আন্দোলন
যেলা সম্মেলন
নিরপেক্ষভাবে পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছ মেনে চলুন!
-মুহতারাম আমীরে জামা‘আত
নওগাঁ ২১ অক্টোবর বৃহস্পতিবার : অদ্য
বাদ আছর শহরের ঐতিহ্যবাহী নওজোয়ান মাঠে ‘আহলেহাদীছ আন্দোলন বাংলাদেশ’ ও
‘বাংলাদেশ আহলেহাদীছ যুবসংঘ’ নওগাঁ যেলার যৌথ উদ্যোগে অনুষ্ঠিত যেলা
সম্মেলনে প্রধান অতিথির ভাষণে মুহতারাম আমীরে জামা‘আত প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব উপরোক্ত আহবান
জানান। তিনি বলেন, পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছের যেকোন বিধান আমাদেরকে বিনা
বাক্যব্যয়ে মেনে নিতে হবে। ছহীহ হাদীছ পাওয়ার পর কিন্তু, যদি ইত্যাদি
শর্তযুক্ত করে ছহীহ হাদীছের আমল থেকে সাধারাণ মানুষকে বিরত রাখা যাবে না।
তিনি বলেন, আহলেহাদীছ আন্দোলন বিভিন্ন মাযহাব ও মতবাদে আবেষ্টিত দিকভ্রান্ত
মানবতাকে পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছের মর্মমূলে জমায়েত করতে চায়। যার
মাধ্যমে ইহকালীন মঙ্গল ও পরকালে মুক্তি লাভ সম্ভব হ’তে পারে।
যেলা
‘আন্দোলন’-এর সভাপতি মাষ্টার আনীছুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উক্ত
সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য পেশ করেন, ‘যুবসংঘ’-এর সাবেক কেন্দ্রীয়
সভাপতি ড.এ.এস.এম. আযীযুল্লাহ, যেলা ‘যুবসংঘ’-এর সভাপতি মুহাম্মাদ আফযাল
হোসাইন। সম্মেলনে যেলা ‘আন্দোলন’ ও ‘যুবসংঘে’র নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
সুধী সমাবেশ
নৈতিকতার উন্নয়ন ব্যতীত শুধুমাত্র আইন করে নারী নির্যাতন বন্ধ করা যাবে না
-মুহতারাম আমীরে জামা‘আত
বগুড়া ২ নভেম্বর মঙ্গলবার : অদ্য
বিকাল ৩-টায় ‘আহলেহাদীছ আন্দোলন বাংলাদেশ’ ও ‘বাংলাদেশ আহলেহাদীছ যুবসংঘ’
বগুড়া যেলার উদ্যোগে শহরের টিটু মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত সুধী সমাবেশে প্রদত্ত
প্রধান অতিথির ভাষণে মুহতারাম আমীরে জামা‘আত প্রফেসর ডঃ মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব উপরোক্ত
কথা বলেন। তিনি বলেন, দেশে নারী নির্যাতন, ইভটিজিং ইত্যাদি বৃদ্ধির মূল
কারণ নারীদের পর্দাহীনতা, নারী-পুরুষের অবাধ চলাফেরা, সহ-শিক্ষা প্রভৃতি।
তিনি বলেন, অধুনা প্রচলিত ইভটিজিং সহ যেকোন ধরনের নারী নির্যাতন বন্ধে
ইসলামের চিরন্তন বিধান হিজাব বা পর্দার কোন বিকল্প নেই। পর্দানশীন নারীরাই
সমাজে সর্বাধিক নিরাপদ। অথচ দুঃখজনক যে, পাশ্চাত্যের ন্যায় আমাদের দেশেও
হিজাবের বিরুদ্ধে আইন করা হয়। তিনি বলেন, একদিকে হিজাবের বিরুদ্ধে আইন
করবেন, অপরদিকে ইভটিজিং বন্ধের জন্য আইন করবেন, এই স্ববিরোধী আইন করে কোন
লাভ হবে না। বরং গোড়ায় ঔষধ দিন। আল্লাহর বিধানের কাছে আত্মসমর্পণ করুন।
মাদক ও সন্ত্রাস মুক্ত সমাজ গড়ুন। আপনা থেকেই নারী নির্যাতন বন্ধ হয়ে যাবে
ইনশাআল্লাহ। তিনি সরকারীভাবে মদের লাইসেন্স প্রদানের তীব্র নিন্দা ও
ধিক্কার জানান এবং অবিলম্বে মদ ব্যবসায়ীদের লাইসেন্স বাতিল করে
রাষ্ট্রীয়ভাবে সকলপ্রকার মদ নিষিদ্ধ করার জন্য সরকারের প্রতি আহবান জানান।
যেলা
‘আন্দোলন’-এর সভাপতি মুহাম্মাদ আব্দুর রহীমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উক্ত
সমাবেশে বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন মাসিক আত-তাহরীক সম্পাদক ও
‘আন্দোলন’-এর কেন্দ্রীয় প্রচার ও প্রশিক্ষণ সম্পাদক ড. মুহাম্মাদ সাখাওয়াত
হোসাইন। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, আল-মারকাযুল ইসলামী আস-সালাফী,
নওদাপাড়া, রাজশাহীর ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুর রায্যাক বিন ইউসুফ,
