষ্ঠপ্রদর্শন করেছিল। অনুরূপভাবে খুলূছিয়াতের কারণে হাবীল তার পালের শ্রেষ্ঠ দুম্বা কুরবানী করেছিল এবং আল্লাহ তাঁর কুরবানী কবুল করেছিলেন। কিন্তু ইখলাছহীনতার কারণে কাবীল তার উৎকৃষ্ট সম্পদ কুরবানী করতে ব্যর্থ হয়েছিল। সে তার উৎপাদিত নিকৃষ্ট ফসল উৎসর্গ করেছিল। ফলে তার এই উৎসর্গ কবুল হয়নি। যুগে যুগে যারাই আল্লাহর দাসত্ব প্রতিষ্ঠায় নিজেদের নিয়োজিত করেছিলেন, তারা বুকের প্রদীপ্ত ঈমানী বলে ত্যাগের বন্ধুর পথ পাড়ি দিয়েছিলেন। কেননা একনিষ্ঠতা ছাড়া জান্নাতের ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ পথ পাড়ি দেওয়া আদৌ সম্ভব নয়।

২. অলসতা :

অলসতা অন্তরের একটি মারাত্মক ব্যাধি। অলসতা অভ্যাসে পরিণত হ’লে দৈহিক মৃত্যুর আগেই মানসিক মৃত্যু ঘটে। ধীরে ধীরে ইবাদতের প্রাণ নষ্ট হয়ে যায়। পার্থিব ও পরকালীন উভয় জীবনে নেমে আসে চরম দুর্ভোগ। সেজন্য ভিতর থেকে অলসতার রোগ দূর করতে না পারলে দ্বীনের পথে ত্যাগ স্বীকার করা আদৌ সম্ভব হয় না। উন্নত জীবন গঠনে ও পরকালীন মুক্তির জন্য অলসতা পরিহার করা অবশ্য কর্তব্য। শয়তান গাফেল বান্দাকে এবং কখনো কখনো ঈমানদার ব্যক্তিকেও অলসতার মাধ্যমে ধোঁকায় ফেলে। যেমন তাবূকের যুদ্ধে তিনজন আনছারী ছাহাবী খাঁটি মুমিন হওয়া সত্ত্বেও যুদ্ধ থেকে পিছিয়ে পড়েছিলেন। এদের মধ্যে কা‘ব বিন মালেক (রাঃ) ছিলেন মক্কায় অনুষ্ঠিত ঐতিহাসিক বায়‘আতে আক্বাবায় অংশ্রগ্রহণকারী জালীলুল ক্বদর ছাহাবী। তারা সাময়িক অলসতার কারণে জিহাদে যোগদান করতে পিছিয়ে পড়েছিলেন। ফলে রাসূল (ছাঃ) তাদেরকে বয়কটের নির্দেশ দিয়েছিলেন। ইতিহাসে তারা ‘আল-মুখাল্লাফূন’ (الـمُخَلَّفُوْنَ) নামে পরিচিত হয়ে আছে।

তাছাড়া ইবাদতের কষ্টে অলসতা করা মুনাফিকদের বৈশিষ্ট্য। আল্লাহ বলেন,وَإِذَا قَامُوا إِلَى الصَّلَاةِ قَامُوا كُسَالَى، ‘যখন তারা ছালাতে দাঁড়ায়, তখন অলসভাবে দাঁড়ায়’ (নিসা ৪/১৪২)। সেজন্য যত বেশী অলসতা দূর করা যাবে, ইবাদত-বন্দেগীতে ত্যাগ স্বীকারের মাত্রাও তত বেশী তরান্বিত হবে। শারীরিক রোগ-ব্যাধি নিয়ে যেমন স্বাচ্ছন্দ্যে চলাফেরা করা যায় না, তেমনি অলসতার রোগ নিয়ে দ্বীনের পথে চলাও সম্ভব হয় না। তাই রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যা এই ব্যাধি থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করতেন।[2] আনাস (রাঃ) বলেন, খায়বার যুদ্ধে রওনা দেওয়ার প্রাক্কালে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আবূ ত্বালহাকে বললেন, তোমাদের মধ্য থেকে একটি ছেলে খুঁজে আন, যে আমার খেদমত করবে। আবূ তাবলহা আমাকেই তাঁর সাওয়ারীর পেছনে বসিয়ে নিয়ে আসলেন। তাই আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর খিদমত করতে থাকলাম। যখনই তিনি কোন মনযিলে অবতরণ করতেন, আমি তাকে বলতে শুনতাম,اللّٰهُمَّ إِنِّيْ أَعُوْذُ بِكَ مِنَ الهَمِّ وَالحَزَنِ، وَالعَجْزِ وَالكَسَلِ، وَالبُخْلِ وَالجُبْنِ، وَضَلَعِ الدَّيْنِ، وَغَلَبَةِ الرِّجَالِ، ‘হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে অস্বস্তি, দুশ্চিন্তা, অক্ষমতা, অলসতা, কৃপণতা, ভীরুতা, ঋণের বোঝা এবং মানুষের আধিপত্য থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি’।[3] আব্দুল্লাহ ইবনে আববাস (রাঃ) বলেন, لكل شيء آفة وآفة العلم النسيان وآفة العبادة الكسل، ‘প্রত্যেক বস্ত্তরই বিপদ রয়েছে। জ্ঞানের বিপদ হ’ল ভুলে যাওয়া। আর ইবাদতের বিপদ হ’ল অলসতা’।[4]

৩. বিলাসিতা ও আরামপ্রিয়তা :

