ব্যথা এমন এক অনুভূতি, যার ফলে আমরা কোন কাজ সহজে করতে পারি না। কারণ সে সময়ে আমাদের মন থাকে ব্যথার দিকে। ব্যথা অনেক রকমের হ’তে পারে। যেমন- দাঁত ব্যথা, মাথাব্যথা, পেশিতে ব্যথা ইত্যাদি। এসব ব্যথা অনেক ক্ষেত্রে দীর্ঘস্থায়ী হয়। তাই আমরা ব্যথা কমানোর জন্য বিভিন্ন ধরনের ওষুধ খেয়ে থাকি। অনেক মানুষই মনে করে ওষুধ সেবন করলে ব্যথা কমে যায়। এটা সবসময় ফলদায়ক হয় না। কারণ ওষুধের মধ্যে এমন কিছু রাসায়নিক পদার্থ থাকে যা শরীরের জন্য ক্ষতিকর। তাই স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া উত্তম। নিচে কিছু স্বাস্থ্যকর খাবারের নাম দেয়া হ’ল, যা শরীরের ব্যথা কমানোর জন্য কার্যকরী।

১. চেরি : অ্যাসপিরিন শরীরের ব্যথা কমানোর জন্য একটি জনপ্রিয় ওষুধ। কিন্তু নতুন গবেষণা মতে, চেরি অ্যাসপিরিনের চেয়েও আরো বেশী কার্যকরী ওষুধ। এই ফলের মধ্যে এমন কিছু প্রাকৃতিক উপাদান আছে, যা শরীরের ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।

২. আদা : আদা পাকস্থলীর জন্য ভালো। এটি হজমেও সহযোগিতা করে। এছাড়া আদা শরীরের ব্যথা কমানোর জন্যও উপকারী ওষুধ। স্পোর্টসম্যানদের জন্যও আদা অনেক উপকারী। তাই প্রত্যেকটি মানুষেরই দৈনিক ৫০০ মিলিগ্রাম আদা খাওয়া উচিত।

৩. হলুদ : হলুদ ব্যবহার করা হয় খাবারের স্বাদের জন্য। অনেকেরই হয়ত জানা নেই যে, হলুদ স্বাস্থ্যের জন্য কতখানি উপকারী। বিজ্ঞানীরা বলেছেন, এর উপকারিতা সত্যিই আশ্চর্যজনক। প্রতিদিন খাবারের সঙ্গে হলুদ যোগ করা হ’লে তা ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করবে। এছাড়া শরীরের ব্যথা কমাতেও হলুদ সাহায্য করে।

৪. স্যামন : রুই জাতীয় মাছ, যা অনেকেরই প্রিয়। স্যামন মাছের মধ্যে ওমেগা-৩ রয়েছে, যা স্বাস্থ্য ও মস্তিষ্কের জন্য অনেক উপকারী। এছাড়া ওমেগা-৩ শরীরের ব্যথা কমায়। বেশী করে স্যামন মাছ খেলে শরীরের ফোলা অংশগুলোও কমে যায়।

৫. সেলারি : এটি এক ধরনের শাকবিশেষ, যার সুন্দর গন্ধ আছে। এটি স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। তাই প্রতিদিন কোন কিছু খাওয়ার সময় এই শাকটি যোগ করা দরকার। কারণ শরীরের কোন অংশে ব্যথা থাকলে তা কমে যাবে।

৬. অলিভ অয়েল : কোন কিছু রান্নার সময় তেল ব্যবহার করা হয়। কিন্তু বাজারে যেসব তেল কিনতে পাওয়া যায় তার মধ্যে অলিভ অয়েলই সবচেয়ে ভালো। এটি শরীরের ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। অলিভ অয়েল শুধু খাওয়ার কাজেই ব্যবহার হয় না, তা গায়েও মাখা হয়।

৭. গোলমরিচ : গোলমরিচ এক ধরনের ঝাল মসলা বিশেষ। এটি অন্য মরিচের চেয়ে কিছুটা ঝাল। এর মধ্যে সাধারণত উচ্চমাত্রায় ক্যাপ্সাসিন থাকে, যা সাধারণত পেইন কিলার তৈরীতে ব্যবহৃত হয়। যদি পেশিতে ব্যথা করে তাহ’লে কোন একটি ক্রিমের সঙ্গে গোলমরিচের গুঁড়া ব্যবহার করলে ব্যথা কমে যাবে।

৮. ওয়ালনাট : এই বাদামের ভেতরে অনেক প্রাকৃতিক গুণাগুণ রয়েছে। প্রথমত, এর ভেতরে ওমেগা-৩ শরীরের জন্য উপকারী। তাছাড়া এটি খেতেও সুস্বাদু ও স্বাস্থ্যকর। ওয়ালনাট বাদাম যেকোন জায়গায় খেতে পারি। এছাড়াও এই বাদাম আমাদের ব্যথা কমাতে অনেক সাহায্য করে।

