৭ই সেপ্টেম্বর শনিবার নওদাপাড়া, রাজশাহী : অদ্য সকাল ১০-টায় ‘আহলেহাদীছ আন্দোলন বাংলাদেশ’-এর কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আল-মারকাযুল ইসলামী আস-সালাফী নওদাপাড়া, রাজশাহী পরিদর্শনে আসেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের ধর্ম বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আ. ফ. ম. খালিদ হোসেন। এ উপলক্ষে মারকায ক্যাম্পাসে ছাত্র-শিক্ষক সমন্বয়ে এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। ‘আহলেহাদীছ আন্দোলন বাংলাদেশ’-এর মুহতারাম আমীরে জামা‘আত প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিবের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উক্ত সভায় প্রধান অতিথির ভাষণে ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, দেশের গুরুত্বপূর্ণ পদ সমূহে মাদ্রাসা শিক্ষিতদের অংশগ্রহণের মাধ্যমেই ন্যায়ভিত্তিক রাষ্ট্রগঠন সম্ভব। উপস্থিত ছাত্রদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, তোমাদেরকে এমন স্বপ্ন দেখতে হবে, যে স্বপ্ন ঘুমোতে দেয় না। যা বাস্তবায়নের জন্য দিনরাত সাধনা করতে হবে। দেশ ও বিদেশ থেকে সর্বোচ্চ ডিগ্রী অর্জন করে এ দেশের নেতৃত্বে একদিন তোমাদেরকেই আসতে হবে। দেশের প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব তোমাদেরকেই পালন করতে হবে। শিরক-বিদ‘আত মুক্ত এবং কুরআন ও সুন্নাহ ভিত্তিক একটি কল্যাণকর রাষ্ট্র গঠনে জোরালো ভূমিকা পালন করতে হবে। তিনি বলেন, আমি যে এ দায়িত্বে আসব তা আমি কখনো জানতাম না। এটা আমি চেয়ে নেইনি। তাই মহান রাববুল আলামীন আমাদেরকে সাহায্য করবেন ইনশাআল্লাহ। তিনি সমাজ সংস্কারে আহলেহাদীছ আন্দোলনের বহুমুখী কার্যক্রমের ভূয়সী প্রশংসা করেন এবং মুহতারাম আমীরে জামা‘আতের প্রতি তাঁর মহববত ও শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন।
মুহতারাম আমীরে জামা‘আত তাঁর বক্তব্যে ধর্ম উপদেষ্টাকে মারকায পরিদর্শনের জন্য ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, ইতিপূর্বে ২০১৮ সালের ১২ ও ১৮ই নভেম্বর দু’বার তিনি মারকায পরিদর্শনে আসেন। আমীরে জামা‘আত জনগণের প্রত্যাশা মাফিক সুশাসন ও ন্যায়বিচার ভিত্তিক সমাজ ও রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা পালনের আহবান জানান। এ সময় সংগঠনের পক্ষ থেকে মাননীয় উপদেষ্টার নিকটে নিম্নোক্ত দাবী সমূহ পেশ করা হয়-