বিলাসী ও আরামপ্রিয় মানুষ মানব সমাজে কোন অবদান রাখতে পারে না। সমাজের স্বার্থে নিজে আত্মনিয়োগ করতে পারে না। দেশ ও জাতি তাদের কাছ থেকে কোন উপকার হাছিল করতে পারে না। শুধু বৈষয়িক ব্যাপারেই নয়; বরং দ্বীন পালনের ক্ষেত্রেও বিলাসী মানুষ সবসময় পশ্চাদগামী হয়। ফলে আল্লাহর দ্বীনের জন্য কোন অবদান রাখা ও ত্যাগ স্বীকার করা তার জন্য সম্ভব হয়ে ওঠে না। সেজন্য রাসূল (ছাঃ) ছাহাবায়ে কেরামকে বিলাসিতা পরিহার করার নির্দেশ দিতেন। তিনি যখন মু‘আয ইবনে জাবাল (রাঃ)-কে ইয়ামনে পাঠাচ্ছিলেন, তখন তাকে কতিপয় উপদেশ দিয়েছিলেন। তন্মধ্যে অন্যতম উপদেশ ছিল,يَا مُعَاذُ! إِيَّاكَ وَالتَّنَعُّمَ، عِبَادُ اللهِ لَيْسُوا بِالْمُتَنَعِّمِيْنَ، ‘হে মু‘আয! নিজেকে বিলাসিতা থেকে বাঁচিয়ে রেখ। কেননা আল্লাহর খাছ বান্দাগণ বিলাসী জীবন যাপন করে না’।[5] কারণ প্রকৃত মুমিন বান্দা জান্নাতের সুখ-শান্তির জন্য সকল পার্থিব আরাম-আয়েশ বিসর্জন দিয়ে থাকেন। কাফের-মুশরিকদের বিলাসী জীবন যাপনের ব্যাপারে আল্লাহ বলেন, وَلَوْلَا أَنْ يَكُونَ النَّاسُ أُمَّةً وَاحِدَةً لَجَعَلْنَا لِمَنْ يَكْفُرُ بِالرَّحْمَنِ لِبُيُوتِهِمْ سُقُفًا مِنْ فِضَّةٍ وَمَعَارِجَ عَلَيْهَا يَظْهَرُونَ- وَلِبُيُوتِهِمْ أَبْوَابًا وَسُرُرًا عَلَيْهَا يَتَّكِئُونَ- وَزُخْرُفًا وَإِنْ كُلُّ ذَلِكَ لَمَّا مَتَاعُ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَالْآخِرَةُ عِنْدَ رَبِّكَ لِلْمُتَّقِينَ- ‘যদি (দুনিয়ার মোহে) সকল মানুষ (কুফরীতে) একাট্টা হয়ে যাওয়ার আশংকা না থাকত, তাহ’লে যারা দয়াময়কে অস্বীকার করে, আমরা তাদেরকে দিতাম তাদের গৃহের জন্য রৌপ্য নির্মিত ছাদ ও সিঁড়ি, যার উপরে তারা আরোহণ করত। আর তাদের গৃহের জন্য দিতাম দরজা ও পালংক, যাতে তারা হেলান দিয়ে বসত। এবং দিতাম স্বর্ণনির্মিত আসবাবপত্র। আর এগুলি সব পার্থিব জীবনের ভোগ্যবস্ত্ত বৈ কিছুই নয়। বস্ত্ততঃ তোমার প্রতিপালকের নিকট আখেরাত হ’ল আল্লাহভীরুদের জন্য’ (যুখরুফ ৪৩/৩৩-৩৫)

সুতরাং দ্বীনের পথে ত্যাগ স্বীকারের জন্য বিলাসিতা পরিহার করা অপরিহার্য। কেননা পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ট মানুষ মুহাম্মাদ (ছাঃ) বিলাসী জীবন যাপন করেননি। তার জীবন যাপনে কোন জৌলুসের ছাপ ছিল না। অনন্তর তিনি খাদ্য কষ্টে দিনাতিপাত করেছেন। শি‘আবে আবী ত্বালেবে দুর্বিষহ কষ্ট সহ্য করেছেন। জিহাদের ময়দানে রক্ত দিয়েছেন। ছাহাবায়ে কেরামও সেই ত্যাগের পথ বেছে নিয়েছিলেন। তাদের ত্যাগপূত পরিশ্রমের মাধ্যমেই সারা বিশ্বে ইসলামের দ্যূতি ছড়িয়ে পড়েছে। সেজন্য দাওয়াত ও জিহাদের ময়দানে এবং জীবনের বাঁকে বাঁকে বিলাসিতা পরিহার করা কর্তব্য। এমনকি জ্ঞানার্জনের ক্ষেত্রেও বিলাসিতা পরিহার করা যরূরী। প্রখ্যাত আরবী সাহিত্যিক আল-জাহেয বলেন,الْعِلمُ عَزِيزُ الْجَانِبِ، لَا يُعْطِيكَ بَعْضَهُ حَتَّى تُعْطِيهِ كُلَّكَ، وَأَنْتَ إِذَا أَعْطَيْتَهُ كُلَّكَ كُنْتَ مِنْ إِعْطَائِهِ إِيَّاكَ الْبَعْضَ عَلَى خَطَرٍ، ‘ইলম এমন দামী জিনিস, তুমি নিজেকে তার কাছে পরিপূর্ণরূপে সোপর্দ না করা পর্যন্ত সে তোমাকে জ্ঞানের এক কানাকড়িও দিবে না। আর যখন তুমি নিজের সবকিছু তাকে দিয়ে দিবে, তখন সে তার থেকে সামান্য কিছু ইলম তোমার অন্তরে ঢেলে দিবে’।[6] ইয়াহইয়া ইবনে আবী কাছীর (রহঃ) বলেন, لَا يُسْتَطَاعُ الْعِلْمُ بِرَاحَةِ الْجِسْمِ، ‘শারীরকে আরাম দিয়ে কখনো জ্ঞান অর্জন করা যায় না’।[7] রাসূল (ছাঃ) ইলম অর্জনের জন্য হেরা গুহায় ধ্যান করছেন। নবী মুসা (আঃ) বিদ্যা লাভের জন্য সফর করেছেন। আব্দুল্লাহ ইবনে আববাস (রাঃ) রাসূল (ছাঃ)-এর খাছ দো‘আ পাওয়া সত্ত্বেও তাঁর মৃত্যুর পরে ছাহাবীদের দুয়ারে দুয়ারে গিয়ে ইলম হাছিল করেছেন। জাবের (রাঃ) একটি হাদীছের জন্য শত শত কিলো পথ পাড়ি দিয়েছেন। সুতরাং পৃথিবীর কোন সুখদ বিষয় এমনিতেই লাভ করা যায় না; বরং তার জন্য পরিশ্রম করতে হয়। সেকারণ চিরসুখের জান্নাত পেতে হ’লে বিলাসিতা ছেড়ে ইবাদতের কষ্টে নিজেকে আত্মনিয়োগ করতে হবে।

৪. দুর্বল ঈমান :

আহলুস সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের অন্যতম আক্বীদা হ’ল আল্লাহর আনুগত্যের মাধ্যমে ঈমান বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয় এবং পাপের মাধ্যমে ঈমান হ্রাসপ্রাপ্ত হয়। যদি পাপাচার বাড়তে থাকে, তাহ’লে হৃদয় অসুস্থ হয়ে পড়ে এবং ঈমান দুর্বল হয়ে যায়। শারীরিক অসুস্থতা ও দুর্বলতার কারণে মানুষ যেমন জীবনের স্বাদ উপভোগ করতে পারে না, তেমনি ঈমানী দুর্বলতার কারণে ইবাদতের স্বাদ আস্বাদন করতে পারে না এবং আল্লাহর রেযামন্দি হাছিল করতে পারে না। নবী করীম (ছাঃ) বলেন,إِنَّ الْإِيمَانَ لَيَخْلَقُ فِي جَوْفِ أَحَدِكُمْ كَمَا يَخْلَقُ الثَّوْبُ الْخَلِقُ، فَاسْأَلُوا اللهَ أَنْ يُجَدِّدَ الْإِيمَانَ فِي قُلُوبِكُمْ- ‘নিশ্চয়ই তোমাদের দেহাভ্যন্তরে ঈমান জরাজীর্ণ হয়ে পড়ে, যেমনভাবে কাপড় জীর্ণ-শীর্ণ হড়ে পড়ে। সুতরাং তোমরা আল্লাহর কাছে প্রার্থনা কর; যেন তিনি তোমাদের অন্তঃকরণে ঈমানকে নবায়ন করে দেন’।[8] অর্থাৎ ধূলা-বালু লেগে কাপড় যেমন ময়লা ও জীর্ণ হয়ে যায় এবং সাবান দিয়ে সেটা পরিষ্কার না করা পর্যন্ত গায়ে দেওয়ার উপযোগী হয়ে ওঠে না, ঠিক তেমনি পাপের প্রভাবে ঈমান দুর্বল হয়ে পড়ে। ফলে নিষ্ঠার সাথে তৃপ্তিভরে ইবাদত-বন্দেগী করার জন্য অন্তর প্রস্ত্তত হ’তে পারে না। তাই সর্বদা যিকির-আযকার ও দো‘আ-দরূদের মাধ্যমে ঈমানকে সতেয রাখা বাঞ্ছনীয়। কেননা মযবূত ঈমান না থাকলে বান্দা ত্যাগ স্বীকারের উপযোগিতা হারিয়ে ফেলে।