৯. রসুন : রসুনের রয়েছে হাড়ের জয়েন্টের ব্যথা দূর করার অসাধারণ ক্ষমতা। এছাড়াও রসুনের রস ত্বকের র‌্যাশের যন্ত্রণা দূর করতেও বেশ কার্যকরী।

কিসমিসের উপকারিতা

কিসমিস সর্বজন পরিচিত। যেকোন মিষ্টি খাবারের স্বাদ এবং সৌন্দর্য বাড়ানোর জন্য কিসমিস ব্যবহার করা হয়। এছাড়াও পোলাও, কোরমা এবং অন্যান্য অনেক খাবারে কিসমিস ব্যবহার কর হয়। রান্নার কাজে ব্যবহার করা হ’লেও কিসমিস সাধারণভাবে খাওয়া হয় না। অনেকে এটাকে ক্ষতিকর মনে করেন। অথচ প্রতিদিন পরিমাণমত কিসমিস খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। পুষ্টিবিদদের মতে, প্রতি ১০০ গ্রাম কিসমিসে রয়েছে এনার্জি ৩০৪ কিলোক্যালরি, কার্বোহাইড্রেট ৭৪.৬ গ্রাম, ডায়েটরি ফাইবার ১.১ গ্রাম, ফ্যাট ০.৩ গ্রাম, প্রোটিন ১.৮ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ৮৭ মিলিগ্রাম, আয়রন ৭.৭ মিলিগ্রাম, পটাসিয়াম ৭৮ মিলিগ্রাম ও সোডিয়াম ২০.৪ মিলিগ্রাম। তাই পরিবারের সব সদস্যের প্রয়োজনে প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় কিসমিস রাখা উচিত। নিম্নে এর কিছু উপকার আলোচনা করা হ’ল।

দেহে শক্তি সরবরাহ করে : দুর্বলতা দূরীকরণে কিসমিসের জুড়ি মেলা ভার। কিসমিসে রয়েছে চিনি, গ্লুকোজ এবং ফ্রুক্টোজ, যা তাৎক্ষণিকভাবে দেহে এনার্জি সরবরাহ করে। তাই দুর্বলতার ক্ষেত্রে কিসমিস খুবই উপকারী।

দাঁত এবং মাড়ির সুরক্ষা : বাচ্চারা ক্যান্ডি ও চকলেট খেয়ে দাঁত ও মাড়ির ক্ষতি করে থাকে। কিন্তু এগুলির পরিবর্তে বাচ্চাদের কিসমিস খাওয়ার অভ্যাস করালে দাঁতের সুরক্ষা হবে। আবার একই স্বাদ পাওয়ার সাথে সাথে বিপুল পরিমাণ উপকারও পাবে। চিনি থাকার পাশাপাশি কিসমিসে রয়েছে ওলিনোলিক অ্যাসিড, যা মুখের ভেতরের ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া জন্মাতে বাঁধা দেয়।

হাড়ের সুরক্ষা : কিসমিসে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম, যা হাড় মযবূত করতে বেশ কার্যকর ভূমিকা পালন করে। কিসমিসে আরো রয়েছে বোরন নামক মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টস, যা হাড়ের ক্যালসিয়াম শোষণে সাহায্য করে। প্রতিদিন কিসমিস খাওয়ার অভ্যাস হাড়ের ক্ষয় এবং বাতের ব্যথা থেকে দূরে রাখবে।

ইনফেকশনের সম্ভাবনা দূরীকরণ : কিসমিসের মধ্যে রয়েছে পলিফেনলস এবং অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টিইনফেমেটরী উপাদান, যা কাঁটা-ছেড়া বা ক্ষত হ’তে ইনফেকশন হওয়ার সম্ভাবনা দূরে রাখে।

ক্যান্সার প্রতিরোধ : কিসমিসের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট দেহের কোষগুলোকে ফ্রি র‌্যাডিক্যাল ড্যামেজের হাত থেকে রক্ষা করে এবং ক্যান্সারের কোষ উৎপন্ন হওয়ায় বাধা প্রদান করে। কিসমিসে আরো রয়েছে ক্যাটেচিন, যা পলিফেনলিক অ্যাসিড। এটি ক্যান্সার মুক্ত রাখতে সাহায্য করে।

কোষ্ঠকাঠিন্য দূরীকরণ : কিসমিসে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার, যা আমাদের পরিপাকক্রিয়া দ্রুত হ’তে সাহায্য করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর করে।

\ সংকলিত \






আরও
আরও
.