যেলা ‘যুবসংঘ’-এর সভাপতি মুহাম্মাদ তাওহীদুল ইসলাম, আল-মারকাযুল ইসলামী
আস-সালাফী, নওদাপাড়া, রাজশাহীর শিক্ষক শামসুল আলম প্রমুখ। উল্লেখ্য যে,
মুহতারাম আমীরে জামা‘আতের বক্তব্যের পূর্বে স্থানীয় মেন্দীপুর মাদরাসা
‘সোনামণি’ সংগঠনের উদ্যোগে ‘মাদকতা’র বিরুদ্ধে একটি মঞ্চনাট্য পরিবেশন করা
হয়।
এলাকা সম্মেলন
অহি-র বিধানই অভ্রান্ত সত্যের চূড়ান্ত উৎস
-মুহতারাম আমীরে জামা‘আত
ভবানীগঞ্জ, রাজশাহী ১৩ নভেম্বর শনিবার : অদ্য
বাদ আছর বাগমারা উপযেলাধীন ভবানীগঞ্জ চাঁনপাড়া হেলিপ্যাড মাঠে ‘আহলেহাদীছ
আন্দোলন বাংলাদেশ’ ভবানীগঞ্জ এলাকার উদ্যোগে অনুষ্ঠিত ইসলামী সম্মেলনে
প্রধান অতিথির ভাষণে মুহতারাম আমীরে জামা‘আত প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব উপরোক্ত
কথা বলেন। তিনি বলেন, মানুষের মস্তিষ্ক প্রসূত কোন বিধান যেমন চূড়ান্ত
সত্য হ’তে পারে না। তেমনি এটাও ঠিক ওটাও ঠিক এই থিওরীও ভুল। কোন বিষয়ে ঠিক
মাত্র একটিই হয়। তিনি বলেন, আহলেহাদীছ আন্দোলন আল্লাহ প্রেরিত শাশ্বত
সত্যের পথে মানুষকে আহবান জানায়।
যেলা ‘আন্দোলন’-এর গবেষণা ও প্রকাশনা
সম্পাদক ও হাটমাধনগর সিনিয়র মাদরাসার অধ্যক্ষ মাওলানা আহমাদ আলীর
সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উক্ত সম্মেলনে বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন
‘আন্দোলন’-এর কেন্দ্রীয় প্রচার ও প্রশিক্ষণ সম্পাদক ড. মুহাম্মাদ সাখাওয়াত
হোসাইন, ‘যুবসংঘ’ -এর সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি ড.এ.এস.এম. আযীযুল্লাহ,
বর্তমান সভাপতি ড. মুহাম্মাদ কাবীরুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক মুযাফফর বিন
মুহসিন, নাটোর যেলা ‘আন্দোলন’-এর সভাপতি ড. মুহাম্মাদ আলী। অন্যান্যের
মধ্যে বক্তব্য পেশ করেন, আল-মারকাযুল ইসলামী আস-সালাফী, নওদাপাড়া রাজশাহীর
ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুর রায্যাক বিন ইউসুফ, ভবানীগঞ্জ এলাকা
‘আন্দোলন’-এর সভাপতি ও বালানগর ফাযিল মাদরাসার উপাধ্যক্ষ মাওলানা শফীকুল
ইসলাম, হাটগাঙ্গোপাড়া এলাকা ‘আন্দোলন’-এর সহ-সভাপতি ও দামনাশ-পার-দামনাশ
উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষক মুহাম্মাদ নিযামুল হক ও হাফেয মাহবূবুর রহমান
প্রমুখ।
ভোগে নয় ত্যাগের আদর্শে উজ্জীবিত হৌন!
ঈদুল আযহার-র খুৎবায় আমীরে জামা‘আত
নওদাপাড়া, রাজশাহী : দারুল
হাদীছ বিশ্ববিদ্যালয় (প্রাঃ) ময়দানে অনুষ্ঠিত কেন্দ্রীয় ঈদগাহে ঈদুল আযহার
জামা‘আতে প্রদত্ত খুৎবায় মুহতারাম আমীরে জামা‘আত সমবেত মুছল্লীদের
উদ্দেশ্যে ইবরাহীমী ত্যাগের আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে সমাজে শান্তি ও সৌহার্দ্য
স্থাপনে এগিয়ে আসার জন্য উপরোক্ত আহবান জানান। উল্লেখ্য যে, গত ঈদুল ফিৎরের
জামা‘আতে এখানে ইমামতি করেন তাঁর পক্ষে আত-তাহরীক সম্পাদক ড. সাখাওয়াত
হোসায়েন এবং তিনি সপরিবারে সাতক্ষীরায় গমন করেন ও প্রথমবারের মত সাতক্ষীরা
শহরের প্রাণকেন্দ্র চিলড্রেন্স পার্কে আয়োজিত বিশাল ঈদের জামা‘আতে ইমামতি
করেন।
প্রথম ১২ তাকবীরে ঈদের জামা‘আত
(১) সিলেট ১৭ নভেম্বর বুধবার: সিলেট
শহরের প্রাণকেন্দ্র রেজিষ্ট্রী ময়দানে এ বছরের ঈদুল আযহায় প্রথম বারের মত
ছহীহ হাদীছ অনুযায়ী ১২ তাকবীরে ঈদের জামা‘আত অনুষ্ঠিত হয়েছে। উপশহর,
শিবগঞ্জ, শাহপরান, আম্বরখানাসহ শহরের বিভিন্ন এলাকা থেকে দুই শতাধিক
মুছল্লী উক্ত জামা‘আতে যোগদান করেন। ‘বাংলাদেশ আহলেহাদীছ যুবসংঘে’র সাবেক
তাবলীগ সম্পাদক মাওলানা আবু তাহের ঈদুল আযহার উক্ত জামা‘আতে ইমামতি করেন।
(২) উলানিয়া, মেহেন্দীগঞ্জ, বরিশাল : আল
হামদুলিল্লাহ, এবারই প্রথম এখানে ১২ তাকবীরে ঈদের জামা‘আত অনুষ্ঠিত হ’ল।