৫. ভীরুতা ও কাপুরুষতা :

দ্বীনের পথে ত্যাগ স্বীকারের অন্যতম বাধা হ’ল ভীরুতা ও কাপুরুষতা। বাতিলের বিরুদ্ধে গর্জে ওঠার জন্য এবং শিরক-বিদ‘আতের বিরুদ্ধে আপোষহীনভাবে লড়াই করার জন্য সাহসিকতার কোন বিকল্প নেই। শয়তানের যাবতীয় অপশক্তিকে পরাভূত করতে হ’লে কাপুরুষতা পরিত্যাগ করা যরূরী। কেননা পৃথিবীর ইতিহাসে মর্দে মুজাহিদ বীর পুরুষরাই দ্বীনের পতাকা উড্ডীন করেছেন। বিশ্বের দরবারে অহি-র বাণী সাহসী কণ্ঠে উচ্চারণ করেছেন। বাতিলের রক্তচক্ষু ও ভ্রূকুটিকে কখনো ভয় করেননি; বরং তেজদীপ্ত লেখনী ও বক্তব্যের মাধ্যমে মানুষকে ত্বাগূতের দাসত্ব ছেড়ে আল্লাহর দাসত্বের দিকে আহবান করেছেন। সমাজের বুকে চেপে বসা শিরক-বিদ‘আতের জগদ্দল পাথরকে অপসারণ করে সেখানে তাওহীদ ও সুন্নাতের ভীত রচনা করেছেন। সুতরাং অহিভিত্তিক সমাজ বিপ্লবে মুমিন বান্দা নিজেকে সবসময় আল্লাহর সৈনিক মনে করবে। নব্য জাহেলিয়াতের যাবতীয় প্রতিকূল পরিবেশে ঈমানের উপর ইস্তিক্বামাত থাকার আপ্রাণ চেষ্টা করবে। ব্যক্তি, পরিবার ও সমাজের সর্বত্র আল্লাহর দাসত্ব প্রতিষ্ঠিত করবে। পবিত্র কুরআন ও ছহীহ সুন্নাহর অমিয় বাণী ছড়িয়ে দিবে পৃথিবীর আনাচে কানাচে। এতে কোন নিন্দুকের নিন্দা-তোহমতকে আদৌ পরওয়া করবে না। কেননা আল্লাহর যমীনে আল্লাহর বিধান প্রতিষ্ঠিত করতে ভীরুতা প্রদর্শন করা মুনাফিক্বের কাজ। যেমন তাবূক যুদ্ধে মুনাফিক্বদের কাপুরুষতার বর্ণনা দিয়ে আল্লাহ বলেন, وَيَحْلِفُونَ بِاللهِ إِنَّهُمْ لَمِنْكُمْ وَمَا هُمْ مِنْكُمْ وَلَكِنَّهُمْ قَوْمٌ يَفْرَقُونَ، لَوْ يَجِدُونَ مَلْجَأً أَوْ مَغَارَاتٍ أَوْ مُدَّخَلًا لَوَلَّوْا إِلَيْهِ وَهُمْ يَجْمَحُونَ- ‘তারা (মুনাফিকরা) আল্লাহর কসম করে বলে যে, তারা তোমাদেরই অন্তর্ভুক্ত। অথচ তারা তোমাদের অন্তর্ভুক্ত নয়। বরং তারা হ’ল এমন একটি সম্প্রদায়, যারা (তোমাদের) ভয় করে। যদি তারা কোন আশ্রয়স্থল, গুহা বা পালাবার স্থান পেত, তাহ’লে অবশ্যই সেদিকে ক্ষিপ্রগতিতে ধাবিত হ’ত’ (তওবা ৯/৫৬-৫৭)। এই আয়াতের ব্যাখ্যায় ইমাম ইবনে তায়মিয়াহ (রহঃ) বলেন, ‘যারা আল্লাহর শত্রুদের ভয় পায় এবং জিহাদ থেকে বিরত থাকে, তারা মুনাফিক। এই আয়াতের মাধ্যমে সেটাই প্রমাণিত হয়েছে’।[9] আয়েশা (রাঃ) বলেন,إن لله خلقا، قلوبهم كقلوب الطير، كلما خفقت الريح خفقت معها، فأفّ للجبناء، أفّ للجبناء، ‘আল্লাহর কিছু সৃষ্টি আছে। যাদের অন্তরগুলো পাখিদের অন্তরের ন্যায়। যখন বাতাস আন্দোলিত হয়, তখন বাতাসের সাথে এরাও কাঁপতে থাকে। সুতরাং শত ধিক! সেই ভীতু-কাপুরুষদের জন্য’।[10]

৬. কৃপণতা :