(১) সরকারীভাবে সকল ঘরানার বিশেষজ্ঞ ইসলামী বিদ্বানদের সমন্বয়ে একটি ‘সর্বোচ্চ ওলামা পরিষদ’ বা ‘বিশেষজ্ঞ প্যানেল’ গঠন করা (অন্যূন ১০ সদস্য বিশিষ্ট) এবং এই পরিষদে আহলেহাদীছ আলেমদেরকে অন্তর্ভুক্ত করা। যারা সরকারকে ধর্মীয় ও অন্যান্য বিষয়ে পরামর্শ দিবেন। (২) ইসলামিক ফাউন্ডেশনকে কার্যকর করা এবং সেখানে যোগ্য আলেমদের নিযুক্ত করা। (৩) ইসলামী এনজিওগুলোর কার্যক্রমে যাবতীয় বাধা দূর করা। কুয়েতী দাতা সংস্থা RIHS (Rivival of Islamic heritage society)-এর উপর থেকে অন্যায়ভাবে প্রদত্ত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা এবং তাদেরকে পুনরায় এনজিও হিসাবে কাজ করার অনুমতি দেওয়া। (৪) বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদে ও বিভিন্ন মডেল মসজিদে খুৎবা ও ইমামতি প্রদানের জন্য আহলেহাদীছদের সুযোগ রাখা। (৫) মসজিদ, মাদ্রাসা ও প্রতিষ্ঠানের জমিদাতা ব্যক্তি/সংগঠনের ইচ্ছা অনুযায়ী সেখানে সরকারী প্রশাসক নিয়োগ করা অথবা প্রতিষ্ঠানের পরিচালকের উপরে দায়িত্ব অর্পণ করা। (৬) হজ্জ ও ওমরাহ ব্যবস্থাপনার খরচ কমানো এবং প্রয়োজনে পানি জাহাযের ব্যবস্থা করা। সরকারী হজ্জ ব্যবস্থাপনা দলে আহলেহাদীছ গাইড অন্তর্ভুক্ত করা। (৭) শিক্ষার সর্বস্তরে সীরাত, ইসলামী শিক্ষা ও কুরআন শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করা। (৮) চরমপন্থা ও জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে সতর্ক ব্যবস্থা গ্রহণ করা। (৯) সংবিধান সংস্কার করা এবং সংবিধানে ইসলামের সাথে সাংঘর্ষিক বিষয়গুলো বাদ দেয়া। (১০) ইসলামী খেলাফত ও শূরা ব্যবস্থার আলোকে নেতৃত্ব নির্বাচন ব্যবস্থার আমূল সংস্কার করা। (১১) শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন স্থানে শহীদ মিনার, স্মৃতিসৌধ, সেনাকুঞ্জে শিখা অনির্বাণ ও শিখা চিরন্তন বন্ধ করা ও সেখানে গিয়ে নীরবে দাঁড়িয়ে শ্রদ্ধা প্রদর্শনের নিয়ম বাতিল করা। নির্মিত সকল মূর্তি-প্রতিকৃতি-ভাষ্কর্য, শহীদ মিনার ও স্মৃতিসৌধ ভেঙ্গে ফেলা। (১২) পাকিস্তানের সাথে রাজনৈতিক সম্পর্ক স্বাভাবিক করা এবং বাংলাদেশে আটকে পড়া বিহারীদের ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণ করা অথবা তাদেরকে নাগরিকত্ব দেয়া। অনুরূপভাবে পাকিস্তানে আটকে পড়া বাংলাদেশীদেরকে দেশে ফিরে আসা অথবা সেখানে নাগরিকত্ব প্রদানের ব্যবস্থা করা। (১৩) কাদিয়ানীদের অমুসলিম ঘোষণা করা। ধর্ম প্রচারের মুখোশে দেশের বিভিন্ন স্থানে তাদের এবং খৃষ্টান ও বাহাঈদের জমি ক্রয় ও কেন্দ্র স্থাপন নিষিদ্ধ করা। শী‘আদের তাযিয়া মিছিল তাদের কেন্দ্রের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা এবং এইসব অমুসলিম প্রতিষ্ঠানে সুন্নী মুসলিম শিক্ষার্থীদের ভর্তি নিষিদ্ধ করা।
উক্ত অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মারকাযের শিক্ষক, ছাত্র, অভিভাবকসহ রাজশাহী যেলা প্রশাসন ও ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ঊর্ধ্বতন দায়িত্বশীলবৃন্দ এবং সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের দায়িত্বশীল ও কর্মীবৃন্দ। অনুষ্ঠানে সঞ্চালক ছিলেন মারকাযের ভাইস প্রিন্সিপাল ড. নূরুল ইসলাম।