প্রায় সাড়ে তিনশ’ নতুন আহলেহাদীছ ঈদুল আযহার অত্র জামা‘আতে যোগদান করেন।
বিরোধীদের কারণে মহিলাদের জামা‘আতে আনা সম্ভব হয়নি। আগামীতে ইনশাআল্লাহ
উক্ত বাধা থাকবে না। ঈদের জামা‘আতে ইমামতি করেন নবগঠিত মেহেন্দীগঞ্জ উপযেলা
‘আহলেহাদীছ আন্দোলন’-এর আহবায়ক মাওলানা আব্দুল খালেক। ছহীহ হাদীছ মতে ঈদের
ছালাত আদায় করতে পেরে মুছল্লীগণ দারুণভাবে উজ্জীবিত হয়েছেন। ফালিল্লাহিল হামদ।
(৩) চকরিয়া, কক্সবাজার : কক্সবাজার
যেলার চকরিয়া থানাধীন ফুকপুকুরিয়া গ্রামের বাইতুন নূর জামে মসজিদে এবার
সর্বপ্রথম ১২ তাকবীরে ঈদুল আযহার জামা‘আত অনুষ্ঠিত হয়েছে। উক্ত মসজিদের
ইমাম মাওলানা ওছমান গণীর ইমামতিতে অনুষ্ঠিত ঈদুল আযহার এই জামা‘আতে প্রায়
তিনশত মুছল্লী ছহীহ হাদীছের নির্দেশনা অনুযায়ী ১২ তাকবীরে ঈদের ছালাত আদায়
করেন।
(খ) উল্লেখ্য যে, কক্সবাজার শহরের উত্তর
বাহারছড়াস্থ ‘ইসলাম প্রচার ও গবেষণা’ কেন্দ্রে বিগত ৩ বৎসর যাবত ১২ তাকবীরে
ঈদের জামা‘আত অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। এ বছরও সকাল ৮-টায় সেখানে ঈদুল আযহার
জামা‘আত অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত জামা‘আতে মহিলা সহ প্রায় দুইশত মুছল্লী অংশগ্রহণ
করেন। ইমামতি করেন উক্ত সেন্টারের সভাপতি ডাঃ মাহবূবুল আলম।
(৪) লোহাগাড়া, চট্টগ্রাম : যেলার
লোহাগাড়া থানাধীন ফুটি ভিলা ইউনিয়নের ফহড়চান্দা গ্রামে এবছর সর্বপ্রথম ১২
তাকবীরে ঈদের জামা‘আত অনুষ্ঠিত হয়েছে। উক্ত জামা‘আতে ইমামতি করেন জনাব
হারেছ আহমাদ।
(খ) উল্লেখ্য যে, চট্টগ্রাম যেলার সাতকানিয়া থানাধীন উত্তর চরপাড়াস্থ বেসিক স্কুল ময়দানে বিগত ৫ বৎসর যাবত এবং (গ) একই থানার পশ্চিম গাটিয়াডাঙ্গা গ্রামে বিগত চার বৎসর যাবত ১২ তাকবীরে ঈদের জামা‘আত অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। ফালিল্লা-হিল হাম্দ।
[ছহীহ
হাদীছ অনুযায়ী ইবাদত করার প্রতি আল্লাহ সকল দ্বীনদার মুসলমানের
অন্তরগুলিকে ঝুঁকিয়ে দিন, প্রাণখুলে আমরা সেই দো‘আ করি- আমীন! -সম্পাদক]
উত্তরবঙ্গের তিনটি প্রসিদ্ধ আহলেহাদীছ মাদরাসা পরিদর্শনে আমীরে জামা‘আত
গত ২৩ অক্টোবর রোজ শনিবার মুহতারাম আমীরে জামা‘আত উত্তরবঙ্গের প্রসিদ্ধতম তিনটি আহলেহাদীছ মাদরাসা নওগাঁ জেলার আলাদীপুর দারুল হুদা সালাফিয়া মাদরাসা, কদমডাঙ্গা সালাফিয়া মাদরাসা ও কলমুডাঙ্গা দারুল উলুম সালাফিয়া মাদরাসা পরিদর্শন করেন। আলাদীপুর মাদরাসার মুহতামিম পীর শামসুদ্দীনের জানাজায় অংশগ্রহণের পর অত্র অঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী আহলেহাদীছ মাদরাসা হিসাবে উক্ত তিনটি প্রতিষ্ঠানে তিনি সফর করেন। তাঁর সফরসঙ্গী হিসাবে ছিলেন আল মারকাযুল ইসলামী আস সালাফীর ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ জনাব আব্দুর রাজ্জাক বিন ইউসুফ, অত্র মাদরাসার শিক্ষক জনাব ফযলুল করীম, বাংলাদেশ আহলেহাদীছ যুবসংঘের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মুযাফ্ফর বিন মহসিন, সোনামণি কেন্দ্রীয় সহ-পরিচালক মুহাম্মাদ কিবরিয়া, যুবসংঘ রাবি’র সভাপতি মুকাররম বিন মহসিন এবং আমীরে জামা‘আতের দুই পুত্র আহমাদ আব্দুল্লাহ ছাকিব ও আহমাদ আব্দুল্লাহ নাজীব। প্রথমেই তিনি পীর শামসুদ্দীন ছাহেবের স্মৃতিবিজড়িত আলাদীপুর মাদরাসায় যান এবং সেখানকার দায়িত্বশীলবৃন্দ ও ছাত্র-শিক্ষকদের সাথে মতবিনিময় করেন। প্রতিষ্ঠানের লাইব্রেরী ও আবাসিক ভবনগুলো ঘুরে ঘুরে দেখেন। প্রায় এক ঘন্টা অবস্থানের পর সেখান থেকে অন্যূন ১০ কিঃমিঃ দূরে কদমডাঙ্গা আহলেহাদীছ মাদরাসার উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। সেখানে পৌঁছে যোহরের ছালাত আদায়ের পর কর্তৃপক্ষের আন্তরিক