অন্তরের একটি সাংঘাতিক রোগ হ’ল কৃপণতা। দ্বীনের পথে মাল-সম্পদ উৎসর্গ করার ক্ষেত্রে কৃপণ ব্যক্তি কখনো ত্যাগ স্বীকার করতে পারে না। মহান আল্লাহ বলেন,وَلاَ يَحْسَبَنَّ الَّذِينَ يَبْخَلُونَ بِمَا آتَاهُمُ اللهُ مِن فَضْلِهِ هُوَ خَيْرًا لَّهُمْ بَلْ هُوَ شَرٌّ لَّهُمْ سَيُطَوَّقُونَ مَا بَخِلُواْ بِهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَلِلّهِ مِيرَاثُ السَّمَاوَاتِ وَالأَرْضِ وَاللهُ بِمَا تَعْمَلُونَ خَبِيرٌ- ‘আল্লাহ যাদেরকে স্বীয় অনুগ্রহে কিছু দান করেছেন, তাতে যারা কৃপণতা করে, তারা যেন এটাকে তাদের জন্য কল্যাণকর মনে না করে। বরং এটা তাদের জন্য ক্ষতিকর। যেসব মালে তারা কৃপণতা করে, সেগুলিকে ক্বিয়ামতের দিন তাদের গলায় বেড়ীবদ্ধ করা হবে। আসমান ও যমীনের স্বত্বাধিকারী হ’লেন আল্লাহ। অতএব (গোপনে ও প্রকাশ্যে) তোমরা যা কিছু কর, সবই আল্লাহ খবর রাখেন’ (আলে ইমরান ৩/১০)। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন,وَاتَّقُوا الشُّحَّ، فَإِنَّ الشُّحَّ أَهْلَكَ مَنْ كَانَ قَبْلَكُمْ، حَمَلَهُمْ عَلَى أَنْ سَفَكُوا دِمَاءَهُمْ وَاسْتَحَلُّوا مَحَارِمَهُمْ، ‘তোমরা কৃপণতা থেকে বেঁচে থাকো। কেননা এই কৃপণতাই তোমাদের আগেকার কওমকে ধ্বংস করেছে। এই কৃপণতা তাদেরকে পারস্পরিক রক্তপাত ঘটাতে উৎসাহ যুগিয়েছে এবং হারাম বস্ত্তসমূহকে বৈধ মনে করতে প্রলোভন দিয়েছে’।[11] কাযী ইয়ায (রহঃ) বলেন, কৃপণ ব্যক্তি তার কৃপণতার কারণে দুনিয়া ও আখেরাত উভয় জগতে ধ্বংসপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে’।[12]

শুধু সম্পদের ক্ষেত্রে নয়; বরং জ্ঞান বিতরণের ক্ষেত্রে যারা হক জেনেও তা গোপন করবে, তারা জ্ঞানগত কৃপণ হিসাবে সাব্যস্ত হবে। যেমন আল্লাহ ইহূদী আলেমদের বদস্বভাবের কথা উল্লেখ করে বলেন,الَّذِينَ يَبْخَلُونَ وَيَأْمُرُونَ النَّاسَ بِالْبُخْلِ وَيَكْتُمُونَ مَا آتَاهُمُ اللهُ مِن فَضْلِهِ وَأَعْتَدْنَا لِلْكَافِرِينَ عَذَابًا مُّهِيْنًا- ‘যারা কৃপণতা করে ও লোকদের কৃপণতা করার আদেশ দেয় এবং আল্লাহ স্বীয় অনুগ্রহে তাদের যে সম্পদ দান করেছেন, তা গোপন করে। আর আমরা অবিশ্বাসীদের জন্য অপমানজনক শাস্তি প্রস্ত্তত করে রেখেছি’ (নিসা ৪/৩৭)। ইবনু আববাস, সাঈদ ইবনু জুবাইর, হাযরামী প্রমুখ বলেন, ‘এখানে ইহুদী আলেমদের কথা বলা হয়েছে, যাদের কাছে কিতাবের জ্ঞান ছিল, কিন্তু তারা সেটা গোপন করত’।[13] ইমাম ত্বাবারী স্বীয় তাফসীরে বলেন,إنَّ بخلهم الذي وصفهم الله به إنما كان بخلًا بالعلم الذي كان الله آتاهموه، فبخلوا بتبيينه للناس، وكتموه دون البخل بالأموال، ‘আল্লাহ তাদের (ইহুদীদের) যে কৃপণতার কথা বর্ণনা করেছেন, সেটা হ’ল জ্ঞানের কৃপণতা। আল্লাহ তাদেরকে যে জ্ঞান দান করেছিলেন, জনসাধারণের কাছে তা প্রচার-প্রসারের ক্ষেত্রে তারা কৃপণতা করেছিল এবং তা গোপন করেছিল। কেননা তারা মাল-সম্পদের ব্যাপারে কৃপণ ছিল না’।[14]

৭. আপোষকামী মনোভাব :

দ্বীনের পথে ত্যাগ স্বীকারের আরেকটি বড় অন্তরায় হ’ল বাতিলের সাথে আপোষকামী মনোভাব। সূরা মুজাদালার শেষ আয়াতে মহান আল্লাহ বাতিলের শিখন্ডীদের সাথে সম্পর্কচ্ছেদ করার কঠোর নির্দেশ দিয়েছেন। এমনকি তারা নিকটাত্মীয় হ’লেও। খোলাফায়ে রাশেদার পরবর্তী সময়গুলোতে ইসলামের মূল স্পিরিটে যে ভাটা পড়েছিল, এর বহু অনুঘটকের মধ্যে অন্যতম ছিল ‘জাহেলিয়াতের সাথে আপোষকামিতা’। রাজনৈতিক স্বার্থে হোক অথবা অর্থনৈতিক স্বার্থে হোক মুসলমানরা যখনই বিধর্মীদের সাথে তাল মিলানোর চেষ্টা করেছে, তখনই তাদের নির্ভেজাল তাওহীদী আক্বীদায় বিজাতীয় দর্শনের অনুপ্রবেশ ঘটেছে। ফলে ঈমান ও আমলের মাঝে দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু আমরা যদি নবী-রাসূলদের ত্যাগপূত জীবনের দিকে তাকাই, তাহ’লে দেখতে পাব যে, তারা কখনোই বাতিলের সাথে আপোষ করেননি। ফলে তাদের উপর নির্যাতনের স্টিমরোলার চালানো হয়েছে। কাউকে করাত দিয়ে কেটে দ্বিখন্ডিত করা হয়েছে। কাউকে আগুনে নিক্ষেপ করা হয়েছে। কাউকে সমাজে অবাঞ্চিত ঘোষণা করা হয়েছে। সার্বিকভাবে বয়কট করা হয়েছে। তথাপি তারা বাতিলের সাথে আপোষ করেননি। দমে যাননি। বরং প্রদীপ্ত ঈমানী জযবায় মানুষকে তাওহীদের দিকে দাওয়াত দিয়েছেন। ইমাম মালেক, ইমাম আহমাদ, ইমাম ইবনে তাইমিয়া (রহঃ) সহ মহামতি ইমামগণ ইসলামের জন্য কারাবরণ করেছেন, শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতিত হয়েছেন, কিন্তু বাতিলের সাথে আপোষ করেননি। তাদের রক্তে লেখা ইতিহাস যুগ-যুগান্তরে ত্যাগী মুসলিমের প্রেরণার উৎস হয়ে আছে।

ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব বলেন, ‘ঈমান ও কুফর, ইসলাম ও জাহেলিয়াত কখনো একত্রে বাস করতে পারে না। বর্তমানে মুসলিম সমাজে ব্যাপক অধঃপতনের মূল কারণ হ’ল জিহাদ বিমুখতা। আর জিহাদবিমুখতার প্রধান কারণ হ’ল আপোষকামিতা। তথাকথিত ‘হেকমতের’ দোহাই পেড়ে সর্বত্র জাহেলিয়াতের সংগে আমরা আপোষ করে চলেছি। কি আলেম কি সমাজনেতা সবাই যেন আমরা একই রোগে ভুগছি। আমরা আপোষ করেছি ধর্মীয় ক্ষেত্রে ‘তাক্বলীদে শাখছী’র সঙ্গে, যা কুরআন ও সুন্নাহর নিরপেক্ষ অনুসরণের ক্ষেত্রে সবচাইতে বড় বাধা। আমরা আপোষ করেছি রাজনৈতিক ক্ষেত্রে ধর্মনিরপেক্ষতা, সামরিকতন্ত্র ও পাশ্চাত্য গণতন্ত্রের সাথে- যা এলাহী সার্বভৌমত্বের সম্পূর্ণ বরখেলাফ। আমরা আপোষ করেছি অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে পুঁজিবাদ ও সমাজতন্ত্রের সাথে, যা ইসলামী অর্থনীতির সম্পূর্ণ বিরোধী। আমরা আপোষ করেছি সমাজ ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রে বাপ-দাদার আমল থেকে চলে আসা রসম-রেওয়াজের সঙ্গে, যা ইসলামী সংস্কৃতির সাথে অনেক ক্ষেত্রে বিরোধপূর্ণ।..

