গরমে তৃষ্ণা নিবারণের জন্য আল্লাহর দেয়া অনন্য নে‘মত ডাবের পানি সর্বশ্রেষ্ঠ পানীয়। কিছু রোগী ছাড়া সকলের জন্য অত্যন্ত উপকারী ডাবের পানি। ডাবের পানিতে প্রচুর পরিমাণে সোডিয়াম ক্লোরাইড, পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ফসফেট থাকে। মানুষ যখন প্রচুর পরিমাণে ঘামে তখন শরীর হ’তে ঘামের সাথে খনিজ লবণ বের হয়ে যায়। আবার বমি হ’লে মানুষের রক্তে পটাশিয়ামের পরিমাণ কমে যায়। ডায়রিয়া হ’লে শরীর হ’তে প্রচুর পানি ও খনিজ লবণ বের হয়ে যায়। এতে মানুষের শরীর মারাত্মক দুর্বল হয়ে যায়। গরমের কারণে আমাদের শরীর হ’তে যেসব উপাদান বের হয়ে যায়। তার বেশির ভাগ উপাদান ডাবের পানিতে রয়েছে। তাই ডাবের পানি শ্রেষ্ঠ পানীয় এবং এ পানিতে আছে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা, যা অনেক জটিল রোগ থেকে মানুষকে রক্ষা করে। ডাবের পানিতে ৯৫ শতাংশই পানি। আর আমাদের শরীরে শতকরা ৭০ ভাগই পানি। সুস্বাস্থ্যের জন্য প্রচুর পরিমাণে বিশুদ্ধ পানি খাওয়া দরকার।

ডাব উদ্ভিদ জগতের Arecaceae গোত্রের বা Palmae পরিবারের একটি উদ্ভিদ। ইংরেজি নাম Coconut বাংলায় কাঁচা অবস্থায় ডাব আর পরিপক্ব হ’লে নারিকেল। বৈজ্ঞানিক নাম Cocos nucfera ডাবের পানিতে দ্রবণীয় একটি গ্যালাকট ম্যাননান থাকে। টাটকা শাঁসে থাকে নাইট্রোজেন ঘটিত পদার্থ ফ্যাট, লিগনিন, সুপার ও অজৈব পদার্থ। একটি সাধারণ কচি ডাবে ৩০০-১০০০ মিলিলিটার পানি থাকতে পারে। পুষ্টিবিদদের মতে, ১ কাপ বা ১০০ গ্রাম ডাবের পানিতে খাদ্য উপাদান হ’ল খাদ্যশক্তি ২৮৩ ক্যালরি, চর্বি ২.৭ গ্রাম, সোডিয়াম ১৬ মিলিগ্রাম, প্রোটিন ২.১ গ্রাম, শর্করা ২.৩ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ১৫ মিলিগ্রাম, ফসফরাস ০.০২ মিলিগ্রাম, আয়রণ ০.২ মিলিগ্রাম, খনিজ পদার্থ ০.৪ গ্রাম, ভিটামিন বি-১ ০.১১ মিলিগ্রাম, বি-২ ০.০২ মিলিগ্রাম, ভিটামিন সি ৫ মিলিগ্রাম। ডাবের পানিতে যেসব উপাদান রয়েছে তা প্রতিদিনের শরীরের পুষ্টি চাহিদা পূরণ করে নানা প্রকার রোগ থেকে রক্ষা করে। তাছাড়া ডাবে আরও যেসব উপকারি রয়েছে তা নিম্নে উল্লেখ করা হ’ল :

* ডায়রিয়া বা পাতলা পায়খানা, ঘন ঘন বমি বা কলেরা হ’লে, সাথে সাথে ডাবের পানি পানে উপকার পাওয়া যায়।

* শারীরিক পরিশ্রমে শরীর হ’তে খনিজ লবণ ও প্রয়োজনীয় তরল পদার্থ বের হয়ে যায়। ফলে শরীর দুর্বল হয়ে যায়। ডাবের পানি তা নিমেষেই পূরণ করে দেয়।