আতিথেয়তা কবুল করেন। অতঃপর মাদরাসা কমিটির সদস্যবৃন্দ ও শিক্ষকদের উপস্থিতিতে এক প্রাণবন্ত মতবিনিময় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। অতঃপর সেখান থেকে আরও প্রায় ১০ কিঃমিঃ দুরে অবস্থিত কলমুডাঙ্গা দারুল উলুম সালাফিয়া মাদরাসার উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন এবং বা‘দ আছর সেখানে পৌঁছেন। মাদরাসার মুহতামিম মাওলানা আব্দুল হাকীমসহ উপস্থিত শিক্ষকমন্ডলী তাঁকে স্বাগত জানান। অতঃপর তিনি শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে নাতিদীর্ঘ ও জ্ঞানগর্ভ ভাষণ দেন এবং এ মাদরাসা প্রতিষ্ঠার পিছনে আল্লাহভীরু দাতাগণ ও বিগত আহলেহাদীছ ওলামায়ে কেরামের মহান উদ্দেশ্য স্মরণ করিয়ে দিয়ে দেশ ও সমাজ সংস্কার আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণের আহবান জানান। উপস্থিত ছাত্রদের উদ্দেশ্যেও তিনি পৃথকভাবে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন। অতঃপর সেখান থেকে বিদায় নিয়ে পড়ন্ত বিকেলে রাজশাহীর উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন। পথিমধ্যে জবাই ফাযিল মাদরাসা সংলগ্ন কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে মাগরিবের জামা‘আত শেষে পৌঁছেন ও মাগরিবের ছালাত আদায় করেন। তাঁর আগমনের খবর জানতে পেরে আশপাশ থেকে তাৎক্ষণিকভাবে উপস্থিত মুছল্লীদের উদ্দেশ্যে তিনি সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন।
যুবসংঘ
কর্মী ও সুধী সমাবেশ
মাছিমপুর, পাবনা ২২ অক্টোবর শুক্রবার : অদ্য
বাদ আছর ‘বাংলাদেশ আহলেহাদীছ যুবসংঘ’ পাবনা যেলার উদ্যোগে যেলা শহরের
অনতিদূরে মাছিমপুর আহলেহাদীছ জামে মসজিদে এক কর্মী ও সুধী সমাবেশ অনুষ্ঠিত
হয়। যেলা ‘যুবসংঘ’-এর সভাপতি মুহাম্মাদ তারিক হাসানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত
উক্ত সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন ‘বাংলাদেশ আহলেহাদীছ
যুবসংঘ’-এর কেন্দ্রীয় সভাপতি ড. মুহাম্মাদ কাবীরুল ইসলাম। অন্যান্যের মধ্যে
বক্তব্য রাখেন অত্র মসজিদের ইমাম মুহাম্মাদ আব্দুল কুদ্দূস, যেলা
‘যুবসংঘ’-এর সাহিত্য ও পাঠাগার সম্পাদক মুহাম্মাদ হযরত আলী প্রমুখ।
কেশবপুর, যশোর ২৯ অক্টোবর শুক্রবার : অদ্য
সকাল ১০-টায় যশোর যেলার কেশবপুর থানাধীন হালীমপুর আহলেহাদীছ জামে মসজিদে
‘বাংলাদেশ আহলেহাদীছ যুবসংঘ’ যশোর যেলার উদ্যোগে এক কর্মী ও সুধী সমাবেশ
অনুষ্ঠিত হয়। ‘আহলেহাদীছ আন্দোলন বাংলাদেশ’-এর কেন্দ্রীয় সাহিত্য ও পাঠাগার
সম্পাদক ও যশোর যেলা ‘আন্দোলন’-এর সভাপতি অধ্যাপক সিরাজুল ইসলামের
সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উক্ত সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন
‘যুবসংঘ’-এর কেন্দ্রীয় সভাপতি ড. মুহাম্মাদ কাবীরুল ইসলাম। বিশেষ অতিথি
হিসাবে উপস্থিত ছিলেন ‘যুবসংঘ’-এর কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি মুহাম্মাদ আকবর
হোসাইন। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন যেলা ‘আন্দোলন’-এর সাংগঠনিক
সম্পাদক মুহাম্মাদ আব্দুল আহাদ, যেলা ‘যুবসংঘ’-এর সভাপতি মুহাম্মাদ আব্দুস
সালাম প্রমুখ।
সারিয়াকান্দি, বগুড়া ২২ অক্টোবর শুক্রবার : অদ্য
বিকাল ৩-টায় বালুয়াহাটা কেন্দ্রীয় ঈদগাহ জামে মসজিদে ‘বাংলাদেশ আহলেহাদীছ
যুবসংঘ’ বগুড়া যেলার উদ্যোগে ও সারিয়াকান্দি এলাকা ‘আন্দোলন’-এর সভাপতি
আলহাজ মুহাম্মাদ আব্দুল হাকীম-এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত কর্মী ও সুধী সমাবেশে
প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন ‘যুবসংঘ’-এর সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি ড.
