রাজশাহী ২৭ ও ২৮শে আগস্ট বৃহস্পতি ও শুক্রবার : গত ২৭ ও ২৮শে আগষ্ট বৃহস্পতি ও শুক্রবার ‘আহলেহাদীছ আন্দোলন বাংলাদেশ’-এর উদ্যোগে রাজশাহী মহানগরীর নওদাপাড়াস্থ  প্রস্তাবিত দারুলহাদীছ বিশ্ববিদ্যালয় (প্রাঃ) জামে মসজিদে অনুষ্ঠিত দু’দিনব্যাপী বার্ষিক কর্মী সম্মেলনের উদ্বোধনী ভাষণে দেশের বিভিন্ন যেলা থেকে আগত কর্মীদের উদ্দেশ্যে মুহতারাম আমীরে জামা‘আত প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব উপরোক্ত কথা বলেন। তিনি বলেন, এজন্য চাই একদল আনুগত্যশীল ও নিবেদিত প্রাণ যোগ্য কর্মী বাহিনী। যারা স্রেফ পরকালীন মুক্তির স্বার্থে কাজ করবেন। তিনি বলেন, শিরক ও বিদ‘আত থেকে মুক্ত হয়ে আল্লাহ আমাদেরকে আহলেহাদীছ আন্দোলনের কর্মী হিসাবে কবুল করেছেন, এজন্য আল্লাহর প্রতি রইল সর্বোচ্চ প্রশংসা ও কৃতজ্ঞতা। এতে আমাদের কোন অহংকার নেই। তিনি হেদায়াত দান করেছেন বলেই আমরা এ আন্দোলন ও সংগঠনে যোগদান করতে পেরেছি এবং দ্বীন প্রতিষ্ঠায় ঐক্যবদ্ধ হয়েছি। এ প্রসঙ্গে তিনি রাসূল (ছাঃ)-এর ছাহাবীগণের ত্যাগ ও আল্লাহর প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতাবোধের কথা স্মরণ করেন। সেই সাথে বায়‘আত ভঙ্গকারী বনু আসাদ প্রতিনিধি দলের কথা মনে করিয়ে দেন। যাদের অন্যতম নেতা তুলায়হা আসাদী ফিরে গিয়ে দ্বীন ত্যাগ করে মুরতাদ হয়ে যায় এবং নিজেকে নবী বলে দাবী করে। অথচ তারা এসে বড়াই করে বলেছিল, হে আল্লাহর রাসূল! আমরা কিন্তু মুসলমান হয়ে আপনার কাছে এসেছি। আপনি আমাদের কাছে কোন মুবাল্লিগ বা সেনাদল পাঠাননি। একথার জওয়াবে সূরা হুজুরাতের ১৭ আয়াত নাযিল হয়। যেখানে বলা হয়, তোমরা ঈমান এনেছ বলে বড়াই করো না। বরং আল্লাহই তোমাদেরকে ঈমানের প্রতি হেদায়াত দান করেছেন’। অতএব আমরা যেন অহংকার না করি। তিনি কর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনারা বৃহত্তর সমাজ বিপ্লবের মহতী স্বপ্ন নিয়ে এগিয়ে চলুন। বাংলায় সবুজ মাটিতে অহি-র বিধান প্রতিষ্ঠার দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে সংগঠিত হৌন। আল্লাহ আমাদের সাহায্য করুন!

আমীরে জামা‘আতের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উক্ত সম্মেলনে  প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন ‘আন্দোলন’-এর কেন্দ্রীয় প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর নযরুল ইসলাম (সাতক্ষীরা)। বিশেষ অতিথি ছিলেন গাইবান্ধা-পশ্চিম সাংগঠনিক যেলার প্রধান উপদেষ্টা জনাব নূরুল ইসলাম প্রধান ও পাবনা যেলা ‘আন্দোলন’-এর প্রধান উপদেষ্টা জনাব রবীউল ইসলাম।