আমাদেরকে অবশ্যই আপোষকামী মনোভাব ত্যাগ করতে হবে। যেমন করেছিলেন আমাদের নবী মুহাম্মাদ (ছাঃ) তাঁর মাক্কী জীবনে। জাহেলী সমাজে বাস করেও তিনি জাহেলিয়াতের সঙ্গে আপোষ করেননি। সমাজ তাঁকে একঘরে করেছে। তাঁর জন্য বাজার নিষিদ্ধ করেছে। গাছের ছাল-পাতা খেয়ে তিনি জীবন ধারণ করেছেন। তথাপি সমাজের সঙ্গে আপোষ করেননি। মর্মান্তিক অগ্নি পরীক্ষা সত্ত্বেও আপোষ করেননি পিতা ইবরাহীম (আঃ) তৎকালীন সমাজ ও সরকারের সাথে। শুধু পিতা ইবরাহীম কেন দুনিয়ার সকল নবীর ইতিহাস জাহেলিয়াতের বিরুদ্ধে আপোষহীন জিহাদের ইতিহাস। কোন নবীই স্বীয় জীবনে স্বীয় সমাজের মেজরিটির সমর্থন পাননি। এমনকি ক্বিয়ামতের দিন কোন কোন নবী মাত্র একজন উম্মত নিয়ে হাযির হবেন।[15] সংখ্যাগরিষ্ঠের সমর্থন না পাওয়ার অর্থ কি তাঁরা বাতিলপন্থী ছিলেন? (নাঊযুবিল্লাহ)। তাঁরা ক্ষমতা ও পদমর্যাদার লড়াই করেননি। তাঁরা চেয়েছিলেন আল্লাহর পাঠানো অভ্রান্ত সত্যকে সমাজের সামনে তুলে ধরতে। হক্ব-এর আওয়াযকে বুলন্দ করতে। বাতিলকে বাতিল হিসাবে চিহ্নিত করতে। আমাদেরকেও নবীগণের পথ বেছে নিতে হবে। সে পথ ভোটারের মনস্ত্তষ্টির পথ নয়, সে পথ আল্লাহর সন্তুষ্টির পথ। সে পথ শুধু চেয়ার পরিবর্তনের পথ নয়, সে পথ সমাজ পরিবর্তনের পথ, সমাজ বিপ্লবের পথ, আপোষহীন জিহাদের পথ’।[16]

৮. ত্যাগ স্বীকারের প্রশিক্ষণ ও মানসিকতা না থাকা :

সঠিক পরিচর্যা ছাড়া যেমন একটি চারাগাছ বিকশিত হয় না। ঠিক তেমনি সঠিক প্রশিক্ষণ ছাড়া মানব হৃদয়ে ত্যাগ স্বীকারের বীজ অঙ্কুরোদগম হয় না। ছাহাবায়ে কেরাম রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর ঈমানদীপ্ত জীবন থেকে ত্যাগ স্বীকারের প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন। ফলে আল্লাহর অপার অনুগ্রহে জান্নাতের পথে তারা নানা ঘাত-প্রতিঘাত অকাতরে সহ্য করতে সক্ষম হয়েছেন এবং আল্লাহর রাহে সময়, শ্রম, জান, মাল সবকিছু কুরবাণী করে দিয়েছেন। এমনকি ক্ষুদে ছাহাবীরাও ছিলেন সেই ত্যাগের মহিমায় উদ্দীপিত। কেননা ছাহাবায়ে কেরাম (রাঃ) তাদের ছেলে-মেয়েদের শৈশব থেকেই ত্যাগ স্বীকারের প্রশিক্ষণ দিতেন। তাদের ছোটরা বড়দের সাথে ছালাত, ছিয়াম, হজ্জ, জিহাদ ইত্যাদি শারঈ ইবাদত-বন্দেগী পালনে চেষ্টা করতেন। বদর যুদ্ধে দুই কিশোর সহোদর মু‘আয ও মু‘আউভিয বিন আফরার জিহাদী তামান্না এবং ওহোদের যুদ্ধে রাফে‘ বিন খাদীজ ও সামুরা বিন জুনদুবের জিহাদের অংশগ্রহণের কাহিনী সেই কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।[17]

ভারত উপমহাদেশে ‘আহলেহাদীছ আন্দোলনে’র সিংহপুরুষ শাহ অলিউল্লাহ মুহাদ্দিছ দেহলভী যে সামাজিক বিপ্লব শুরু করেছিলেন এবং স্বীয় পরিবারের মাঝে তাওহীদী চেতনা প্রোথিত করেছিলেন, সেখান থেকেই মূলতঃ জিহাদী আন্দোলনের সূচনা হয়েছিল। ধর্মীয় ও সমাজ সংস্কারে তাক্বলীদের বিরুদ্ধে তার গগণবিদারী তূর্যধ্বনি আহলেহাদীছ আন্দোলনের জোয়ার সৃষ্টি করেছিল। অলিউল্লাহ পরিবারের প্রতিষ্ঠিত দিল্লীর মাদ্রাসা রহীমিয়া ছিল ইসলামী নেতৃত্বের যোগ্যতাসম্পন্ন মর্দে মুজাহিদ তৈরীর সূতিকাগার। যেখানে সৃষ্টি হয়েছিল তৎকালীন রাজনৈতিক ও ইলমী অঙ্গনে নেতৃত্বদানকারী আল্লামা ইসমাঈল, আল্লামা আব্দুল হাই ও সাইয়িদ আহমাদ ব্রেলভীর মত সূর্যসন্তানদের। পরবর্তীতে দেহলভী ছাহেবের স্বনামধন্য পৌত্র শাহ ইসমাঈল শহীদ ও ভাবশিষ্য সাইয়িদ আহমাদ ব্রেলভীর ব্যাপক দাওয়াত ও তাবলীগের মাধ্যমে আল্লাহর পথে একদল যিন্দাদিল ত্যাগী মানুষ তৈরী হয় এবং তাদের মাধ্যমেই জিহাদ আন্দোলন সশস্ত্ররূপে পূর্ণতা লাভ করে। সেই জিহাদ আন্দোলনের অবদানেই ভারত উপমহাদেশ থেকে ইংরেজদের বিতাড়িত করার কার্যক্রম তরান্বিত হয়। পরবর্তীতে সেই সশস্ত্র জিহাদ বন্ধ হয়ে গেলেও আহলেহাদীছ আন্দোলনের মাধ্যমে ধর্মীয় ও সমাজ সংস্কারের জিহাদ আজও জারী আছে।