এ.এস.এম. আযীযুল্লাহ। বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন ‘যুবসংঘ’-এর
কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক নূরুল ইসলাম। যেলা ‘যুবসংঘ’-এর দায়িত্বশীলবৃন্দ
উক্ত অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। উল্লেখ্য, একই দিন বাদ জুম‘আ সারিয়াকান্দি
কেন্দ্রীয় আহলেহাদীছ জামে মসজিদ ও ধলিরকান্দি নতুনপাড়া জামে মসজিদে
অনুষ্ঠিত সুধী সমাবেশে অতিথিবৃন্দ বক্তব্য পেশ করেন।
প্রবাসী সংবাদ
সিঙ্গাপুর ১৭ নভেম্বর বুধবার : অদ্য
বাদ যোহর সিঙ্গাপুরের ঐতিহাসিক সুলতান জামে মসজিদে ‘বাংলাদেশ আহলেহাদীছ
যুবসংঘ’ সিঙ্গাপুর শাখার উদ্যোগে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। সিঙ্গাপুর
‘যুবসংঘ’-এর সভাপতি মুহাম্মাদ আব্দুল হালীম (কুমিল্লা)-এর সভাপতিত্বে
অনুষ্ঠিত উক্ত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন জনাব ইলিয়াস
(তামিলনাড়ু, ভারত)। তিনি ইংরেজী ভাষায় তাওহীদ সম্পর্কে বক্তব্য পেশ করেন।
অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, সিঙ্গাপুর ‘যুবসংঘ’-এর সহ-সভাপতি মু‘আযযম
হোসাইন (বগুড়া), ফাকীরুল ইসলাম (মেহেরপুর), হাফেয শু‘আইব (কুমিল্লা)
প্রমুখ। সুলতান মসজিদ কমিটির অনুমতিক্রমে বাদ যোহর থেকে মাগরিব পর্যন্ত
অনুষ্ঠিত উক্ত সমাবেশটি ছিল প্রাণবন্ত। বক্তাগণ শিরক, বিদ‘আত, তাওহীদ ও
হালাল-হারাম বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য পেশ করেন। তারা বলেন, নির্ভেজাল
তাওহীদের প্রচার ও প্রসারের মাধ্যমে আল্লাহ্র সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে
দাওয়াতী কাজ যোরদার করতে আমাদের সচেষ্ট হ’তে হবে। ‘আমি কেন আহলেহাদীছ হলাম’
এ বিষয়ে আকর্ষণীয় বক্তব্য রাখেন হানাফী থেকে নতুন আহলেহাদীছ মুহাম্মাদ
আল-আমীন (কুমিল্লা) ও মুহাম্মাদ শাহ আলম (টাঙ্গাইল)। অনুষ্ঠানের সঞ্চালক
ছিলেন সিঙ্গাপুর ‘আহলেহাদীছ যুবসংঘ’-এর সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল মুকীত
(কুষ্টিয়া)। অনুষ্ঠানে প্রায় অর্ধশত শ্রোতা উপস্থিত ছিলেন। উল্লেখ্য যে,
সিঙ্গাপুরে আত-তাহরীকের ক্রমবর্ধমান গ্রাহক সংখ্যা নভেম্বর ’১০-য়ে ৮০-তে
পৌঁছেছে। ফালিল্লা-হিল হাম্দ।
মাওলানা মুহাম্মাদ শামসুদ্দীনের সংক্ষিপ্ত জীবনী
(গত সংখ্যার পর)
প্রত্যন্ত
গ্রামের সাধারণ মুসলিম সমাজে ইলমে দ্বীনের প্রসারের মাধ্যমে যে সকল মনীষী
স্মরণীয় হয়েছেন সদ্য প্রয়াত মাওলানা মুহাম্মাদ শামসুদ্দীন ছিলেন তাঁদের
অন্যতম। নিম্নে তাঁর সংক্ষিপ্ত জীবনী প্রদত্ত্ব হ’ল।
জন্ম :
নাম
মুহাম্মাদ শামসুদ্দীন, পিতা কোবাদ আলী, মাতা হাসিনা বেগম, দাদা ইমাজ আলী।
উপাধি পীর। ১৩৩২ বঙ্গাব্দ মোতাবেক ১৯২৫ খ্রীষ্টাব্দে চাঁপাই নবাবগঞ্জ যেলার
চন্দ্র নারায়ণপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পরবর্তীতে তিনি নওগাঁ যেলার
পোরশা থানাধীন নিতপুর ইউনিয়নের দুয়ারপাল গ্রামে স্থায়ীভাবে বসবাস করেন এবং
প্রায় ৮৫ বছর বয়সে এখানেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তিনি এক পুত্র ও তিন
কন্যার পিতা ছিলেন। পুত্র ব্যতীত কন্যারা সবাই জীবিত আছেন।
শিক্ষা জীবন :
গ্রামের
মক্তবে আরবী ও উর্দুর প্রাথমিক শিক্ষালাভ করেন। অতঃপর শুকদেবপুর (ভারত)
মাদরাসায় ভর্তি হন এবং সেখানে তিন বছর অধ্যয়ন করেন। অতঃপর দেশ বিভাগের ফলে
দেশে ফিরে ১৯৫১ খ্রীষ্টাব্দে নবাব জায়গীর (চাঁপাই নবাবগঞ্জ) মাদরাসায় ভর্তি
হন। সেখানে ১ বছর পড়াশুনা করার পর নওগাঁ যেলার সাপাহার থানাধীন পাতাড়ী
মাদরাসায় ভর্তি হন এবং সেখানে ২ বছর অধ্যয়ন করেন। অতঃপর ১৯৫৬ সালে তিনি
ভারত গমন করেন ও দারুল উলূম দেওবন্দ মাদরাসায় ভর্তি হন। সেখানে তিন বছর
অধ্যয়নের পর দেশে ফিরে ১৯৬০ সালে দারুল উলূম মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারী
(চট্রগ্রাম) মাদরাসা থেকে দাওরায়ে হাদীছ পাশ করে ছাত্র জীবনের সমাপ্তি
ঘটান।
তাঁর প্রখ্যাত শিক্ষকমন্ডলীর মধ্যে ছিলেন, মাওলানা সোলায়মান
(গোদাগাড়ী), মাওলান আব্দুর রউফ (গোদাগাড়ী), মাওলানা আব্দুল ওয়াহেদ সালাফী
(পাবনা), মাওলানা আব্দুল গণী (দিনাজপুর), মাওলানা মুহাম্মাদ হোসেন মাওড়ী
(চাপাইনবাবগঞ্জ), মাওলানা আব্দুল লতীফ (পাতাড়ী), মাওলানা আব্দুল ওয়াহহাব
সালাফী (দিনাজপুর), মাওলানা ইউনুসুর রহমান (শুকদেবপুর), মাওলানা তাহের
উদ্দীন (চাঁপাইনবাবগঞ্জ) প্রমুখ।
কর্ম জীবন :
মাওলানা
মুহাম্মাদ শামসুদ্দীন ১৯৬১ সালে পাতাড়ী মাদরাসায় শিক্ষক হিসাবে যোগদানের
মাধ্যমে কর্ম জীবন শুরু করেন। কিন্তু কর্তৃপক্ষ মাদরসাকে আলিয়া করার
সিদ্ধান্ত নিলে তিনি ইস্তেফা দিয়ে ১৯৬২ সালে জবাই কওমী মাদরাসায় যোগদান
করেন। সেখানে তিনি ৬ বছর ছিলেন। এর মধ্যে তিনি মাদরাসাকে বৃহৎ আকারে গড়ে
তুলেন। এটিকেও আলিয়া মাদরাসায় রূপান্তর করার কারণে তিনি ইস্তেফা দেন
এবং ১৯৬৮ সালে নাচোল মাদরাসায় যোগদান করেন ও সেখানে ১ বছর থাকেন।
এদিকে
আলাদীপুর ফুরকানিয়া মাদরাসাকে কর্তৃপক্ষ কুরআন-হাদীছের প্রাণকেন্দ্র হিসাবে
গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নিলে মাওলানা শামসুদ্দীন ১৯৬৯ সালে আলাদীপুর মাদরাসায়
যোগদান করেন এবং ৭ বছর সেখানে থাকেন। অতঃপর কলমুডাঙ্গা ফুরকানিয়া মাদরাসার
কর্তৃপক্ষ মাদরাসাকে বৃহৎ আকারে গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে মাওলানাকে আহবান
জানালে ১৯৭৫ সালে তিনি কলমুডাঙ্গায় যোগদান করেন। সেখানে ৭ বছর থাকার পর
১৯৮২ সালের শেষ দিকে পুনরায় আলাদীপুরে আসেন। অতঃপর ১৯৯৭ সালে কদমডাঙ্গা
ইসলামিয়া আরাবিয়া সালাফিইয়াহ মাদরাসায় যোগদান করেন। সেখানে ২ বছর থাকার পর
১৯৯৯ সালে আবারো তিনি আলাদীপুর মাদরাসায় ফিরে আসেন এবং আমৃত্যু সেখানেই
শিক্ষকতা করেন।
উল্লেখযোগ্য ছাত্রবৃন্দ :
মাওলানা
শামসুদ্দীন তাঁর দীর্ঘ ৪৯ বছরের কর্মময় জীবনে তৈরি করেছেন বহু আলেমে দ্বীন।
দেশের উত্তরাঞ্চলের অধিকাংশ আলেমের তিনি শীর্ষস্থানীয় উস্তাদ ছিলেন। তাঁর
ছাত্রদের মধ্যে মাওলানা আব্দুল খালেক সালাফী, মাওলানা নো‘মান, আব্দুল
ওয়াহহাব (হাটহাজারী), আব্দুল ওয়াহহাব (লালবাগী), আব্দুর রহমান, রামাযান
আলী, ফযলুল করীম, আবু তাহের প্রমুখ উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও সারা বাংলাদেশে
তাঁর অসংখ্য ছাত্র রয়েছে।
মৃত্যু, জানাযা ও দাফন :
গত
২২শে অক্টোবর ২০১০ শুক্রবার দুপুর ১২-টায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে
তিনি শেষ নিঃশবাস ত্যাগ করেন। পরদিন সকাল সাড়ে ৯-টায় নিজ গ্রাম দুয়ারপাল
(পোরশা, নওগাঁ) হাফেযিয়া মাদরাসা প্রাঙ্গণে তাঁর ১ম জানাযার ছালাত অনুষ্ঠিত
হয়। হাযার হাযার মানুষ তাঁর জানাযায় অংশগ্রহণ করেন। স্থান সংকটের কারণে
একই স্থানে পরপর ৬টি জানাযা অনুষ্ঠিত হয়। জানাযা শেষে তাঁকে পারিবারিক
গোরস্থানে দাফন করা হয়।
প্রথম জামা‘আতের ইমামতি করেন তার নাতি আব্দুল কাবীর। ২য় জামা‘আতের ইমামতি করেন আহলেহাদীছ আন্দোলন বাংলাদেশ-এর মুহতারাম আমীরে জামা‘আত প্রফেসর ড. মুহাম্মাদ আসাদুলাহ আল-গালিব।
তাঁর সফর সঙ্গী ছিলেন আল-মারকাযুল ইসলামী আস-সালাফী নওদাপাড়া, রাজশাহীর
ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুর রাযযাক বিন ইউসুফ, শিক্ষক মাওলানা ফযলুল
করীম, ‘বাংলাদেশ আহলেহাদীছ যুবসংঘে’র কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মুযাফফর
বিন মুহসিন, কেন্দ্রীয় সাহিত্য ও পাঠাগার সম্পাদক আহমাদ আব্দুল্লাহ ছাকিব ও
রাঃবিঃ ‘যুবসংঘে’র কলা অনুষদের সভাপতি আহমাদ আব্দুল্লাহ নাজীব এবং সোনামণি
কেন্দ্রীয় সহ-পরিচালক গোলাম কিবরিয়া। এতদ্ব্যতীত নওদাপাড়া মাদরাসার