দু’দিনব্যাপী কর্মী সম্মেলনে পূর্ব নির্ধারিত বিষয়ে বক্তব্য পেশ করেন ‘আন্দোলন’-এর কেন্দ্রীয় সেক্রেটারী জেনারেল অধ্যাপক মাওলানা নূরুল ইসলাম (বিষয়: তাওহীদের চেতনা বিকাশে আহলেহাদীছ আন্দোলনের অবদান),  সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম (সংগঠনের ক্ষেত্রে আহলেহাদীছ আন্দোলনের অবদান), অর্থ সম্পাদক বাহারুল ইসলাম (অর্থনৈতিক সংস্কারে আহলেহাদীছ আন্দোলনের অবদান), যুববিষয়ক সম্পাদক অধ্যাপক আমীনুল ইসলাম (শিক্ষা সংস্কারে আহলেহাদীছ আন্দোলনের অবদান), প্রচার সম্পাদক ড. মুহাম্মাদ সাখাওয়াত হোসাইন (দাওয়াতের ক্ষেত্রে আহলেহাদীছ আন্দোলনের অবদান), প্রশিক্ষণ সম্পাদক ড. মুহাম্মাদ কাবীরুল ইসলাম (প্রশিক্ষিত কর্মী তৈরীতে আহলেহাদীছ আন্দোলনের অবদান), কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য অধ্যাপক শেখ রফীকুল ইসলাম (রাজনৈতিক ক্ষেত্রে আহলেহাদীছ আন্দোলনের অবদান), কেন্দ্রীয় শূরা সদস্য অধ্যাপক জালালুদ্দীন (আন্দোলনের পরিচিতি), আল-মারকাযুল ইসলামী আস-সালাফী’ নওদাপাড়া, রাজশাহীর ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুল খালেক সালাফী (তাক্বওয়া), শিক্ষক মাওলানা আব্দুর রাযযাক বিন ইউসুফ (হালাল রূযী), ‘বাংলাদেশ আহলেহাদীছ যুবসংঘে’র কেন্দ্রীয় সভাপতি আব্দুর রশীদ আখতার (তাওহীদ প্রতিষ্ঠায় যুবসমাজের ভূমিকা), ‘সোনামণি’ পরিচালক আব্দুল হালীম বিন ইলিয়াস (সোনামণি সংগঠনের গুরুত্ব ও অভিভাবকের দায়িত্ব), ‘যুবসংঘে’র সাবেক সভাপতি মুযাফফর বিন মুহসিন (সমাজ সংস্কারে আহলেহাদীছ আন্দোলনের অবদান), সাবেক সহ-সভাপতি ও ‘হাদীছ ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ’-এর গবেষণা সহকারী নূরুল ইসলাম (সাহিত্য সংস্কারে আহলেহাদীছ আন্দোলনের অবদান), খুলনা যেলা  ‘আন্দোলন’-এর সভাপতি মাওলানা জাহাঙ্গীর আলম (হিংসা ও অহংকার), মাদারটেক আহলেহাদীছ জামে মসজিদ ঢাকার খত্বীব মাওলানা আমানুল­াহ বিন ইসমাঈল (চরমপন্থী মতবাদ ও আহলেহাদীছ আন্দোলন), ‘আহলেহাদীছ আন্দোলন’ সঊদী আরব শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল বারী (ইসলামের দৃষ্টিতে সংগঠনের গুরুত্ব), রাজশাহীর মোহনপুর উপযেলা ‘আন্দোলন’-এর সভাপতি মাওলানা দুররুল হুদা (নেতৃত্ব সংস্কারে আহলেহাদীছ আন্দোলনের অবদান) প্রমুখ। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য পেশ করেন ঢাকা যেলা ‘আন্দোলন’-এর সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মাদ তাসলীম সরকার, নারায়ণগঞ্জ যেলা ‘আন্দোলন’-এর সভাপতি মাওলানা শফীকুল ইসলাম, রাজশাহী-পূর্ব সাংগঠনিক যেলার সহ-সভাপতি আলহাজ্জ আইয়ূব হোসেন প্রমুখ। উক্ত অনুষ্ঠানে ৪৯টি যেলা থেকে সহস্রাধিক কর্মী অংশগ্রহণ করেন।