সুতরাং যমীনের বুকে আল্লাহর বিধান প্রতিষ্ঠিত করার জন্য এমন আদর্শিক আন্দোলন জাগরুক থাকা প্রয়োজন, যে আন্দোলনের ছায়াতলে দ্বীনের জন্য নিবেদিতপ্রাণ ত্যাগী মানুষ গড়ে ওঠার সিলসিলা জারী থাকবে। কিন্তু আমরা যদি জামা‘আতবদ্ধ প্রচেষ্টায় সেই আন্দোলন জারী রাখতে না পারি এবং আমাদের প্রজন্মকে দ্বীনের পথে প্রশিক্ষিত করে গড়ে তুলতে না পারি, তাহ’লে তাদের মাঝে ত্যাগ স্বীকারের মানসিকতা তৈরী হবে না। দ্বীনের পথে জান-মাল উৎসর্গ করতে তারা প্রণোদিত হবে না। বাতিলের বিপক্ষে সাহসী পদক্ষেপে গর্জে উঠতে সক্ষম হবে না। ফলে দেশ ও জাতি শনৈঃশনৈঃ জাহেলিয়াতের ঘোর অমানিশায় নিমজ্জিত হবে।

৯. পার্থিব আশা-আকাঙ্ক্ষা বৃদ্ধি পাওয়া :

মানুষের পার্থিব আশা-আকাঙ্ক্ষা যত বেড়ে যায়, আখেরাতের প্রস্ত্ততি নিতে সে ততই পিছিয়ে পড়ে। দীর্ঘ আশার চোরাবালিতে ডুবে সে মৃত্যু থেকে গাফেল হয়ে যায়। কারণ সে যখন জীবনকে ঘিরে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা করে এবং আশা-আকাঙ্ক্ষার জাল বোনে, তখন মৃত্যুকে অনেক দূরবর্তী মনে করে। ফলে দুর্বল হয়ে পড়ে তার ঈমান। গাফলতি চলে আসে ইবাদত-বন্দেগীতে। দ্বীনের জন্য কষ্ট স্বীকারের মানসিকতা নষ্ট হয়ে যায়। মৃত্যু ও আখেরাতকে ভুলে যাওয়ার অন্যতম বড় কারণ হ’ল পার্থিব আশা-আকাঙ্ক্ষার সুদীর্ঘ ফিরিস্তী।

আবুল মুতাওয়াক্কিল নাজী (রহঃ) বলেন, একবার সুলায়মান বিন আবদে ক্বায়েস (রহঃ) আমাকে উপদেশ দিয়ে বললেন, عَلَيْكَ بِمَا يُرَغِّبُكَ فِي الْآخِرَةِ، وَيُزَهِّدُكَ فِي الدُّنْيَا، وَيُقَرِّبُكَ إِلَى اللهِ، ‘তুমি এমন বিষয়ে অধিক জোর দাও, যা তোমাকে আখেরাতের প্রতি আগ্রহী করবে, দুনিয়ার প্রতি অনাগ্রহী করে তুলবে এবং যা তোমাকে আল্লাহর নিকটবর্তী করে দিবে’। আবুল মুতাওয়াক্কিল বললেন, সেটা কিভাবে করব? তখন তিনি বললেন,تُقْصِرُ أَمَلَكَ فِي الدُّنْيَا، وَتُكْثِرُ رَغْبَتَكَ فِي الْآخِرَةِ، حَتَّى تَكُوْنَ بِالدُّنْيَا بَرِمًا، وَبِالْآخِرَةِ كَرِثًا. فَإِذَا كُنْتَ كَذَلِكَ لَمْ يَكُنْ شَيْءٌ أَحَبَّ إِلَيْكَ وُرُودًا مِنَ الْمَوْتِ، وَلَا شَيْءٌ أَبْغَضَ إِلَيْكَ مِنَ الْحَيَاةِ، ‘তুমি পার্থিব আশা-আকাঙ্ক্ষা হ্রাস করবে এবং আখেরাতের প্রতি আগ্রহ বাড়বে। ফলে তুমি দুনিয়ার প্রতি অনাসক্ত হয়ে পড়বে এবং আখেরাতের ব্যাপারে ভীষণ চিন্তিত থাকবে। যদি তুমি এমন করতে পার, তাহ’লে তোমার কাছে মৃত্যুর চেয়ে অধিক প্রিয়তর এবং জীবনের চেয়ে অপ্রিয় কোন বস্ত্ত থাকবে না’।[18] ইসলামের স্বর্ণযুগের দিকে তাকালে আমরা এর অসংখ্য নযীর দেখতে পাই। ছাহাবায়ে কেরাম (রাঃ) আল্লাহর দীদার লাভের জন্য সর্বদা মৃত্যুকে আলিঙ্গন করতে প্রস্ত্তত থাকতেন। দুনিয়ার মোহে পড়ে আল্লাহর দ্বীনের জন্য জীবন উৎসর্গ করতে কখনো পিছপা হতেন না।

রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) যখন বদর প্রান্তরে জিহাদের ঘোষণা দিয়ে বললেন, قُومُوا إِلَى جَنَّةٍ عَرْضُهَا السَّمَوَاتُ وَالْأَرْضُ، ‘তোমরা এগিয়ে চলো জান্নাতের পানে, যার প্রশস্ততা আসমান ও যমীন পরিব্যাপ্ত’। এটা শুনে জনৈক আনছার ছাহাবী উমায়ের ইবনুল হুমাম বাহ! বাহ! (بَخٍ بَخٍ) বলে উঠলেন। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাকে এর কারণ জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! আমি সেই জান্নাতের অধিবাসী হ’তে চাই’। তখন রাসূল (ছাঃ) তাকে জান্নাতের সুসংবাদ দিয়ে বললেন, فَإِنَّكَ مِنْ أَهْلِهَا، ‘নিশ্চয়ই তুমি তার অধিবাসী হবে’। একথা শুনে ছাহাবী থলি থেকে কিছু খেজুর বের করে খেতে লাগলেন। কিন্তু খেতে খেতে বলে উঠলেন,لَئِنْ أَنَا حَيِيتُ حَتَّى آكُلَ تَمَرَاتِي هَذِهِ إِنَّهَا لَحَيَاةٌ طَوِيْلَةٌ، ‘আমি যদি এই খেজুরগুলো খেয়ে শেষ করা পর্যন্ত বেঁচে থাকি, তবে সেটাতো দীর্ঘ জীবন হয়ে যাবে’। একথা বলে তিনি সাথে থাকা সব খেজুর ছুঁড়ে ফেলে দিলেন। এরপর জিহাদে ঝাঁপিয়ে পড়ে বিপুল বিক্রমে যুদ্ধ করতে করতে এক পর্যায়ে শহীদ হয়ে গেলেন।[19] সুতরাং মুমিন বান্দা পার্থিব আশা যত কম করবেন, আল্লাহর দ্বীনের জন্য জান-মাল উৎসর্গ করতে তিনি ততটাই আগ্রহী হয়ে উঠবেন এবং যে কোন ধরনের ত্যাগ স্বীকারে উদ্গ্রীব থাকবেন। সেজন্য আকাঙ্ক্ষার লাগাম টেনে ধরে সাধ্যানুযায়ী ইবাদত-বন্দেগী করে পাপমুক্ত জীবন গঠন করাই হবে বুদ্ধিমান মুমিনের পরিচয়।