ছাত্ররা পৃথক একটি বাস নিয়ে তাঁর জানাযায় অংশগ্রহণ করেন। এছাড়াও আশপাশের
বিভিন্ন মাদরাসা থেকে শিক্ষক ও ছাত্র ছাড়াও বহু মুছল্লী তাঁর জানাযায় শরীক
হন।
চারিত্রিক গুণাবলী :
তিনি সদাহাস্য, নম্র্-ভদ্র
ও সহজ-সরল স্বভাবের মানুষ ছিলেন। হিংসা-বিদ্বেষ, ঝগড়া, অহংকার, লোভ-লালসা
প্রভৃতি দোষ থেকে তিনি সর্বদা নিজেকে দূরে রাখতেন। ফলে অল্প সময়ের মধ্যে
তিনি মানুষের হৃদয়ের গভীরে স্থান করে নেন। তিনি ছিলেন একজন প্রখর উপস্থিত
বুদ্ধি সম্পন্ন ব্যক্তি। সামাজিক বিচার-শালিশে তিনি ছিলেন সিদ্ধহস্ত। তাঁর
দূরদর্শী ফায়ছালায় সকলে সন্তুষ্ট থাকত।
ইলমে দ্বীনের খিদমত :
আলাদীপুর,
কদমডাঙ্গা, কলমুডাঙ্গা, পাতাড়ী ও জবাই মাদরাসা সমূহের উন্নয়নে তাঁর অবদান
ছিল অপরিসীম। ঐ সকল মাদরাসায় দীর্ঘদিন বিভিন্ন বিষয়ে পাঠ দান করলেও হাদীছ
ছিল তাঁর প্রিয় বিষয়। তিনি ছহীহ বুখারী, ছহীহ মুসলিম, সুনানে তিরমিযী,
আবূদাউদ প্রভৃতি হাদীছ গ্রন্থ অত্যন্ত দক্ষতা ও আন্তারিকতার সাথে পাঠ দান
করে ইলমে হাদীছের খিদমত আঞ্জাম দেন। তিনি ইসলামের দাওয়াত সাধারণ মানুষের
মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করেন। বৃহত্তর নওগাঁয় আহলেহাদীছ
সমাজে অনুষ্ঠিত অধিকাংশ ইসলামী সম্মেলনে তিনি সভাপতির আসন অলংকৃত করতেন।
পীর উপাধি : অত্রাঞ্চলের
তৎকালীন সর্বজন শ্রদ্ধেয় আলেম ও পীর মাওলানা আব্দুর রাযযাক মৃত্যুর পূর্বে
উপস্থিত সকলকে অছিয়ত করে যান যে, তাঁর মৃত্যুর পর মাওলানা শামসুদ্দীন
‘পীর’ হিসাবে দায়িত্ব পালন করবেন। তাঁর এই অছিয়ত অনুযায়ী ১৯৭১ সালের পর
হ’তে আমৃত্যু তিনি এলাকায় পীর হিসাবে পরিচিত ছিলেন এবং এতদঞ্চলের
আলেম-ওলামা ও জনসাধারণের ধর্মীয় নেতা হিসাবে বরিত ছিলেন।
উপসংহার : তিনি
ছিলেন একাধারে বিজ্ঞ আলেম, বিজ্ঞ বিচারক ও মাদরাসা গড়ার কারিগর। তাঁর
নিরলস প্রচেষ্টায় গড়ে ওঠে আলাদীপুর, কদমডাঙ্গা ও কলমুডাঙ্গার মত একই থানাতে
তিন তিনটি বৃহদাকারের দাওরায়ে হাদীছ মাদরাসা। তৈরী হয়েছে অসংখ্য
ছাত্র-শিক্ষক ও আলেম-ওলামা। তাই জানাযা-পূর্ব সংক্ষিপ্ত ভাষণে মুহতারাম
আমীরে জামা‘আত তাঁকে যথার্থ ভাবেই ‘উস্তাযুল আসাতেযাহ’ নামে অভিহিত করেন।
আল্লাহ তাঁকে জান্নাতুল ফেরদাঊস নছীব করুন- আমীন!! (তথ্য সংগ্রহে: গোলাম
কিবরিয়া, কৈবর্ত্তগ্রাম, সাপাহার, নওগাঁ)।
সংশোধনী : গত সংখ্যায় তাঁর নামের শেষে (১৯০৬-২০১০) লেখা হয়েছিল। ওটা হবে (১৯২৫-২০১০)।
মৃত্যু সংবাদ
(১) ‘জামা‘আতী যিন্দেগী’ বইয়ের লেখক জনাব আব্দুস সোবহান (৭০)
গত ২০ অক্টোবর বিকাল ৩-টায় বগুড়া যেলার সোনাতলা থানাধীন সিচারপাড়া গ্রামের
নিজ বাড়ীতে ইন্তিকাল করেন। ইন্না লিল্লা-হি ওয়া ইন্না ইলাইহে রাজে‘ঊন।
মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, ১ ছেলে ও ৬ মেয়ে রেখে যান। উল্লেখ্য যে, তার দু’টি
কিডনীই নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। তার প্রথম জানাযা হাফেয যয়নুল আবেদীনের ইমামতিতে
রাত ৮-টায় এবং দ্বিতীয় জানাযার ছালাত পরদিন সকাল ৮-টায় তার পুত্র
আব্দুল্লাহ আল-মামুনের ইমামতিতে অনুষ্ঠিত হয়। তাকে নিজ গ্রামের পারিবারিক
গোরস্থানে দাফন করা হয়।
(২) আলহাজ্জ আবুল হোসায়েন চলে গেলেন :
বালাকোট
জিহাদের স্বনামধন্য মুজাহিদ তিন তিনবার ফাঁসির দড়ি ছিঁড়ে বেঁচে যাওয়া
কিংবদন্তী পুরুষ সততা, ন্যায় পরায়ণতা, বীরত্ব ও আল্লাহভীরুতার মূর্তপ্রতীক
সাতক্ষীরার গাযী মর্জ্জুম (মাখদূম) হোসায়েন-এর প্রপৌত্র আলহাজ্জ আবুল
হোসায়েন (৮১) বিন সৈয়দুদ্দীন বিন মৌলবী আব্দুল ওয়াহহাব বিন মর্জ্জুম হোসেন
দীর্ঘ রোগভোগের পর গত ৫ নভেম্বর শুক্রবার সাতক্ষীরার ভালূকা চাঁদপুরে নিজ
বাসভবনে ইন্তেকাল করেছেন। ইন্না লিল্লাহে ...। মৃত্যুকালে তিনি
একমাত্র ছোট ভাই হাবীবুল হাসান প্রধান শিক্ষক (অবঃ) সাতক্ষীরা বয়েজ