দু’দিন ব্যাপী কর্মী সম্মেলনের বিভিন্ন অধিবেশনে পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন ‘আন্দোলন’-এর সাংগঠনিক অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম, প্রচার সম্পাদক ড. মুহাম্মাদ সাখাওয়াত হোসাইন, ঢাকা যেলা ‘আন্দোলন’-এর অর্থ-সম্পাদক কাযী হারূনুর রশীদ ও মোহনপুর উপযেলা ‘আন্দোলন’ রাজশাহীর সভাপতি মাওলানা দুর্রুল হুদা প্রমুখ। ইসলামী জাগরণী পরিবেশন করেন আল-হেরা শিল্পী গোষ্ঠীর প্রধান শফীকুল ইসলাম ও পাবনা যেলা ‘আন্দোলন’-এর দফতর সম্পাদক আফতাবুদ্দীন।

সম্মেলনের পক্ষ থেকে নিম্নোক্ত দাবী সমূহ বাস্তবায়নের জন্য সরকারের প্রতি আহবান জানানো হয়। যেগুলি পাঠ করেন ‘আন্দোলন’-এর কেন্দ্রীয় সেক্রেটারী জেনারেল অধ্যাপক মাওলানা নূরুল ইসলাম। যা বিপুলভাবে সমর্থিত হয়।-

  1. পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছের আলোকে দেশের আইন ও শাসন ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে হবে।
  2. শিক্ষার সর্বস্তরে ইসলামী শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করতে হবে এবং মাদরাসা শিক্ষার সিলেবাসে আহলেহাদীছ-এর কিতাব সমূহ পৃথকভাবে সিলেবাসভুক্ত করতে হবে।
  3. পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছের ভিত্তিতে ইসলামী অর্থ ব্যবস্থা সর্বত্র চালু করতে হবে। বিশেষ করে সূদভিত্তিক অর্থ ব্যবস্থা বাতিল করতে হবে।
  4. ইসলামী বিচার ও শাসন ব্যবস্থা চালু করতে হবে।
  5. অশ্লী­ল বইপত্র, সাহিত্য ও ছবি সমূহ প্রদর্শনের অনুমোদন বন্ধ করতে হবে।
  6. সরকার পরিচালিত ‘ইসলামিক ফাউন্ডেশনে’র মাধ্যমে একটি নির্দিষ্ট মাযহাবের পরিবর্তে নিরপেক্ষভাবে পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছ ভিত্তিক গ্রন্থসমূহ প্রকাশের ব্যবস্থা করতে হবে।
  7. এই সম্মেলন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সমূহে ছবি টাঙ্গানো এবং শিরক ও বিদ‘আতী অনুষ্ঠান সমূহ রাষ্ট্রীয়ভাবে বাধ্যতামূলক না করার জন্য সরকারের প্রতি আহবান জানাচ্ছে।
  8. মহিলাদের হিজাব পরার ব্যাপারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেভাবে ন্যাক্কারজনক আচরণ করা হচ্ছে, তা অবিলম্বে বন্ধ করার জন্য সরকারের প্রতি জোর দাবী জানাচ্ছে।
  9. সরকারী অফিস আদালতে ব্যাপক ঘুষ-দুর্নীতি এবং দেশের সর্বত্র মদ, জুয়া, লটারী, নগ্নতা ও বেহায়াপনা অবিলম্বে বন্ধের জোর দাবী জানাচ্ছে।
  10. নেতৃত্ব নির্বাচনের দলীয় প্রথা বাতিল করে সর্বস্তরে দল ও প্রার্থীবিহীন ইসলামী নেতৃত্ব নির্বাচন ব্যবস্থা চালুর দাবী জানাচ্ছে।
  11. এ সম্মেলন ক্রমবর্ধমান শিশু হত্যা ও নারী ধর্ষণসহ বিচার বহির্ভূত সকল প্রকার গুম, অপহরণ ও হত্যাকান্ড বন্ধের জোর দাবী জানাচ্ছে।






আরও
আরও
.