চোখ সুস্থ রাখতে হ’লে দরকার অতি প্রয়োজনীয় উপাদান ভিটামিন ‘এ’। নিত্যদিনের খাবারের তালিকায় ‘এ’ ভিটামিনযুক্ত খাবার অবশ্যই থাকা উচিত। সঠিক পরিমাণে এই ভিটামিন যুক্ত খাবার না খেলে রাতকানা রোগ এবং চোখের অন্যান্য সমস্যাও দেখা দিতে পারে। ভিটামিন ‘এ’-এর প্রধান উৎস প্রাণিজ প্রোটিন যেমন যকৃৎ ডিমের কুসুম, দুধ, মাখন, পনির ও মাছ। ছোট মাছ বা মলা, ডেলা, পুঁটিমাছ খেলে চোখ ভাল থাকে। রাতকানা রোগ হয় না সস্তা এবং সহজলভ্য রঙ্গীন ফলমূল ও শাক-সবজি থেকেও প্রচুর ভিটামিন ‘এ’ পাওয়া যায়। এসব খাবার টাটকা এবং সহজপাচ্যও বটে। গাঢ় সবুজ পাতা যুক্ত সবজি-কচুশাক, সজিনাশাক, পালংশাক, লাউশাক, নটেশাক, পুঁইশাক, শিম, বরবটি, গাজর, মিষ্টি কুমড়া, পাকা আম, পেঁপে, তরমুজ, কাঁঠাল ইত্যাদি এ জাতীয় খাবার। যারা নিরামিষ ভোজী চোখ ভাল রাখার জন্য ছোটবেলা থেকেই তাদের সব ধরনের শাক-সবজি, ফলমূল খাওয়ার অভ্যাস করা উচিত। অল্প সেদ্ধ বা কাঁচা সালাদ, ফল ও ফলের রসের সঙ্গে অবশ্যই দুধ, দই, ছানা খাওয়া উচিত। সয়াবিন ভিটামিন ‘এ’-এর আরেকটি ভাল উৎস। বিভিন্নভাবে সয়াবিন রান্না করে খাওয়া যায়। ভিটামিন ‘এ’-এর অভাবে অন্ধকারে দেখার উপযোগী চোখের রডকোষগুলোর কর্মদক্ষতা আস্তে আস্তে কমে যেতে থাকে। ফলে শিশু রাতের বেলায় কোন জিনিস খুঁজতে গিয়ে হাত বাড়িয়ে ঘুরতে থাকে এবং কোন জিনিসে বাধা পেলে হুমড়ি খেয়ে পড়ে যায়। বাচ্চা জন্মের সময় তার শরীরে পর্যাপ্ত ভিটামিন ‘এ’ থাকায় মাতৃদুগ্ধ পান করা পর্যন্ত এই ভিটামিনের অভাবজনিত সমস্যা হয় না। কিন্তু শিশুর যখন বাড়তি খাবার প্রয়োজন হয় তখনই এই ভিটামিনের অভাব হ’লে চোখের সমস্যা দেখা দিতে থাকে। শিশুদের চোখের যে সমস্যাগুলো বেশী দেখা যায় তা হ’ল- অক্ষি শুষ্কতার পর চোখের বাইরের আবরণে কিছু ছোট ছোট দাগ পড়া। ফলে কর্ণিয়া অস্বচ্ছ ও ঘোলাটে দেখায় এবং কর্নিয়ার অনুভূতি কমে যেতে থাকে। এর ফলে দেখতে অসুবিধা হয়। পরে কর্নিয়াতে সংক্রমণ হয়ে ক্ষত সৃষ্টি হয়। তখন শুধু ভিটামিন ‘এ’ যুক্ত খাবার খেলেই চলবে না, নিয়মিত ভিটামিন-এ ক্যাপসুল খেতে দিতে হবে। বয়স্কদের ছানিপড়া বিলম্বিত করতে ভিটামিন-এ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। সঠিকভাবে ভিটামিন-এ যুক্ত খাবার নিয়মিত না খেলে নির্ধারিত সময়ের আগেই চোখের আলো ঝাপসা হয়ে যেতে পারে।

আমাদের দেশে অধিকাংশ মানুষ গরীব, অশিক্ষিত এবং পুষ্টি সম্বন্ধে সঠিক জ্ঞান নেই; বরং রয়েছে বিভিন্ন ধরনের কুসংস্কার। ফলে দারিদ্র ছাড়াও অজ্ঞতার কারণে এই সমস্ত ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবার নির্বাচন করা এবং সঠিকভাবে রান্না করা তাদের পক্ষে সম্ভব হয় না। ভিটামিন ‘এ’-এর সস্তা ও সহজ উৎস সম্পর্কে পিতা-মাতার অজ্ঞতা শিশুদের ভিটামিন এ-এর অভাব ঘটায়। সাধারণ স্বাস্থ্য শিক্ষা এবং পুষ্টিজ্ঞান নেই বলে আমাদের দেশে অধিকাংশ লোক জানে না কিভাবে স্বল্পমূল্যে সুষম খাদ্য পাওয়া যায়। কোন খাদ্যে কি ধরনের ভিটামিন রয়েছে এবং কিভাবে রাঁধলে ভিটামিন নষ্ট না হয়ে অক্ষুণ্ণ থাকে। স্বাস্থ্য সম্পর্কে সাধারণ জ্ঞানের অভাব শিশুর অন্ধত্বের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তাই চোখ ভাল রাখতে প্রতিদিনই আমাদের পর্যাপ্ত টাটকা শাকসবজি ও ফলমূল খেতে হবে।

[সংকলিত]






আরও
আরও
.