হাইস্কুল, ৫ পুত্র ও ৪ কন্যা রেখে যান। সাতক্ষীরা যেলা ‘আন্দোলন’-এর
সেক্রেটারী মাওলানা আলতাফ হোসায়েন তাঁর জানাযায় ইমামতি করেন এবং যেলা
উপদেষ্টা ও কেন্দ্রীয় শূরা সদস্য অধ্যাপক শেখ রফীকুল ইসলাম ঐদিন জুম‘আর
খুৎবা দেন এবং অত্রাঞ্চলে আহলেহাদীছ আন্দোলনে মরহূম ও তাঁর পূর্বপুরুষদের
অবদান তুলে ধরেন। জানাযায় ‘আন্দোলন’ ও ‘যুবসংঘে’র যেলা নেতৃবৃন্দ ছাড়াও
এলাকা ও আশপাশের কয়েক শত মুছল্লী অংশগ্রহণ করেন।
২২.১২.১৯৮৯ ইং তারিখে
মরহূমের দেওয়া তথ্যমতে ১৮৩১ সালের মে মাসে সংঘটিত বালাকোট জিহাদ থেকে ফেরার
পথে (পাকিস্তানের) শিয়ালকোটের এক জুম‘আ মসজিদে আহলেহাদীছ তরীকায় ছালাত
আদায় করতে গিয়ে গাযী মার্জ্জুম হোসায়েন ইংরেজের গুপ্ত পুলিশের নযরে পড়েন ও
পরে সত্য কথা বলায় বিচারে ফাঁসির আদেশ প্রাপ্ত হন। কিন্তু তাঁর সাথী ও
পার্শ্ববর্তী শ্রীঊলা গ্রামের ইদু বিশ্বাস ধরা পড়ার ভয়ে হানাফী তরীকায়
ছালাত আদায় করে বেঁচে যান। বর্তমানে মার্জ্জুম হোসায়েন-এর বংশ সকলে
আহলেহাদীছ। কিন্তু ইদু বিশ্বাসের বংশধর সকলে হানাফী। আদালতের আদেশমতে তাঁকে
শিয়ালকোট জেলে ফাঁসি কাষ্ঠে ঝুলানো হয়। কিন্তু তিন তিনবার ফাঁসির দড়ি
ছিঁড়ে যাওয়ায় ভীত হয়ে ইংরেজ ম্যাজিষ্ট্রেট তাঁকে মুক্তি দেন। অতঃপর বহুদিন
পর এক সময় তিনি জন্মস্থান ভালুকা চাঁদপুরে ফিরে আসেন। এই সময় পার্শ্ববর্তী
গুনাকরকাটি গ্রামে তিনি ওয়ায মাহফিলে বক্তৃতা করেন। ফাঁসির দড়ি ছিঁড়ে
মুক্তি পাওয়া গাযীয়ে বালাকোটের ওয়ায শোনার জন্য শত শত ধর্মপ্রাণ মানুষ উক্ত
মাহফিলে যোগদান করেন। ওয়ায শেষে তাঁর জন্য রান্না করা বাড়ীওয়ালার সামান্য
ভাত-তরকারি বিসমিল্লাহ বলে তিনি নিজ হাতে উপস্থিত শত শত মানুষকে খাইয়ে
তৃপ্ত করেন। তাঁর এই কেরামতে মুগ্ধ হয়ে গুণাকরকাটি গ্রাম সহ আশপাশের বহু
গ্রামের মানুষ ‘আহলেহাদীছ’ হয়ে যান এবং আজও তারা আহলেহাদীছ আছেন। ফালিল্লাহিল হামদ।
তথ্যদাতা
আলহাজ আবুল হুসায়েনের বিধবা চাচাতো বোন হাফীযা খাতুনের (৭১) নিকট থেকে
‘মার্জ্জুম হোসেন’ নাম খোদাইকৃত ও তাঁর ব্যবহৃত ১২০০ গ্রাম ওযনের তামার
বদনাটি মাননীয় গবেষক ডঃ মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব ২৩.১২.৮৯ইং তারিখে
সংগ্রহ করেন এবং গাযী ছাহেবের ব্যবহৃত তরবারিটি জনাব আবুল হুসায়েন নিজে এসে
১৯৯৩ সালে রাজশাহী তাবলীগী ইজতেমার মঞ্চে নিজহাতে মাননীয় গবেষকের নিকট
অর্পণ করেন। জিহাদী রক্তের পুণ্যময় উত্তরাধিকার হিসাবে আমরা সদ্য পরপারের
যাত্রী আলহাজ্জ আবুল হোসায়েন-এর রূহের মাগফিরাত কামনা করছি এবং তাঁর শোক
সন্তপ্ত পরিবারবর্গের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করছি। আল্লাহুম্মাগফির
লাহু ওয়ার হামহো...। (তথ্য : আহলেহাদীছ আন্দোলন (ডক্টরেট থিসিস), পৃঃ ৪২১, ৪৩২)।
(৩)
সাতক্ষীরা যেলার বাঁশদহা এলাকা ‘যুবসংঘ’-এর সভাপতি অধ্যাপক সাইফুল ইসলামের
পিতা ‘আন্দোলন’-এর স্থানীয় উপদেষ্টা জনাব নসীমুদ্দীন সরদার (৯৬) গত ১৯
নভেম্বর বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত আড়াইটায় নিজ বাড়ীতে ইন্তেকাল করেছেন। ইন্না লিল্লাহি ...।
পরদিন শুক্রবার বাদ জুম‘আ নিজ গ্রাম নারায়ণজোলের (সাতক্ষীরা সদর) ঈদগাহ
ময়দানে তাঁর ছালাতে জানাযা অনুষ্ঠিত হয়। তাঁর কনিষ্ঠ পুত্র অধ্যাপক সাইফুল
ইসলাম জানাযায় ইমামতি করেন। ‘আহলেহাদীছ যুবসংঘ’-এর সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি
ড.এ.এস.এম. আযীযুল্লাহ, যেলা ‘আন্দোলন’ ও ‘যুবসংঘ’-এর নেতৃবৃন্দ সহ এলাকার
গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ জানাযায় অংশগ্রহণ করেন। জানাযা শেষে তাঁকে পারিবারিক
গোরস্থানে দাফন করা হয়।
[আমরা তাঁদের রূহের মাগফিরাত কামনা করছি এবং শোক-সন্তপ্ত পরিবারবর্গের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জ্ঞাপন করছি। -সম্পাদক]