ইবনুল ক্বাইয়িম (রহঃ) বলেন,إتباع الهوى وَطول الأمل مَادَّة كل فَسَاد فَإِن اتِّبَاع الْهوى يعمي عَن الْحق معرفَة وقصدا وَطول الأمل ينسي الْآخِرَة ويصد عَن الاستعداد لَهَا، ‘সকল অকল্যাণের মূল হ’ল প্রবৃত্তির অনুসরণ এবং দীর্ঘ আশা-আকাঙক্ষা। কেননা প্রবৃত্তির অনুরসরণ হক্ব জানা ও বোঝার পরেও তা গ্রহণ করা থেকে অন্ধ করে রাখে। আর দীর্ঘ আশা আখেরাতকে ভুলিয়ে দেয় এবং পরকালের জন্য প্রস্ত্ততি নেয়া থেকে বিরত রাখে’।[20]

দাঊদ আত্ব-ত্বাঈ (রহঃ) বলেন,لَوْ أَمَّلْتُ أَنْ أَعِيشَ شَهْرًا لَرَأَيتُنِي قَدْ أَتَيْتُ عَظِيمًا وَكَيْفَ أُؤَمِّلُ ذَلِكَ وَأَرَى الْفَجَائِعَ تَغْشَى الْخَلْقَ فِي سَاعَاتِ اللَّيْلِ وَالنَّهَارِ، ‘যখন আমার মনে এই আশা দেখা দেয় যে, আমি পুরো মাস জীবিত থাকব, তখন আমার মনে হয় যে, হয়ত আমার দ্বারা বড় কোন গুনাহ হয়ে গেছে (আর এই দীর্ঘ আশা সেই গুনাহের ফল)। আর আমি সেই আশা করতে পারিই বা কিভাবে, যখন আমি দেখি যে, দিন-রাতের প্রতিটি মুহূর্তে বালা-মুছীবত সৃষ্টিকূলকে ঘিরে রেখেছে’?[21]

১০. দুনিয়াদার ও প্রবৃত্তিপূজারীর সাহচর্যে থাকা :

দীর্ঘদিন কারো সাহচর্যে থাকলে কিংবা তার সাথে ওঠাবসা করলে পারস্পরিক হৃদ্যতা সৃষ্টি হয় এবং ভাবের আদান প্রদান হয়। ফলে একে অপরের মাধ্যমে প্রভাবিত হয়। সেজন্য দুনিয়াদার ও প্রবৃত্তিপূজারীর সাথে কেউ ওঠাবসা করলে তার মাধ্যমে প্রভাবিত হওয়া খুবই স্বাভাবিক হয়ে পড়ে। বিশেষ করে কেউ যদি দুর্বল ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন হয়, তাহ’লে তার প্রভাবিত হওয়া আবশ্যিক হয়ে পড়ে। ফলে তার জন্য আল্লাহর পথে ত্যাগ স্বীকার করাও অসম্ভব হয়ে যায়। এজন্য সালাফে ছালেহীন দুনিয়াদার ও প্রবৃত্তির অনুসারীদের সাথে ওঠাবসা করতে নিষেধ করতেন। আবূ কিলাবা (রহঃ) বলেছেন,لَا تُجَالِسُوا أَهْلَ الْأَهْوَاءِ وَلَا تُجَادِلُوهُمْ، فَإِنِّي لَا آمَنُ أَنْ يَغْمِسُوكُمْ فِي ضَلَالَتِهِمْ، أَوْ يَلْبِسُوا عَلَيْكُمْ مَا كُنْتُمْ تَعْرِفُونَ، ‘তোমরা খেয়াল-খুশি ও প্রবৃত্তির অনুসারীদের সাথে ওঠাবাসা করো না এবং তাদের সাথে তর্কে লিপ্ত হয়ো না। কেননা আমার ভয় হয় যে, তারা তোমাদেরকে গোমরাহীর মধ্যে ডুবিয়ে দিতে পারে অথবা চেনা-জানা নিশ্চিত বিষয়ে তোমাদেরকে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ফেলে দিতে পারে’।[22]

যুন্নূন আল-মিছরী (রহঃ) বলেন,ثَلَاثَةٌ مِنْ أَعْلَامِ الِاسْتِغْنَاءَ بِاللهِ عَزَّ وَجَلَّ: التَّوَاضُعُ لِلْفُقَرَاءِ وَالْمُتَذَلِّلِينَ، وَتَرْكُ تَعْظِيمِ الْأَغْنِيَاءِ، وَتَرْكُ الْمُخَالَطَةِ لِأَبْنَاءِ الدُّنْيَا الْمُتَكَبِّرِينَ، ‘আল্লাহর মুখাপেক্ষী হওয়ার নিদর্শন তিনটি। (১) দরিদ্র ও অসহায় লোকদের প্রতি দয়াশীল হওয়া, (২) ধনিক শ্রেণীকে বিশেষ সম্মান দেওয়া থেকে বিরত থাকা এবং (৩) অহংকারী দুনিয়াদারের সঙ্গ পরিত্যাগ করা’।[23]

আলী ইবনে আবী ত্বালেব (রাঃ) বলেন,ارْتَحَلَتِ الدُّنْيَا مُدْبِرَةً، وَارْتَحَلَتِ الآخِرَةُ مُقْبِلَةً، وَلِكُلِّ وَاحِدَةٍ مِنْهُمَا بَنُونَ، فَكُونُوا مِنْ أَبْنَاءِ الآخِرَةِ، وَلاَ تَكُونُوا مِنْ أَبْنَاءِ الدُّنْيَا، فَإِنَّ اليَوْمَ عَمَلٌ وَلاَ حِسَابَ، وَغَدًا حِسَابٌ وَلاَ عَمَلٌ، ‘দুনিয়া পৃষ্ঠপ্রদর্শন করে চলে যাচ্ছে, আর পরকাল সম্মুখে আসছে। আর এদের প্রত্যেকটির সন্তানাদি রয়েছে। তবে তোমরা পরকালের সন্তান হও, দুনিয়ার সন্তান হয়ো না। কেননা আজ আমলের সময়, এখানে কোন হিসাব নেই। আর আগামীকাল হিসাব-নিকাশ হবে, সেখানে কোন আমল নেই’।[24] সুতরাং আল্লাহর দ্বীনের জন্য জান-মাল উৎসর্গ করার সৎ সাহস সঞ্চয় করার জন্য দুনিয়াদার ও প্রবৃত্তির অনুসারীদের সংসর্গ ত্যাগ করা অবশ্যক। কেননা দ্বীনের পথে একনিষ্ঠভাবে ত্যাগ স্বীকারে তারাই সবচেয়ে বেশী প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে।