* ডাবের পানি শরীরের কোষের কার্যকারিতা ও বৃদ্ধি প্রক্রিয়াকে সচল রাখে এবং রক্তের পিএইচ এর মান নিয়ন্ত্রণ করে। ফলে শরীরে বয়সের চাপ পড়ে না।

* ডাবের পানি এন্টি সেপটিক হিসাবে কাজ করে তাই শরীরের কাটা-ছেঁড়া, ব্রণ, মেছতা ও বসন্তের দাগে ডাবের পানি লাগালে শুকিয়ে যায়।

* ডাবের পানি জোলাফের গুণ সম্পন্ন। তাই কোষ্ঠকাঠিন্যতে আক্রান্তরা নিয়মিত ডাবের পানি খেলে উপকার পাবেন।

* হার্টের বা হৃৎপিন্ডের নানা সমস্যায় নিয়মিত ডাবের পানি খেলে রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়ায় যথেষ্ট উপকার হবে।

* ডাবের পানি মুখের, দাঁতের, চুলের উজ্জলতা বাড়ায় ও দাঁতের মাড়িকে মযবূত করে।

* যাদের আলসার গ্যাসটাটাইটিস, এসিডিটি আছে, তারা নিয়মিত ডাবের পানি খেলে সমস্যা কমে আসবে।

* ডাবের পানিতে ভিটামিন সি থাকায় চামড়ার সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে এবং চর্মরোগ প্রতিহত করে। শিরা-উপশিরায় সুস্থ রক্ত চলাচলে সাহায্য করে।

* ডাবের পানিতে আয়রণ আছে। তা দেহে রক্ত তৈরীতে সাহায্য করে। দেহের কর্মশক্তি বৃদ্ধি পায় এবং ত্বক সুন্দর ও মসৃণ করে।

* যারা নিম্ন রক্তচাপের রোগীরা নিয়মিত ডাবের পানি খেলে খুবই উপকার পাবেন। কারণ এতে পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়া বিদ্যমান। তাছাড়া রক্তের ভালো কোলেস্টেরলের মাত্রা ঠিক রেখে হৃৎপিন্ডকে সুস্থ রাখে।

* ডাবের পানি উচ্চ ইলেকট্রলাইটিস ক্ষমতা সম্পন্ন। তাই এ পানি দেহের পানি শূন্যতা ও খনিজ লবণের ঘাটতি পূরণ করে। আমাদের দেহে পটাশিয়ামের অভাব হ’লে মাংস পেশি শক্ত হয়ে ওঠে ও দেহে ব্যথা করে। ডাবের পানি খেলে এ সমস্যা কমে আসবে।

* ডাবের পানি এন্টিঅক্সিডেন্ট হিসাবে কাজ করে। ফ্রি রেডিকেলের অবস্থাকে প্রতিহত করে সুস্থ রাখে।

* গর্ভবর্তী মায়েরা প্রায়ই এসিডিটি বা পেটে গ্যাস বেড়ে যাওয়ার সমস্যায় ভুগেন। এ সময় গর্ভের বাচ্চার ক্ষতির কারণে ওষুধ খাওয়া যায় না। এ গ্যাসের সমস্যা দূর করতে ডাবের পানি পান করলে। সমস্যা কমে আসবে এবং অনাগত বাচ্চার উপকার হবে।

* ডাবের পানি মাথার রক্ত প্রবাহ বৃদ্ধি করে। চুলের গোড়া মযবূত করে এবং চুল পড়া রোধ করে।

সতর্কতা : যাদের কিডনি বা মূত্র তলিতে সমস্যা আছে বা পাথর হয়েছে বা ডায়ালাইসিস করতে হয় তারা ডাবের পানি খাবেন না। কারণ কিডনি সঠিকভাবে কাজ করতে পারে না। ফলে এর প্রভাবে পানির পটাশিয়াম দেহে থেকে বের হ’তে পারে না। এতে রোগীর মারাত্মক ক্ষতি সাধিত হয়। যারা উচ্চ রক্তচাপে বা হাই প্রেসারে ভুগছেন তারা ডাবের পানি খাবেন না। কিন্তু সুস্থ মানুষের জন্য ডাবের পানি খুবই উপকারী।








আরও
আরও
.