মহান আল্লাহ আমাদেরকে জান্নাতের পথে পরিচালিত করুন এবং দ্বীনের পথে ত্যাগ স্বীকারের সকল প্রতিবন্ধকতা পায়ে দলে সার্বিক জীবনে তাঁর দাসত্ব প্রতিষ্ঠিত করার তাওফীক্ব দান করুন- আমীন!                                                                                                                                                                                                                                     (ক্রমশঃ)

আব্দুল্লাহ আল-মা‘রূফ

এম.এ (অধ্যয়নরত) আরবী বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।


[1]. নাসাঈ হা/৩১৪০; ছহীহাহ হা/৫২।

[2]. মুসলিম হা/২৭২৩; মিশকাত হা/২৩৮১।

[3]. বুখারী হা/৫৪২৫; মুসলিম হা/২৭০৬।

[4]. আবূ ত্বালেব মাক্কী, কূতুল কুলূব ফী মু‘আমালাতিল মাহবূব ১/১৩৮।

[5]. বায়হাক্বী, শু‘আবুল ঈমান হা/৫৭৬৬; ছহীহুত তারগীব হা/২১৪৬; ছহীহাহ হা/৩৫৩; মিশকাত হা/৫২৬২, সনদ হাসান।

[6]. আবূ হেলাল আসকারী, আল-হাছ্ছু ‘আলা ত্বালাবিল ইলম, তাহক্বীক্ব: ড. মারওয়ান ক্বাববানী (বৈরূত: আল-মাকতাবুল ইসলামী, প্রথম মুদ্রণ, ১৪০৬হি./১৯৮৬খ্রি.) পৃ.৪২।

[7]. ইমাম নববী, বুস্তানুল আরিফীন পৃ: ৪০।

[8]. মুস্তাদরাক হাকেম হা/৫; মাজমা‘উয যাওয়ায়েদ হা/৫৮৮; ছহীহাহ্ হা/১৫৮৫, সনদ হাসান।

[9]. ইবনে তায়মিয়াহ, ‘কায়েদাতুল ইনগিমাস, তাহক্বীক্ব: আবূ মুহাম্মাদ আশরাফ (মিসর : আযওয়াউস সালাফ, ১ম প্রকাশ, ১৪২২হি./২০০২ খৃ.) পৃ. ৪১।

[10]. নুওয়াইরী, নিহায়াতুল আরাব ফী ফুনূনিল আদাব (কায়রো : দারুল কুতুব, ১ম প্রকাশ, ১৪২৩ হি.) ৩/৩৪৭।

[11]. মুসলিম হা/২৫৭৮; মিশকাত হা/১৮৬৫।

[12]. নববী, শরহ মুসলিম ১৬/১৩৪।

[13]. সুয়ূত্বী, আদ-দুর্রুল মানছূর ২/৫৩৮।

[14]. তাফসীরে ত্বাবারী (জামে‘উল বায়ান) ৭/৪২।

[15]. মুসলিম হা/১৯৬; মিশকাত হা/৫৭৪৪

[16]. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব, সমাজ বিপ্লবের ধারা (রাজশাহী : হাদীছ ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, ৩য় সংস্করণ, ২০০৯) পৃ: ১৬-১৭।

[17]. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব প্রণীত ‘সীরাতুর রাসূল (ছাঃ)’-এর পৃ. ৩০৪, ৩৪৪ দ্রষ্টব্য।

[18]. ইবনু আবীদ্দুনয়া, কাছরুল আমাল, তাহক্বীক্ব : মুহাম্মাদ রামাযান ইউসুফ (বৈরূত : দারু ইবনে হাযম, ২য় প্রকাশ, ১৯৯৭খ্রি.) পৃ.৫৩।

[19]. মুসলিম হা/১৯০১; মিশকাত হা/৩৮১০।

[20]. ইবনুল ক্বাইয়িম, আল-ফাওয়ায়েদ, পৃ: ৯৯।

[21]. কাছরুল আমাল, পৃ.৪৭; ইবনুল মুবারাক, কিতাবুয যুহ্দ, পৃ. ২৯৩।

[22]. দারেমী হা/৪০৫, সনদ ছহীহ।

[23]. বায়হাক্বী, শু‘আবুল ঈমান ২/৪৬৪।

[24]. বুখারী হা/৬৪১৭-এর তা’লীক্ব, কিতাবুর রিক্বাক্ব, অধ্যায়-৮১, অনুচ্ছেদ-৪; মিশকাত হা/৫২১৫।






বিষয়সমূহ: বিধি-বিধান
মানবাধিকার ও ইসলাম (৯ম কিস্তি) - শামসুল আলম
পেরেনিয়ালিজম এবং ইসলাম (পূর্ব প্রকাশিতের পর) - প্রফেসর ড. শহীদ নকীব ভূঁইয়া
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর প্রতি দরূদ পাঠের গুরুত্ব ও ফযীলত (২য় কিস্তি) - মুহাম্মাদ আব্দুল ওয়াদূদ
হাদীছের অনুবাদ ও ভাষ্য প্রণয়নে ভারতীয় উপমহাদেশের আহলেহাদীছ আলেমগণের অগ্রণী ভূমিকা (২য় কিস্তি) - ড. নূরুল ইসলাম
ইসলামে তাক্বলীদের বিধান (৩য় কিস্তি) - আহমাদুল্লাহ - সৈয়দপুর, নীলফামারী
ইসলামের দৃষ্টিতে সাহিত্য - আসাদুল্লাহ আল-গালিব (শিক্ষার্থী, ইংরেজী বিভাগ, ২য় বর্ষ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়)।
সুন্নাত আঁকড়ে ধরার ফযীলত (২য় কিস্তি) - মুহাম্মাদ মীযানুর রহমান
ঈদায়নের কতিপয় মাসায়েল - আত-তাহরীক ডেস্ক
নববী চিকিৎসা পদ্ধতি (৩য় কিস্তি) - কামারুযযামান বিন আব্দুল বারী
জাল হাদীছের কবলে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর ছালাত (২য় কিস্তি) - মুযাফফর বিন মুহসিন
আল্লাহর হক - মুহাম্মাদ আব্দুল ওয়াদূদ
হিজামা : নবী (ছাঃ)-এর চিকিৎসা - মুহাম্মাদ আবু তাহের, পরিচালক, কিউসেট ইনস্টিটিউট, সিলেট।
আরও
আরও
.